#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৭
“এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন ইন্সপেক্টর? আমার কয়টা সন্তান এই ব্যাপারে নিশ্চিত হবো না কেন আমি? আপনি আমাকে এসব অদ্ভুত প্রশ্ন করে বিব্রত করছেন।”
রাশেদ সাহেবের চটপটে কন্ঠ। বোঝাই যাচ্ছে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন উনি। সারা শরীরে অস্থিরতা স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে। রায়ান উনাকে আশ্বস্ত করে বলল,
“রিল্যাক্স, স্যার। আপনি আমার কথা অন্যভাবে নিয়ে নিচ্ছেন। এমন অনেক ঘটনা ঘটে আজকাল। দুটো বেবি হয় আর একজনের প্রবলেমের কারণে মা’রাও যায়। তাই আমি জিজ্ঞেসা করছি। আপনার জীবনে কি এমন কোনো ঘটনা আছে?”
“না নেই। আমার একমাত্র সন্তান রাগিনী। তার জন্মের সময় কোনো কমপ্লিকেশনস্ ছিল না। সে সুস্থ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।”
রায়ান এবার রাশেদ সাহেবের উত্তরে এক গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হলো। বৃদ্ধি আঙ্গুল দিয়ে কপালের ধার বুলাতে বুলাতে ভাবতে থাকল লোকটি আসলেই সত্যি কথা বলছে? নাকি সম্পূর্ণটাই মিথ্যে? আবার এমন নয় তো? যে নিজের অন্য মেয়েকে বাঁচাতে উনি নিজেও এসবে শামিল? মাথা ঝাঁকুনি দিল একবার রায়ান। কীসব উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা। তার সামনের মানুষটা তো যেমন তেমন মানুষ নয় যে অ’পরাধে জড়িয়ে যাবে আর নিজের মেয়েকেও সেই পথে চালনা করবে। উনি শাহ্ রাশেদ। ঢাকার কয়েকজন বিখ্যাত সাইকোলজিস্টের কথা বললে সর্বপ্রথম উনার নামই ওঠে। এমন মানুষের কী প্রয়োজন এমন ক্রা’ইমে জড়ানোর? রাশেদ সাহেবের কন্ঠে একটা একটা করে ভাবনার সুতো কেটে যায় রায়ানের।
“কিন্তু এমন উইয়ার্ড কুয়েশ্চন করার রিজন আমি জানতে পারি?”
রায়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে জবাবে বলে,
“বিষয়টা অনেক জটিল। ঢাকায় যেই টে’রো’রিস্ট টিমের থা’বা পড়েছে সেটা সবাই জানে। আই গেস, আপনিও জানেন।”
“তার সঙ্গে এই প্রশ্নের কী সম্পর্ক ইন্সপেক্টর?”
রায়ান এবার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শেখরকে ইশারা করতেই শেখর তার দিকে একটা মোটা কাগজ এগিয়ে দেয়। রায়ান সেটা নিয়ে টেবিলে মেলে ধরতেই দৃশ্যমান হয় রাগিনীর আঁকা স্কেচ। তা দেখে নড়েচড়ে চশমা ঠিক করে বসেন রাশেদ সাহেব।
“এটা তো আমার মেয়ে।”
“আপনি সিউর? এটা আপনার মেয়ে?”
“আশ্চর্য! আমি সিউর হবো না কেন? আমার র’ক্তকে চিনতে আমার ভুল হবে কেন? আমি ওকে নিজের বুকের পাঁজরে রেখে বড় করেছি। আপনার কথাবার্তায় আর বিব্রত করবেন না আমায়।”
আবারও উত্তেজিত রাশেদ সাহেবকে রায়ান ঠান্ডা গলায় বলল,
“আপনি কি জানেন? এই স্কেচের মেয়েটার ব্যাগে বো’ম বানানোর মেটেরিয়ালস্ আর রি’ভলবা’র পাওয়া গিয়েছে?”
বিস্ময়ের সীমানা রইল না রাশেদ সাহেবের। মাথাটা কেমন যেন ভমভন করছে উনার। কথাগুলো যেন নেওয়া যাচ্ছে না আর। কন্ঠস্বর মিইয়ে গিয়েছে। তবুও বললেন,
“হোয়াট? কী বলছেন?”
