যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ১০

0
979

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১০
.
—” মিস! চুলে কি শ্যাম্পু ইউস করো? ঘ্রাণটা সুন্দর।”

হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে গিয়ে পাশে তাকালাম আমি। আমার থেকে একটু দূরত্বে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান। মুচকি হেসে তাকিয়ে আছেন আমারই দিকে। তার চাহনী দেখে আমি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললাম। বুঝতে পারছি না আজ তার এত ভালো ব্যবহার কেন? সদা তো গম্ভীর মুখে অপমান করেন আমায়। সকালেও করেছেন। এখন এত মিষ্টি মিষ্টি কথা? ঠোঁটে হাসিও লেগে আছে দেখছি। উহু! ব্যাপারটা সুবিধার লাগছে না আমার। আস্তে আস্তে চলে যাওয়ার প্লেন করছি তখনই উনি শান্ত কণ্ঠে বললেন,

—” আমার উত্তরটা মিস? ”

আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। উনার এই ভালো ব্যবহার অত্যাধিক সন্দেহ জনক। তাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। বুঝতে চেষ্টা করছি উনাকে। আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি উনার ডান ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠলেন,

—” উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে কেন? আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগছে মিস?”

উনার এই বিখ্যাত ডায়লগটা শুনতে শুনতে এখন বেশ বিরক্ত আমি। যদিও সবসময়ের মতোই অনেকটা লজ্জা পেয়েছি। নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ ফিরিয়ে বললাম,
—” আপনি জেনে কি করবেন? ”
—” ঘ্রাণটা সুন্দর তাই। নাম? ”
—” ডাভ! ”

উনি মুখ বাকিয়ে হাসলেন। পরপরই এক কদম এগিয়ে এলেন আমার দিকে। আমি চোখ বড় বড় করে আরও দু’কদম পিছালাম। উনি বাঁকা হেসে ঝুঁকে দাঁড়ালেন। কণ্ঠে দুষ্টুমি এনে বললেন,

—” তুমি ভয় পাও আমাকে! ”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
—” মানে? ”
—” মানে, তুমি আমাকে ভয় পাও। নাহলে পিছালে কেন?”

আমি তোতলিয়ে বললাম,

—” আআমি কোনো ভয় পাই না আপনাকে। আপনার মমনের ভুল!”

উনি আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে বললেন,

—” ও রেইলি? তাহলে তোতলাচ্ছো কেন? আবার সাপের মতো মোচড়া-মোচড়িও করছ। তুমি কি সাপ? মরুভূমি সাপ!”

বলেই পরমুহুর্তে এক লাফে রেলিংয়ের ওপর বসে পরলেন উনি। ঘটনা এত দ্রুত হয়েছে যে কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি শুধু। উনি এবারও বাঁকা হেসে বললেন,

—” এভাবে তাকাবে না মিস। তোমাকে বড্ড নির্লজ্জ লাগছে।”

চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। আমাকে? আমাকে নির্লজ্জ লাগছে? আমি নির্লজ্জ? আমি নির্লজ্জ হলে উনি কি? প্রচন্ড রাগ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

—” আপনি নির্লজ্জ! অসভ্য, পাষাণ, নির্দয়, অভদ্র!”

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—” তাই নাকি? তা এগুলো যে বললে তার একটা পয়েন্ট তো এখন করে দেখিয়ে দেওয়াই উচিত। তুমি কি বলো? অসভ্যতা কি করব মিস?”

রাগ যেন আরো বেড়ে গেল আমার। বিড়বিড় করে বললাম,

—” আসলেই একটা অসভ্য, অভদ্র। ”

উনি হয়তো শুনতে পেলেন কথাটা। তবে এ নিয়ে কিছু বললেন না। হাসলেন মাত্র। একটু চুপ থেকে বললেন,

—” ঘুমতাকুরে মিস? যাও তো আমার জন্য কফি বানিয়ে আনো।”

আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম উনার দিকে। সকালেও তো উনার কাছে আমার বানানো কফি বিস্বাদ লাগছিল। এখন আবার চাচ্ছেন কেন? বেশ খোঁচা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললাম,

—” আমার কফি তো বিস্বাদ হয়। আপনি আমার কফি খাবেন কিভাবে?”

উনি চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস টেনে বললেন,

—” আমার বিস্বাদময় জিনিস বেশি পছন্দ।”

তার কথাটা শুনেও যেন শুনলাম না। একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনিও কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। পরপরই গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

—” জাস্ট ডু ওয়াট আম সেয়িং মিস! আদার ওয়াইস আই উইল ইট ইউ!”

আরেক দফা চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেল আমার। উনি এগুলো কি বলছেন? আমাকে খেয়ে ফেলবেন? কিভাবে? মানুষকে মানুষ খায় নাকি? ভাবতেই উনার দিকে তাকালাম। উনি কেমন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। যেন চোখ দিয়েই শেষ করে ফেলবেন আমায়। আমিও কম কিসের। উনাকে উনার কথায় ফাসানোর জন্য বলে উঠলাম,

—” মানুষকে মানুষ কিভাবে খায় রেয়ান ভাই?”

