জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ৫৩-৫৫

0
315

#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৩+54+55
.

সৌহার্দ্যর প্রশ্ন শুনে তুর্বী মুহূর্তেই থমকে গেলো। এই প্রশ্নটা ওর মন আর মস্তিষ্কে ভীষণভাবে ধাক্কা দিল। আমাকে জীবনে এমন অনেক প্রশ্ন থাকে যার উত্তর আমাদের মন জানে কিন্তু মস্তিষ্ক মানতে চান না। সত্যিই কী তুর্বী ভালোবাসে স‍ৌহার্দ্যকে? তুর্বীর মস্তিষ্ক বলছে এই প্রশ্নের উত্তর ওর কাছে এখনো ধোঁয়াশা। কিন্তু মন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলছে যে ‘না’, এই প্রশ্নের উত্তর ওর জানা, স্পষ্টভাবে জানা। আজ যেনো মস্তিষ্কের চেয়েও মন বেশী দাপটের সাথে তার কথা জানাচ্ছে তুর্বীকে। এসব ভাবতে ভাবতেই সৌহার্দ্য বলে উঠল,

” কী হল বল? চুপ থাকলে তো হবে না তুর। ও সরি তুর্বী। তুমি আমার ওপর অধিকার খাটাবে। আমি কার সাথে মিশবো সেটা নিয়ে তদারকি করবে। আমার পার্সোনাল লাইফেও নাক গলাবে। অথচ একটা সময় ছিলো যখন আমাদের সো কল্ড রিলেশনশীপ চলছিল। তখনতো আমার গায়ে কেউ চিপকে থাকলেও তোমার যায় আসতো না তাইনা? আমাকে নিয়ে তোমার কোন ইন্টারেস্টও ছিলোনা। কজ ইউ ডিডেন্ট লাভ মি। আর এখন তো আমাদের কোন সম্পর্কও নেই। তাহলে এখন তোমার এতো প্রবলেম কীসের? বাই দা ওয়ে, এটা আবার জেলাসির এক্সপিরিমেন্ট না তো?”

তুর্বী অবাক কন্ঠে বলল,

” সৌহার্দ্য?”

সৌহার্দ্য হালকা হেসে বলল,

” হোয়াট? প্রেমের এক্সপিরিমেন্ট করতে পারলে জেলাসির এক্সপিরিয়েন্স করাটা কী খুব বেশি অস্বাভাবিক, মিস? আমার তো মনে হয় তুমি পৃথিবীর সব কিছু নিয়েই এক্সপিরিমেন্ট করতে প্রস্তুত আছো।”

তুর্বী ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। ওর সবকথাই জেনো এই মুহূর্তে কন্ঠনালিতে আটকে গেছে। সৌহার্দ্যও যে এভাবে মনে আঘাত দিয়ে দিয়ে কথা বলতে জানে সেটা তুর্বীর জানা ছিলোনা। কান্নাগুলো ভেতরে জমে একপ্রকার দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে আজ। আচ্ছা সৌহার্দ্যর নরমাল এই কথাগুলোতে ওর কষ্ট এতো কেনো হচ্ছে? তবে সত্যিই কী ভালোবাসে এই লোকটাকে। তা না হলে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হবে? কেন সৌহার্দ্যর সামান্য কটু কথা ওকে দুমড়ে-মুচড়ে দেবে? কেন সৌহার্দ্য ওর জন্যে এতোটা মূল্যবান হবে। এটা কী ভালোবাসা না? তুর্বী প্রচন্ড কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” সৌহার্দ্য আমার মনে হয় আমি তোমাকে..”

কিন্তু পেছন থেকে ডাক পরায় ওরা দুজনেই তাকাল। দোলা ওরা ডাকছে ওদের। সৌহার্দ্য একপলক তুর্বীর দিকে তাকিয়ে চলে গেল। তুর্বী ডাকতে চেয়েও ডাকতে পারল না। চোখ ভিজে উঠল ওর। কী হচ্ছে ইদানীং এসব? এগুলো কেমন অনুভূতি? এরকম তো আগে কখনও হতোনা? গত দু-বছর সৌহার্দ্যকে রোজ মনে পরলেও এরকম কষ্ট হতোনা যতটা গত এক সপ্তাহ ধরে ওর হচ্ছে। ও কী চায় নিজেই বুঝতে পারছে না আবার যা হচ্ছে তা মানতেও পারছেনা। কী করবে এখন ও? আর ওর চোখ দিয়ে এতো জল কেন পরছে? এতো ছিঁচকাঁদুনে কবে থেকে হলো ও? অদ্ভুত!

___________

বিকেলের দিকে তুর্বী, রিখিয়া আর শাফিন গ্রামে ফিরল। সৌহার্দ্য আর বিহানকে ইনভাইট করেছে শাফিন। এবং ওদের কালকেই চলে আসার জন্যে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেছে। ওরা বলেছেও আসবে। আসার সময় বিহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রিখিয়ার দিকে। রিখিয়া শুধু ভেবে চলেছে ও কী করবে? কোন দিকে যাবে ও এখন? এই মুহূর্তে ওর কি করা উচিত? ওদেরকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে শাফিন চলে গেল। রিখিয়া আর তুর্বী দুজনেই অন্যমনষ্ক হয়ে বাড়িতে ঢুকলো। দুজনের মনের মধ্যেই যে দুরকমের চিন্তা কাজ করছে। ওদের দুজনেরই ধ্যান ভাঙলো রিখিয়া আর শাফিনের মায়ের ডাকে। শাফিনের মা বলল,

” ওহ যাক তোরা চলে এসছিস? এই দেখতো রিখিয়ার জন্যে এই হারটা এনেছি। বিয়ের দিন পড়ার জন্যে।”

