তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ২২ এবং শেষ

0
574

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ২১ শেষ

বদলায় সময়।বদলে যায় ধরনীর রূপ। শুধু বদলায় না কিছু মানুষ। হয় সে খারাপ, না-হয় সে ভালো।কখনো বা ভালো খারাপ দু’টোই। কিন্তু কিছু তো-সে।প্রকৃতি নিজেকে নানা রূপে সাজালেও কিছু মানুষ ভারি অদ্ভুত সে নিজেকে কোন রঙেই সাজাতে রাজি নয়।যেমনটা ভোর।ভোর পণ করেছে সে নিজেকে পরিবর্তন করবে না।সে যেমন ছিলো তেমনই থাকবে।রোজ নিয়ম করে বাড়ির আশেপাশে সমিউল ঘোরাফেরা করে।এক পলক মেয়েকে দেখবে বলে।কিন্তু ভোর যখন থেকে বুঝতে পেরেছে তাঁর বাবা-র মতিগতি। তখন থেকেই নিজেকে ঘরবন্দী করেছে।রোজ একবার করে আশে এক বুক আশা নিয়ে সমিউল।আর ফিরে যায় হতাশ হয়ে।কবে যে তাঁর মেয়ে তাঁর কষ্ট বুঝবে তা সমিউল জানে না।ভোর চিন্তা করে,আজ আফসোস করে কি হবে।হারিয়ে যাওয়া সময় কিনবা মানুষ গুলোকে তো ফিরিয়ে দিতে পারবে না সে।তাহলে কেন সে সমিউলের সাথে সব ঠিক করে নিবে।সবাই বুঝিয়ে ভোরকে বোঝাতে পারেনি।বাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব চিন্তিত। কবে, কবে ভোর বুঝবে।আজকাল ধূসরের খুব মন খারাপ হয়।জীবনকে নিয়ে তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিলো।কিন্তু সব কিছু ধোঁয়াশা হয়ে রইলো।আজ পরিস্থিতি এতটা খারাপ যা হাতের নাগালে নেই।ধূসরের মা এবং বাবা বাদে সবাই ভোরের উপর বিরক্ত। কেউ ভোরকে বোঝার চেষ্টা করছে না।ছোট্ট এই জীবনে যা সইতে হয়েছে তা হয়তো হওয়ার ছিলো না।কিন্তু তাঁদের ধারণা যা হয়েছে হয়েছে। এখন যা হবে তা ভালো হবে।তাহলে পিছনের খারাপের কথা চিন্তা করে কেন সামনের ভবিষ্যতে নষ্ট করছে ভোর।কিন্তু ভোর সে কি ভাবছে সে নিজেও জানে না।সে শুধু জানে পৃথিবীতে আর যাইহোক ভরসা করার মতো মানুষ নেই।যখনই সে ভরসা করে কাউকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে। সেই ওকে একা ফেলে চলে গেছে। তাই নতুন করে ভরসা করা মানে বোকামি করা।তাই সে যেচে পড়ে সেই বোকামি করতে চায় না।অন্যদিনের মতো আজও সমিউল বাড়ির গেঁটে অপেক্ষা করছে।সবাই চেয়েও তাঁকে ভেতরে নিতে পারেনি।তাঁর একটাই কথা। মেয়ে যেদিন নিজে থেকে তাঁকে ডাকবে সেদিনই সে বাড়ির ভেতরে ঢুকবে।কিন্তু আদৌও কি ভোর তাঁর বাবাকে ডাকবে।ওদিকে নিজেদের মাঝেই দন্ত লেগেছে সফিউলের।অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে ইলমা।তাঁর বাকিটা জীবন সে কীভাবে চলবে,তাই সে সম্পত্তির ভাগ চায়।এক ছেলেকে হারিয়ে যেখানে দিক শূন্য হয়ে পড়ে ছিলো সফিউল, আফিয়া।তখন এসব কথায় তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।