তুমি হাতটা শুধু ধরো – পর্ব ৫

0
507

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam

গ্রামের খোলামেলা পরিবেশে যাদের থেকে অভ্যাস।তারা বুঝে শহুরে চার দেয়ালে ব’ন্ধি জীবন কাটানো কতোটা ক’ষ্টের।

সোহা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে, সোহার বাবা কল করেছে।
সোহাকে আর পায় কে? খুশিতে লু’ঙ্গি ডা’ন্স দিতে ইচ্ছে করতেছে।
তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে।ঐপাশ থেকে কিছু বলার আগেই,,,,, হ্যালো আব্বু ভালো আছো? আম্মু কেমন আছে?আপু কি আমায় ভুলে গেছে? তোমাদের কতো মিস করেছি আমি।আমার গ্রামটাকে মিস করছি খুব।ঠোঁট উল্টে ধরা গলায় বলে সোহা।

ছোটো আম্মা আ’স্তে । এতো কথা একবারে কেউ জানতে চায়? কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো? ধীরে ধীরে বলো সব উত্তর দিবো।আমিতো পালিয়ে যাইতেছিনা।

পাশে বসে সোহার মা মেয়ের এতো কিছু একবারে জি’জ্ঞেস করা দেখে মিটমিটিয়ে হাসে। মেয়েটা তার অবুঝ ই রয়ে গেলো।

“বাবার কথা শুনে সোহা মাথায় টোকা মারে।”
এবার আপনার সব উত্তর দিতেছি।আমি ভালো আছি।আপনার আম্মা ও ভালো আছে।আমি আর আপনার আম্মা একসাথেই বসে আছি।আর আপনার সব কথাই শুনতে পাচ্ছে। আমরাও আপনাকে অনেক অনেক মিস করতেছি। বলেই দ’ম নেয় পাবন মিয়া।

হু।খাইছো তোমরা?
হ্যা ছোটো আম্মা খেয়েই আপনাকে কল করলাম।

আপনি খাইছেন?

খেয়েছি।মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খুব মিস করি।

এবার সোহার মা বলে।এখন একটু আধটু মিস করবিই।ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর বাড়িতে আসলে তর সব পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবো।ঠিক আছে?
হুম।ছোটো করে উত্তর দেয় সোহা।

পাবন মিয়া এবার একটু সিরিয়াস ভাবে জানতে চায়,,,,,ছোটো আম্মা আপনি ভালো আছেন তো? জামাই বাবা আপনাকে কোনো কষ্ট দেয় না তো? সব ঠিকঠাক?

সোহা এবার একটা শুকনো ঢু’ক গিলে। বাবাকে এখন এসব কিছু বলা যাবেনা।দায়ান যে তাকে মেনে নেয়নি।এমনিতেই বড় আপু কে নিয়ে বাবা সারাক্ষণ টেনশন করেন।আপু যে বাবার উপর বিয়ে নিয়ে অভিমান করে আছে এটা সোহা জানে।কিন্তু নোহাকে যে ঐ বাড়িতে অত্যা’চার করা হয় সে জানে না।জানলে হয়তো নোহার স্বা’মী কে মে’রেই ফেলতো।

না আব্বা। আমি খুব ভালো আছি।উনি খুব ভালো মানুষ। আমার অনেক খেয়াল রাখে।

পাবন মিয়া এবার হাফ ছাড়ে।যাক তার ছোট মেয়ে ভালো আছে।ছোট মেয়েকে নিয়ে এবার নিশ্চি’ন্ত তিনি।

যানো বাবা উনি নাকি আমাকে এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবে।

এটাতো খুব ভালো খবর ছোটো আম্মা।

আর ভালো! পে’রা মিনমিনিয়ে বলে সোহা।

সোহা মা ভালো ভাবে ভালো মেয়ে হয়ে থাকবি।জামাই বাবার য’ত্ন নিবি। জামাইকে কষ্ট দিবি না।মনে রাখবি মা-বাবার পর সে তর একা’ন্ত আপন মানুষ।তর নিজের মানুষ। আর ঠান্ডা লাগাবিনা কোনো ভাবে।তর স্বা’সক’ষ্টের সমস্যার কথা ভুলে যাস না যেনো।ইনহেলারটা হাতের কাছেই রাখিস। বলেেই রমিলা বেগম থামেন।
ছোটো আম্মা এবার রাখি? আবার কল দিবো কেমন?আর একটা কথা,,,,,,,

আমি আপুর সাথে কথা বলে নিবো।টেন’শন নিও না তোমরা।আচ্ছা ঠিক আছে রাখো এবার। ভালো থেকো তোমরা।আর আমায় নিয়ে এতো টেনশনের কিছু নেই।
আল্লাহ হাফেজ।

