ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ২৯

0
785

#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_29

“নাও এটা খেয়ে নাও। বেটার ফিল করবে।”

মেঘ গ্লাসটা হাতে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে ছুরে মেরে চেচিয়ে বললো

“লাগবে না আমার পানি। আপনার পানি আপনি খান নাহলে আপনার ওই গুনধর ভাইকে খাওয়ান। অসভ‍্য একটা ছেলে,, দুইদিন ধরে রাত জেগে এ‍্যাসাইনমেন্ট গুলো করেছি। আর ও সেইগুলো নিয়ে এখানে চলে এসেছে । বলেছে অ‍্যাস‍্যাইন মেন্ট গুলো নিতে হলে অফিসে এসে তারপর নিতে হবে। আমি এখানে এসে এনাদের কতো রিকোয়েষ্ট করলাম । কিন্তু এনারা কেউ আমাকে ভিতরে ঢুকতেই দিলেন না,, উল্টে আমাকে অপমান করলেন । সব শেষ হয়ে গেলো ।এখন আর আমার এ‍্যাসাইনমেন্ট টা জমা দেওয়া হবে না। এতো কষ্ট সব বিফলে চলে গেলো ।আমার এক্সামের মার্কস সবার থেকে কম আসবে। আমি ফেল করবো।”

কথা গুলো বলে মেঘ আবারও ফুপিয়ে কেদে উঠলো। মেঘের কথা শুনে আহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো । ও আগেই বুঝতে পেরেছিলো এখানে কিছু একটা হয়েছে তাই মেঘ এমন করে কাদছে। আহান গম্ভির কন্ঠে জিঙ্গেস করলো

“তোমাকে কে অপমান করেছে মেঘ? আর কেই বা তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি?”

মেঘ কিছু বললো না চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। আহান বুঝলো মেঘকে জিঙ্গেস করে কোনো লাভ নেই,, ও কিছুই বলবে না । আহান বসা থেকে দাড়িয়ে স্টাফদের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে জিঙ্গেস করলো

“ওকে কে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি?”

সবাই চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। আহান ওদের আরেকটু সামনে গিয়ে বললো

“আপনাদের সবাইকে আমি কিছু জিঙ্গৈস করেছি। ওকে কে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি? ভালোয় ভালোয় অ‍্যান্সার টা দিয়ে দিন নাহলে সবাইকে শাস্তি পেতে হবে।”

আহানের কথা শুনে সবাই ভয়ে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইলো । আহান এতোক্ষন এমনিতেই রেগে ছিলো ।এখন এভাবে সবাইকে চুপ থাকতে দেখে রাগটা আরো বেড়ে গেলো। ও জোড়ে চিল্লিয়ে বললো

“আপনাদের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! আমার প্রশ্ন শুনেও কোনো উওর না দিয়ে এভাবে দাড়িয়ে আছেন? জিবনের প্রতি কি দয়া মায়া সব কমে গেছে?আমি জিঙ্গেস করেছি,,, আমার মেঘ পড়িকে কে ঢুকতে দেয়নি?”

আহানের চিৎকারে মেঘ কেপে উঠলো। ষ্টাফরা সবাই ভয় পেয়ে গেলো। স্টাফদের মধ‍্যে থেকে একজন লোক ভয়ে ভয়ে সামনে এলো এবং একে একে সব ঘটনা আহানকে বললো। সব শুনে আহানের ইচ্ছে করছে এই সৃষ্টিকে কাচা চিবিয়ে খেতে।



এই দিকে আহির আর মিহির মিটিং শেষ করে ফোন টিপছিলো । তখনই মিহিরের মনে পড়ে ও সকালে মেঘের এ‍্যাসাইনমেন্টা অফিসে নিয়ে এসেছিলো। আহানের সাথে মেঘের দেখা করনোর জন‍্য। কথাটা মনে পড়তেই মিহির দ্রুত দৌড়ে ওর কেবিনে চলে যায় । গিয়ে ফাইলটা নিয়ে বাইরের রুমের দিকে পা বারায়। তখনই ওর কানে আহানের চিল্লাচিল্লির শব্দ ভেষে আসে। ওরা দুজন দ্রুত বাইরের রুমের দিকে আসে। ওই লোকটা এতোক্ষন যা যা বলেছে ওরা দুজন সবই শুনেছে।



আহান সৃষ্টি নামের মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই। ওর চোখ পড়ে দরজার দিকে। দেখে মেঘ বসা থেকে উঠে বাইরে চলে যাচ্ছে । আহান দ্রুত দৌড়ে গিয়ে মেঘের হাত ধরে আটকে দেয়। তারপর ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করে

“তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

মেঘ নাক টানতে টানতে বলে

“বাসায় যাচ্ছি! এখন আর আমার এ‍্যাসাইনমেন্টের কোনো প্রয়োজন নেই। অলরেডি এগারোটা বেজে গেছে এখন আর ওটা জমা নেওয়া হবে না।”

আহান মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে এসে বললো

“এখন কোথাও যাবে না তুমি । আমি তোমাকে একটু পর তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসবো ।”

মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে মিহির বললো

“বনু এই নে তোর এ‍্যাসাইন মেন্টের পেপার।”

মিহিরকে দেখেই মেঘের রাগ উঠে গেলো। ও আহানের হাত থেকে নিজের হাতটা জোড়ে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে হনহন করে মিহিরের সামনে চলে গেলো।তারপর মিহিরের হাত থেকে এ‍্যাসাইন মেন্টের পেপারটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে দাতে দাত চেপে বললো

” তোর এ‍্যাসাইনমেন্টের গুষ্টি কিলাই। এখন ওটা দিয়ে আমি কি করবো? একটা কাজ কর তুই ওটা ভিজিয়ে ভিজিয়ে পানি খা।”

বলেই মেঘ মিহিরকে এলো পাথারি মারতে লাগলো। বেচারা মিহির মেঘকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না। মেঘ নিজের গায়ের জোড় দিয়ে মিহিরকে কিল ঘুসি যা পারছে তাই দিচ্ছে। আহিরের হাসতে হাসতে রিতীমতো গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । আহান সেও মুখ টিপে টিপে হাসছে। অফিসের সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহানদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন ওরা এতোক্ষনে বুঝে গেছে মেঘ সত‍্যিই মিহিরের বোন। এতোক্ষন ওরা যেভাবে মেঘকে অপমান করেছে তার পরিনতি যে কতোটা ভয়ংকর হবে সেটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।

সৃষ্টি নামের মেয়েটা মাথা নিচু করে ভয়ে কাপছিলো। তখনই ওর একজন মেয়ে কলিগ এসে সৃষ্টির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো

“মিস সৃষ্টি আপনি তো আজকে শেষ। স‍্যারেরা আপনার কি অবস্থা করবে ভাবতেও পারছেন না। দেখেই মনে হচ্ছে ওই মেয়েটা ওনাদের খুব আদরের । নাহলে একবার ভাবুন যে আহান খানকে এখন পযর্ন্ত কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতে অবদি দেখিনি,, সে এই মেয়েটার সামনে হাটু গেড়ে বসে,, মেয়েটার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। আহির স‍্যারের কথা তো বাদই দিলাম এতোদিন হয়ে গেলো ওনাকে এখন অবদি একটা মুচকি হাসি দিতেও দেখলাম না। ওনি যে এভাবে হাসতেও পারেন সেটা তো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আর মিহির স‍্যার অফিসের প্রথম দিন একটা মেয়ের সাথে সামান‍্য ধাক্কা খেয়ে ছিলেন বলে মেয়েকে অফিস থেকেই বের করে দিলেন। কিন্তু সে এখন এই মেয়েটার হাতে এতো মার খেয়েও উল্টে মেয়েটার গায়ে একটাও আঘাত করছে না। আর তুমি সেই মেয়েটাকে এইসব হাবিজাবি বলে অপমানিত করলে।আপনার কপালে দুঃখ আছে।”

মেয়েটির কথা শুনে সৃষ্টির ভয়টা হাজার গুন বেড়ে গেলো।

মিহির মেঘকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো

“বনু ওই পেপারটা আমি নিয়ে এসেছি কিন্তু বিস্বাশ কর আইডিয়াটা আহিরের ছিলো। ওই আমাকে বলেছিলো এ‍্যাসাইনমেন্টটা অফিসে নিয়ে আসতে।”

মিহিরের কথা শুনে মেঘ মিহিরকে ছেড়ে দিয়ে আহির কে গিয়ে মারা শুরু করলো।

আহির মেঘের মার খেয়ে লাফাতে লাফাতে বললো

“বনু ভূল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না প্রমিজ। আর এই ধরনের মজা করবো না।”

মেঘ আহিরের চুল ধরে টানতে টানতে বললো

“শয়তান ছেলে,,, তোকে তো আজকে মেরেই ফেলবো। সব সময় মাথায় শুধু বদ বুদ্ধি ঘোড়ে তাইনা! আজকে বাড়িতে গিয়ে পাপাকে সব বলে দিবো। তারপর দেখিস পাপা তোর কি অবস্থা করে।”

