#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:23
#Suraiya_Aayat
পুল থেকে অনিকা খান যেতেই রুমে আরুশি কিছুক্ষণ সেখানেই বসে থাকল , অনেক কিছুর হিসাব-নিকাশ করছে ও , সব কিছু বোঝার চেষ্টা করছে , সকল মানুষদের আসল রূপটা ওর সামনে প্রকাশ পেয়েছে৷
আরিশকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আর তা দূর করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ ওর , তাই যা করার ওকেই করতে হবে….
তাড়াতাড়ি করে রুমের সামনে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখলো রুমের লাইট অফ….
ঘরের ভিতরে জ্বলতে থাকা ছোট্ট ডিমলাইটের আলোতে আলোকিত হয়ে যাচ্ছে সব ৷ আরিশ ঘুমিয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছে , ধীরে ধীরে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ল আরু….
ও ভেবেছিল যে আরিশ হয়তো ওকে কাছে টেনে নেবে কিন্তু তা হয়নি ৷ ও আরিশের পাশে ঘুমালেও আরিশ একবারও ওর দিকে ফিরেও তাকাল না….
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো আরূ কিন্তু তাও কিছু হচ্ছে না দেখে নিজেই আরিশের দিকে সরে গেল…
সরে আসতে আসতে একেবারে আরিসের গা ঘেঁষে শুয়ে পড়েছে ও ৷
আরিশ এতক্ষন ঘুমিয়ে থাকার ভান করছিল, আসলে আরুশির জন্যই এতখন অপেক্ষা করছিল ও , আর তখন ওর মায়ের সঙ্গে যে আরুশি কথা বলেছিল তার সব কিছুই জানে আরিশ ৷
আরিশ এবার ইচ্ছে করে আরুর উল্টো দিকে ফিরে গেল…..
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছে কারন আরিশ উল্টোদিকে ফিরে গেছে ৷ না পেরে আরু কিছুটা আরিশের দিকে সরে যেতেই
আরিশ খাট থেকে পড়ে গেল ৷
আরিশ ঘুম থেকে জেগে উঠার ভান করে: আমাকে শান্তিতে ঘুমাতেও দেবেন না নাকি !
আরুশি ঠিক বুঝতে পারল না যে সামান্য একটু সরে যাওয়ায় আরিশ কি করে পড়ে গেল ? পড়ার তো কথা নয় ৷ আসলে আরিশ ইচ্ছা করেই পড়ে গেছে নিজে নিজেই ৷
আরুশি থতমত খেয়ে বলল : বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে ফেলিনি ৷
আরিশ : তাহলে তোমার কি মনে আমি নিজে ইচ্ছা করে পড়ে গেছি নাকি?
আরিশ: বুঝেছি তোমার ধান্দা ভালো নয় , আমি আর তোমার পাশে শোবো না ৷
আরু অবাক হয়ে : কেন আপনি আমার পাশে শোবেন না কেন?
আরিশ: দ্বিতীয়বার খাট থেকে পড়ে যাওয়ার রিস্ক আমি নিতে চাই না , আর তোমার উপর আমার ভরসা নেই তাই তুমি সোফাতে ঘুমাবে ৷
আরুর সোফাতে ঘুমানোর ইচ্ছা ছিলনা , আরিশ অনেকটা জোর করেই পাঠিয়েছ ওকে না হলে আরিশ ওকে বলেছিল ঘর যে থেকে বেরিয়ে গিয়ে গেষ্টরুমে গিয়ে ঘুমাতে , কিন্তু সেটা তো আরু কখনোই হতে দেবে না , তাই বাধ্য হয়ে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ল আরু ৷
আরুসি সোফাতে বারবার এপাশ ওপাশ করছে কোন ভাবে ঘুম আসছেনা , আর এদিকে আরিশ মুচকি মুচকি হাসছে আরুর কান্ড দেখে…
সকালে,,,,,
আরিশ জোরে চেচিয়ে বলতে লাগল : এই যে আপনি আমার পাশে শুয়ে আছেন কেন ? আপনাকে না আমি সোফায় শুতে বলেছিলাম ? আপনি আবার এখানে চলে এসেছেন আমার কাছে ! কেন?
