#ভুল ৩য় পর্ব
#jannat_Nur
ডিভোর্স পেপারে জোর করে সাইন করাতে চাচ্ছে সুফিয়া বেগমকে দিয়ে! সে কিছুতেই সাইন করতে চাচ্ছে না। এত পরিমানের কান্না করছে তার চোখ মুখ ফোলে একাকার। এ বাড়ির কারো তার প্রতি দয়া হচ্ছে না। সুফিয়ার কোল থেকে সিরাতকে কেড়ে নিলো আমিরুল ইসলামের বোন রুমা। অবশেষে তাকে জোর করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করানো হলো। পাগল প্রায় সুফিয়া বেগম দিব্বিদিক শূন্য হয়ে চিৎকার করছে, তার প্রতি কারো মায়া হচ্ছে না। দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্যটা দেখছে এ বাসার কাজের মেয়ে তুলি। তারও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এই বাড়ির মানুষগুলোর নির্দয় আচরণ দেখে।
আমিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমকে বললেন তুই এখনই বাড়ি থেকে চলে যা, তোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
সুফিয়া বেগম বললেন আমি তোমাদেরকে ছাড়বো না বিনা দোষে আমাকে সন্তানহারা করলে, ডিভোর্স দিলে। কোন কিছু না ভেবে সুফিয়া বেগম ২ গ্রাম পরে তার ভাইয়ের বাড়িতে গেল। ভাইকে গিয়ে বলল তাকে নিয়ে থানায় যেতে! ভাই তাকে না করে দিল।
আমি পারবো না থানায় যেতে, আমি ছারপোষা মানুষ কাজ করে খাই থানা পুলিশ করার মত আমার সামর্থ্য নেই! এখনকার পুলিশরা স্বার্থ ছাড়া কোন কিছুই করে না,তাই তাদের কাছে গিয়ে কোন লাভ হবেনা।
ভাই এর কাছে অনেক কান্নাকাটি করে কোন লাভ হলো না! সুফিয়া বেগম নিজে থানায় চলে আসলো। গেইটে কনস্টেবল দাঁড়িয়ে ছিল সুফিয়া বেগমকে দেখে বললেন, কি হয়েছে আপনার সমস্যা কি?
সুফিয়া বেগম বললেন, আমার সন্তানকে ওরা জোর করে রেখে দিয়েছে! আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে আমার স্বামী। আমি নিরুপরাধ আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, আমি এটার বিচার চাই।
কনস্টেবল বললেন ঠিক আছে আপনি ওই রুমে যান, এসআই আছে তার সাথে কথা বলেন।
সুফিয়া বেগম এসআই মনিরুল ইসলামকে সমস্ত ঘটনা বললেন, সব শুনে মনিরুল ইসলাম বললেন সব সাক্ষী প্রমান তো আপনার বিরুদ্ধে? সবাই আপনাকে দেখেছে আপনি পরপুরুষের সাথে রাত কাটিয়েছেন। এখন এটা আমি কি করতে পারি আপনার স্বামী আপনাকে নিয়ে সংসার করবে না! আর ছেলেকে আপনার কাছে দিবে কেন আপনি তো তার ছেলেকে ভালো করে মানুষ করতে পারবেন না।
এসআই মনিরুল ইসলামের কথা শুনে সুফিয়া বেগম অবাক হয়ে গেল, সে ভাবতে পারছে না আইনের লোক এমন কথা বলছে।
আপনি এগুলো কি বলছেন? আমি কোন অন্যায় করিনি তারা আমার নামে মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছে। আমার স্বামী বিদেশ ছিল, এসে তার ভাইবোনের কথা শুনে আমাকে ডিভোর্স দিলো। আমাকে জোর করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করালো, আমার ছেলের বয়স মাত্র তিন বছর সেই ছেলে আইনগতভাবে আমার কাছে থাকবে, আমার ছেলেকে জোর করে রেখে দিয়েছে। আপনি যাই বলেন না কেন আমার সাথে যেতে হবে আপনাকে এখনি।
সুফিয়া বেগমের কথায় এসআই মনিরুল ইসলাম রেগে গেলেন, তাকে বললেন আপনি এখনি থানা থেকে বের হয়ে যাবেন।
সুফিয়া বেগম বললেন, না আমি যাব না আপনি আমার সাথে যাবেন! আমার ছেলেকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে দিবেন! আমার সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের ধরবেন।
