কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব৪৯

0
443

কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব৪৯
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন

গভীর রাত বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সুলতান ভিলার গেটের সামনে কালো রঙের কুকুর ছানাটা অনবরত ডেকে চলেছে। এই বাড়িতে কুকুর পালা হয়না। কিন্তু আজ হঠাৎ এই কুকুরের আগমনে গার্ডরা বেশ বিরক্ত হচ্ছে। দারোয়ান বারবার গিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কুকুরটা মানুষের শরীরের গন্ধ পেয়ে আরও তেড়ে আসছে। গার্ডদের মধ্যে একজন গান উঠিয়ে নিশানা করতেই আরেকজন বাধা দিয়ে ফিসফিস করে আওয়াজ করলো,
> মে/রোনা ওকে। তুমি জানোনা কালো ডগ কার নিশান বহন করে? ছেড়ে দাও। তাছাড়া স্যার রাগ করবেন।
সাধারণ এই কথাটা কেমন ভ/য়ঙ্কর শোনালো। প্রথম গার্ড ভয়ে ঢোক গিললো। আধুনিক যুগে বসবাস করেও এসব অপ্রকৃতিস্থ জিনিস নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো মানে হয়না তবুও ভয় করছে। শরীর কেমন ভার হয়ে আছে। এই বাড়িতে কাজ করার সুবাদে অনেক কিছুই চোখে পড়ে কিন্তু ওদের কিছু করার থাকে না। চুপচাপ ভয়ে ভয়ে রাত কাটাতে হয়। রাত মানেই আতঙ্ক। বাইরে এই কুকুরের ঝামেলা চলছে তাহলে ভেতরে কি হচ্ছে কে জানে। ওরা আর ঝামেলা করলো না। চুপচাপ গানহাতে গেট বন্ধ করে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকলো। অনেকক্ষণ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো। কুকুরের ডাক বন্ধ হয়ে আসলো। মধ্য রাত অনুমানিক তিনটা বা তার আরও কিছুটা কম। দাদু ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। উনার পাশে বসে থাকা রমণী নিজের হাতদুটো কিছুটা পিছিয়ে এনে আবারও সামনে এগিয়ে নিলো। দরজা কাছে একজন চুপচাপ সেটা দেখে চলেছে। দাদুকে মা/রার পরিকল্পনা চলছে ভাবতেই তাঁর ভ্রু কুচকে গেলো। ভাবলো বাঁধা দিতে হবে। সেটা ভেবে যখন ভেতরে পা ফেলতে গেলো ঠিক তখনই পেছন থেকে আরেকজন এসে ওর মুখ চেপে ধরে সরিয়ে নিলো। দরজায় কেউ ছিল বুঝতে পেরে দাদুর পাশে বসে থাকা রমনী দ্রুত প্রস্থান করলো।অন্যদিকে পুরুষালী শক্ত হাতের মুঠোয় বন্ধি মেয়েটা ছটফট করতে করতে অগন্তুককে আচড়ে দিলো তবুও ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না। ওকে নিয়ে নির্জন একটা কক্ষে এনে দরজা বন্ধ করে ছেড়ে দিলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কাজের ছেলেটা আর মেয়েটা হচ্ছে কুপি। কুপি রেগে আগুন হয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন গলাই বলে উঠলো,
> এসবের মানে কি?আপনার জন্য লোকটাকে বাঁচাতে পারলাম না । এক মিনিট,আপনি কি আমাকে ফলো করছেন? শুনুন মিস্টার,একদম আমার আশেপাশে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনার স্ত্রী আছে না? তাঁর সঙ্গে চিপকে থাকুক কেউ বাঁধা দিবে না।

