জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ৪০-৪৩

0
300

#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪০+41+42+43
.

সকালবেলা বিছানায় বালিশের ওপর দু হাত রেখে হাতের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রিখিয়া। নিজের জীবনটা নিয়ে ভাবছে ও। সত্যিই কী ওর জীবনটা অন্যরকম হতে পারত না? সেই ক্লাস এইট থেকে টিউশনি করে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যাত্রা শুরু হয়েছিল ওর। এতো টানাপোড়েনের সংসারে ঠিক কীভাবে যে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সেটা ওই জানে। যে বয়সে মেয়েরা মুক্ত পাখির মত উড়তে চায়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে চায়, আড্ডা দিতে চায়; সেই বয়স থেকেই ও নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে। নিজের সবরকমের শখ-আল্লাদের বিসর্জন দিয়েছে। নিজের জন্যে কিছু করেনি। কোন স্বপ্নই ছিলোনা। শুধু একটাই স্বপ্ন ও যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে শুধু সেই ওকে ভালোবাসবে তা না। ওও তাকে নিজের সবটা উজার করে ভালোবাসবে। কিন্তু যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসল সে ওকে ভালোবাসতে পারেনি। এতে সেই ব্যাক্তিরও হয়তো তেমন দোষ নেই। ভালোবাসা তো আর জোর করে হয়না। এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাতটা বাজে। ওর বাবা-মায়ের ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়ে গেছে। ওনাদের আবার চা করে দিতে হবে। রিখিয়া উঠে বেড়িয়ে দেখল সত্যিই ওনারা উঠে গেছেন। দুজন বসে ছোট ছোট আওয়াজে গল্প করছেন। একটু হাসল রিখিয়া। বিয়ের কতগুলো বছর হয়ে গেছে, শেষ বয়সে এসেও দুজনের কত মিল, ভালোবাসা একটুও কমেনি।

যারা বলে যে, অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়, তারা হয়তো এদের মত মানুষদের দেখেই নি। শত অভাবের মাঝেও হাতে হাতে ধরে একসাথে বেঁচে আছে এরকম উদাহরণ খুঁজলে কম পাওয়া যাবেনা। কিন্তু আমরা তো সবসময় শুধু নেতিবাচক দিকটাই চোখে বেশি দেখি। সেটারই চর্চা করি। কার বউ কাকে ছেড়ে চলে গেছে, কার বর কাকে ডিবোর্স দিয়েছে, কার সাথে কার ব্রেকআপ হয়েছে এসব নিয়েই মাতামাতি করি। চলার পথে এসবেরই উদাহরণ দেই। কিন্তু আশেপাশের ছোট্ট কুঁড়েঘরে কত দম্পতি সুখী জীবন কাটাচ্ছে সেদিকে তাকিয়েও দেখিনা। তাদের একটা প্রচলিত কথা আছে ‘ এগুলো শুধু সিনেমা, নাটক, উপন্যাসেই মানায়, বাস্তবে এসব হয় না।’ এমনভাবে বলবে মনে হবে যেন সারাপৃথিবীর সমস্তরকম মানুষের সমস্তরকম জীবনধারা এরা দেখে মুখস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু মনের এসব নেতিবাচকতাকে দূরে সরিয়ে, সবকিছুর মধ্যে যদি ইতিবাচক দিকগুলো খোঁজার মানসিকতা তৈরী করতে পারো। জীবনটাকে নিজের মত করে উপভোগ করার চেষ্টা করতে পারো। জীবনের খারাপ সময়গুলোকে ইন্টারেস্টিং এডভেঞ্চার, আর ভালো সময়গুলোকে ফেস্টিভ্যাল হিসেবে নিতে পারো তাহলে দেখবে জীবন ঐসব সিনেমা, নাটক, উপন্যাসের চেয়েও বেশি সুন্দর মনে হবে।

রিখিয়া ভালোভাবে চা বানিয়ে, কাপে ঢেলে ওর বাবা-মার রুমে গেল। দরজার কাছে গিয়ে বলল,

” বাবা, আসবো?”

রেজাউল ইসলাম মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল,

” হ্যাঁ আয় মা। ভেতরে এসে বস।”

রিখিয়া ভেতরে গিয়ে রেজাউল ইসলামের দিকে চায়ে কাপ এগিয়ে দিল ,এরপর জাহানারার দিকে। নিজের কাপ হাতে নিয়ে ছোট্ট হালকা ফাটল ধরা ট্রে টা পাশে রেখে একটা প্লাস্টিকের বড় মোড়া টেনে বসল। তারপর বলল,

” বসতে বললে যে? কিছু বলবে বাবা?”

” না তেমন কিছু না। দুদিন যাবত দেখছি বেশি চুপচাপ হয়ে গেছিস। অফিস থেকে এসে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকিস। কী হয়েছে মা?”

রিখিয়া নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলল,

” তেমন কিছুই না বাবা। আসলে শরীরটা ভালো নেই।”

জাহানারা চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললেন,

” সারাদিন এমন গাধার খাটনি খাটলে শরীরের আর কী দোষ?”

” কোথায় আর খাটি মা? ওইতো একটু অফিস যাই, সকালে ঘর ঝাড়ু দিয়ে তোমাদের চা করে দেই, নাস্তা বানাই, রাতের রান্নাটা করি আর ঘর মুছি। আর কী করি? বাকি সবতো তুমিই করো?”

” বাকিটা কী রইল শুনি?”

” কেন? দুপুরের রান্নাটা।”

জাহানারা আর না হেসে পারলেন না। রিখিয়াও হাসল। রেজাউল ইসলাম বললেন,

” দেখ মা, তোকে আর বিয়ের জন্যে আমরা জোর করব না। তোর যা ইচ্ছে হয় সেটাই করবি। তবুও এরকম মুখ গোমড়া করে কথা বলিস না।”

রিখিয়ার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থেকে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি বিয়ে করতে রাজি বাবা। তোমরা চাইলে শাফিন ভাইর পরিবারের সাথে কথা বলে দেখতে পারো।”

রেজাউল ইসলাম আর মিসেস নাহার দুজনেই বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন রিখিয়ার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খুশি কন্ঠে বলে উঠলেন,

” তুই সত্যি বিয়ে করতে চাইছিস?”

জাহানারা বেগমও প্রচন্ড উল্লসিত কন্ঠে বললেন,

” আমি ঠিক শুনছি? সত্যিই তুই বিয়ে করবি?”

বাবা-মায়ের এতো খুশি দেখে রিখিয়া মলিন হাসি দিল। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ।”

রেজাউল ইসলাম বললেন,

” সত্যিই মন থেকে বলছিস তো? না-কি আমাদের খুশির জন্যে..

” না বাবা, মন থেকেই বলছি। একটা কথাতো ঠিকই। কতদিন আর এভাবে থাকব? তোমরা জানিয়ে দাও ওনাদের যে আমি রাজি।”

” ঠিকাছে আমরা কথা বলছি।”

আর কথা না বাড়িয়ে ঐ রুম থেকে বেড়িয়ে চলে রিখিয়া। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরল। ওখানে থাকলে ওনাদের সামনেই কেঁদে ফেলত। খুব মনে পরছে বিহানের কথা আজ। ঐ লোকটার কী ওর কথা একটুও মনে পরেনা? একটুও মন কাঁদেনা ওর জন্যে? এতগুলো মাস একসাথে কাটানোর পরেও কী বিহানের মনে একটুও দাগ কাটতে পারেনি রিখিয়া? রিখিয়ার চেঁচিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছেনা। মন শুধু একটা কথাই বলছে, কী হতো বিহান আমায় ভালোবাসলে? কেন একটু ভালোবাসতে পারলেন না? আমি কী এতোটাই খারাপ ছিলাম? এতোটাই অযোগ্য ছিলাম আপনার?”

___________

সৌহার্দ্য বেশ বিরক্ত হচ্ছে এই মুহূর্তে। এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। সেদিন কেন যে মার কথায় রাজি হয়েছিল কে জানে। ওতো জানতো কয়েকদিন কেন? যুগ যুগ ধরে কোন মেয়েকে নিয়ে ঘুরলেও ওর মনে সেই অনুভূতি আসবেনা। আর না ও বিয়ের জন্যে হ্যাঁ বলবে। এখন ওর বাবা-মা যেই মেয়েটাকে দেখেছিল ওর জন্যে তার সাথে শপিং এ যেতে হবে ভাবলেই গা জ্বলছে। একরাশ বিরক্তি নিয়েই রেডি হচ্ছে যাওয়ার জন্যে। তখনই দরজায় কেউ নক করে বলল,

” আসতে পারি?”

