তুই আমার অঙ্গারাম্লজান – পর্ব ১৪

0
182

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_১৪
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

১৭.
প্রায় এক মাস হতে চললো, প্রিয়ল আমার অসভ্য স্বামী হওয়ার তোড়জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার দুষ্ট চাহনি, মিষ্টি ছোঁয়া আমাকে বিরক্ত করে তা প্রকাশের চেষ্টা করে বারংবার ব্যর্থ হই। আমার ঠোঁটের শুভ্ররাঙা হাসি বারবার তার কাছে ধরা পড়িয়ে দেয়। সে বুঝে, তার কর্তৃত্ব যে আমার ভালো লাগে। কিন্তু হৃদয় জুড়ে যে সে ইতিমধ্যে স্থান দখল করে নিয়েছে তা জানতে দেইনি।
চাঁদনী আর তুশিরার সঙ্গে তাকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, আমাকে চক্কর মেরে তাদের হৈ-হুল্লোড় করে বলা, “দুলাভাই জিতছে, দুলাভাই জিতছে,” কিছুই বলা হয়নি।

এখন আমরা টিএসসি বসে আছি।হাতে আমার ফুচকার প্ল্যাট। গায়ে আমার গাঢ় নীল রঙের গাউন। হেলেদুলে ফুচকা মুখে পুরার তালে তালে খসে পড়া ওড়নাটা সে আলতো হাতে ধরে আমার মাথায় প্যাঁচিয়ে দিচ্ছে। ওড়নার কার্ণিশ ধরে মনোযোগী ভঙ্গিতে ঠোঁট কামড়ে কোথায় গুঁজে দিলে তার উথলে ওঠা হৃদয়ের মতো ওড়নাটা দিশেহারা ছুটে যাবে না তা ভাবছে।
মাথায় ভালোমতো প্যাঁচিয়ে শেষ অংশটুকু আমার কানের ভাঁজে স্থাপন করে শান্ত হয়ে বসলো। আমি খাওয়া বাদ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কালো রঙের চেক শার্টে তাকিয়ে কেমন লাগছে বলতে ইচ্ছে করছে না। বলতে গেলেই ক্লান্ত হয়ে পড়বো, কিন্তু তার শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের বর্ণনার আর সমাপণ ঘটবে না।

প্রিয়ল আমার ফুচকার প্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি ছাঁইপাশ খাও। দুইদিন পর দেখবে ভালো খাবারও পেটে সইছে না। ভাতের গন্ধ নাকে লাগলেও পেট চেপে বাথরুমে দৌঁড় দিচ্ছো।”
আপনি থেকে তুমিতে প্রিয়ল আমাদের বিশেষ আলোচনা সম্মেলনের পরের দিন থেকেই এসেছে। তুমি তুমি বললে নাকি তার অভ্যন্তরীণ দুষ্ট সত্তা দ্রুত জেগে ওঠে। আমার সঙ্গে সৎভাবে অসভ্যতা করতেও মনে সাহস সঞ্চিত হয়। সে তো অত্যধিক ভালো মানুষ। মেয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে যে কি তার বাঁধে!

আমি একটা ফুচকা তুলে তার এগিয়ে দিয়ে বললাম,
“তাহলে চলুন ভাগাভাগি করে খাই। দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে নিলে যেমন মনের চাপ কমে, তেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার ভাগাভাগি করে খেলে পেটের চাপ কমে।”
প্রিয়ল হেসে বললো,
“পেটের জ্বালা আমি একদম নিতে পারি না ফাবলীহা। আমাকে ইন্সট্যান্ট জায়গায় বসেই হালকা হতে হয়। তাই তো খাবার নিয়ে আমি এতো সচেতন।”
আমি খিলখিল করে হেসে ওঠলাম।

“আরে সুন্দরী। এখানে সেখানে বসে রঙলীলা দেখানো হচ্ছে।”
আমার হাসি থেমে গেলো। ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে সামনে তাকাতেই রিজওয়ানের বিশালাকার দেহ নজরে পড়লো। তার সঙ্গে তিনজন ছ্যাচামো স্বভাবের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এরা আগের বার দেখা ছেলেদের মধ্যে কেউ নয়।

