যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ২

0
826

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ০২
কিছুক্ষণ আগেও দীঘি যে ব্যক্তিকে নিজের হবু দুলাভাই হিসেবে জানতো সে এখন তার স্বামী। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে তার। ভারী ভারী গহনা আর শাড়ি পড়ে ফুলে সাজানো বিছানায় যেখানে তার বড় বোনকে বসে থাকার কথা সেখানে আজ সে বসে বসে অপেক্ষা করছে তার বর আবদ্ধের। কিন্তু ১টা বেজে ৫৫ মিনিট হয়ে গেছে অথচ সেই ব্যক্তির আসার কোনো নামই নেই। এদিকে দীঘির প্রচন্ড রকমের ভয় লাগছে। টিভি-সিরিয়ালের মতো এই লোকও কি তাকে বলবে নাকি- “এই মেয়ে, আমি তোমাকে না তোমার বড় বোনকে ভালোবাসি। দয়া করে আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার ফালাতে আসবে না। যাও সোফায় গিয়ে ঘুমাও। আমার বিছানায় তোমার জায়গা নেই।”

আচ্ছা আবদ্ধ যদি তাকে এটা বলে তাহলে সে কি করবে? দীঘি তো বিছানা ছাড়া ঘুমাতেই পারবে না। ভাবনার মাঝে আবদ্ধব এসে যায় রুমে। এতে আরও গুটিসুটি মেরে দীঘি বসে পড়ে বিছানায়। আবদ্ধ ধীর পায়ে দীঘির দিকে এগিয়ে এসে তার সামনে সটান হয়ে দাঁড়ায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,

—” মেনারস জানো না? হাসবেন্ডকে যে সালাম করতে হয় কেউ শিখায় নি?”

লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে দীঘির। এমন না যে সে জানে না। জানে! কিন্তু এতসব চিন্তা-ভাবনার মাঝে কথাটা ভুলেই গিয়েছিল সে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে আবদ্ধকে সালাম করবে এই ভাবনা মাথায় আসতেই গম্ভীর কণ্ঠে আবদ্ধ বলে উঠে,

—” এখন আর উঠতে হবে না। আমার আগের কাজ পরে করাটা অপছন্দ। এজন্যই হয়তো আপনার মতো মেয়ে আমার কপালে জুটেছে।”

দীঘি রেগে বলল,
—” দেখুন আপনি আমাকে অপমান করছেন।”
—” কোন দুনিয়ায় আপনি মিস! সরি মিসেস! আমি আপনাকে অপমান করছি না। অপমান করে ফেলেছি।”

রাগে গা জ্বলে উঠছে দীঘির। কিন্তু নতুন বউ সে। তাও আবার তার বড় বোন অন্যের সাথে পালানোতে তাকে এই লোকের সাথে বিয়ে করতে হয়েছে। এমতাবস্থায় উলটাপালটা কিছু করলে নিশ্চয়ই এ লোক দীঘির আর দীঘির পরিবারের দোষ ধরবে। তাই ভদ্র মেয়ের মতো চুপ থাকলো সে। আবদ্ধ আবারও গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,
—” ফ্রেশ হয়ে নিন মিসেস আহমেদ! নিশ্চয়ই টায়ার্ড! নাকি এভাবে সং ধরে বসে থাকবেন?”
—” দেখুন আপনি বার বার আমাকে অপমান করছেন কিংবা করে ফেলেছেন।”

এতক্ষণ পর আবদ্ধ হাসলো। বাঁকা হাসি! যা মুগ্ধ হয়ে দেখলো দীঘি। কিন্তু পরপরই মুগ্ধতাটা কেটে গেলো আবদ্ধের কথায়,
—” বাহ্ঃ! স্মার্ট! কিন্তু আমার রুমে আমি ময়লা জিনিস রাখি না। সো প্লিজ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।”
—” জ্বী? বুঝলাম না!”
—” মানে খুব সহজ! আপনি ঘেমে আছেন যেখান থেকে জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আমার রুম নোংরা হচ্ছে।”

রেগে গেল দীঘি। রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলল,

—” আপনিও তো ঘেমে আছেন, আপনারও শরীরে জীবাণু আছে।”

আবদ্ধ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

—” দ্যাটস নান অফ ইউর বিজন্যাস! যেটা বলেছি সেটা করুন। এক কথা দু’বার বলতে পছন্দ করি না আমি।”

অনেকটা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল আবদ্ধ। মনে মনে রাগ হলেও দীঘি তা প্রকাশ করল না। বিড়বিড় করতে করতে ট্রলি ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। ততক্ষণে আবদ্ধও চেঞ্জ করে নিলো রুমে।

