#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_28
মিহির ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঘুমের জন্যে পিপারেশন নিচ্ছিলো তখনই ওর রুমের দরজা খুলে সাঈফা প্রবেশ করে। আহির রুমের বাইরে ছিলো তাই দরজাটা মিহির আহিরের জন্য খোলাই রেখেছিলো। সাঈফা এসেই সোজা ধরাম করে বিছানার উপরে শুয়ে পড়ে। মিহির কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে
“এতো রাতে এখানে কি চাই? আর আমার রুমে পারমিশন না নিয়ে ঢুকেছিস কেনো ? যা বের হ!”
সাঈফা টানটান হয়ে শুয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো
“আমি আজকে রাতে তোমার সাথে ঘুমাবো। তাই এখানে চলে আসলাম।”
মিহির কোমর থেকে হাত নামিয়ে মৃদ্যু চেচিয়ে বললো
“হোয়াট! মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? আমার সাথে ঘুমাবি মানে কি? আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিস আর বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে তাইনা? যাহ এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে।”
সাঈফা পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো
“আমার মাথা আর টাথা দুইটাই ঠিক আছে। আর আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো। বেশি কথা না বলে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ো।”
সাঈফার কথায় মিহিরের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ও গিয়ে সাঈফাকে এক টানে বিছানা থেকে উঠিয়ে দাড় করালো। তারপর নিজের গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সাঈফার গালে পরপর দুইটা থাপ্পর মারলো । এরপর রেগে দাতে দাত চেপে বললো
“তোর লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই তাইনা?যদি থাকতো তাহলে এতো রাতে একটা ছেলের রুমে এসে তার সাথে ঘুমাতে চাইতি না। ক্যারেক্টার লেস নিলজ্জ মেয়ে একটা। একবারও ভেবে দেখলি না,,আমি চাইলে তোর সাথে ঠিক কি কি করতে পারি? মনের মধ্যে নিজের মান সম্মান হারানোর ভয় ডর একটুও নেই তোর তাইনা ? কিভাবে থাকবে যতো দিন যাচ্ছে ততো তুই একটা নোংড়া মেয়ে হয়ে যাচ্ছিস ।যাহ এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে ।নাহলে তোর এমন অবস্থা করবো কালকে সকালে কাউকে মুখ দেখানোর মতো অবস্থায় থাকবি না।”
সাঈফা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে একবার চোখের পলক ফেলতেই টুপ করে অশ্রু কনা গুলো গালে গড়িয়ে পড়বে। তবে ও থাপ্পর খাওয়ার জন্য কাদছে না । মিহিরের এমন জঘন্য কথা গুলো শুনে কাদছে । ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে এভাবে জঘন্য নোংরা কথা গুলো শোনার থেকে হয়তো মরে যাওয়া অনেক ভালো। সাঈফা তো শুধু একটু মিহিরকে জ্বালাতে এসেছিলো,, কিন্তু মিহির যে সেটাকে এতোটা সিরিয়াসলি নিবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি। মিহির এসে সাঈফার গাল চেপে ধরে বললো
