তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ৩

0
601

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

রুমে দৌড়ে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় সোহা।বাপরে! তোর সাহস আছে বলতে হবে সোহা।তুই কাকে কি বলে এসেছিস? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে।
পরোক্ষনেই নিজের হাত আপনা আপনি ঠোঁটে চলে যায়।ভাবতেই শরীর মন অজানা অনুভূতিতে শিহরিত হয়।দায়ান এতোক্ষন আমার এতো কাছে ছিল। ঠোঁটের উপর হাত রেখে ছিল।ভাবতেই ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি খেলা করে।

অন্যদিকে দায়ান সোহার যাওয়ার পানে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে ছিল।এই মেয়ে কি পা’গল নাকি? কি আজে বা’জে বকে গেল? সব মাথার উপর দিয়ে গেল।এই মেয়ে দেখি কথার গোডাউন।আপন মনে ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে যায়।এখন একটা আরামের লম্বা ঘুম দরকার।

——————————-

ভোরের স্নিগ্ধ রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে যায় দায়ানের ।চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়।ফ্রেশ হয়ে জগিং সুট পরে বেরিয়ে পরে জগিং এর জন্য। বাড়ির সামনে আসতেই বাগানের দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ালো দায়ান।বাগান টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
চাচা,,,,,চাচা,,,,,বলেই জোড়ে দাড়োয়ান চাচা কে ডাকতে লাগে।

রহিম চাচা দায়ানের ডাক শুনে দৌড়ে আসে।
হাঁপাতে হাঁপাতে জানতে চায়,,,,, কি হয়েছে দায়ান বাবা? তোমার কিছু লাগবে?

না চাচা কিছু লাগবেনা।তুমি কি কারো হাতে এই বাগান পরিষ্কার করিয়েছো? ধরা গলায় জানতে চায় দায়ান।দৃষ্টি এখনো বাগানের দিকেই।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে দায়ানের। কিছু মধুর স্মৃতি, আর কিছু বিষাক্ত স্মৃতি বুকে এসে হানা দেয়।ভিতরটা অস্থির হয়ে ওঠে।চোখের কোণে জলে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে। একটু ছোয়া লাগার অপেক্ষায় যেনো আছে।ছোঁয়া লাগলেই টুপ করে পরে যাবে। চোখ পিট পিট করে পানি আটকানোর চেষ্টা করে দায়ান। কতোই না ভালো ছিল সেই মধুর দিনগুলো। তখন দায়ান ভাবতো সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের মধ্যে একজন। আর এখন সবই কল্পনা। একটা ঝড় সব ল’ন্ড ভ’ন্ড করে দিল।একটা সুখী ফেমেলি শেষ হয়ে গেল।ভালোবাসা উ’বে গেলো। এখন দায়ানের কাছে নিজেরে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুঃখী মানুষের একজন মনে হয়। যার আশেপাশে ভালোমানুষির মুখোশ পরে থাকা লোক।নিজের বলতে কেউ নেই। সবাই নিজেদের স্বার্থের জন্য খোঁ’জ নেয়।

হঠাৎ করে ভাবনার ছেদ ঘটে রহিম চাচার কথায়।

বাবা এগুলাতো মা জননী করেছে।কাল সারাদিন এসব নিয়েই ছিল।সবকিছু নিজ হাতে করেছে।

মা জননী কে চাচা?

“তোমার বউ” আমাদের বউমাই করেছে বাবা।ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে।যেমন ব্যবহার তেমন হাতের কাজ সবদিক দিয়েই প’টু।দায়ান বাবা এইবার তুমি একজন সঠিক মানুষ বেছে নিয়েছো।দেখো বউমা তোমার রঙহীন জীবনে রঙ নিয়ে আসবে।

“তোমার বউ” কথাটা শুনেই দায়ানের বুকটা ধক করে উঠলো।পরের কথাগুলো গুরুত্ব দিলোনা।এজীবনে কাউকে আর জড়াতে ইচ্ছে করে না।

দায়ান আর কথা না বাড়িয়ে বাগানের দিকে তাকাতে তাকাতে বেড়িয়ে গেলো।

আমি জানি দায়ান বাবা এই মেয়েই তোমার জীবন টা বদলে দিবে।
রহিম চাচা ও নিজের কাজে চলে যায়।

——–
রোদের কড়া তাপে যেনো শরীর ঝ’লসে যাওয়ার উপক্রম। সাথে প্রচন্ড চি’ৎকার চেচামেচির আওয়াজে ধরফর করে উঠে বসে সোহা।চারিদিকে চোখ বোলিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে পুরাই টা’সকি।হায় আল্লাহ! এগারোটা বা’জে।
গেলোরে গেলো সব গেলো।আজ আমার ক’পালে শনি-রবি সব ওঠে নৃত্য করবে।বলেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড়। দশ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পরলো।

মাথার ওড়না টা’নতে টা’নতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে।এই সময় রান্না ঘরে কে? জমিলা খালা তো বাড়িতে না।মাথায় আসতেই রান্না ঘরের দিকে উঁ’কি দেয়।ওমা উনি রান্না ঘরে? তাও রান্না করছে? এ আমি কি দেখছি?

