অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল এক্সাম শুরু কাল থেকে৷ সুমুর এখনো এডমিন কার্ড নেওয়া হয় নি। পড়ার চাপে ভুলেই গেছিলো। সায়ান কল করে তাড়া দিচ্ছে এডমিন কার্ড আমার জন্য। তাই সকাল সকাল ভার্সিটিতে যাচ্ছে সুমু। শানকে বলেছিলো শান মুখের ওপর না করে দিয়েছে। আজকে না কি শানের আর্জেন্ট কাজ আছে।
সকালের মিষ্টি রোদ সুমুর কাছে তেঁতো লাগছে। লাগারই কথা জৈষ্ঠ্যমাস। প্রচন্ড গরম সাথে রোদের তাপও বেশি।
মিষ্টি কালারের ওড়নাটা মাথায় ভালোভাবে পেঁচিয়ে দ্রুত হেঁটে চলেছে সুমু। রাস্তায় একটা রিক্সা বা অটো কিছুই নেই।
মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে।
“সুমু
কেঁপে ওঠে সুমু। বুকটা ধক করে ওঠে। কয়েক সেকেন্ডেই চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। পেছনে ঘোরার সাহস সুমুর নেই।
আচ্ছা লোকটা কি পেছনে? নয় মাস পর লোকটার কন্ঠ শুনছে সুমু। কন্ঠ একটুও পরিবর্তন হয় নি। আচ্ছা মানুষটা কি পরিবর্তন হয়ে গেছে? মোটা হয়ে গেছে? না কি চিকন? কালো হয়েছে না কি ফর্সা?
এখানে কেনো এসেছে?
নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত সুমু।
কাঠফাঁটা রোদ্দুরে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সুমু। এক পাও করতে পারছে না।
আশিক বুঝতে পারে সুমু পেছন ঘুরবে না। তাই নিজেই সুমুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
মাথা নিচু করে আছে সুমু। ধবধবে ফর্সা মেয়েটার মুখটা খানিক কালো হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি জমেছে৷ মুখে কয়েকটা ব্রণ উঠেছে।
মুচকি হাসে আশিক।
” তাকাবে না আমার দিকে?
সুমুর খুব কাছে দাঁড়িয়ে বলে আশিক। সুমু দু পা পিছিয়ে যায়। হতাশ হয় আশিক।
“আমি অস্ট্রেলিয়া চলে গেছিলাম। জানতাম না সায়ানের এক্সিডেন্টের কথা। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা তোমাকে বলি নি। কারণ তুমি তো জানোই আমি আমার পবলেম গুলো নিজেই সলভ করতে ভালোবাসি।
তোমাকে অনেক বার কল করেছি কিন্তু তুমি রিসিভ করো নি। ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম হটসঅপস সব জায়গায় তোমায় খুঁজেছি কিন্তু তুমি আমায় ব্লক করে দিয়েছিলে।
আজকেই বাড়ি ফিরেছি। সদর হাসপাতালে পার্মানেন্ট ডাক্তার হয়েছি আমি।
আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। এখন আর কোনো বাঁধা নেই।
আশিক সুমুর ডান হাতটা ধরে বলে।
সুমু চোখ তুলে আশিকের দিকে এক পলক তাকায়। আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে লোকটা।
সুমু তাচ্ছিল্য হেসে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
” কংগ্রাচুলেশনস
একদিন বাসায় আসবেন। মা আপনার কথা খুব বলে।
আসছি ভাইয়া।
আশিক চোখ বন্ধ করে ফেলে। এতোটা চেঞ্জ কি করে হয়ে গেলো সুমু? এটা সেই সুমু তো যে আশিককে পাগলের মতো ভালোবাসতো?
“আমায় ইগনোর করছো?
দু পা এগিয়ে গেছিলো। আশিকের কথায় থেমে যায়। আশিকের দিকে ঘুরে মুচকি হাসে।
” একদম না।
“তাহলে এভাবে কেনো কথা বলছো? বাড়ি ফিরেই তোমার কাছে চলে আসলাম আর তোমার কথা বলার কি ধরন?
মনে হচ্ছে চিনোই না।
আশিক বেশ রেগে বলে।
“আপনার শূন্য পকেটে আপনার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম আমি। আপনার পাশে থেকে আপনার সাকসেস দেখতে চেয়েছিলাম। আপনি সাকসেস হওয়ার পর আপনার হাত ধরতে চাই নি আমি।
সুমু আশিকের চোখে চোখ রেখে বলে।
আশিক থমকায়।
” সুমু এখানে কেনো? ভার্সিটিতে যাবে তো?
ঈশান (ইশার ভাই) সুমুর সামনে বাইক থামিয়ে বলে। সুমু আশিকের দিকে এক পলক তাকায়।
“হুমম যাবো তো
” আমার সাথে এসো।
“হুমম চলো
ঈশানে বাইকে ওঠে সুমু। এক বারও পেছন ফিরে তাকায় না। আশিক সুমুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমি কি ভালোবাসা হারিয়ে ফেললাম?
