#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১২
নিশুতি রাত। পুরো হসপিটালে নিস্তব্ধতা। করিডোরে লাইন ধরে জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে আলো। আলোর তীব্রতা অনেকটা কম। কারণ রাত হয়েছে বেশ। ঘড়ির কাঁটা প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। করিডোরের সেই লম্বা সিটে গা এলিয়ে চোখ বুঁজে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে রাগিনী। ঘুমের মাঝেই পুরো শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ঘুমন্ত মুখশ্রীতে জমেছে চিন্তার ছাপ। বিরবির করে ঘুমের মধ্যে কথা বলে চলেছে। বাড়িতে আজ ফিরেনি সে। ডক্টর এসেছিল বেশ রাত করে। ডক্টরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত ভঙ্গিতে রাগিনী তার অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ডক্টর আসার পর আজিম তাকে কোহিনূরের ঘরে নিয়ে আসে। কোহিনূরকে চেক করে আরো ভালো করে ড্রেসিং করে দেয় ডক্টর। আজিম এসে বেশ কয়েকবার রাগিনীকে ডেকে গিয়েছে। কিন্তু চোখ না মেলতে পারায় বা ঘুম না ভাঙ্গায় আজিম কিছুই না বলে চলে যায়। সে এসব সম্পর্কে বেশ উদাসীন। রাগিনীকে উটকো ঝামেলা মনে হয় তার কাছে। কারণ সে আসার পর পেশেন্টদের তারা যেভাবে সামলাতো তা পারছে না। একারণেই রাগিনীর প্রতি চাপা রাগটা রয়ে গেছে।
অফিসে বসে চেয়ারে ঘুমে ঢুলছে মেহরাজ। চোখটা আর মেলে থাকতে পারছে না। গালে হাত দিয়ে কোনোরকমে টেবিলে ভর করে বসে আছে। ঠিক সেই মূহুর্তেই জোরে জোরে বেজে ওঠে ফোনের রিংটোন। তার হাতের কাছে থাকা ফোনটা যেন তার শত্রু হয়ে ওঠে। চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে সে। চোখটা দুহাতে কচলে সামনে তাকিয়ে দেখে একাধারে ফোনটা বাজতে। ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস আর ঘুমে ফুলে যাওয়া মুখটায় বিরক্তি আসে। কে অসময়ে বিরক্ত করছে? সে ভেবেছে কলটা ধরে দেবে রামধমক। যেই ভাবা সেই কাজ! ফোনটা খুব রাগি ভাব ধরে হাতে নিতেই ফোনে থাকা নামটা দেখেই রাগি ভাবটা নিমিষেই দূর হলো মেহরাজের। হাত-পা কাঁপা শুরু করে। ফোনটাও যেন হাত থেকে পড়ে যাবে। সেই হাতে ফোনটা ধরে কোনোমতে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো কঠিন এক ধমক।
“স্টুপিড, ইডিয়ট, রাসকেল! আজ কতবড় একটা ব্লান্ডার করতে যাচ্ছিলে?”
থমথমে হয়ে গেল মেহরাজের মুখ। সে আবার কি করল? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে মগ্ন হয়ে পড়ল মস্তিষ্ক। তৎক্ষনাৎ নির্জন আবারও ধমকে বলে উঠল,
“আবার চুপ করে আছে। এখন যদি আমার সামনে থাকতে না তাহলে….”
“স্যার, আমি কি করলাম? একটু যদি স্মরণ করিয়ে দিতেন!”
এই কথাটা যেন নির্জনের রাগের আগুনে ঘি ঢালার মতো হলো। চিৎকার করে উঠল সে।
“কি করলাম মানে?”