এসআই মনিরুল ইসলাম আর সুফিয়া বেগমের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে গেল, তর্ক বিতর্ক শুনে অন্যান্য পুলিশরা রুমের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। তখন ওসি আব্দুল বাতেন তাদের তর্ক-বিতর্ক শুনতে পেয়ে রুমে এসে সুফিয়া বেগমের কাছে ঘটনা শুনেন, এবং এসআই মনিরুল ইসলামকে বলেন সরেজমিনে যেয়ে তদন্ত করে আসতে। এবার বাধ্য হয়ে এসআই মনিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমকে সঙ্গে নিয়ে আমিরুল ইসলামের বাড়িতে আসে। এসআই মনিরুল ইসলাম এতক্ষণ কেন আসতে চাইনি সেটার কারণ হলো আমিরুল ইসলাম আগেই এসআই মনিরুল ইসলামের সাথে কথা বলেছে, তার পকেট গরম করে দিয়েছে। এ কারণে ই এসআই মনিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমকে ধমকিয়ে থানা থেকে বের করে দিতে চাইছিলেন। পুলিশ নিয়ে সুফিয়া বেগম আমিরুল ইসলামের বাড়িতে আসায় আমিরুল ইসলামের বাড়ির মানুষজন এবং আশেপাশের লোকজন অবাক হয়ে গেল। সবাই বলাবলি করছে দেখো কত বড় সাহস অন্যায় করছে আবার বুক ফুলিয়ে থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসছে। এই মহিলা লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।
দুইএকজন অবশ্যই সুফিয়া বেগমের এমন অবস্থায় তার পক্ষে কথা বলছে কিন্তু সেটা হাতে গোনা। এসআই মনিরুল ইসলাম আমিরুল ইসলামকে বললেন সুফিয়া বেগম থানায় গিয়ে হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে! ওসি সাহেব আমাকে আসার জন্য তাগাদা দিলো তাই আসতে হলো।
আমিরুল ইসলাম বললেন ঠিক আছে আপনি যখন এসেছেন আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে আর এলাকার কমিশনারকে ডাক দেই, আপনি তাদের সাথে কথা বলেন! আর রিপোর্ট লিখে নিয়ে যান।
চেয়ারম্যান আর কমিশনার আসলো তাদের সাথে কথা বলে আর এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে সুফিয়া বেগমের দোষ প্রমাণিত হলো এসআই মনিরুল ইসলামের চোখে । আমিরুল ইসলাম টাকাওয়ালা মানুষ সে চাইলে অনেক কিছুই হবে সেটা তো বুঝা যাচ্ছে! সুফিয়া বেগমের কাছে এক টাকাও নেই সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না।
কয়েকদিন ধরে থানায় ঘোরাঘুরি করছে সুফিয়া বেগম বিচারের আশায়। আর এই ফাঁকে আমিরুল ইসলাম সিরাতকে নিয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছে। সুফিয়া বেগমের কানে এই খবর যাওয়ার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল রাস্তার পাশে। রাস্তার মানুষেরা তাকে ধরাধরি করে একটা বাড়িতে নিয়ে মাথায় পানি ঢাললো! জ্ঞান ফেরার পর হতে সুফিয়া বেগম চিৎকার করে বলছে আমার ছেলেকে এনে দাও আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। একজন সুফিয়া বেগমের ভাইকে চিনতেন, সে গিয়ে সুফিয়া বেগমের ভাইকে খবর দিলেন। সুফিয়া বেগমের ভাই গিয়ে তাকে নিয়ে আসলো, সুফিয়া বেগমের মুখে এক কথা আমার ছেলেকে এনে দাও আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। এভাবেই বিলাপ করে কাটলো কয়েকদিন, তার বিলাপ থামল। কিন্তু সে যদি কারো কাছে ছোট বাচ্চা দেখে তাহলে সে বাচ্চাকে কেড়ে নিয়ে তার ছেলে মনে করে বাচ্চাকে আর দিতে চায়না। তার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলে। এটা দেখে সুফিয়া বেগমের ভাবী বললেন তোমার বোনকে আমার বাড়িতে রাখতে পারব না সবাই শুধু বিচার নিয়ে আসে ছোট বাচ্চা দেখলেই সে তাদের কোল থেকে কেড়ে নেয়! যদি বাচ্চা কিছু করে ফেলে সেই ভয়ে লোকজন অস্থির, আমি এত কিছু সহ্য করতে পারবো না, তাকে তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে বল।
সুফিয়া বেগমের ভাই মিরাজ তার স্ত্রীকে বলে সুফিয়ার মাথায় সমস্যা হয়েছে, স্বামী সংসার সন্তান হারিয়ে! এমন অবস্থায় আমি তাকে কোথায় তাড়িয়ে দেবো?