“এই চারটা বছরে তোর অনেক জ্বালা সহ্য করেছি। ভালোবাসার নাম করে সারাক্ষন আই লাভ ইউ বলা,, জান বলা,, যখন তখন এসে জড়িয়ে ধরা এটা সেটা গিফট করা সব কিছু মেনে নিয়েছি । বড় দের কাউকে এই বিষয়ে কক্ষনো কিছু বলিনি। ভেবেছি তুই এখনো অনেক ছোট, তাই হয়তো এই বাচ্চামো গুলো করিস। কিন্তু না,, তুই তো এই গুলো ইচ্ছে করে করিস। আসলে কি বলতো তুই মাএা অতিরিক্ত ছ্যাচরা আর বাজে একটা মেয়ে,, ছেলে দেখলেই গায়ে পড়ে অসভ্যতামী শুরু করে দিস । আর তোর কি মনে হয়? আজকে দুপুরে ডাইনিং টেবিলে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না? সব জানি,, আমি মেঘ আর দিশার সব কথা শুনে ছিলাম শুধু সবার সামনে রিয়্যাক্ট করবো না বলে কিছু বলিনি। আর কি বা বলবো ?তোর তো লজ্জা শরম বলতে কিচ্ছু নেই,,তোকে কিছু বললেও তোর গায়ে লাগে না । আর এখনো এখানে শংয়ের মতো দাড়িয়ে আছিস কেনো? যাহ এক্ষুনি বের আমার রুম থেকে নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে রুম থেকে বের করে দিবো।”
মিহিরের কথা শুনে সাঈফার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পড়তে লাগলো। জিবনে এতোটা অপমান বোধহয় ওর শএুও ওকে করেনি যতোটা আজকে ওর ভালোবাসার মানুষটা ওকে করলো।সাঈফা হাতের উল্টোপিট দিয়ে চোখের পানিটা মুছে ,,মিহিরের একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে ঠোটের কোনে একটা তাছ্যিল্য হাসি ঝুলিয়ে বললো
“অনেক অপছন্দ করো আমাকে তাইনা? হয়তো খুব ঘৃনাও করো । কিন্তু আমি কেনো পারিনা বলো তো। কেনো এতো অপমান করার পরেও বারবার তোমার কাছেই ফিরে আসি। কেনো হাজার চেষ্টা করেও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনা? কেনো আমি এতোবার চেষ্টা করেও তোমাকে ভূলে যেতে পারলাম না ।”
মিহির অবাক চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন এই মেয়েটাকে ওর কাছে বড্ড অচেনা লাগছে । একটু আগেও যে মেয়েটার চঞ্চলতা দেখে ও বিরক্ত হয়েছিলো,, হঠাৎ করেই যেনো সেই মেয়েটার সব চঞ্চলতা ভাব চলে গিয়ে মেয়েটার মধ্যে একদম শান্ত চলে এসেছে । সাঈফা মিহিরের আরেকটু কাছে গিয়ে ভাংগা গলায় বললো
“জানো,, তোমাকে যখন ফাষ্ট টাইম হসপিটালে দেখে ছিলাম,, তখনই তোমার উপর বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়ে ছিলাম। অবশ্য তখন ক্রাশ ,প্রেম ,ভালোবাসা কাকে বলে সেটাই জানতাম না । তবে তোমায় খুব ভালো লেগে ছিলো ।আর সেই ভালো লাগাটা আস্তে আস্তে কবে যে ভালোবাসায় রূপ নিলো আমি নিজেও জানতে পারলাম না । আর তোমাকে ভালো বাসাটাই আমার জিবনের সব থেকে বড় অন্যায় ছিলো। আমি সেই অন্যায়ের শাস্তিও এতো গুলো দিন ধরে পেয়েছি। আমি তোমার কাছে যতোবার ভালোবাসার কথা বলেছি, তুমি ততোবার আমাকে চড় মেরেছো, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছো। তাও আমি বারবার তোমার কাছে ছূটে এসেছি একটা বার তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শোনার জন্য।কিন্তু দিনশেষে আজকে আমি ছ্যাচরা ক্যারেক্টালেস মেয়ের উপাধি পেলাম।
একটু থেমে আবার বললো
