#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ৩২
.
অবশেষে বিয়ের দিন নির্ধারণ করলেন মেজো চাচ্চু। দু’মাস পর আমার পরীক্ষা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হবে রেয়ান এবং আমার। আর সেটা হবে রাঙামাটিতে। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে। মেজো চাচ্চু যে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন সেটা শুধুমাত্র জানতেন ফুফি আর ছোট চাচ্চু। তারা ব্যস্ত থাকায় ইয়াসিন ভাইয়াকে প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে পাঠিয়েছেন এখানে। ফলসরুপ তিনি এখন এখানে উপস্থিত।
মেজো চাচ্চুরা যাওয়ার আগে রেয়ান এবং আমাকে আলাদা কথা বলার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমার রুমে। বারান্দার এক কোনে মাথা নিচু করে উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমি। হঠাৎ উনার ভারী কণ্ঠ,
— “তুমি এসব জানতে আগে থেকে?”
সাথে সাথে আমার জবাব,
— “না।”
উনি আর কিছু বললেন না। আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন এক দৃষ্টিতে। আমি খানিকটা কেঁশে বললাম,
— “আচ্ছা, আপনি কি সরাসরি ঘুম থেকে উঠে এসেছেন? কেমন যেন লাগছে আপনাকে।”
উনার নির্বিকার কণ্ঠ,
— “কেমন লাগছে?”
উত্তর দিতে সময় নিলাম অনেকটা। তারপর স্লান কণ্ঠে বললাম,
— “এলোমেলো, অগোছালো লাগছে আপনাকে।”
চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন উনি। মশ্রীণ গলায় বললেন,
— “গুঁছিয়ে দেবে আমায়?”
চমকে গিয়ে তাকালাম। উনার সেই অদ্ভুদ চাহনী, নির্লিপ্ততা! কিছুপলক তাকিয়ে চোখ আবারো ফিরিয়ে নিলাম। হতাশা নিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেললেন রেয়ান। গম্ভীর কণ্ঠে আবারো বললেন,
— “আসছি তাহলে। খেয়াল রাখবে।”
চলে গেলেন উনি। একরাশ নিরাশা নিয়ে আমিও চেয়ে রইলাম তার যাওয়ার পথটির পানে। বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখনো।
________________
মেজো চাচ্চুরা যাওয়া পরও ইয়াসিন ভাইয়া থেকে যান আমাদের বাসায়। উদ্দেশ্য, আজ রাত এখানেই থাকবেন উনি। তখন সন্ধ্যার ৭টা কি ৭টা ৩০ বাজে। সোফায় আরাম করে বসে টিভি দেখছিলাম আমি। ইয়াসিন ভাইয়া কোত্থেকে এসে আমার পাশে ‘ধপ’ করে বসে পরলেন। আমি একপলক তাকালাম সেদিকে। তারপর আবারো টিভি দেখায় মন দিলাম। ইয়াসিন ভাইয়া প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করলেন। হঠাৎ আমার সামনে ফোনটা ধরে সেই ভাব-সাব নিয়ে বললেন,
— “দেখেছিস? মেয়েটা সুন্দর না? আমার গার্লফ্রেন্ড হয়।”
ফোনের স্ক্রীনে থাকা রমণীর দিকে বেশ সুক্ষ্ণভাবে তাকালাম আমি। সুন্দর দেখতে। তবে অতিমাত্রায় স্টাইলিস যাকে বলে, মেয়েটা ঠিক তেমনই। দেখা শেষে ফোনটা ঠেলে সরিয়ে দিলাম আমি। ইয়াসিন ভাইয়া এবার সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসলেন। মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললেন,
— “তোদের থেকে সুন্দর মেয়েকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছি। জীবন এখন জিঙ্গালালা!”
বাঁকা চোখে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। বললাম,
— “মেয়েটা তোর সাথে মানায় না, ভাইয়া।”
ইয়াসিন ভাইয়ার হাসি এবার আরো তীব্র হলো। টিভির পর্দায় চোখ রেখে বললেন,
— “আমি জানি মেয়েটা আমার যোগ্য না। আমি আরো সুন্দর সুন্দর মেয়ে ডিজার্ভ করি।”
চোখ ছোট ছোট হয়ে গেল আমার। অনেকটা রাগী কণ্ঠে বললাম,
— “হাদা! কথার মানে না বুঝে এত বকবক করিস কেন? মেয়েটা তোর না, তুই মেয়েটার যোগ্য না। বুঝেছিস?”
