#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ৩৫
.
সকাল পেরিয়ে যায়। এখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বেড়োয় আবদ্ধ। দীঘি গাল ফুলিয়ে বসে আছে বিছানার মাঝখানে। একপলক সেদিকে তাকিয়ে আবারো হাত দিয়ে চুল ঝাঁকাতে থাকে আবদ্ধ। ধপ করে বসে পরে সোফায়। দীঘি তখনো এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে বিছানায়। আবদ্ধ ভ্রু কুঁচকালো। প্রশ্নাতীত কণ্ঠে বললো,
— “কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?”
আনমনে দীঘির জবাব,
— “কিছু না।”
আবদ্ধের অবিশ্বাস্য কন্ঠ,
— “সত্যি?”
দীঘি জবাব দেয় না এবার। মুখ ফুলিয়েই বসে রয়। দীঘির বাচ্চামো দেখে হালকা হাসে আবদ্ধ। একটু কেঁশে উঠে দাঁড়ায়। দীঘির কাছে গিয়ে বসতেই দীঘি সরে বসে। ভ্রু কুঁচকায় আবদ্ধ। মৃদু ধমকে বলে,
— “কি সমস্যা? সরে বসছো কেন?”
দীঘি মুখ ফুলিয়ে বলে,
— “আপনার সাথে রাগ করেছি আমি।”
আবদ্ধ অবাক হয় যেন। জিজ্ঞেস করে,
— “কেন?”
দীঘি আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,
— “আপনি আমার কথা শুনেন নি তাই।”
— “কি শুনিনি আমি? সারাদিন তো তোমার আবদার পূরণ করতে করতেই দিন যায় আমার। এখন আবার কি আবদার অপূর্ণ রইল?”
মুখ আরো ফুলিয়ে ফেলে দীঘি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
— “আমি আপনাকে বলেছিলাম বেবি নিতে। সব নিউ কাপলরাই নেয়। আপনি কেন নিচ্ছেন না?”
চোখ বড় বড় হয়ে যায় আবদ্ধের। চোখ পাকিয়ে তাকায় দীঘির দিকে। এমন চাহনী দেখে দীঘি এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
— “দেখেছেন? আপনি আমার কথা কখনোই শুনেন না। এই যে, এখনো চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছেন।”
উচ্চস্বরে বলে উঠে আবদ্ধ,
— “চড় খেতে চাচ্ছো তুমি? এটা কি ধরণের আবদার আবার? একবার বলেছিলাম না এ ধরণের কথা না বলতে? বয়সের তুলনায় এত পাকনা হচ্ছো কেন?”
ধমক খেয়ে কেঁদে দেয় দীঘি। চমকায়ই আবদ্ধকে জড়িয়ে ধরে সে। বুকে মাথা রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে আবারো বলে,
— “আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। সব সময় বকেন।”
হাসি পেলো আবদ্ধের। অনেক কষ্টে হাসি দমিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— “বাসি না তো।”
তেঁতে উঠলো দীঘি। আবদ্ধের বুকে কয়েকবার আঘাত করে কাঠকাঠ কণ্ঠে বললো,
— “দেখেছেন? দেখেছেন আপনি? নিজেই শিকার করেছেন আমাকে ভালোবাসেন না। বাজে আপনি। নিরামিষ, অসভ্য!”
আবদ্ধ হেসে উঠে এবার। দীঘির চুলে হাত বুলিয়ে মৃদু স্বরে বলে,
— “ভালোবাসি তো।”
দীঘি নাক টেনে বললো,
— “মিথ্যুক আপনি।”
— “তুমি মিথ্যুক।”
— “উহুঃ আপনি মিথ্যুক।”
— “ঠিকাছে আমি মিথ্যুক। এখন বলো, আমার মহারাণীর অভিমান ভাঙ্গবে কি করলে?”