আমি তো তোমাকে ছাড়া আর কোনো ছেলের দিকে কখনো তাকাইনি তাহলে তুমি কেনো বললে আমি ছেলে দেখলেই তাদের গায়ের উপর ঢলে পড়ি? কেনো আমাকে ক্যারেক্টার লেস বললে । আজকে কেনো আমাকে এভাবে অপমান করলে? আমি তো শুধুমাত্র তোমার সাথে একটু মজা করতে চেয়ে ছিলাম। আর তুমি আমাকে—-যাই হোক অপমানটা করে ভালোই করেছো। যদি আজকের পর এই নিলজ্জ মেয়েটার একটু লজ্জা হয়। আর তোমার পিছনে ছ্যাচরার মতো পিছু করা বন্ধ করে দেয় ।”
বলেই সাঈফা এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাঈফা যেতেই মিহির ধপ করে খাটের উপর বসে পড়লো। আজকে সাঈফার বলা কথা গুলো ওর ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে ।মনে হচ্ছে মারাত্মক কিছু একটা ভূল করে ফেলেছে। আর এই ভূলের মাশুল হয়তো খুব খারাপ ভাবে ওকে গুনতে হবে।
_________________________
সকালে মেঘ ঘুম থেকে ওঠার আগেই আহান অফিসের জরুরী কাজের বাহানা দেখিয়ে চলে গেলো। মেঘ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দেখলো আহান ছাড়া সবাই ব্রেকফাস্ট করার জন্য বসে আছে । মেঘ ভাবলো আহান হয়তো একটু পরে আসবে তাই ও চুপচাপ খেতে বসে পড়লো। আহানের সাথে ওর কথা বলাটা খুবই জরুরী। কালকে যে মেঘ আহানের টাচ করার জন্য কাদেনি সেটা আহানকে বলে আহানের ভূলটা ভাঙাতে হবে। মেঘ নিজেও জানে না ও কেনো আহানকে এতোটা প্রায়ওটি দিচ্ছে । শুধু জানে আহান ওকে কোনো বিষয় নিয়ে ভূল বুঝুক সেটা ও কিছুতেই চায় না।
মিহির খাওয়ার মধ্যে বারবার সাঈফার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু সাঈফা ওর দিকে ভূলেও তাকাচ্ছে না । চুপচাপ নিজের মতো করে খাবার খেয়ে যাচ্ছে । ওর চোখের নিচে একদম কালি পড়ে গেছে । চোখ দুটোও ফুলে গেছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে হয়তো সারা রাত ঘুমায়নি। অন্যদিন গুলোর মতো আজকে চেহারায় কোনো সাজগোজ নেই,, মুখটা একদম মলিন করে রেখেছে। মিহিরের কেনো যেনো সাঈফাকে এই ভাবে দেখতে খারাপ লাগছে। মনে মনে একটা গিলটি ফিল হচ্ছে । ওর মনে হচ্ছে হয়তো কালকের ওই ব্যাবহারটার জন্যই আজকে সাঈফার এমন অবস্থা ।কিন্তু ও’ই বা কি করতো সাঈফার কথা গুলো শুনে ওর ভীষন রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই মুখে যা এসেছে তাই বলে দিয়েছে।
মেঘ ব্রেকফাস্ট শেষ করে অনেকক্ষন টেবিলে বসে থাকলো,, কিন্তু আহানের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই । তাই ও উপরে গিয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে তারপর আবার নিচে আসে । নিচে এসে জানতে পারে আহান আগেই চলে গেছে। মেঘের এবার ভিষন কান্না পাচ্ছে । আহান ওকে এভাবে ভূল বুঝেই চলে গেলো । এবার কি হবে ? কিভাবে আহানের ভূলটা ভাঙাবে? মেঘের মনে বেশ অভিমান জমা হলো আহানের প্রতি।এইভাবে ওকে কিছু না বলে কেনো চলে গেলো তার জন্যে।
মেঘ মনে মনে বললো,, সব সময় তো আমি কোনো কিছু না বলতেই বুঝে যান,, আর আজকে বলে বুঝাতে চাইলাম,,, কিন্তু আপনি না শুনেই চলে গেলেন। আপনি এতো অদ্ভুত কেনো বলুনতো? আপনি কাছে আসলে সহ্য করতে পারি না,,আর এখন দূরে চলে গেছেন সেটাও মেনে নিতে পারছি না ।
_________________________
এক মাস পর……