তুমি কি করবে না করবে সেটা আমি জানি না তোমার বোন আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না। মানুষে বিচার নিয়ে আসবে অশান্তি করবে সেটা আমার সহ্য হবে না! তোমার যদি দরদ লাগে তোমার বোনকে নিয়ে তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও, বোনকে নিয়েই থাকো।
স্ত্রীর কথা শুনে মিরাজ চুপ হয়ে গেল, মিরার শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতো! বাড়ি করার জন্য জমিটা তার স্ত্রীর বাবা দিয়েছে। সেকারণেই তার স্ত্রী এত বড় কথা বলতে পারছে। মিরাজ তার বোনকে বললেন, তোর ছেলেকে নিয়ে আমিরুল আমেরিকা চলে গেছে! তুই অন্য মানুষের বাচ্চা কেড়ে নিয়ে পাগলামি করিস, তোর ভাবী তোকে এখানে থাকতে দিবে না, ভালো হয়ে থাকলে থাক! নাহলে চলে যা। মিরাজের কথাগুলো শুনে সুফিয়া বেগম বলল, আমার ছেলেকে খুঁজতে যাব! আচ্ছা ভাইয়া খুঁজতে যেতে হলে তো আমেরিকায় যেতে হবে? আমেরিকা তো বিমান দিয়ে যেতে হয়। আমি এয়ারপোর্টে যাবো! এয়ারপোর্ট যেতে হলে ঢাকায় যেতে হবে। আমাকে কিছু টাকা দিবে?
মিরাজ বোনের কথায় চুপ করে রইলেন। সুফিয়া আর কিছু বললেন না, মাথা চুলকে কি যেন ভাবল তারপর মিরাজের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সে বড় রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার বাসে উঠবে, তাকে যেভাবে হোক ঢাকা যেতে হবে! তার মাথায় একটাই ভাবনা সে এয়ারপোর্টে যাবে তারপর যেভাবে হোক বিমানে করে আমেরিকা চলে যাবে। তারপর তার ছেলেকে খুঁজে নিয়ে আসবে। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ বলে সে এটা বুঝতে পারছেনা টাকা ছাড়া পাসপোর্ট ছাড়া সে কিভাবে আমেরিকা যাবে।
আমিরুল ইসলাম সিরাতকে নিয়ে আমেরিকায় চলে আসছে। আমেরিকার নিউ জার্সিতে আমিরুল ইসলাম থাকে, সেখানেই তার বিজনেস। সিরাত তার মায়ের জন্য এক নাগাড়ে কান্না করে যাচ্ছে কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না আমিরুল ইসলাম। আমিরুল ইসলামের বন্ধু সাবের আহমেদ পরামর্শ দিলেন ছেলেকে এভাবে রাখতে পারবি না, তার জন্য আয়া রাখার ব্যবস্থা কর! আয়ারা নিজের সন্তানের মত লালন পালন করে, তাহলে সিরাত তার মাকে ভুলতে পারবে।
এখন আয়া আমি কোথায় পাব, আমিরুল ইসলাম বন্ধু সাবের আহমেদকে বললেন।
আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করে দেবো আমার পরিচিত একজন মানুষ আছে, যাদের আয়ার দরকার হয় আয়া দিয়ে হেল্প করে।
আমার ছেলের জন্য এমন একজন আয়া এনে দে,
যে সিরাতকে নিজের মায়ের মত আদরযত্ন করবে।
চলবে….
https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/680099233711852/