#তোমার_নেশায়_আসক্ত❤
#part:26❤
#Suraiya_Aayat❤
❤
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই আরিশ আরুর জায়গাটা হাতেরে দেখল কেউ নেই অর্থাৎ আরু উঠে পড়েছে অনেকক্ষণ আগেই ৷
আসলে কালকে রাতের ঘটনায় আরু খুব লজ্জা পেয়েছে সেই কারণে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে , আরিশ এর মুখোমুখি হবে কি করে ও ! লজ্জায় ওর দিকে হয়তো তাকাতেই পারবেনা ৷
আরিশ জানে আরুশির ওকে ঘুম থেকে না ডেকে দেওয়ার কারণ ৷ অন্য দিন আরু ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই ওকে ডেকে দেয় কিন্তু আজকে ডাকেনি লজ্জায় ৷
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতেই বুঝতে পারল যে অনেকটাই লেট হয়ে গেছে ওর উঠতে , আসলে আগের দিন আরুকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে সময়টা যে কিভাবে কেটে গেছে সেটা ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে….
ঘুমের ভাবটা কাটতেই বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেখতে পেল বিছানার উপরে ওর অফিসে যাওয়ার জন্য শার্ট আর সমস্ত যাবতীয় কিছু রেডি করে রাখা আছে৷ আরু এই সমস্ত কাজগুলো যে তার নিজের প্ল্যানমাফিক করেছে সেটাও বুঝতে হয়তো আর অসুবিধা হলো না আরিশের ৷ বিছানার পাশে থাকা টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো কফি রয়েছে , তা থেকে ধোঁয়া উড়ছে অর্থাৎ কফিটা যে কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে তা আন্দাজ করতে পেরেছে বেশ ৷
কফির কাপটা তুলতেই তার নিচে থেকে একটা চিরকুট পেল আরিশ আর তাতে লেখা আছে ,,,,,,
“__আপনার সমস্ত কিছু রেডি করে দিয়েছি, কফিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷”
লেখাটা যে অনেকটা চটজলদিতেই লিখেছে আরুশি সেটা ওর আঁকাবাঁকা হাতের লেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷
আরিশ মুচকি হাসি দিয়ে কফিতে চুমুক দিল তবে আজকে কফি র টেস্ট টা একটু অন্যরকম, অন্যদিনের থেকে সামান্য কিছুটা আলাদা ৷ অন্যদিন কফি বানিয়ে দেয় ওর মা , তবে আজকেরটায় একটু একটা ভিন্ন ধরনের স্বাদ আছে তাতে বুঝতে পারল যে আরু কফিটা বানিয়েছে ৷ মুচকি একটা হাসি দিয়ে কফিটা শেষ করে শার্ট আর প্যান্ট এর দিকে তাকালো আরিশ ৷ আরুশি বেছে বেছে আরিশ এর জন্য একটা অ্যাস কালারের শার্ট আর ব্লু কালারের প্যান্ট রেখেছে৷ ব্লেজার রাখেনি কারণ আরূ সবসময় বলে যে ওকে নাকি শুধু শার্ট এই বেশি ভালো লাগে তাই হয়তো ব্লেজার রাখেনি ৷ কোন পারফিউম টা দেবে সেটাও রেখে দিয়ে গেছে আরূশি ৷
জামা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে আরিশ বলতে লাগলো ,,,,,,
“___তোমার পছন্দের সমস্ত জিনিস আমি পরবো তবে আজকে নয় , আজকে তোমার কথাটা যেন রাখতে পারছিনা আমি কারণ তোমার শাস্তির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি, যতদিন না সব ঠিকঠাক হচ্ছে ততদিন তোমার বিরুদ্ধে যেতেই হবে আমাকে , জানি তুমি কষ্ট পাবে তবে পরে আমি ভালোবাসা দিয়ে তা সুদে আসলে উসুল করে দেব সব ৷