বলে রিখিয়াকে ধরে বসিয়ে গলায় হারটা পরিয়ে দেখতে লাগল। রিখিয়া তাকাল ওনার দিকে। চোখেমুখে কত খুশী! কত আনন্দ! দু-দিন পর তার ছেলের বিয়ে! এই আনন্দ ওর নষ্ট করে দেবে? তুর্বী অনুভূতিহীন ভাবে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। ওর মন-মস্তিস্ক কিছুই কাজ করতে চাইছেনা এখন। কিছুক্ষণ থেকে সন্ধ্যার দিকে শাফিনের মা চলে গেলেন। সন্ধ্যার পর থেকে রিখিয়ার পুরোটা সময় নিজের পরিবারের মানুষগুলোর খুশি দেখছিল। জাহানারা বারবার রিখিয়াকে কখন কী পরাবে? কী কী হবে সেসব নিয়ে কথাবার্তা বলছিল, সে-কি উৎসাহ তার। রেজাউল একে ওকে ফোন দিচ্ছেন। বেশ ভালো আছেন এখন উনি। ওর ভাই ভাবীও খুব আন্তরিক হয়ে সবকিছু করছে। ওনাদের মধ্যেও সেই উচ্ছাস দেখা দিচ্ছে। এসব রিখিয়ার ভেতরটা গুড়িয়ে গেল। এতক্ষণ যেটুকু ভেবেছিল সেটুকুও মুছে ফেলল মন থেকে। কী ভাবছিল ও? শুধু নিজের কথাই? দু দুটো পরিবারের আশা-ভরসা, আনন্দ, সম্মান সবকিছুই এই বিয়েকে ঘিরে। কত খুশি এই দুই পরিবারের মানুষগুলো। ও পারবেনা এতোটা স্বার্থপর হতে। কখনও না। রিখিয়াকে এভাবে মলিন মুখে বসে থাকতে দেখে রেজাউল ইসলাম এসে মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত রেখে বললেন,

” তুমি খুশিতো মা?”

রিখিয়া চোখ তুলে তাকাল নিজের বাবার দিকে তারপর মলিন হেসে বলল,

” আমি খুব খুশি বাবা।”

রেজাউল ইসলাম হেসে রিখিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন। রিখিয়া বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল। সত্যিই মানুষ খুব অদ্ভুত, বুকে কষ্টের বিশাল এক পাহাড় রেখে কত সহজেই কৃত্রিম হাসি হেসে বলতে পারে, আমি ভালো আছি, খুশি আছি। মানুষ সত্যিই রহস্যময়। এরা ছলনাপ্রিয়। নিজের অনুভূতিকে নিজের মধ্যেই পুষে রাখতে বেশি পছন্দ করে। হোমো স্যাপিয়েন্স নামক এই প্রাণীটির হাসির আড়ালে থাকা কান্না, আর কান্নার আড়ালে থাকা হাসিকে শনাক্ত করা হয়তো পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটি।

রিখিয়া বিছানা গুছিয়ে বসতেই তুর্বী এসে রাগ নিয়ে বসল বিছানাতে। তারপর রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুই এই বিয়েটা করবি-ই?”

রিখিয়া ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” করতে হবে তুর। এখন এই অবস্থায় আর পেছন ফিরে তাকানো সম্ভব নয়। আমি বিয়ে করছি। আর এতেই সবার ভালো হবে।”

তুর্বী ভ্রু কুচকে বলল,

” আর তোর?”

রিখিয়া তাচ্ছিল্যের এক হাসি হেসে বলল,

” আমার কথা ছাড়ো!”

তুর্বী এবার রেগে বালিশটা সাইডে ছুড়ে রেখে বলল,

” ছাড়বো কেন? মরে যাবি তুই কালকে? রিখু ছাড়ো বললেই ছাড়া যায়না। বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে কী হবে? দু-দিন হাঙ্গামা হবে। পাড়া-প্রতিবেশি কিছুদিন এটা-ওটা বলবে। কিন্তু আলটিমেটলি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই বিয়েটা করলে তোদের তিনজনেরই জীবন শেষ হয়ে।”

রিখিয়া মাথা চেপে ধরে বলল,

” তুর প্লিজ! আমি অনেক কষ্টে, নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে মনকে একদিকে স্হির করেছি। আমাকে আর দ্বিধায় ফেলোনা। প্লিজ! আমি আর পারছিনা। সত্যিই আর পারছিনা।”

বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল রিখিয়া। তুর্বী রিখিয়ার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাইরে চলে গেলো। সত্যিই রিখিয়ার ওপর মানসিক চাপটা বড্ড বেশি পরে যাচ্ছে। একটা মেয়ে আর কত সহ্য করবে।

___________

বিহান খাটে হেলান দিয়ে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। সৌহার্দ্য ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে বিহানের দিকে একপলক তাকালো। টাওয়েলটা রেখে দিয়ে বিহানের পাশ দিয়ে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বিহানের দিকে। তারপর বলল,

” তো কী ঠিক করলি? সত্যিই তুই কিচ্ছু করবিনা?”

বিহান কপাল থেকে হাত সরিয়ে সৌহার্দ্য দিকে তাকাতে বলল,

” আমি আগেই বলেছি আমার হাতে আর কিছুই নেই। সবটা রিখিয়ার হাতে। ও যা চাইবে সেটাই হবে।”

” তোর কী মনে হয় ওর আর কোন নিজস্ব চাওয়া আছে? ও যা করবে ওর আর শাফিনের পরিবারের কথা ভেবেই করবে।”

” তাহলে আমিও ওদের ক‍থাই ভাবব।”

সৌহার্দ্য রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলল না। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার পর বিহান বলল,

” কাল যাবি না ওখানে?”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

” তুই সত্যিই যেতে চাস?”

বিহান ঠোঁটে ক্লান্ত এক হাসি ফুটিয়ে বলল,

” হুম চাইতো! ওকে হলুদ শাড়িতে কাঁচা ফুলের সাজে কেমন লাগে, মেহেদী রাঙা হাতদুটো কেমন লাগে, আলতা রাঙা পা দুটো কেমন লাগে, লাল শাড়িতে বউয়ের সাজে কেমন লাগে সেটা দেখার বড্ড লোভ হচ্ছে। এরপর তো ওর দিকে ওভাবে তাকানোর অধিকার আমার থাকবেনা। শেষবারের মত মনভরে ওকে দেখার জন্যে হলেও যাবো।”

” যদি ওকে দেখে ওকে পাওয়ার ইচ্ছে জেগে ওঠে মনে?”