“আজ দেখি নতুন কাস্টমার। আগের জন কোথায়? আমাকেও তো এক দুপুরের জন্য তোমার কাস্টমার বানাতে পারো।”
রিজওয়ানের বিচ্ছিরি ভঙ্গির হাসিতে রাগের দমকে আমার শরীর কেঁপে ওঠলো। দিগ্বিদিক হারিয়ে ফুচকার প্ল্যাটটা আমি দূরে ছুঁড়ে মারলাম। সঙ্গে সঙ্গে রিজওয়ান কাগজের প্ল্যানের মতো উড়ে দূরে গিয়ে পড়লো। চোখে তার হতবিহ্বল দৃষ্টি।
আমি পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয়লের তাকিয়ে দেখলাম তার মুখ পুরো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এ হলো আজকে তোমার কাস্টমার। আমি কুচি কুচি করে কিমা বানাবো, তুমি তা রান্না করে খাবে।”
আমি বোকার মতো হেসে মাথা নাড়ালাম। আর কিছু বলার পূর্বে প্রিয়ল ঝড়ের গতিতে রিজওয়ানের নিকট গিয়ে দাঁড়ালো। তার পিছন পিছন রিজওয়ানের যেই ছাও-পোনা আছে প্রিয়লের পিছনে ধাবিত হলো। তিনজনের ছিয়াত্তরের মমন্বন্তরের মতো ক্ষুদ্রাকার দেহ, আর একজনের শিমুল তোলার মতো মাংসবিশিষ্ট অবয়ব প্রিয়লের পেশীবহুল দেহের তাগড়াই শক্তির সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না।
আশেপাশের মানুষজন জড় হয়ে যাচ্ছে।

প্রিয়লের ফোনটা ঢালাই বাঁধা সিমেন্টের বেঞ্চের উপর পরে ছিল। আমি তাড়াতাড়ি তার ফোন হাতে নিয়ে মাহিম ভাইকে মেসেজ করলাম।
কিছুক্ষণ বাদে মাহিম ভাইয়ের সঙ্গে আরও দুজন কোথা থেকে যেন ছুটে এলো। তারা প্রিয়লের নিকটে দাঁড়াতে রিজওয়ানের বন্ধুরা প্রিয়লের বগলদাবা থেকে ছুটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সফল হলো না। প্রিয়ল তার বন্ধুদের হাতে রিজওয়ানের গ্রুপকে হস্তান্তর করে শ্বাস টেনে দুই কদম পিছনে এসে দাঁড়ালো। আমি ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।
প্রিয়ল রিজওয়ানকে ইঙ্গিত করে কুপিত কণ্ঠে মাহিম ভাইকে বললো,
“এই ছেলের জামা-প্যান্ট যা আছে সব টেনে খোল।”
বলেই সে আগের জায়গায় গিয়ে বসলো।
আমি আঁতকে ওঠলাম। ওহ শিট! জামাইয়ের কিছু দেখার সৌভাগ্য হলো না, আর এই ভুটকুকে দেখে আমার চোখ নষ্ট করতে হবে!

মাহিম ভাই অতোটাও নির্দয় হলেন না। রিজওয়ানের পরনের লাল রঙের চাড্ডি অবশিষ্ট রাখলেন। তা পুষিয়ে নিলো রিজওয়ানের বন্ধুবান্ধব দিয়ে।প্রিয়লের বন্ধুরা রিজওয়ানের বন্ধুদের শুধু চাড্ডি পরিয়ে দাঁড় করে রাখলেন।

তুশিরা, চাঁদনী থাকলে সেই হতো! কেন যে বেচারিদের ফাঁকি দিয়ে জামাইয়ের চুমু খেতে এসেছিলাম। তারা সামনে থাকলে রিজওয়ান আরও লজ্জা পেতো। ভাবতে ভাবতে রিজওয়ান ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। এরপর করুণ সুরে বলে ওঠলো,
“আম্মুউউ!”
আমিও অনুচ্চ গলায় দন্তবিকাশ করে সুর তুললাম,
“আঁ, আহা আহা।”
প্রিয়ল তার জায়গা থেকে উঠে এসে আমাকে টেনে আগের জায়গায় নিয়ে এলো।
তার কাছে এনে আমি ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো,
“তোমাকে এসব দেখতে হবে না। তুমি দেখলে শুধু আমাকে দেখবে।”
আমি তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বললাম,
“কিন্তু আমি তো আপনার চাড্ডি দেখতে পাচ্ছি না।”
প্রিয়ল ফিচলে হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“আচ্ছা! দেখতে চান ম্যাডাম?”
আমি যে যা তা বলছিলাম, আমার খেয়াল হলো। আমি লজ্জা পেয়ে তার বুকে মাথা লুকালাম। আবার মিস্টেক!
দ্রুত ভুল উপলব্ধি হতে আমি প্রিয়ল থেকে সরে কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়ালাম। পিছন থেকে ভেসে হাচ্ছে মাহিম ভাইদের মারের দমকে রিজওয়ানদের আহ-উহ করা আর্তচিৎকার।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here