এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ১৬

0
329

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৬

সকালে উঠে আমি নিজেকে কারো বুকে আবিষ্কার করলাম।মানুষটা কে আমার বুঝতে বাকি রইলো না।কিন্তু আমি তো সোফাতে ঘুমিয়ে ছিলাম এখানে আসলাম কি করে? আমি আর কিছু না ভেবে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।

তনয়ের আগেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তানুর জন্য অপেক্ষা করছিল। আসলে দেখতে চেয়েছিল ঘুম থেকে উঠে তানু কি করে বা কি বলে।কিন্তু তানু কিছু না বলে চলে গেলো। এতে তনয় আশাহত হলো।সে ভেবেছিল তানু কিছু তো জিজ্ঞেস করবে।কাল থেকে ভালো ভাবে কথা বলছে না তানু তাই তনয়ের ভালো লাগছে না।

আমি ফ্রেস হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে ছাদে গেলাম।আর রোজকার কাজ এটা।অনেক শান্তি অনুভব হয়। কিন্তু এখন যেনো কোনো কিছুতে শান্তি মিলেছে না।তনয়কে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবলে বুকটা কেমন ভারি হয়ে আসছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।এমন সময় পিছে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে পেছনে ঘুরে দেখি নাবু নুসু অনু তন্নি দাড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না তারা। ওদের মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি৷ এমনটা মানতে পারছে না ওরা।

আমি বললাম তোরা এখানে। রেডি হয়ে নে তোদের তো আবার ফিরে যেতে হবে। বাবার গাড়ি তোদের রেখে আসবে।ওরা সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলো। আমার ও কান্না পাচ্ছিল খুব কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম আমি। তারপর ওদের বললাম কান্না করছিস কেনো। মরে গেছি নাকি আমি। ওরা সাথে সাথে উঠে আমার মুখ চেপে ধরে। আমি হেসে দিই ওদের কাজে।

নাবু বলে আপু তোর খুব খারাপ লাগছে তাই না রে।আমি জানি তুই খুব কষ্ট পাচ্ছিস কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছিস না।তুই তো এমনই সব সময়। নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দিস না। আমি বললাম আরে কে বলল তোদের আমার কষ্ট হচ্ছে। এই দেখ আমি হাসছি আর ভালো আছি আমি।আমি তো সব আগে থেকে জানতাম তাই আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না।

অনু বলে আপু ভাইয়া সত্যিকি এবার ওই মেয়েটা কে বিয়ে করবে।তোকে কি… আর বলতে পারল না অনু ওইটুক বলে চুপ হয়ে গেলো সে। আমি বললাম এমনটা তো একদিন হওয়ার এ ছিল রে। তাই মানতে হবে আমাদের।শুন তোরা কিন্তু বাড়ি গিয়ে কিছু বলবি না।মা বাবা কাকা কাকি কাউকে না কিন্তু মনে থাকবে।

তন্নি বলে একদিন তো সবাই এমনি জানতে পারবে আপু তাহলে এখন কেনো বলব না।আমি বললাম সে সময় হলে আমি বুঝাই বলে দেব।কিন্তু তোরা কেউ কিছু বলিস না প্লিজ। মা বাবা খুব কষ্ট পাবে। বল আমার কথা রাখবি তোরা।ওরা সবাই মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলল আম হেসে ওদের জড়িয়ে ধরলাম।আবার।

এইদিকে আড়াল থেকে একজন সব কথা শুনছিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিচে নেমে গেলো।

_____________________

আমি রেডি হচ্ছি কোচিং যাওয়ার জন্য। আর ২ মাস পর আমার ফাইনাল পরিক্ষা। অনেক চাপ এখন পড়ার। কোনো দিকে মন দিলে আমার এখন চলবে না।আমাকে তো নিজের পায়ে দাড়াতে হবে। আমি তনয়ের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।তার জন্য আমি আবার পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছি।আমার পড়াশোনার কথা শুনে প্রথমে আমার বাবা অনেক রাগ করেছিলেন তনয়ের উপর। কিন্তু তনয় বাবাকে সুন্দর করে বুঝাই বলার পর আর দ্বিমত করেনি তিনি। হয়ত এখন আর মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না আমার বাবার।