সৌহার্দ্য তাকিয়ে দেখল এটা আর কেউ নয় সেই মেয়েটাই। নাম দোলা। সৌহার্দ্য সৌজন্যতামূলক হাসি দিয়ে বলল,

” হ্যাঁ আসুন।”

” আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। আমি অনেক ছোট আপনার। আর আমি রেডি। আপনি কতটুকু রেডি হয়েছেন দেখতে পাঠাল আন্টি।”

সৌহার্দ্য ঘড়ি পরতে পরতে বলল,

” দেখুন, আমি আগেই অাপনাকে কিছু কথা বলে রাখি। আমি এমনিতেও আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। শুধু বাবা-মার মনে শান্তির জন্যে কটা দিন আপনার সাথে ঘুরতে ফিরতে হবে। কিন্তু প্লিজ আমার কাছে কিছু এক্সপেক্ট করবেন না।”

দোলার চোখে মুখে প্রথমে একরাজ্যের বিষ্ময় ফুটে উঠলেও হঠাৎ করেই চোখে মুখে খুশি ঝলক দেখা দিল। ও খুশি হয়ে বলল,

” আর ইউ সিরিয়াস? আপনি জানেন আমিও আপনাকে এটাই বলতে চাইছিলাম। ভাবতে পারিনি আমার কাজটা এতো ইজি হয়ে যাবে। উফফ! থ্যাংকস্ থ্যাংকস্।”

সৌহার্দ্য বোকার মত তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। সৌহার্দ্য এরকম দৃষ্টি দেখে দোলা হেসে বলল,

” বোঝেন নি কিছু তাইনা? আচ্ছা বলছি শুনুন। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তেমন বড় চাকরি করেনা। কিন্তু যেটুকু করে আমাদের চলে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। দেখতেও আপনার মত এতো সুন্দর না কিন্তু আমার কাছে সে বেস্ট ওয়ান। কিন্তু বাবা-মা মানছেই না। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার বাবা-মা প্রস্তাব দিয়ে সব বরবাদ করে দিল। আমিও শর্ত দিয়েছি যে যদি অাপনার আমাকে পছন্দ না হয়। তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে ওর সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে। ওনারাও রাজি হয়েছেন। আমিতো ভেবেছিলাম এসে আপনাকে রিকোয়েস্ট করে না বলাব। কিন্তু এখন তো দেখছি সব আগে থেকেই সেট।”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে সব শুনছিল। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওও হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,

” যাক দুজনের জন্যেই কাজটা সহজ হয়ে গেল তাহলে?”

” হুম। আপনিতো রেডি চলুন! যাওয়া যাক? বাকি কথা ঘুরতে ঘুরতে বলব।”

” হুম চল।”

এদিকে তুর্বী গাড়ির জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। শপিং মলে যেতে হবে একটু। সকালে ওর ভাই হস্টেল থেকে ফোন করেছিল। ফোনে বলল যে,

” আপু, প্লিজ একবার এসে দেখা করে যা। কতদিন দেখিনা তোকে।”

” আমি ঢাকাতেই আছি ভাই।”

” কি? সত্যিই? প্লিজ আয়না একবার।”

” আসছি আমি। বিকেলের দিকে যাবো।”

” শোননা আপু। আমার জন্যে দুঠো জিন্স আর একটা কালো রঙের ঘড়ি আনবি প্লিজ? পরীক্ষা চলছে। বেড় হতেও পারছিনা ঠিকমতো।”

” আচ্ছা নিয়ে আসব।”

হঠাৎ একটা খালি প্রাইভেট কার চোখে পরতেই হাত দিয়ে থামালো ও। তারপর শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গাড়িতে থাকাকালীন মিরাজের ফোন এসছিল। ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিয়েছে। আজ ওর ভাইর সাথে দেখা করে কালকেই রিখিয়াদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরবে ও। ওর রিখিয়ার সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন, খুব তাড়াতাড়ি। শপিং মলের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাটা শুরু করল ও।

সৌহার্দ্য আর দোলা শপিং মলে হেটে হেটে বেশ কিছু জিনিসপত্র কিনেছে। তখনই দোলার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটল ওর। সৌহার্দ্য দিকে তাকিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলল,

” বয়ফ্রেন্ড।”

সৌহার্দ্যও চোখের ইশারায় ওকে কথা বলার জন্যে যেতে বলল। দোলা একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করল। নিজের মনেই একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল সৌহার্দ্য। সবার জীবনেই ভালোবাসা আছে। খুব কী ক্ষতি হত যদি ওর ভালোবাসাও আজ ওর সাথে থাকত? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেল। প্রথমে ভাবল চোখের ভুল। কিন্তু পরে আরও ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝল যে না ও ঠিক দেখছে। তুর্বী আসছে এদিকে। হ্যাঁ এটা তুর্বীই। আর যাই হোক তুর্বীকে চিনতে ও ভুল করবে না। এদিকে তুর্বীর চোখও সৌহার্দ্যর ওপর পরতেই ও থমকে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। ওর পায়ের গতিও ধীর হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে এগোচ্ছে সৌহার্দ্যর দিকে। ও যে হতভম্ব হয়ে গেছে সৌহার্দ্যকে দেখে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সৌহার্দ্যর হাত থেকে আপনাআপনি শপিংব্যাগগুলো পরে গেল। গলা কাঁপছে ওর, শুকনো ঢোক গিলছে বারবার। তুর্বীর দৃষ্টিও খুব শান্ত। তখনই দোলা এসে বলল,

” একি? ব্যাগগুলো ফেলে দিয়েছেন কেন? সামান্য কটা ব্যাগ ধরে রাখতে পারলেন না? কী যে করি আপনাকে নিয়ে।”

বলে ব্যাগগুলো তুলতে লাগল। সৌহার্দ্যর সেদিকে খেয়াল নেই। ও তুর্বীকে দেখায় ব্যস্ত। কাধের নিচে পরা চুলগুলো এখন কিছুটা বড় হয়েছে। শার্ট, টিশার্ট আর টপসের বদলে এখন হাটু অবধি কুর্তি পরেছে। চোখে মুখে সেই চাঞ্চল্য ভাবটা নেই। ঠিক আছে তো তুর্বী? এমন লাগছে কেন?
মেয়েটাকে সৌহার্দ্যর পাশে দেখেই তুর্বী থেমে গেছে। বুকের মধ্যে কেমন করতে লাগল। সৌহার্দ্য কী বিয়ে করেছে? করাটাই তো স্বাভাবিক। ও তো সৌহার্দ্যকে রিজেক্ট করে দিয়েছিল। সৌহার্দ্যতো সারাজীবন বসে থাকবেনা। তাহলে ওর কষ্ট হচ্ছে কেন? তাহলে কী এই দুবছর যেটা সন্দেহ করেছিল সেটিই ঠিক? তবে সৌহার্দ্যকে দেখে ও খুশি হয়েছে। যাক দেশে ফিরেছে তাহলে। এবার বিহানের সাথে কথা বলিয়ে সবটা ঠিক করে দেওয়া যাবে।

হঠাৎ করেই সৌহার্দ্য নিজেকে সামলে নিল। চোখ ঝাপটে ছলছলে ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে, নিজেকে একেবারে স্বাভাবিক করে নিয়ে তুর্বীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

” ভালো আছো?”

তুর্বীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে চোখের কোণে আঙুল বুলিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,

” আছি। তুমি?”