কুপি রাগে হিসহিস করছে। কথাটা বলে ও চলে আসতে চাইলো কিন্তু হলো না। ছেলেটা এক টানে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে ডান হাতে কুপির মাস্ক খুঁলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মৃদু আলোতে কহিনুরের চেহারা ভেসে উঠেছে। মেয়েটার চোখেমুখে বিস্ময় খেলা করছে। মানুষের চোখকে ধুলো দিতে পারলেও মিররকে কিভাবে ধুলো দিবে? সেতো আসল নকল ভালো বুঝতে পারে। কথাটা ভেবে ও ঢোক গিললো। কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজ শুনে ওর গা শিউরে উঠলো। পেছনের ছেলেটা ততক্ষণে মাথার টুপি কালো চশমা আর মাস্ক খুঁলে নিয়েছে। আলখেল্লা টাইপ ড্রেস পরে পাথর দাঁড়িয়ে আছে। কহিনুর আগে থেকেই জানতো এটা পাথর তাই রেগে আছে। ভেবেছিলো ধরা দিবে না কিন্তু ছেলেটা তো বড্ড চালাক। কহিনুরের হাতটা নিজের মুঠোতে পুরে নিয়ে পাথর উচ্চারণ করলো,
> বউয়ের সঙ্গেইতো চিপকে আছি। আর কতো থাকবো? তুমি কি গভীর থেকে আরও গভীরে থাকতে চাইছো? আমার অসুবিধা নেই।

কহিনুরের মেজাজ খারাপ ছিল এবার তাঁর দ্বিগুণ হলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলো,
> কেনো এসেছেন? আমার কাজে বাঁধা দিলে আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না। আপনার জন্য ধরা পড়লে খবর আছে।
কহিনুরের কড়া বচন শুনে পাথর ওর হাতের আঙুলে ওষ্ঠ রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> ডাইলগ দিবা না। তুমি এখন কাজের মেয়ে। কাজের মেয়েদের এতো কথা সাজে না। এখন শুধু আমাকে নিয়ে ভাবো। তাছাড়া আমাকে না বলে এখানে এসে তুমি কঠিন অপরাধ করেছো। কি ভেবেছো আমার থেকে লুকিয়ে থাকা এতো সহজ? তোমাকে বিপদে রেখে আমি বাইরে ঘুরে বেড়াবো সেতো হবে না। তুমিও যেখানে আমিও সেখানে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে শশুর বাড়িতে প্রথমবার প্রবেশ করলাম খাতির যত্ন তো করলোই না উল্টো ফ্লোরে বসিয়ে ক্লাস নিলো। সব তোমার জন্য হয়েছে। তুমি জানো আমার কোম্পানিতে কতজন কাজ করে? যেই পাথর খানের নামে বাঘ কাঁপে সেই পাথর খান আজ বউয়ের জন্য শশুর বাড়ির কাজের লোক।
পাথর শেষের কথাগুলো বেশ তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভাবেই বললো। কহিনুর কিছুটা নরম হলো। পাথরের বাহুবন্ধনে ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। ছাড় পেতে হলে কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। বিষয়টা ভেবে ও উত্তর দিলো,
> এখানে আসাটা খুব দরকার ছিল। বাইরে থেকে হুটকরে একদিনে সব রহস্য জানা যাবেনা। বুঝতে চেষ্টা করুন। আর আপনাকে এসব পোশাকে একদম মানাচ্ছে না।খুবই জঘন্য লাগছে। কেনো আসতে গেলেন বলুনতো? এমন পাগলামীর কোনো মানে হয়না।
পাথর হাতের মুঠো সামান্য আলগা করে ওর কাধে নিজের থুতনি রেখে উত্তর দিলো,
> বউয়ের আশেপাশের থাকতে হলে এইটুকু করতেই হতো। তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়ে। বরের দুঃখ বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। তাই বরকেই বুঝতে দাও। যাইহোক তোমাদের স্টোর রুমে কিছু একটা ঘাবলা আছে বুঝলে? আর কাজের মেয়েগুলো দেখেছো কিভাবে ভয়ে চুপসে থাকে? বাইরে একটা কুকুর দাঁড়িয়ে ছিলো ওটা কার সঙ্গে এসেছে ধারণা আছে কোনো?
পাথরের কথা শুনে কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। হঠাৎ দাদুর কক্ষের রহস্যময় নারীর কথা ভেবেই ও বলে উঠলো,
>আচ্ছা ওই মহিলাটা কে হতে পারে? জীবিত নাকি মৃ/ত কোন আ/ত্মা?
