#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১১
.
রাত থেকেই সবাই মিলে যার যার পেকিং করে ফেলেছি। এখন রাত প্রায় ৩টা বাজতে চলল। আপাতত সবাই মিলে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেখানে একজন ভিন্ন ধর্মী আমি। সবাই ঘুমে ঢলে পড়ছে অথচ আমার চোখে ঘুম নেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে একমনে চেয়ে আছি আকাশের দিকে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে। ভালো লাগছে! ভালো লাগার ফাঁকে ফাঁকে কালকের দিনটার জন্য আজগুবি সব চিন্তাও ভেবে নিচ্ছি আমি। কিভাবে কি করব! কিভাবে সবার আনন্দ দেখে নিজের আনন্দটা প্রকাশ করব! আমার এই আজগুবি ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কারো গানের গলা ভেসে উঠল কানে। মধুর পুরুষালী কণ্ঠ! কণ্ঠটার উৎস জানার এক অদম্য ইচ্ছে জেগে উঠল মস্তিষ্কে। কিন্তু রুম থেকে বের হতেও ইচ্ছে করছে না আমার। অগত্যা চোখ বন্ধ করেই গান গাওয়া শুনতে লাগলাম। সাথে নিজেও মৃদু স্বরে তার সঙ্গে গাইলাম,
-” আমার ভেতরো বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো তুমি
হৃদয় জুড়ে…. “-
একসময় গান গাওয়া ব্যক্তিটির কণ্ঠ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। গান শোনা যাচ্ছে না আর! এতে মনটা খারাপ হয়ে গেল নিমিষেই। বারবার মনে হচ্ছে, কেন শেষ হয়ে গেল গানটা? আর একটু গাইলে কি হতো?
_________________
সকাল সাতটা প্রায়! সবাই যে যার মতো রেডি হয়ে বাড়ির উঠানে চলে গেছে। সেখানে একটা গাড়ি আর বাইক রাখা। মূলত বাইকটা ইয়াসিন ভাইয়ার। হয়তো বাইকে করেই যাবেন উনি। এদিকে আমি এখনো রুম থেকেই বের হতে পারি নি। রাতে দেড়ি করে ঘুমানোয় সকালে ঠিক সময়ে উঠতে পারি নি, এখন আবার ফোন খুঁজে পাচ্ছি না। বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে যাচ্ছে আমার। সবাই তাড়া করছে জলদি আসার জন্য আর এদিকে ঐ ফাজিল ফোনটাই পাচ্ছি না আমি। প্রায় অনেক খোঁজার পর অবশেষে ওয়াশরুমের আয়নার তাকে পেলাম ফোনটা। একদম সামনেই রাখা ছিল। অথচ পুরো রুমে এই এক ফোন খুঁজতে খুঁজতে নাজেহাল অবস্থা আমার! দ্রুত ফোন নিয়ে এক প্রকার দৌড়াতে দৌড়াতেই উঠানে উপস্থিত হলাম আমি। সেখানে গিয়ে হলো আরেক ঝামেলা। সবাই আগে আগেই গাড়িতে উঠে গেছে। সবুজ ভাইয়া ইয়াসিন ভাইয়া আর মেহেরুনের সাথেই বসেছেন গাড়িতে। যার ফলে আমার জন্য কোনো জায়গা খালি নেই। রাগে-দুঃখে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মেজো চাচী বেশ আদুরে গলায় বললেন,
—” মীরু মা? মন খারাপ করিস না। আব্রাহাম বাইকে করে আমাদের পেছন পেছন আসবে। তুই এক কাজ কর বাইকে করেই আব্রাহামের সাথে আয়। দেখ, গাড়ি থেকে কিন্তু বাইকই ভালো। প্লিজ মা না করিস না।”
মেজো চাচীর হাতের ইশারায় পেছন ফিরে তাকালাম আমি। সাদা রঙের গেঞ্জি আর কালো জিন্স পরিহিত রেয়ান বসে আছেন বাইকে। শীতের কারণে একটা কালো রঙের জ্যাকেটও পড়েছেন। সবসময়ের মতোই হাতে ফোন তার। তবে আজকে সানগ্লাস পড়েছেন উনি। হাতে কালো ঘড়ি। মুখে কেমন বিরক্তি এঁটে নিয়েছেন। যেন এসব কিছুই তার জন্য একটা এক্সট্রা বিরক্তি! আশেপাশে কি বলছে সবাই তা উনার কানে পৌঁছাচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ হচ্ছে আমার। পরপরই উনার সাথে যেতে হবে ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো আমার। মনে মনে ইয়াসিন ভাইয়াকে খুব বকছি। তার বাইকে রেয়ান ভাই কেন বসেছেন? ভাইয়া বসতে পারলেন না? ইয়াসিন ভাইয়ার সাথে বাইকে যাওয়ার কথা হলে আমি খুশি খুশিই যেতে রাজী হতাম। কিন্তু এই মুডি কিংয়ের সাথে যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবি নি আমি। অনুরোধের দৃষ্টিতে আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু ইশারা করলেন রেয়ান ভাইয়ের সাথে যেতে। মেজো চাচীও বার বার বলছেন। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাইকে যেতে রাজী হলাম আমি।