“ঠিক বলছি। আপনার মেয়ে রাগিনী তাজরীন যেদিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাতে ব্যাক করে সেদিন আপনার মেয়ের পরিচয়েই আরেকজন আপনার মেয়ের মতোই দেখতে হুবহু একজন ওই ট্রেনেই ছিল। আর সে টেরো’রিস্ট টিমেরই একজন।”
কী বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না রাশেদ সাহেব। সবটাই যেন একটা অবিশ্বাস্য কান্ড। যেটা বিশ্বাস করতে না পারলেও সত্য। পুলিশের লোক নিশ্চয় মিথ্যে বলবে না। মাথাটা ঠান্ডা করতে চাইলেন নিজের। কারণ এই বিষয়ে এখন খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন। এটা উনার মেয়েকে নিয়ে প্রশ্ন। যাকে সবসময় উনি আগলে রেখেছেন। রাগিনী হলো উনার সাত রাজার ধন। তাকে হারাতে দেবেন না কিছুতেই। তাই নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলেন,
“তার মানে আপনারা বলতে চাইছেন রাগিনীকে ফাঁসানো হচ্ছে?”
“ঠিক সেটাই। আসলে আমরা প্রথমে সন্দেহ করি আপনার মেয়েকেই। সেটা ধরে এগোতে থাকি। তাকে সরাসরি গিয়ে ধরতে পারছিলাম না উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পেয়ে আমরা হতাশ হই। পরে আস্তে আস্তে ধরা পরে আপনার মেয়ের মতোই অন্য একজন। যার সত্ত্বা ভিন্ন তবে চেহারা এক।”
“কিন্তু এটা কীভাবে পসিবল? আমার জমজ মেয়ে ছিল না। আমার আজও স্পষ্ট সেইদিনের কথা মনে আছে। আমার রাগিনীর জন্ম হলো। আমি খুশি ছিলাম। সেই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল না। ডক্টর কখনো আমাকে জমজ বেবির কথা বলেনি। আর রিপোর্টেও যতবার দেখেছি একটাই মেয়ে বাচ্চার কথা উল্লেখ ছিল।”
বলেই থামেন রাশেদ সাহেব। ঠোঁট চেপে কিছু একটা ভাবেন। আশেপাশে তাকান। অন্য একটা কথা হুট করেই মাথায় খেলে যেতেই তিনি বিদ্যুতের গতিতে বলে উঠলেন,
“ওয়েট ইন্সপেক্টর! এটা ইম্পসিবল না। প্লাস্টিক সার্জারি বলেও একটা শব্দ আছে। এটা অসম্ভব কিছু না এখন। আর আমি শুনেছিলাম বিদেশ থেকে এখন নামি-দামি সার্জন আনা হয়। এরা খুব নিখুঁতভাবে চেহারা গড়িয়ে দিতে পারে।”
রায়ানের চোখমুখের ভাবমূর্তি এমন হলো যেন সে সোনার খনি খুঁজে পেয়েছে। হাত দুটো মুঠো করে কাঁপতে থাকল সে। উত্তেজনা চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করে একটা বড় শ্বাস নিয়ে হেঁসে বলল,
“ব্রিলিয়ান্ট! এটা তো মাথাতেই আসেনি। ইউ আর রিয়েলি অ্যা ব্রিলিয়ান্ট স্যার।”
সিসিটিভিতে নিষ্পলক হয়ে মনোযোগ দিয়ে প্রতিটা দৃশ্য দেখছে নির্জন। রাশেদ সাহেবের প্রতিটা প্রতিক্রিয়াও তার চোখ এড়াতে দেয়নি। স্পিকার থেকে প্রতিটা শব্দ শুনেছে। একটাও মিস করেনি। আর শেষের কথোপকথনে এবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে তার। কোথাও একটা থমকে গিয়েছে। থরথর করে কাঁপছে তার দুটো হাত। পাশেই মেহরাজও সব শুনেছে দেখেছে। সেও হতবিহ্বল হয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছে। ব্যাপারটা এভাবে ঘুরে যাবে সে ভাবতেই পারেনি। গলা খাঁকারি দিয়ে নির্জনের মনোযোগ নিতে চাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো মেহরাজ। মিনমিন করে ডেকে উঠল,
“স্যার!”
“বাঁচার জন্য মানুষ কত ফন্দিই না করে। কিন্তু নকল সোনাকে নির্জন আহমেদ হাতের মুঠোয় দুমড়েমুচড়ে শে’ষ করে দেবে। অনেক হয়েছে লুকোচুরি খেলা। এবার সামনে আসতে হবে।”
মেহরাজ উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,
“কীভাবে স্যার?”
