#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ০৯
.
জানালা ভেদ করে আলো আমার মুখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে যায় আমার। আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সকাল সাতটা। আমার পাশেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মেহেরুন। সেদিকে একপলক তাকিয়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আমি। ক্ষণিকের জন্য চমকেও গেলাম। কেননা কাল রাতে কান্না করার ফলে চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে আমার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়নায় আরও একবার দেখে নিলাম নিজেকে। অতঃপর চলে গেলাম ওয়াশরুমে!
ফ্রেশ হয়েই ভাবলাম একবার বাগানে হেঁটে আসা দরকার। মনটা যদি ভালো হয় এতে! তাই চাদর ভালো ভাবে গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। ড্রইংরুমে আম্মু, মেজো ও ছোট চাচী এবং ফুফি ছিলেন। আমি তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই মেজো চাচী বলে উঠলেন,
—” মীরু তোর চোখ-মুখ এত ফুলে আছে কেন? কেউ কিছু বলেছে? রাতে কেঁদেছিস?”
আমি অনেকটা ধীরে বললাম,
—” না, না কেউ কিছু বলে নি। আসলে একটু ঠান্ডা লেগেছিল তো!”
আম্মু বললেন,
—” এত সকালে কোথায় যাচ্ছিস? ”
—” একটু বাগানে হাঁটতে যাচ্ছিলাম আম্মু। ”
—” যাওয়া লাগবেনা। তোর না ঠান্ডা লেগেছে? রুমে গিয়ে লেপের নিচের শুয়ে থাক।”
কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। বাগানে হাঁটতে তো আমি যাবোই। করুণ কণ্ঠে আম্মুকে বললাম,
—” আমি এখন ঠিক আছি আম্মু। তাছাড়া এতক্ষণ তো শুয়েই ছিলাম।”
আমার কথায় সায় দিয়ে ফুফি বললেন,
—” যাক না! বাগানে হাঁটলে ওর একটু ভালো লাগবে। তুই আবার বাঁধা দিচ্ছিস কেন?”
এ কথায় দমে গেলেন আম্মু। আমি যেতেই নিচ্ছিলাম তখন মেজো চাচী বলে উঠলেন,
—” মীরু? আমার একটা কাজ ছিল। রেয়ানও বাগানের দিকেই আছে। আমাকে বলেছিলো ওকে একটু কফি দিতে। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। তুই একটু কফি বানিয়ে ওকে দিয়ে আসতে পারবি মা?”
কি বলব বুঝতে পারছি না। উনার সামনে যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু মেজো চাচীকে মানাও করতে পারছি না।। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে আমার। পরপরই আম্মুর চোখ রাঙ্গানো দেখে রাজী হয়ে গেলাম। প্রথমে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে বেশ ইতস্ততভাবে বাগানের দিকে এগোতে লাগলাম। যতই এগোচ্ছি ততই এক ধরণের ভয়, আশঙ্কা জেঁকে বসছে আমার মাঝে। বারবারই তার বলা কালকের কথাগুলো মনে পড়ছে। কিভাবে ওসব কথা বলেছিলেন আমায়। লজ্জায় তার সামনে দাঁড়াবো কিভাবে আমি? আমি তো ভেবেছিলাম তার সামনেই যাবো না। কিন্তু ভাগ্য!
বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে সামনে এগোতেই একটু দূরে রেয়ান ভাইকে দেখতে পেলাম। পুকুরের দিকে তাকিয়ে হাঁটু অব্দী প্যান্টের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। উল্টো দিকে ফিরে আছেন! অর্থাৎ আমাকে দেখার কোনো চান্স নেই। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে এগোলাম তার দিকে। উনার বরাবর পেছনে থাকা বেঞ্চে নিঃশব্দে কফির মগটা রেখে চলে যেতে নেবো তখনই উনার ভারী কণ্ঠ,
—” কফি কি জ্বীন-ভূতকে দিয়েছ? ”
আমি চমকে গিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি তখনও উল্টো দিকে ফিরে। দৃষ্টিও পুকুরের বারবার কেঁপে ওঠা পানির পানে। তাহলে উনি বুঝলেন কিভাবে আমি এসেছি? অবাক হলেও উনার বলার প্রায় সাথে সাথেই বললাম,
—” মানে? ”
উনি গম্ভীর কণ্ঠেই বললেন,
—” কফি কি আমার জন্য এনেছো? ”
—” হ্যাঁ! ”
—” তাহলে আমার হাতে না দিয়ে ওখানে রেখেছো কেন?”