সেদিনের পর আহানের সাথে আর মেঘের দেখা হয়নি। মোনা খান, আহাদ খান, আহির তিন-চার মেঘদের বাসায় এসেছে কিন্তু আহান এক বারের জন্যও আসেনি। মেঘেরও বাসা টু ভার্ষিটি ছাড়া আর কোথাও যাওয়া হয়নি । সামনে ওদের ভার্ষিটিতে নবীন বরন অনুষ্ঠান ।তাই এতোদিন ক্লাস শেষে রিয়্যারসাল তারপর অনুষ্ঠানের সব কিছুর এ্যারেজমেন্ট এই সব নিয়ে ওরা সবাই ইদানিং খুব ব্যাস্ত ছিলো। অনুষ্ঠান ম্যানেজ মেন্টের কাজ এখন অনার্স থার্ড ইয়ারের ষ্টুডেন্টদের দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বায়িত্ব মেঘ, দিশা আর রিজাকেই দেওয়া হয়েছে। সবার পার্ফরমেন্সের লিষ্ট, অ্যানকারিং করা,, সাজানোর জিনিস পএ অর্ডার করা সব কিছু ওদেরই দ্বায়িত্বে আছে । বেচারীরা রীতিমতো খাওয়া গোসল বাদ দিয়ে সারাদিন এই কাজই করে । অবশ্য ওদের এভাবে ফাসানোর পিছনে মিহির আর আহিরের হাত আছে। ওরাই মেঘদেরকে এই দ্বায়ীত্ব গুলো দিয়েছে। তিনজন মাঝে মাঝে কাজ করতে করতে যখন বিরক্ত হয়ে যায় তখন ইচ্ছে মতো মিহির আর আহিরকে বকা দেয়। যদিও সামনা সামনি দেয় না,, সব আড়ালে বসে দেয়। তবে ওরা যে গালি গুলো দেয় সেইগুলো যদি কখনো মিহির আর আহির শোনে তাহলে নির্ঘাত তিনদিন অঙ্গান হয়ে থাকবে।
।
।
।
।
সাঈফার মধ্যে আজকাল অনেক চেইঞ্জ এসেছে ।মিহিরের সাথে ভূলেও কথা বলে না। কথা বলা তো দূরের কথা ফিরেও তাকায় না। মিহির যেই রাস্তা দিয়ে যায় সাঈফা সেই রাস্তা থেকে একশো হাত দূর থেকে যায় । মিহির ব্যাপ্যার গুলো খেয়াল করেও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে । ও এমন ভাবে চলে যেনো সাঈফাকে কখনো দেখেইনি আর চিনেও না।
_________________________
মেঘ সকলে ঘুম থেকে উঠেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা দশ বাজে। ওহ চিল্লিয়ে বললো
“ওহ শীট এতো দেরি কিভাবে হয়ে গেলো? আমি তো সাড়ে ছয়টার এলার্ম দিয়ে ছিলাম। আর এই নন্সেস ঘড়িটা আটটা দশে এর্লাম দিচ্ছে।”
মেঘ এর্লাম ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললো
“ব্যাট্যা বদের হাড্ডি আরেকটু তাড়াতাড়ি বাজতে পারলি না? এতো লেইট করে কেনো বাজলি? জানিস না দশটার মধ্যে এ্যাসাইনমেন্ট টা জমা দিতে না পারলে ওই টাকলু ভুড়ি ওয়ালা স্যার আমার ক্লাস টেষ্টের রেজাল্ট থেকে মার্কস মাইনেজ করে দিবে।টাইমটা ঠিক করে দিলাম তাও সঠিক টাইমে বাজতে পারলি না। তুই একটা গাধা কমনসেন্স হীন ঘড়ি । কালকেই তোকে ফেড়ি ওয়ালার কাছে বেচে দিবো দেখে নিস।”
মেঘ কথা গুলো বলেই বেডের উপর এর্লাম ঘড়িটাকে ছুড়ে মারলো। তখনই মিরা রহমান রুমে প্রবেশ করতে করতে বললেন
“মেঘ,,, বদের হাড্ডিটা ঠিক টাইমেই বেজে ছিলো।শুধু ও একা না আরো চার পাচটা বদের হাড্ডি একসাথে সকাল থেকে বেজেছে। ওদের চিৎকারে সাড়া বাড়ি সুদ্ধ মানুষ জেগে গেছে। কিন্তু বেচারারা এতোক্ষন বেজেও তোমার ঘুম ভাঙাতে পারেনি। কারন তুমি হচ্ছো একটা শয়তানের হাড্ডি। তাই বদের হাড্ডি গুলো শয়তানের হাড্ডির ঘুমের কাছে হেরে গেছে।লাষ্টে বেচারারা বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেছে। ”
মেঘ অসহায় কন্ঠে বললো
“মা এর্লাম নাহয় বন্ধ হয়ে গেছে তুমি তো ডাকতে পারতে?”