বলেই আবারও আওয়াজ মিইয়ে গেল তার। ভুলে সে জোরে কথা বলে ফেলেছে,
“এমনিতে আমাকে তখন দুপুরবেলা ফোনের ওপর ফোন দিয়ে যাচ্ছিলে। তুমি কি জানো? আমি আর একটু হলে ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম? আর সব থেকে বড় ভুল করেছো তুমি রাগিনী তাজরীনের ওপর ওই হা’মলা চালিয়ে।”
বোকা বনে যায় মেহরাজ। চোখটা যেন শূন্যে উড়ে যাচ্ছে তার। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে। ওষ্ঠদ্বয় ফাঁক হয়ে বড় হা সৃষ্টি করেছে। মাথাটা হুট করেই ঘুরে উঠল তার। নিজেকে ঝাঁকুনি দিয়ে ঠিক করে বলল,
“স্যার, কাজটা তো আপনিই করতে বলেছিলেন।”
এবার ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে না। মেহরাজ ভালো করে ফোনটা ধরে। কিন্তু আসলেই ওপাশটা নিস্তব্ধ চুপচাপ। এরপর কাশির শব্দ শোনা যায়। গম্ভীর গলা ভেসে আসে,
“আই থিংক এতো বড় রিস্ক নেওয়া আমাদের ঠিক হয়নি।”
বলে থামে নির্জন। আবারও কন্ঠে ফুটে ওঠে রাগের তেজ।
“ওয়েট অ্যা মিনিট! আমি শুধু বলেছিলাম তার উপর রি’ভলবার দিয়ে হাম’লা করতে। যাতে আমি তার রিয়েকশন পর্যবেক্ষণ করতে পারি। এটা তো বলিনি ছু’রি নিয়ে তেড়ে আসতে! একজন তার দিকে ছু’রি নিয়ে গিয়েছিল। এই প্ল্যানিংটা কার মেহরাজ?”
নির্জনের শীতল গলা মেহরাজের ভয়ের কারণ। একটা ঢক গিলে সে কাঁপা সুরে জবাব দিল,
“স্যা…স্যার, আমি তো সেভাবে কিছু বলিনি। আমিও জানতাম না সে এই কান্ড করে বসবে। আপনি চিন্তা করবেন না। দরকার পড়লে আমি ওর এক্সট্রা ক্লাস নেব স্যার। তার হাতই ভেঙ্গে দেব যাতে আর কোনোদিন ছু’রি চালাতে না পারে। আর কখনোই এমন…”
কথাটা সম্পূর্ণ হবার আগে ফোনটা কাটলো ওপরপাশ থেকে। মেহরাজ স্যার স্যার বলেও আর কূল পেলো না। বুঝতে পারলো তার কপালে দুঃখ আছে। সেই দুঃখ সামলানো জন্য তৈরি হওয়া প্রয়োজন!
রাতের বেলা পানির বোতল না পেয়ে দরজা খুলে বাহিরে বের হলো কোহিনূর। ঘর থেকে বেরিয়ে করিডোরে পা রাখতেই চোখে পড়ল করিডোরের সাইড দিয়ে ঘেঁষে থাকা সিটের দিকে। এক স্নিগ্ধ মানবী গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকার দৃশ্য। তার চুলের বেনী ঝুলে রয়েছে। তার বেনীতে থাকা কাঠগোলাপগুলো মিইয়ে খুলে পড়েছে ফ্লোরে। গলার থাকা ওড়নাও অনেকাংশ ফ্লোরে পড়ে আছে। অথচ সে গভীর ঘুমে। বিরবির করার শব্দও পেলো কোহিনূর। কীসের স্বপ্ন দেখছে সে? কে জানে! পা টিপে টিপে একটু একটু করে এগিয়ে গেল কোহিনূর। যাতে তার শব্দে রাগিনীর ঘুম না ভাঙ্গে। রাগিনীর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে কোহিনূর। খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে মেয়েটির ঠোঁট কাঁপা, কপালে বিন্দু বিন্দু সেই ঘাম। কোহিনূর বিস্মিত হয়। মেয়েটা বাড়িতে যায়নি কেন? এখনো এভাবে কেন এখানে রয়েছে? তার জন্য? শুধুমাত্র সে আ’ঘাত পেয়েছে বলে? কিন্তু তার আ’ঘাত পাওয়ার সাথে এই মেয়েটার কি সাথ?
কোহিনূর ভেবে পায় না। ইচ্ছে করে রাগিনীর কপালের সেই ঘাম টুকু ছুঁইয়ে মুছে দিতে। নিজের ইচ্ছে টুকু দমিয়ে রাখতে পারে না সে। হালকা করে হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে খুব সাবধানে রাগিনীর কপাল ছুঁইয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তার কাঁধ যেন ব্যথা করে ওঠে বেশ। চোখমুখ খিঁচে ফেলে কোহিনূর। হাত উঠানো যাচ্ছে না। কাঁধে ব্যথা করছে। চোখমুখ কুঁচকে ফেলেও মুচকি হাসে কোহিনূরের। নিজ মনে বলে ওঠে,
“দ্যাটস্ নট অ্যা বিগ ম্যাটার। শরীরের অশান্তি তবে মনের শান্তি। মনের শান্তিই তো আসল তাই না মিস. রাগিনী?”