ওয়াশ রুমে ঢুকেই শাওয়ারটা অন করতেই সমস্ত শরীরটা ভিজে গেল আরিশ এর , ভেজা চুলগুলো চোখের ওপর এসে আছড়ে পড়ায় সামনের দেওয়ালে আটকে রাখা চিরকুটটাতে কি লেখা আছে সেটা বুঝতে পারছে না ও ৷ আছড়ে পড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে মাথার পিছন দিকে ঠেলে চিরকুট টাতে কি লেখা আছে বোঝার চেষ্টা করলো আরিশ ৷
“___আচ্ছা কফি খাবার সময় অন্য একটা স্বাদ পেয়েছিলেন আজকে ? জানি পেয়েছিলেন ! আর এটাও জানেন যে আজকে কফিটা আমি বানিয়েছি, আর কফির প্রথম চুমুকটাও আমিই দিয়েছি , তারপর আপনি দিনশেষে ভালোবাসার পরশটাও আমিই দেবো ৷ আমি চাই আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করে আপনার দিনের শুরু এবং সমাপ্তি দুটোই ঘটুক৷ তাই যতদিন বেঁচে আছি ভালোবেসে যাবো ৷ অজস্র ভালবাসা প্রিয় ৷___”
আরুশির লেখা শব্দ গুলো পড়ে কিছুক্ষণের জন্য আরিশের হৃদস্পন্দন গুলো যেন বেড়ে গিয়েছিল, কারণ কথাগুলো এতই আবেগী যে আরিশের হৃদয়কে স্পর্শ করে গেছে ৷ মনে মনে মহান আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছে আরিশ , যে এত কিছু উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য ৷ আজ যদি আরু এই পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতো তাহলে হয়তো নিজের ভালবাসার প্রকাশ ঠিকঠাক করতে পারত না আর আরিশের ও হয়ত পাওয়া হতোনা আরুশির এমন আবেগ মাখা ভালোবাসা ৷
রুমের ভিতরে ঢুকতেই চোখ পড়ল আরুশির পছন্দ করে রাখা শার্ট এর উপরে ৷মনটা বারবার টানছে শার্ট টা পরার কিন্তু এখন তা সম্ভব নয় , তাই অনেক উপেক্ষা করার চেষ্টা করে অবশেষে সফল হয়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রঙের শার্ট বার করে আনল আরিশ ৷ আর একটা কালো রঙের ব্লেজার ও পরেছে ৷
আজকে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে আরুশি , অনিকা খানের আজকের দিনের মত আপাতত ছুটি ৷ সারা বছর তো উনিই কাজ করেন, আরুশিকে কিছু করতে দেন না তাই অনেকটা জোর করেই ওনাকে বসিয়ে রেখেছে আরু ৷
সুজির হালুয়া, পরোটা , ডিম ভাজা , জুস , আলু ভাজা আর পায়েস বানিয়েছে আরুশি ৷ মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে থাকতে ওর মায়ের থেকে এগুলো শিখে নিয়েছিল তাই বানাতে খুব একটা অসুবিধা এবং কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি….
আরুশিকে দেখে খুব খুশি খুশি লাগছে তা দূর থেকে অনিকা খান এবং সানা দুজনেই দেখতে পাচ্ছেন আর আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ৷
অনিকা খান সানার কানে কানে বললেন : মেয়েটাকে বেশ খুশী দেখাচ্ছে আজকে ৷ আল্লাহ যেন সারাজীবন ওকে এভাবেই খুশি রাখে , কখনো যেন ওর মুখ থেকে হাসিনা কেড়ে না নেয় , তবে কি এই খুশির কারণ সেটাইতো বুঝতে পারছিনা ৷ আরিশের সাথে সব ঝামেলার কি সমাপ্তি হয়েছে? তোকে কি কিছু বলেছে এ ব্যাপারে ?