মুখ তুলে আবদ্ধের মুখে তাকালো দীঘি। একগাল হেসে বললো,
— “আমরাও বেবি নিবো।”
মুহুর্তেই আগের ফর্মে ফিরে এলো আবদ্ধ। চোখ রাঙ্গিয়ে কর্কশ কণ্ঠে বললো,
— “দীঘি!”
— “প্লীজ?”
আবদ্ধ ধমকে উঠে,
— “আবারো!”
দীঘি চুপ হয়ে যায় এবার। মুখ ফুলিয়ে আবদ্ধের বুকের সাথে এঁটে থাকে। আবদ্ধও নির্বাকভাবে দীঘির চুলে মাথা বুলিয়ে দেয়।
___________________
ফোন হাতে নিয়ে বিছানার মাঝখানটায় বসে প্রায় ঝিমুচ্ছি আমি। অপেক্ষায় আছি কখন রেয়ান ভাই ফোন দেবেন আমাকে। প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ফোনের টুটাং শব্দ বেজে উঠল। চমকে গেলাম। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলাম রেয়ান কল করেছেন। আমি রিসিভ করতেই শান্ত স্বরে বললেন,
— “কি করছিলে?”
— “কিছু না।”
মনে হলো ফোনের অপাশ থেকে নিঃশব্দে হাসছেন রেয়ান। কণ্ঠে রসিকতা এনে বললেন,
— “মিথ্যা বলছো? নিশ্চয়ই আমার কলের অপেক্ষা করছিলে?”
অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। একটু সময় নিয়ে বললাম,
— “আমি আপনার কলের অপেক্ষা করতে যাবো কেন? মোটেও অপেক্ষা করছিলাম না।”
এবার শব্দ করে হাসলেন রেয়ান। বললেন,
— “তোমার সত্যিই আমার থেকে মিথ্যা বলা শিখতে হবে মরুভূমি। যদি তুমি আমার ফোন কলের অপেক্ষায় না-ই থাকো, তবে একবার রিং হওয়ার পরপরই ফোন ধরেছো কিভাবে?”
বুঝতে পারলাম আমাকে ফাসানোর চেষ্টা করছেন উনি। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও অপ্রস্তুত হয়ে পরছি। সামান্য তোতলে বললাম,
— “আমার হাতেই ফোন ছিল, এজন্য সাথে সাথে ধরেছি।”
— “তাই?”
জবাব দিলাম না। জবাবের আশায় কিছুক্ষণ চুপ রইলেন উনি। পরক্ষণেই স্লান কণ্ঠে বললেন,
— “সত্যিই কি তুমি অপেক্ষায় ছিলে না?”
এবারো নিরুত্তর আমি। সত্যি বলতে, সত্যিটা বলতে চাচ্ছি না আমি। আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে উনি গম্ভীর অথচ শান্ত কণ্ঠে বললেন,
— “কথা বলছো না কেন? রাগাতে চাইছো আমাকে? রেগে গেলে কিন্তু তোমারই ক্ষতি। একেবারে চলে আসবো তোমার কাছে। এবং তারপর স্ট্রেট নির্যাতন চলবে তোমার গালে। চড় দিয়ে একদম লাল করে ফেলবো।”
শান্ত স্বরে কি সুন্দর থ্রেট দিলেন আমাকে! রাগ হতে লাগলো আমার। এবারো উত্তর দিলাম না। ওপাশ থেকে অধৈর্য কণ্ঠে রেয়ান বলে উঠলেন,
— “তুমি কথা বলবে না? তুমি কি চাইছো, এখন তোমার বাসায় চলে আসি আমি? ঠিকাছে তাহলে। আসছি আমি, ওয়েট!”
বিস্ময়ে ‘হা’ হয়ে গেলাম আমি। উনি কি সত্যি চলে আসবেন এখানে? দ্রুত চেঁচিয়ে উঠলাম আমি,
— “আমি বলেছি নাকি আমার কাছে আসতে? যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন।”
— “এতক্ষণ কথা বলো নি কেন?”