” ভালোবাসলে পাওয়ার ইচ্ছে করতে নেই। শুধু ভালোবাসার মানুষটার ভালো রাখার চেষ্টা করতে হয়। হোক কাছে টেনে কিংবা দূরে সরিয়ে দিয়ে।”

” এতোটা ভালোবাসতে কবে থেকে শিখলি?”

” দিন-ক্ষণ গুনে রাখিনি।”

সৌহার্দ্য বিহানের মাথায় হাত রেখে বলল,

” অনেক বকবকর করেছিস এবার ঘুমো। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।”

বলে সৌহার্দ্য বিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বিহানও চোখ বন্ধ করে আছে। ঘুমানোটা সত্যিই খুব প্রয়োজন এখন।

___________

তুর্বী নদীর পারে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। চাঁদের আলোতে হালকা আলোকিত চারপাশ। নদীর জল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা শুধু কলকল আওয়াজ আসছে। মনটা ভীষণ খারাপ। একেতো রিখিয়ার এরকম অবস্থা তারওপর সৌহার্দ্যর প্রতি ওর অনুভূতি। সৌহার্দ্যর সাথে কাটানো সব মুহূর্তেগুলো খুব বেশি মনে পরছে। SR এর সাথে ঝগড়া, ওদের প্রথম দেখা, SR এর ওকে কিডন্যাপ করা, সৌহার্দ্যর ওর বস হয়ে আসা, এরপর ওদের রিলেশন, সৌহার্দ্যর ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরা, ওর সৌহার্দ্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় সৌহার্দ্যর সেই অসহায় চাহনী, ছলছলে চোখ। সব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তুর্বী। সত্যিই ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল ছেলেটাকে। তাই হয়তো আজ সেই কষ্টটা ও ফেরত পাচ্ছে। রিখিয়া বলেছিল তুমি যাকে ভালোবাসবে তার কথাই সারাক্ষণ মাথায় ঘুরবে, না চাইতেও তোমার ভাবনায় সারাক্ষণ তার যাওয়া আসা চলবে, তার জন্যে তুমি ফিল করবে, তার কষ্টে তুমি কষ্ট পাবে, তার দেওয়া সামান্য আঘাতও তোমাকে শেষ করে দেবে, তাকে তুমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবেনা। এখন তুর্বী বুঝে গেছে ও ভালোবেসে ফেলেছে সৌহার্দ্যকে। এই দু-বছরে বারবার সৌহার্দ্যকে মনে পরাটা শুধু মায়ার জন্যে ছিলোনা। ভালোবাসা ছিল। হ্যাঁ তুর্বীও আজ ভালোবেসেছে। কাউকে ভীষণভাবে ভালোবেসেছে। ভালোবেসে ফেলেছে সৌহার্দ্য নামক পুরুষটিকে।

#চলবে…#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৪
.

ভালোবাসা! যার নির্দিষ্ট কোনরকম কোন সজ্ঞা নেই, না আছে কোন ব্যাখ্যা। ভালোবাসা একেকজনের কাছে একেকরকম হয়। কিন্তু ভালোবাসলে কখনও না কখনও মন ঠিক বলে ওঠে ‘ভালোবাসি’। কারো মন খুব তাড়াতাড়ি বলে, কারো খুবই দেরীতে। ঠিক যেরকম তুর্বীর মন আজ চিৎকার করে বলছে, ‘ভালোবাসি। ভালোবাসি স‍ৌহার্দ্যকে।’ হঠাৎই একটু জোরে বাতাস বইতে শুরু করল। চোখ বন্ধ করে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সেই বাতাসকে অনুভব করল তুর্বী। ভালোতো অনেক আগেই বেসে ফেলেছিল। কিন্তু আজ সেই ভালোবাসাকে মন খুলে অনুভবও করতে পারছে। জীবনটাকে কোনদিনও ও সিরিয়াসলি নেয়নি। প্রচন্ড এক্সপেরিমেন্টাল একটা মেয়ে ছিল। এসব প্রেম-ভালোবাসা ওর দু-দিনের খেলা ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না। কিন্তু এখন সময়ের সাথে সাথে নিজেকে সিরিয়াস করে নেওয়ার পরেই হয়তো ভালোবাসা নামক অনুভূতি বুঝতে সক্ষম হলো ওর মন। কিন্তু এখন কী করা উচিত ওর? সৌহার্দ্যকে বলবে নিজের মনের কথা? খুব বেশি দেরী হয়ে যায়নি তো? সৌহার্দ্য কী মেনে নেবে ওকে আবার? সৌহার্দ্যর যে বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে তারবেলা? সৌহার্দ্যকে হঠাৎই ভীষণ মিস করছে তুর্বী। কালতো আসবে ওরা। কিন্তু তবুও একটাবার সৌহার্দ্যর গলা শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। বেশিকিছু না ভেবে সৌহার্দ্যকে ফোন করল।
বিহানকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল সৌহার্দ্য। তুর্বীর কথাই ভাবছিল। আজ তুর্বীর ওর ওপর ওরকম অধিকার খাটানোটা নাড়িয়ে দিয়েছে সৌহার্দ্যকে। সদ্য সামলে নেওয়া মনটাকে আবার এলোমেলো করে দিয়েছে। এমন ব্যবহার কেন করল তুর্বী? তবে কী তুর্বী ওকে ভালোবেসে ফেলেছে? আজ তুর্বীর সাথে ওর ওভাবে কথা বলতে ভালো লাগেনি। কিন্তু ওর কী হয়েছিল নিজেই জানেনা। তবে ও তুর্বীর চোখে ওর প্রতি কিছুতো একটা দেখেছে আজ। এসব ভাবতে ভাবতেই ওর ফোন বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল যে তুর্বীরই ফোন। ও কিছুক্ষণ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে ফোনটা রিসিভ করল। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” হ্যাঁ বল!”