উনি রাগলেন না। বরং শান্ত স্বরে বললেন,

—” যেভাবে একটা মানুষকে অন্য মানুষ পিটিয়ে একটা নদীতে ফেলে দেওয়া যায়! তবে আমার ক্ষেত্রে অন্যটা হবে। আমি শুধু অন্য একজন মানুষকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেবো।”

মনে মনে শুকনো ঢোক গিললাম আমি। এ তো বড় সাংঘাতিক ছেলে। যদি সত্যি সত্যি ছাদ থেকে ফেলে দেয়? দিতেও পারে। উনার দ্বারা বিশ্বাস নেই। মনে মনে শুকনো ঢোক গিললাম। কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম কফি বানাতে!

কফি বানানো শেষে ছাদে এসে একদম তার পেছন বরাবর দাঁড়ালাম। পরপরই উনার একটু পাশে কফির মগটা রেখে যেই যেতে নেবো তখন উনার ভারী কণ্ঠ,

—” ডোন্ট ইউ ডেয়ার! ছাদ থেকে যাওয়ার চিন্তাও করবে না। আমার পাশে দাঁড়াও। সঙ্গ দাও আমায়।”

ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার বিষয়টা এখনও মাথায় ছিল আমার মধ্যে। তাই কথা না বাড়িয়ে উনার পাশে দাঁড়ালাম। উনিও কিছু বলছেন না, না বলছি আমি।

সুর্যের অস্ত যাওয়ার আগ মুহুর্ত এটি। অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছেন উনি। একটু পর পর কফির মগে চুমুক দিচ্ছেন। আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে। সূর্যের কিরণ সরাসরি মুখে পরছে উনার। জ্বলজ্বল করছে উনার সারামুখ। ডান ভ্রুটা অনেকটা উঠানো, চোখ ছোট ছোট করে রেখেছেন, চোখের কোণের তিলটাও স্পষ্ট! ঠোঁটে বাঁকা হাসিটাও লেগে আছে তার। সব মিলিয়ে দারুণ একটা মুহুর্ত!

___________________

রাতে সবাই সোফায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। সাথে আবদ্ধ, দীঘি, সবুজ ভাইয়া আর রেয়ানও আছেন। রেয়ান মূলত আমাদের সাথে নন, উনি উনার ফোনের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। সেই কখন থেকে ফোনেই কি যেন করছেন উনি। আশেপাশে কি হচ্ছে তার খেয়াল আছে নাকি? আবদ্ধও এক! বিরক্ত নিয়ে চেয়ে আছে নিচের দিকে। দীঘি হাতের কনুই দিয়ে তার পেটে খোঁচাতেই বারবার রেগে তাকাচ্ছে দীঘির দিকে। এদিকে মেজো চাচ্চু হঠাৎ বলে উঠেন,

—” এতিদিন পর যেহেতু আমরা এক সাথে হয়েছি, আমি ভাবছি সবাই মিলে এখানেরই কোথাও ঘুরতে যাবো। আর তা কালই! কারো কি দ্বিমত আছে এখানে?”

সবাই খুশিতে উল্লাসিত হয়ে উঠলাম। এর অর্থ কারো আপত্তি নেই। ইয়াসিন ভাইয়া তো পারলে নেচে দেখান। মেজো চাচ্চু এমন কথা বলার পরপরই আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলেছেন,

—” বুঝলি মীরু, ঘুরতে গিয়ে দেখিস কোথাও কোনো সুন্দরী মেয়ে পাস কিনা। একটু সেটিং করতাম। মেহেরুনকেও বলে দিস। তোরা হেল্প করবি আমায়। এবার একটা মেয়ে পোটিয়েই ফেলবো, বুঝলি!”

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,

—” জীবনেও না! ”

ইয়াসিন ভাইয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। তবে তা ক্ষণিকের জন্য। পরপরই উনি হাসি মুখে চলে গেলেন সবুজ ভাইয়ার কাছে। মূলত সবুজ ভাইয়ার মাথা খাবেন এখন। বেচারা ইয়াসিন ভাইয়ার জন্য মাঝে মাঝে মায়াও কাজ করে। এতকিছু করেও উনার একটা গার্লফ্রেন্ড জুটে না কপালে! ইসসস! কি দুঃক্ষের ব্যাপার!

এদিকে দীঘি আবদ্ধকে বিরক্ত করতে ব্যস্ত। ঘুড়তে যাওয়ার কথা উঠার পর থেকে তো আরও বেশি! এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে আবদ্ধ মেজো চাচীকে বলে চলে যায় রুমে। পিছন পিছন দীঘিও যায়। আর রেয়ান ভাইয়ের কথা তো না বললেই নয়। সেই প্রথম থেকে উনি উনার ফোন নিয়েই ব্যস্ত। ঘুড়তে যাওয়ার কথা হয়তো শুনেনও নি উনি। মাঝে মাঝে বড্ড মন চায় উনার ফোনটা আফগানিস্তানে ফেলে আসি। ময়লা আবর্জনা একটা!

__________________

চলবে…
(রি-চেক করিনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যেহেতু পরপর তিনদিন গল্প দিয়েছি, তাই ছোট হলেও মানিয়ে নিন। সবাইকে ধনেপাতা😒)
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here