ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ১৮

0
833

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_18

অসহায় বাচ্চাদের মতো মুখ করে মিরা রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ।কিন্তু তাতে মিরা রহমানের কোনো হেলদোল নেই ওনি ওনার মত করে একে একে লেহেঙ্গা , জুতা,ফুলের জুয়েলারি শপিং ব‍্যাগ থেকে বের করে খাটের উপরে মেঘের সামনে রাখছেন। মিরা রহমান ব‍্যাস্ত ভঙ্গিতে বললেন

“মুখ ফুলিয়ে বসে না থেকে তাড়াতাড়ি এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও। আমাদের অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

মেঘ গাল ফুলিয়ে বললো

“মাম্মাম, আমি ওখানে যাবো না প্লিজ। তোমারা যাও, আমার ইচ্ছে করছে না ওখানে যেতে । ওখানে গেলেই দেখবে ,জেরিন আমার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। ও আমাকে অপমান করার একটা চান্সও ছারবে না।”

“সেটা আমি জানি। শুধু জেরিন নয় ওখানের অনেকেই আছে যারা তোমাকে কথা শোনাবে । অপমান করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাও আমাদের ওখানে যেতেই হবে মেঘ। তোমার মেজ চাচ্চু নিজে এসে আমাদের ইনভাইট করে গেছে। তোমার বড় চাচ্চুও অনেক বার ফোন করেছে । এবার আমরা যদি না যাই তাহলে ওনাদের অপমান করা হবে।”

মেঘ মাথাটা নিচু করে বললো

“তোমরা তো সবাই যাচ্ছো আমি একা না গেলে কি হবে।”

“এতো কথা বলার সময় আমার নেই। প্লিজ তারতাড়ি রেডি হয়ে নেও যখন একবার বলেছি তোমাকে যেতে হবে মানে যেতেই হবে।”

কথাটা বলেই মিরা রহমান তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।মেঘ কিছুক্ষন মন খারাপ করে বসে থেকে লেহেঙ্গা আর হিজাব হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। আজকে মেঘের কাজিন ইফাদের হলুদ সন্ধ‍্যা। সেখানে মেঘদের সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে। মিহির প্রথমে ওখানে যেতে চাইছিলো না কিন্তু মিরা রহমান অনেক বোঝানোর পর যেতে রাজি হয়েছে।এই চার বছরের মধ‍্যে মেঘের মেজ চাচি আর চাচা ছাড়া ওর দাদু বাড়ির কারো সাথে ওদের যোগাযোগ ছিলো না। তাই মেঘের চাচ্চুরা বিয়ের সুতোয় ওদের ইনভাইট করে নিজেদের সম্পর্কটা আবার আগের মতো ঠিক করতে চাইছে।এই বিয়েতে প্রথমে আজম রহমান যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু ভাইদের রিকোয়েষ্টের জন‍্য বাধ‍্য হয়ে রাজি হতে হয়েছে। যতোই হোক বড় ভাইদের কথা তো আর আমান‍্য করতে পারেন না।বিয়েটা ঢাকাতেই হচ্ছে। এখানে আবিরের বাবার একটা ফার্মহাউজ আছে বিয়ের আচার অনুষ্ঠান সব সেই বাড়িতেই হবে। মেঘের দাদু বাড়ির সব আত্মীয় স্বজনেরা সেখানেই আছেন।

______________

মেঘ ওয়াশরুম থেকে রেডি হয়ে বের হয়ে দেখে আহান ওর বেডের উপর বসে বসে ফোন টিপছে। মেঘ আহানের দিকে ভালো করে তাকালো আহান হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে,, সাথে সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবির উপরে সাদা রঙের কটি পড়েছে।ফর্সা জীম করা বডিতে হলুদ পাজ্ঞাবিটা বেশ মানিয়েছে। বামহাতে কালো রঙের একটা ব‍্যান্ডেড ওয়াচ। সিল্কি চুলগুলো কপালের উপরে এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে । মেঘ হা করে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের থেকে চোখই সরাতে পারছে না।ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে এই লোকটা এতো সুন্দর কেনো। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই ,তা কি এই লোকটা জানে না?