আমি অনেকটা ইতস্ততভাবে বাইকের পেছনে বসতেই সামনে থাকা গাড়ি চলতে লাগলো। রেয়ান ভাইও হাতের ফোন পকেটে রেখে দিলেন। বাইকের হেলমেট নিয়ে একরাশ বিরক্তির সাথে পেছনে ঘুরে আমার দিকে হেলমেট এগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
—” পড়ে নাও। ”
—” হু? ”
বলেই হেলমেটটা তাড়াতাড়ি নিয়ে নিলাম। তবে পড়ছি না। হাতেই ধরে আছি। বাইকের আয়নায় আমায় বসে থাকতে থেকে ভ্রু কুঁচকালেন রেয়ান। বলে উঠলেন,
—” কি হলো পড়ছো না কেন? ”
আমি তাও বসে। খুব ইচ্ছে করছে উনাকে বলতে, আমার এসব হেলমেট, টেলমেট পড়তে পছন্দ না। আপনিই পড়ুন এটা। তবে মুখে কিছু বললাম না। উনার দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি উনি আমার উপর বিরক্ত। মাত্রাধিক বিরক্ত! যা আপাতত নিয়ন্ত্রণ করে উনি নিজেই আমার দিকে ফিরে আমাকে পড়িয়ে দিলেন হেলমেট। রেয়ান আমার কাছে আসতেই আমি যেন রবোট হয়ে গেলাম। শ্বাস নেওয়া বা নড়াচড়া করতেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম৷ আবার উনি সরে যেতেই সব ঠিক। এখন নিজের ওপরই নিজের রাগ হতে লাগলো। কেন হেলমেটটা হাতে নিয়ে বসে ছিলাম! ঘাড়ত্যাড়ামি না করে নিজেরটা নিজে পড়ে ফেললেই তো হতো৷ সে-ই তো পড়তেই হয়েছে। তাও আবার উনার হাতে! ভাবনার মাঝেই রেয়ান আবারও বলে উঠলেন,
—” ঠিক হয়ে বসো। আমি এখন বাইক স্টার্ট দিবো। ”
কথা মতো আমিও একটু ভালোভাবে বসলাম। উনি আবারও বললেন,
—” মিস ঘুমকাতুরে! নিজের ফোন বের করে রেকর্ডার চালু করো।”
—” মানে? ”
উনি এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
—” যা বলছি তা করো। ”
তার এমন গম্ভীর কণ্ঠ শুনে দ্রুত ফোন বের করে রেকোর্ডার চালু করলাম। উনি আবারও বললেন,
—” এবার বলো- ‘আমি মীরা, এখন যদি বাইক থেকে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলি কিংবা মরেও যাই, এতে রায়হান আহমেদ রেয়ান উরফে, আব্রাহাম নামক ব্যক্তির কোনোরুপ দোষ নেই। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। যা দোষ আছে সব আমার।”
আমি তৎক্ষণাৎ চোখ বড় বড় করে বললাম,
—” মানে কি এগুলোর? ”
উনি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন,
—” আমি অনেক স্প্রিডে বাইক চালাই। তুমি যেভাবে বসেছো দেখা যাবে বাইক স্টার্ট দিতেই বাইক থেকে পড়ে গেছো। পরে হাত-পা ভেঙ্গে গেলে? এর রিক্স তো আমি নিতে পারছি না মিস। সো আমাকে ধরে বসো। নতুবা আমি যা বলেছি তা করো।”
তার এসব অযুক্তিকর কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। ফোন ব্যাগে রেখেই আগের মতো বসে রইলাম আমি। তা দেখে উনি বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে উঠলেন,
—” এস ইউর উইস মিস! ”
বলেই বাইক এমন ভাবে স্টার্ট দিলেন যে, মনে হলো এই এখনই পড়ে যাবো আমি। সাথে সাথে উনার কোমড়ের দিকের শার্ট খাঁমছে ধরলাম আমি। বুঝতে পারছি না এত জোড়ে কেউ বাইক চালায়? তাও রাঙামাটির মতো জায়গায়! আল্লাহ জানে উনি এখানে এমন ভাবে বাইক চালালে শহরে কিভাবে চালান! ভাগ্যিস এ জায়গার রাস্তাগুলো যথেষ্ট সুবিধার। নাহলে যে কি হতো..!
