#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১৯
.
খোলা আকাশের নিচে, হৃদের তীর ঘেঁষে হাঁটছে আবদ্ধ আর দীঘি। মাঝে মাঝে দীঘির খিলখিল করা হাসির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে চারপাশ জুড়ে। আবদ্ধ সেদিকে তাকিয়ে রয় গম্ভীর মুখো হয়ে। সেদিকে চোখ পরতেই হাসি মিলিয়ে যায় দীঘির। উঁচু কণ্ঠে বলে,
— “ওই নিরামিশ! মুখে হাসি ফুটান। আপনাকে এভাবে দেখতে একদম ভালো লাগছে না আমার।”
আবদ্ধ দাম্ভিক কণ্ঠে বলল,
— “তো? তোমার ভালো লাগা না লাগা দিয়ে আমার কি আসে যায়?”
দীঘি দাঁত কটমট করে বলল,
— “কি আসে যায় মানে? আমি আপনার বউ। আপনার সহধর্মিণী! আমাকে দিয়েই তো আপনার সবকিছু।”
আবদ্ধ বিড়বিড় করে বলে উঠল,
— “সহধর্মিণী না বলে ডাইনী বলা উচিত। উহু! না! তুমি হলে একটা আস্ত রক্তচোষা কন্যা।”
দীঘি ঠিক ভাবে শুনলো না কথাটা। ভ্রু কুঁচকে বলল,
— “কি বললেন? ঠিক শুনতে পাই নি আমি। আবার বলুন।”
— “তোমার মনে হয়না তুমি বেশি বকবক করছো?”
দীঘি হেসে বলল,
— “না। তবে আপনার জন্য আজকাল বকবক করতে হচ্ছে। ইউ নো, আপনি একটা গোমড়া মুখো। না পারতে কথা বলেন। তাই আপনাকে একটু কথা শিখাচ্ছিলাম আরকি।”
বলেই দাঁত বের করে হাসলো দীঘি। আবদ্ধ আবারো বিড়বিড় করে বলল,
— “ডিসগাস্টিং!”
দীঘি শুনতে পেলো কথাটা। তবে পাত্তা দিলো না অতো। আবদ্ধ আর পারেই বা কি? তার রয়েছে শুধু বিরক্তি, বিরক্তি আর বিরক্তি! আবদ্ধকে টেনে নিয়ে পা দিয়ে হৃদের পানি স্পর্শ করতে লাগলো সে। শীতের মাঝে পানিগুলো যেন ফ্রিজের ঠান্ডা পানির মতো। মাত্রাধিক ঠান্ডা! আবদ্ধ থমথমে গলায় বলল,
— “পানিগুলো অনেক ঠান্ডা। নতুন পরিবেশে এমন ঠান্ডা পানিতে পা ভেঁজানো উচিত না। পরে দেখা যাবে ইয়াসিনের মতো ঠান্ডা লেগে গেছে।”
দীঘি ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো আবদ্ধের দিকে। মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলল,
— “বাহঃ! আপনি তো দেখি আমার জন্য চিন্তাও করেন। উফফ! এত ভালুবাসা আমি কোথায় রাখি বলুন তো?”
আবদ্ধ দীঘির দিকে একটু ঝুঁকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
— “শোনো দীঘি! আমি তোমার কথা না আমার কথা বলেছি। মানে, ইয়াসিনের মতো আমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এটা। তাই নিজের ভুল সুধরে নাও।”
সোজা হয়ে দাঁড়ালো আবদ্ধ। কত বড় অসভ্য, অভদ্র সে! নিজের বউয়ের চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করছে। বান্দর! রাগে শরীর ঝিমঝিম করে উঠল দীঘির। দ্রুত সামলে নিলো নিজেকে। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
— “নিজের চিন্তা নিজে করছেন? বুড়ো বয়সেও এত কি চিন্তা নিজের?”
— “মানে? আমি বুড়ো? লাইক সিরিয়াসলি?”