আহান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো। মেঘ হা করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ একটা সলিড লেহেঙ্গা পড়েছে। লেহেঙ্গাটার নিচের স্কার্ট টা কাচা হলুদ কালারের,, টপস টা সাদা কালারের,, সাথে হলুদ কালারের লং কটি। মাথায় সাদা জরজেট হিজাব। চেহারায় কোনো রকম মেকআপ নেই । তাতেও মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

মেঘের লেহেঙ্গাটা সেদিন আহানই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলো। নিজের ড্রেসের সাথে মেচিং করে। মেঘ প্রথমে ভেবেছিলো আহানের পছন্দ করা কিছু কিনবে না। কিন্তু লেহেঙ্গাটা ওরও বেশ পছন্দ হয়েছিলো তাই আর অমত করেনি।

আহান একপা একপা করে মেঘের দিকে এগিয়ে এসে নিজের একহাত মেঘের কোমরে রাখলো তারপর একটানে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো

“আমার মতো একটা নিষ্পাপ বাচ্চা ছেলেকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো? এটা কি ঠিক মায়াপরি? এরপর আমি যদি নিযেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে, তোমার সাথে ভুলভাল কিছু করে ফেলি তাহলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।”

আহানের কথা কানে আসতেই মেঘের ঘোড় কেটে গেলো, ও ছিটকে আহানের থেকে দূরে সরে গেলো। ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে। মনে হচ্ছে এখনই হৃদপিণ্ড টা বেড়িয়ে আসবে ।এতোক্ষন কি করছিলো সেটা ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মেঘ। মনে মনে বললো ছিহ মেঘ তুই এতোটা নিলজ্জ কবে থেকে হলি? শেষ পযর্ন্ত ওই অ‍্যাটিটিউটের দোকানটার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলি? ছিহ এই লোকটা মনে মনে কি ভাবছে?মেঘ নিচের দিকে চেয়ে হাতের আঙুল কচলাচ্ছে।

মেঘকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আহানের বেশ মজা লাগছে। ভাবলো মেঘকে আরেকটু লজ্জা দেওয়া যাক ,,তাই মেঘের আরেকটু কাছে গিয়ে ঠোটের কোনে একটা বাকা হাসি ঝুলিয়ে আহান বললো

“এটা তুমি কি করলে মায়াপরি ?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে, দিলে তো আমাকে নজর লাগিয়ে? এইবার আমার কি হবে?”

আহানের কথা শুনে মেঘ চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। আর দাত কটমট করে মনে মনে বললো এর মতো এওো বড় রাম ছাগলকে নাকি আমি নজর দিবো। ভাবা যায়? আর এমন ভাবে বলছে আমার কি হবে ?যেনো মনে হচ্ছে আমি ওনার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করছি। হায় আল্লাহ এক বাটি পানি দেও, হয় আমি ডুবে মরি নাহলে এইটারে চুবাইয়া মারি। মেঘ রাগে ফোস ফোস করতে করতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ফুলের গহনা গুলো একেক করে পড়তে লাগলো ।রাগে মেঘের নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। মেঘ আয়নায় দেখতে পেলো আহান ওর দিকেই একধ‍্যানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।ও একপলক তাকিয়েই আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। মেঘ হালকা একটু মেকআপ করলো ঠোটে পাউডার পিংক কালারের লিভষ্টিক দিলো ,চোখের নিচে চিকন করে কালো কাজল দিলো।