সৌহার্দ্য একটু অবাক হল। তুর্বীর গেট আপের সাথে ভয়েজ টোনের পরিবর্তন এসছে। চাঞ্চল্যের জায়গায় গাম্ভীর্য এসে ভর করেছে। তবুও হাসি মুখে বলল,

” বেশ ভালো।”

সৌহার্দ্য বেশ ভালো কথাটা তুর্বীর মনে লাগছ? সত্যিই এতো ভালো আছে ওকে ছাড়া? তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” ওহ।”

দোলা এগিয়ে এসে বলল,

” কী হল? যাবেন না? এখনও আমার পায়েল কেনা বাকি।”

সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” তুমি যাও। আমি আসছি।”

দোলা চলে গেল। সৌহার্দ্যও যেতে নিলে তুর্বী আরেকবার কষ্ট পেল। ওকে দুটোবছর পর দেখেও এটুকু কথা বলেই চলে যাচ্ছে। খারাপ লাগাটাকে চাপা দিয়ে তুর্বী বলল,

” সৌহার্দ্য?”

সৌহার্দ্য ঘুরে তাকাল। এই মেয়ে আবার কেন ডাকছে ওকে? ও কী বোঝেনা যে ওর সামনে নিজেকে সামলে রাখতে সৌহার্দ্যর কষ্ট হচ্ছে? সৌহার্দ্য পেছন ফিরে বলল,

” কিছু বলবে?”

তুর্বী কয়েকসেকেন্ড চুপ থেকে বলল,

” তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে আমার। খুব আর্জেন্ট। একটু সময় দিতে পারবে আমাকে? বেশি সময় নেবনা, জাস্ট কিছুক্ষণ নেব।”

#চলবে…#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪১
.

কিছু মানুষ আমাদের স্মৃতিতে সর্বক্ষণ থাকে। তাদের নিয়ে আমরা ভাবি, চিন্তা করি, তাদের শুধু একবার দেখার জন্যে ভেতরে ভেতরে ছটফট করি। কিন্তু তারা যখন সামনে চলে আসে তখন কী বলব নিজেরাই বুঝে উঠতে পারিনা, কথাগুলো সব গলাতেই আটকে যায়, প্রচন্ড অস্বস্তি হয়। সেরকমই অবস্থা হয়েছে এখন সৌহার্দ্য আর তুর্বীর। দুজনে একটা রেস্টুরেন্টের টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে। এই রেস্টুরেন্টে আগে প্রায়ই আসত ওরা। ওদের অনেক সুন্দর সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী এই জায়গা, অনেক স্মৃতি আছে এখানে। বেশ অনেকক্ষণ যাবত দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। দুজনের মধ্যেই অনেক কথা জমে আছে। কিন্তু কোন এক জড়তার জন্যে বলতে পারছেনা। সৌহার্দ্য তুর্বীর এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হচ্ছে। যেই মেয়েটার মুখে সবসময় খই ফুটতো সে এত চুপচাপ কীকরে? তুর্বীর মধ্যে এই ইতস্তততা ব্যপারটা ঠিক মানতে পারছেনা সৌহার্দ্য। তাই একটু গলা ঝেড়ে নিজেই বলল,

” কিছু বলবে বলছিলে?”

সৌহার্দ্যর কথায় তুর্বীর ধ্যান ভাঙে। ও জিভ দিয়ে ঠোঁটে ভিজিয়ে নিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আগে বল কী বলে ডাকব তোমাকে? সৌহার্দ্য রায়হান না-কি আর জে SR?”

সৌহার্দ্য চমকে তাকাল তুর্বীর দিকে। সেটা দেখে তুর্বী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। সৌহার্দ্য প্রচন্ড অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুর্বী একইভাবে হেসে বলল,

” এতক্ষণ নাইনটি পার্সেন্ট শিওর ছিলাম। এখন হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিওর হয়ে গেলাম সে তুমিই SR।”

সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” তুমি কীকরে জানলে?”

তুর্বী নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। তারপর চোখ তুলে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি আমাকে যখন SR কিডন্যাপ করেছিলো তারপর থেকে আমি রেগুলার তাঁর শো শুনতাম। ভালোলাগত আরজে SR এর কথাগুলো। তোমার সাথে কথার ধরণ কন্ঠের বেশ মিল পেলেও ব্যাপারটা কাকতলীয় হিসেবেই নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু যখন তুমি চলে গেলে আর ঠিক তারপরেই SR ‘প্রভাতের আলো’ শো টা করা বন্ধ করে দিল। প্রথম খটকা তখনই লাগে। এরপর কেন জানি সবকিছুই মেলাতে পারছিলাম। হঠাৎই অফিসে আমার মডেল এপ্রুভ হওয়া। তারপর অফিসে তোমার এন্ট্রি। আমায় দেখেও অবাক না হওয়া। সবটা মেলাতে পারছিলাম। আর অলমোস্ট শিওর হয়ে গেছিলাম তুমিই আর.জে. S.R.। তুমি চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েকদিন হৈ চৈ হয়েছিল। এখনও তো অনেকেই অপেক্ষা করে আছে কবে তাদের আর জে SR আবার ‘প্রভাতের আলো’ হোস্ট করবে।”

সৌহার্দ্য একটু হেসে বলল,

” আর তুমি?”

তুর্বী শীতল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। এরপর একটু হেসে বলল,

” একজন শ্রোতা হিসেবে অবশ্যই চাইব।”

সৌহার্দ্য স্হির দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। সে তো চেয়েছিল মনের মানুষ হিসেবে তুর্বী স‍ৌহার্দকে চাইবে। কিন্তু সেটা হয়তো কখনও হওয়ার নয়। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। নিজেকে স্বাভাবিক করে সৌহার্দ্য বলল,

” তুমি খুব দরকারি কিছু বলবে বলছিলে। দু-বছর পর হঠাৎ কী হল? যে আমায় তোমার এতো প্রয়োজন? না-কি মন ঘুরে গেছে এখন?”

সৌহার্দ্যর শেষ কথাটায় তুর্বীর মনে লাগল। মাথা নামিয়ে হালকা তাচ্ছিল্যের হালকা হাসি হেসে বলল,

” খোঁচা দিচ্ছো?”

” একদমই না। আমার এতো সামর্থ্য কোথায়? তা হঠাৎ চাকরি ছেড়ে চলে গেলে যে?”

তুর্বী একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” সিলেটে ভালো একটা জব ওফার ছিল। বেতন ভালো ছিল, জায়গাও সুন্দর ছিল তাই চলে গেলাম।”

সৌহার্দ্য শীতল দৃষ্টিতে তুর্বীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

” এখন সিলেটেই থাকো তাহলে?”

” হুম।”

” একই পোস্ট?”

” সিনিয়র আর্কিটেক্ট।”

সৌহার্দ্য বেশ অবাক হল। তবে চোখেমুখে অবাক ভাবটা দ্রুত কাটিয়ে বলল,

” হ্যাঁ এবার বল, কী বলছিলে?”

তুর্বী একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ভাবল যে, না এখন কাজের কথায় আসতে হবে। এসব বাড়তি কথার আজ আর কোন মূল্য নেই। শুধুই সময় নষ্ট। তাই সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে ও বলল,

” বিহান কোথায় জানো?”

হঠাৎ বিহানের প্রসঙ্গ ওঠাতে চমকে উঠল সৌহার্দ্য। হঠাৎ এখানে বিহানের প্রসঙ্গ তোলার মানে বুঝল না। তাই ও অবাক হয়ে বলল,

” হঠাৎ বিহানের কথা বলছ?”

” জানো কোথায়?”

সৌহার্দ্য হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়ল। তুর্বী দুই হাত টেবিলের ওপর রেখে বলল,

” সৌহার্দ্য বিহান অন্যায় করেছিল ঠিকই। কিন্তু তুমি ওকে ছেড়ে এভাবে চলে না গেলেও পারতে। তুমি জানতে তুমি ছাড়া ওর পাশে কেউ ছিলোনা। ছেলেটা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল বলেই রিখুকে নিজে থেকে সবটা বলে ক্ষমা চেয়েছিল। হ্যাঁ ওর শাস্তি প্রাপ্য ছিল। তাই বলে তুমি ওর একমাত্র বাঁচার সম্বলটাই ওর থেকে কেড়ে নিলে? এটা কী লঘু পাপে গুরুদন্ড হয়নি?”

সৌহার্দ্য চোখ বন্ধ করে ফেলল। নিজের মনেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। তুর্বী এখনও মনে করে যে শুধুমাত্র বিহানের জন্যেই ও দেশ ছেড়েছিলো? কবে বুঝবে ওর তুর ওকে? একটুও কী বুঝতে পারেনা ? মনের কথা মনে রেখেই সৌহার্দ্য আফসোসের একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

” আমি জানি সেটা। আর যখন বুঝেছি তখন ওকে তো কোথাও খুঁজেও পাচ্ছিনা। কোথায় আছে কে জানে?”