সব ভাবছিলাম আর রেডি হচ্ছিলাম।তনয় ও অফিসে যাবে তাই সেও রেডি হচ্ছে।আমাকে কোচিং দিয়ে সে অফিসে যাবে।এমন সময় রাত্রি আসলো আমাদের রুমে। এসেই বলে সরি নক না করে চলে আসলাম কিছু মনে করোনি তো আবার। অবশ্য পরবর্তীতে রুমটা আমার এ হবে। আমি নিরব নয়নে দৃষ্টি দিয়ে তার কথা শুনছিলাম।তারপর বললাম আমি আরে আসো সমস্যা নেই। এতো তোমার ও ঘর।আমি তো কিছুদিনের অতিথি মাত্র কথাটা বলে আমি তনয়ের দিকে তাকাইলাম। তনয় কেমন অসহায় দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি রাত্রি আপুকে বললাম বসো না দাড়িয়ে কেনো।

থাক আমার সাথে এতো ফর্মালিটি করতে হবে না।আচ্ছা তোমার নাম কি যেনো? রাত্রি বলে

তানজিলা রহমান। সবাই তানু বলে ইচ্ছে হলে তুমি ও বলতে পারো।

ও আচ্ছা তা কোথায় যাচ্ছো তুমি। আমি বললাম কোচিং।
তুমি কোন ক্লাসে পড়ো রাত্রি জিজ্ঞেস করল আমি বললাম এইতো ইন্টার ফাইনাল দেব এবার।আমার কথা শুনে রাত্রি উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। তারপর বলে লাইক সিরিয়াসলি। তুমি এতো বড় ধিংগি মেয়ে মাত্র ইন্টার হাউ ফানি।কথা গুলো আমার খারাপ লাগলেও প্রকাশ করলাম না।কারণ আমার জন্য এটা স্বাভাবিক। তখনই তনয় বলে রাত্রি কি শুরু করেছো। কি জন্য এসেছ সেটা বলো।

তখন রাত্রি বলে তুমি কি আমার উপর এখনো রেগে আছো তনয়। প্লিজ রেগে থেকো না।তাই বলে তনয়কে পেছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে আমার সহ্য হচ্ছিল না এই সব তাই আমি ঘুরে দাড়ালাম।তনয় রাত্রিকে ছাড়িয়ে বলে কি করছো এই সব তুমি এই ভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরবে আমাকে।

রাত্রি বলে কেনো লজ্জা পাচ্ছো বুঝি তানুর সামনে। এর আগে তো তুমি আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরতে। আমার এবার দম আটকে আসছিল আর নিতে পারছিলাম না ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম এমন সময় তনয় বলে দাড়াও আমি আসছি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে অফিস যাব।আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিছু বলার মতো মন মানসিকতা এখন নেই আমার।

তখনই রাত্রি বলে তনয় আমি আসছি আর তুমি অফিস যাবে আজ।চলো না আমরা আজ ঘুরতে যায়।কতদিন পর বিডি আসলাম বলো তো। প্লিজ প্লিজ তনয়। তখনই আমি বললাম হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরা বরং যাও ঘুরে আসো। নিজেদের মতো টাইমস্পেন্ড করো। তাহলে আবার আগের মতো হয়ে উঠবে সব।

রাত্রি আমার কাছে এসে বলে সো সুইট। সত্যি তুমি খুব ভালো তানু৷ তুমি একা যেতে পারবে তো কোচিং-এ। আমি বললাম হ্যাঁ পারব সমস্যা নেই। এখন থেকে তো একাই চলতে হবে আমাকে।তাই একা পথ চলা অবশ্যই আমাকে শিখতে হবে। আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম।খুব কষ্ট হচ্ছে ভেতর টা ভেঙে চুরে যাচ্ছে আমার।আমি রাস্তায় এসে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