মেঘ যতক্ষন ধরে সেজেছে ততক্ষনই আহান নিষ্পলক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সাজ কম্পিলিট করে মেঘ আহানের সাইড কাটিয়ে আসতে নিলেই আহান খপ করে মেঘের হাতটা ধরে ফেলে। তারপর মেঘকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে নিজেও মেঘের পিছনে দাড়ায় , এরপর পাজ্ঞাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা একটা বক্স বের করে। মেঘ ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছে আহান অ‍্যাকচুলি কি করতে চাইছে। আহান বক্সটা থেকে একটা গোল্ড চেইন বের করে মেঘের গলায় পড়িয়ে দিলো। মেঘ হাত দিয়ে চেইনটা ধরে দেখতে লাগলো । চেইনটায় একটা লাভ শেপের লকেট আছে। লকেটার মধ‍্যে A লেখা। মেঘ তড়িঘড়ি করে চেইনটা খুলতে খুলতে বললো

“আমি এটা পড়বো না।”

আহান মেঘের হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বললো

“খবরদার মেঘ একদম এটা খোলার চেষ্টা করবে না।”

মেঘ নিজের হাত আহানের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো

“দেখুন এটায় A লেখা।আমি এটা কিছুতেই পড়তে পারবো না।”

“কেনো?”

মেঘ ক্ষেপে গিয়ৈ বললো

“আজব তো আমার নাম মেঘনা। তাহলে আমি A অক্ষর ওয়ালা লকেট চেইন কেনো পড়বো?”

আহান তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“আমি দিয়েছি তাই পড়বে।”

“দেখুন,, এটা যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে আমাকে সবার কাছে জবাব দিহি করতে হবে।সবাই আমাকে খারাপ ভাববে।আর এটা কার নামের লকেট? ”

“তোমাকে কতোবার বলবো যে, কে কি ভাবলো বা বললো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায়না। আর তোমাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। কারন এটা আমার নামের লকেট। এটা সবসময় পড়ে থাকবে কখনো খুলার চেষ্টাও করবে না।”

“অদ্ভুত তো! আমি আপনার নামের লকেট কোন দুঃখে পড়বো।”

আহান মেঘের হাত দুটো আলতো করে পিছনে নিয়ে মুচরে ধরে মেঘকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আহানের উষ্ণ নিশ্বাস মেঘের চোখে মুখে আচরে পড়ছে। মেঘ চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে । আহান মেঘের কানের কাছে এসে লো ভয়েজে বললো

“মেঘপরি তুমি সত‍্যিই কি এতোটাই অবুঝ? যে এটাও জানোনা তুমি আমার নামের লকেট কেনৌ গলায় পড়বে?কোনো ব‍্যাপ‍্যার না এখন থেকে জানবে। যেই ভয়ংকর আগুনে আমি ছয়টা বছর ধরে প্রত‍্যেকটা দিন প্রত‍্যেকটা মূহুর্ত পুরেছি, সেই একই আগুনে আমি তোমাকেও পোড়বো। তুমি ঠিক একদিন বুঝতে পারবে কতোটা যন্ত্রণা নিয়ে আমি এতো গুলো বছর বেচে ছিলাম।”

আহানের কথাগুলো মেঘের মনের গভিরে গিয়ে কোথাও একটা সুপ্ত অনৃভুতি তৈরি করছে। শীরদারা দিয়ে একটা একটা অদ্ভুত শীতল স‍্রোত বয়ে যাচ্ছে। মনের মধ‍্যে কেমন একটা অজানা অনূভুতি কাজ করছে। মেঘের ভাবনার মধ‍্যেই হঠাৎ আহান মেঘের হাতটা জোড়ে চেপে ধরলো। মেঘ ব‍্যাথ‍্যা কুকিয়ে উঠলো। আহান তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো

“ইউ নো মেঘ? আমি তোমাকে কখনো হার্ট করতে চাই না। একটা ফুলের টোকাও কখনো দিতে চাইনা তোমার গায়। তাই প্লিজ কখনো এমন কোনো কাজ করবেনা যাতে আমি তোমাকে হার্ট করতে বাধ‍্য হই।আর আমার অনুমতি ছাড়া যদি কখনো এই লকেট টা খোলার চেষ্টাও করেছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা । এই লকেটটা তোমাকে সবসময় মনে করিয়ে দিবে তোমার জিবনের সাথে আহান নামের একজনের খুব গভির ভাবে অস্তিত্ব মিশে আছে।”