সানা উদাস চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল: আমাকে কিছু বলেনি , তবে ওকে খুশি দেখে রাইসা আপু যে লুচির মতো ফুলে যাবে সেটা ভালভাবেই বুঝতে পারছি ৷ (বলে দুজনেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগল ৷)
ওরা দুজন এভাবে হাসাহাসি করছিল তখনই অনিকা খানের বোন রেনু খান এলেন ৷
রেনু খান বলতে বলতে আসছিলেন : আজকে সকালে ব্রেকফাস্ট কি পাবো নাকি পাবো না ! সেই কখন থেকে ওয়েট করছি ৷ আজকে মনে হয় এই মেয়ে খেতে দেবে না, সবাইকে না খাইয়েই ছাড়বে ৷
কিচেন থেকেই কথাগুলো আরুশী শুনতে পাচ্ছিল কিন্তু আপাতত এই কথাগুলো কানে নেওয়ার মুডে নেই খুব ভালো মুডে আছে এখন ,তাই উনার কথা শুনে সকাল সকাল নিজের মুডটাকে আর খারাপ করতে চায় না আরু , আর তার উপর যদি এখন উনার মেয়ে এসে টেপ রেকর্ডারের মতো চালু হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই ৷
আনিকা খান রেনু খানকে নিজের পাশে বসিয়ে : আরে আপু আরেকটু বসো না , আরু মামনির প্রায় হয়ে গেছে , আর তাছাড়া আরিশ আসুক তারপর…
আরুশির ইতিমধ্যে সব রান্না কমপ্লিট, এক এক করে সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে গেল , হঠাৎই তখনই আরিশ এল , আরিশ দেখতে পেলে যে আরূ কিচেনে রয়েছে , কফিটা খাওয়ার সময়ই আন্দাজ করতে পেরেছিল যে সকালে ব্রেকফাস্টটা আরুই বানাবে ৷
আরিশ আসতেই ঝটপট করে আরোশী রান্নাঘর থেকে পায়েশ নিয়ে এল….
সবাই খেতে বসেছে তবে অনিকা খান বসেনি দেখে ওনাকে জোর করে বসাল আরূ ৷
এতক্ষণেও আরূ আরিশের দিকে লক্ষ্য করেনি , হঠাৎ আরিশকে খাবার দিতে গিয়ে বুঝতে পারল আরিসের সাজগোজের পার্থক্যটা ৷ ও যা যা পছন্দ করে দিয়েছিল আরিশ তার কোন কিছুই পরেনি , এমনকি ঘড়িটাও নয়, পারফিউমটা অব্দি আলাদা ৷
কালকের পর আরিশ এর থেকে অমন ব্যবহারের পাওয়ার পর আরূশি ভেবেছিল আরিশ হয়তো ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আরিশ যে এখনও ওর উপরে রাগ করে আছে এগুলোই হল তার প্রমান ৷
আরুশি সবকিছুই লক্ষ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিল ৷ মনের ভিতর কষ্ট যে হচ্ছে না তা নয় , কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তা এখন সকলের সামনে প্রকাশ করতে চাইছেনা ৷
আরিশ : সবাইকে দেখছি রাইসাকে দেখছি নাতো, রাইসা কোথায়?
সানা: রাইসা আপুতো এখনো ঘুম থেকেই উঠিনি ৷(মুখ চেপে হাসে ৷)
আরিশ : ওহহ ৷ (আরিশ অবাক যে হয়নি তা নয় বরং বেশ ভালোই অবাক হয়েছে ৷ )
আরিশের চোখ মুখের অবস্থা দেখে ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার জন্য রেনু খান বললেন ,,,,,
রেনু খান : আসলে কালকে তোর বউ যা করলো তারপর থেকে ওর শরীরটা খুবই খারাপ খারাপ লাগছে ৷ আর মেয়েটা প্রচন্ড কান্নাকাটি করেছে, না জানি তোর বউ আবার কখন কোন ক্ষতি করে দেয়৷ শরীরটা ভালো নেই বলেই হয়তো উঠতে পারেনি তাড়াতাড়ি ৷ও তো সবসময় 6.30 টাই ওঠে ৷( মিথ্যা কথা😒)
আফজাল সাহেব : আমি যতদূর শুনলাম রাইসা কেবলমাত্র একবার চুমুক দিয়েছে কিন্তু আরুশি যে পুরো কফিটা খেল কিন্তু এখন আরূ মামনিকে বেশ ঠিক দেখাচ্ছে তাহলে !