___________________

ঘুমের ঘোরেই মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যাতে বিরক্তি এবং অস্বস্থি দোনোটাই কাজ করছে আমার মাঝে। বিরক্তি নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই দেখি এমন কিছুই না। সামনের বার্থের ছেলেটা জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে। হয়তো ঘুমিয়ে! আমিও ঘুমাবো না ঘুমাবো না বলে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনেই নেই। কিন্তু ঘুমের ঘোরে যে অনুভূতি অনুভব করেছি সেটা? হয়তো আমার মনের ভ্রম! কেননা ছেলেটা তো ঘুমিয়ে আছে। ঘুম বাদ দিয়ে সে কি আমার দিকে তাকিয়ে তাকবে নাকি? আমার মতে তো না। তাছাড়া এই ছেলের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই তার আর আমার সাপ-নেউলের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং এসব বাজে চিন্তা ভাবনা নিত্যান্তই সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না।

এদিকে বাহিরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখন নেই বললেই চলে। পরিষ্কার আকাশে চাঁদের প্রখর আলোটা জানালা ভেদ করে পুরো কেবিন আরও তীব্রভাবে আলোকিত করে ফেলেছে। চাঁদের আলোটুকু সরাসরি পরছে আমার আর রেয়ানের মুখে। হঠাৎ রেয়ানের মুখে চোখ যেতেই এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলাম আমি। কি নিষ্পাপ চেহারা! চাঁদের আলো পড়ায় আরো বেশি মনোমুগ্ধকর লাগছে তাকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। তাই পা দুটো গুটিয়ে জানালার সাথে ঘেঁষে আরও ভালো ভাবে বসলাম আমি। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে যেই না তাকে পর্যবেক্ষণ করতে যাবো তার আগেই উনার গম্ভীর কণ্ঠ,

—” আমি এখন ঘুমিয়েছি মিস! এখনও তোমার আমার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে হবে? কেন? মানে মতলবটা কি তোমার?”

বলেই চোখ মেলে তাকালেন উনি। আমি খানিকটা চিন্তায় পরে গেলাম। আমার আবার কি মতলব? পরক্ষণেই কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
—” আমার আবার কি মতলব? কিসব বলতে চাচ্ছেন আপনি? আপনি আমাকে যেমন মেয়ে ভাবছেন আমি তেমন মেয়ে না বুঝলেন। তাছাড়া আপনার তো চোখ বন্ধ ছিল। আপনি তাহলে কিভাবে বুঝলেন আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি কি না?”
—” শোনো মেয়ে! এত বোকা ভাববে না আমায়। মিথ্যা কথা বলছো তাও আবার এত জোড় গলায়? ভালোই তো!”
—” দেখুন..! ”
—” তোমাকে দেখার কোনো ইন্ট্রেস নেই মিস!”
—” আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন।”

উনি মুচকি হেসে বললেন,

—” আমি জন্ম থেকেই একটু বেশি বেশি মিস!”

রাগ যেন বেড়েই যাচ্ছে আমার। লাইক সিরিয়াসলি! এত অপমান? রাগে গা রিরি করছে আমার। কোনোমতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,

—” আপনার সাথে আমার কথা বলতেও বিরক্তি লাগছে। চুপচাপ নিজের কাজ করুন। তাকাবেন না আমার।”

উনি শান্ত স্বরে বললেন,

—” একই কথা তো আমার তোমাকে বলা উচিত । যাই হোক, ঘুম পাচ্ছে আমার। সো আমার সামনে কিংবা অগোচড়ে আমার দিকে হাবলার মতো তাকাবে না মেয়ে!”

আমি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,

—” কথায় কথায় আমাকে খোঁচা দেন কেন? একবার তাকিয়েছিলাম বলে এভাবে কথাটা বলবেন? ভদ্রভাবে কথা বলতে পারেন না? এমন কেন করেন বলুন তো?”

উনি কিছু না বলে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। পরপরই চোখ বন্ধ করে ফেললেন। আমিও আমার মতো জানালার গলিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। হঠাৎ-ই মৃদু গানের গলা ভেসে উঠল কানে। সামনে তাকাতেই দেখলাম রেয়ান চোখ বন্ধ অবস্থায়ই গাইছেন,

‘Cause I wanna touch you baby
And I wanna feel you too
I wanna see the sun rise
On your sins just me and you

Light it up, on the run
Let’s make love tonight
Make it up, fall in love
Try
(Baby, I’m right here)

But you’ll never be alone
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll hold you when things go wrong
I’ll be with you from dusk till dawn
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
I’ll be with you from dusk till dawn
Baby, I’m right here
~ZAYN

আমার দৃষ্টি বাহিরে থাকলেও মনোযোগ পুরোপুরি উনার দিকে। কেন যেন মনে হচ্ছে উনার গাওয়া প্রত্যেকটা অক্ষর আমাকে উদ্দেশ্য করেই গেয়েছেন উনি। যেন আমার শেষে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন উনি! কিন্তু আবার মনে হচ্ছে এমন কেন হবে? আচ্ছা, উনি হঠাৎ-ই এভাবে গান গেয়ে উঠলেন কেন? নাকি উনারও আমার মতো জার্নিতে গুণগুণ করে গান গাওয়া অভ্যাস?

______________________

চলবে…
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here