ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ১৯

1
1413

#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_19

ফার্ম হাউজের পিছনের গার্ডেন এরিয়ায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে মিহির।জায়গাটা একদম নিড়িবিলি বলা চলে। আশেপাশে কেউ নেই ।গেষ্টরা সহ এই বাড়ির সবাই সামনের দিকটায় আছে,, যেখানে ইফাতের গায়ে হলুদ হচ্ছে সেখানে। ফার্ম হাউজের ছাদে ফেরি লাইট দিয়ে ডেকরেশন করা হয়েছে,, সেখান থেকে কিছুটা আলোর ছটা এসে বাগানটাকেও মৃদু আলোকিত করে তুলেছে। হালকা হালকা গানের শব্দও মিহিরের কানে ভেষে আসছে,, সেই সাথে লোকজনের হাতে তালির আওয়াজও আছে। কিন্তু মিহিরের সেসব দিকে একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই,, ও ওর মতো করে সিগারেটের বিষাক্ত ধোয়া উড়াতে ব‍্যাস্ত ।

“ভাইয়া তুই এখানে কি করছিস? সবাই তোকে টর্চ জ্বালিয়ে খুজছে আর তুই এইখানে দাড়িয়ে আছিস?আমার সাথে চল তাড়াতাড়ি।”

খুব পরিচিত একটা কন্ঠস্বর কানে ভেষে আসতেই মিহির ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। দেখলো মেঘ ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে আছে। মিহির এক পলক মেঘের দিকে তাকিয়েই আবার ঘাড় সামনের দিকে ঘুড়িয়ে নিজের সিগারেট খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এমন একটা ভাব করছে যেনো ও মেঘের ডাক শুনতেই পায়নি। মেঘ ব‍্যাস্ত কন্ঠে বললো

“কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো?চল আমার সাথে!”

মিহির কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিলো

“তুই যা আমি পড়ে আসছি।”

“পরে না,, মাম্মাম তোকে এখনি যেতে বলেছে। আমার সাথে চল প্লিজ। নাহলে মাম্মাম আমাকে বকা দিবে।”

মিহির বিরক্তির স্বরে বললো

“তোকে এখান থেকে যেতে বলেছি না? যা এখান থেকে প্লিজ। আমি একটু পড়ে আসছি।”

মেঘ মিহিরের দিকে এগিয়ে এসে ওর পিছনে দাড়িয়ে ঝাড়ি মেরে বললো

” তোকে বললাম না মাম্মাম তোকে আমার সাথে নিয়ে যেতে বলেছে। আর এখানে এভাবে ভুতের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছিস বলতো?আমার সাথে চল বলছি।”

“মেঘ ডোন্ট ইরিটেড মি। এখান থেকে যা বলছি। আমার মাথাটা ভিষন গরম হয়ে আছে। কখন কি করে বসবো ঠিক নেই । আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ।”

মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো

“তোর রাগ থাকেনা কখন আমাকে একটু সেটা বলবি? যখন তখন তোর রাগ সপ্তম আসমানে চড়ে বসে। কারনে অকারনে এতো রেগে যাস কেনো বলতো? এতো রাগ স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকারক জানিস না? আর এখানে আসার পর এমন তো কিছুই ঘটলো না ,,যাতে তুই রেগে যেতে পারিস? তার পরেও যে কেনো রেগে বোম হয়ে আছিস আল্লাহ জানে!”