“খুবই সহজ মেহরাজ। সেদিন ওই মেয়েটা আমাকে দেখেছে হসপিটালের বাহিরে। সে যেহেতু রাগিনীর দিকে সবসময় নজর রাখে তাই সে আমাকে চিনতো এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেদিনের পর সে জেনে গিয়েছে আমি পুলিশের লোক। আর ইনভেস্টিগেশন করছি। তাই ইন্সপেক্টর রায়ানের মতো আমাকেও তাদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হবে এটাতেও আমি নিশ্চিত। আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যেই নকল রাগিনী তাজরীন ধরা দেবে। আই এম ওয়েটিং।”
সকাল সকাল সারা শরীরের ভীষণ ব্যথায় একপাশ হয়ে আধশোয়া হয়ে রয়েছে ছিপছিপে গড়নের নারী। পা দুটো মাঝে মাঝে দুলছে। মুখ দিয়ে চুইংগাম চিবিয়ে মাঝে মাঝে বেলুন ফুলাচ্ছে। ঘাড়ে হাতটা রেখে বুলিয়ে বেশ আক্রোশের সাথে বলে উঠল,
“হারা’মজা’দা গুলো যদি একা থাকত আর আমার হাতে ওই পি’স্তল! তাহলে বুঝতো রূপা কী জিনিস! শুধুমাত্র ওই অভিরূপের জন্য আমাকে ওদের শুধু কয়েকটা মে’রেই নিজের মনকে শান্তনা দিতে হলো।”
বলেই থামল সে। পরক্ষণেই ভেবে বলল,
“না। তার জন্য না। সে আমাকে হেল্প করেছে। জীবনে প্রথম যখন ভয় নামক শব্দটা উপলব্ধি করেছিলাম লোকটা যেন ম্যাজিকের মতো সামনে এলো। আর আমাকে…”
বলেই থামল রূপাঞ্জনা। উঠে বসল তড়িঘড়ি করে। নিজের হাত, বাহু, কোমড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল। এখানেই তো অভিরূপ ছুঁয়েছিল তাকে। কোলে তুলে নিয়ে সে কী দৌড়! দৌড়াতে পারে না পিছলে পিছলে যায় তবুও থামে না। ভাবলেই হাসি পায় রূপাঞ্জনার। আবার মনের দ্বারে অদ্ভুত একটা নতুনত্ব খুঁজে পায়। তাকে জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষ এভাবে রক্ষা করার স্বার্থে ছুঁয়েছে। সেই ছোঁয়ায় আ’ঘাত ছিল না। একটা আগলে রাখার মতো স্পর্শ ছিল। ডার্ক ম্যাক্সও তার হাত ছুঁয়েছে, গাল ছুঁয়েছে। কিন্তু এভাবে আগলে রাখার জন্য নয়। আ’ঘাত দেওয়ার স্বার্থে। যন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টায়। ঠিক একারণেই বোধহয় মনের মধ্যে নতুন অনুভূতি উদ্ভব হয়েছে। কারণ যাই হোক না কেন মানুষটা তাকে বাঁচিয়েছে। দরজায় টোকা পড়ল। ভাবনার মাঝে ডুবে থাকা রূপাঞ্জনার ভাবান্তর হলো না। সে জানে দরজার ওপাশে কে। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল কবির। হাতে একটা টিফিনবক্স। রূপাঞ্জনা একবার কবিরের দিকে চাইতেই কবির মুখ খুলে বলল,
“বস! সব রেডি।”
“দ্যাটস গুড। এখন যা। আমি রেডি হবো।”
কবির মাথা ঝাঁকিয়ে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই রূপাঞ্জনা তাকে পিছু ডেকে বলে,
“কবির শোন!”
“ইয়েস, বস!”
“ধর কেউ কখনো যদি তোকে একটা বড়সড় বিপদ থেকে বাঁচায়, তারপর তুই জানতে পারলি যে তোকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে তাকেই তোকে মা’রতে হবে। অর্থাৎ, যে তোর জীবন বাঁচিয়েছে তার জীবনটাই তার থেকে আলাদা করতে হবে। তখন কও তাকে মা’রতে তোর হাত কাঁপবে?”