আহির মেকি হেসে মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললো

“এই না প্লিজ! তুইতো আমার কিউট সোনা বনু তাইনা? বাবাকে কিছু বলিষ না প্লিজ।”

“যতোই ভালো ভালো কথা বলিস না কেনো? আমি আজকে সব পাপাকে বলে দিবো।”

কথাটা বলেই মেঘ আহিরের পিঠে ধরাম ধরাম করে কিল দিতে লাগলো।আহান দেখলো মেঘ থামা-থামির কোনো নামই নিচ্ছে না। ওদের ননষ্টপ মেরেই যাচ্ছে।তাই দ্রুত আহিরের থেকে মেঘকে টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলো। কিন্তু মেঘ বারবার ওদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে । তাই আহান মেঘকে টানতে টানতে নিজের কেবিনে নিয়ে ঢুকিয়ে বাইর থেকে আটকে দিলো। মেঘ ভিতর থেকে চেচিয়ে বললো

“এই আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেনো দরজা খুলুন বলছি। নয়তো আপনার ওই দরজা আমি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিবো। আজকে ওদের আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না। ওদের আজকে আমি এই বিল্ডিং থেকে ফেলে ফেলে দিবো।ওদের মাথা একেবারে ফাটিয়ে দিবো।”

মেঘের কথা শুনে আহান ফিক করে হেসে দিলো। আর মনে মনে বললো -মেঘ পড়ি তুমি রেগে গেলে একদম ছোট্ট বাচ্চা হয়ে যাও ।

বলেই আহান আবার বাইরের রুমের দিকে হাটা দিলো। তবে এখন আর আহানের মুখে সেই হাসি টা নেই । চেহারার আদুরে ভাবটাও নেই। ওর চেহারায় স্পষ্ট রাগি ভাব ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো ভয়ংকর রকম লাল হয়ে গেছে । বাইরে এসেই সোজা গিয়ে আহির আর মিহিরের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর বললো

“তোদের অতিরিক্ত পাকামো করতে বারন করেছিলাম না? তারপরেও তোরা এটা কেনো করলি? আমি তোদের কিছু করতে বলেছি? আর করেছিসই যখন তাহলে এটা মনে রাখবিনা যে ও এখানে আসতে পারে।”

মিহির অপরাধী ভঙ্গিতে বললো

“সরি ব্রো আসলে হঠাৎ করে মিটিং টা ডেকেছিলে তো তাই ওর কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।”

আহান একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে বললো

“এখন যাহ ভির্ষিটিতে গিয়ে এইগুলো জমা দিয়ে আয়।”

“আহির বললো তা তো যাবোই। তার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর থেকে একটা অটোগ্রাফ নিয়ে নেই। কি বলিস মিহির।”

“হুমম অবশ‍্যই ! আমিও একটু দেখি অ‍্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট দেখতে কেমন। ভাব আমরা কতো লাকি শয়ং প্রেসিডেন্ট মহাশয় আমাদের অফিসে চাকরি করেন। আর আমরা তো এতোদিন ওনাকে চিনতাম না, তাই খাতির যত্ন টা করতে পারিনি। আজকে যখন ওনি নিজেই আমাদের আমদের ওনার পরিচয়টা দিলেন তাহলে এখন ওনার খাতির যত্নটা করেই ফেলি। ”

কথা গুলো বলেই আহির আর মিহির গায়ের কোর্ট টা খুলে শার্টের হাতাটা ফোল্ড করে সেই ছেলে দুটোকে মারতে লাগলো। মারতে মারতে ছেলে দুটোর নাক মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো। কিন্তু আহির মিহিরের সেদিকে কোনৌ ভ্রূক্ষেপ নেই। ওরা নিজেদের রাগ সব ছেলে দুটো গায়ে ঝারছে।

কিছুক্ষনের মধ‍্যেই চার জন লেডি বডিগার্ড ভিতরে প্রবেশ করলো আহান তাদের ইশারা করে সৃষ্টিকে দেখিয়ে দিলো ওরা এসে সৃষ্টিকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো। সৃষ্টি অনেক চেচামেচি করে হাত পা ছুড়েও কিছু করতে পারলো না। মেয়েগুলো সৃষ্টিকে একটা গাড়িতে করে নিয়ে চলে গেলো। কেউ ওকে বাচানোর জন‍্য ভয়ে সামনেও এগিয়ে এলো না।

আহির মিহির ছেলে দুটোকে মারতে মারতে একদম হাত পা মুখ থেতলে দিলো। তারপর গার্ডদের দিয়ে ওদের হসপিটালে ভর্তি হওয়ার জন‍্য পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরাও ভার্ষিটিতে চলে গেলো।