> ওখানে একজন মহিলা ছিল না নূর। ওখানে দুজন ছিল। একজনের মধ্যে আরেকজন বুঝলে? তুমি যাকে দেখলে ওর মধ্যে আরেকজন আছে যে ওই শরীরটা নিয়ন্ত্রণ করছে। ওর উদ্দেশ্য কি এটা জানতে হবে।
কহিনুর পাথরের দিকে মুখ ফিরেয়ে উত্তর দিলো,
> নিশ্চয়ই বৃদ্ধ দাদুকে হ/ত্যা করতে চাইছিলো। হয়তো ভদ্রলোকের কাছে কোনো মূল্যবান কিছু আছে যেটা ওই মহিলা নিতে চাইছে তাই এই হ/ত্যা করার পরিকল্পনা। সাধারণ বিষয়।
পাথর হুটকরে কহিনুরের কপালে চুমু বসিয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,
> জ্বী না ম্যাম। ওই বৃদ্ধ দাদুকে হ/ত্যা করা এতোটা সহজ না। অন্য কিছু আছে নূর। খোঁজ করো আমিও করবো।তবে হুটহাট মাতব্বরি করতে যাবে না। সবাইকে নজরে রাখতে হবে।
কহিনুর একমত হলো পাথরের কথা শুনে। দৃষ্টির অগোচরে যা কিছু হচ্ছে সেটাই জানতে হবে। কথাটা ভেবে ও নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
> আমি কক্ষে ফিরে যাচ্ছি। আপনিও নিজের কক্ষে ফিরে জান। অনেকের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে ওরা জানতে পারলে ঝামেলা হবে।
কথাটা বলে কহিনুর নিজের কোমর থেকে আতরের কৌটা বের করে পাথরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
> এটা ব্যবহার করবেন তাহলে আর ওইসব আলখেল্লা পোশাক পরে নিজেকে কিংবদন্তি সাজাতে হবে না। যে যা অপছন্দ করে আপনাকে তাঁর চোখে তেমনি লাগবে। ভোর হতে চলেছে। আমি যাচ্ছি।
কহিনুর কথা শেষ করে চলে আসতে চাইলো। দরজা পযর্ন্ত এগিয়ে এসে পেছনে থেকে হাতে টান পড়াতে থমকে গেলো। পাথর সোজা এসে ওকে জড়িয়ে নিলো নিজের সঙ্গে। তারপর ফিসফিস করে বলল,
> চিন্তা করো না আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো।
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে ও ছেড়ে কক্ষের বাইরে পা বাড়ালো। পাথর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনকে এক সঙ্গে দেখলে ঝামেলা বাঁধবে। কহিনুর সাবধানে নিজের জন্য নির্ধারিত কক্ষের দরজা খুঁলে ভেতরে গিয়ে শুতেই পাশের মহিলাটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,” রাতে বাইরে যাওয়া নিষেধ আছে এমন ভুল কখনও করোনা। জীবন দিয়ে মাশুল গুণতে হবে।” কথাটা বলেই উনি পাশ ফিরে আবারও ঘুমিয়ে গেলেন। কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। ঢোক গিলে চুপচাপ গিয়ে বসলো। কহিনুর যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পাথর দাদুর কক্ষের সামনে আবারও উপস্থিত হলো।কিন্তু দাদু কক্ষে নেই। বেলকনির দরজা খোঁলা। পাথর কিছু একটা ভেবে বারান্দা ধরে পেছনের বাগানের দিকে নেমে পড়লো। বাকীটুকু রাত এখানেই থাকবে বলে ভেবে নিলো। কালো আঁধারে নিজেকে মিশিয়ে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হলো না। তাছাড়া কহিনুরের দেওয়া সুগন্ধির ব্যবহার ও ইতিমধ্যে করে ফেলেছে।