মিরা রহমান বিরক্তির স্বরে বললো
“অলরেডি তিন বার ডেকে গেছি । এই নিয়ে চতুর্থ বার আসলাম । এইবার আমি যাই মামনি,, অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে চলে যেও। ”
বলেই মিড়া রহমান রুম থেকে চলে গেলেন।মেঘ তাড়াতাড়ি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
মেঘ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ঝটফট করে রেডি হয়ে নিলো । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পোনে নয়টা বাজে তাই সিন্ধান্ত নিলো ব্রেকফাস্ট না করেই বের হবে । ভার্ষিটিতে গিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে তারপর একসাথে ভার্ষিটির ক্যান্টিনে কিছু একটা খাবে। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু বিপওি বাধলো বইপএ গোছানোর সময়। সাড়া রুমে কোথাও অ্যাসাইনমেন্টের পেপার গুলো নেই ।মেঘ পুড়ো রুম তন্নতন্ন করে খুজে ফেললো কিন্তু কোথাও পেলো না।অথচ ওর স্পষ্ট মনে আছে কালকে রাতে ও ওইগুলো রিডিং টেবিলের উপরই রেখে ছিলো। হঠাৎ মেঘের চোখ গেলো ড্রেসিং টেবিলের আয়নার উপর সেখানে পিংক কালারের চিড়কুট টাইপ কিছু একটা আয়নার সাথে আটকানো। মেঘ দ্রুত গিয়ে চিড়কুট টা ছুটিয়ে হাতে নিলো। চিড়কুটটার উপরে কালো কালি দিয়ে লেখা।
–মাই ডিয়ার পেত্মি,, তোর অ্যাস্যাইমেন্টের কাগজ গুলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। ওই গুলো যদি ঠিক টাইমে জমা দিতে চাস তাহলে গাড়িটা নিয়ে সোজা আহান ব্রোর নিউ অফিসে চলে আয় । আর যদি না আসতে চাস তাহলে সোজা ভার্ষিটিতে চলে যা। তারপর ওই শালা টাকলুর বিদেশি ষ্টাইলের বকা গুলো শোন।,,,
ইতি
দ্যা গ্রেট
তাসনিধ সায়াজ মিহির,,,,
মেঘ চিড়কুট ছুড়ে মেরে একটা চিৎকার দিয়ে বললো।
“কশ্চপের বাচ্চা আজকে যদি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারি তাহলে তোকে দ্যা গ্রেট থেকে দ্যা ব্রেড বানিয়ে দিবো। আর সেই ব্রেডকে টোষ্ট মেকারে দিয়ে টোষ্ট করে খাবো।”
_________________________
মেঘ অনেকক্ষন যাবত অফিসের ওয়েটিং রুমে বসে আছে। টেনশনে ওর গলা শুকিয়ে রীতিমতো কাঠ হয়ে গেছে। ভীষন ক্ষিদেও পেয়েছে । বারবার হ্যান্ড ওয়াচের দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে। এখন 9:45 বাজে,, দশটা বাজতে মাএ পনেরো মিনিট বাকি আছে। এর মধ্যে যদি পেপার টা না জমা দিতে পারে তাহলে ওর ক্লাস টেষ্টের মার্কস কম হয়ে যাবে। এতো কষ্ট করে খেটে খুটে এ্যাস্যাইনমেন্ট গুলো করেছে সব বিফলে চলে যাবে। মেঘের খুব কান্না পাচ্ছে। এখানে এসেই ও রিসিভশনিষ্ট কে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে মিহিরের সাথে দেখা করতে দেওয়ার জন্য,, কিন্তু উনি কিছুতেই মেঘকে ভিতরে যেতে দেয়নি।