” আমি জানি।”

তুর্বী হঠাৎ এমন কথায় চমকে উঠল সৌহার্দ্য। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তুর্বীর দিকে। তুর্বী বলল,

” হুম। জানি কোথায় আছে। বান্দরবান আছে এই মুহূর্তে ও।”

সৌহার্দ্য অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

” তুমি কীকরে জানলে?”

তুর্বী সৌহার্দ্যকে ওর বান্দরবানে ট্রেনিং এ যাওয়ার পরের ঘটনা সব খুলে বলল। সব শুনে সৌহার্দ্য অবাক হয়ে বলল,

” হ্যাঁ কিন্তু। তুমি হঠাৎ আমাকে এসব বলতে কেন এলে?”

” কারণ সৌহার্দ্য, আমি বিহানের চোখে রিখুর জন্যে অসম্ভব ভালোবাসা দেখেছি।”

সৌহার্দ্য বেশ অবাক হয়ে বলল,

” কী?”

” হ্যাঁ। তুমি এখন বিহানকে দেখলে চমকে যাবে। এখন অনেকটা বদলে গেছে ও।”

কথাটা শুনে সৌহার্দ্য নিজের মনেই হাসল। বদলেতো তুর্বীও গেছে। কতটা বদলেছে হয়তো তুর্বী নিজেও অনুমান করতে পারছেনা। সৌহার্দ্য একটু নড়েচড়ে বসে বলল,

” তুমি কীভাবে জানলে?”

তুর্বী সৌহার্দ্যকে বিহানের পরিবর্তন, মেয়েদের সাথে না মেশা, রিখিয়ার ঐ পেন্টিং, বিহানের বলা কিছু কথা, সবটা বলল। সব শুনে সৌহার্দ্য নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। ওর ভাইটা এতোটা বদলে গেছে? পরিস্থিতি বিহানকে আবার বদলে দিল? তাও নতুনভাবে? এসব ভাবতে ভাবতেই তুর্বী বলল,

” এবার তুমিই ভাবো। ভালো না বাসলে কোন মেয়ের এতো নিখুঁত ছবি আঁকা যায়? কেউ এমন দেবদাস টাইপ হয়ে যায়? আর ওর বলা কথাগুলো?”

সৌহার্দ্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। সবার ভালোবাসা বুঝতে পারলেও সৌহার্দ্যর ভালোবাসাটা আজও কেন বোঝেনা তুর্বী? না-কি বুঝেও বুঝতে চায়না। সৌহার্দ্য তৃপ্তির হাসি বলল,

” বিহান প্রেমে পরেছে? আমার ভাই সত্যিই ভালোবাসতে শিখে গেছে? ভালোবাসার মানে বুঝতে পেরেছে?”

” হুম। আর সেইজন্যই আমি ঢাকা এসছি। আমি জানি চেষ্টা করলেই ওদের আবার এক করা সম্ভব। আমি রিখিয়াকে যতটুকু চিনি ও আজও বিহানকে ততটাই ভালোবাসে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রিখিয়া যদি এতদিনে বিয়ে করে ফেলে? ওদের গ্রাম আর পরিবারের যা অবস্থা, এটা অসম্ভব নয়।”

সৌহার্দ্য একটু হেসে বলল,

” চিন্তা করোনা। সেরকম কিছুই হয়নি। ওর বিয়ে হয়নি এখনও। আর তোমার ধারণা ঠিক। শী স্টিল লাভ বিহান সো মাচ।”

তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি কীকরে জানলে?”

” আমি সেদিন ওদের গ্রামেই গেছিলাম একটা বিয়েতে। সেখানেই দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে।”

তুর্বী কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,

” কেমন আছে ও?”

” এমনিতে ভালো তবে মানসিক শান্তিতে নেই।”

তুর্বী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” তোমার ভাই হয় বিহান। ও যা করেছে তার শাস্তি ও পেয়ে গেছে। প্লিজ এবার সবটা ঠিক করে নাও। আর হ্যাঁ আমি চাই ওরা আবার একে ওপরের কাছে অাসুক। তোমার সাহায্য প্রয়োজন। করবেতো হেল্প?”

স‍ৌহার্দ্য গ্লাস ঘোরাতে ঘোরাতে একটু হেসে বলল,

” আমি সবসময়ই চাইতাম আমার ভাই সত্যিই মন থেকে কাউকে ভালোবাসুক। এমন কেউ ওর জীবনে আসুক যে ওকে সবটা দিয়ে ভালোবাসবে। ওর সব ক্ষত সাড়িয়ে দিয়ে ওকে স্বাভাবিক জীবন দেবে। আর রিখিয়ার চেয়ে ভালো ওর জন্যে কেউ হতেই পারেনা। তাই আমার ভাইয়ের জন্যে হলেও আমি সাহায্য করব।”

তুর্বী উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,

” গ্রেট! তুমি বান্দরবান গিয়ে বিহানকে নিয়ে এসো। এদিকে আমি রিখিয়ার কাছে গিয়ে ওকে শহরে আনবো। এরপর দুজনকে একজায়গায় কথা বলাতে পারলে বাকি যা হবার হয়ে যাবে। আর কিছু বাকি থাকলে আমরাতো আছিই।”

সৌহার্দ্য একটু হাসল। ব্যাপারটা এতোটাও ইজি না ও জানে। তবে প্রথম ধাপ এটাই ঠিক আছে। তাই তুর্বীকে বলল,

” ওর এড্রেসটা দিয়ে দাও আমাকে।”

তুর্বী ফোন হাতে নিয়ে বলল,

” নাম্বারটা বলুন আমি টেক্সট করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ রিখিয়ার ঠিকানাটাও লাগবে আমার। আমি ওর গ্রামের নামটা জানলেও এক্সাক্ট লোকেশনটা জানিনা।”

এরপর দুজনেই ফোন নাম্বার আদান-প্রদান করে একে ওপরকে ঠিকানা পাঠিয়ে দিল। স‍ৌহার্দ্য বলল,

” আমি কালকেই বান্দরবান যাচ্ছি। সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা।”

তুর্বী সম্মতি জানিয়ে বলল,

” আমিও কালই বেড়িয়ে পরব।”

” আর কিছু বলবে?”

” নাহ।”

সৌহার্দ্যর মনে আবারও অভিমান জমা বেঁধেছে। দুইবছর পর দেখা হল। তুর্বী নিজে থেকে কথা বলতে চাইল ঠিকই কিন্তু ওর বান্ধবী আর বিহানের জন্যে। ওর জন্যে না। ওকে আলাদা করে কিছুই বলার নেই তুর্বীর? থাকবেই বা কেন? তুর্বীর কাছেতো ও সবসময়ই শুধুমাত্র একটা এক্সপেরিমেন্টের বস্তু ছিল। এসব ভেবে সৌহার্দ্য এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আমার এবার উঠতে হবে। দোলাকে বসিয়ে রেখে এসছি শপিংমলে। লাঞ্চের টাইম হয়ে যাচ্ছে। তুমি আসবে আমাদের সাথে লাঞ্চে?”

ঐ মেয়ের কথা শুনেই তুর্বীর মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। মন খারাপ হয়ে গেল আবার। কিন্তু কেন নিজেও জানেনা। তাই নিচু কন্ঠে বলল,

” না, তোমরা যাও। এনজয় কর। আমার কাজ আছে।”

সৌহার্দ্য আর জিজ্ঞেস না করে বলল,

” ওকে, আমি আসছি। পরে কথা হবে।”

বলে সৌহার্দ্য চলে যেতে নিলেই তুর্বী বলে উঠল,

” ঐ মেয়েটা কে?”

সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

” বাবা-মা আমার জন্যে ওকেই পছন্দ করেছে। ওনারা চান আমাদের বিয়ে হোক।”

তুর্বীর ভেতরে কেমন করে উঠল। ওর বুক কাঁপছে হঠাৎ। তবুও নিজেকে সামলে একটু হেসে বলল,

” ওহ। খুব ভালো মানিয়েছে তোমাদের একসাথে।”

সৌহার্দ্য কোন উত্তর না দিয়ে সাথেসাথেই হনহনে পায়ে চলে গেল। মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেছে ওর। এই মেয়ের সৌহার্দ্যর অন্যকারো সাথে থাকা না থাকাতে আগেও কিছু যায়-আসেনি এখনও যায়-আসেনা। ও বিয়ে করে, বাসর করে, দুই-তিন বাচ্চার বাপ হয়ে গেলেও এই মেয়ের কোন কষ্টই হবেনা। উল্টে সেই বাচ্চাদের গাল টেনে দিয়ে বলবে ‘ অঅঅ কী কিউট! একদম তোমার মত হয়েছে সৌহার্দ্য।’ রিডিকিউলাস। কাকে ভালোবেসে পাগল হচ্ছে ও? ভাবলে নিজের মাথা নিজেরই চাপড়াতে ইচ্ছে করে।

তুর্বীর এবার বেশ খারাপ লাগছে। বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ের সাথে এভাবে ঘুরতে বেড়িয়েছে? তার মানেতো একটাই যে সৌহার্দ্যও বিয়েতে রাজি। আর খুব শীঘ্রই বিয়েও হবে। কিন্তু তাতে ওর কী? বিয়ে হলেতো ভালো কথা। ছেলেটা আর কত একা থাকবে? কিন্তু ওর এতো খারাপ লাগছে কেন? এক অদ্ভুতরকম কষ্ট হচ্ছে। বুক ভার হয়ে আসছে। কই দু-বছর আগে যখন সৌহার্দ্যর পাশে অন্যকাউকে দেখতো, তখনতো এরকম লাগতো না? কষ্টও হতো না। তবে আজ এরকম লাগছে কেন? এতো অসহ্য লাগছে কেন সব?

#চলবে…#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪২
.

রিখিয়াদের বাড়িতে আজ সবাই খুশি। বেশ খোশমেজাজে আছে সবাই। রিখিয়ার যে ভাই-ভাবি প্রায় বাড়িতে এসে এটা ওটা বলেছে, তাদের মুখ দিয়েও আজ মধু ঝড়ছে। রেজাউল ইসলাম, জাহানারাও আজ বেশ প্রসন্ন। মরার আগে নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ করে যেতে পারবেন, এরচেয়ে খুশির আর কী হতে পারে? সব বাবা-মাই নিজের সন্তানের সুখ চান। উনারাও তার ব্যাতিক্রম নন। রিখিয়া তাকিয়ে দেখছে নিজের পরিবারের মানুষের খুশি। এদের খুশির জন্যেই তো ওর ওর জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে। বিয়েটা আর কী জিনিস? এতদিন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিলেও সেদিন যখন ওর ভাইয়া-ভাবি ওর বাবা-মাকে এসবের জন্যে দোষারোপ করা শুরু করল। তখন ও বেশ কষ্ট পেয়েছিল। ওর বাবার আহত দৃষ্টি ওর নজর এড়ায় নি। ওর জন্যে এখন ওর বাবা-মা কষ্ট পাচ্ছে সেটা মানতে পারেনি। শুধু ভাবছিল কী করবে। ঠিক সেই মুহূর্তেই শাফিন ওকে ঐসব কথা বল। শাফিনের চিন্তাধারা ওকে অবাক করেছিল। যদিও শাফিন মানুষ হিসেবে খারাপ নয় সেটা ও আগেও জানতো। সারারাত ভেবেছিল ও এই বিষয়ে। যে কারণে বিয়েতে ও রাজি ছিলোনা সেই সমস্যা তো শাফিন দূর করেই দিয়েছে। তাহলে বাবা-মাকে কষ্টে রেখে কী লাভ? হয়তো শাফিনকে ভালোবাসতে পারবেনা কিন্তু ভালো স্ত্রী হয়ে থাকতে অবশ্যই পারবে। এসব ভাবতে ভাবতেই কেউ ‘রিখু’ বলে ডেকে উঠল। রিখিয়া তাকিয়ে দেখে শাফিন দাঁড়িয়ে আছে। শাফিন মুচকি হেসে বলল,

” থ্যাংকস।”

রিখিয়া শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কেন?”

” বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্যে।”

রিখিয়া মলিন এক হাসি দিল। ও কেন রাজি হয়েছে শুধু ও-ই জানে। কিছু করার নেই এখন ওর আর। এখন শুধু মনপ্রাণ দিয়ে যতটা সম্ভব বিহানকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

শাফিনরা আর রিখিয়া ভাই-ভাবি চলে যাওয়ার পর বাড়িটা ফাঁকা হল খানিকটা। বিকেল হয়ে গেছে। রিখিয়া এমনিতে বেশ ক্লান্ত লাগছে। ভাবল এখন যখন কাজ নেই তখন বিছানায় একটু গা এলিয়ে দেবে। তাই উঠোন থেকে ঘরে যেতে নিলেই পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠল,

” রিখু!”

রিখিয়া থমকে গেল। কারণ কন্ঠটা ওর খুব কাছের কারো। পেছনে ঘুরে তাকাতে ভয় করছে। যদি এটা ওর ভ্রম হয়? যদি মিথ্যা হয়। তাহলে আবার মন খারাপ হয়ে যাবে ওর। এসব ভাবতে ভাবতে সে আবারও ডেকে উঠল,

” রিখু।”

রিখিয়া আবারও নড়ে উঠল। একটা ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলালো। তারপর আস্তে আস্তে পেছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠল ও। নিজের চোখকে বিশ্বাস সত্যিই ওর সামনে তুর্বী দাঁড়িয়ে আছে। রিখিয়া যেন জমে গেল। দু-বছর পর হঠাৎ এভাবে তুর্বীকে দেখতে পারবে ও স্বপ্নেও ভাবেনি। ও রোজ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করত যাতে শুধুমাত্র একটাবার যাতে ওর তুরের দেখা পায়। আজ সত্যিই তুর্বী ওর সামনে আছে। অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বেড় হচ্ছে না। চোখে পানি জমা হচ্ছে ধীরে ধীরে। তুর্বীও স্হির চোখে দেখছে রিখিয়াকে। আজ কতদিন পর এই মুখটা দেখল। নিজের বোনের চেয়েও বেশি আপন এই মেয়েটার কাছ থেকে কীভাবে এতদিন নিজেকে দূরে রেখেছিল শুধু ওই জানে। বুকের মধ্যে করে উঠছে। ও আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বলল,

” কী? একেতো ওভাবে চলে এসছিলি। আজ আমি যখন নিজে থেকে এতো কষ্ট করে এতটা পথ পার করে এলাম। এতোদিন পর দেখা হল আর তুই কিছুই বলছিস না! আমি কী এতোটা খারাপ? চলে যাবো?”

কথাটা বলতে না বলতেই রিখিয়া অস্ফুট স্বরে একবার ‘তুর’ বলে জাপটে ধরল তুর্বীকে। এতক্ষণ চোখে জমে থাকা জলগুলো ছেড়ে দিল। তুর্বী এতক্ষণ ধরে অনেক কষ্টে নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ঠিকই কিন্তু এখন ওরও কান্না পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে, চোখের কোণে জমা জল মুছে রিখিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” একদম ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদবি না। কী হয়েছে? এমনভাবে কাঁদছিস যেন মরে গেছি আমি।”

রিখিয়া তুর্বীকে ছেড়ে দিয়ে নাকে নাক টেনে বলল,

” থাপ্পড় খাবে কিন্তু। এতোদিন পর এসেও এসব কথা বলছো? কোথায় ছিলে তুমি? এভাবে হুট করে জব ছেড়ে চলে যায়? আমি চলে এসছিলাম তাও তো তুমি জানতে আমি কোথায়। কিন্তু তুমিতো কিচ্ছু না জানিয়ে ভ্যানিস হয়ে গেলে। ঢাকাও গিয়েছিলাম তোমাকে খুঁজতে। কিন্তু পাইনি। আর আজ তোমার মনে হল এসে আমার সাথে একবার দেখা করা উচিত? এরকম করে কেউ?”

তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,

” তো কী করব? খুব তো একা ফেলে চলে এসছিলি অামাকে। আমার অভিমান হয়না না-কি?”