ঘুমন্ত রাগিনীর কাছ থেকে পাল্টা কোনো জবাব আসে না বলে কোহিনূর আবারও বলে,
“তোমার কপালে লেগে থাকা ওই ঘাম মুছে দিয়ে আমি মনের শান্তি লাভ করেছি রাগিনী। কোথাও গিয়ে আমার মনে তুমি আঁটকে গিয়েছো কেন এভাবে?”
ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে অপলক নয়ন পড়ে কোহিনূরের। তারপর কিছুটা শব্দ করে হাসে সে। বলে ওঠে,
“ওহ হো কোহিনূর! ইউ আর রিয়েলি গোয়িং ক্রেজি! যার সঙ্গে কথা বলছো সে ঘুমের দেশে কারো স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত। ডোন্ট টক।”
বলে নিজেই নিজের আঙ্গুলটা ঠোঁটের উপর রাখে কোহিনূর। হঠাৎ সে বুঝতে পারে রাগিনী কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। কেঁপে কেঁপে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কান এগিয়ে দেয় কোহিনূর। শোনার চেষ্টা করে রাগিনীর বলা কথাগুলো।
“গু’লি ছুঁড়বেন না প্লিজ। আমি ম’রে যাব। আমি কি…কিছু করিনি। আমাকে মা’রবেন না প্লিজ।”
কোহিনূর অস্পষ্ট শব্দগুলো শুনতে পেলো। তার বিস্ময়ের সীমা রইল না এবার। মেয়েটাকে প্যানিক এট্যা’ক করেছে। থম মেরে বেশ কিছুক্ষণ বসে রইল কোহিনূর। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ তার। অনুশোচনার রেখাগুলো স্পষ্ট মুখে ফুটে উঠেছে। নিজের অজান্তেই রাগিনীর মাথায় হাত রাখে সে। ফিসফিস করে রাগিনীর মুখের সামনে বলে ওঠে,
“আই এম সরি, বিউটি কুইন! আই এম রিয়েলি সরি।”
আচমকা নিজের হাতটা সরিয়ে ফেলে কোহিনূর। ঢোক গিলে নিজেকে ধাতস্থ করে আবারও রাগিনীর কপালে হাত রেখে দেখে তার শরীর বেশ গরম। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রাগিনী। এবার নিজের কপালে হাত পড়ে কোহিনূরের। আশেপাশে তাকিয়ে এতো রাতে কারোর দেখা মিলে না। সবাই তো ঘুমে। উপায় না পেয়ে দ্রুত নিজের ঘরটার দিকে গিয়ে রাগিনীর কিনে দেওয়া সেই ব্লেজারটা নিয়ে ফিরে আসে। রাগিনীর গায়ের উপর সেটা জড়িয়ে দেয় সে। তাও যেন হয় না। আবারও ছুটে নিজের ঘরে ঢুকে তার ঘরের মধ্যে থাকা ব্ল্যাঙ্কেটটাও নিয়ে এসে পুরোপুরি রাগিনীকে জড়িয়ে দিয়ে হাফ ছাড়ে কোহিনূর। রাগিনীর কাঁপুনি কমছে না। রাগিনীর পাশে সিটের পাশ ঘেঁষে ফ্লোরেই বসে পড়ে কোহিনূর। মাথায় কিছুই আসছে না। বিরক্ত লাগছে তার নিজের প্রতি। হাত-পা ছুঁড়ে ফ্লোরে বসে থাকে একমনে। বিরবির করে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে,
“হঠাৎ করে তার জ্বর এলো কেন? শুধুমাত্র বিকেলের ওই ঘটনার জন্য? সে এতোটাই ভীতু যে সামান্য বিষয়টাতে এতোই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তার জ্বরও চলে এসেছে। এটা কি করে সম্ভব হয়?”
কথাগুলো যখন কোহিনূর আপনমনে আওড়ে যাচ্ছিল তখন বিড়াল ছানার ডাক কানে ভেসে আসে তার। কোহিনূর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। বিড়াল ছানা লাফ দিয়ে সিট থেকে নিচে নেমে কেমন যেন রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। কোহিনূর খেয়াল করেনি রাগিনীর কাছেই এই বিড়াল ছানাটি ঘুমোচ্ছিল। তার কথায় কি সে জেগে গেল? ছানাটিকে দেখে একটা বোকা হাসি দিল কোহিনূর। একটা কানে ধরে বলল,
“সরি সুইটি! আমার জন্য জেগে গিয়েছো?”