মেঘের কথায় মিহির আর নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলো না। সিগারেটটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মেঘের দিকে ঘুড়ে চেচিয়ে বললো

“কখন থেকে তোকে এখান থেকে যেতে বলছি কথা কানে যায় না? লাই দিতে দিতে একেবারে মাথায় উঠে গেছিস,,, বড়দের কোনো কথাই শুনতে চাসনা।কখন থেকে কানের কাছে এসে বকবক করেই যাচ্ছিস করেই যাচ্ছিস। বিরক্তিকর মেয়ে একটা।”

মিহিরের কথায় মূহুর্তেই মেঘের ঠোটের মুচকি হাসি টুকু গায়েব হয়ে গেল । চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। মিহির ওকে বিরক্তিকর মেয়ে বলেছে এটা যেনো মেঘ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে । ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। মিহির আগে ওর সাথে কক্ষনো এভাবে কথা বলেনি। মেঘের একদিকে যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি মিহিরকে সিগারেট খেতে দেখে রাগও লাগছে। মেঘ থমথমে গলায় বললো

“তুই স্মোক কেনো করছিস? জানিস না এইসব মাম্মাম বাবাই একদম পছন্দ করেনা? আর তাছাড়া বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউ যদি তোকে এভাবে সিগারেট খেতে দেখে কি ভাববে বলতো? আর তুই তো কখনো স্মোক করিস না?তাহলে আজকে কেনো করছিস?”

“কে কি ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। আমি আর যাষ্ট নিতে পারছি না। এদের এতো ন‍্যাক‍্যামো দেখে ইচ্ছে করছে এদের সবাইকে খুন করে ফেলি।”

মেঘ এবার ভালো করেই বুঝতে পারলো মিহির কেনো এতো রেগে আছে। ও চাপা স্বরে মিহিরকে বললো

“দেখ ভাইয়া এখানে এভাবে চেচামেচি করে অযথা সিনক্রিয়েট করিস না। এতে আমাদেরই ফেইসলস হবে। যা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যা।”

মিহির হাতে ক্লাপ দিতে দিতে মেঘের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো

“ওয়াউ এখন তো দেখছি আমার বোনও খুব ভালো ন‍্যাক‍্যামো করতে যানে। যা হচ্ছে সেগুলো আমাকে চুপচাপ মেনে নিতে বলছিস? সবকিছু ভুলে গেলি?এরা আমাদের সাথে ঠিক কি কি করেছে সেটা এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ভুলে গেলি বলতো?আজকে যেই মানুষ গুলো আমাদের মাথায় তুলে নাচছে তারা একসময় আমাদের কিভাবে কথায় কথায় অপমান করতো মনে নেই? তোর ওই ডাইনি চাচি যে আমাকে সবসময় গুন্ডা,, রাস্তার ছেলে বলে ডাকতো সে আমাকে আজকে মিহির বাবা বলে সম্মোধন করছে।আর আমার মাকে সবসময় দুঃশচরিএা,,ভিখারির বাচ্চা বলে ডেকেছে আর এখন সেই ভিখারির বাচ্চাকে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। কারন ওরা যাকে আগে ভিখারির বাচ্চা ভাবতো সে আসলে একজন বিজনেস টাইকুনের মেয়ে। যার বাবা ভাইয়েরা চাইলে তোর ওই ডাইনি চাচির মতো হাজারটা মহিলাকে নিজেদের বাড়ির কাজের লোক বানিয়ে রাখতে পারতো। এখন মিরা রহমানের আসল পরিচয় জানতে পেরে আমাদের প্রতি ভালোবাসা একদম উতলে উঠছে। আর তুইও কি সুন্দর সব কিছু ভুলে এদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিস।”

মেঘ একটা তাছ‍িল‍্য হাসি দিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বললো

