#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:21
#Suraiya_Aayat
দীর্ঘ 14 দিন পর আজকে আরিশ এর এক্সাম এর শেষ দিন ৷
এই এক্সামের কদিন আরূর সঙ্গে আরিসের দূরত্বটা বেড়েছে বরং কমেনি ৷ এতোসব কিছুর মধ্যে আরুর খেয়াল রাখতে পারেনি আরিশ , কেবলমাত্র দিন গুনছে এক্সাম শেষ হওয়ার জন্য ৷ এক্সামের দিন যত এগিয়ে এসেছে আরুর আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ভয়টাও ক্রমশ বেড়েছে ৷ চারিদিক থেকে ওর বাবার প্রেসার , অভ্রর প্রেসার সমস্ত কিছুতে পাগলপ্রায় অবস্থা আরুর….
আরিশের মা কিচেনে আরিশ এর জন্য ওর সমস্ত পছন্দের খাবার রান্না করছেন, আরূ ও ওনার সঙ্গে হেল্প করতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বারণ করে দিয়েছেন তাই না পেরে আরু ঘরে চলে এসেছে….
বিছানার উপরে আনমনা হয়ে বসে আছে আরু, ঘরের মধ্যে টিভি চলছে তার আওয়াজটা ও যেন ওর কানে এসে পৌঁছাচ্ছে না….
হঠাৎ ফোনে ফোন আসতেই চমকে উঠলো, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা ধরতেই দেখল আরমান সাহেব ফোন করেছেন ৷
আরমান সাহেব : আর কতদিন সময় নিবি তুই? দেখতে দেখতে তো প্রায় 13 থেকে 14 দিন হয়ে গেল আর এদিকে অভ্রের বাড়ি থেকেও সবাই তোড়জোড় শুরু করেছে ৷ অভ্র অলরেডি কালকের টিকিট বুক করে ফেলেছে ৷ তুই কালকে ওই ছেলেকে সব বলে দিবি, আর সকালের মধ্যে যেন তোকে এই বাড়িতে দেখি ৷ সন্ধ্যে সাতটার সময় ফ্লাইট ৷
ফোনের ওপাশে আরু নিসতব্ধ ৷
আরমান সাহেব : নতুন করে যেন কোন ভুল ত্রুটি না হয় বলে আরূকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ফোনটা কেটে দিলেন….
আরুর চোখের জলটাও যেন শুকিয়ে গেছে , এই কদিন ধরে আরু নিস্তব্ধ হয়ে চোখের জল ফেলেছে ৷
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আলমারি থেকে ডাইরি বের করে লিখতে বসে গেল আরূ…
প্রিয়,,,,,
আপনি কি জানেন যে আপনি মানুষটা বড়ই অদ্ভুত আমার কাছে ! আপনাকে বোঝার সাধ্য টা যেমন কারো নেই ঠিক তেমনি আমারও হয়ে ওঠেনি এখনো , জানিনা সেই সুযোগ আর কখনো পাবো কি তবুও না চাইতেও বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে৷
কখনো নিজের ভালোবাসাটাকে মুখে প্রকাশ না করলেও হৃদয় থেকে ভালোবাসা টা আপনার জন্যই ব্যক্ত হয় তা আপনি হয়তো জানেন ৷
যেদিন আমাকে আপনি হাত ধরে টানতে টানতে অচেনা সেই রুমটার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছিলেন মুখে তখন একরাশ হিংস্রতা ফুটে উঠলেও তা আমার চোখে দৃশ্যমান হয়নি ৷ অদ্ভুত এক ভালোবাসা দেখেছিলাম আপনার চোখে আমার জন্য, তখন হয়তো এতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখি নি ব্যাপারটা কে ৷ আমারও তখন বিয়ের কিছুদিন আগে কার সময়, অভ্র কে ছাড়া কাউকে নিয়ে অতোটা ভেবে দেখিনি৷
ভার্সিটিতে আপনাকে দেখেও যে কখনো বিশেষ কোন অনুভূতি হয়েছে তাও নয় কিন্তু ভালবাসার সংজ্ঞা গুলো প্রতিটা মুহূর্তে আপনি আমাকে বোঝাতে শিখিয়েছেন…..