ওপাশ থেকে তুর্বী চুপ করে রইল কয়েকসেকেন্ড। সৌহার্দ্যও অপেক্ষায় আছে তুর্বীর উত্তরের। কিন্তু তুর্বীকে চুপ থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

” সমস্যা কী? চুপ করে আছো কেন? কল করেছ, কিছু বলবে?”

তুর্বী এবারও চুপ। ও ভাবছে একসময় এভাবেই কথা বলত তুর্বী সৌহার্দ্যর সাথে, ওদের সম্পর্ক চালাকালীন সময়ে। অসময়ে সৌহার্দ্য ফোন করলেই বলত, ‘কল দিলে কেন? কিছু বলবে?’ তখন সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলত, ‘ না, রাখছি।’ আজ ও বুঝতে পারছে মানুষ শুধু দরকারে-ই ফোন দেয়না। প্রিয় মানুষটার সাথে মনের কথাগুলো বলতেও ফোন করে। সত্যিই কত অদ্ভুত হয় মানুষ। নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে ঠিকই, কিন্তু সময় চলে গেলে। যদি সময় থাকতে মানুষ নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারত তাহলে জীবনটা কত সুন্দর হতো। নিজেকে স্বাভাবিক করে তুর্বী নিচু গলায় বলল,

” না আসলে__ রিখিয়া আর বিহানের ব্যাপারেই কিছু বলার ছিল।”

সৌহার্দ্য একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। এরপর দু আঙুল দিয়ে নিজের নাক ঘষে বলল,

” সেটাই! আমাকে তুমি নিশ্চয়ই প্রেম নিবেদন করতে ফোন করবে না। হুম বল, কী বলবে?”

সৌহার্দ্য কথাগুলো তুর্বীর মনে সুঁচের মত ফুটছে। চোখে জল চলে এলো ওর। এতো কঠোর কেনো হচ্ছে সৌহার্দ্য? এভাবে মনে আঘাত করতে ছেলেটা কবে থেকে শিখলো? চোখ মুছে তুর্বী বলল,

” ওদের ব্যাপারে কী করবে ভেবেছ?”

সৌহার্দ্য দরজা দিয়ে একবার ঘুমন্ত বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” এখন আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। আমাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব ছিল আমরা করেছি। এখন করার হলে একটা জিনিসই করা যায়, শাফিনকে সবটা বলে দেওয়া যায়।”

” সেটাও সম্ভব নয়। রিখিয়া সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ও বিয়ে করবে। এবার ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে পারব না। মেয়েটা আর কত মানসিক চাপ নেবে?”

” সেটাই! তাই আমাদের আর কিছুই করার নেই। ওপরওয়ালা ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে।”

তুর্বী চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎই ও বলে উঠল,

” আমাকে কী এখনও ভালোবাসো সৌহার্দ্য?”

সৌহার্দ্য চমকে উঠল। হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছে কেন? এই মেয়ে চায়টা কী? বারবার ওর ভেতরের অনুভূতিকে জাগিয়ে দিয়ে আবার আঘাত করে সেটাকে রক্তাক্ত করতে? ওকে কষ্ট দিয়ে কী শান্তি পায় তুর? পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলল,

” তাতে কী তোমার কিছু যায় আসে?”

” এভাবে কথা বলছ কেন? নরমাল একটা প্রশ্ন করেছি। তুমি দোলাকে বিয়ে করবে ঠিক করেছ। ওকে ভালোবাসো বা পছন্দ হয়েছে তাই? না-কি তোমার পরিবারের পছন্দ তাই?”

সৌহার্দ্য কঠিন গলায় বলল,

” আই থিংক দ্যাটস নান অফ ইউর বিজনেস।”

” সৌহার্দ্য আমি __”

সৌহার্দ্য ফোনটা রেখে দিল। ওর এসব কথা শুনতে অসহ্য লাগছে। ওর পুরোনো ঘায়ে বারবার ইচ্ছে করেই আঘাত করছে মেয়েটা। যা বলার সরাসরি বললেই তো হয়। এভাবে পুরোনো ঘা খোঁচানোর মানে কী? ওকে মানুষ মনে হয়না না-কি?
সৌহার্দ্য এভাবে ফোন রেখে দেওয়াতে তুর্বী মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো। ফোনটা রেখে দিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসে পরল ওখানে। আচ্ছা সেদিন যদি সৌহার্দ্যকে ফিরিয়ে না দিতো? যদি নিজের গোপন অনুভূতিকে সেদিনই খুঁজে পেত? তাহলে কী খুব ক্ষতি হত? আজ ওকে এভাবে কাঁদতে হতো? এরকম আবেগপ্রবণ ও কোনদিনও ছিলোনা। কিন্তু সময় ওকে এরকম তৈরী করে দিল! সত্যি সময় অনেক শক্তিমান!

__________

পরেরদিন সৌহার্দ্য আর বিহান গ্রামে এলো। সবার প্রথমে ওরা রিখিয়াদের বাড়িতে গিয়ে-ই উঠল। ওদের আসার খবর শুনে শাফিনও চলে এলো! বিকেলবেলা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে, আত্মীয়রাও সব আছে। বিয়েবাড়ি তাই স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়ে আছে চারপাশে। কিন্তু সৌহার্দ্য, তুর্বী, রিখিয়া, বিহান চারজনই চুপচাপ বসে আছে। চারজনেরই ভীষণরকম মন খারাপ। ওদের কারো মনেই কোন আনন্দ নেই। সবার সামনে চেষ্টা করেও মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না। ওদের ভেতরটা কীভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে শুধু ওরাই জানে। অথচ নিজেদের ভেতরকার এই তীব্র ব্যাথা কারো সামনে প্রকাশ করাও ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বললেন,

” কী ব্যাপার? পরশু বাড়িতে বিয়ে! আর আজ তোমরা এমন মুখ গোমড়া করে আছো কেন?”

