#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ২১
চারিদিকে যখন অন্ধকার, এখন আমাকে খুঁজে কি লাভ।যখন ছিলো আলো আমাকে লাগেনি ভালো।আজ তো আমায় পাবে না।আমি গেছি তোমার করা অবহেলায় হারিয়ে।কথাট একটু না অনেকটা সত্যি। যখন মানুষটা থাকে তখন সে কি ছিলো,তা আমরা বুঝতে পারি না।কিন্তু যখন হারিয়ে যায় তখন বুঝতে পারি।দিন ফুরালো,মানুষটা হারালো।হয়নি চাওয়া ক্ষমা।এক বুক কষ্ট নিয়ে আমাকে করলো একা।যে কষ্ট দিয়েছি,পাওনা ছিলো না তাঁর।যা ছিলো পাওনাকড়ি রেখে দিয়েছি যত্ন করি।হবে যেদিন দেখা,হিসবে করে ফিরিয়ে দিবো,করো শুধু ক্ষমা।কিন্তু সত্যি কি হয় ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।সে তো অভিমান করে চলে যায়নি।প্রকৃতি তাঁকে নিজের করে নিয়েছে। তাই চাইলেও ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।সমিউল চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না।তাঁর কষ্ট হচ্ছে। এভাবে তাঁর আপন মানুষ গুলো তাঁকে ঠকালো।মানুষটাকে মৃত্যুর আগেও কতটা কষ্ট দিলো।এক বুক কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলো।না এই ব্যথা না ভোলার না সইতে পারার।চোখ তুলে পিছনে ফিরলো সমিউল মেয়ের নাম ধরে।কিন্তু না মেয়ে নেই।সে-ও তাঁকে একা ছেড়ে চলে গেলো এই সার্থপর পৃথিবীতে। তাহলে সে এখন কি নিয়ে বাঁচবে। উঠে দাঁড়িয়ে ভোরকে ডাকতে রইলো।
ভোর,মা ও-মা কই তুই। তুই অন্তত আমায় ক্ষমা কর মা।এই জ্বালা যে আমায় পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। মা’রে আমি যে পারছি না।সোনা মা’রে আমার এই জ্বালা কমিয়ে দে মা।আমার বুকে আয় সোনা।আমার রাজকন্যাকে একটু মন ভরে দেখি।আমাকে একবার বাবা বলে ডেকে সার্থক কর বাবা হতে।একজন তো চলে গেছে, তাঁর কাছে ক্ষমাও চাইতে পারিনি।মা তুই অন্তত আমায় মাফ করে দে।আমাকে যদি তুই ক্ষমা না করিস, আমি যে আজ মরেও শান্তি পাবো না।মা ,ও মা কই তুই। এভাবে একা ফেলে যাস না মা।কিন্তু কোথাও ভোরের আওয়াজ পাওয়া গেলো না।ভোরকে দেখতে না পেয়ে আবারও ভেঙে পড়লেন সমিউল।তখন ধূসর এসে বললো–
একদিনেই সব কিছু মেনে নেওয়া সম্ভব নয় আঙ্কেল। যে কষ্ট ভোর পেয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। আপনাদের পরিবার আপনি যে অন্যায় করেছেন তা হয়তো কোন শত্রুও শত্রুর সাথে করে না।কি করে ভাবলেন এতো সহজে সব মেনে নিবে ও।একটু তো সময় লাগবেই।তাই ভোরকে না খুঁজে আসল অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।তাতে যদি আন্টির আত্মা শান্তি পায়।ক্ষমা চাইতে তো কখনোই পারবেন না।শুধু এটাই পারবেন,তাঁর অপরাধীদের শাস্তি দিতে।ধূসরের কথা শুনে রাগে-ক্ষোভে ফেটে পরলেন কুহেলি বেগম।
তোর বউকে আমি নিজের হাতে খুন করবো।
বুড়ি এক-পা তো কবরে গেছে। পুরোপুরি না যেতে চাইলে যা হচ্ছে যা হবে হতে দাও।কারণ তোমাকেও শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত রাখবো না।আগে ভোর একা ছিলো,তখন যদি কিছু না করতে পারো।এখন তো ভোরের বাবা স্বামী আছে,ওর ছায়া হয়ে। এখন আর কি করতে পারবে।আর মনে রেখো, আঙ্কেল থাকুক আর না থাকুক আমি সারাজীবন ভোরের পাশে আছি।সবার সাথে তুমিও উল্টো গুনতে শুরু করো।কারণ,বাদ যাবে না কোন শিশু,সবাইকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন A কেপসুল।তারপর ধূসর সমিউলকে ধরে নিয়ে চলে গেলেন।