আরুশি আরিসের চেঁচামেচিতে উঠে গেল , তারপরে উঠে নিজেকে আরিশের বিছানায় আবিষ্কার করল আর আরিশ সেই নিয়ে রামায়ণ মহাভারত রচনা করছে আরু দেখতে পেল…
আরোশী : সত্যি তো আমি এখানে এলাম কি করে, আমিতো সোফাতে ঘুমাচ্ছিলাম !
আরিশ : আপনার কোন ভরসা নেই , আপনি শুধু আমার সাথে সাথে ঘোরার জন্য ছঠফঠ করেন ,আর এখন নিজেই দোষ আমাকে দিচ্ছেন ৷
আরোশী অবাক হয়ে বিছানা থেকে নামল তারপর বললো : দেখুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আর আমার রাত্রে জেগে হাঁটার অভ্যাস নেই যে আমি হেঁটে হেঁটে আপনার পাশে ঘুমাতে চলে আসব , আমি সত্যিই জানি না আমি এখানে কি করে এলাম ৷
আরিশ: আপনার মতিগতি ভাল নয় , আমার প্রথমেই আপনাকে দেখে সন্দেহ হয়েছিল যে আপনি আবার আপনার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আবার আমার কাছে কেন ফিরে এসেছেন তা নিয়ে !
আরুশির এবার অভ্রের কথা শুধতেই মাথা গরম হয়ে গেল , একে সকাল সকাল আরিশ এসব শুরু করে দিয়েছে আর তার ওপর অভ্রের নাম জপ ৷ আর এদিকে আরিশ ক্রমাগত আরুশিকে দোষ দিয়েই যাচ্ছে তাই আরুশি আর না পেরে তাড়াতাড়ি আরিশের কাছে গিয়ে আরিশের পিছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের ঠোঁটের সাথে আরিশের ঠোঁট দুটো মিলিয়ে দিল ৷
আরিশ অবাক হয়নি কারন এরকম একটা চমক আরুশির কাছ থেকে আগেও একবার পেয়েছিল তাই আরোশী যে এরকম কিছু করতে পারে সেটা ও জানে….
তবে সময়টাকে বেশ ভালোই উপভোগ করছে আরিশ৷ আরুশির সাথে নিজেও রেস্পন্স করছে ৷দিনের শুরুতে এমন একটা ভালোবাসার পরশ আর দিন শেষে এরকম একটা ভালোবাসার পরশ পেয়ে ও সময়টাকে শেষ করতে চাই….
হঠাৎ আরুশির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল তাই যখন আরিশকে ছেড়ে দেবে তার আগে আরিসের ঠোটে জোরে একটা কামড় দিল , এতদিন কেবল আরিশ দিয়েছে আর আজকে ওর আরিশের প্রতি এক প্রকার রিভেঞ্জ নেওয়া হয়ে গেল….
আরুশি ঠোটে কামড়ে দিতেই আরিশ ব্যাথা পেলেও তা প্রকাশ করল না বরং উল্টো আরুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটদুটোকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল৷ আরুশির একটা কামড় দেওয়ার পর আরিশ যে এরকম একটা ব্যবহার করবে সেটা ও ভাবেনি…
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ আর মুখে একরাশ চিন্তার ছাপ তার কারণ আজকে সকালে ও জানতে পারল যে বাড়িতে নাকি নতুন গেস্ট আসবে না আর সেটা হল আরিসের খালাম্মা আর তার মেয়ে ৷ তার মেয়েটা হল তার ননদ , আর ননদরা যে অত্যন্ত একটা ডেঞ্জারেস জাতীয় বস্তু সেটা আরূ খুব ভাল করেই জানে , ও নিজের ফুপ্পি কে দেখেই বুঝেছে ৷
আরুশির ফুপি যখনই ওদের বাড়িতে আসেন তখন সারাদিন আরুশির মাকে খাটান, আর দোষ-গুণের বিচার করতে থাকেন, আরশির মা মুখ ফুটে কখনো তার প্রতিবাদ করেন না সব কিছু অন্যায় ভাবে সহ্য করে নেয় ৷ তাহলে এখন কি এই সমস্ত ঘটনার সাথে আরূশিকেও মুখোমুখি হতে হবে, এমন হাজারো প্রশ্ন ওর মাথায় ঘুরছে ৷
আরিশের মা রান্নাঘর থেকে আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন , একটা অদ্ভুত চিন্তা হচ্ছে আরূর সেটা উনি বেশ ভালই বুঝতে পারছেন, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সাপোর্ট করতে পারছেন না উনি তাহলে মেয়েটাকে শিক্ষা দেওয়া যাবে না ৷ উনিও সবকিছু চান যে সবকিছু থেকে আরু শিক্ষা নিক তাহলে ভবিষ্যতে যেন কখনো এ ধরনের ভুল কাজগুলো না করে, আর নিজের ছেলেমেয়েকেও সেই শিক্ষা দিতে পারে যাতে তারা সঠিক দিকে চালিত হয়….