এরপরই সবার নজর পরে ওদের দিকে। আর স্বভাবতই নানারকম প্রশ্ন করা শুরু করে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে বাধ্য হয়েই হাসিমুখে আড্ডায় অংশগ্রহণ করতে হল। রিখিয়া আর বিহান একটু পরপরই একে ওপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। সেই দৃষ্টিতে একেওপরকে হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রণা ছিল, ভেতরের সমস্ত কষ্টের আর্তনাদ ছিল। যে আর্তনাদ কেউ শুনতে পায়নি। মনের গহীনেই চাঁপা পরে গেল সেই চিৎকার। সারাবিকেল আড্ডা দেওয়ার পরে ঠিক করা হল যে, রাতে বিহান আর সৌহার্দ্য শাফিনদের বাড়িতেই থাকবে। রিখিয়াদের বাড়িটা ছোট। তারওপর এতো মেহমান আছে তাই এখানে থাকতে সমস্যা হবে। শাফিন ওদের দুজনের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করছে যেন ওরই বন্ধু। শাফিনের এরকম ব্যবহার সৌহার্দ্য আর বিহান দুজনকেই মুগ্ধ করেছে।

রিখিয়া মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শাফিন এসে মাথায় টোকা মারল। রিখিয়া ঘুরে তাকিয়ে দেখে শাফিন মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। শাফিন ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” কী হয়েছে? মন খারাপ কেন? এই বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে তাই? না-কি তোমার সেই ভালোবাসার মানুষটার কথা মনে পরছে।”

রিখিয়া শাফিনের দিকে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো,

” দুটোই।”

শাফিন রিখিয়ার দিকে কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,

” আমাদের বিয়ের পরও এরকমই ভালোবাসবে তাঁকে?”

রিখিয়া এবারেও কোন ভনিতা না করে বলল,

” ওনাকে ভোলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। কিন্তু আপনাকে ভালোবাসতে পারব কি-না। সেটা জানিনা। আপনার খারাপ লাগলেও এটা সত্যি ”

শাফিন কপালে স্লাইড করে হেসে বলল,

” আমি কিন্তু এই রাগ করিনি। সবটা জেনে বুঝেই রাজি হয়েছি আমি। তাই তুমি সারাজীবন তাকে ভালোবাসতেই পারো আমি না করব না। আমাকে ভালো না বাসলেও সমস্যা নেই। কিন্তু হ্যাঁ আমায় ভালোবাসতে কিন্তু বাঁধা দিতে পারবেনা। মনে থাকবে?”

রিখিয়া কিছুই বলল না শুধু মলিন একটা হাসি দিল। শাফিনও হেসে চলে গেল। এতক্ষণ দূর থেকে ওদের দেখছিল বিহান। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল ওর। মনে হচ্ছিল ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এখনই এতো কষ্ট হলে বাকিটা সময় কীকরে সহ্য করবে ও? রিখিয়ার চোখ ওর দিকে পরতেই। বিহান চোখ সরিয়ে নিলো। রিখিয়া এগিয়ে বিহানের কাছে গেল। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মলিন, লালচে মুখটার দিকে।অনেকটাই কষ্ট পেয়েছে হয়তো ছেলেটা। চোখ ছলছল করে উঠল ওর। অসহায় কন্ঠে বলল,

” ঠিক আছেন আপনি?”

বিহান চমকে তাকালো। দ্রুতই নিজেকে স্বাভাবিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ঠোঁটে কোনরকম জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,

” হুম? হ্যাঁ! ঠিক আজি আমি।”

রিখিয়া মাথা নিচু করে কম্পিত কন্ঠে বলল,

” আমাকে ক্ষমা করে দেবেন প্লিজ।”

বিহান রিখিয়ার হাত ধরে একদম নিজের সামনে আনলো। এরপর চোখদুটো নিজের হাতে যত্ন সহকারে মুছে দিয়ে বলল,

” তোমার কোন দোষ নেই রিখিয়া। কোন অন্যায় করোনি তুমি। বরং আমার করা অন্যায়ের ফল ভোগ করছ। ক্ষমার যোগ্য নই আমি। তবুও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

রিখিয়া করুণ চোখে তাকিয়ে রইল বিহানের দিকে। এরপর কিছু একটা ভেবে চোখ মুছে দ্রুত চলে গেল ওখানে থেকে। বিহান রিখিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরল একফোটা অশ্রুকণা।

__________

রাত বারোটা বাজে। গ্রামে রাত বারোটা মানেই মধ্যরাত! সৌহার্দ্য নদীর পারের মাচাটার ওপর বসে অপেক্ষা করছে তুর্বীর জন্যে। কিছুক্ষণ আগে হঠাৎই তুর্বী ওকে মেসেজ করেছে এখানে আসার জন্যে। কিছু একটা বলতে চায় ও। সৌহার্দ্য বেশ অবাক হয়েছে। এমন কী বলতে চায় তুর্বী যে এতো রাতে ডাকল ওকে? এসব ভাবতে ভাবতেই তুর্বী এসে হাজির হল ওখানে। হাটুতে দুহাত রেখে হাফাচ্ছে ও। সৌহার্দ্য মাচা থেকে নেমে ভ্রু কুচকে বলল,

” হঠাৎ এতো রাতে কেন ডাকতে কেন? কী হয়েছে?”

তুর্বী এখনও হাফাচ্ছে স‍ৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে। এতোটাই হাফাচ্ছে যে কথাই বলতে পারছেনা। শুধু তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে রেখেই হাত ভাজ করে বলল,

” কী হয়েছে বলবে? কুকুরে তাড়া করেছিল না-কি? এভাবে হাফাচ্ছো কেন? কিছু বলার থাকলে বল। না হলে আমি গেলাম।”

তুর্বী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা ঢোক গিলে হাফানো কন্ঠেই বলল,

” বিয়ে করবে আমাকে?”

#চলবে…#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৫
.