আবার দুজন দুজনকে আবারও জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলল। একে ওপরের প্রাণ ওরা। টানা দুটো বছর আলাদা কীকরে থেকেছে শুধু ওরাই জানে। আজ এতোদিন পর নিজের প্রিয় বন্ধুকে ফিরে পেয়েছে এরচেয়ে বেশি খুশির কী হতে পারে।

রিখিয়ার বিছানায় পাশাপাশি পা ঝুলিয়ে বসে আছে তুর্বী আর রিখিয়া। রিখিয়ার মনটা এখন অনেকটাই ফুরফুরে। এতোদিনের মন খারাপ কিছুটা হলেও কেটেছে। টুকিটাকি গল্প করছে দুজনে। এতোদিনের বিভিন্ন ঘটানা নিয়ে আলোচনা করছে। রিখিয়া বেশ অবাক হয়ে বলল,

” সৌহার্দ্যই তাহলে আরজে এস আর ছিলেন?”

তুর্বী হেসে দিয়ে বলল,

” ভাব! এতমাস একসাথে থেকেই টের পাইনি।”

” সেটাই! আমারও অদ্ভুত লাগছে। তুমি তাহলে এতোদিন সিলেট ছিলে?”

” হুম। তোর এখানকার জব কেমন চলছে?”

” ভালো।”

বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর তুর্বী শীতল দৃষ্টিতে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

” বিহানকে মিস করিস?”

রিখিয়া হালকা কেঁপে উঠল। কিন্তু সাথেসাথেই নিজের চোখেমুখে ফুটে ওঠা বেদনাকে কাটিয়ে নিয়ে, নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক করে বলল,

” ছাড়ো এসব কথা। অতীত নিয়ে ভাবতে চাইনা আমি।”

” কিন্তু…”

এরমধ্যেই জাহানারা ট্রে তে করে চা আর নুডুলস নিয়ে এলেন। ওনাকে দেখে ওরা দুজনে থেমে গেল। জাহানারা নুডুলসের বাটি ওদের হাতে দিতে দিতে বললেন,

” তোমার কথা রিখিয়া প্রায়ই বলে। মাঝখানে না-কি উধাও হয়ে গেছিলে। যাই হোক, এবার ভালো সময়ে এসব। শুভ কাজ শেষ হওয়ার আগে কিন্তু যাওয়া যাবেনা। বিয়ে পর্যন্ত থাকতে হবে।”

তুর্বী হাসি মুখে নুডলস নাড়তে নাড়তে বলল,

” কার বিয়ে? ”

জাহানারা অবাক হয়ে বল‍লেন,

” সে-কী? রিখিয়া তোমাকে বলেনি? রিখিয়ার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। পনেরো দিন পরেই বিয়ে। আমাদের এম.পি. সাহেবের ছেলে শাফিনের সাথে।”

তুর্বী বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে জাহানারার দিকে তাকাল। কী শুনছে এসব? বিখিয়া বিয়ে করছে? অবাক রিখিয়ার দিকে তাকাতেই রিখিয়া চোখ নামিয়ে নিল। এখনই বিয়েটা ঠিক হওয়ার ছিল? এখন তীরে এসে তরী ঢুববে না তো?

____________

ড্রয়িংরুমের বড় সোফাটায় বিহান মাথা নিচু করে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। তারপাশে সিঙ্গেল সোফাটায় বসে সৌহার্দ্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। এতক্ষণ ফরিদও ছিল ওখানে কিন্তু পরে চলে গেছে। এখন ফ্লাটে শুধু বিহান আর সৌহার্দ্যই আছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা।

বিহান ফরিদের সিথে বসে ওদের পরবর্তী কোন ক্রেতা পেন্টিং নিতে আসবে সেটা নিয়ে আলোচনা করছিল। তখনই বেল বেজে ওঠে। এসময় কারো আসার কথা না তাই দুজনেই অবাক হল। ফরিদ রং ঢালছিল টিউবে তাই বিহানই উঠে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে যা দেখল তাতে ও স্হির হয়ে গেল। ওর সামনে সেই মানুষটাই দাঁড়িয়ে আছে যাকে দেখার জন্যে দুই দুইটা বছর ধরে ও মনেমনে ছটফট করছে। ওর জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র ভিত্তি ছিল এই মানুষটা। হ্যাঁ সৌহার্দ্যই দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। এতগুলো দিন পর ওকে নিজের সামনে দেখে অনুভূতি শূণ্য হয়ে গেল ও। শুধু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্যর ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলে আছে কিন্তু চোখ ছলছল করছে। ওর আদরের ভাইটাকে এতোদিন পর নিজের কাছে পেয়ে ইচ্ছে করছে জাপটে ধরতে। কিন্তু কেন যেন পারছেনা। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। তবুও অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” ভেতরে আসতে দিবিনা?”

বিহানের চোখমুখ লালচে হয়ে গেছে। অনেকটা অনুভূতিহীন ভাবেই দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ভেতরে গিয়ে সোফায় বসে পরল। সৌহার্দ্য আস্তে আস্তে গিয়ে সামনাসামনি সোফাটায় বসল। বিহান একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্যও কিছু না বলে বসে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। ফরিদ অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল দুজনের দিকে। পরে বুঝতে পেরেছিল যে ওরা হয়ত কাছের কেউ। তাই এদের মধ্যে থাকাটা ঠিক হবেনা চিন্তা করে ফরিদ বেড়িয়ে গেছে।

বেশ অনেক্ষণ হলো দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। বিহানতো সৌহার্দ্যকে দেখেই খুশি হয়ে গেছিল। জড়িয়েও ধরত। কিন্তু হঠাৎ আগের কিছু কথা মনে পরাতে থেমে গেছিল। নিরবতা ভেঙে বিহান নিজেই ধীর গলায় বলল,

” আমার এড্রেস কোথায় পেলে?”

সৌহার্দ্য বিহানের মুখে ‘তুমি’ শুনেও রিঅ্যাক্ট করল না। স্বাভাবিকভাবে বলল,

” তুর্বী দিয়েছে।”

বিহান একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

” তুর্বীর সাথে দেখা হয়েছে তোর?”

” হুম হয়েছে।”

বিহান আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” হঠাৎ আমার মত একটা রেপিস্টের সাথে দেখা করার ইচ্ছা হল যে?”

সৌহার্দ্য এতক্ষণ শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,

” আরেকবার তোর মুখ দিয়ে এই শব্দটা বেড় হলে আই সোয়ার তুই আজ আবার আমার হাতে চড় খাবি কিন্তু।”

বিহান কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিল। সৌহার্দ্য উঠে গিয়ে বিহানের পাশে গিয়ে বসল। এরপর হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

” সমস্যা কী তোর? হ্যাঁ। মানছি সেদিন রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কথা বলে ফেলেছি। তাই বল আজও সেসব কথা মনে রাখবি? শুধু আমার ঐ একদিনের বলা কথাগুলোই মনে রাখবি। আর আমার এতো বছরের দেওয়া ভালোবাসা? সেগুলো কিচ্ছু না?”

বিহানের গলা কাঁপছে, চোখ টলমল করছে এখন। ও আটকে যাওয়া কন্ঠে বলল,

” হ্যাঁ খুব ভালোবাসা দেখিয়েছেন আপনি। তাইতো দুটো বছর বিদেশে কাটিয়ে দিয়ে এসছেন। এখানে যে বিহান নামে একটা ভাই আছে আপনার। সে বেঁচে আছে না-কি মরে গেছে সেটা জেনে আপনি কী করবেন?”

সৌহার্দ্য হালকা হেসে তাকাল বিহানের দিকে। তারপর বলল,

” সরি! সত্যিই ভুল হয়ে গেছে। দেশ ছেড়ে যাওয়াটা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমিতো কতসময় তোর কত ভুল ক্ষমা করে দিয়েছি। কত দোষ ঢেকেছি। আমার একটা ভুল ক্ষমা করা যায় না?”