সাবু দুদিন হয়েছে তাঁদের ছেড়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে। মেয়ে ফোন তো দূরে থাক তাঁদের খোঁজখবরও নেয় না।এতো বড় বাড়িতে আছে বলতে তাঁরা তিনজন। যে বাড়িটা গমগম করতো মানুষের ভিরে।সেখানে হাতে গোনা মাত্র তিনজন। সফিউল, তাঁর মা কুহেলি বেগম, এবং আফিয়া বেগম। সত্যি সময় কতটা পরিবর্তন করেছে তাঁদের। সমিউল নিজের দ্বিতীয় মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাড়ি উঠেছে। সে চায় না এই বাড়িতে থাকতে।আফিয়া বেগম চেয়েও পারেনি তাঁদের আটকাতে।তাই এখন নিজেদেরকে বড় পাপী ভাবতে ইচ্ছে করছে।ড্রইং রুমে দুই স্বামী স্ত্রী বসে ছিলেন,তখনই কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেতেই পিছন ঘুরে তাকালেন।তখনই দেখতে পেলেন কুহেলি বেগম সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছেন।মা বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেলেন সফিউল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।কারণ ততোক্ষণে কুহেলি বেগম সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে অনেকটাই নিচে চলে গেছেন।পাপের শাস্তি বুঝি শুরু হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো।উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার পরেও কোন কাজ হয়নি।তাঁর দুই পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে।তাঁর ঘুমের মাঝেই এ্যাটাক হয়েছিলো,যা তাঁরা ধরতে পারেনি।তাই সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ায় তাঁর পা দু’টো অচল হয়ে গেছে।সফিউল কষ্টে চিৎকার করে কাঁদতে রইলো।সব শেষের পথে।বাকি আর কিছুই নেই।আজ সে বুঝতে পারছে আপন হারানোর যন্ত্রণা কি? আজ আফসোস করেও তাঁর মন শান্ত হচ্ছে না।মনে হচ্ছে নিজেকে নিজে শেষ করলেও বুঝি শাস্তি কম হয়ে যাবে।সম্পত্তির জন্য এতো খারাপ করে কি লাভ হলো।শেষ বয়সে এসে তাঁকে পুরোপুরি একা হতে হলো।হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরতেই আফিয়া বেগম বললেন,সে আর এই বাড়িতে থাকবে না।এই বাড়িতে পাপ লেগেছে। বাড়ির প্রতিটা কোনায় ইনুর দীর্ঘশ্বাস ঘুরছে।সে কাউকে ভালো থাকতে দিবে না।তাঁর দুই দুইটা সন্তান থাকতেও আজ সে একা।যে সম্পত্তির জন্য এতো কিছু হয়েছে, সেই সম্পত্তি সে কিছুতেই ভোগ করতে পারবে না।তাহলে তাঁকেও ভোগ করতে হবে শাস্তির পাহাড় ।প্রথম সন্তান হারিয়ে সে যা শাস্তি পেয়েছে সেটাই যথেষ্ট, আর চায় না।তাই সে-ও সফিউলকে একা ফেলে চলে গেলো নিজের পথে।এদিকে অসুস্থ মাকে নিয়ে সফিউল পড়লো মাঝ নদীতে। কিভাবে সে কিনারায় গিয়ে দাঁড়াবে। কোন পথ সে নিজেই খোলা রাখেনি।যে পথ দিয়ে সে কিনারায় ফিরবে।একেই বলে পাপ বাপ কেও ছাড়ে না।