বিড়াল ছানার রাগটা যেন বেড়ে গেল। জোরে জোরে মিউ মিউ শব্দ করে তেড়ে এলো কোহিনূরের দিকে। কোহিনূরের হাসি পেল ভীষণ। তার গায়ে হাত রেখে বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখতে দুই আঙ্গুলের হলে কি হবে? রাগের কমতি নেই। যেন ধানিলঙ্কা! একদম নিজের মালকিনের মতো।”
বিড়াল ছানাটি এবার ফ্লোরে সুন্দর মতো বসে পড়ে। লেজ নাড়াতে নাড়াতে চোখ বুঁজে নেয়। তার ঘুম পেয়েছে। কোহিনূরও আর তাকে বিরক্ত করে না। নিজের ভাবনায় ডুবে যায়। মাথাটা লাগিয়ে দেয় সিটের হ্যান্ডেলের সাথে। কি হচ্ছে তার সাথে? কেন হচ্ছে? সেসবের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
লন্ডনে এখন ভোর। শান্ত শহরে এখনো ঠিক করে সূর্যের দেখা যায়নি। আকাশটা মেঘলা। সবে আধো আধো আলো ফুটেছে। এই সময় বেশির ভাগ মানুষই নিজেকে ফিট রাখতে জগিং করতে বের হয়। রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায় অনেক মানুষকেই। সেই সময় বাড়ি থেকে ছোট সাজানো গার্ডেন পেরিয়ে হাতে লাগেজ নিয়ে টেনে বেরিয়ে আসছে নয়নতাঁরা। লাগেজে জামাকাপড় হয়ত একটু বেশিই ভরে ফেলেছে। টানতেও কষ্ট হচ্ছে তার। কাঁধে একটা সাদা ব্যাগ নিতেও কষ্ট হচ্ছে এখন। তবুও নিজেই টেনে নিয়ে গিয়ে পাঁচিলের সাথে যুক্ত থাকা বড় গেটের সামনে দাঁড়াতেই দুজন নাইটগার্ড তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। থতমত খেয়ে দাঁড়ায় নয়নতাঁরা। নাইটগার্ডগুলো লন্ডনের। বড় বড় প্রশস্ত দেহের অধিকারী। নয়নতাঁরার ভয় লাগে তাদের দেখে। ইয়া বড় তাল গাছের সমান। তাদের এই ভারি হাত দ্বারা যদি একটা থাপ্পরও মারে তাহলে নয়নতাঁরাকে আর আলাদা করে প্লেনের ফ্লাইটের টিকিট বুক করে দেশে ফিরতে হবে না। থাপ্পরের চোটে উড়েই গিয়ে পড়বে দেশের মাটিতে। তবে নয়নতাঁরাও বেশ সাহসী। দেখতে ছোটখাটো হলেও বেশ কথা জানে। সে ইংলিশে জিজ্ঞেস করে,
“হোয়াট আর ইউ স্টিল ডুয়িং হেয়ার? নাউ ইট ইজ মর্নিং। আই নিউ বোথ ওফ ইউ অনলি গার্ড এট নাইট!”
তাদের দুজনের মধ্যে একজন বেশ স্মার্টলি বলে উঠল,
“মি. আহমেদ টোল্ড আস টু কিপ ওয়াচ অল ডে ফ্রম নাউ অন!”
মুখটা থমথমে হলো নয়নতাঁরা। নিচের অংশের ঠোঁট উল্টিয়ে খুব ধীর কন্ঠে বলে,
“বিগ ব্রাদার বাহিরেও আমার উপর নজরদারি করছে। দ্যাটস নট ফেয়ার!”
গার্ডের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে নয়নতাঁরার। তার মুখ তুলে গোল গোল চোখে তাকায়।
“ম্যাম, মে উই নো হোয়্যার ইউ আর গোয়িং দিস টাইম?”
প্রশ্নটা শুনেই বোকা হাসি দেয় নয়নতাঁরা। কিছু একটা ভেবে নিয়ে দ্রুত বলে,
“আই এম গোয়িং আউট টু ডু এক্সারসাইজ।”
বলেই চোরের মতো নিচে তাকিয়ে বের হতে চায় দ্রুত হেঁটে নয়নতাঁরা। কিন্তু বিধি বাম। গার্ড দুজন দুটো হাত দিয়ে মেলে ধরে তাকে আঁটকে দিতেই গায়ের লোম শিউরে ওঠে নয়নতাঁরার। তার থাপ্পর খাওয়ার শখ নেই। গালে তার আপনাআপনি হাত চলে যায়। ভীতু চাহনি দিয়ে তাদের দিকে তাকায়। একজন গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“বাট ম্যাম, হু গোজ টু এক্সারসাইজ উইথ অ্যা বিগ লাগেজ? সরি ম্যাম, ইউ কান্ট গো!”