বলেছে -আহান নাকি কোনো একটা প্রভলেমের কারনে হঠাৎই একটু আগে মিটিং ডেকেছে । আর বলেছে বাইরের কাউকে যাতে ভিতরে যেতে না দেওয়া হয় । আহির মিহিরও সেই মিটিংয়েই আছে। মেঘ অনেক বার বলেছে -ও মিহিরের বোন হয়,, কিন্তু মেয়েটি ওর কথা একটুও বিশ্বাস করেনি। উল্টে মেয়েটি ভেবেছে মেঘ মিহিরের সাথে দেখা করার জন্য মিথ্যা বলছে। এই অফিসটা একদম নিউ। মাএ কয়েকদিন আগেই এটা উদ্ভোদন করা হয়েছে। এখানের স্টাফরাও সব নিউ তাই মেঘকে কেউই চিনতে পারছে না। আর তাড়াহুড়োর চোটে ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে । ফোনটা নিয়ে আসলে অন্ততো মিহির বা আহিরকে একটা কল করা যেতো। অথবা একটা ফেমিলি পিক রিসিভশনিষ্ট কে দেখালেই হয়তো ভিতরে যেতে দিতো।
মেঘ ঘড়ির দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো,, 09:50 বাজে। আর মাএ দশ মিনিট বাকী আছে। এখন কি হবে! কখন পেপারটা নিবে আর কখনই বা এখান থেকে যাবে। এখান থেকে ভার্ষিটিতে যেতেও তো অনেক সময় লাগবে। মেঘ তাড়াতাড়ি দৌড়ে আবার রিসিভশনে বসে থাকা মেয়েটার কাছে গেলো।অনুনয়ের স্বরে মেয়েটাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপু প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দিন। আমি মিটিং রুমের চারপাশেও যাবো না,, আমি শুধু মিহির ভাইয়ার কেবিনটা একটু চেক করবো। আমার মনে হয়, আমার পেপার গুলো ওর কেবিনেই আছে।দরকার হলে আপনিও আমার সাথে কেবিনের মধ্যে চলুন,, বিশ্বাস করুন আমি কোনো জরুরি কাগজ পএে হাত দিবো না,, শুধু আমার অ্যাস্যাইনমেন্ট গুলো পেলেই ওইগুলো নিয়েই চলে যাবো।দেখুন ওই গুলো যদি ঠিক সময়ে জমা দিতে না পারি তাহলে আমার অনেক বড় সমস্যা হতে পারে । ”
মেয়েটি কপাল কুচকে চোখে মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো
“আজব মেয়েতো আপনি! বারবার এভাবে বিরক্ত করছেন কেনো? প্লিজ চুপচাপ গিয়ে ওখানে বসে থাকুন । স্যারেরা মিটিং থেকে বের হোক তারপর আপনি যা বলার ওনাদের সাথে বলে নিবেন। অবশ্য ওনারা যদি সুযোগ দেয় তবে বলতে পারবেন। আরে ওনাদের সাথে সামান্য দেখা করতে গেলেও ,, আগে থেকে ডেট ফিক্স করে আসতে হয়। সেখানে আপনি এসে এভাবে হুট করে বললেই তো আর ওনারা আপনার সাথে কথা বলতে চলে আসবে না। আর মিহির স্যারের কেবিনে তো দূরের কথা,, আপনাকে এখান থেকে ভিতরেই ঢুকতে দিবো না।”
মেঘ কাদো কাদো গলায় বললো
“আচ্ছা ভিতরে নাহয় নাই ঢুকতে দিলেন । মিহির ভাইয়ার কাছে একটা কল দিয়ে বলুন মেঘ এসেছে তাহলেই হবে।”
“আমি কল দিতে পারবো না। আপনি নাকি ওনার বোন হন,, তাহলে নিজের ভাইকে নিজেই ফোন দিন।”
বলেই মেয়েটি মুখ বাকিয়ে একটা হাসি দিলো। মেঘ বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটি মেঘকে টন্ট করে কথাটা বলেছে। তাও মেঘ সেসবের তোয়াক্কা না করে বললো
“আপু আমি তাড়াহুড়োতে আমার ফোনটা বাড়িতে ফেলে এসেছি। নাহলে আগেই করতাম। প্লিজ তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ফোনটা করুন।”
মেয়েটি একটা ঝাড়ি মেরে বললো
“এইসব অজুহাত নিজের কাছেই রাখুন। আপনার কি মনে হয়,, আপনি যা বলবেন আমরা তাই বিশ্বাস করে নিবো? বোকা পেয়েছেন আমাদের? যে কেউ এসে নিজেকে মিহির স্যারের বোন বললেই সে মিহির স্যারের বোন হয়ে যাবে? এখনো ভালোয় ভালোয় বলছি বিরক্ত না করে চুপচাপ গিয়ে বসে থাকুন ,,নাহলে গার্ডসদের দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করে দিবো।”