এই সব কি হচ্ছে রাত্রি আমি তোমাকে নিয়ে এখন বাইরে যেতে পারব না আমার ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে অফিসে।আমাকে যেতে হবে তাই বলে তনয় চলে যায় আর রাত্রি একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে উঠলো যাও যাও কত পালাতে পারো পালিয়ে নাও।ধরা সেই আমার কাছেই দিতে হবে আবার 😎।

_____________________
আমি রিক্সা করে যাচ্ছি আর রাত্রির বলা সকল কথা ভাবছি চোখে আমার পানি যেনো বাধ মানছে না।বার বার হাত দিয়ে চোখ মুছে চলেছি এমন সময় হঠাৎ করে রিক্সা থেমে যায় আর আমি একটু ঝুকে যায় সামনে আনমনে থাকার ফলে তারপর রিক্সা চালককে বলি মামা কি হলো কোনো সমস্যা। তিনি বললেন আফা সামনে একজন ভাইজান থামাইছে আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একটা সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে।তারপর আমার কাছে এসে বললেন দয়া করে আমাকে একটু লিফট দিবেন প্লিজ আমার একটা ইন্টারভিউ আছে না যেতে পারলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।

এটা কি প্রাইভেট কার মনে হয় আপনার যে আমি আপনাকে লিফট দেব রেগে বললাম কথাটা। তখন ছেলেটা বলে প্লিজ রাগ করবেন না আসলে আমি অনেকখন থেকে দাড়িয়ে আছি কিন্তু কোনো রিক্সা পাচ্ছি না।এইদিকে ইন্টারভিউয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার। প্লিজ সাহায্য করুন।

আমি এবার ছেলেটার দিকে ভালো ভাবে নজর দিলাম। বেশ ফরমাল লুক নিয়ে বের হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে বড় ঘরের ছেলে আর ভদ্র। আমার ও কোচিং এর দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই আর কিছু না বলে সরে গিয়ে তাকে বসার জন্য জায়গা দিলাম।ছেলেটা হাসি মুখে উঠে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন আমি কিছু বললাম না।

এইদিকে দূর থেকে একজন দেখে একটা ছেলেকে তানুর সাথে এক রিক্সা করে যেতে। রাগে তার হাত পা কাপছে যেনো।মনে মনে বলে এতো সাহস রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানো। ঘুরাচ্ছি বাসায় এসো আগে।তাই বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায় তনয়।

ছেলেটা বলে হাই আমি মেহেদী বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে এক একটা বোন আছে আমার৷ তখন আমি বললাম তো আমি কি করব ঘটকালি করব নাকি আপনার জন্য৷ মেহেদী বুঝতে পারছে মেয়েটা খুব রাগী তাই সে আর কিছু বলল না। তারপর আমরা আমাদের গন্তব্যে নেমে পড়লাম ছেলেটা আমাকে আবারো ধন্যবাদ দিলেন। আমি ও সৌজন্য খাতিরে ওয়েলকাম বলে চলে আসলাম কোচিং এ। সজিয়া দেখি আগে থেকে বসে আমাকে দেখে বলল কি রে আজ এতো দেরি করলি যে।আমি বললাম নাবু রা চলে গেলো তো তাই একটু দেরি হলো আর কি ওদের জন্য তারপর স্যার আসাতে আমরা ক্লাসে মনোযোগী হলাম।

এই দিকে অফিসে বসে শুধু ওই একটা দৃশ্য ভেবে চলেছে তনয়। কিছুতে মানতে পারছে না তানুর সাথে অন্য কাউকে। অবশেষে মাথা চেপে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল তনয় আর গভীর ভাবে কিছু একটা চিন্তা করছে সে। তারপর হঠাৎ করে অন্তর এর কথা মাথায় আসলো আর অন্তর কে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে……………

চলবে……..

( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here