হুম।আল্লাহ হাফেজ।

এবার সোহা নোহা কে ফোন লাগায়,,,,

———————-
নোহা সকল কাজ সেরে মাত্রই শুকনো কাপড় নিয়ে ঘরে এসেছে।গুছিয়ে আলমারিতে রাখার জন্য। এমন টাইমে ফোনটা বেজে উঠে। এমন টাইমে কে কল করতে পারে?
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে নেয় নোহা।
ফোনের স্ক্রি’নে বনু নামটা দেখেই মুখে হাসি ফোটে উঠে। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে।হ্যালো বলার আগেই ঐপাশ থেকে অভিযোগের বাহার সাজিয়ে বসে সোহা।

আপু,,,,,, তুই আমায় একটুও ভালোবাসিস না? আমার কথা তোর মনেও পরে না? তুই কতো পাষাণ হয়ে গেছিস রে আপু।

বোনের অভিযোগ শুনে গলাটা ধরে আসে নোহার।নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,

বনু আমার তর বোন তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই ভাবতেও পারবিনা কতো ভালোবাসি।কেমন আছিস বোন আমার?

আমি ভালো আছি আপু।তুই কেমন আছিস? তুই আমার একমাত্র বোন হয়েও আমার বিয়েতে আসলিনা।জানিস আমার কতো কষ্ট হয়েছে।তর সাথে আড়ি!

নোহা মনে মনে বলে কেন যে যেতে পারিনি তোকে যদি বলতে পারতামরে বোন।আমি তো যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই পা/ষাণ গুলো দেয়নিরে।আটকে রেখেছিলো।

বোন আমার রাগ করিস না। একদিন সব তোকে বলবো ঠিক আছে? আর কিছু বলার আগেই বাইরে ওমির গলার আওয়াজ শুনতে পায়।
তাই তড়িঘড়ি করে বলে বোন এখন রাখি? একটু কাজ করতেছিতো।পরে আবার কথা বলবো রাগ করিস না।

আচ্ছা ঠিক আছে।ভালো থেকো।

হুম। বলেই নোহা কল কেটে রুমের বাইরে হাটা দেয়।মা ছেলের নাটক শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।

—————————-

সোহার মেজা’জ টা এখন ফুর’ফুরে হয়ে গেছে।তাই চুল গুলো খোঁ’পা করে ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে বাতাস উপভোগ করার জন্য।

ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশটায় চোখ বোলাচ্ছিল সোহা। বাড়ি থেকে একটু দূরেই একটা মাঠ রয়েছে।ঐখানে নানান বয়সের ছেলে মেয়েরা একেকজন একেক রকম খেলা খেলছে।সোহার ও ইচ্ছে করতেছে দৌড়ে গিয়ে ওদের সাথে খেলতে। তা তো স’ম্ভব না। ধূর,,,,,ভাল্লাগে না।

দায়ান সোহাকেই খুঁ’জতেছে। রুশ ফোন করেছিলো।সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে ভর্তির।এখন কাগজপত্র আর টি.সি লাগবে।বাড়িতে যেনো বলে রাখে ফোন করে সব ব্যবস্থা করে রাখার জন্য। যেনো গিয়ে ড্রাইভার নিয়ে আসতে পারে।
আর এইদিকে দেখো এই মেয়ের কোনো খবর নাই। হাওয়া হয়ে গেলো নাকি? এই মেয়েটাতো জা’লিয়ে মারতেছে।

কোথাও খুঁজ না পেয়ে এইবার ছাদের দিকে হাটা দেয় দায়ান।”

হঠাৎ করে বাতাসের বেগ কিছুটা বেড়ে যায়।সোহা চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে।চোখ ব’ন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার আগেই ওড়না উড়ে গিয়ে ছাদের রেলিঙ এর ওপর পাশে কিছুর সাথে একটুখানি আটকে আছে।আরেকটু জোড়ে বাতাস আসলেই উড়ে যাবে।

এই উড়নাটা সোহার খুব পছন্দের। অনেক দামাদামি করে দোকানদারের সাথে তারপর কিনেছে।ভাবতেই তাড়াতাড়ি করে উঠাতে যায় নিচু হয়ে রেলিং এর উপর ভর দিয়ে কিন্তু নাগাল পায়না।আরেকটু এগুলে সোহা নিজেই ছাদের নিচে ধপাস করে পড়ে যাবে সেদিকে খেয়াল নেই।

দায়ান ছাদের দরজার পাশে এসে এদিক ঐদিকে চোখ বুলিয়ে সোহাকে খোঁজার চেষ্টা করে। হঠাৎ এক জায়গায় গিয়ে চোখ আটকে যায়।

এই মেয়ে ঐ কিনারায় কি করে? সুই/সাইড করবে না তো?
ভাবতেই আতকে উঠে দায়ান।তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে সোহাকে হেঁ’চকা টান দিয়ে নিজের পাশে এনে দাড় করায়।

হঠাৎ করে হাতে টান পড়ায় ভয় পেয়ে চোখ ব’ন্ধ করে ফেলে সোহা।

কি করতে চাইতেছিলে,,,,,মরতে চাইতেছিলে? আমাকে ফাঁসানোর জন্য?