“আমি কিছুই ভুলে যাইনি ভাইয়া শুধু ভুলে যাওয়ার নাটক করছি। এদের দেওয়া প্রত‍্যেকটা আঘাত আমার এইখানে (বুকের বাম পাশে হাত রেখে)গেথে আছে। হাজার চেষ্টা করেও সেগুলো ভুলতে পাড়ি না। ভাইয়া তোর মনে আছে? আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম তখন আমাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে গানের কমপিটিশন হয়েছিলো? সেখানে আমি আর জেরিন গানের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে ছিলাম। আর পুরো স্কুলের মধ‍্যে ফাষ্ট হয়ে ছিলাম। কিন্তু জেরিন কি করেছিলো আমার জেতা পুরস্কার টা ও নিবে বলে জেদ করেছিলো। আর আমি ওই প্রাইজটা ওকে দিবোনা বলে ওটা নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলাম।তাই বড় ফুপি আমাকে দুইটা থাপ্পর মেরেছিলো। শুধু তাই নয় মাম্মাম তো আমাকে লাঠি দিয়েও মেরেছিলো। আর ফাইনাললি আমার প্রাইজটা সবাই জেরিনকে দিয়ে দিলো। জানিস সেদিন আমি খুব কেদে ছিলাম। মনে মনে ঠিক করে ছিলাম কোনোদিন আর গান গাইবো না। ইনফ‍্যাক্ট শুধু গান কেনো কোনো অনুষ্ঠানেই আর পার্টিসিপেট করবো না। তারপর থেকে নাচ ,,গান ,, খেলাধুলা থেকে আমি একশো হাত দূরে থাকতাম। যেই আমি সবসময় সব কিছুতে ফাষ্ট হতাম সেই আমি একটা বিগ লুজার হয়ে গিয়েছিলাম। ”

মেঘের কথা শুনে মিহিরের হুশ আসলো। এতোক্ষন ও মেঘকে কি বলেছে সেগুলো সব মনে পড়ে গেলো। কতো বড় বোকামি করে ফেলেছে সেটা ভেবে নিজেকেই নিজে মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে । এই চারটা বছর ধরে শুধু চেষ্টা করেছে মেঘ যেনো ওর পুরোনো সব সৃতি গুলো ভুলে যায় লাইফে মুভঅন করে। আর আজ কি করলো বোকার মতো পুরনো স্মৃতি গুলো আবার সব মনে করিয়ে দিলো?

মেঘ বললো

“জানিস ভাইয়া,, জেরিন আমার সব পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে নিতো।মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হতো আবার মাঝে মাঝে ভাবতাম থাক ও তো আমার বোন হয়,, আমার জিনিস নিবে না তো কারটা নিবে। সব ভুল গুলো ওর বাচ্চামো ভেবে ক্ষমা করে দিয়েছি। ওর অন‍্যায় গুলো বড়দের থেকে লুকিয়েছি ।আর ও কি করলো? পুরো বিয়ে বাড়ির মানুষের সামনে আমাকে অপমান করলো। আমাকে ক‍্যারেকটারলেস প্রমান করলো। যেই ছেলেটাকে আমি কোনো দিন নিজের চোখেই দেখিনি,, সেই ছেলেটা নাকি আমার বয়ফ্রেন্ড,,ওরা নাকি তার সাথে আমাকে হোটেলেও যেতে দেখেছে।আর আমার চাচি কি বলেছিলো? আমার নাকি ওনার ছেলের বউ হওয়ার কোনো যোগ‍্যতাই নেই। আর বাকিরা সবাই শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখেছিলো সেইদিন কেউ কিচ্ছু বলেনি। সবাই শুধু নিজেদের সার্থ নিয়ে ভেবেছে। আমার কথা কেউ ভাবেনি,, কেউ না।”

কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ ফুপিয়ে কেদে উঠলো। কাদতে কাদতে বললো

“আমার কি দোষ ছিলো একটু বলবি। আমি তো সব সময় সবার বাধ‍্য হয়ে চলেছি। কারো কথা কখনো অমান‍্য করিনি। কারো সাথে কখনো বেয়াদবি করিনি। তাহলে কেনো আমার সাথে এমনটা হলো? কেনো জেরিন আমাকে এতোটা কষ্ট দিলো? আমি তো ওকে আমার আপন বোনের মতো ভালোবাসতাম,, তাহলে ও কেনো আমাকে আপন করে নিতে পারলো না? কেনো এভাবে আমাকে সবার সামনে ছোট করলো? কেনো সেদিন বিয়ে বাড়িতে কেউ চিৎকার করে বলতে পারলোনা,, মেঘ খারাপ মেয়ে নয়,,মেঘের কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক নেই?কেনো আমি বিনা দোষে শাস্তি পেয়ে ছিলাম? কেনো সবাই আমাকে দুঃশচরিএা নষ্টা মেয়ে বলেছিলো?সেদিন সবাই শুধু নিজেদের সার্থের কথা ভেবেছে আমার কথা কেউ ভাবেনি,, কেউ না। আমি কোনো অন‍্যায় না করেও সবার চোখে খারাপ হয়ে গিয়ে ছিলাম।”