মেয়েটি হঠাৎ এতো জোড়ে কথা বলায়। অফিসের ষ্টাফরা সবাই ওদের দিকে তাকালো । সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘ ভিষন লজ্জায় পড়ে গেলো ।ওর ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে । এখানে এসে এভাবে অপমান হতে হবে ও সেটা ভাবতেও পারেনি। দুটো ছেলে নিজেদের ডেস্ক থেকে উঠে এসে মেঘদের কাছে দাড়ালো। ওদের মধ্যে একটা ছেলে রিসিভশনিষ্ট মেয়েটিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কি হলো সৃষ্টি এভাবে চেচাচ্ছো কেনো? কোনো সমস্যা?”
মেয়েটি বললো
“দেখুন না স্যার,, এই মেয়েটি কখন থেকে উল্টোপাল্টা কথা বলে আমার মাথা খেয়ে যাচ্ছে। ও নাকি মিহির স্যারের বোন হয়! স্যারের কাছে নাকি ওর কোনো পেপার আছে! সেগুলো নিতে ও স্যারের কেবিনে যেতে চায়। আমি যেতে দেবো না বলেছি। তাই ও আমাকে স্যারের কাছে কল দিতে বলছে। ওর ফোন নাকি ও ভুলে বাড়িতে ফেলে এসেছে।নাহলে নাকি ও নিজেই দিতো।”
মেয়েটির কথা শেষ হতেই ছেলে দুটো হো হো করে হেসে দিলো। বাকিরা সবাই তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো আবার মুখ টিপে টিপে হাসছে।সৃষ্টি নামের মেয়েটা বললো
“আর হাসবেন না স্যার । আমার তো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে । কোথা থেকে যে এইসব পাগল ছাগল গুলা আসে!”
সেই ছেলেটা মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“হ্যালো! তুমি মিহির স্যারের বোন তাইনা? তুমি যদি মিহির স্যারের বোন হও তাহলে আমি হচ্ছি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কামঅন আমার সাথে হ্যান্ডশেক করো। ”
ছেলেটাকে এভাবে হাত বাড়াতে দেখে মেঘ দু’পা পিছিয়ে গেলো। মেঘকে এভাবে পিছিয়ে যেতে দেখে সৃষ্টি নামের মেয়েটা বললো
“স্যার উনি তো মিহির রহমানের বোন তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে হ্যান্ডশেক করতে চান না।”
বলে মেয়েটিও হাহা করে হেসে দিলো। এদের কথা শুনে মেঘের ভিষন কান্না পেলো। ও মাথা নিচু করে ঠৌট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।
হঠাৎই সবার হাসি থেমে গিয়ে পরিবেশটা একদম নিস্তব্দ হয়ে গেলো। সবাইকে এভাবে হঠাৎ থেমে যেতে দেখে মেঘ মাথা তুলে সামনে তাকালো। তাকিয়েই দেখলো আহান একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর হাটছে। ওর পিছনে চার-পাচ জন লোক হেটে আসছে। সবাই ফরর্মাল গেটাপে। আহানকে আসতে দেখে সব ষ্টাফরা একে একে দাড়িয়ে গেলো। মেঘ আর ওখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। দৌড়ে গিয়ে সোজা আহানকে জড়িয়ে ধরলো। এভাবে হঠাৎ করে মেঘ এসে জড়িয়ে ধরায় আহান স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো। ওর হাত থেকে ফাইটা টুপ করে নিচে পড়ে গেলো।আহানের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। নাহলে হঠাৎ করে এতো দিন পর কথা নেই বার্তা নেই মেঘ এখানে কেনো আসবে। মেঘ আহানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। সৃষ্টি নামের মেয়েটি দৌড়ে এসে রাগি কন্ঠে বললো
“এই মেয়ে কি করছো এসব? স্যারকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেনো? ছাড়ো ওনাকে!”