আপনার নেশায় বড্ড আসক্ত হয়ে পড়েছি ৷ আজ আপনার কথা গুলো বড্ড বেশী মনে করতে ইচ্ছা করছে ৷ আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার অনুভূতিতে আপনি থাকবেন , আমার আসক্তিতে পরিণত হবেন আপনি, আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান নেবেন সমস্ত টা জুড়ে , কেবল স্থান থাকবে শুধু আপনার ৷ সত্যিই আজ তাই , তবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ এ আমি ব্যর্থ ছিলাম….
আপনাকে যেদিন একান্তে কাছে টেনে নিয়ে ছিলাম সেদিন আবেগের বশে কিনা জানিনা তবে আপনার অশ্রুমাখা চোখগুলো দেখে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করেছিলাম, আটকে রাখতে পারি নিজেকে৷ আপন করে নিয়েছিলাম আপনাকে কষ্টের মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি এনে দেওয়ার জন্য ৷
আর কখনো একান্তে ভালোবাসা হবে কি জানি না, হয়তোবা হবে না তবে এটুকু জানবেন আমার সবটুকু জুড়ে শুধু আপনারই স্থান ৷ দূরে থাকলেও ভালোবাসা কমবে না কখনো ৷ শুধু বঞ্চিত হব আপনার সমস্ত স্পর্শ, আপনার আবেগ , অনুভূতি আর ভালোবাসা থেকে ,তবে সহ্য করে নেব সব ৷
আপনার এক্সামের এই কদিনে নিজেকে অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছি ৷ জীবনের থেকে আর কিছুই বেশি আশা নেই ৷
জানেন সবথেকে অবাক হয়ে গেছিলাম যখন আমার বাবা তিনি আমাকে এতটা জোর করেছিলেন আপনার থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৷ কোন নিজের বাবা যে সন্তানের সঙ্গে এমনটা করতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না কখনো ৷ তবুও ভালোই হলো এতো কিছুর মাঝেও সমস্ত কিছু জানতে আর বুঝতে শিখেছে ৷
যখন আপনি এগুলো জানবেন তখন হয়তো আমি হয়ে যাব অন্য কারোর ,তাই আর ফিরে পাওয়ার বৄথা চেষ্টা না করায় শ্রেয় ৷
আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি….
ভালবেসে যাব প্রিয় ||
ইতি,
আপনার আরূপাখি
ডাইরি থেকে পেজটা ছিঁড়ে আলমারির মধ্যে রেখে দিল ৷ কাগজটা কালকে চলে যাওয়ার সময় রেখে যাবে….
দুপুর বেলাতে আরিশ বাড়ি আসলো না ৷ আরু ফোন করেছিল একবার তবে জানালো যে ওর দেরি হবে আসতে ৷
রাত সাড়ে আটটা,,,,,
ড্রয়িং রুমে মধ্যে বসে আছে আরু, হঠাৎই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো ৷ আরিশ বাড়ি এসেছে ৷ আর কিছুক্ষণ মাত্র সময় আরিসের সঙ্গে কাটাব তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ওর থেকে ৷
আরিশ ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই ওর মা জিজ্ঞাসা করে উঠলো,,,,
আরিশের মা : কিরে এত দেরি হল?
আরিশ ওর মা কে জড়িয়ে ধরে বলল:
এইতো আমি চলে এসেছি, আসলে আজকে সবাই মিলে বিকালবেলা একটা ছোটখাটো পার্টি করেছিল তাই সেখানে গিয়েছিলাম…..