ওরা যেতেই আহান অফিসের ম‍্যানেজারকে ডেকে বললো

“ম‍্যানেজার সাহেব অফিসের সিসি ক‍্যামেরাটা ভালো ভাবে চেক করুন তারপর কে কে ওই সময় হেসে ছিলো তাদের সব গুলোকে স‍্যাল‍্যারি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিন। আর নতুন লোক এপাউন্ট করেন।”

ম‍্যানেজার বোকার মতো আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো -সামান‍্য একটু হেসেছে তাই এতোগুলো লোককে অফিস থেকেই বের করে দিবে! আজব এটা কেমন কথা।

_________________________

মেঘ গাল ফুলিয়ে আহানের কেবিনের মধ‍্যের একটা চেয়ারে বসে আছে। ও কতোক্ষন দরজা ধাক্কাধাক্কি করেছে কিন্তু কেউ দরজাটা খুলে দেয়নি। তাই বিরক্ত হয়ে এখানে এভাবে নাক ফুলিয়ে বসে আছে। পেটে ভিষন খিদে পেয়েছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালো । দেখলো আহান ভিতরে প্রবেশ করছে সাথে খাবারের ট্রে হাতে একটা ছেলেও আছে। ছেলেটা টেবিলের উপরে খাবারের ট্রে টা রেখে চলে গেলো। আহান ভিতরে ঢুকে কেবিনের দরজাটা লক করে দিলো। মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে ঝাড়ি মেরে বললো

“দরজাটা লক কেনো করলেন?”

আহান কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো

“তোমাকে রেপ করবো তাই!”

“হোয়াট? কি সব বলছেন ?মাথা ঠিক আছে আপনার?”

“তো আর কি বলবো? তুমি এমন ভাবে প্রশ্নটা এমন ভাবে করলে,, মনে হলো আমি তোমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করতে এসেছি।”

মেঘ বিরক্তির স্বরে বললো

“ওকে ভূল হয়েছে আমার এখন দরজাটা খুলে দিন আমি বাসায় যাবো।”

“চুপচাপ ওখানে বসে থাকো।সময় হলে আমি নিজেই দিয়ে আসবো।”

“না,, আমি এক্ষুনি যাবো।”

আহান ধমক দিয়ে বললো

“এই মেয়ে বসতে বলেছি না? চুপচাপ বসো? নাহলে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবো। যখন ওই মেয়েটা তোমাকে অপমান করছিলো তখন ওই টুকু পুচকে মেয়েকেই কিছু বলতে পারলে না,, এখন এসেছো আমার কথার অমান‍্য করতে! ভালোভাবে বসো নাহলে মেরে পা ভেঙে এখানে বসিয়ে রাখবো।”

মেঘ রাগে ফুসতে ফুসতে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। তারপর নাক ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো

“আই হেট ইউ!”

আহান গিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললো

“আই হেট ইউ টু! এবার চুপচাপ ওখানে বসে থাকো।”

আহানের কথা শুনে মেঘের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। মানুষকে আই লাভ ইউ টু বলতে শুনেছে কিন্তু কখনো কাউকে আই হেট ইউ টু বলতে শোনেনি। ইনফ‍্যাক্ট এটাও জানে না যে আই হেট ইউ টুর কোনো অর্থ আছে কিনা ।

আহান টেবিলের উপরে থাকা খাবারের বাটি থেকে খাবার প্লেটে বারতে বারতে বললো

“ব্রেকফাস্ট তো মনে হয় না করেই চলে এসেছো?”

মেঘ ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো

“আপনাকে কে বললো?”

“তোমার এই শুকনো মুখটা বলে দিয়েছে। আর আমি জানি তুমি অতিরিক্ত টেনশনে থাকলে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দেও। বিশেষ করে যখন কোনো এক্সাম আসে তখন।”

“আপনি কিভাবে জানলেন?”