বলেই মেয়েটি ওর ডেক্সের উপরে থাকা একটা বেল বাজায়। বেলটি বাজানোর সাথে সাথে তিনজন গার্ড ভিতরে ঢোকে । মেয়েটি ওদের উদ্দ্যেশ্য করে বলে
“এই মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেও।”
গার্ড গুলো মেঘের দিকে দু’পা এগিয়ে আসতেই । আহান অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো
“এই ভূলটা ভূলেও করো না। যেখানে আছো সেখানেই দাড়িয়ে যাও। আর এক পা সামনে এগোলে এখান থেকে কেউ প্রান নিয়ে ফিরতে পারবে না।”
আহানের কথা শুনে গার্ড গুলো ভয়ে পিছিয়ে গেলো। অফিসের সবাই অবাক চোখে আহানের দিকে তাকালো। আহান মেঘকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে এতোক্ষন মেঘ যেখানে বসে ছিলো সেখানে বসালো।তারপর মেঘের সামনে হাটু গেড়ে বসে ওর দু গালে আলতো করে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মৃদ্যু স্বরে জিঙ্গেস করলো
“কি হয়েছে মেঘ পড়ি ? হঠাৎ এখানে কেনো এসেছো?”
মেঘ আহানের কথার কোনো জবাব দিলো না। ও ওর মতো মাথাটা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই যাচ্ছে। আহান আবারো বললো
“এই ভাবে কাদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে? কে কি বলেছে আমাকে বলো?”
মেঘ এবারেও চুপ করে রইলো। অফিসের সবাই অবাক চোখে আহান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। যে ছেলে ভালো করে কারো সাথে কথা অবদি বলে না । কখনো হাসে না। সব সময় চেহারায় গম্ভির একটা ভাব ফুটিয়ে রাখে,, সে আজকে এইটুকু একটা মেয়ের সামনে এভাবে হাটু গেরে বসে আদুরে গলায় কথা বলছে।এটাও যে কোনোদিন দেখতে পাবেন,, সেটা ওনারা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
“না বললেও বুঝবো কি কিভাবে তোমার কি হয়েছে। প্লিজ বলো তোমার কি হয়েছে।”
আহানের কথা শুনে মেঘের কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো। আহান তড়িঘড়ি করে বললো
“ইটস ওকে! ইটস ওকে! তোমাকে কিচ্ছু বলতে হবে না । কেদো না প্লিজ! আচ্ছা একটু পানি খাবে?”
মেঘ হ্যা না কিছুই বললো না। আহান ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো। তাকাতেই ওখানে উপস্থিত সবার আত্মা কেপে উঠলো। এতোক্ষন যে লোকটা খুব শান্ত আর আদুরে গলায় মেয়েটার সাথে কথা বলছিলো । ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই সেই শান্ত চেহারাটা ভয়ংকর হয়ে গেলো। আহান একজন ষ্টাফের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম চাহনি দিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“একগ্লাস পানি নিয়ে আসুন। ”
আহানের বলতে যতোটা দেরি হয়েছে লোকটার যেতে এক সেকেন্ডও লাগেনি।লোকটা দ্রুত গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে আহানের হাতে দিলো। আহান পানিটা মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো
“নাও এটা খেয়ে নাও। বেটার ফিল করবে।”
মেঘ গ্লাসটা হাতে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে ছুরে মেরে চেচিয়ে বললো
#চলবে,,,,
বিঃদ্রঃ কেউ কমেন্টে শুধু নেকস্ট লিখলে নেকস্ট পার্ট সামনের মাসে দিবো 🙂🙂