নির্বিকার কণ্ঠ তার। শান্ত হয়ে গেলাম আমি। উত্তেজনা থেকে বেড়িয়ে মৃদু স্বরে বললাম,
— “এমনি।”
— “এখন কিন্তু সত্যি এসে চড় দেবো।”
রেগে বললাম,
— “আপনি বাজে।”
তার নির্লিপ্ত ভাব,
— “জানি।”
— “অসভ্য, অভদ্র!”
— “ধন্যবাদ।”
বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলাম আমি। মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম বিছানায়। প্রায় সাথে সাথেই ফোনের টুটাং শব্দ আবারো বেজে উঠল। মেসেজ এসেছে রেয়ানের নম্বর থেকে। দ্রুত চেক করলাম, ‘সেনি সিভিউরুম’ লেখা। এর আগে, পেছনে কিছু লেখা নেই। আচ্ছা এর অর্থ কি? ‘সেনি সিভিউরুম’ আবার কোন দেশের ভাষা?
_________________
পরের দিন ছিল শুক্রবার। যেহেতু ভার্সিটি বন্ধ এবং বাড়ির সবাই বাসায়-ই আছেন সেহেতু, ভাবলাম আজকে নিজ হাতে সবাইকে বিরিয়ানি বানিয়ে খাওয়াবো। যেই ভাবা সেই কাজ! সকাল থেকেই রান্নাঘরে বিরিয়ানি রাঁধতে ব্যস্ত আমি। এহেন সময় আম্মু এসে পাশে দাঁড়ালেন আমার। তখন মাংস ছোট, ছোট টুকরো করছিলাম আমি। এক পলক আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু ধীর গলায় বললেন,
— “দেখিস, কিছু যেন মন্দ না হয়। আজ দুপুরে রেয়ানকেও দাওয়াত দিয়েছে তোর আব্বু। তাই ভালো মতো রাঁধিস।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আম্মুর দিকে। রেয়ান আসছেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
— “উনি কি আসবেন বলেছেন?”
— “না বললে কি তোকে বলি? মাথা ভরা আগাছা তোর।”
বিরক্তি চাহনীতে আম্মুর দিকে তাকালাম। এখানেও বকা? সারাজীবন কি বকা খেয়েই পাড় করব আমি? ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ ফিরিয়ে আবারো কাজে মন দিলাম। দ্রুত রান্না শেষ করতে হবে আমার।
রান্নার মাঝে আম্মু বারবার মনে করিয়ে দিলেন শাড়ি পড়ার কথা। আম্মুর ভাষ্যমতে, রেয়ান যেহেতু আসছেন সেহেতু আমাকে শাড়ি-ই পড়তে হবে। ফলে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শাড়ি পড়তে হয়েছে আমার। শাড়ি পড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে দেখলাম, রেয়ান এসে গেছেন ইতোমধ্যে। আমার দিকে নজর পরতেই কয়েকপলক তাকিয়েই রইলেন উনি। তারপর আব্বুর সঙ্গে কথায় মেতে উঠলেন। আমিও খাবারের জিনিস টেবিলে সুন্দর করে গুঁছিয়ে রাখতে লাগলাম।
গুঁছানো শেষে সবাইকে ডাকা হলো খাবার খেতে। আব্বু, আম্মু তো তৃপ্তির সঙ্গে খাচ্ছেন নিজের মেয়ের হাতের রান্না। ইয়াসিন ভাইয়াও তাই। অথচ আমি তাকিয়ে আছি রেয়ান ভাইয়ের দিকে। সে যদি কিছু বলে! কিন্তু উনি সেই কখন থেকে নির্লিপ্ত ভাবে খাবার খাচ্ছেন। কিছু বলছেন না। আমাকে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াসিন ভাইয়া রেয়ানকে খোঁচা দিয়ে বললেন,
— “আব্রাহাম ভাই? খাবার কেমন হয়েছে, বললা না তো?”