দেখা গেল দুই-তিন মিনিট যেতে না যেতেই মেজো চাচ্চুরা যে গাড়িতে বসেছেন তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আমরা। আর রেয়ানও বাইকের স্প্রিড কমিয়ে ফেলেছেন অনেকটাই। হয়তো গাড়ির কাছাকাছি আসার জন্যই এত জোড়ে বাইক চালিয়ে ছিলেন।
___________________
আবদ্ধের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে দীঘি। এতে যে কত রকমের চিন্তা আবদ্ধর! সকাল থেকে দীঘি আচরণগুলো অদ্ভুদ লাগছিল আবদ্ধের। ঠিকঠাক কথা বলে নি তার সাথে। এখন আবার এভাবে চোখ বন্ধ করে আছে। দীঘির কি শরীর খারাপ লাগছে? ভাবতে ভাবতেই দীঘির কপালে হাত রাখলো আবদ্ধ। না! জ্বর তো নেই। তাহলে এমন করছে কেন দীঘি? আবদ্ধ আর দীঘি গাড়ির একদম শেষের সীটে বসে আছে। তার পাশে ফুফি বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। সামনের কেউই পেছনে তেমন তাকাচ্ছে না। বড়রা নিজেদের মতো কথা বলছেন আর সবুজ ভাইয়া, ইয়াসিন ভাইয়া, মেহেরুন গল্প করছে। তাই বেশি না ভেবে নিজের সাথে আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো দীঘিকে আবদ্ধ। তৎক্ষণাৎ চোখ মেলে তাকালো দীঘি। মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,
—” ইসস! ঘুমের মধ্যে কেউ এমন করে? আপনি তো দেখছি ছুপেরুস্তম! সামনা সামনি রোমেন্স না করে আমার অগোচড়ে করছেন। আমি তো ভাবিই নি আপনি এত রোমেন্টিক। উফফ! লজ্জা লজ্জা! এত লজ্জা কই রাখি আমি?”
বলেই আবদ্ধের বুকে মুখ গুঁজলো দীঘি। আবদ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটু আগেও তো এই মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এখন আবার এগুলো? নিজের ওপরই রাগ হলো আবদ্ধের। দরকার কি ছিল দীঘিকে জড়িয়ে ধরার? গম্ভীর মুখে জানালা গলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো সে। অনেক্ষণ ধরে আবদ্ধের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে মুখ তুলে তাকায় দীঘি। সাথে সাথে বিরক্ত হয় সে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
—” গোমরা মুখো! সারাটা দিন মুখ একটা পেঁচার মতো করে রাখেন। হাসতে ইচ্ছে করে না? এমন কেন আপনি?”
আবদ্ধের নির্লিপ্ত কণ্ঠ,
—” কেমন? ”
দীঘি রেগে বলে উঠে,
—” কেমন জানেন না? আপনি সবজি থেকেও নিরামিষ।”
—” আর তুমি নাটকীয় থেকেও বেশি নাটকীয়। ঘুমের ভান করে ছিলে কেন?”
—” আমার ইচ্ছে। আর ভালোই হয়েছে নাটক করেছি। নাহলে আপনার এই ছুপেরুস্তম টাইপ ব্যক্তিত্ব জানতে পারতাম নাকি?”
আবদ্ধে সাথে সাথেই উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—” সকালে এমন ব্যবহার করেছো কেন? কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিক মতো উত্তর দাও নি কেন?”
দীঘি মুখ ভর্তি হেসে বলল,
—” কেন? আমার ওই রুপ ভালো লাগে নি? আমার চঞ্চলতাকে ভালোবেসে ফেলেছেন নাকি?”
আবদ্ধ ভারী কণ্ঠে বলল,
—” সাট আপ দীঘি। মুখ বন্ধ করে চোখ বন্ধ করো।”
চুপ করল না দীঘি। ফিসফিসিয়ে বলতেই রইলো। এক পর্যায়ে জোড় করে দীঘির মাথা নিজের কাঁধে রেখে মুখে হাত চেপে তাকে চুপ করিয়ে দিলো আবদ্ধ। এতেও যেন শান্তি নেই। মুখে হাত চেপে থাকা অবস্থায়ও কথা বলার চেষ্টা করছে সে। যেন আজকেই দুনিয়ার সব কথা বলে শেষ করবে দীঘি!
