#
#তানিশা সুলতানা
পরের দিন সকাল সকাল গ্রামের দিকে রওনা দেয় সবাই। তুলতুলের ইচ্ছে বাসে করে যাবে। কিন্তু সায়ান বাসে যাবে না। হাউজ ভাড়া করেছে। তুলতুল রেগে গাল ফুলিয়ে আছে।
এই বজ্জাত লোকটাকে একটা শাস্তি দিতেই হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তুলতুল নিজের ফোন খুঁজে পায় নি। যখনই সায়ানকে জিজ্ঞেস করলো সায়ান বললো “আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তোর ফোনটা আমি ইউজ করবো”
তুলতুল শুধু দাঁত কটমট করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কিচ্ছু বলতে পারে নি।
ইশা ওর বাবা মাকে বলেছে সাহেদা কাকিমা খুব জোর করছে গ্রামে যাওয়ার জন্য। ওনারাও রাজি হয়ে গেছে।
তুলতুল সায়ানের পাশে বসে নি। সায়ান কটমট চোখে তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুল ভেংচি কেটে সাহেদা বেগমের পাশে বসে পড়ে।
ইশা আগে ভাগেই শানের পাশে বসে পড়েছে।
সায়ান ড্রাইভারের পাশে বসে পড়ে।
দীর্ঘ তিন ঘন্টা জার্নি করার পরে গ্রামে পৌঁছে যায় ওরা। তুলতুলের খুশি আর দেখে কে? গাড়ি থেকে নেমেই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। সায়ানের রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই।
তুলতুলের বাবা মা খুব খুশি। এতোকিছুর পরেই যে ওনারা তুলতুলকে আপন করে নিয়েছে এটাই অনেক।
কোনো রকমের আতিথিয়েতার কম রাখে নি। সকাল সকাল বাজার গিয়ে মাছ মাংস শাক সবজি সব নিয়ে এসেছে।
সায়ান কারো সাথে কোনো কথা না বলে তুলতুলের রুমে চলে যায়।
সাহেদা বেগম মায়ের সাথে কথা বলতে থাকে। শান আর ইশা দুজন হাতে হাত রেখে গ্রাম দেখছে।
সুমু তাজের সাথে কথা বলছে। ভীষণ মিষ্টি ছেলে।
তুলতুল পুরো গ্রামটা একবার চক্কর দিয়ে ক্লান্ত হয়ে আসে।
নাজমা বেগম তুলতুলকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। কান্না করে ফেলে। কতদিন পর দেখলো মেয়েটাকে। তুলতুল চুপটি করে কিছুখন মায়ের বুকে পড়ে থাকে।
তারপর মায়ের হাতে হাতে কাজে সাহায্য করে।
রান্নাবান্না শেষ করে সাহেদা বেগম তুলতুলের মা আর তুলতুল পুকুরে যায় গোছল করতে। পুকুরে গোছল করতে দারুণ লাগে তুলতুলের।
সায়ানের রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই। এসেছে চার ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো তুলতুলের পাত্তা নেই। একটা বারও
সায়ানের সাথে কথা বলে নি। দেখা করে নি পর্যন্ত।
একবার হাতের কাছে পাই। ঠাটিয়ে চর মেরে দেবো।
সায়ান বিরবির করে বলে।
রাত আটটার সময় তাজ এসে সায়ানকে টেনে নিয়ে যায় খাবার খেতে। অনিচ্ছা থাকা পরেও সায়ান তাজের সাথে যায়।
তাদের পাশাপাশি বসে পড়ে।
সবাই এক সাথে খেতে বসেছে শুধু তুলতুল সাহেদা বেগম আর নাজমা বেগম বাদে।
ওরা খাবার দিচ্ছে।
সোহেল মিয়া আর তৌফিক রহমান এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে আর খাচ্ছে।
সায়ান দাঁত কটমট করে তুলতুলের দিকে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে।
তুলতুল একটা বারও তাকায়ও না সায়ানের দিকে।
রীতিমতো ইগনোর করছে সায়ানকে।
খাওয়া শেষে সায়ান একটু বাইরে যায় হাঁটতে।
তুলতুল সায়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
“মিস্টার জামাই তোমার জন্য সারপ্রাইজ ওয়েট করছে।
দশটায় বাসায় ফিরে সায়ান। রুমে ঢুকেই সায়ান অবাক হয়ে যায়।
চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে যায়।
তাজ বিছানার ওপর বসে গল্পের বই পড়ছে। তুলতুল হাতাকাটা ব্লাউজ সিল্কের গোলাপি শাড়ি, ভেজা চুল গুলো ডান সাইড দিয়ে সামনে নিয়েছে।
ঠোঁটে কড়া করে লাল লিপস্টিক।
সায়ানের গলা শুকিয়ে আসছে। ফাঁকা দুটো ঢোক গিলে সায়ান।
তুলতুল আপনার মধ্যে দিয়ে সায়ানকে দেখে। ঠোঁট টিপে একটু হাসে।
” ওহহহ তুমি চলে এসেছো?