দায়ান পিছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনে তাকায়।তাকিয়ে দেখে সোহা তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

ঘুম ভাঙলো মেডামের? আমিতো ভাবলাম আজ আর ভাঙবেই না। কিছুটা ঠা’ট্টার সঙ্গে’ই বলে দায়ান।

সোহার মুখটা চু’পসে যায়।মিনমিনিয়ে বলে “সরি”। ঘুম ভা’ঙতে দেরি হয়ে গেলো একটু।আপনি এবার গিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিন।বাকিটা আমি করে দিচ্ছি।

প্রথমত একটু না অনেকখানি ই লেট করেছেন।দ্বিতীয়ত আজ শু’ক্রবার আমার অফ ডে।আর আপনার আর কিছু করতে হবে না।সবকিছু ডান।ডাইনিং এ গিয়ে বসো। আমি খাবার দিচ্ছি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমার সাথে এই রা*ক্ষসের আবার কি কথা? না জানি কি বলে।আমাকে আবার বাড়ি থেকে ভের করে দিবে নাতো? সোহার ভাবনার মাঝেই দায়ান আবার বলে উঠে,,,,,

কি হলো যাও গিয়ে বসো।নিজে চেয়ার টেনে বসে পরে। সোহাকে চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বলে।সোহা আস্তে আস্তে গিয়ে বসে।নানান চিন্তা ভাবনায় মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।

দায়ান ইতিমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
সোহা পরেছে অস্ব’স্থিতে । একেই কিনা কি বলে দায়ান তার টেনশন। আবার প্রথম বার দায়ানের সাথে বসে একি টেবিলে খাওয়া।তাও জড়তা নিয়েই আস্তে আস্তে নিজের প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে।

বাড়িতে কে কে আছে? খেতে খেতেই জানতে চায় দায়ান।
জ্বি,,,,, বাবা-মা, বড় বোন আছে।( কি লোকরে বাবা নিজের বউ সম্পর্কে কিছুই জানেনা এই লোক? না জেনেই বিয়ে করে নিলো আজব।মনেমনে কথা গুলা আওড়ায় সোহা।)

স্টাডির কি খবর?

স্টাডি মানে?

কেন স্টাডি মানে জানোনা? পড়াশোনা! কতোদূর করেছো?

পড়াশোনা যেখানে আছে ভালো আছে।থাকুক না।

আবোলতাবোল ব’কতেছো কেনো? লিসেন,,,এসব ঘুড়িয়ে পেচিয়ে কথা বলার একদম চেষ্টা করবে না আমার সাথে।কিছুটা জোড় গলায়ই বলে দায়ান।

শ*য়তান নিজের ফ’র্মে বেক করে গেছে সোহা সাব’ধান।আস্তে আস্তে আওড়ায় সোহা।
মা,,মানে অনার্স ২য় বর্ষতে পড়তাম।

হুম গুড! বাট পড়তাম মানে কি? এখন আর পড়বানা? পড়ার ইচ্ছে নেই?

না- মানে বিয়ে হয়ে গেছেতো তাই।

তাই? ব্রু নাচিয়ে জানতে চায় দায়ান।

ভেবেছিলাম আর পড়াশোনা করে কি লাভ? এতো পড়ে আমি কি দেশ উ’দ্ধার করবো?বা’চ্চা কা’চ্চা মানুষ করার জন্য,,,,, অ-আ,,,,,ক-খ,,, জানলেই হয়।বলেই দাঁত দিয়ে জি’ভে কা*মড় মারে সোহা।হাত দিয়ে নিজের মুখ চে’পে ধরে।সোহারে তর কথার ট্রেন কই নিয়ে ব্রে’ক করছস।লে এবার সামলা ঠে’লা।

সোহার কথা শুনে দায়ান বি’ষম খায়। বড় বড় চোখ করে তাকায়।

না,,,, ইয়ে,,, মানে,,, সোহা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দায়ান থামিয়ে দেয়।

থামো মেয়ে।পড়াশোনার প্রতি তোমার যে কতো ভালোবাসা আমার বোঝা হয়ে গেছে। তাও কিছুই করার নেই। এখানে থাকতে গেলে পড়াশোনা তোমাকে করতেই হবে।নো অপশন! নিজের পায়ে দাঁ’ড়াতে হবে। এতোখানি পড়াশোনা করে মাঝ রাস্তায় ব’ন্ধ করে দিতে চাও? তোমার কাগজ পত্র গুলো আমাকে দিও।এখানকার একটা ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রা’ন্সফার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

লে হালুয়া,,,, যেখানে বা’ঘের ভ’য় সেখানেই সন্ধে হয়।যেইটার থেকে বাঁ’চার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে বিয়ে করলো সেইটাই আবার ঘা’ড়ে এসে চাপতেছে। ভাবা যায় এগুলা?

কেনরে তর কি মনে হয় আমি তর পায়ে দাড়িয়ে আছি? পড়াশোনা ছাড়াই যদি নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় তাহলে পড়াশোনা করার কি দরকার খা’মোখা? বর বরের মতো থাকনা। তুই কেন পড়াশোনা নিয়ে পড়বি? বড় পড়াশোনার কথা বললে সে কি আর বর থাকে? নাহ একদমই নাহ।ব*র্বর হয়ে যায়। খাবারে আঁকি’বুঁকি করে মনে মনে ভাবে সোহা।

দায়ান স’রু চোখে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে।

বিনিময়ে সোহা মেকি একটা হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে মাথা নাড়ে।

দায়ান খাবার শেষ করে নিজের মতো উঠে চলে যায়।

সোহা এবার গুন গুন করে,,,,,,,

দেখতে বর বর কিন্তু আস্তো ব*র্বর,,,
এসে জুটে গেছে কপালে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here