তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ২২

0
292

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:22
#Suraiya_Aayat

অন্ধকার ঘরের মধ্যে থাকা রকিং চেয়ার টেনে বসে দুলছে আরিশ , হাতে রয়েছে আরূর লেখা সেই চিঠি….

চিঠির প্রত্যেকটা লাইন ও পড়ছে আর বারবারই মুখে ফুটে উঠছে চিরচেনা সেই মিষ্টি হাসি…..

আরুর লেখা শেষের লেখা লাইনটা,,,,

______”আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি৷ “____

কথাটা পড়তেই সামনে বিছানার উপরে শুয়ে থাকা আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিল ৷

এখনো তো অনেক কিছুই বাকি আরুপাখি ৷ যতদিন না আগে নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখবে ততদিন আমার থেকে দূরে দূরেই থাকবে তুমি, তারপরে তোমাকে কাছে টেনে নেব তার আগে নয় ৷

চিঠিটা রেখে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল আরিশ ৷

বাইরে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে আর বেলকুনিতে থাকা
ছোট সাদা সাদা মরিচ বাতি গুলো জ্বলজ্বল করছে, আর ঝুলিয়ে রাখা স্টিলের স্টিকগুলো হাওয়ায় দোলা দিয়ে বারবার এক অপরূপ শব্দ সৃষ্টি করছে…..

সেখান থেকে দাঁড়িয়ে রুমের ভিতরে ঘুমন্ত আরুশির দিকে তাকাল আরিশ ৷

ঘুমের ওষুধের ডোজটা আর কিছুক্ষণ পরই কেটে যাবে সুতরাং কিছুক্ষণের মধ্যে আরোশী জেগে যাবে….

কিছুক্ষণ পর হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে আরুশি জেগে গেল , চোখ খুলে চারিপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ও৷ এখন কোথায় আছে তা জানার জন্য বেশ কিছুক্ষণ চারিপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল , করার পর সবকিছু যেন আশ্চর্যজনক লাগছে ওর কাছে কারণ কিছুক্ষণ আগের ঘটনা থেকে ওর যা মনে হয়েছিল তাতে এত কিছু আশা করার কথা নয়….
নিজের আর আরিশের ভালোবাসার সেই ছোট্ট ঘরটাকে খুঁজে পেয়ে আরু জোরে জোরে কাঁদতে লাগল ৷ এই ঘরে পুনরায় পা রাখতে পারবে সেটা ও ভাবেনি, সবই যেন কল্পনার মত লাগছে ৷ চোখ থেকে অনর্গল জল গড়িয়ে পড়ছে আর তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো বারবার আরিশকেই খুজছে ৷ বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সমস্ত দৃশ্য , ভয়ে বিছানাটা থেকে পা ও যেন নামতে চাইছে না , বারবার মনে হচ্ছে এখনই যেন সর্বনাশী মানুষগুলো তার সর্বনাশ করে ফেলবে…..

এই মুহূর্তে আরিশ কে দেখে চোখ দুটো জুড়াতে চায় আরুশি তাই বিছানার থেকে চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগলো , অবশেষে রুমের মধ্যে কাউকে দেখতে না পেয়ে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে বিছানা থেকে নামল৷
একপা দুপা করে সামনে এগোচ্ছে আর বড্ড জানান দিচ্ছে প্রিয় মানুষের উপস্থিতি, আরিশ যে এই ঘরেই আছে সেটা অনুভব করতে পারছে আরূ ৷
পিছন ফিরে তাকিয়ে আরিশ কে দেখেই দৌড়ে ছুটে গেল আরিশের কাছে, তারপর আরিশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মতো কাঁদতে লাগল আরু…..

আরু কাদতে কাদতে : আপনি আমাকে প্লিজ নিজের থেকে কখনো ছাড়াবেন না , না হলে ওরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ৷ সব সময় আপনার বুকের মাঝে আপনার সাথে আগলে রাখবেন আমাকে , আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি প্লিজ আমাকে দূরে সরাবেন না….