সানা সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে তা দেখে আরুশির আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরাভকে নিয়ে কিছু একটা ভাবছো…
সানাকে এখন প্রায় দিনই খুব খুশি খুশি দেখায় ৷ সেই দিনের পর থেকে সানা আরূর সঙ্গে ভালো করে কথা বলছে না সেটা আরু বেশ ভালই লক্ষ্য করেছে ৷ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে সানা ওর সঙ্গে কথা বলছে না তাই ৷সেই কলেজ লাইফ থেকে সানাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে , আজ একটা ছোট্ট ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিচ্ছে ওকে ৷
সানা একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিল ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ তাই আরুশিকে দেখিয়ে সোফাতে গিয়ে বসলো সানা…
আরুশিও এবারে ধির পায়ে হেটে হেটে সানার কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল ৷
আরোশী বসতেই সোনা কিছুটা সরে গেল ৷
তারপর আবার আরুশি সানার দিকে খানিকটা সরে গেল তাতে সোনা আর একটু দূরে সরে যেতে আরুশির খুব রাগ হয়ে গেল ৷
সানার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওর কাছে বসলো আরু ৷
আরু: আমার থেকে এভাবে দূরে দূরে বসছিস কেন ? আমি কি মানুষ না নাকি হ্যাঁ ? আমি একটা ভুল করেছি বলে তোরা সবাই এরকম ব্যবহার করবি আমার সাথে ? আরুর চোখে জল চলে এসেছে প্রায়, ও খুব ইমোশনাল আবেগটাকে প্রাধান্য দিয়ে চলে…
সানা আর যাই হোক আরুর কষ্টটাকে সহ্য করতে পারে না তাই সামান্য কিছুটা নরম হয়ে আরুশিকে বললো : এভাবে কান্নার কি আছে , আমি কি তোকে কিছু বলেছি?
আরোশী এবার কান্না কান্না করে দিয়ে: আমি কালকে থেকে দেখছি তুই আমার সঙ্গে কথা বলছিস না ৷ মানছি আমি একটা ভুল করেছি তার জন্য কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না!
সানা কিছু একটা ভেবে বলল : আচ্ছা যা তোকে ক্ষমা করে দিলাম এবার তোমার হাত ছাড় ৷
আরোশী সানাকে জড়িয়ে ধরে বলল : আমি তোকে ছাড়বোনা , আমি জানি তুই আমাকে এখনো ক্ষমা করিস নি ৷
সানা মনে মনে : এই মেয়েটা দেখছি আমাকে মেরেই ছাড়বে , ও কি জানে না যে আমি ওর উপরে রাগ করে থাকতে পারি না ৷
সানা: আমি বলছিতো আমি রেগে নেই, এবার তো ছাড় ৷ অবশেষে অনেক বলার পর আরু ছেড়ে দিল৷
কিছুক্ষণ পর আর নিজের কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে আরু সানাকে জিজ্ঞাসা করল :
আরোশী কিন্তু কিন্তু করে: যারা আসছে মানে উনার খালাম্মা আর বোন , ওরা কি ভালো নাকি টিভি সিরিয়ালে যেমনটা হয় তেমনি?