নয়নতাঁরা তার হাতে ধরে রাখা লাগেজের দিকে তাকায়। দাঁত কিড়মিড় করে অসফল হয়ে পিছু ঘুরে হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকে গার্ডদের ভেংচি কেটে খট করে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রান্নাঘরে ঢোকে নয়নতাঁরা। গলা শুঁকিয়ে গেছে। ফিল্টার থেকে পানি গ্লাসে ভরে ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেলে সে। মাথায় তার অন্যকিছু ঘুরছে। হঠাৎ করেই লিভিং রুমের বড় জানালার দিকে চোখ পড়ে তার। মিটমিটিয়ে হাসে। লিভিং রুমের পেছন সাইডে বড় জানালাটি বাড়ির পেছন সাইড পড়ে। হাতে লাগেজ পুনরায় ধরে নাকে ঘষা দিয়ে ভাব নিয়ে বলে,
“লেটস সি বিগ ব্রাদার, কার বুদ্ধি বেশি!”
লাগেজটা টেনে টেনে নিয়ে গিয়ে জানালার থাই খুলে সেটা আস্তে করে ফেলে দেয়। যেহেতু এটা নম্বর ওয়ান ফ্লোর। তাই লাগেজের ক্ষতি হবে না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নয়নতাঁরা। লাগেজ ফেলে দিয়ে দুহাতে তালি দিয়ে প্রগাঢ় হাসি দিয়ে আবারও বাহিরে গিয়ে দরজা লক করে হেঁটে গার্ডদের কাছে আসে নয়নতাঁরা। ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার দুটো হাত দেখিয়ে বলে ওঠে,
“নাউ আই ক্যান গো আউটসাইড টু ডু এক্সারসাইজ, রাইট?”
গার্ড দুজন নয়নতাঁরার মাথা থেকে পা অবধি দেখে নিল। মেয়েটার মুখে মিষ্টি হাসি দেখে তারা দুজন দুজনের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। নয়নতাঁরা এবার তার চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতেই তার হাসি বাড়ল। হেঁটে হেঁটে যেই মোড় ঘুরে বাড়ির পেছনের রাস্তায় যাবে একটা চিৎকার শুনে রাস্তার সামনে তাকালো সে। একজন দৌড়ে আসছে নয়নতাঁরার লাগেজ নিয়ে। তার পরনেও গার্ডদের পোশাক। নয়নতাঁরা একটু খানি সময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। বিস্ময়ে মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেল। বুঝতে বাকি রইল না বাড়ির পেছনেও গার্ড ছিল। বড় একটা শ্বাস নিল নয়নতাঁরা। বিরবির করে কিছু বলতে বলতে ছুট লাগালো। সামনে একটা ক্যাব দেখে দৌড়ে উঠে পড়ল। ড্রাইভারও চমকে গেল। নয়নতাঁরা তাড়াহুড়ো করে বলল এয়ারপোর্টে যেতে। ড্রাইভার ড্রাইভিং স্টার্ট করল। কাঁদো কাঁদো মুখ করে জোরে জোরে এবার বলল,
“সরি মাই লাগেজ। এইবার হয়ত তোকে নিয়ে যেতে পারব না নিজের সাথ করে। পাসপোর্ট আর দরকারি কাগজ ভাগ্যিস আছে ব্যাগেই আছে। আর সবচেয়ে দরকারি জিনিস….”
কথাটা সম্পূর্ণ না করেই নয়নতাঁরা তার ব্যাগের চেইন খুলে ইন্সপেক্টর রায়ানের ছবিটা বের করল। স্বস্তির হাসি বেরিয়ে এলো তার। মুগ্ধ নয়নে রায়ানের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ডোন্ট ওয়ারি মাই ডিয়ার ইন্সপেক্টর! আই এম কামিং।”
ছবিটাতে ফট করেই নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ দিয়ে লাজুক হবার ভান ধরল নয়নতাঁরা। কিছুক্ষণ পর বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে নিজে নিজে বলল,
“মানতেই হবে! ইউ আর রিয়েলি অ্যা বিগ বস বিগ ব্রাদার। বাট ডোন্ট ফরগোট দ্যাট আই এম ইউর ইন্টেলিজেন্ট সিস্টার!”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প দেওয়ার কথা ছিল আজ সকালে। কিন্তু টিউশনের সাথে খালামনির বাড়িতে আসা নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কোনোটাই হয়নি। তাই দেরি হয়ে গেল। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]