বিহান কোন রিঅ্যাক্ট না করে এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য বলল,

” তুই যখন চাসই না আমি এখানে থাকি তাহলে আর আমি কেন থাকব? চলে যাচ্ছি তাহলে।”

কথাটা বলে উঠতে নিলেই বিহান সৌহার্দ্যর হাত ধরে ফেলল। কিছুক্ষণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জোরে জড়িয়ে ধরল সৌহার্দ্যকে। কান্নামাখা গলায় বলল,

” প্লিজ আমাকে ছেড়ে আর যাস না ব্রো। আমি আর নিতে পারব না। প্রচন্ড কষ্ট হয়। আমিও তো মানুষ বল। দরকারে রোজ মারিস আমাকে। আমি কিচ্ছু বলব না। তবুও আমাকে ছেড়ে আর যাসনা, প্লিজ।”

সৌহার্দ্য চোখে জল চলে এল। ও দুহাতে বিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

#চলবে…

[ রি-চেইক করিনি। তাই ভুলত্রুটিগুলো বুঝে নেবেন। রাতে যথাসময়ে ‘বর্ষণের সেই রাতে’ গল্পটাও পেয়ে যাবেন।]#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৩
.

জোৎস্না রাত। আকাশে চাঁদ সম্পূর্ণ গোল। চাদের আলোতে চারপাশ বেশ ভালোই আলোকিত হয়ে আছে। হালকা ঢালু রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চ রাখা আছে। সেই বেঞ্চেই বসে আছে সৌহার্দ্য আর বিহান। দূরে বিশাল পাহাড়, খাদ, গাছ দেখা যাচ্ছে অাবছা আবছা। দীর্ঘ দুই বছর পর আজ দুই ভাই আবার লং ড্রাইভে বেড়িয়েছে। অনেকটা ঘোরাঘুরির পর এখানে এসে বসেছে ওরা। নিরবতা কাটিয়ে সৌহার্দ্য বলল,

” তো কাল সকালেই আমরা ঢাকা ফিরছি। তাইতো?”

বিহান বলল,

” কিন্তু ব্রো, এখান থেকে হুট করে কীকরে যাই? সবকিছু গোছাতে হবে আগে। এরপর__”

সৌহার্দ্য বিহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

” অযুহাত দিবিনা একদম। কোন বিজনেস করিস না তুই। যেটুকু গোছানো প্রয়োজন সেটুকু ফরিদ গুছিয়ে নেবে।”

” কী দরকার?”

” দরকার নেই? আমি এতদিন পর দেশে এলাম। আর তুই আমার কাছে থাকবি না? এটা বলতে পারলি তুই?”

বিহান কিছু বলল না। সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,

” ঐ শহরে গেলে রিখিয়াকে খুব মনে পরে না?”

বিহান একটু অবাক হয়ে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। তারপর হেসে দিয়ে বলল,

” কী সব বলছিস বলত?”

সৌহার্দ্য শান্ত চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” তুই আমার ভাই বিহান। আমি চিনি তোকে। ভালোবেসে ফেলেছিস না ওকে?”

” এমন কিছুই না।”

” তাহলে ঐ পেন্টিং?”

বিহান অবাক হয়ে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য একটু হেসে বলল,

” তুই যখন ওয়াসরুমে ছিলি তখন দেখেছি ওটা আমি। এরপরও অস্বীকার করবি?”

বিহান বেশ অনেক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” কী লাভ? এতোদিনে ওর নিশ্চয়ই বিয়ে হয়ে গেছে। সুখে আছে। ওর সুখের পথে আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনা আমি। আমি ওকে ভালোবাসি এটুকুই আমার জন্যে যথেষ্ট। এতটাই ভালোবেসেছি যে দূরে থেকেই সারাজীবন ওকে ভালোবেসে কাটিয়ে দিতে পারব।”

সৌহার্দ্য একটা তৃপ্তির হাসি দিল। যাক, সত্যিই তাহলে বিহান ভালোবাসার আসল মানেটা বুঝেছে। এখন ওকে কিছু বলবেনা। ও ওর ধারণা নিয়ে থাকুক আপাতত। আগে দুজনের দেখা করাতে হবে। তারপর বাকি সব।

_____________

নদীর দিক থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। মাঝে মাঝে পাখি ডেকে উঠছে। একটা বড় মেহগনি গাছের সাথে হেলান দিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে তুর্বী। অনেক চিন্তা ঘুরছে ওর মাথায়। ভেবেছিল সবটা ধীরে সুস্থে আস্তে আস্তে ঠিক করবে। কিন্তু এখন যা করার দ্রুত করতে হবে। হাতে সময় খুব কম। এই সময়ই যে বিয়েটা ঠিক হয়ে যাবে সেটা কে জানতো? কাল অনেক রাত অবধি জেগে থেকে রিখিয়াকে বুঝিয়েছে যে, বিয়ের সিদ্ধান্ত এতো হুটহাট নিসনা, আরও ভেবে দেখ। সরাসরি তো আর বলতে পারছিল না বিয়ে করিস না। কিন্তু মেয়েটাকে কোনভাবেই বোঝাতে পারল না। বারবার নিজের পরিবার, শাফিনের পরিবারের কথা বলে কাটিয়ে দিচ্ছিল।বিহানযে এখন ওকে ভালোবাসে সেটা সরাসরি বলেনি রিখিয়াকে ও। কারণ হুট করে ‘ও তোকে ভালোবাসে’ কথাটা বলে দেওয়াটা ঠিক হতোনা। রিখিয়া ফিল করতে পারতোনা ব্যাপারটা। আর না রিখিয়া বিহানের অবস্থাটা বুঝতে পারতো। তাই একটু ঘুরিয়ে বলেছিল কথাটা কিন্তু রিখিয়া শোনেনি।

কাল রাতে ঘুমোনোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তুর্বী রিখিয়াকে বারবার বলেছে যে, এখনও সময় আছে প্লিজ একটু ভেবে দেখ। রিখিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,

” কী সমস্যা তোমার বলবে? আমি বিয়ে করলে তুমি খুশি হবে না।”

এখন তুর্বী সরাসরি বলতেও পারছিল না কিছু তাই ছোট মুখ করে বলল,

” আরে ব্যাপারটা খুশি অখুশির না রিখু। আমার মনে হচ্ছে তুই তাড়াহুড়ো করছিস।”

” তাড়াহুড়ো কীকরে? সে আরও অনেকবছর আগে থেকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল আমাকে। তারওপর এখানে আসার পরও দু-বছর কেটে গেছে। তবুও বলবে তাড়াহুড়ো করছি? ভাবার জন্যে এটা যথেষ্ট সময় নয়?”

তুর্বী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সত্যিই সিদ্ধান্ত তো তাড়াহুড়ো করে হয়নি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল সময়ে নেওয়া হয়ে গেছে। ও ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

” বিহানকে ভুলে যেতে পেরেছিস?”

রিখিয়া শীতল দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। তারপর মলিন হেসে বলল,

” তাতে কী কিছু যায় আসে তুর?”

তুর্বী কিছুক্ষণ রিখিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” কিচ্ছু যায় আসে না?”

” আসে কী? সে তো আর আমাকে ভালোবাসেনা। তাই শুধু শুধু বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ?”

” দুইটা বছর অনেকটা সময় রিখু। যদি এই দুই বছরে বিহান তোকে ভালোবেসে ফেলে থাকে তাহলে? মানুষ তো বদলে যেতেই পারে। হতেই পারে বিহান বদলে গেছে!”

রিখিয়া বালিশ ঠিক করতে করতে হালকা হাসল। তারপর বলল,

” কাছে থেকেই ওনার মনে আমার জন্যে সহানুভূতি ছাড়া আর কোন অনুভূতির জন্ম দিতে পারিনি। আর তুমি বলছ দু-বছর এতোটা দূরে থাকার পর উনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে? এটা হয়? দেখ গিয়ে হয়তো উনি এতোদিনে ভুলেও গেছেন যে রিখিয়া নামের একটা মেয়ে ছিল তার জীবনে।”

তুর্বী আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” মানুষ খুব অদ্ভুত এক প্রাণী। কখন কী করে, কী করলে কী হয়, কার ক্ষেত্রে কী হয়; সেটা বলা খুব মুশকিল। কখনও প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে চলে গেলেই মনের সুপ্ত অনুভূতিগূলো জেগে ওঠে। কিছু মানুষের দূরে চলে যাওয়াই বুঝিয়ে দেয় তারা আমাদের কতটা জুড়ে ছিল।”

রিখিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

” কী হয়েছে বলোতো তোমার? সে এসে থেকে দেখছি তোমার কথাগুলো কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে। অনেক বদলে গেছ তুমি। তুরের মুখে এমন কথা বেমানান লাগে। কী হয়েছে বল?”