*************
ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে কফির জন্য গরম পানি করছে কহিনুর ওর পাশেই অধরা দাঁড়িয়ে আছে। এইটুকু একটা মেয়ে জীবিকার জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করছে বিষয়টা ভেবে অধরার ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। তাই মলিন হেসে বলল,
> কুপি তোমার হাত পুড়ে যাবে তুমি বরং সাইডে যাও আমি করে দিবো।
মায়ের কথা শুনে কহিনুর হাসলো। চুপচাপ গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। কফি তৈরী শেষে কাপ হাতে উঠে আসলো উপরে। পাথর আজ বেশ খোলামেলাভাবে চলছে। পোশাকের তেমন উন্নতি না ঘটলেও টুপি চশমা বা মাস্ক পরতে হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের জেল দিয়ে সেট করা চুলগুলো নারিকেল তেল ব্যবহার করেও দমিয়ে রাখতে পারেনি ফুলে উঠেছে। তাছাড়া সব ঠিকঠাক আতরের গুণে সকলের চোখে ধোয়াসা সৃষ্টি হয়েছে। পাথর বেশ ঘুরছে ফিরছে মনে হচ্ছে কতদিনের চেনা এই বাড়িটা ওর কাছে। দাঁদু ভোররাতে জঙ্গল থেকে ফিরেছে তখন ও নিজের কক্ষে গিয়ে ঘমিয়েছিলো। বেলা করে উঠেছে তারপর দাদুর কফি দিয়ে ফেরার পথে সিঁড়িতে জামসেদের সঙ্গে দেখা হলো। জামসেদ থমকে গেলো পাথরকে দেখে। দেশে এতো এতো কাজকর্ম থাকতে এতো সুদর্শন একটা ছেলে কি জন্য গৃহস্থালি কাজের জন্য এই বাড়িতে এসেছে ওর মাথায় ঢুকলো না। মেয়েটাও যেমন এই ছেলেটাও ঠিক তেমন। ভাবতে ভাবতে ও নিচে নেমে আসলো। পাথর দাঁত বের করে হাসলো। অস্বস্তি হচ্ছে বারবার মনে হচ্ছে সবাই ওকে দেখছে আর চিনে ফেলবে।
*
কফি হাতে ঐশ্বর্যের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। এখানে এসেছে পাঁচ মিনিট হতে চলেছে তবুও ভেতর থেকে সাড়াশব্দ দিচ্ছে না। কহিনুর বিরক্ত হয়ে ভাবলো, এই মেয়েটা রাত জেগে কি করে কে জানে যে দুপুর পযর্ন্ত ঘুমিয়ে থাকে। ওর ভাবনার অবসান ঘটলো পেছন থেকে আদির কণ্ঠ শুনে। ছেলেটা মিষ্টি হেসে ওর থেকে নিজের কফিটা উঠিয়ে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,
> ভেতরে গিয়ে রেখে আসো। কফিটা আন্টি তৈরী করছে তাইনা? উনার হাতে জাদু আছে। দারুণ খেতে।
কহিনুর উত্তর করলো না। চুপচাপ ভেতরে যেতেই ঐশ্বর্য উঠে পড়লো। কহিনুর ওর হাতে কফিটা দিয়ে চলে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পেছন থেকে ডাকা হলো। কহিনুর চুপচাপ ঐশ্বর্য পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই হঠাৎ নিজের মুখের উপরে গরম কফির অস্তিত্ব অনুভব করলো। কহিনুর কিছুটা চমকে উঠে থমকে গেলো। আদি ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে ওর মুখের গরম কফিটা মুছতে চাইলো কিন্তু হলো না। কহিনুর ইশারায় ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মুছে নিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে উচ্চারণ করলো,
> ম্যাম আমার অপরাধ?
কহিনুরের বলতে দেরী হলো কিন্তু ঐশ্বর্যের উত্তর দিতে দেরি হলো না। ঝাঝালো কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> বলেছিলাম না অনুমতি ছাড়া আমার কক্ষে প্রবেশ করবে না তবুও এসেছো মেয়ে? আর এসেছি আমার স্বামীকে হাত করেও ফেলেছো। সে তোমার জন্য উতলা হচ্ছে আমার জন্য তো হয়না?