🥀🥀
সকাল সকাল পাখি রান্না করছে। সায়ানকে ইমপ্রেস করার প্রথম ধাপ। মোরগ পোলাও বানাচ্ছে। সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলতুল মন দিয়ে টিভি দেখছে। খাটের ওপর গোল হয়ে বসে রিমোট থুতনিতে ঠেকিয়ে একটুখানি হা করে এক দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা হিন্দি মুভি দেখছে।
সায়ান তুলতুলের পাশে বসে তাকিয়ে আছে। আজ কাল মেয়েটা একটু বেশিই সাজুগুজু করছে। সায়ানকে পাগল করার ধান্দা।
আজকে গোলাপি শাড়ি পড়েছে। সিল্কের শাড়ি। পাতলা ছিলছিলে।
সায়ান কখন থেকে ভাবছে শাড়ি চেঞ্জ করতে বলবে। কিন্তু পারছে না। অবশ্য ইচ্ছে করেই বলছে না। মারাক্তক সুন্দর লাগছে তুলতুলকে। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে।
এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সায়ান রুমের বাইরে যাচ্ছে না। স্যার কয়েক বার কল করেছে। সায়ান ফোন সুইচঅফ করে রেখেছে।
তুহিন দরজায় নক করছে।
“তুলতুল কথা ছিলো।
তুহিনের গলা শুনতেই তুলতুল লাফ দিয়ে নামে। তুহিনের খবর মানেই তরতাজা খবর৷ একদম কাজের ছেলেটা।
” তুলতুল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক।
সায়ান চোখ পাকিয়ে বলে।
“আপনার কথা আমি শুনবো? হাসালেন?
সায়ানকে ভেংচি কেটে তুলতুল দরজার দিকে যেতে নেয়।
সায়ান কটমট চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল সেদিকে পাত্তা দেয় না।
দরজার ছিটকেনিতে হাত দেবে তখনই সায়ান তুলতুলের হাত ধরে ফেলে। তুলতুল রেগে তাকায় সায়ানের দিকে।
” তুহিন তুলতুল এখন বিজি। আমার পা টিপছে। পরে বইলো যা বলার। এখন ডিস্টার্ব করবা না একদম।
দুই হাতে তুলতুলকে উঁচু করে খাটের কাছে নিয়ে যেতে যেতে বলে সায়ান।
তুলতুল সায়ানের হাতে নখ বসিয়ে দেয়। রাগে চোয়াল শক্ত করে।
আজাইরা লোক একটা।
“তুলতুলকে খাটে বসিয়ে দেয় সায়ান। তুলতুলের সামনে হাঁটু মুরে বসে। তুলতুলের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। তুলতুল সরু চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
” শাড়িটা একদম পাতলা। তোর শরীরের গঠন বোঝা যাচ্ছে। এভাবে বাইরে গেলে সবাই তাকাবে তোর দিকে। সেটা আমার সয্য হবে না।
এসব শাড়ি শুধু বেডরুমে পড়বি। আমাকে ইমপ্রেস করতে। বাইরে যদি পড়েছিস তো তোকে সহ শাড়ি পুরিয়ে ফেলবো।
বলতে বলতে তুলতুলের হাতে চুমু খায় সায়ান। চমকায় তুলতুল। চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
আচমকা সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে তুলতুলের কোলে মাথা রাখে। আরেকবার চমকে ওঠে তুলতুল। হাত পা,অবশ হয়ে যাচ্ছে।
“তুই আবার আমায় ঠকাবি তুলতুল। কিন্তু সেই সুযোগ তোকে আমি দেবো না। আমার বেবি চাই।
সায়ানের কথা শুনে চমকে ওঠে তুলতুল৷ এক লাফে উঠে যায়। চোখ দুটো বড়বড় করে তাকায় সায়ানের দিকে।
সায়ান মাথা চুলকে সোজা হয়ে বসে।
” কি বললেন আপনি?
তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে।
“বললাম তোকে এখন শাড়ি পড়াবো আমি।
সায়ান নিজের লাগেজ খুলে গোলাপি রংয়ের একটা জামদানী শাড়ি বের করে।
তুলতুল এখনো সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তুলতুলের শাড়ির কুঁচি গুলো এক টানে খুলে ফেলে। হুশ ফেরে তুলতুলের।
” আআমি একাই পারবো।
সায়ানের থেকে শাড়ি নিতে চেয়ে বলে।
“জানি পাড়বি তবুও আমি পড়াবো।
“প্লিজ আমি একাই
তুলতুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে তুলতুলের মুখে হাত দেয়।
” হিসসসসসসসসস কোনো কথা নয়।
তুলতুলের কানে ফিসফিস করে বলে সায়ান।
তুলতুল চুপ করে যায়। সায়ান তুলতুলের মুখ থেকে হাত সরিয়ে শাড়ির ভাজ খুলতে থাকে।
এই সুযোগেই তুলতুল এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে।
“আগে প্রমাণ করেন ভালোবাসেন তবেই আপনার কথা শুনবো।
বলেই তুলতুল ঝড়ের গতিতে চলে যায়।
রাগে সায়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
” তোকে আজকে হাতের কাছে পেলে লবন মরিচ দিয়ে কাঁচা খেয়ে ফেলবো আমি।
সায়ান শাড়িটা মুঠ করে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলে।
চলবে