মিহির শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঘকে দেখছে। ইচ্ছে করছে নিজের হাতে নিজের গলাটা টিপে দিতে।কেনো যে রাগের মাথায় মেঘকে ওই কথা গুলো বলতে গেলো?মেঘ হাতের উল্টোপিট দিয়ে চোখ থেকে গালে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে বললো

“আমি হাজার চেষ্টা করেও ওই পনেরো দিনের কথা এখনো ভুলতে পারিনি ।ওই পনেরো টা দিনের এক একটা দিন আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছি। ঠিক মতো খাইনি, ঘুমাইনি। সারাক্ষন শুধু কেদেছি।তোর মনে আছে,,বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পর তুই একদিন আমাকে অনেক জোড় করে মন ভালো করার জন‍্য বাইরে নিয়ে গিয়েছিলি? সেদিন লোকজনেরা আমাকে কি বলে অপমান করেছিলো? আরে যারা আমাকে সবসময় নম্র, ভদ্র,সোভ‍্য মেয়ে বলে আমার প্রশংসা করতে ক্লান্ত হতো না তারা আমাকে এমন কোনো গালি ছিলোনা যেগুলো দেখনি। ওদের বলা সেই কটু কথা গুলো মনে পড়লে আজও আমার শরীরটা ঘিন ঘিন করে উঠে। আমাকে রাস্তায় অপমান করে শুধু ওনারা শান্ত হয়নি বাড়িতে এসে অবদি আমাকে গালি গালাজ করে গিয়েছিলো।সবাই শুধু কয়েকটা এডিট করা পিক দেখে আমার ক‍্যারেকটার সার্টিফিকেটটা পুরো বদলে দিয়েছিলো। ”

মেঘের কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে।মিহির এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো

“সরি রে বনু আমি বুঝতে পারিনি তুই আমার কথায় এতোটা হার্ট হয়ে যাবি। আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি। জানিসই তো আমি রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।পাগলের মতো অজগুবি কথা বলি।সেই আজেবাজে কথা শুনে এতো কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে আছে বল?”

মেঘ একটা ধাক্কা দিয়ে মিহিরকে নিজের থেকে সড়িয়ে দিলো।তারপর চেচিয়ে বললো

“হেই ডোন্ট টাচ মি।তুই আমাকে একটুও ভালো বাসিস না ।তুইও আমাকে আজকে বিরক্তিকর মেয়ে বললি। ওদের মতো তুইও আমাকে সহ‍্য করতে পারিস না। সবার মতো তুইও আমাকে হেট করিস। ”

মেঘের কথায় মিহির একদম হতবম্ব হয়ে গেলো।মেঘ যে ওকে ভুল বুঝেছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে। নিজের অজান্তেই বোনকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেললো । এবার কি করবে ও?”

#চলবে,,,,

বিঃদ্রঃ জানি এই পর্বটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। কয়েকদিন ধরে অনেক ঝামেলার মধ‍্যে আছি। গল্প লেখার সময় পাইনা বললেই চলে। অনেক কষ্টে টাইম বের করে একটু একটু করে লিখেছি।

1 COMMENT

  1. Apnara sobsomoi mae guloke ato neka kano banan je kichu bojhena onno mae thakleo tader sathe kichu na hoya always main heroin er sob hoche r heroin tar protibad korteo parchena kano protibad korle ki se nosta hoya jabe naki jottosob

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here