সৌহার্দ্য সম্পূর্ণ হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। তুর্বীর বলা কথাটা যেন ওর কানে বাজছে। ও ঠিক শুনেছে তো? তুর্বী একথা বলল? এটা হতে পারে? ভুল শোনেনি তো? হতেও তো পারে ও হ্যালুসিনেট করছে। ও অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,

” সরি?”

তুর্বী একটুও দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গেই বলল,

” আমায় বিয়ে করবে?”

সৌহার্দ্য বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ওর এখনো বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে তুর্বী একথা বলতে পারে। যেই মেয়েটা প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাসই করেনা। যে দু-বছর আগেও সৌহার্দ্যকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, বিয়ে করবেনা বলে। সৌহার্দ্যর কোন আকুতি-মিনতি যেই মেয়ের মন গলাতে পারেনি। সে আজ সোজা সৌহার্দ্যকে এসে বিয়ের কথা বলছে? এটা যেকারো পক্ষে বিশ্বাস করা কষ্টকর। এটা সত্যিই তুর্বী তো? ওর মা বলেছিল গ্রামে ভুতের উপদ্রব বেশি থাকে। এটা কোন ভুত-পেত্নী নয়তো? যে তুর্বীর ছদ্মবেশে এসছে? পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে মনে মনে বড়সর একটা গালি দিল এরকম উদ্ভট ভাবনার জন্যে। সৌহার্দ‍্যকে চুপ থাকতে দেখে তুর্বী বলে উঠল,

” কী হলো বল? বিয়ে করবে আমাকে।”

সৌহার্দ্যর মনে হল তুর্বীর শরীর ঠিক আছেতো? সজ্ঞানে বলছে এসব? ও তুর্বীর দিকে দু-কদম এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে আর গলায় হাত রেখে কিছু বলবে তার আগেই তুর্বী বলল,

” আমার মাথা-শরীর সব ঠিক আছে। আমি পাগলও হইনি আর আমাকে ভুতেও ধরেনি। আমি সুস্থ মস্তিষ্কে, সুস্থ শরীরে, সম্পূর্ণ সজ্ঞানে জানতে চাইছি তোমার কাছে। বিয়ে করবে আমাকে?”

সৌহার্দ্য বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তুর্বীর এই কথাগুলো শুনে ওর কীভাবে রিঅ্যাক্ট করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছেনা। ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। তুর্বী সৌহার্দ্যর হাত ধরে বলল,

” তুমিতো বলেছিলে যে তুমি ভালোবাসো আমাকে। তাহলে এতো সময় কেন নিচ্ছো? বলো?”

তুর্বীর কথাটা শুনে হঠাৎ করেই স‍‍ৌহার্দ্যর পুরোনো ঘা তাজা হয়ে উঠল। কী বলল তুর্বী? স‍ৌহার্দ্য ওকে ভালোবাসে। যখন এই একই কথা সৌহার্দ্য বারবার তুর্বীকে বলেছে তখনতো তুর্বীর কাছে তার কোন মূল্যই ছিলোনা। তবে আজ কেন? কিছু একটা ভেবে হালকা হেসে সৌহার্দ্য বলল,

” তুমি আর বিয়ে? বাহ! তা প্রেম, জেলাসীর পর এবার বিয়ে নিয়ে এক্সপিরিমেন্ট করার ইচ্ছে হল বুঝি? আই নো তোমার জন্যে কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু এই অপশনতো তোমার কাছে দু-বছর আগেই ছিলো। হঠাৎ আজ কেন? ও সরি,সরি আমিতো ভুলেই গেছিলাম যে তুমি নিজের মর্জির মালিক। কিন্তু বিয়েটা আমার কাছে কোনো ছেলেখেলা নয়। তাই অন্যকাউকে খুঁজে নাও।”

তুর্বী অবাক হয়ে গেল। সৌহার্দ্য কী বলছে এসব? এক্সপিরিমেন্ট? তাও বিয়ে নিয়ে। এরকমতো ও কোনদিন ভাবেও নি। ও কম্পিত কন্ঠে বলল,

” তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।”

” তাই? তাহলে ঠিক টা কী? তুমিই বল আমাকে? কেন বিয়ে করতে চাও আমাকে?”

তুর্বী এবার সৌহার্দ্যর চোখে চোখ রেখে বলল,

” ভালোবাসি তাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

সৌহার্দ্য থমকে গেল। তুর্বীর কথাটা শুনে ওর মস্তিষ্ক জমে গেল একপ্রকার। এটা কী বলে ফেলল তুর্বী? সত্যিই কী এটা বাস্তব? এরকমটা সত্যিই কোনদিন হওয়ার ছিল? বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে রইল ও। তুর্বী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্যর উত্তর না পেয়ে ও বলল,

” অনেক আগে থেকেই বাসি। কিন্তু বড্ড স্টুপিড ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারি। আই লাভ ইউ সো মাচ।”

সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই শব্দ কর‍ে হেসে উঠল। তুর্বী ভ্রু কুচকে ফেলল সৌহার্দ্যর হাসি দেখে। কিছুক্ষণ পর সৌহার্দ্য হাসি থামিয়ে বলল,

” সিরিয়াসলি? ভালোবাসো তুমি? তাও আমাকে? তো মিস তুর্বী, ছয় মাস আমার সাথে থেকে, এরপর দুইবছর আমার থেকে দূরে থেকেও যেটা ফিল করতে পারোনি। সেটা হঠাৎ করে এখন ফিল হচ্ছে? আমেজিং! তুমি বলেছিলে না? জগতে কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয়। ভালোবাসাও না। তাহলে আজ এসব বলার কোন মানেই হয়না।”

তুর্বী হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

” মানে?”

