আমার তুমি পর্বঃ৩৭

0
524

সায়ানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে তুলতুল আকাশ পাতাল ভাবনায় বিভোর। সায়ান গভীর ঘুরে আচ্ছন্ন। ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। হঠাৎই তুলতুলের ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে সায়ানের বুকে লেপ্টে থাকতে দেখে সরে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সায়ান ছাড়ে নি। বরং আরও শক্ত করে ধরেছে। লোকটা ঘুমিয়ে আছে তবুও হাত বাঁধন একটুও হালকা হয় নি। বুকের লোম গুলো ভীষণ জ্বালাচ্ছে তুলতুলকে। তবুও তুলতুল কিছু বলে না।
ভাবতে থাকে সায়ানের কাছে টেনে নেওয়ার কথা। বেবি চাওয়া।
হঠাৎই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে যায় তুলতুলের। এতখনে লজ্জা লাগে নি। সায়ান যখন কাছে এসেছিলো তখনও লজ্জা লাগে নি। আসলে তখন লজ্জা পাওয়ার কথা ভুলেই গেছিলো। কান্না করার ব্যস্ত ছিলো।

তবে নিসন্দেহে আজকে তুলতুল ভীষণ খুশি। কখনোই কেউ রাত বারোটার সময় বার্থডে উইশ করে নি। আদর করে চুড়ি পড়িয়ে দেয় নি৷ এতগুলো চুড়ি বার্থডে গিফটও করে নি কেউ।

“এই যে মিস্টার শুনছেন?
আজকে আপনাকে ভালোবাসি বলতে ইচ্ছে করছে। আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে ইচ্ছে করছে। আপনার হাতে হাত রেখে কুয়াশা ভেজা কানাডার পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছে করছে। আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

মনে মনে বলে তুলতুল। মুখে বলতে পারবে না। লজ্জা আর জড়তা ঘিরে ধরবে।

কিন্তু এখন তো জড়িয়ে ধরাই যায়। তুলতুল মুচকি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সায়ানকে।

আজকে বোধহয় সূর্য উঠবে না। বা হয়ত উঠেছে। রুমটা এখনো অন্ধকার। অথচ বেলা দশটা বেজে গেছে। বাংলাদেশে তো জানালা ভেদ করে আলো ঢুকে পড়ে। কিন্তু এখানে আলো আসছে না কেনো?

সায়ান তুলতুলের মাথায় গভীর ভাবে চুমু খায়। তুলতুল চমকে ওঠে। সায়ান কি জেগে গেছে? তুলতুল ঘুমায় নি। সেই ভোর রাত থেকে জেগে আছে।

” এই তুলতুল
উঠবি না?

সায়ান তুলতুলের চুলের ভাজে হাত দিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে। কেঁপে ওঠে তুলতুল। সায়ানের ঘুম ঘুম কন্ঠে বলা কথাটা হৃদয়ে আঘাত করে তুলতুলের। হৃদপিণ্ডে গিয়ে বারি খায়।
ঘুম ঘুম কন্ঠটা এতো আকর্শনীয় কেনো?

“কি হলো?

সায়ান আবার বলে।

” হুমমমম

তুলতুল আস্তে করে বলে।

“উঠ

তুলতুল উঠে বসে। সায়ানও বসে৷ তুলতুল সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে না। সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
তুলতুল হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। এই লোকটা এখন আশেপাশে থাকলে কেমন বেসামাল বেসামাল লাগে।

এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে হাত খোপা করে নেয়।
কাল রাতে সায়ান তুলতুলের জন্য ড্রেস এসেছে। সোফার ওপর রাখা। তুলতুল ধীর পায়ে বিছানা থেকে নামে। শপিং ব্যাগ গুলো খুলে। কয়েকটা গাউন।

সাদা রংয়ের একটা গাউন বেছে নেয় পড়ার জন্য।
তারপর আবার বিছানায় এসে বসে। এখন সায়ান বের হওয়ার অপেক্ষা।

কিছুখন পর সায়ান তোয়ালে পড়ে বের হয় এক হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে। আরেক দরফা ক্রাশ খায় তুলতুল। বুকটা ধক করে ওঠে। আচ্ছা কাল রাত থেকে লোকটাকে এতো ভালো লাগছে কেনো? যেভাবেই থাকুক তাতেই ভালো লাগছে।

তুলতুলের খুব করে ইচ্ছে করছে সায়ানের চুলে হাত বুলাতে৷ কিন্তু এটা তো করতে পারবে না ও। সায়ান হেংলা ভাববে।

“তোরই বর। এভাবে নজর দিয়ে রোগা কেনো করে দিচ্ছেস?