কবির প্রশ্নটা শুনে মাথা চুলকায়। কী অদ্ভুত প্রশ্ন! এর উত্তর যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে উত্তরে বলে,
“কিন্তু বস আমাকে শ’ত্রুপক্ষ কেন বাঁচাতে যাবে? আর আমাদের তো এটা ছোটকাল থেকে শেখানো হইছে যে যেমনই হক যদি তাকে শে’ষ করা একমাত্র লক্ষ্য হয় তাহলে তাকে শেষ করা উচিত। আপনেই তো এটা বলছিলেন আমাদের।”
রূপাঞ্জনার মুখশ্রী যেন বেলুনের মতো চুপসে যায়। থতমত খেয়ে কোনোরকমে জবাব দিল,
“তুই এখন যা তো। আমার কাজ আছে।”
তার এমন ধমকানি খেয়ে ভ্যাবাচেকা খেল কবির। এক্ষুনি তো বস নিজেই তাকে দাঁড়াতে বলল। আবার হঠাৎ করেই ধমকে বলছে বেরিয়ে যেতে। কী আজব! মুখটা ভার করে বেরিয়ে যায় কবির। সে বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে উঠে গিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে একটা সালোয়ার কামিজ বের করল রূপাঞ্জনা। এমন ধরনের পোশাক পড়ার অভ্যেস নেই তার। ওড়না সামলে উঠতে হিমশিম খায় সে। ছোট্ট একটা স্কার্ফই তার থেকে বেশ সহজ সামলানো। কিন্তু কী আর করার। এটাই করতে হবে। রাগিনী তাজরীন হয়ে নাকি উঠতে হবে! নিজের আসল পরিচয় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। হাতে ওড়না ধরল রূপাঞ্জনা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের কন্ঠ শক্ত করে বলল,
“ঠিকই তো। এতো নি’ষ্ঠুর রূপার হাত কেন কাঁপবে কাউকে মা’রতে? কাঁপা তো উচিত নয়। কাঁপবে না তার হাত। আবার মেতে উঠবে ম’রণ খেলায়।”
সকাল থেকে একবার ঘরের জানালার কাছে যাচ্ছে তো একবার দরজার কাছে আসছে কোহিনূর ওরফে নির্জন। পা দুটোকে যেন শান্তি দিচ্ছে না। কখন যেন পা দুটোও অতিষ্ট হয়ে বলে উঠবে,’থাম ভাই। আমাদের আর এতো জ্বালাস না। তোর মনের আগুন ঠান্ডা করতে গিয়ে আমাদের অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছিস কেন?’
কিন্তু কোহিনূর যে শান্তি পাচ্ছে না সেটা তো দুটো পা বুঝতে চাইছে না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কোহিনূর আপনমনে বিরবির করে ওঠে,
“মেয়েটা কালও এলো না। আজও এখনো আসছে না। ঠিক আছে তো? সে কি বোঝে না একবারও আমার মনের অবস্থা?”
আবারও চুপ থাকে কোহিনূর। হেঁটে হেঁটে জানালার কাছে গিয়ে উঁকি দেয় মেইন দরজার দিকে। মনে তীব্র আশা বেঁধে রয়েছে। মনে হচ্ছে এইতো রাগিনী এলো! এইতো দরজায় ঠেলে হাতে টিফিবক্স নিয়ে ভিতরে ঢুকল। তবে তেমনটা তো হলো না। এবার মুখ ভার করে বিছানায় গিয়ে বসল কোহিনূর। আপনমনে আওড়াল,
“সে যদি একবার জানতো সে আমার কাছে শীতল বর্ষণের মতো। যেই বর্ষণ না পেলে মনের রাজ্যে দুর্ভিক্ষ লেগে যায়। তাহলে হয়ত সে বর্ষণ কন্যা হয়ে সবসময় আমার সংলগ্নে উপস্থিত থাকতো।”
ফোনের ভাইব্রেশন উপলব্ধি করল কোহিনূর। নড়েচড়ে উঠে পকেট থেকে ফোনটা বের করল সে। মেহরাজ কল করেছে। নিশ্চয় কোনো জরুরি খবর! আর সেটা যদি না হয় তবে এবার আজেবাজে কথা বলার দরুন নিশ্চিত তার একমাসের জন্য হসপিটালে থাকা পাকা করে দেবে কোহিনূর। তবে এখানে কথা বলা যাবে না। যেকোনো মূহুর্তে রাগিনী এলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই ভেবে ফোন রিসিভ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।