পুরো ঘটনা সিমা শুনলো, রিনা আর সাবুর থেকে।তাঁর পা যেন অবস হয়ে রয়েছে। তাঁর বাবা এতটা কুৎসিত মনের মানুষ ছি্।ভাবলেই সিমার শরীর গুলিয়ে উঠে।সে কিছুতেই ওই বাড়িতে ফিরে যাবে না।ওই বাড়ির প্রতিটা ইটে লেগে আছে ভোর আর তাঁর মায়ের রক্ত। যে রক্ত গুলো তাঁর পরিবার বের করেছে।অসম্ভব তাঁর ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না।তাই সে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আবারও ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো।এখন হোটেলে উঠবে তারপর টিকিট কেটে চলে যাবে সেখানে।যেখান থেকে সে এসেছিলো।কিন্তু রিনা সাবু,ওরা কোথায় যাবে।না চাইলেও তাঁদের ওখানেই ফিরতে হবে।কারণ তাঁদের যে দিন শেষে ফেরার জন্য কোন আপন নীড় নেই।তাই তাঁদের ওই বাড়িতেই ফিরতে হবে।কিন্তু তাঁর আগে যেতে হবে হাসপাতাল। কি অবস্থা তাঁর ভাইয়ের।আফিমের কি দিন ফুরিয়ে এলো।ভাই বলে কি আর ডাকা হবে না।খুব দ্রুত রিনা আর সাবু রওনা হলো হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। আমরা যা চাই তা হলো স্বপ্ন, আর আমরা যা পাই তা হলো জীবন।এটাই সত্যি এটাই বাস্তব। তাই যতো সহজে তুমি সত্যি মেনে নিয়ে মানিয়ে চলবে ততোই তুমি ভালো থাকবে।আমরা তো কল্পনা করতে ভালোবাসি।কিন্তু কল্পনা আমাদের ক্ষনিকের সুখ দিতে পারে।আর বাস্তব আমাদের সুখ-দুঃখ দু’টোই দেয়।এটা মনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নাম-ই জীবন।আপন মানুষের চলে যাওয়া কেউ কখনোই সইতে পারে না।সকালে দেখা হওয়া মানুষটার যখন দুপুরেই খবর আসে।সে আর নেই, পা বারিয়েছে না ফেরার পথে। তখন আপন মানুষ গুলো ভেঙে মুচড়ে যায়।কিন্তু ওই পথে একদিন আমাদের সবার পা বাড়াতে হবে।তবুও আমরা তা মেনে নিতে চাই না।তাই তো মেনে নিতে পারছে না আফিয়া বেগম। নিজের চোখের সামনে এভাবে তাঁর প্রথম সন্তান চলে গেছে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব না।পাঁচ মিনিট বাইশ সেকেন্ড হলো আফিম চলে গেছে সবাইকে ছেড়ে। কথাটা শোনা মাত্রই হাসপাতাল কাঁপিয়ে এক চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়েছে আফিয়া বেগম।এমনটা তো হওয়ার ছিলো না।কিন্তু এমনটাই হয়েছে। ডাক্তার যখন ছেলের মৃত্যুর খবর দিলো সফিউলকে তখন তিনি,ডাক্তারের কলার চেপে ধরে বলে।যতো টাকা লাগে আমার ছেলেকে বাঁচান। দরকার পড়লে আমার কিডনি বিক্রি করবো ছেলের চিকিৎসা করাতে।কিন্তু এটা বলবেন না,সরি।কিন্তু ডাক্তার আবারও বলেছে সরি।হাতে কোটি টাকার সম্পত্তি, অথচ ছেলেকে বাঁচাতে পারলো না।ডাক্তার যখন বললো — ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগী বেশিদিন বাঁচে না।তবুও যতটুকু বাঁচত সেটুকুও বাঁচেননি আপনার ছেলে।কারণ সে জানার পরে-ও নিজের চিকিৎসা তিনি করাননি।তাঁর বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছেই ছিলো না।উপরে আল্লাহ নিচে আমাদের মাধ্যমে তাঁকে যদি-ও বাঁচাতে পারতাম।কিন্তু তিনিই বাঁচতে চান না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।হয়তো আল্লাহ এটাই চেয়েছেন।একজন বাবা-র সামনে এই কথা গুলো যখন বললো ডাক্তার, তখন স্থীর থাকতে পারলেন না সফিউল।সে যতোই খারাপ হোক বাবা তো? সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝি পৃথিবীর সব থেকে বড় কষ্ট।পাপ বাপ-কেও ছাড়ে না।ঠিক তাই সফিউলকেও ছাড়লো না।শুরুতেই প্রকৃতি তাঁর প্রতিশোধ নিলো,তাঁর প্রথম সন্তান কেঁড়ে নিয়ে। আর কি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।