এবার বুঝলাম আসল ঘটনা। কিন্তু আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে হচ্ছে না তার হাতে কফির মগ তুলে দেওয়ার। পারলে উনার গায়ে ঢেলে দিই। কিন্তু আমি নিরুপায়! পরে যদি এটার জন্য আবার আমাকে অপমান করেন? সেই ভয়ে ভদ্র মেয়ের মতো কফির মগটা হাতে নিয়ে উনার থেকে অনেকটা দুরত্ব রেখে উনার পাশে দাঁড়ালাম। কোনো কথা ছাড়া উনার দিকে কফির মগ এগিয়ে দিতেই উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে তাকিয়েই রইলেন কিছুক্ষণ। তার এমন তাকানোতে অস্বস্থি হচ্ছে আমার। আমি একটু কেশে উঠতেই উনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন। হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে সেখানে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। একটু পরেই শান্ত কণ্ঠে বললেন,
—” কফি কে বানিয়েছে? ”
সাথে সাথেই বললাম,
—” আমি! কেন? ”
—” একদম বিস্বাদ! ”
শান্ত ভঙ্গিতে তার বলা কথাটিতে আমি মোটেও শান্ত থাকতে পারলাম না। দু’হাত উঠিয়ে উনার গলা চেপে ধরতে গিয়েও আবার হাত নামিয়ে ফেললাম। রাগে ফুঁসছি আর উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি। অপেক্ষায় করছি, এই বুঝি উনি চোখ খুলবেন আর আমি তাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবো। কিন্তু না! উনি চোখ বন্ধ করে দিব্যি কফি খেয়েই যাচ্ছেন। এবার আর সহ্য হলো না আমার। উনার সামনে থাকতেও এখন বিরক্ত লাগছে। উনাকে বকতে বকতে দ্রুত সেখান থেকে বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। বিড়বিড় করে বলে উঠলাম,
—” রাক্ষস কোথাকার। বিস্বাদ বলে সে-ই তো দিব্যি খাচ্ছে। তাহলে বিস্বাদ হলো কিভাবে?”
________________________
আবদ্ধের ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের পাশে দীঘিকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। রাতেও তো তাকে লতার মতো পেঁচিয়ে ঘুমিয়ে ছিল মেয়েটা। এখন কোথায় গেল? তাছাড়া ওয়াশরুমের দরজাও খোলা। উঠে দাঁড়িয়ে রুমের চারপাশে আরো ভালোভাবে তাকালো আবদ্ধ। বারান্দার দিকে চোখ যেতেই শাড়ি পরিহিত কোনো নারীর ছায়া দেখতে পেলো সে। বুঝতে বাকি রইল না দীঘি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আলামারি থেকে প্যান্ট আর তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল আবদ্ধ।
৫-১০ মিনিট পর আবদ্ধ ঘাড়ে তোয়ালি রেখে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। আবদ্ধের পরনে শুধু একটা হাফ-প্যান্ট। দীঘি বিছানায় বসে বসে আবদ্ধরই অপেক্ষা করছিল। আবদ্ধকে উদম শরীরে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইল দীঘি। পলকই ফেলছিল না সে। এতে প্রচুর বিরক্ত হলো আবদ্ধ। অনেকটা ধমক দিয়ে বলে উঠল,
—” নির্লজ্জ মেয়ে। হা করে কি দেখছো? চোখ নিচে নামাও। যাও এখান থেকে।”
দীঘি ভ্রু কুঁচকালো। মুখ বাঁকি বলল,
—” আমি কেন যাবো? এটা আমারও রুম ভুলে গেছেন?”
—” থাকো তুমি। কিন্তু আমার দিকে তাকাবে না।”
—” কেন? আমার বর, আমি তাকাবো না কেন?”
আবদ্ধ দীঘির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
—” প্লিজ দীঘি। আমার অস্বস্থি লাগছে তোমার তাকানোতে।”
দীঘি আবদ্ধের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—” তাহলে তো আরও বেশি করে তাকাবো! ”
—” দীঘি! ”
চেঁচিয়ে উঠল আবদ্ধ। ভয়ে কেঁপে উঠল দীঘি। পরক্ষণেই লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। আবদ্ধের সামনে ভয় পেলে চলবে না। এই নিরামিষকে আমিষ বানাতে হলে একটু তো নির্লজ্জ হতেই হয় তার। এই ভেবে মুখ বাঁকিয়ে বলল দীঘি,
—” আপনার বলার স্টাইল আমার পছন্দ হয় নি। সুন্দর করে আমার নাম ডাকুন।”
আবদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
—” মানে? ”
—” মানে, এরকম চেঁচিয়ে দীঘি না বলে সুন্দর করে, নরম গলায় ডাকুন ‘দীঘু’ এরপর বলুন- ‘দীঘু আমি তোমাকে ভালোবাসি’ উফফ! ভাবতেই তো আমার নাচতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ বলুন না।”
আবদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দীঘির সম্পূর্ণ কথা মন দিয়ে শুনলো। কথা শেষ হতেই চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় যাওয়ার পথে বিড়বিড় করে বলে উঠল,
—” ডিসগাস্টিং! ”
____________________
চলবে…
(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। নতুবা লেখার ইচ্ছে জাগে না!)
Ishanur Tasmia