সায়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার মধ্য দিয়ে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে।
হকচকিয়ে ওঠে তুলতুল। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক তাকায়।

” আববপনার দিকে তাকায় নি আমি।

জোর গলায় বলে তুলতুল।

“ওহহহ আচ্ছা।

মিটমিট করে হেসে বলে সায়ান।

” দাঁত কেলানোর কি হলো?

তুলতুল রাগী গলায় বলেন।

“তুই টেরা এটা তো জানতাম না। না মানে তুই অন্য দিকে তাকিয়ে আছিস তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুই আমার দিকেই তাকিয়ে আছিস।

তুলতুল দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে সায়ান।
তুলতুল দাঁত কটমট করে। সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে। এক পা এক পা করে তুলতুলের দিকে এগোতে থাকে।

” ওমন করে দাঁত কটমট করিস না। দাঁত ভেঙে যাবে তো। তারপর আমার ফিউচার বেবিরা তোকে মা না ডেকে নানু ডাকবে।

সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে। তুলতুল হা করে সায়ানের দিকে তাকায়। এই লোকটা ওর কথাই ওকে ফেরত দিচ্ছে? ভারি অসব্ভ লোক তো।

“ছাড়ুন

রাগী চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।

” এভাবে হট হট গ্রীষ্মকাল সেজে থেকে আমাকে ছাড়তে বলছিস?

ঘোর লাগা কন্ঠে বলে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। নিজের দিকে তাকায়। সাথে সাথে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। কাল রাতের সেই উল্টো করে পড়ে থাকা শার্টটা। সামনের তিনটা বোতাম খোলা।
সায়ান তাকিয়ে থাকে তুলতুলের দিকে। এই মুখটা মায়া দিয়ে ভরা। এই মায়ার জালেই সায়ান আটকে পড়েছিলে। তাই তো মেয়েটার জন্য এতে পাগলামি করতো।
সায়ান তুলতুলের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর ছেড়ে দেয় তুলতুলকে।

“যাহহ ফ্রেশ হয়ে আয়।

তুলতুল এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে যায় ওয়াশরুমে। দরজা ঠাস করে বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে। উনি কাছে আসলে শ্বাসটাও আটকে যায়।

সায়ান রেডি হয়ে নেয়। সাদা শার্ট কালো জিন্স। তুলতুলের হাতে সাদা ড্রেস দেখেই সাদা পড়েছে।

এমন সময় দরজায় নক পড়ে। সায়ান চুল ঘড়ি পড়তে পড়তে দরজা খুলে দেয়।
এক গাল হাসি নিয়ে পাখি দাঁড়িয়ে আছে। পাখির পরেও সাদা শার্ট ফ্রক।

” ওয়াও সায়ান আমার আর তোমার মেচিং হয়ে গেছে।

সায়ানকে ভালো করে পরখ করতে করতে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে পাখি।

“এটা সিম্পল। হতেই পারে মেচিং এসে লাফানোর কি আছে?

কপালে ভাজ ফেলে বলে সায়ান। পাখির মুখটা থমথমে হয়ে যায়।

সায়ান দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। পাখি ভেতরে আসে।

” আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই সায়ান।

পাখি আমতা আমতা করে বলে।

“আমি আগে বলি?
পাখি আমি বিবাহিত। আমি আমার বউকে খুব ভালোবাসি। খুব ভালো আছও তার সাথে। বাকিটা জীবন তার সাথে কাটাতে চাই। তোমার কিছু বাচ্চা মতো আমাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে। ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়।
তুমি নিশ্চয় চাইবে না। তোমার জন্য আমার কোনো পবলেম হোক?

সায়ান এক নাগারে কথা গুলো বলে৷ তুলতুল ওয়াশটুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বলা কথা গুলো শুনেছে।

চলবে

অতিরিক্ত ছোট হয়ে গেছে। তার জন্য দুঃখিত।
লেখার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে কিছু কমেন্ট পড়ে। ভালো না লাগলে বলেন নেক্সট পর্বেই শেষ করে দেই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here