একটু হেল্প করো। দেখো না আমি কিছুতেই কবিতা বাঁধতে পারছি না। একটু বেঁধে দাও।
সায়ানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে তুলতুল।
সায়ান একটু একটু করে এগিয়ে আসে। তুলতুলের পেছনে দাঁড়ায়। একবার তাজের দিকে তাকায় আর একবার তুলতুলের উন্মুক্ত পিঠে তাকায়।
“তাড়াতাড়ি করো?
তাড়া দিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ফিতা হাতে নেয়।
” এসবের মানে কি?
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
“তুমিই তো বলেছো বেডরুমে এইসব শাড়ি এলাও তাই পড়লাম।
আয়নার ভেতর দিয়ে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান গম্ভীর মুখে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
” কতখন ফিতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে? বেঁধে দাও
তুলতুল আবারও বলে।
সায়ান এবার বেঁধে দেয়।
“তাজ এখানে?
সায়ান তাজের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” ও আজ আমাদের সাথেই থাকবে।
তুলতুল আঁচল গুটিয়ে নিতে নিতে বলে।
“শয়তান একটা
সায়ান বিরবির করে বলে।
” কাজটা ঠিক করছো না তুমি।
সায়ান তুলতুল দিকে একটু ঝুঁকে বলে।
“তাই না কি?
মুচকি হেসে বলে তুলতুল।
সায়ান দাঁত কটমট করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
” ভাই আজকে সারা রাত আমরা গল্প করবো আর চকলেট খাবো কেমন?
তুলতুল তাজের পাশে বসে বলে।
“আচ্ছা আপি
তাজও খুশি হয়ে যায়। দুই ভাই বোন চকলেট খেতে থাকে আর এটা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।
সায়ান ততখনে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে৷ বিছানার এক কোনে শুয়ে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে দাঁতে দাঁত চেপে।
সায়ান এটা বুঝতে পেরেছে তুলতুল ওকে জ্বালানোর জন্য শাড়ি পড়েছে আর তাকে এখানে রেখে দিয়েছে।
কিন্তু কতখন তাজ তো ঘুমিয়ে যাবেই। তারপর?
সায়ান বাঁকা হাসে।
” আপি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
তাজ বলে।
“ওরে আমার জান রে
তুলতুল তাজের দুই গাল ধরে বলে।
তুলতুলের গল্প শুনতে শুনতে তাজ ঘুমিয়ে পড়ে। তুলতুল তাজের ওপর বিরক্ত হয়।
সায়ান এবার তাকে এক পাশে দিয়ে তুলতুলকে মাঝখানে রেখে তুলতুলের ডান পাশে শুয়ে পড়ে।
“এবার কোথায় যাইবা?
সায়ান তুলতুলের ব্লাউজের ফিতা ধরে টান দিয়ে বলে।
তুলতুল চমকে ওঠে। ঘাবড়ে যায়।
” দদদেখুন তাজ এখানে।
রিনরিনিয়ে বলে।
সায়ান তুলতুলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে নেয়। সাায়ানের ছোঁয়া গুলো বেহায়া হয়ে উঠেছে।
“সেটা তোমার ভাবা উচিত ছিলো।
ভাবো নি। সো এখন ডোন্ট ডিস্টার্ব। সারাদিন অনেক জ্বালিয়েছো। এখন না হয় আমি একটু জ্বালালাম।
তুলতুল বেচারা নিজের জালে নিজেই ফেসে গেছে এবার।
চলবে