দীঘি জবাব দিলো না। জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। অন্যদিকে ফিরে হাঁটতে লাগলো। আবদ্ধ বার কয়েকবার ডাক দিলেও ফিরে চাইলো না সে। বাধ্য আবদ্ধ দীঘির কাছে গিয়ে তার হাত শক্ত করে টেনে ধরল। নিরবে দীঘিকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো লেকের তীর ঘেঁষে। আর দীঘি, প্রথমে অভিমান করলেও এখন একরাশ হাসি নিয়ে আবদ্ধের বাহু জড়িয়ে ধরেছে। আবদ্ধের পায়ের সাথে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছে।
__________________
দুপুর ৩টা বেজে ২৪মিনিট। খাবার খাওয়া শেষে আপাতত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। যাওয়ার কথা শুনতেই ইয়াসিন ভাইয়ার মুখ তেঁতো হয়ে উঠেছে। মুখ কুঁচকে রেখেছেন উনি। হঠাৎ রেস্টুরেন্টের বাহিরের দিকটা ইশারা করে খুশি হয়ে বলে উঠলেন,
— “ওয়াও! দেখ, দেখ বাহিরে ফানুস উড়ানো হচ্ছে। চল আমরাও উড়াই।”
বলতে বলতেই সে চলে গেল ছোট মাঠটায়। আমরা সবাই একসাথে তাকালাম ওখানাটায়। সত্যিই ফানুস উড়ানো হচ্ছে মাঠে। অনেকেই উড়াচ্ছেন সেখানে। হয়তো রেস্টুরেন্টের কর্তৃপক্ষ এই আয়োজন করেছেন। আমি হাসি-মুখে এগিয়ে গেলাম ওদিকটায়। রেস্টুরেন্টের দরজার কাছে পৌঁছাতেই আবারো পেছন ফিরে তাকালাম আমি। সবাই ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে মাঠে চলে গেছেন। একমাত্র রেয়ান ছাড়া! উনি চেয়ারে বসে হাত দু’টো টেবিলে রেখে গভীর মনোযোগে ফোন চালাচ্ছেন। এরুপ দৃশ্য দেখা মাত্রই ভ্রু কুঁচকে এলো আমার। উনার কি আর কোনো কাজ নেই? মুখটাকে গম্ভীর করে সদা এই ফোন নিয়ে বসে থাকেন। এখনও বসে আছেন! উনার কি খেয়াল নেই সবাই মাঠে চলে গেছি আমরা? বিরক্তি নিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম উনার দিকে। কিছু বলব তখনই উনার ভারী কণ্ঠ,
— “ওয়াট? এখানে কি? বাহিরে সবার কাছে যাও।”
ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো আমার। উনার তাহলে খেয়াল আছে সবাই মাঠে চলে গেছে। তাহলে উনি যাচ্ছেন না কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— “আপনি যাবেন না? বসে আছেন যে?”
উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন। উঠে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললেন,
— “আমার যাওয়া না যাওয়া দিয়ে তোমার কি আসে যায়? তুমি কি আমার সাথে একসাথে যেতে চাইছো? কেন?”
আমি হচকচিয়ে গেলাম। কি বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। খানিক্ষণ আমতা আমতা করে বললাম,
— “আশ্চর্য! আমি কেন আপনার সাথে যেতে চাইবো? সবাই চলে গেলেও আপনাকে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেছি মাত্র। এতে এত জেরা করার কি আছে?”
— “তাই?”
বাঁকা হাসিটা যেন আরো তীব্র হলো তার। পকেটে ফোনটা রেখে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন মাঠের কাছে। চাচ্চুদের কাছে আসতেই ছেঁড়ে দিলেন হাত। ভাগ্যক্রমে উনার হাত ধরাটা কেউ খেয়াল করেনি তেমন। সবাই যার যার মতো আনন্দ করতে ব্যস্ত। আমি একপাশে দাঁড়িয়ে ওদের আনন্দ দেখছি। রেয়ান কোথায় যেন চলে গেছেন। আশপাশে চোখ বুলিয়ে উনাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। পেয়েও গেলাম সাথে সাথে। উনি ফানুস বিক্রেতার কাছ থেকে একটা ফানুস নিয়ে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। কাছে আসতেই মুচকি হেসে বললেন,
— “ফানুস উড়াবে?”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম আমি। আমার খুশি আর উত্তেজনা দেখে উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। কানের কাছে ঝুঁকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
— “এত উত্তেজিত হচ্ছো কেন? মুখ টমেটোর মতো লাল হয়ে যাচ্ছে। একদম পুতুল পুতুল লাগছে… মরুভূমি ইউর লুকিং ডেম কিউট দেন আই থট!”
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম আমি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি বাঁকা হাসছেন। আমার দিকে ফানুস এগিয়ে দিতেই সেটার এক দিক ধরলাম আমি। আর অন্যদিক ধরলেন উনি। দু’জনে একসাথে উড়ালাম ফানুসটা। যখন ফানুসটা তর তর করে উড়ে যাচ্ছিল আকাশে, তখন মুখের হাসিটা তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছিল আমার। আর সে! বেহায়ার মতো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে। চোখ ফেরাচ্ছিলেন না মোটেও!
____________________
চলবে…
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ছোট হওয়ার জন্য সরি। মাথা ভীষণ ব্যথা করছে। এতটুকু অনেক কষ্টে লিখেছি। তাই কেউ ছোট বলে লজ্জা দিবেন না। ভালোবাসা রইল।)