রেয়ান শান্ত স্বরে বললেন,
— “ভালো।”
ইয়াসিন ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। টেনে টেনে বললেন,
— “শুধুই ভালো? আরো কিছু কমপ্লিমেন্ট দাও। আফটারওল, তোমার বিয়ে করা বউ কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছে।”
রেয়ান একপলক তাকালেন আমার দিকে। তবে, কিছু বললেন না। মনে মনে আমিও ভেবে নিলাম, রান্না ভালো হয় নি হয়তো। এজন্যই তার এত নিশ্চুপ ভাব। কিন্তু বেহায়া মন তাও তার কাছে কিছু শুনবার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠল। তবে খাওয়া শেষ হওয়ার পরও যখন উনি কিছু বললেন না, তখন লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব গুঁছিয়ে রাখলাম আমি। কাজ শেষে রুমে ঢুকতেই কয়েকদফা চমকে গেলাম। আমার রুমে, আমার বিছানায়, কম্বলের নিচে আধশোয়া ভাবে বসে আছেন রেয়ান। হাতে ফোন নিয়ে ফোন চাপছেন উনি। ওভাবেই হঠাৎ বলে উঠলেন,
— “এত দেড়ি হলো কেন আসতে?”
অবাক হওয়াটা এখনো কাটাতে পারি নি আমি। এখন আবার উনার এমন কথা! কয়েক মুহুর্ত বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললাম,
— “আপনি এখানে কেন?”
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। প্রবল বিরক্তি নিয়ে বললেন,
— “আমি এখানে কেন, মানে? নিজের বউয়ের রুমে আমি। তোমাকে বলতে হবে কেন?”
বিষম খেলাম। বউ? আচ্ছা, উনার কি হয়েছে? এমন উদ্ভট কথা বলছেন কেন? উনি কি আদৌ এমন কথা বলার মানুষ? ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে রেয়ান আবারো বললেন,
— “এক গ্লাস পানি দাও তো।”
বিনা বাক্যে এগিয়ে গিয়ে তাকে পানি দিলাম। এক নিশ্বাসে সেটা পান করে সাইড টেবিলে গ্লাসটা রেখে দিলেন উনি। পরপরই এক টানে বিছানায় বসিয়ে দিলেন আমায়। সময় না দিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। ঘটনাক্রমে ‘হা’ হয়ে রইলাম আমি। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রেয়ান আমার হাত ধরে নিজের চুলের মাঝে রাখলেন। যার অর্থ, ‘মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।’
কিন্তু আমি দিলাম না। উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
— “কি হয়েছে? কি করতে বলেছি?”
একরাশ অভিমান নিয়ে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম আমি। উনি চোখ বন্ধ করে আছেন। হুট করে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন আমার। পেটে মুখ গুঁজলেন। কেঁপে উঠলাম। উনি মৃদু কণ্ঠে বললেন,
— “বিরিয়ানি কি তুমি রান্না করেছিলে?”
উত্তর দিলাম না। উনি আবারো বললেন,
— “ভীষণ ভালো হয়েছে খেতে। ভাবছি, রাতের জন্য টিফিন করে নিয়ে যাবো। যাওয়ার সময় দিও তো।”
অভিমানের পাল্লা ধীরে ধীরে কমে আসতে লাগলো আমার। আপন মনে তার চুলে হাত বুলাতে লাগলাম। একসময় খেয়াল হলো, উনি ঘুমিয়ে গেছেন। এ সুযোগে তার সুশ্রী মুখ দেখতে লাগলাম আমি। তার নাক লাল হয়ে আছে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলাম নাকটা। হঠাৎ ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে তার আওয়াজ,
— “সেনি সিভিউরুম মরভূমি।”
ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। হাত সরিয়ে নিলাম তৎক্ষণাৎ। এই ‘সেনি সিভিউরুম’ অর্থ কি? বারবার এটা কেন বলছেন রেয়ান? আচ্ছা, গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলে কেমন হয়? সময় নষ্ট না করে তড়িৎ গতিতে গুগলে সার্চ দিলাম আমি। পর মুহুর্তে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম। ফোনের স্ক্রীনে স্পষ্ট ভাসছে, ‘সেনি সিভিউরুম’ অর্থ ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তুর্কি ভাষা!
