এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ৩

0
429

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৩

আমি আমার ঘরে এসে বারান্দায় দাড়ালাম,আমার সাথে সাথে তনয় ও এসে আমার পিছে দাড়ালেন।আমার অনেক ভয় সাথে অনেক লজ্জা করছে তাই আমি সামনে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না।তনয় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছেন মিস 🤔..আমি বললাম তানজিলা রহমান সবাই তানু বলে আপনি ও বলতে পারেন সমস্যা নেই।মাটির দিকে তাকিয়ে বললাম কথা গুলো।তখন তনয় বললেন আমি তনয় চৌধুরী, পড়াশোনা শেষ করে বাবার অফিস দেখছি।
তারপর কিছুক্ষন নিরবতার পর তনয় বললেন পড়াশোনা কত দূর আপনার। আমার মুখটা মলিন হয়ে গেলো কথা টা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম আমি আসলে পড়াশোনা বেশি দূর করিনি।দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তনয় যে বেশ অবাক হয়েছে আমার কথাই বুঝতে পারলাম। আমি আরো বললাম আসলে আমার বাবা চাই না মেয়েদের বেশি দূর পড়াশুনা করুক তাই আমাদের দশম শ্রেণির পর আর পড়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি।
তখন সে বললেন তাহলে তোমার বোনেরা যে কলেজে পড়ে৷ আমি বললাম আসলে আমার বাবা আর চাচুরা সম্পুর্ন ভিন্ন তাই তারা সুযোগ পেয়েছে। তনয় বলে উঠলো এখনো এমন মানুষ আছে ভাবা যাই না। এমন চিন্তা ভাবনা কবে শেষ হবে আমাদের দেশের মানে।আমরা আরো কিছু কথা বললাম যতটা সময় কথা বলেছি আমি সব গুলো নিচের দিকে তাকাই বলেছি তার দিকে তাকানোর সাহস আমার নাই। তনয় দেখতে অনেক সুন্দর সুঠাম দেহ। উচ্চতায় ৬ফুটের উপরে প্রায়। তবে তার কথা আচরণ আমার খুব ভালো লেগেছে। তনয় যখন বললেন তোমার কি আর পড়াশোনা করার ইচ্ছে নাই তখনি পিছনে কারো গলা খ্যাকাড়ি দেওয়ার শব্দ পেয়ে তনয় পেছনে আর আমি সামনে তাকাই দেখি জাকিয়া দাত বের করে হেসে দাড়াই আছে। সে বলে উঠলো ভাইয়ু সব কথা কি আজই বলে নিবি নাকি বাসর ঘরের জন্য কিছু রাখবি অবশ্য বাসর ঘরে কথা কম কাজ হয় বেশি৷ আমি তো কথা শুনে আর মাথা তুলে তাকাতে পারছি না। এমনি অনেক লজ্জা লাগছে তার উপর এই কথা শুনে মনে হচ্ছে মাটি ফাক হয়ে যাক আর আমি তার মধ্যে ঢুকে যাই। তনয় আমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জাকিয়া কে বলে উঠলো খুব পেকে গেছিস তুই বাড়ি চল তারপর দেখছি। কথা টা বলে আর আর এক মুহুর্ত দেরি না করে বেরিয়ে গেলেন।
জাকিয়া আমার কাছে এসে বললো রাগ করলে নাকি লজ্জা কোনটা গো ভাবি। ভাবি ডাক শুনে আমার মনে যেনো একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো সাথে অনেক লজ্জা এসে ভর করলো।তারপর আমরা কথা বলতে বলতে চলে আসলাম বাইরে। তাসনিয়া আপু আমার কাছে এসে বললেন তোমার সাথে সেই ভাবে কথা বলাই হলো না। আমি কিন্তু তোমার বয়সি তাই আমি তোমাকে ভাবি বলবো আর তুমি আমাকে নাম ঘরে ডেকো।আমি মাথা নাড়ালাম শুধু। তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

___________
রাতে সবাই এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি, নাবু,নুসু,অনু,সাথে নাহিদ আর আমার বোন তন্নি ও ছিল।সবাই বেশ আনন্দে আছে বিয়ে নিয়ে কারণ আমার বিয়ে আর এক সপ্তাহ পরে ঠিক করা হয়েছে আসছে শুক্রবার বাবা বিয়ের দিন রেখেছে।তারা যে সত্যি আমাকে পছন্দ করবে ভাবতে পারিনি। আসলেই তারা অনেক ভালো মনের মানুষ।
এর মধ্যে অনু বললো আপু জিজু কিন্তু দেখতে সেই বল নুসু আপু। নাবু বললেন হ্যাঁ আমি তো চোখ ফেরাতেই পারিনি এতো হ্যান্ডসাম 😇।আমি সবার কথা শুধু শুনছি আর লজ্জা পাচ্ছি।এর মধ্যে নাহিদ বলে উঠলো আমরা কিন্তু অনেক মজা করবো বিয়েতে দেখিস। তন্নি বললো বাবা আর হতে দিলে তো জানিস না বাবা কেমন। বেশি হৈচৈ পছন্দ করেন না।সবাই একটু মন খারাপ করলো কথা টা ভেবে তখনই ছোট কাকি এসে বললো আরে মন খারাপের কি আছে আমরা এমনিতেই সবাই বেশ মজা করবো দেখিস তোরা।।আমার তানুর বিয়ে বলে কথা মজা না করলে হবে সবাই এক সাথে নেচে উঠলো কাকির কথাই। আমি হাসলাম কাকির কথা শুনে তারপর কাকি বললেন যা অনেক রাত হয়ছে ঘুমাই সবাই৷ তানু তুইও শুয়ে পর মা।আমি মাথা নাড়ালাম। সবাই বের হয়ে গেলো আমার ঘর থেকে তখন মেজো কাকি এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন কত বড় হয়ে গেলো আমার তানু মা আর কিছুদিন পর পরেরঘরে গিয়ে সংসার করবে। এই বাড়ি কে মাতিয়ে রাখবে তখন।কাকির চোখে পানি আমিও কেদে দিলাম কাকির কথা শুনে তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর কাকি পরিস্থিতি বুঝে বলে উঠলেন আরে আমি তো এমনি বললাম। আমরা সবাই চাই আমাদের তানু অনেক ভালো থাক।।আমাদের যেমন হাসি খুশি রাখে শ্বশুর বাড়ির সবাইকেও তেমন ভালো আর হাসি খুশি রাখবি 🥰।