আরিশের মা : মেয়েটা সেই দুপুর থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে কখন বাড়ি আসবি তাই এখনো খাইনি মেয়েটা ৷
আরিশের মায়ের কথা শুনে আরুর দিকে তাকাতেই দেখল আরূ মাথা নিচু করে বসে আছে , চোখ মুখ অনেক শুকনো শুকনো লাগছে….
আরূর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল আরিশ ৷ এই কদিনে মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে , একেবারে যেন ঝিমিয়ে পড়েছে….
আরিশের মা: তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোদের দুজনের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি…
হঠাৎ করে আরূ উঠে গিয়ে রুমের ভেতরে চলে গেল,
আরিশ ওর পিছন পিছন গেল,,,,,,
রুমের ভিতর আরুশি যেতেই আরিশ পিছনদিকে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল ৷
আরিস: সরি আরূপাখি আমার অনেকটা লেট হয়ে গেল ৷ আসলে আমি তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা আসতে দিলনা….
আরুশি: সারা দিন অনেক ধকল গেছে,ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার আনছি বলে আরিশ কে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরিস কোন কিছু একটা ভেবে হেসে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল….
❤
রাত যতো গভীর হচ্ছে ততো আরিস আর আরু ভালোবাসায় মেতে উঠেছে ৷ ঘড়ির কাঁটা যতবারই টিকটিক করে বেজে উঠছে আর সময়টাকে জানান দিচ্ছে ততই আরুশির মনে আরিশকে হারানোর ভয়টাও তত বেড়েই চলেছে , তবে আরিসের থেকে ভালোবাসা পেয়ে যেন সমস্তটাই ভুলে যাচ্ছে আরু….
রাত সাড়ে তিনটে,,,,,,
আরিসের থেকে কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো আরোশী ৷ বিছানার চাদরটা ভালোভাবে শরীরের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ চাঁদের আলোটা এসে সরাসরি ওর মুখে পড়েছে ৷ চাঁদের আলোতে ওর সারা শরীর আলোকিত হয়ে যাচ্ছে….
চোখ থেকে এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল আরুশির ৷ পরিবর্তন হচ্ছে জীবনের নিয়মিত সূচি, হয়তো এরপরে জীবন টাই পাল্টে যাবে , সব ধারণা গুলো কোনোক্রমে পরিবর্তন হবে…..
হাত দিয়ে আলতো করে সাদা পর্দাটা সরাতেই জোছনা রাতে চাঁদের আলোটা সরাসরি আরিশের মুখের উপর গিয়ে পড়ছে , অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷আরিশ কে দেখতে অতুলনীয় লাগছে ৷ এই ভাবে যেন আরিশের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর অতিক্রম করে দিতে পারে আরু…..
চোখ থেকে যখন ক্রমাগতই জল গড়িয়ে পড়ছে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না, ফ্লোরে বসে অনবরত কেদেই চলেছে আরূ….
❤
সকাল আটটা,,,,
লাল রঙের একটা শাড়ি পরে অগোছালো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরূ ঘরের মাঝখানে , অপেক্ষা করছে আরিশের জেগে ওঠার , বিগত এক ঘন্টা ধরে একই জায়গায় এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আরু ৷ আরিশকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না….
আরিশের ঘুম ভাঙতেই আরুর জায়গাটা হাত দিয়ে হাতেরে দেখতেই জায়গাটা ফাঁকা অনুভব করতেই উঠে পরল আরিশ ৷
আরিশকে উঠতে দেখে আরুশির সমস্ত শরীর টা কেঁপে উঠল….
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রুমের মাঝখানে আরুশিকে দেখলো আরিশ ৷
আরিশ মিষ্টি হাসি দিয়ে : গুডমর্নিং বউ , আর তুমি ওখানে কি করছো?
আরুশি কোন কথা বলছে না ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে৷
আরিশ এবার বিছানা ছেড়ে উঠে আরুর এর কাছে গেল , গিয়ে আরূকে জড়িয়ে ধরল…..