_________________
রেয়ানের সঙ্গে সঙ্গে আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখম ঘুম ভাঙ্গে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। দরজায় ‘দুম দুম’ করে কারো আঘাতের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। একপলক তাকালাম রেয়ানের দিকে। আমার কোলে মাথা রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছেন উনি। আলতো হাতে তার চুলে হাত বুলিয়ে, পরপরই তাকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম, দাঁত কেলিয়ে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ইয়াসিন ভাইয়া। তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল আমার। এখন আবার কি কুকর্ম করতে এসেছে এ লোক? ভাবনা কাটিয়ে ইয়াসিন ভাইয়া নিজ থেকেই বললেন,
— “মীরু, আমার বোন! শুনেছি তোর নাকি কুহু নামে কোনো সুন্দরী ফ্রেন্ড আছে। নাম্বারটা আমাকে একটু দেয় না বোন।”
চোখ বাকিঁয়ে তাকালাম ইয়াসিন ভাইয়ার দিকে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
— “মার খাবি ভাইয়া। এসব কি ধরণের কথা? তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে? তাহলে আবার কুহু কেন?”
ইয়াসিন ভাইয়া মাথা চুলকে আপরাধীর মতো বললেন,
— “আসলে মিথ্যা বলেছিলাম তোকে।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ইয়াসিন ভাইয়ার দিকে। বললাম,
— “তাহলে ওই মেয়ের ছবি আর সারা রাত কথা বলা? ওগুলো কি ছিল?”
ইয়াসিন ভাইয়া আবারো দাঁত বের করে হেসে বললেন,
— “গুগল থেকে মেয়েটার ছবি বের করেছিলাম। আর রাতের কথাটা মিথ্যা ছিল। আমি আমার ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতাম।”
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম ইয়াসিন ভাইয়ার দিকে। সন্দিহান কণ্ঠে বললাম,
— “ভাইয়া? তুই যে গে সেটা আগে বলিস নি কেন? ফুফি জানে এসব?”
সাথে সাথে মৃদু চেঁচিয়ে উঠলেন ভাইয়া,
— “চুপ কর বেয়াদ্দপ! আমাকে দেখে তোর ওইরকম মনে হয়? ফাজিল! ফাজলামি না করে দ্রুত ফোন নাম্বার দেয়।”
আমি মুখ কুঁচকে বললাম,
— “কেন দেবো? বকা দেওয়ার সময় মনে ছিল না?”
ইয়াসিন ভাইয়া অসহায় ভাবে তাকালে এবার৷ আমিও নাছোড়বান্দা। কিছুতেই নাম্বার দেবো না। ইয়াসিন ভাইয়া এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
— “দিবি না?”
— “না।”
— “সত্যি?”
— “একশত সত্যি।”
হতাশ হলেন ইয়াসিন ভাইয়া। হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই আবারো হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। চোখ মেরে বললেন,
— “আব্রাহাম ভাই তো তোর রুমে তাই না? তা কি করছিলি তোরা? একটু সাইড দেয় তো। রুমে ডুকি।”
চোখ বড় বড় করে তাকালাম। ইয়াসিন ভাইয়া চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
— “তুমি চলো পাতায় পাতায় আর আমি চলি শাখায় শাখায়৷ তাড়াতাড়ি ফোন নাম্বারটা দাও বোন। নাহলে কিন্তু রুমে ঢুকে চিল্লানি দিবো।”
কত বড় ফাজিল হলে মানুষ এমন ব্লেকমেইল করতে পারে। রাগী দৃষ্টিতে ইয়াসিন ভাইয়ার দিকে তাকিয়েও লাভ হলো না আর। অগত্যা, ফোন নম্বর দিয়ে দিতে হলো আমাকে।
চলবে…