______________________

দিশাদের ফ্লাটের সামনে দাড়িয়ে আছে একটা কালো রঙের গাড়ি । গাড়িটার ভিতরে বসে আছে অভি,আহান আর মেঘ। আহান ড্রাইভিং সিটে বসে ফোন টিপছে। অভি ওর পাশে বসে ফোনে গেমছ খেলছে। আর মেঘ পিছনে বষে বসে দাত দিয়ে নক কামরাচ্ছে। অভি গেমস খেলার মাঝে মাঝে চিল্লিয়ে বলে উঠছে এই ধর ধর এটাকে ,এই চলে গেলো তো,মার মার মার, এই যাহ চলেই গেলো। অভির এরকম চিল্লাচিল্লি শুনে আহান বিরক্তি নিয়ে বললো

“ওই , তুই এই চিল্লাচিল্লিটা একটু বন্ধ করবি, নাকি তোকে তোর ফোন সহ লাওি দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দিবো?”

অভি গেমস খেলতে খেলতে ফোনের দিকে চোখ রেখেই বললো

“আমাকে যা বলার বল । খবরদার আমার ফোনকে ভুলেও কিছু বলবি না। ইউ নো এইটা আমার জান।”

“তোর ওই জানের ভর্তা বানিয়ে আমি তোকে গেলাবো ইডিয়েট।”

বলেই আহান অভির হাত থেকে ফৌনটা নিয়ে গেমসটা কেটে দিলো। অভি চিল্লিয়ে বললো

“আমার গেমস,,,,আরেকটু হলেই আমি এই লেভেলটা পার করে যেতাম। শালা তুই আমার থেকে আমার জানকে কেড়ে নিলি তোর জিবনেও কোনদিন বিয়ে হবেনা দেখে নিস।”

আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো

“হুহ,, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।”

“তারমানে তুই মানছিস তুই একটা গরু।”

বলেই অভি হাহা করে হেসে দিলো। অভির কথা শুনে মেঘও ফিক করে হেসে দিলো। আহান রেগে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“শাটআপ! খুব হাসি আসছে তাই না? বেশি হাসলে একদম দাত ভেঙে দিবো।”

অভি হাসতে হাসতে বললো

“ওর দাত ভেঙে দিলে কি তুই গরু থেকে মানুষ হয়ে যাবি?”

এমনিতেই মেঘ চেইন পড়তে চাইছিলোনা সেই বিষয়টা নিয়ে আহানের মেজাজটা ভিষন খারাপ হয়ে ছিলো। তার উপর অভির এই ত‍্যাড়াত‍্যাড়া কথা গুলো ওর রাগটা দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। আহান রেগে অভির মাথাটা গাড়ির সামনে থাকা ডেস্কে চেপে ধরলো। অভিও ওর একহাত দিয়ে আহানের মাথাটা ডেস্কের সাথে চেপে ধরলো।তারপর দুজনের হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। দুজন যে যাকে পারছে মারছে । একে অপরকে চিমটি কাটছে, শুরশুরি দিচ্ছে ,,শার্ট ধরে টানছে, চুলধরে টানাটানি করছে কিন্তু দুজনের মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের হচ্ছে যাকে বলৈ একদম সাইলেন্ট মারামারি। মেঘ হতবম্ভ হয়ে বসে আছে। এতো বড় ম‍্যাচিউড দুইটা ছেলে এভাবে বাচ্চাদের মতো মারামারি করছে। ভাবতেই মেঘের হেসে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।

দিশা দৌরে এসে হাপাতে হাপাতে বললো

“সরি গাইস একটু দেরি হয়ে গেলো।”