———–
সমিউলকে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেই ধূসরের কানে আফিমের মৃত্যুর খবর এলো। খবরটা দ্রুত ভোরকে জানাতে হবে।একের পর এক ধাক্কা কি করে সইবে ভোর।আজ সে তাঁর স্ত্রী ঠিকিই,কিন্তু একদিন হলেও তো সে আফিমকে ভালোবেসেছিলো।খবরটা শোনা মাত্র কি রিয়াক্ট হবে ভোরের, ভাবতেই ধূসরের ভয় লাগছে।কোনরকম নিজেকে প্রস্তুত করে বাড়ির বাহিরে আসতেই ভোরকে একটি সিএনজি থেকে নামতে দেখলো।ভোরকে দেখে ধূসরের খুব ভয় হলো।তাহলে ভোর খবরটা পেয়ে গেছে। তারাহুরো করে ভোরের সামনে গিয়ে ভোরের হাত আঁকড়ে ধরলো ধূসর। ভোর ধূসরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো।
আমি ঠিক আছি ধূসর, আমাকে ধরতে হবে না।যদি নিজের মায়ের মৃত্যুতে নিজেকে সামলাতে পারি।তাহলে প্রাক্তনের মৃত্যুতে আমার কিছু হবে না।শুধু আপনার একটা দায়িত্ব এই বাড়ির কেউ যেন আমার আশেপাশে না আসে,এমনকি আব্বাও না।কারণ আমি কারো অযথা প্রশ্নের মুখে পড়তে চাই না।আর এমন কিছু হবে তা আমি জানতাম।আমি নিজেকে এমন কিছু শোনার জন্য তৈরি করে রেখেছি।তখন আমি আপনাদের ওখানে রেখে বাড়িতে এসেছিলাম আফিম ভাইয়াকে ভর্তি করতে।তিনি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলো।সেখানে অনেক নেশা করে পড়ে ছিলো।হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সে আমায় টেক্সট করে জানায়। আমি গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করলে,ডাক্তার আমায় আগেই জানিয়ে দেয় এমন কিছু হতে পারে।তাই আমাকে সামলানোর কোন দরকার নেই।
———-
সময় খুব দ্রুত রং বদলায়।কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করলেও সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সে তাঁর আপন গতিতেই এগিয়ে চলে।আমরা যতটা ভাবি ততোটা না-ও হতে পারে।আবার আমরা যা ভাবি না তাঁর অধিকও হতে পারে।যেমনটা ধূসর ভেবেছিলো,আফিমের মৃত্যুতে ভোর হয়তো অনেক ভেঙে পড়বে।কিন্তু ধূসরকে অবাক করে দিয়ে ভোর এক ফোঁটা চোখের জলও ফেলেনি।আজ ছয়দিন হলো আফিম চলে গেছে। ভোর ফিরে এসেছে ধূসরদের বাড়ি।কারণ এখন এটাই তাঁর বাড়ি।তাঁর বাবা-র সাথে সে এক সেকেন্ডও কথা বলেনি।এটাই তাঁর শাস্তি ভোরের থেকে।ইলমা নিজের অন্যায়ের জন্য শাস্তি পেলো।অকালেই বিধবার তকমা শরীরে লাগিয়ে।আফিয়া বেগম নিজের প্রথম সন্তান হারিয়ে নিজের পাপের শাস্তি পেলো।কুহেলি বেগম,সফিউলের শাস্তি হয়তো এখনো বাকি।কিন্তু কুহেলি বেগম কোন শাস্তি না পেলেও,সফিউল কিছুটা পেয়েছে।সন্তানের লাশ কাঁধে উঠেছে। যে মেয়েকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন।সেই মেয়ে তাঁর পাপের কাহিনি শুনে একটিবার দেখাও করেনি তাঁর সাথে। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেও এক পলক দেখতে আসেনি ভাইকে। সাবু দেশ ছাড়ার প্রস্ততি নিচ্ছে। আজ সব সম্পত্তি তো তাঁর কিন্তু আপন মানুষ গুলো ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে। ভেতর থেকে কোথাও যেন অনুশোচনা নাড়া দিচ্ছে। সে সত্যি অনেক বড় পাপ করেছে।
চলবে,,,