————

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আকাশটা মেঘে ঢাকা।কখন ঝুপ করে বৃষ্টি নামবে বলা যায় না।শুনশান রাস্তায় নেমে এসেছে ভোর, ধূসর।আপন মনে দু’জনেই হেঁটে চলছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।দু’জনের মাঝে বিশাল এক ফারাক।ভোর রাস্তার ডান পাশে,ধূসর বামে।মাঝ থেকে কিছুক্ষণ পর পর শাঁই শাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি।রাস্তার জ্বলে থাকা হলুদ রঙের বাতি গুলো পুরো রাস্তা আলোকিত করছে।দু’জনের এই বিশাল ফাঁকা কি কখনো পূরণ হবে না।এক বুক কষ্ট নিয়ে কি ভোর বাকিটা পথ চলবে।কাউকে তিব্র ভালোবাসার পরেও তাঁকে না পাওয়ার শূন্যতা গ্রাস করবে ধূসরকে।কি চাইছে প্রকৃতি।সে কি চায়-না একটি পরিপূর্ণ হৃদয় এক ভাঙা হৃদয়কে আগলে রাখুক।সে কি চায় না অবিশ্বাস ভরা মনটা আবারও কাউকে বিশ্বাস করে হাত শক্ত করে ধরুক। সে কি চায় না একটি ভরসার কাঁধে ভোর সারাজীবন মাথা রাখুক।টুকরো টুকরো ভালোবাসা জমিয়ে এক পাহাড় করেছে যে মানুষটা, তাঁর একটা ভালোবাসার মানুষ হোক।সব দ্বিধা দূরে ঠেলে দিয়ে কি কেউ নিজেদের কাছে টেনে নিবে না।তাঁদের মাঝে কি এমনই দূরত্ব বজায় থাকবে।

ভোর

বলুন

বাড়ি ফিরবেন না।

চলুন

যদি থাকতে চাই

থাকবেন

আপনার কোন ইচ্ছে নেই

তা অনেক আগেই মরে গেছে

আর কত দিন

যতোদিন বাঁচবো

আপনার মনে হয় না,এবার অন্তত সব কিছু ঠিক করে নেওয়া উচিত।

কি ঠিক করবো।

কেন আপনি জানে না?

না

আপনার মনে হচ্ছে না, আপনি একটু বেশি অবুঝ হচ্ছেন।

না হচ্ছে না।

ভোর সবাই তো সবার পাপের শাস্তি পেয়েছে, এবং পাচ্ছে। তাহলে কোন শাস্তি নিজেকে দিচ্ছেন।

আমি নিজেকে কোথায় শাস্তি দিচ্ছি।

মনের সাথে যুদ্ধ করছেন।এটা কি শাস্তি দেওয়া নয়।

আমাকে আপনি এতটা না বুঝলেও পারতেন ধূসর।

আপনি আমার স্ত্রী, আপনাকে না বুঝতে পারলে কাকে বুঝবো।

সবাইকে বুঝতে নেই।কারণ কষ্ট কিন্তু আপনার হয়।দেখুন আপনি আমায় এতটা ভালোবাসেন।আমি জানছি,দেখছি।তবুও আমি আপনায় বিশ্বাস করতে পারছি না।

ভোর,আপনি আমায় ভালোবাসেন না এটা ভেবে কখনো আমার কষ্ট হয় না।কিন্তু আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন না এটাই আমার কষ্ট।

এই জন্যই তো বলি এতো ভালোবাসবেন না।কষ্ট কিন্তু আপনারি হয়।

আমি সারাজীবন এই কষ্ট পেতে রাজি আছি।

এটা গল্প বা সিনেমা নয়,যে আপনি সারাজীবন কষ্ট পেতে রাজি হচ্ছেন। অতিরিক্ত কিছুই ভালো না।তাই আমাকে যতো কম ভালোবাসবেন ততোই ভালো।

ভালোবাসার মাপ কাঠি নেই।তাই মেপে ভালোবাসা যায় না।ভালোবাসার বিশালতা আছে,যা বাড়তে থাকে কমে না।কাউকে ভালোবাসলে তাঁর সব কিছুকেই ভালোবাসতে হয়।আমি আপনার ওই অবিশ্বাসকেও ভালোবাসি।তাই কম ভালোবাসার কোন প্রশ্নই আসে না।

আপনি অবুঝের মতো কথা বলছেন।আজ আপনার এমনটা মনে হচ্ছে, বছরখানেক পর এমনটা মনে হবে না।দেখে নিয়েন।

ওই যে বললাম, কাউকে ভালোবাসতে হলে তাঁর সব কিছুকেই ভালোবাসতে হয়।তাহলে কোন দিনও ভালোবাসা কমে না।আমি আপনার রাগ,অভিমান, ঘৃণা, কষ্ট, সুখ,দুঃখ, আপন,পর সব কিছুকেই ভালোবাসি।তাই আমার কখনো আফসোস হবে না,এটা ভেবে। ইসস কেন আমি ভোরকে ভালোবাসি।