বলে কি এই লোক? চোখ বড় বড় করে ভাবে সোহা।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,,,,, আমি মরতে চাইবো কেনো? আমার এখনো নানি-দাদি হওয়া বাকি আছে।

এই মেয়েটা সব সময় সিরিয়াস টাইমেও মজার মোডে থাকে কিভাবে? এর মধ্যে কোনো সিরিয়াসনেসের “স” ও দেখতে পায়না দায়ান।হাফ পা*গল মেয়ে কোথাকার।

দায়ান সোহার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশে পাশে তাকাতেই রাগে কপালের র’গ ফোলে ওঠে।পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একটা ছেলে সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে।

দায়ান এইবার সোহার দিকে পূ’র্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এইবার রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়। শরীরে ওড়না না দেখে।

দাঁতে দাঁত পি*ষে বলে তা কি করতে ছিলেন। ঐ ছেলেটার দিকে আঙুল তা’ক করে বলে,,,, নিজের রূপ দেখিয়ে মানুষের চক্ষু শীতল করতেছিলেন?

সোহা দায়ানের আঙুল বরাবর তাকায়।তাকিয়ে দেখে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এবার নিজের দিকে খেয়াল হয়।তাড়াতাড়ি দুই হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে।

দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে বিশ্বাস করুন।আমি ঐ লোকটা কে এতোক্ষন দেখি নি।মাত্রই দেখলাম।আমার ওড়নাটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,,,ঐখানে আটকে আছে।হঠাৎ করে বাতাস এসে উড়ে গেছে।

গো টু হে*ল ইউ এন্ড ইউর সো কলড ওড়না।রুমে যাও রাইট নাও।

আমার ওড়নাটা আমি উঠিয়েই চলে যাবো বিশ্বাস করুন।একটুও বেশি সময় নিবো না।আমার অনেক সাধের ওড়না এটা।নিতে দেন না প্লিজ। নয়তো আপনার তো অনেক বড় হাত।আপনি একটু উঠিয়ে দিন না।আমার হাত দিয়ে না’গাল পাইতেছিনা। ঠোঁট উল্টে বলে।

একেইতো সোহা দায়ানের সামনে এই রূপে দাড়িয়ে আছে। তার উপর এই মেয়র ঠোঁট উ’ল্টানো দেখে। দায়ানের মাথা কাজ করা ব’ন্ধ করে দিতেছে।নিজেকে কন’ট্রোল করার জন্য চোখ ব’ন্ধ করে। কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে নিজেকে।

তারপর চোখ খোলে আস্তে করে বলে রুমে যাও।

চলে যাবো তো।ওড়না টা নিয়েই চলে যাবো।

ওড়না লাগবে না? এরকম আরো একশোটা এনে দিবো।
খুশি? এইবার রুমে যাও।

ঐগুলাতো আর এইটা হবে না।এইটার মতো হবে।

রুমে যেতে বলছি আমি।গো ফাস্ট।

কি- কিন্তু আমার ওড়,,,,,,,,বাকিটা আর শেষ করতে পারে না। দায়ানের রাগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ দেখে।

ঐ ছেলেটার দিকে রাগি লোক নিয়ে তাকায়। যার মানে বেটা তরে একবার সামনে পাই খালি। মজা বোঝাবো।তর চোখ খুলে আমি মার্বেল খেলবো। তর জন্য আমার জামাইরে আমারে ধমকাইছে।আমার এতো সাধের একশো পঞ্চাশ টাকা দামের কিনে আনা ওড়নাটা। বাতাসে পতাকার মতো উড়তেছে।রাগি লোক নিয়ে তাকাতে তাকাতে নিচে যাওয়ার জন্য হাটা দেয়।

ছেলেটাও সোহার চাহনি দেখে তাড়াতাড়ি কে’টে পরে।

আরেকদিন যদি ছাদে দেখি তো,,,,তোমাকে আর তোমার ঠ্যাং দুটোই ভে’ঙে পার্সেল করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। কেয়ারলেস মেয়ে একটা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here