হঠাৎ আরূ বলে উঠলো: আমি আপনাকে ভালোবাসি না , আমার সমস্ত ভালোবাসা মিথ্যা ছিল ৷ আপনাকে ভালোবেসে প্রতিটা স্পর্শানুভূতি , সমস্তটা মিথ্যে ৷ আপনাকে আমি কখনও ভালোই বাসিনি , আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন সেই কারণেই আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এত কিছু করেছি ৷
আরিসের হাতের বাঁধনটা ধীরে ধীরে আলগা হতে লাগলো , আরুশিকে ছেড়ে দিয়ে বললো : সকাল সকাল মজা করছো আরূপাখি?
আরোশী : আমি কোন মজা করছি না , আমি যা বলছি সত্যি কথা বলছি (দৃঢ়কণ্ঠে ৷)
আরিশ কিন্তু কিন্তু করে: আমি জানি তুমি আমার সাথে মজা করছো৷
আরুশি : আপনাকে আমি ভালোবাসি না আর আমি এগুলো মজা করছি না ৷ আপনার সাথে যা যা করেছি আমি তাই বলছি ৷ আর তাছাড়া আমি ভালোবাসে আপনাকে যতবারই গ্রহণ করেছি ততবার অভ্র আমাকে বাধ্য করেছে তাই করেছি ৷ ওহঅভ্র আর আমি দুজনেই মনে করেছি আপনাকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন সেই কারণে ৷
আরিশ ঠাস করে আরুশিকে একটা চড় মারলো৷
আরিশ : মজা করার একটা সীমা থাকে, তুমি এবার সব সীমা পার করছ আরুপাখি ৷
আরু উচ্চস্বরে হেসে উঠল আর বলল: মজা তো আমি এতদিন করেছি আপনার জীবনের সাথে আপনি যা যা করেছেন সমস্তটা আপনাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা….
আরিশ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল,,,,,,
আরিশ : তুমি একটা প্রতারক ,প্রতারণা করেছো আমার সাথে ৷ ভালোবেসে তোমাকে নিজের কাছে এনে রেখেছিলাম কিন্তু আমার ভালোবাসাকে এভাবে যে তুমি অপমান করবে তা ভাবিনি ৷ ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে ভালবাসতে শুরে করেছ , কিন্তু তোমার ভালোবাসা নামক প্রতারণার পিছনেও যে এত বড় একটা উদ্দেশ্য আছে তা যদি জানতাম তাহলে এত, ভালোবাসা তোমাকে দিতাম না যার তুমি যোগ্যই ছিলে না কখনো ৷ কথা দিয়েছিলাম তোমাকে নিজের সাথে ভালোবেসে রাখার কিন্তু তুমি কি করলে!
আরোশী : যা করেছি বেশ করেছি আর এখন শুনে রাখুন আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না ৷ বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো,,,,,
আরু বেরিয়ে যেতেই ওকে বলল,,,,,
আরিশ ছলছল চোখে বললো : এটা মনে রেখো আরূপাখি , কাউকে ঠকিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না আমার এত বড় ক্ষতি করে তুমি নিজেও কখনো ভালো থাকবে না ৷
আরুশির পিছন ফিরে তাকানোর সাহস হল না , চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল গুলোকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷
আরু চলে যেতে আরিশ হাতের পাশে থাকো ফুলদানীটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারল ৷ চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে আরিশের ৷ নিজের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে ও ৷
রুম থেকে কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আরুর সার শরীর কেঁপে উঠল তবুও আরিশ এর মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর, নেই তাই সবকিছু উপেক্ষা করে চলে গেল ৷
চলবে,,,,,,
আজকে গল্প দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না ৷ বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই একটু লিখে ফেললাম ৷😵 ৷
কেমন হয়েছে জানাবেন 😴 ৷ Good night .