আরু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে , আরিসের থেকে সকাল সকাল এরকম একটা ব্যবহার পেয়ে কোন ভাবেই খুশি নয় ও , ভালো মুডটা যেন খারাপ হয়ে গেল তাই এখন কে ওকে কে কি অপমান করল আর কে ওকে সান্তনা দিলো তার কোন কিছুতেই যায় আসে না ওর ৷
কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর দিকে তাকাল ,,,,
আরিশ : মেয়েটার মুখটা কেমন চুপসে গেছে, কিছুক্ষণ আগে বড্ড বেশি প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছিলো ৷ ওর ব্যতিক্রমী কিছু কাজ যে ওকে এতটা দুঃখ দেবে তা আগে জানলে কখনোই এ ধরনের কাজ করার সাহস পেত না আরিশ ৷ আরুশিকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর , ভাবছে সামান্য জামাকাপড়ের ব্যাপার ছিল পরে নিলেই পারত ৷
কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ৷
অফিসে এসে বসে আছে আরিশ ,এতদিনের একগাদা কাজ পড়ে আছে, কোন কাজে মন বসছে না ৷ সকালবেলা আরুশির ওই রকম মনখারাপ দেখে আরিশের মনটা যেন কেমন আনচান আনচান করছে৷
ল্যাপটপের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আরিশ, আর তাতে নিজের ঘরে সিসিটিভি ফুটেজটাই ফুঁটে উঠছে স্ক্রিনে , আরুশিকেই দেখছে laptop এ ৷
অনেকখন ধরেই উদাস হয়ে বসে আছে মনমরা হয়ে ৷
আরিশের ইচ্ছা করছে এখনি ছুটে যেতে আরুর কাছে, মেয়েটাকে আজানাই বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলে ও ৷
❤
আরু চুপচাপ হাত পা গুটিয়ে বসে আছে তখনই সানা রুমের মাঝে প্রবেশ করল ৷
সানা:আমম্মু ডাকছে তোকে ৷ আর সকাল থেকে দেখছি তোর মন খারাপ ৷ কি হয়েছে তোর ?
আরুশি মুখে সামান্য হাসির রেখা টেনে : হমমম যাচ্ছি , কিন্তু কেন?
সানা: আগে এটা বল যে তোর মন খরাপ কেন?
আরু: আরে কিছু না , তুই বল ৷
সানা : আরে ভাইয়ার খাবার দিতে তোকে অফিসে তোকে যেতে বলেছিল ৷
আরু:আমি যাব না , রহিম চাচাকে বল দিয়ে আসতে ৷
সানা: না তুই ই যাবি, নাহলে আম্মু খুব রাগ করবে ৷
আরু: আচ্ছা আমি যাচ্ছি ৷ আরু এতক্ষন এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল ,সানার কাছ থেকে কথাটা শুনতেই খুশি আর ধরলো না ,তাই ঝটপট রাজি হয়ে গেল ৷
আরু রান্না করেছে সব আরিশের. জন্য,আর তারপর রুমে এসে মনমরা হয়ে বসেছিল এতক্ষন ৷
যাওয়ার কথা শুনেই একপ্রকার উৎফুল্লতা কাজ করলো আরুর মাঝে ৷
তাড়াতাড়ি করে একটা black colour এর শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল আরু ৷
এতক্ষণে আরিশের মনটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু হঠাৎ আরু আসবে জেনে মনটা ওর খুশিতে ভরে গেল আর এত কষ্টের মধ্যেও একপ্রকার শান্তি পেল আরুর মুখে হাসি দেখে , যা দেখে ও সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে ৷
আরিশ অপেক্ষা করছে আরুর আসার জন্য৷
চলবে,,,,,,,
কালকে নতুন গল্প দিতেও পারি তাই পড়তে চাইলে একটু খেয়াল রাখবেন,,,,,আর এই গল্পটা নিয়ে আমার অনেক ভাবনা আছে তাই এত তাড়াতাড়ি এটা শেষ হচ্ছে না ৷
নতুন গল্পের জন্য রেডি?😉