সৌহার্দ্য এবারও তাচ্ছিল্য মাখা হাসি দিয়ে বলল,

” মানে খুব সহজ। আজ তোমার মনে হচ্ছে তুমি ভালোবাসো আমাকে। কী গ্যারান্টি আছে যে হঠাৎ কালকে তোমার এই হঠাৎ জেগে ওঠা অনুভূতি মিলিয়ে যাবেনা? সব ভালোবাসা গায়েব হয়ে যাবেনা? তখন তো তুমি আবার আমাকে ফেলে চলে যাবে। কারণ তুমি তো শুধু নিজের কথাই ভাবো।”

সৌহার্দ্যর কথাগুলো শুনে তুর্বী স্হির হয়ে গেল একদম। সৌহার্দ্যর ওর প্রতি অনেক অভিমান জমে আছে সেটা ও জানতো। কিন্তু ওকে এভাবে বলবে ও ভাবতে পারেনি। সৌহার্দ্যর প্রতিটা কথা আজ ওকে ভেতর থেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। তুর্বীর এবার কান্না পেয়ে গেল। ও কান্নামিশ্রিত চোখে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। আজ সত্যিই কিছু বলার ভাষা নেই ওর। সৌহার্দ্য আবার বলল,

” তুমি ঠিক বলেছিলে তুর্বী। তুমি সমুদ্রের ঢেউয়ের মত। একেক সময় একেক আকার, একেক গতি, একেক প্যাটার্ন। তুমি নিজেও জানোনা তুমি কী চাও। যাই হোক অনেক রাত হয়েছে। যাও গিয়ে শুয়ে পরো।”

তুর্বী শান্ত গলায় বলল,

” আমি কিন্তু আমার উত্তর এখনো পাইনি সৌহার্দ্য।”

সৌহার্দ্য তুর্বীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

” আমার পক্ষে আর পেছনে ফিরে তাকানো সম্ভব না। আ’ম সরি।”

বলে সৌহার্দ্য চলে যেতে নিলেই তুর্বী সৌহার্দ্যর হাত খামচে ধরে কেঁদে দিয়ে বলল,

” আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি সৌহার্দ্য। এরকম করোনা প্লিজ। একটা সুযোগ দাও আমাকে। আমাদের বিয়ের পর যদি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসিনা তুমি আমাকে ছেড়ে দিও। আমি কিচ্ছু বলব না। বাট একবার সুযোগ তো দাও। ”

তুর্বীর কান্না সৌহার্দ্যকে ভীষণরকম অস্হির করে তুলল। ও দ্রুত তুর্বীর হাত ছাড়িয়ে বলল,

” বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো তুর্বী।”

বলে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল ওখান থেকে। তুর্বী ওখানেই বসে পরল আস্তে আস্তে। শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল ও। এরকমভাবে ও শেষ কেঁদেছিল যখন ওর মা মারা গেছিল। সৌহার্দ্যর এভাবে চলে যাওয়াটা ও মানতে পারছেনা কিছুতেই। সত্যিই কী সৌহার্দ্য আর চায় না ওকে? হারিয়ে ফেলবে চিরকালের মতো?অপরদিকে সৌহার্দ্যর চোখেও জল চলে এসছে। ও নিজেও জানেনা ও কেন এসব বলে এলো। আজকের দিনটার জন্যে কত অপেক্ষা করেছিল ও। তুর্বীর মুখে এই কথাগুলো শোনার জন্যে কত অস্হির হয়ে পরেছিল ও। কিন্তু আজ যখন তুর্বী ওকে কথাগুলো বলল তখন তো ওর তুর্বীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলা উচিত ছিল ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু ওর মন ওকে বলে উঠল যে, ও কী তুর্বীর হাতের পুতুল না-কি? তুর্বীর যখন মনে হবে ওকে ভালোবাসেনা, তখন ওকে ফেলে চলে যাবে। আবার দুই বছর পর হঠাৎ করে ওর মনে হল যে সৌহার্দ্যকে ভালোবাসে আর ওকে বিয়ে করতে চায়? আর সৌহার্দ্যও এককথায় মেনে নেবে সবটা? কিন্তু সেদিনতো সৌহার্দ্যর কোন অনুরোধ, কোন আকুতি তুর্বীর মন গলাতে পারেনি। সৌহার্দ্য কী এতোটাই সস্তা?

__________

কালকে রিখিয়া আর শাফিনের বিয়ে। সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে অনেক মানুষ আর হৈ চৈ। প্রচুর কাজও করতে হচ্ছে তাদের। সবাই ভীষণ ব্যস্ত। তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই বেশ ভোরবেলা উঠে পরেছে। আসলে দুজনের কেউই রাতে ঘুমাতে পারেনি। দুজনেই সারারাত কেঁদেছে। তবে একে ওপরের আড়ালে, নিঃশব্দে। চোখ লালচে হালকা ফুলে গেছে দুজনেরই। এই নিয়ে অনেকেই অনেক করেছিল কিন্তু ওরা কথা ঘুরিয়ে এড়িয়ে গেছে। সৌহার্দ্য আর বিহান বিকেলের দিকে এলো রিখিয়াদের বাড়িতে। এসে দেখল রিখিয়াকে মেহেদী পরাচ্ছে ওর রুমে আর পাশে তুর্বী বসে আছে। বসার ঘর থেকে ওদের দুজনকেই দেখা যাচ্ছে। তুর্বীকে দেখে চমকে উঠল সৌহার্দ্য। কী অবস্থা করেছে নিজের? চোখ-মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এতোটা ভালো কবে থেকে বাসতে শুরু করল? মাত্র কয়েকদিনের অবহেলাই ও সহ্য করতে পারছেনা? অথচ সৌহার্দ্যতো আড়াই বছর সহ্য করেছে। তুর্বীর সাথে চোখাচোখি হতেই সৌহার্দ্য সাথেসাথেই চোখ সরিয়ে কাজে মনোযোগ দিল। তুর্বী ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল শুধু। কেন এমন করছে সৌহার্দ্য? কী হতো ওকে আরেকটা সুযোগ দিলে? একই প্রশ্ন তো ও নিজেকেও করতে পারে। কী হতো সেদিন সৌহার্দ্যকে একটা সুযোগ দিলে? মেহেদী দেওয়া মেয়েটা রিখিয়া জিজ্ঞেস করল, বরের নাম কী? রিখিয়া আনমনেই বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বিহানের নাম বলে ফেলল। তুর্বীও অন্যমনষ্ক থাকায় খেয়াল করেনি। মেহেদী দিয়ে চলে যাওয়ার পর রিখিয়া তুর্বীকে বলল,

‘ সৌহার্দ্যর সাথে আমি একবার কথা বলব? দেখি আমি বোঝাতে পারি কি-না?”