“সেটা তোমাকে না জানলেও চলবে। চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো খাবারটা খেয়ে নাও,, অলরেডি সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। নিশ্চয়ই তোমার খুব খিদে পেয়েছে।”

“হুমম,, খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু খাবো না। আগে বলুন ওই কথা গুলো আপনাকে কে বলেছে।”

আহান একটু রাগি গলায় বললো

“সময় হলে এমনিতই জানতে পারবে । এখন জেদ না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

মেঘ চেয়ার থেকে দাড়িয়ে দরজার দিকে হাটা দিয়ে বললো

“বলবেন না তো? ওকে বলা লাগবে না,,আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাবো।”

আহান নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে মেঘকে টেনে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো

“তোমার সাহস হয় কি করে আমার অনুমতি ছাড়া এখান থেকে যেতে চাওয়ার। কেনো সব কিছু জানার এতো আগ্রহ তোমার? আর কি জানতে চাও তুমি? তোমার ব‍্যাপ‍্যারে ওই সব কিভাবে জানি? তাহলে শোনো আমি তোমার ব‍্যাপ‍্যারে সব কিছু জানি। এই চারটা বছরে তোমার প্রত‍্যেকটা দিনের, প্র‍ত‍্যকটা ঘন্টার,, প্রত‍্যেকটা সেকেন্ডের হিসেব রেখেছি আমি। তুমি কোথায় যাও,, কি করো,, কি খেতে পছন্দ করো,, কি খেলে তোমার সাইড এফেক্ট হয়,, কোন পরিক্ষায় কি মার্কস পেয়েছো,, কোন সাবজেক্টে বেশি ভালো,, কোনটায় বেশি খারাপ সব কিছু আমার নখ দর্পনে আছে।ইনফ‍্যাক্ট তোমার টোট‍্যাল কয়টা ড্রেস আছে ,,কয় জোড়া জুতা আছে ,,সেগুলো কি কি কালারের সব জানা আছে আমার। ”

মেঘ আহানের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারছে না আহান কি সত‍্যি বলছেন নাকি মিথ‍্যা।মেঘের হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ওর মুখটা কালো অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেলো। মেঘ একটু অভিমানী গলায় বললো

“এতোই যখন জানেন তাহলে সেদিন আমাকে ভূল বুঝে চলে এসে ছিলেন কেনো। কেনো বুঝতে পারেননি আমায়?”

আহান ভ্রু কুচকে বললো

“মানে,,,,,?”

“মানে আমি সেদিন আপনি টাচ করেছেন এইজন‍্য কাদিনি বরং আমার পুরোনো একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেছিলো তাই কেদেছিলাম।”

আহান অসহায় কন্ঠে বললো

“কি করবো মেঘ পড়ি বলো? তোমার চোখের পানি আমি একদম সহ‍্য করতে পারিনা। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে। সেদিন যখন তুমি কেদে দিয়েছিলে তখন আমার মাথায় শুধু একটা কথাই আসছিলো। আমার জন‍্য আমার মেঘ পড়ি কেদেছে । আমি তাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ।আমি তোমাকে ভূল বুঝিনি বিশ্বাস করো,, শুধু চেয়ে ছিলাম তুমি আমার কারনে যাতে কোনো কষ্ট না পাও। তাই এতো গুলো দিন তোমার ধারে কাছেও যাই নি।”

আহানের কথায় মেঘের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। এই লোকটা সব সময় ওর কথা কতো ভাবে ও কিনা বারবার নিজের বোকামির জন‍্য এই লোকটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে। মেঘের ভাবনার মাঝেই আহান সন্ধিহান কন্ঠে বললো

“মেঘ পড়ি তুমিতো আমাকে একদমই পছন্দ করো না তাইনা? তাহলে আমি তোমাকে ভুল বুঝলাম কিংবা ঠিক বুঝলাম তাতে তো তোমার কিছু আসা যাওয়ার কথা না? তাহলে তুমি আমাকে এই কথা গুলো বলে কৈফিয়ত কেনো দিচ্ছ?”

আহানের কথা শুনে মেঘের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।ও অস্থির হয়ে বললো

“জানি না,,, আমি কিচ্ছু জানি না। বিশ্বাস করুন আমি এসব কেনো করছি,,কি জন‍্য করছি আমি বুজতে পারছি না। শুধু জানি আপনি আমাকে ভূল বুঝলে আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয় আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি।প্লিজ আপনি আমাকে কখনৌ ভুল বুঝবেন না।”

মেঘ হিচকি তুলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। আহান মেঘের চোখের পানিটা হাত দিয়ে আলতো করে মুছিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো

“ইনশাআল্লাহ মেঘ পড়ি,, পৃথিবীর সব মানুষও যদি একজোট হয়ে আমায় তোমার বিপক্ষে শাক্ষী দেয় তাহলেও আমি কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।”

বলেই আহান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘও চুপটি করে আহানের বুকে মুখ গুজে রইলো। আহানের ঠোটের কোনে অদ্ভুত পাপ্তির এক হাসি। ওর মন আর মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ওর সেই কাঙ্ক্ষিত জিনসটি ওর হতে চলেছে।

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here