কখনো কাউকে মুখ বুঝে কাঁদতে দেখেছেন।দেখেছেন কখনো কান্না আঁটকে রাখতে না পেরে নিজের হাত কামড়ে বৃথা কান্না আঁকানোর চেষ্টা করতে।দেখেছেন কখনো সেই কাটা হাতে নুন,মরিচ লাগিয়ে হাসতে।আমি দেখেছি।তা-ও কাকে জানেন।নিজের মা’কে। সেই মা’কে যে কিনা আমাকে এই পৃথিবীর মুখ দেখাতে নিজেকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে। তবুও সেই মৃত্যু যন্ত্রণা সয্য করে হাসি মুখে আমায় কোলে নিয়েছে, সেই মা’কে। আমি বিশ্বাস করিনা বিয়ে নামক কোন সম্পর্ক। আমি বিশ্বাস করি না ভরসা করার মতো মানুষ পৃথিবীতে আছে।সব শেষে আমি একটা কথাই বলি।আমি মুক্তি চাই, এই মিথ্যা সম্পর্ক নামক বন্ধন থেকে।

ভোর আপনি নিজের অজান্তে আমায় ভরসা করে ফেলেছেন সেটা কি জানেন? জানে না। যদি আমায় ভরসা না করতেন,সেদিন ঝিলের পাড়ে আমাকে জড়িয়ে কাঁদতেন না।যদি বিশ্বাস না করতেন, সেদিন বিয়ের রাতে আমার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেন না।যদি ভালো না বাসতেন তাহলে সেদিন ঘুমের ঘোরে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিতেন না।আরে আপনার মস্তিষ্ক জানে আপনি আমায় কতটা ভরসা করেন।আপনার অচেতন মন জানে আপনি আমায় কতটা ভালোবাসেন।আপনার বামপাশে থাকা ওই যন্ত্রটা জানে আপনি আমায় কতটা বিশ্বাস করেন।শুধু আপনি জানেন না আপনি আমায় ভালোবাসেন। আপনি ভয় পাচ্ছেন,যদি আমি হারিয়ে যাই।ঠিক তাঁদের মতো যাঁরা আপনার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। ভোর আর একবার বিশ্বাস করুন না।আর একবার ভালোবাসুন।আর একবার কাউকে সুযোগ দিন আপনাকে আগলে রাখার।একবার, আর কখনো যদি মনে হয় না, আমি আপনার ভরসার যোগ্য নই।তাহলে না-হয় সেদিন নিজ ইচ্ছায় চলে যাবেন।কিন্তু এখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবেন না।আমি আপনার অবহেলা মেনে নিতে পারবো,কিন্তু আপনার অনুপস্থিতি মেনে নিতে পারবো না। প্লিজ ছেড়ে যাবেন না।আমি আপনার জীবনের সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে চাই। প্লিজ সেই সুযোগ থেকে আমায় বঞ্চিত করবেন না।দেখুন এই বুকটা চিনচিন ব্যথা করছে আপনাকে হারানোর কথা শুনতেই। আপনাকে হারিয়ে ফেললে মরেই যাবো।

ধূসর

হ্যা ভোর,আমি আপনি বিহীন এক সেকেন্ডও চলতে পারবো না।তখনই ভোর ঝাপিয়ে পড়লো ধূসরের বুকে।দু’জনেই হাউমাউ করে কাঁদতে রইলো।তখনই ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে এলো পৃথিবীর বুকে।আজ দু’জনের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো রাতের আকাশ,মেঘ আর বৃষ্টি। নতুন গল্পের সূচনা হলো ভোর আর ধূসরের।সারাজীবন এভাবেই থাকুক দু’জন। ভোর ধূসরকে জড়িয়ে ধরে বললো#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো আমার জীবনে।

সমাপ্তি।

শুরু থেকে শেষ অবধি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ। নেক্সট নাইস লেখা পাঠক গুলো আজ কিছু বলে যাবেন।কাউকে কোন ভাবে আঘাত করে থাকলে প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন।আর ছোট্ট করে কমেন্ট করবেন।ছোট্ট করে একটা রিভিউ দিবেন এটাই অনুরোধ। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here