কথাটা বলেই দিশার চোখ গেলো অভি আর আহানের উপর। ওদের দুজনকে এভাবে মারামারি করতে দেখে দিশা হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।অভি আহানের চুল টানতে টানতে বললো

“এতো দেরি কেউ করে মিস বিষা? দেখো তুমি এতো দেরি করেছো দেখে আহান রেগে আমাকে মারছে ।আর কি বলেছে জানো? ও নাকি ওয়েট করতে করতে একটা গরু হয়ে গেছে।”

দিশা রেগে বললো

“দেখুন সবার আগে আপনি আমার নামটা ঠিক করে ডাকুন। কতোবার আপনাকে বলবো আমার নাম বিষা নয় দিশা। সেদিন রেষ্টুরেন্টে আপনি আমাকে অনেক বার বিষা বলেছেন। বাইরে ছিলাম তাই কিছু বলতে পারিনি ।এখন আপনি আমাকে ঠিক নামে ডাকুন নাহলে আপনার খবর আছে ।”

“তাই নাকি?তা তুমি আমার কি করবে শুনি?তোমাকে তো আমি বিষা বলেই ডাকবো দেখি কি করতে পারো?”

দিশা দাতে দাত চেপে আহানকে উদ্দেশ‍্য করে বললো

“আহান ভাইয়া আপনি এনাকে নাকের উপর একটা ঘুশি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিন তো।”

অভি চোখ বড় বড় করে বললো

“কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। আমাকে মারার সুপাড়ি দিচ্ছে।তোমাকে তো আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।”

দিশা চেচিয়ে বললো
“আপনাকে আমি পচা ডোবার পানি খাওয়াবো।”

অভি আহানকে একহাত দিয়ে মারছে আর দিশার সাথে ঝগরা করছে।মেঘ এতোক্ষন চুপচাপ বসে বসে এদের তামাশা দেখছিলো। এবার আর সহ‍্য করতে না জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে বললো

“শাটআপপপপ! একদম চুপ করো সবাই।”

মেঘের চিৎকারে অভি আহান একে অপরকে ছেড়ে দিলো। দিশাও ঝগরা থামিয়ে দিলো। মেঘ বললো

“আপনারা ডোবার পানি,খালের পানি, ডাষ্টবিনের পানি যে যাকে পারেন খাওয়ান। কিন্তু প্লিজ আমাকে কোথাও একটা পৌছে দিয়ে আসুন। নাহলে আমি আপনাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি পাগল হয়ে যাবো।”

মেঘের কথা শুনে আহান গাড়ির মিররে তাকিয়ে নিজের চুল পাজ্ঞাবি ঠিক করে গাড়ি স্টার্ড দিলো। দিশাও অভিকে একটা ভেংচি কেটে মেঘের পাশে উঠে বসলো। দিশা গাড়িতে উঠতেই মেঘ দিশার গালে একটা চড় মেরে বললো

“যতোদিন যাচ্ছে তুই আস্তে আস্তে একটা ছ‍্যাচরা হয়ে যাচ্ছিস। যখন তখন যেখানে সেখানে ঝগরা শুরু করে দিস।”

দিশাকে থাপ্পর মারতে দেখে অভি তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“এই না হলে আমার কিউট বোন। আমার সাথে হওয়া অন‍্যয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে।”

বলেই অভি মেঘের সাথে হাই ফাইভ করলো। দিশা গালে হাত দিয়ে কাদো কাদো মুখ করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান ড্রাইভিং করতে করতে দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ডোন্ট ওয়ারি দিশা। তোমার সাথে আমি আছিতো। ওরা দুজন বেশি বাড়াবাড়ি করলে দুটোকে গাড়ি শুদ্ধ ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিবো।”

আহানের কথা শুনে দিশা খিলখিল করে হেসে দিলো। আর অভি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই হাসি দেখতে লাগলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here