তুর্বী মুচকি হেসে বলল,

” আমার আবার কী হবে। দুই বছর কেটে গেছে তাই হয়তো আমার সবটাই বদলে গেছে। যাই হোক, তুই আমার কথাটাতো ভেবে দেখ।”

” যা ভাবার আমি ভেবে নিয়েছি। এখন আর এসব ভেবে তুমি সময় নস্ট করোনা। চলো শুয়ে পরো।”

কথাটা বলে রিখিয়া শুয়ে পরল। এরপর রাতে আর কথা হয়নি ওদের। এখন জাহানারা আর রিখিয়া নাস্তা বানাচ্ছে। তুর্বীকে নিজে থেকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়েছে রিখিয়া। যে মেয়েকে ঘুম থেকে ওঠাতে ওকে একপ্রকার বিশ্বযুদ্ধ করতে হতো সেই মেয়ে নিজে থেকে এভাবে উঠে গেল? সত্যিই আশ্চর্যের! কিন্তু তবুও ও কিছু বলেনি। তুর্বী ভাবছে যে এখন কী করা যায়। হঠাৎ ওর সৌহার্দর কথা মনে পরল। সৌহার্দ্যকে ফোন করে ওদিকের খবর জানতে হবে, এদিকের খবরটাও ওকে জানাতে হবে। তাই দ্রুত সৌহার্দ্যকে ফোন করল।

ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল সৌহার্দ্যর। চোখে এখনও প্রচুর ঘুম আছে। কাল অনেকরাত অবধি দুই ভাই ঘোরাঘুরি করে এসে পরে ঘুমিয়েছে। চোখ বন্ধ করেই হাতরে ফোনটা খুঁজে সামনে এনে স্ক্রিনে তাকিয়ে তুর্বীর ফোন দেখে ওর ঘুম পালিয়ে গেল। এতো সকাল সকাল ফোন দিল যে? ও উঠতে গিয়ে দেখল বিহান ওর ওপর এক হাত, এক পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আগেও একসঙ্গে থাকলে এমনই করতো বিহান। সৌহার্দ্য হালকা হেসে বিহানকে সরিয়ে উঠে বারান্দায় চলে গেল। তারপর ফোন রিসিভ করে বলল,

” হ্যাঁ বলো। এতো সকালে ফোন করলে যে?”

” ওখানকার কী খবর? সব ঠিক আছে?

” হ্যাঁ এদিকে সব সেট আছে। আমরা ব্রেকফাস্ট করেই ঢাকার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরব। ওদিকে সব ঠিক আছেতো?”

তুর্বী চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠল,

” কিচ্ছু ঠিক নেই। অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।”

স‍ৌহার্দ্য একটু অবাক হয়ে বলল,

” আবার কী হল?”

” রিখুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। নেক্সট মান্থের তেরো তারিখে। মানে আর জাস্ট পনেরো দিন পর। আজ বাদ দিলে চৌদ্দ দিন।”

সৌহার্দ্য যেন আকাশ থেকে পরল। অনেকটা অবাক হয়েই বলল,

” কী? কিন্তু সেদিন যখন গেলাম সবতো ঠিক ছিল। এরমধ্যেই ___”

” হ্যাঁ। এখন কী করব?”

সৌহার্দ্য জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে থুতনিতে হাত রেখে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

” আচ্ছা, তুমি রিখিয়াকে বলোনিতো বিহানের ব্যাপারে?”

” না, তেমন কিছুই বলিনি আমি।”

” গ্রেট! এখন কিছু না বলাই বেটার। কারণ এতে করে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। ঝামেলা বেড়ে যাবে তখন।”

” আমারও তাই মনে হয়েছে।”

” তাহলে এক কাজ করো। কালকে রিখিয়াকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসো। যেকোন একটা বাহানা দিয়ে দাও। শপিং বা ঘুরতে আসা, যা খুশি। আমরা তো আজ ঢাকা আসছিই। কাল আমিও বিহানকে নিয়ে একই জায়গায় যাবো।”

তুর্বী অনেকটা ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,

” সব ঠিক হবে তো?”

সৌহার্দ্য একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” আশাতো করছি। কিন্তু এদের দুজনেরও নিজে থেকে এগোতে হবে। নইলে প্রবলেম হয়ে যাবে।”

” হুম! রাখছি তাহলে এখন।”

” বাই।”

তুর্বীও নিচু কন্ঠে বলল,

” বাই।”

ফোনটা কেটে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে সৌহার্দ্য রুমে ঢুকলো। বিহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এই ছেলেকে ভালোভাবে ডাকলে দুই ঘন্টার মধ্যেও তোলা যাবেনা। ও সেটা জানে। অনেক স্বভাব বদলে ফেললেও এই স্বভাব যে বদলাতে পারেনি, সেটা ওর ঘুমের ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তাই সেই বৃথা চেষ্টা না করে টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে সোজা বিহানের মুখে ঢেলে দিল। বিহান হুড়মুড় করে উঠে বসল। চোখ মুখ ঝামটা দিয়ে জল ঝেড়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল যে কী হয়েছে। সামনে তাকিয়ে দেখল সৌহার্দ্য গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিহান হতাশ গলায় বলল,

” ব্রো! দিস ইজ নট ডান হ্যাঁ? আগেও এমন করতি।”

সৌহার্দ্য গ্লাসটা রাখতে রাখতে বলল,

” ক’টা বাজে দেখেছিস? উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পরব আমরা।”

” তাই বলে এভাবে মুখে পানি মারবি?”

” ভালোভাবে ডাকলে তুমি কত উঠতে, সেটা তুমিও জানো। এখন যা দ্রুত ফ্রেশ হ।”

বিহান আর কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে। সৌহার্দ্য বিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

___________

বিকেলবেলা তুর্বী সবার জন্যে কফি বানিয়েছে। নিজের হাতে সবাইকে দিয়েছেও। কফিতে চুমুক দিয়ে আবার অবাক হয়েছে রিখিয়া। তুর্বীর কফি মুখে দেওয়া ভীষণ কষ্টের ছিল। অথচ এখন কত চমৎকার কফি বানায়! শাফিনও এসছে আজ রিখিয়াদের বাড়িতে। বসার ঘড়টাকে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। শাফিনকে বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে তুর্বী। বিহান নামক কোন ব্যাক্তির অস্তিত্ব যদি না থাকত তাহলে ও চাইত রিখিয়ার সাথে শাফিনেরই বিয়ে হোক। এতোটাই ভালোলেগেছে ওর শাফিনকে। কথায় কথায় শাফিন তুর্বীকে বলল,

” তোমার কথা অনেক বলত রিখিয়া। দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। আজ দেখে নিলাম। তা হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছিলে?”

তুর্বী হেসে বলল,

” বান্দরবান ছিলাম।”

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো ওরা। আড্ডার মধ্যেই তুর্বী রেজাউল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আঙ্কেল! কাল আমি একটু রিখিয়াকে নিয়ে ঢাকা যাই? আসলে আমাদের পুরোনো কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতাম। কিছু শপিংও করার ছিল।”

রেজাউল ইসলাম বলল,

” হ্যাঁ যাও। রিখিয়াও অনেকদিন হল কোথাও যায় না। যাও ঘুরে এসো গিয়ে।”

জাহানারা বললেন,

” একেবারে বিয়ের কেনাকাটার সময় গেলে হয়না?”

” তখনতো যাবোই। কিন্তু কাল যাওয়াটা ইম্পর্টেন্ট। একটা দিনই তো কিছু হবেনা।”

অনেক কষ্টে সবাইকে ম্যানেজ করে নিল তুর্বী। শাফিন যেতে চেয়েছিল ওদের সাথে কিন্তু তুর্বী বলেছে প্রয়োজন নেই। ওরা একটু আলাদা ঘুরতে চায়। শাফিনও জোর করেনি। ভাবল দুই বান্ধবী যাচ্ছে যাক। রিখিয়াও শুরুতে যেতে রাজি ছিলোনা। কদিন পরতো শপিং যাওয়াই লাগবে এখন আবার কেন? তবে তুর্বী অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে টেনশন হচ্ছে খুব। কাল কী করবে এরা কে জানে?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here