মুখ কালো করে ফেললেন ইয়াসিন ভাইয়া। তেঁতো কণ্ঠে বললেন,
— “বেয়াদ্দপ! কয়েকদিন পর তোর বিয়ে আর তুই বড়দের সাথে বেয়াদবি করছিস? মুখ সামলে কথা বলবি বড় ভাইয়ের সাথে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
— “না বললে কি করবি?”
ইয়াসিন ভাইয়া চোখ বড় বড় করে হাত নাড়িয়ে বললেন,
— “অভিশাপ দিবো তোকে। অভিশাপ!”
আমি মুখ বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললাম,
— “পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়।”
ইয়াসিন ভাইয়া মাত্রাধিক রেগে গেলেন এবার। কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “তুই এমন বলতে পারলি আমাকে? আমি পাগল? তুই জানিস আমার গার্লফ্রেন্ড ১৫দিন, পুরো ১৫দিন আমার পেছনে ঘুরেছে শুধুমাত্র আমার পাত্তা পাওয়ার জন্য। আর তুই আমাকে পাগল বলছিস? আমার মতো সুদর্শন ছেলে কখনো দেখেছিস?”
ইয়াসিন ভাইয়ার উত্তেজিত আচরণে মোটেও আগ্রহ প্রকাশ করলাম না আমি। বরং টিভির চ্যালেন পাল্টাতে পাল্টাতে শান্ত গলায় বললাম,
— “হুম, ফেয়ার এন্ড লাভলি সুন্দরী।”
আরো রেগে গেলেন ইয়াসিন ভাইয়া। ফোনে কাউকে কল দিতে দিতে বলে উঠলেন,
— “দাঁড়া তুই! তোর হবু বরকে ফোন দিয়ে বিচার দেবো আমি। জাস্ট ওয়েট কর।”
তার এমন কথায় এবারো পাত্তা দিলাম না আমি। নিজের মতো টিভি দেখতে লাগলাম। ইয়াসিন ভাইয়া রেগে, মেগে চলে গেলেন নিজ রুমে।
____________________
রাত ১২’টা। আবদ্ধের কাঁধে মাথা রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে দীঘি। আকাশে থাকা উজ্জ্বল চাঁদের দিকে একদৃষ্টিয়ে তাকিয়ে আছে সে। আবদ্ধ নরম গলায় বলল,
— “দীঘু, অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ঘুমাতে চলো।”
মাথা ঝাঁকিয়ে না জানালো দীঘি। আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,
— “গান শুনবো। গেয়ে শোনান।”
— “অনেক রাত হয়ে গেছে দীঘি। এত রাতে কিসের গান শোনা?”
দীঘি জেদি কণ্ঠে বললো,
— “শুনবো মানে শুনবোই। গান গেয়ে শোনান আমাকে।”
— “গান পারি না আমি।”
দীঘি বললো,
— “প্লীজ আবদ্ধ। শোনান না গান। প্লীইইইইজ!”
আবদ্ধ হতাশ ভঙ্গীতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পরপরই গম্ভীর স্বরে বললো,
— “ঠিকাছে। কিন্তু তারপর তোমাকে ঘুমাতে যেতে হবে। রাজী?”
আনন্দে মুখে হাসি ফুটে উঠল দীঘির। আবদ্ধর শরীরের সাথে আরো সেঁটে দাঁড়ালো সে। তখনই আবদ্ধ গেয়ে উঠল,
সোনারও পালঙ্কের ঘরে,
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে,
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে ।
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা ।
যাও পাখি যারে উড়ে
তারে কয়ো আমার হয়ে
চোখ জ্বলে যায় দেখব তারে
মন চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেক, ভালো থেক
মনে রেখ এ আমারে ।
৷৷ যাও পাখি বলো তারে ৷৷
___________________
চলবে…
(অগোছালো হয়েছে, সুন্দর করে গুঁছিয়ে লিখা হয় নি, ছোট হয়েছে, হয়তো বানানে ভুল আছে, যার জন্য দুঃখীত। প্রচুর ব্যস্ত আমি। সারাদিন হাসপাতালেই দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এসময় লেখাটা অনেক টাফ! সব কিছুর জন্য আবারো সরি।)