ঐশ্বর্যের কথা শুনে কহিনুর কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না।তবে বুঝতে পারলো এই বাড়িতে ঐশ্বর্য নামক বাঁধাটা পার করে রহস্যের সন্ধান করাটা বেশ কঠিন হবে। এই মেয়ের মস্তিষ্কে বুদ্ধির ছিটেফোঁটা আছে কি সন্দেহ। যা আছে সব জেলাসি দিয়ে ভরপুর। কহিনুরের মুখটা বেশ জ্বলছে ওষুধের প্রয়োজন। তাই মিনমিনে কণ্ঠে সরি বলে প্রস্থান করলো।
**************
ফুরফুরে মেজাজে বাথটাবে গোসলে নেমেছে ঐশ্বর্য। সপ্তাহে একদিন ওর গোপালের পাপড়ি মিশ্রিত পানিতে গোসল করতে হয়। নানারকম প্রসাধনীর ব্যবহার তো আছেই। কুপি নামক মেয়েটাকে শাস্তি দিয়ে মনটা বেশ ভালো আছে। গুণগুণ করে ইংলিশ গানের একটা লাইন গাইতে গাইতে কুসুম গরম পানিতে শরীর ঢুবিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কয়েক মূহুর্ত এভাবেই কেঁটে গেলো। তারপর মনে হলো চোখ দুটো লেগে আসছে। ঘুমিয়েও পড়লো কিন্তু বেশিকক্ষণ সেই শান্তি আর স্থায়ী হলো না। কারণ পানির তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে অসহনীয় পর্যায় চলে এসেছে। ঐশ্বর্য লাফিয়ে উঠে বাথটাব থেকে নামত চাইলো কিন্তু হলো না। মনে হলো ওকে কেউ আটকে রেখেছে। পানি গরম থেকে আরও গরম হয়ে উঠলো। মনে হলো ওর শরীরের মাং/স সিদ্ধ হতে শুরু করেছে। ঐশ্বর্য চিৎকার করে ওয়াশরুম মাথায় করে তুলেছে। আদি বাইরে ছিল হঠাৎ কক্ষে ঢুকেই ওর চিৎকার শুনে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুঁলে ভেতরে গিয়ে দেখলো ঐশ্বর্য অচেতন হয়ে পড়ে আছে। ওর ফর্সা শরীরের ভিবিন্ন জায়গায় লাল হয়ে ফোসকা নিয়েছে। ও অপেক্ষা করলো না। তাড়াতাড়ি ঐশ্বর্যকে তুলে নিয়ে কক্ষে ফিরে একটা শুকনো কাপড়ে ওকে মুড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলো। সবাইকে জানাতেই কিছুক্ষণের মধ্যে জুবায়ের আর অধরা হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো ঐশ্বর্যের কক্ষে। ডাক্তার ডাকা হয়েছে। কহিনুর রান্নাঘরে চোখ পাকিয়ে পাথরের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
> এসব আপনি করেছেন তাইনা?
পাথর কফিতে চুমুক দিতে দিতে খাপছাড়াভাবে উত্তর দিলো,
> পাথরের বউকে কষ্ট দিলে তাঁর দ্বিগুণ সে ফেরত পাবে এটাতো জানা কথা। তাছাড়া আরও একটা কারণ আছে অপেক্ষা করো রাত আসুক। নতুন একটা রহস্য তোমার সামনে আসতে চলেছে, রেডিতো?
কহিনুর ভ্রু কুচকে বলল,
> আবারও কি?
> পুরাতন কিছু না তবে কিছুটা নতুন। অপেক্ষা করো বুঝবে। শুনো ক্ষুধা পেয়েছে আমার খাবার চাই। এভাবে হয়নাকি? সারারাত বাইরে ছিলাম। এখন তোমার রান্নার কাজে সাহায্য করলাম। তুমি তো শুধু চামুচ ঘুরালে সব আমাকেই করতে হলো। খাবার রেডি করো আমি আসছি।
পাথর হুকুম দিয়ে চলে গেলো। কহিনুর অসহায় মুখ করে সেদিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। পাথর না থাকলে বিপদ ছিল। রান্নার কিছুই ওর জানা নেই। সব পাথর ওকে শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ রাতে আবার কি সামনে আসতে চলেছে ভেবেই অস্থির লাগলো। কি হবে সামনে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here