ঘরে ফিরে এলো কোহিনূর ঠিক মিনিট দশেক পর। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই যে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার সাক্ষাৎ পাবে এবং প্রথমেই দৃষ্টি তার দিকে পড়বে ভাবতে পারেনি সে। আনন্দের জোয়ারে যেন ভেসে গেল মনের রাজ্য। উতলা হয়ে উঠল তার নিকটে যেতে। রাগিনী বিছানায় বসে একমনে টিফিনবক্স খুলছে আর খাবার বের করছে। কোহিনূরকে খেয়াল করেনি এখনো অবধি। পা টিপে টিপে গিয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াল কোহিনূর। কিছুটা ঝুঁকে পড়তেই যখন তার গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পড়ল রাগিনীর কাঁধে তৎক্ষনাৎ চমকে উঠে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল রাগিনী। অতঃপর অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল,
“আপনি? আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন।”
“তাই? তোমাকে তো ভয় পাওয়াতে ভালো লাগে আমার। ভীতু চোখমুখ দেখতে অসাধারণ লাগে।”
রাগিনী ব্যস্ত কন্ঠে জবাব দিল,
“তাই না? সব উদ্ভট জিনিসের ভালো লাগা আপনার।”
“কী করব বলো? আমি মানুষটাই তো উদ্ভট ভয়ানক।”
“এখন খেতে বসুন তো তাড়াতাড়ি। সময় নেই হাতে।”
বলেই কোহিনূরের হাতটা ধরতেই তীক্ষ্ণ চোখে রাগিনীর ধরা হাতের দিকেই তাকায় কোহিনূর। ফিচেল হাসি দিয়ে হাত মুঠো করে রাগিনীর সামনে বসে। রাগিনী খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নিন। আজকের খাবারটা আমি বানিয়েছি। খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে।”
কোহিনূর হাতে খাবারের বাটি নিয়ে প্রথমে গন্ধ নিয়ে প্রশান্তির সুরে বলে,
“গন্ধই বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে মা’রার প্ল্যানিং করে রেখেছো মিস.।”
রাগিনী যেন থতমত খায়। মুখের বর্ণ বিবর্ণ হয়। ধূসর এক আবরণে মাখিয়ে যায় মুখশ্রী। ভীত সুরে বলে,
“মা…মানে?”
“আরে বাবা এতো সুন্দর স্মেল বের হচ্ছে খাবার থেকে যেন অমৃত। খেয়ে স্বাদের চোটে ম’রে টরে না যাই।”
বলেই হেসে দিল কোহিনূর। রাগিনীর মধ্যের প্রতিক্রিয়া অদ্ভুত মিশ্র। সেও হাসছে। তবে মন খুলে নয়। কোহিনূর এবার খাবারটা মুখে দিতে গেলেই হাত থেকে বাটি ফসকে খাবার সহ বাটি সবটা পড়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে রাগিনী। মুখটা কুঁচকে যায়। ফুঁসে বলে ওঠে,
“এটা কী হলো?”
“আই এম সরি রাগিনী। আমি তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে…”
রাগিনী দম ফেলে রেগেমেগে তাকে থামিয়ে বলল,
“থাক আমি বুঝেছি। সব ভেস্তে দিলেন আপনি, সব।”
বলেই ঝুঁকে বাটিটা তুলতে গেল রাগিনী। কোহিনূর ঘাড় কাঁত করে রাগিনীকে পর্যবেক্ষণ করা মাত্রই মুখভঙ্গি কঠিন হলো তার। চোয়াল শক্ত করে হাওয়ার বেগে তার পেছনে গিয়ে সরাসরি রাগিনীর গলায় হাত চেপে অন্যহাতটা রাগিনীর দুটো হাত আবদ্ধ করল সে। মূহুর্তেই মধ্যেই ব্যাপারটা মাথায় উপর দিয়ে গেল রাগিনীর। গলায় চাপ লাগায় কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও চোখ বড় বড় করে বলল,
“আবার পাগলামি শুরু করেছেন আপনি?”
“স্টপ ইউর লেইম ড্রামা। আমাকে মা’রার সব প্ল্যান ভেস্তে গেল তাই না নকল রাগিনী তাজরীন?”
ফ্যাকাশে হলো রূপাঞ্জনার মুখশ্রী। ধরা দিল মুখে ভয়। ছটফটিয়ে উঠল ছাড়া পাওয়ার জন্য। তখনি আরো জোরে মুচড়ে ধরল কোহিনূর। রূপাঞ্জনা আর্তনাদ করে উঠল। তবুও দম কমলো না তার। শাসিয়ে বলে উঠল,
“আমাকে ছেড়ে দে। নয়ত ফল ভালো হবে না।”
“আমি ভয় পাই না তোমার এই সামান্য শাসিয়ে বলা কথায়। অবাক হচ্ছো না? যে তোমাকে চিনলাম কী করে? এতো ঘটা করে রাগিনীর মতো সাজ দিয়ে এসেছো। চুলগুলোও বেঁধে এসেছো। তবুও ধরা খেলে সো স্যাড!”