আরুশির কথা শুনে সানার খুব হাসি পাচ্ছে , তারপর সামান্য একটু থেমে বলল : ওনারা কেমন আসলেই তুই বুঝতে পারবি কিন্তু একটা কথা শুনে রাখ ভাইয়াকে একটু রাইসা আপুর থেকে দূরে দূরে রাখিস৷ রাইসা আপু ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে আর ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে , আর এখন ভাইয়ের সঙ্গে তোর ঝামেলা চলছে তাই কিছু বলা যায় না ভাইয়া ওকেও বিয়ে করে নিতে পারে ৷ আরুশিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল ৷
আরোশী শুনেই যেন চমকে উঠল , কারন ও ভেবেছিল অন্যরকম বিপদ কিন্তু এখন দেখছে তো সম্পূর্ণ আলাদা কেস ৷ এখন ও সব কি করে ঠিক করবে তা নিয়ে একপ্রকার চিন্তায় পড়ে গেছে ৷ আর যদি সত্যি রাইসাকে বিয়ে করে নে আরু কে ডিভোর্স দিয়ে দেয় আরিশ তখন ! তা কিছুতেই হতে দেবে না ও, আরিশকে কোন ভাবেই ছাড়বে না ও …..
❤
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আরিশ এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সাড়ে নটায় ওদের আসার কথা ছিল এখন দশটা বাজে , ফ্লাইট যে আধ ঘণ্টা লেট করেছে তার খবরটা আগেই পেয়েছিল আরিস ৷
বিরক্তি লাগছে প্রচন্ড তবে সকালবেলা আরুশির সাথে অত সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটিয়ে এখন বেশ ভালই লাগছে, হাজারো বিরক্তি র মাঝেও বারবার আরুশির কথাই মনে পড়তেই আরিশের , অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে ৷ মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে ৷
হঠাৎ করে দূর থেকে কেউ দৌড়ে এসে যেন আরিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ল এমনই একটা কিছু অনুভূত হলো আরিস এর….
বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রাইসার কাজ…
আরিশের গলা জরিয়ে ধরল রাইসা ৷
রাইসা : কতদিন পরে তোকে দেখলাম , জানিস আমি এখানে আসার জন্য কত এক্সাইটেড , কত প্ল্যান আছে ৷সবথেকে খুশি হয়েছি তোকে পেয়ে ৷
আরিশের খালাম্মা দূর থেকে হাসতে হাসতে বললেন : কেমন আছিস আরিশ?
আরিশ নিজেকে রাইসার থেকে ছাড়িয়ে বলল : এইতো ভালো আছি , তুমি কেমন আছো?
উনি আরিশের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, এখন সবকিছু ঠিকঠাক ব্যবস্থা করে সবাই সুখী হলে আমিও খুশি ৷
আরিশ বুঝতে পারল যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন তাই একটু গলা ঝেড়ে কেশে বলল: দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের, এমনিতেই তোমাদের ফ্লাইট অনেক লেট করেছে ,আম্মু অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য চিন্তা করবে তাড়াতাড়ি চলো ৷
বলে গাড়িতে উঠে পড়ল ৷
চলবে,,,,,,
Recent যে গল্পটা চলছে ওটা লিখে আমি আর গল্প লিখবো না,ছেড়ে দেবো গল্প লেখা ,কারন আমার আর লিখতে ভালো লাগছে না ৷ আগে গল্প পড়তাম,অদ্ভুত এক ভালোলাগা ছিল তার মাঝে আর এখন লিখতে গিয়ে সেই ধারাটা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি যা অতি দুঃখজনক ৷ গল্প লেখার ইচ্ছা ছিল প্রবল আশাকরি শখটা পূরন হয়েছে ৷ শখ টাকে শখের জায়গায় রাখতে চাই এটা নিয়ে বেশী ভাবনা নেই ৷ আপাতত লাইফের সাকসেস এ ফোকাসটা রাখতে চাই ৷
আর অযথা কেউ friend request পাঠাবেন না কারন আমি accept করি না ৷
আল্লাহ হাফেজ❤
Suraiya aayat❤