আরু: কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না, কখনো অন্যের কথা বিশ্বাস করব না , আপনি যা বলবেন তাই শুনে চলব , আপনার কথার অবাধ্য হবো না ,আপনি যা বলবেন তাই শুনবো কিন্তু প্লিজ আমাকে নিজের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না….

আরুশি আরিশ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে কিন্তু আরিশ কোন রেসপন্স করছে না….

আরিশ একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিজের শরীরটাকে আরুশির হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত করল৷ আরুশির হাতদুটোকে ছাড়িয়ে আরুশির মুখোমুখি হলো আরিস ৷

আরিশ আরূর দিকে ফিরে বলতে শুরু করল : আরুশি রহমান আর ইউ ম্যাড?আপনি কি মেন্টালি সিক…. এভাবে হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন? আর আপনি সকালেই বলছেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, আর এখন বলছেন ভালোবাসি , এটা কি খুবই হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?

আরূ যেন আরিশ এর প্রত্যেকটা কথায় মুহূর্তে মুহূর্তে অবাক হচ্ছে ৷ এই প্রথমবার আরিশ আরূর নাম ধরে ডাকলো , এর আগে কখনো আরুশি বলে ডাকতে শোনেনি , তার ওপর আরিশের অদ্ভুত ব্যবহার ওকে আরো চমকে দিচ্ছে ৷

আরুশি আরিশের দু গালে হাত রেখে: আপনি কীসব বলছেন ? আর আপনি আমার নাম ধরে ডাকছেন কেন ? আমি তো আপনার আরুপাখি!

আরিশ: লাইক সিরিয়াসলি ! সকালবেলায় তো বললেন যে আমাকে ভালোবাসেন না , আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মিথ্যা , আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি , তাহলে এখন হঠাৎ কি হল? তোমার বাবা আর তোমার প্রাণপ্রিয় অভ্র কি তোমাকে স্থান দেয়নি একটুকুও…..

আরিশ ওদের নাম বলতেই আরূ জোরে চেচিয়ে উঠলো,,,,

আরোশী : আপনি ওদের নাম বলবেন না , আমি ওই দুটো মানুষকে বড্ড বেশি ঘৃণা করি , আর উনি আমার বাবা নই উনি একজন অমানুষ , বলে মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগল জোরে জোরে…

(বিঃদ্র: আরুশির বাবার সত্্যতা আরুর অজানা,অর্থাত ও যে ওনার মেয়ে নয় ৷)

আরুশির চোখের প্রতি ফোঁটা জল যেন আরিশের বুকে ছুরির মতো এসে বিধছে তাও এই মুহূর্তে নরম হলে চলবে না , সত্যিটার মুখোমুখি আরুশিকে হতেই হবে , বাস্তবটাকে মানতে হবে, চিনতে হবে সবাইকে ৷ তাই এখন এই মুহুর্তে আরিশকে কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে ৷

আরিস: বুঝেছি , ওখানে আপনার জায়গা হয়নি বলে আপনি এখানে এসেছেন তাই তো ! আচ্ছা আপনাকে আমি থাকতে দিতে পারি তবে এখানে থাকতে হলে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই থাকবেন বলে আরুশিকে উপেক্ষা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিল ৷ বুকে পাথর চাপা দিয়ে কথাগুলো বলেছে ও , কঠোর নাহলে কখনোই এসমস্ত কথাগুলো ও আরুশিকে বলতে পারত না….

আরু মেঝেতে বসে ক্রমাগত কান্না করেই চলেছে , জীবন ওকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে এখন যেন ঠিক ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছে, মানুষগুলোর আসল রূপ জানতে পেরেছে , কে ওর আপনজন আর কে পর এ সমস্ত কিছুই আজ বড্ড চেনা চেনা বলে মনে হচ্ছে কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ওর আগের আরিশকে হারিয়ে ফেলেছে….

শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে আরূ, নিজের জীবনের করা ভুল গুলো কিভাবে শুধরে নেওয়া যায় তারই হিসাব হিসাব নিকাশ কষেছে, আরিশকে আবার কিভাবে ফিরে পাবে এই সমস্ত কিছু ভাবছে ৷ অনেকক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো ও ….

বেরিয়ে আসতে দেখল আরিশ ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কোন কাজ করছে….

আরোশী ঠিক করে নিল যে করেই হোক আরিস কে ও মনিয়েই ছাড়বে ৷ হাতে থাকা টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল আরিশকে দেখিয়ে ৷ আরিশ একপলক ফিরে তাকালো কোন গুরুত্ব না দিয়ে আবার ল্যাপটপের দিকে মন দিল….

মাথাটা না মুছে ভিজেমাথায় আরিশের পাশে বসে পড়ল আরুশি যতে টাওয়াল টা নিয়ে আরিশ ওর মাথাটা মুছিয়ে দেয় , কিন্তু ওর সব plan .এ জল ঢেলে দিয়ে আরিশ ল্যাপটপটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ,বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল : এসব আমাকে দেখিয়ে কিছু হবে না তোমার অভ্রকে দেখাও ৷

আরিশ এর বল কথাটায় যেন বড্ড কষ্ট পেয়েছে আরু৷ আরিশ চলে যেতেই আবার কান্না শুরু করে দিল, কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল ওকে কাঁদলে চলবে না আরিশকে ওকে ফিরে পেতেই হবে কিন্তু তার আগে ওর বাবার আর আভ্রের একটা ব্যবস্থা করা দরকার….

সবাই খেতে বসেছে আরিশের মা সবাইকে খেতে দিচ্ছেন , আরুশি কে ও বসতে বলেছে কিন্তু আরু বসেনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরিশের মায়ের পাশে…..

অনিকা খান : কিরে মামনি বস , সবাই খেতে বসেছে তুইও বসে যা ৷

আরিশ ওর মায়ের কথা শুনে একবার আরূর দিকে তাকালো…..

আরুশি : না মামনি আমি পরে তোমার সাথে খেতে বসছি ৷

অনিকা খান অনেকবার বলার পরেও আরু বসলো না ,তাই উনি না পেরে বাধ্য হয়ে ওদের তিনজনকে খেতে দিলেন ৷

আরোশী লক্ষ্য করলো সানা ও বেশ চুপচাপ ওর সাথে, কথা বলছে না ৷ তাহলে কি সকলেই জানে বাড়িতে ওর কথা, তাই কি সবা ওর উপরে রাগ করেছে!

অনিকা খান : আরিশ কালকে রাইসা আর তোর খালাম্মার আসবেন ৷

আরিশ খেতে খেতে : আচ্ছা,তা আমাকে কখন এয়ারপোর্ট আনতে যেতে হবে?

আফজাল সাহেব : সকাল সাড়ে নটায় ওদের বাংলাদেশের টেক অফ করবে তুই একটু দেখ কখন তোর বেরোনো উচিত সেই অনুযায়ী বেরিয়ে যাস ৷

আরিশ : ওকে ৷ এই বলে আরও আর কিছুক্ষণ পরে খেয়ে আরিশ উঠে চলে গেল ,আরুশিকে একবারও খাওয়ার কথা বলল না….

আরুশির খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলার নেই যেহেতু ভুলটা ওর নিজের ই….

আরূশি চুপচাপ আনমনা হয় সুইমিংপুলের পাশে বসে আছে, বড্ড একা একা লাগছে আজকে ওর নিজেকে৷
হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবল আরিশ এসেছে তাই আনন্দের সঙ্গে ঘুরে তাকাতেই দেখলো অনিকা খান , উনি তারপর আরুশির পাশে বসলেন….