রূপাঞ্জনা এবার প্রতিত্তোর দেয় না। চিৎকার দিয়ে ওঠে জোরেসোরে। তার চিৎকারে যেন কেঁপে ওঠে ঘর। এমনটা করার কারণ খুঁজে না পেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই দৃশ্যমান হলো বিষয়টা। দরজার কাছে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসা হলো আজিম আর পলাশকে। তাদেরকে দেখামাত্র হতবাক হলো কোহিনূর। ওদের তো আজ ছুটি দেওয়া হয়েছিল। তবে ওরা এখানে কী করে এলো? এমনকি এই হসপিটালের প্রতিটা পেশেন্টকে এতোক্ষণে পুলিশ টিমের সকলে সেফ প্লেসে নিয়ে যাওয়ার কথা পেছনের গেট দিয়ে। সেটাতেও কি ওরা সক্ষম হয়নি? প্রতিটা পেশেন্টকে এতোক্ষণে তার মানে এদের যতটা বোকা কোহিনূর ভাবছে ততটা বোকা তারা নয়। আটঘাট বেঁধে নেমেছে। রূপাঞ্জনার বাঁধন আলগা হয়ে আসতেই কোহিনূরকে ধা’ক্কা দিয়ে সরে আসে সে। কোহিনূর নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পকেট থেকে রি’ভলবার বের করে রূপাঞ্জনার দিকে তাক করল সে। রূপাঞ্জনা পেছনে ফিরেই ব্যাগ থেকে নিজের রি’ভলবার বের করে আজিম আর পলাশের তাক করল। সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হলো পুলিশের লোকেরাও। তারাও প্রস্তুত হলো। তবে রূপাঞ্জনা বলে উঠল,
“আমাদের দিকে গু’লি চালিয়ে লাভ নেই। আমাদের এতোজনের প্রাণ গেলে এই দুইটা আর ওদিকে কতোগুলো মেন্টাল পেশেন্টদেরও প্রাণ চলে যাবে। যেখানে এতো প্ল্যানিং করে পেছনের গেট দিয়ে তাদের সেফ প্লেসে পাঠানোর চেষ্টা করছিলে সেই পেছনের গেট উল্টোদিক থেকে তালা মে’রে দেওয়া। এখন বিনাদোষে তাদের জীবনটা চলে গেলে বিষয়টা খুব খারাপ দেখাবে তাই না?”
“এটা করতে পারো না তুমি।”
মাথা ঝাঁকিয়ে বলল কোহিনূর। রূপাঞ্জনা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“আমি সব পারি। এখনি ওদের রি’ভলবার ওদের পকেটে রাখতে বল আর নিজেরটা নিচে ফেলে দে। নয়ত কেউ বাঁচবে না।”
কোহিনূর বুঝল আর উপায় নেই। সে সবাইকে ইশারা করল রি’ভলবার নামাতে। সঙ্গে সঙ্গেই সবাই নামিয়ে নিল সেটা। কোহিনূর নিজেরটা নিচে রেখে দিল। কোহিনূর এবার ধীর গলায় বলল,
“ওদের দুজনকে ছেড়ে দাও এখন। আর পেশেন্ট, ডক্টরস্ ওদেরকেও ছেড়ে দাও।”
“আগে আমাদেরকে যেতে দাও। এই পুলিশদের সরতে বলো।”
কোহিনূর আবারও তাদের ইশারা করে সরতে বলে। প্রথমে কেউ সরতে চায় না দরজা থেকে। লক্ষ্যের এতো কাছে এসেও সরে যেতে মন চায়? তবুও বাধ্য হয়ে সরে দাঁড়াল সবাই। রূপাঞ্জনার কড়া দৃষ্টিতে আজিম আর পলাশকে ধা’ক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে চলে যাওয়া ধরল তারা। হাতে রি’ভলাবার দিয়ে সবাইকে তাক করে রেখেছে এখনো। কোহিনূর আর কিছু বলল না। তারা বিদায় নিতেই কাছে থাকা চেয়ারে জোরে একটা লা’থি মে’রে হুংকার দিয়ে উঠল। ভয়ংকর রেগে উঠেছে আজ কোহিনূর। সকলের দৃষ্টি হয়েছে নত। কোহিনূর চিল্লিয়ে বলে,
“এই প্রথম লক্ষ্যের এতো কাছে থেকেও দূরে সরে আসতে হলো।”
বলেই দেয়ালে থাবা মা’রল কোহিনূর। তারপর বড় বড় শ্বাস ফেলতে থাকল। গলা বেয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে ঘাম। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো জড়ো হয়ে টুপ করে থুঁতনিতে এসে থামল। নিজের রাগ সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অতঃপর। হাফ ছেড়ে কোনোরকমে রাগ সংবরণ করে বলল,
“পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায় এখানে টেরো’রিস্ট অ্যা’টাক হয়েছিল। কেউ না মানে কেউ না। কোনো ডক্টরও না। আর স্পেশালি একটা মাথায় রাখো আজিম আর পলাশ! আমি যে সিক্রেট অফিসার এটা যেন কারোর কানে না যায়। আমরা নিজেদের পরিচয় কারণ ছাড়া প্রকাশ করি না। তাই এটা যেন জানতেও না পারে। ডক্টররা বা বাকিরা কিছু জানতে চাইলে বলে দেবে পুলিশ ধারণা করেছিল এখানে টেরো’রিস্ট অ্যা’টাক করবে। তাই তাদের সেফ প্লেসে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল।”
কোহিনূরের কথায় আজিম আর পলাশ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত মাথা দুলায়। তাছাড়া আর উপায় কী? এখন পুলিশের লোক যা বলবে সেটাই করতে হবে।
চোয়াল শক্ত করে টেবিলে হাত রেখে সেই হাত মুখ দিয়ে ঢেকে রেখেছে কোহিনূর। রাগটা সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেমন যেন আগুনের লাভার মতো উতলে উতলে উঠছে। আর ইচ্ছে করছে হাতের কাছে যা আছে সব ভেঙ্গেচুরে একাকার করতে। কিন্তু এখানে এসব করা যাবে না। ঘটনাটির এক ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে তবুও নকল রাগিনীকে হাতছাড়া করার বিষয়টা মাথা থেকে যাচ্ছে না তার। ক্রোধ নিবারণ না করেই হাত মুঠো করে শক্ত একটা আ’ঘাত করে বসল টেবিলে। নিজের হাতে ব্যথা পেল কিনা সেটা জানে না কোহিনূর। তবে হাতটা চিনচিন করছে। রায়ানকে ছু’রির আ’ঘাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে তার হাতের যেই করুণ দশা হয়েছিল সেই কা’টা জায়গা সবেমাত্র শুকাতে শুরু করেছিল। আবারও যেন তা তাজা হয়ে উঠল। কিন্তু সেদিকে তো তার ধ্যান নেই।
“আর একটু ভালো প্ল্যানিং করতে পারলেই ওকে ধরতে পারতাম। আরো বুদ্ধি খাটাতে হতো আমায়। কিন্তু কে জানত আজকেই এতো দ্রুত সে আমাকে আ’ক্রমণ করতে আসবে!”
কথাগুলো আওড়ে নিজের হাত দিয়ে কপালের চুল সরিয়ে নেয় কোহিনূর। হাত দিয়ে উপরে ঠেলে দিতেই ফ্লোরে পড়ে থাকা তার রি’ভল’বার চোখে পড়তেই উঠে যায় সেটা তার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে। এতোকিছুর মাঝে এটার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। যদি কারোর চোখে পড়ে হয়ত পজিটিভ ভাববে নয়ত নেগেটিভ। নেগেটিভ ভাবারই সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। এটা ভাবতে ভাবতেই রি’ভলবার হাতে নিতে নিতে দরজা খোলার ক্যাচক্যাচ শব্দে সেটা হাত ফসকে পড়ে যায়। একটা অদ্ভুত শব্দের সৃষ্টি হওয়ার আগেই দ্রুত পা দিয়ে বেডের নিচে ঠেলে দেয় সেটা। রাগিনীকে দেখে নিশ্বাসটুকু ঘন হয়ে আসে। তড়তড়িয়ে চলতে থাকে হৃদকম্পন। আর একটু হলে কী হতে যাচ্ছিল? এবার বোধহয় লুকোচুরি খেলা ঠিক হচ্ছে না। কোহিনূর কী তবে জানাবে? এখনি জানাবে? ভাবতেই শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। গলার স্বরে দলা পাকালো তখনি। এভাবে চললে জীবনেও সে সক্ষম হবে না। রাগিনীর রিনরিনে কন্ঠে নড়েচড়ে তাকাল কোহিনূর।
“রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছেন যে!”