তুর্বী উদাস চাহনী দিয়ে বলল,

” না, দু-বছর আগে আমি সেটাই করেছিলাম যেটা আমার ইচ্ছে হয়েছিল। আর এবার ওও সেটাই করবে যেটা ওর ইচ্ছে হবে।”

কথা বলতে বলতেই তুর্বীর চোখ পরল রিখিয়ার হাতে। ও অবাক হয়ে বলল,

‘ এটা কী রিখু?’

রিখিয়া হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল কারণ ওখানে বিহানের নাম লেখা। তুর্বী অবাক চোখে কিছুক্ষণ হাতের রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রিখিয়া হাত দিয়ে লেপ্টে দিতে গেলেই তুর্বী হাত ধরে ফেলে বলল,

” মন থেকে মুছে ফেলতে পারবি?”

রিখিয়া করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। অসহায় গলায় বলল,

” কেউ দেখলে খুব খারাপ হবে ব্যাপারটা।”

তুর্বী মেহেদীর টিউবটা নিয়ে ‘বিহান’ নামের চারপাশ দিয়ে এমনভাবে ডিজাইন করে দিল যাতে খুব গভীরভাবে না লক্ষ্য করলে বিহান নামটা দেখা না যায়। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বিহান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।

রাতে রিখিয়ার হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হল। স্টেজে একে একে সবাই ওকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। খানিকটা দূরে সৌহার্দ্য আর বিহান দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের। বিহান আজ হলুদ শাড়ি আর ফুলের সাজে নিজের ভালোবাসাকে প্রাণভরে দেখে নিচ্ছে। তুর্বীও আজ শাড়ি পরেছে।সৌহার্দ্যর চোখ আজ সরতেই চাইছেনা তুর্বীর থেকে। তুর্বীর মাঝেমাঝে এদিকেই তাকাচ্ছে ফলসরূপ চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। বিহান ব্যাপারটা খেয়াল করে বলল,

” এটা কেন করলি বলতো? সবচেয়ে বেশি কষ্ট তো তুই-ই পাচ্ছিস।”

সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” সব কেনোর উত্তর দেওয়া যায়না।”

বিহান কিছু বলল না। কী আর বলবে? কাল সারারাত অনেক বুঝেয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বিহান রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” আজ খুব সুন্দর লাগছে ওকে।”

সৌহার্দ্য কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিখিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা একদম অনুভূতিহীনভাবে বসে আছে। এমন মনে হচ্ছে একটা পুতুলকে সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ওরা হয়তো একে ওপরের ভাগ্যেই ছিলোনা। বুকে পাথর চেপে হলেও এই সত্যি সবাইকে মেনে নিতে হবে।

আজ বিয়ের আনন্দে সারাবাড়ি মেতে উঠলেও চারটি ভাঙা, বিদ্ধস্ত মন যে নিরবে ধুকে ধুকে মরছে সে খবর সবারই অজানা।

___________

রিখিয়া হলুদের অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। অনেক রাত হয়েছে এখন। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু রিখিয়ার বাড়ির সামনের মাটির রাস্তাটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একদৃষ্টিতে মুক্ত আকাশটা দেখছে। মন বারবার একটাই প্রশ্ন করছে। ওর সাথেই এরকম কেন হল? ওকেই কেন এই পরিস্থিতিতে পরতে হল? তখন পেছন থেকে ওর নাম ধরে কেউ ডাকতেই হালকা চমক উঠল রিখিয়া। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল বিহান দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, নাক আর চোখে লালচে ভাব। একদম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ও অবাক কন্ঠে বলল,

” আপনি এখানে?”

বিহান ভ্রু কুচকে বলল,

” এতো রাতে বাইরে কী করছ?”

রিখিয়া উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” ঘরে দম আটকে আসছিল। মরে যাচ্ছিলাম আমি।”

বিহান রিখিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

” তোমাকে একবার দেখার আশায় এসছিলাম। ভাবিনি এভাবে দেখা পেয়ে যাবো। কালকের পর হয়তো আর..”

বিহান আর কিছু বলতে পারল না। ওর গলা ধরে আসছে। রিখিয়া কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। বিহান বলল,

” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছিল?”

” সাজটা অন্যকারো জন্যে ছিলো?”

” কিন্তু আমিতো তোমারই।”

রিখিয়ার ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠছে। দ্রুত ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখতে চাইছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। ভেতরট জ্বলে যাচ্ছে ওর। বিহান কম্পিত কন্ঠে বলল,

” ভালো থেকো রিখিয়া।”

বলতে বলতে নিঃশব্দে কেঁদে দিল বিহান। রিখিয়া আর পারল না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফেলল বিহানকে। এরপর আওয়াজ করে কেঁদে দিল। বিহান চমকে গেল রিখিয়ার কান্না শুনে। ও রিখিয়ার পিঠে হাত রেখে বলল,

” রিখিয়া কান্না থামাও। সামলাও নিজেকে। কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

রিখিয়া হিঁচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” কেন এমন করলেন? কেন? কেন অন্যকারো অন্যায়ের শাস্তি আমায় দিলেন আপনি? আমিতো নিজের সবটুকু দিয়ে আপনাকেই ভালোবেসেছি,তার বদলে একটু ভালোবাসলে কী হত? আর তখন যখন বাসতে পারেন নি, এখন কেন বাসলেন? আমি নিজের কষ্ট করতে পারলেও আপনার কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে মেরে ফেলুন প্লিজ। আমি আর পারছিনা সহ্য করতে। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি।”

বিহানও রিখিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। ভাগ্য এতো অদ্ভুত খেলা কেন খেলল ওদের সাথে? একটুও দয়া করা যেতোনা ওদের ওপর? একটুও না?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here