অনিকা খান আরূর পাশে বসে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন: কি দরকার ছিল এতকিছু করার ? আমার ছেলেটাকে তো বলতে পারতিস না কি ! বিশ্বাস করিস না ওকে? জানিস তো ও তোকে কতটা ভালোবাসে ! তোর কথাতে ও কতটা কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছিস? ওমন না বললে আমার ছেলেটা কখনো তোর সাথে এমন ব্যবহার করার মতো মানুষই নয় ৷ বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস আমার ছেলেটাকে ৷

সকালে,,,,

আরু বেরিয়ে পরপরই আরিশ নীচে নামল,,,,,,,

অনিকা খান: আরু মামনি কোথায়ম বেরিয়ে গেল কাউকে কিছু না বলে ?আর তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস?

আরিশ এরপর সবঘটনা ওর মাকে খুলে বলল,,,,,,

অনিকা খান: ছিঃ একটা বাবা হয়ে এতটা নীচু মানসিকতার মানুষ কেউ কী করে হতে পারে !

আরিশ: আমার বোকা বউটা যদি এসব বুঝতো ৷.

অনিকা খান: আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য, ওর কোনো বিপদ হবে নাতো!

আরিশ: যতক্ষণ আমিও সঙ্গে আছি ওর কোন বিপদ হতে দেব না , আর ও যেখানেই যাক না কেন ফিরে ওকে আমার কাছে আসতেই হবে ৷ চিন্তা করো না শুধু তুমি আমাকে একটু সাপোর্ট করো ৷ ওকে এটুকু শিক্ষা দেওয়া বড্ড দরকার৷

অনিকা খান: মেয়েটা বড্ড অবুঝ , আবার কষ্ট পাবে খামোখা ৷ মেয়েটাকে আর কষ্ট দিস না তুই ৷

আরিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে : তোমার বৌমা কি জাদু করেছে তোমার ওপর!🙄

অনিকা খান আরিশের কান ধরে : আর বেশি পাকামো করতে হবে না , তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয় ৷ যতক্ষণ না বাড়ি তোরা বাড়ি ফিরছিস ততখন কিন্তু আমার মনটা অস্থির অস্থির করবে বলে দিলাম ৷

আরিশ ওর মায়ের কপালে চুমু দিয়ে : আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি এখন ৷

অনিকা খান: সাবধানে ফিরিস ৷

অনিকা খান সবটাই জানেন , তাই আপাতত আরিশ ওনাকে যা যা করতে বলেছেন উনিও তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন ৷

আরুশি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না, না পেরে অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ৷

আরোশী : বিশ্বাস করো মামনি আমি যদি জানতাম আমার বাবা নামক ওই লোকটা আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবে তাহলে আমি কখনোই ওনার কথা বিশ্বাস করতাম না ৷ আর আমি উনাকে বলতে ভয় পেয়েছিলাম বলে আবারো কাঁদতে লাগলো ৷

অনিকা খান : বিশ্বাস যখন তুই ভেঙেছিস তাই জোড়া লাগানোর দায়িত্বটাও তোর, এখন আমার ছেলেকে যদি আবার ফিরে পেতে চাস তাহলে ওকে মানানোর চেষ্টা কর….

{এতসব কি করে হলো পরে বলব}

চলবে,,,,,

এতসব চক্রান্তের মধ্যে কোনকিছু না জানা আমার (লেখিকার নিষ্পাপ মন 😇🤗😊🙄৷
বাট আজকে কেমন হলো জানাবেন ৷আর এতকিছু কি করে হলো আরু যেদিন জানবে আপনারাও সেদিন জানতে পারবেন,,,,, আলাদা করে বলা যাবে না টপ সিকরেট😁 ৷ যা যা comment করেন তারা এতই ভোলামনের অধিকারী যে like দিতেই ভুলে যায়😒,বলছি এই যে মনে করে লাইক দেবেন ৷)আর গল্প একটা ছন্দ অনুযায়ী চলে তাই অনেক সময় বেশী লিখলে ছন্দ খারাপ হয়ে যায় তাই যতটা দরকার আমি ঠিক ততটাই লিখি ,তাই বড়ো করে লেখেন এটা কেউ বলবেন না ৷Good night)❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here