সবাই আমার ঘর থেকে চলে গেলো আমি আমার ডায়েরির পাতাই আজকের সব কিছু তুলে ধরতে বসলাম।আমার এক মাত্র সঙ্গি আমার এই ডায়েরি।যেখানে আমি মনের সকল বলা না বলা কথা প্রকাশ করতে পারি।আমার সকল অভিমান দুঃখ সব কিছুর সাক্ষি আমার ডায়েরির পাতা।

আজ বুধবার আমাদের বাড়ি গ্রামে হওয়ার জন্য গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের দুইদিন আগে থেকে মিষ্টু মুখ করানো সব রকম আয়োজন করা হয়।আর বিয়ের আগের দিন হলুদ অনুষ্ঠান। আমাদের গ্রামের নাম সুন্দরপুর ( নিজের মতো দিলাম নাম টা। এই নামে গ্রাম আদো আছে কিনা জানা নেই৷) সন্ধ্যার সময় সবাই অনেক আনন্দ উল্লাস নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে।ছোটরা লাফালাফি করছে আর বড়রা অনেক ব্যস্ত কাজ নিয়ে গ্রামের অনেক মানুষ আসছে তাদের মিষ্টি বিতরণ আর খাওয়া দাওয়ার দিক টা দেখছে। আমাকে একটা খয়েরি পাড়ের সাদা শাড়ি আর ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। নাবু,নুসু,অনু,আর আমার বান্ধবি মেহরুবা ( আমার কাছের বন্ধু সে) সবাই শাড়ি পরেছে।সবাই কে অনেক সুন্দর লাগছে৷ আমার মা আমার কাছে এসে আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন কত সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটা কে।
এর মধ্যে কে বলে উঠলো বড় আপু মানে তুরিন আপু আসছে আমার তো খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে শুনে।কতদিন পর দেখা আপুর সাথে। আর আমার মিষ্টিমনি ( আপুর মেয়ের নাম) তাকেও কত দিন পর দেখবো ।। আপু এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন সাথে সেও কেদে দিলেন আনন্দে কান্না। এর মাঝে দুলাভাই বলে উঠলো বোনকে পেয়ে আমাকে সবাই ভুলে গেছে বুঝি 😒।সবাই এক সাথে বলে উঠলো না দুলাভাই আপনাকে কি ভুলা যাই😁।

দুলাভাই আমার কাছে এসে বললেন কেমন আছো তানু। আমি বললাম ভালো। তারপর সবাই বেশ মজা করে রাত টা পার করে দিলেন।

_____________
আজ গায়ে হলুদ আমার।সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে তার সাথে সব মেহমান আসতে শুরু করেছে৷ আমার দুই ফুফুও আসছে বড় ফুফুর নাম নাসিমা আর ছোট ফুফুর নাম জেসমিন। বড় ফুফুর দুই ছেলে এক মেয়ে। রনিত ভাইয়া সে একজন নাম করা ডাক্তার, তারপর রহিত ভাইয়া সে সবে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আর বোন আরুশি সে নাবুর সাথে ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ছে।ছোট ফুফুর দুই মেয়ে নাম, হাবিবা আর হাফসা। হাবিবা ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে আর হাফসা দশম শ্রেণিতে।
সবাই চলে এসেছে তারা আমাদের বাড়িতে। রনিত ভাইয়া অনেক ব্যস্ত তাই সে সন্ধ্যায় আসবে জানিয়েছে।আরু,হাবিবা হাফসা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছো আপু।আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম ভালো তোরা কেমন আছিস সবাই। এক সাথে বলে উঠলো অনেক ভালো। তারপর সবাই আডডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সন্ধ্যার সময় আমাকে একটা কাচা হলুদ রঙের শাড়ি সাথে ফুলের গহনা পড়ানো হয়েছে।।নিজেকে নিজেই যেন চিনতে পারছি না এই সাজে আসলে তেমন ভাবে কখনো সাজা হয়নাই আর আমি তো সাজতে পছন্দ করি না আগেই বলেছি৷ নুসু এসে বললো আপু তোমাকে তো হলুদ পরী লাগছে। এই সময় যদি জিজু দেখতো না তোমাকে তাহলে চোখ ফেরাতেই পারতো না। আম ওর কথা শুনে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেলাম।এরপর আমাকে নিয়ে গিয়ে বাইরে স্টেজে বসানো হলো। সবাই আক হলুদ শাড়ি পরেছে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি।রহিত ভাইয়া এসে আমাকে বললেন তোকে হলুদ পেত্নি লাগছে রে তানু। যদি তোর বর দেখতো এই সময় তাহলে বেচারা নিশ্চয় হার্ট অ্যাটাক করতো। আমি ভাইয়ার কথা শুনে গাল ফুলাই থাকলাম আর সবাই হেসে উঠলো।। এই রহিত ভাইয়াটা না সব সময় আমার পিছে পড়ে থাকে 😐…………….

চলবে…

(রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here