“ভাবছিলাম মহারাণীর এতো সময় পর ইচ্ছে করল তার প্রজাকে দর্শন দিতে।”
কোহিনূরের এহেন কথায় রাগিনীর খুব হাসি পায়। ঠোঁট টিপে চোখ ছোট করে কোহিনূরের পানে চেয়ে নিঃশব্দে হাসতে থাকে সে। তার এমন নীরব হাসিতেই যেন লুকিয়ে ছিল কোহিনূরের অমূল্য প্রাণ। এই হাসিতেই যেন আঁটকে ছিল তার আঁটকে যাওয়া নিশ্বাস। সে বড় একটা শ্বাস নিল রাগিনীর দিকে অপলক চেয়ে। মনে মনে বলে ফেলল,’চেহারা না হয় নকল করেই ফেলল। তবে সেই হাসি, সেই সরল দৃষ্টি সারাজীবন তপস্যা করলেও নকল করা সম্ভব নয়। সে আমার জীবন্ত কাঠগোলাপ যার শীতলতা ভরা আলাদা ঘ্রাণ আমি সবসময় নিতে পারি আমার সংলগ্নে থাকলেই। ভুল হবে না কখনো তাকে চোখ বুঁজেও চিনত।’
হঠাৎ করেই রাগিনী কেশে উঠল। তারপর বলল,
“কাল আসতে পারিনি। যা অবস্থা হয়েছিল সেদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর। তাই বাড়ির লোক আসতে দেয়নি।”
রাগিনীর কন্ঠ এখনো কিছুটা দুর্বল। কথা শেষ করে আবারও কাশছে সে। তা দেখে এগিয়ে এসে রাগিনীর কপালে হাত ছোঁয়াল কোহিনূর। অতঃপর নির্বিঘ্নে বলল,
“জ্বর তো এখনো আছে। তোমায় এই শরীর নিয়ে আসতে কে বলেছে?”
রাগিনী নীরব রইল কিছু সময়। তারপর হাসিমুখে জবাব দিল,
“আপনিই তো আমাকে মহারাণী বলে সম্মোধন করলেন। আর মহারাণী প্রজাদের কথা সবসময় ভাবে।”
কোহিনূর বুঝে গেল এই মেয়েটার সঙ্গে কখনোই পেরে উঠবে না সে। না কথার ক্ষেত্রে আর না মনের যু’দ্ধে। তার থেকে আগে থেকেই আত্মসমর্পণ করা ভালো হবে। কিছু বলতে উদ্যত হয় কোহিনূর। ফোনের ভাইব্রেশন অনুভূত করে থমকে যায় সে। ফোন ধরতে ইচ্ছে করে না। তবুও যদি জরুরি কোনো বিষয় হয়? তাই সে খাবারের দিকে তাকিয়ে ফট করে বলল,
“আমি এখনো ফ্রেশ হইনি। একটু ওয়েট করো।”
বিলম্ব না করে বাহিরে চলে যায় কোহিনূর। রাগিনী বিছানায় এগিয়ে এসে টিফিনবক্স খুলতে শুরু করে। আজকে সে খিচুড়ি এনেছে। যদিও নিজহাতে রান্না করা নয়। খাবার বের করে চামচ ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়ে হাতের নাগালে আসে না তার। না পেরে ব্যাগটা ঝাড়তে গিয়েই চামচ টং শব্দ করে নিচে পড়ে যায় বিছানার কিছুটা নিচে। বিরক্তির শব্দ করে নিচে বসে সেটা হাত দিয়ে তুলতেই চোখে আটকায় চকচকে কোনো বস্তু। বিছানার অনেকটাই নিচে আছে তবুও দিনের আলোয় কিছুটা চকচক করছে। ভ্রু কুঁচকে কৌতূহলবশত সেখানে হাতাতেই শক্ত একটা জিনিস হাতে আবিষ্কার করে সে। টেনে বের করে ফেলতেই সেটা আপনাআপনি হাত থেকে বের যায়। পেছনে কিছুটা দূরে সরে যায় হাওয়ার বেগে। নিজের চোখ কচলে আবারও দেখার চেষ্টা করে। নাহ, সে ভুল দেখছে না। ক্ষণে ক্ষণে বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। মাথা ঘুরে উঠেছে। গলা দিয়ে ঢক গিলতে গিয়েও আঁটকে যাচ্ছে। তার চোখের সামনে যে কাউকে প্রতিহত করার সবচেয়ে ভয়া’নক অ’স্ত্র। সে অস্ফুটস্বরে বলল,
“রি’ভলবার।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কেউ হাইপার হবে না। ভরসা রাখতে পারেন আমার ওপর। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]