_____________________
রাঙামাটিতেই আমাদের এক চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর পরিচিত লোক আছে। বলা যায় দাদাজান আর চাচ্চুদের পরিচিত। শুনেছি রাঙামাটিতে প্রথম আসার পরই ওদের সাথে দাদাজানের পরিচয়। বেশ সখ্যতাও আছে। তাই মেজো চাচ্চু ভেবেছেন ওদের বাড়িতে আগে ঘুরতে যাবেন তারপর বাকি বাদ। কিন্তু সমস্যা হলো সেখানে যেতে হলে কোনো যানবাহন নেওয়া যাবেনা। ২০-২৫ মিনিটের সরু রাস্তা হেঁটে হেঁটে অতিক্রম করে প্রাচীন বিশাল এক বাড়ি আছে। সেটাই ওদের বাড়ি। তবে সরু রাস্তাটির একদম শুরুতে ডান পাশে যানবাহন রাখার একটি গেরাজ আছে। সেখানেই আমাদের গাড়ি আর বাইক রেখে আপাতত সরু রাস্তাটিতে হাঁটছি আমরা। বড়রা সবাই আগে আগে। তারপর আবদ্ধ আর দীঘি। এর পরের সারিতে মেহেরুন, সবুজ ভাইয়া আর ইয়াসিন ভাইয়া হাঁটছেন। এবং সবার শেষ সারিতে হাঁটছি আমি আর রেয়ান। উনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি বেশ বিরক্ত এসবে। ফোন হাতে নিয়ে সেদিকে একমনে তাকিয়ে হাঁটছেন উনি। পাশে যে আমিও হাঁটছি তার খেয়ালই নেই হয়তো। আমিও তেমন কিছু বলছি না। সামনে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ একটা পাথরের সাথে পা লেগে পরে যেতে নিতেই আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলেন রেয়ান। ধমক দিয়ে বলে উঠেন,
—” কেয়ার লেস নাকি? জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখো? এখন পরে গেলে কি হতো?”
আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
—” আসলে বুঝতে পারিনি। ”
উনি আর কিছু বললেন না। আমার হাত ধরেই হাঁটতে লাগলেন। তবে এখন ফোনটা পকেটে রেখে দিয়েছেন উনি। সামনে তাকিয়েই হাঁটছেন। এদিকে আমার অস্বস্থি লাগছে। এভাবে কেউ হাত ধরে রাখে? হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি আবারও ধমক দিয়ে বলে উঠেন,
—” উস্টা খেয়ে পড়ার শখ নাকি? চুপচাপ হাঁটো!”
তার ধমক খেয়ে আর কিছু বললাম না আমি। তবে লজ্জা পাচ্ছি প্রচুর। কেননা মেহেরুন আর ইয়াসিন ভাইয়া বেশ কয়েকবার পেছনে তাকিয়েছেন। আমাকে আর রেয়ানকে দেখে যে ওরা মজা নিচ্ছে সেটা দিব্যি বুঝতে পারছি আমি। সাথে সাথে লজ্জাও বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। হঠাৎ রেয়ানের গম্ভীর কণ্ঠ,
—” এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? লজ্জার কি করেছি আমি? ফুলে তো টমেটো হয়ে যাচ্ছো!”
উনার কি আর কাজ নেই? সবসময় আমাকে হেনেস্তা করতে বসে থাকেন কেন? কিছুটা রাগ নিয়েই বললাম,
—” নিরামিষ! আপনার মতো নাকি সবাই? হাসি নেই, লজ্জা নেই! নির্লজ্জ একটা। আমার লজ্জা জিনিসটা অনেক ভালোভাবে আছে। আপনার মতো নই আমি।”
রেয়ান সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—” কিন্তু আমার জানা মতে লজ্জা তো মেয়েদের ভূষণ। ছেলেদের না!”
—” তাই বলে কি আপনি লজ্জা পাবেন না? নির্লজ্জ থাকবেন নাকি?”
মৃদু হাসি প্রকাশ করলেন উনি। একদম মৃদু! বলে উঠলেন,
—” সেটা বিশেষ ক্ষেত্রে! ”
এতটুকু বলে আমার দিকে একটু ঝুঁকে বললেন,
—” আমার একটু লজ্জা কমই মিস! কাইন্ড অফ মাত্রাধিক নির্লজ্জ! তাছাড়া আমিই যদি লজ্জা পাই তাহলে তোমাকে লজ্জা পাওয়াবো কিভাবে?”
বাঁকা হেসে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালেন উনি। হাতও ছেড়ে দিলেন তৎক্ষণাৎ। আমি যেন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। উনার ভাষায় ফুলে টমেটো হয়ে যাচ্ছি। উনার দিকে আর একটা বারও তাকালাম না আমি। চুপচাপ সামনে তাকিয়ে আবদ্ধ আর দীঘির দুষ্টামি দেখছি! দীঘি জোড় করে আবদ্ধের হাত ধরে রেখেছে। আবদ্ধ হাত ছাড়াতে চাইলেও হাত ছাড়ছে না। এতে বেশ কয়েকবার রাগী দৃষ্টিতে দীঘির দিকে তাকিয়েছে আবদ্ধ। আর প্রতিবারই দীঘি দাঁত কেলিয়ে হাসছে। যা দেখতে অনেক ভালো লাগছে আমার। অনেক!
_____________
চলবে…
(রি-চেক করিনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
Ishanur Tasmia