জল ফরিঙের খোঁজ – পর্ব ৪৯-৫২

0
337

#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- 49 +50+51+52
.

সন্ধ্যার পর অনেকটা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরল সৌহার্দ্য। ড্রয়িংরুমে চোখ বুলিয়ে দেখল যে কেউ-ই নেই। টাইটা একহাতে আলগা করতে করতে ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসল। মিসেস নাহার হাতে করে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে ওর পাশে বসলেন। সৌহার্দ্য গ্লাসটা হাতে নিতে নিতে বলল,

” তুমি নিয়ে এলে কেন? আর কেউ ছিলোনা?”

” আমি-ই আসছিলাম রান্নাঘর থেকে। আসছি যখন তাই নিয়ে এলাম।”

সৌহার্দ্য পানিটা খেয়ে একটা শ্বাস ফেলল। তারপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আজ তো বৃহস্পতিবার। আপুই আসেনি?”

মিসেস নাহার আচল দিয়ে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বললেন,

” না, আজ ওদের বাসায় মেহমান আছে। তাই এই সপ্তাহে আসবে না।”

সৌহার্দ্য কিছু বলল না। তখনই শফিক রায়হান, আমিনুর খান আর মিসেস আসমা নিচে নেমে এলেন। নিজের ফুপা-ফুপিকে এ বাড়িতে দেখে সৌহার্দ্য বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে যেতে নিলেই মিসেস আসমা বললেন,

” এখনো রেগে থাকবি আমাদের ওপর? অনেকতো হল।”

সৌহার্দ্য কঠিন গলায় বলল,

” আমি কারো ওপরেই রেগে নেই। আমি টায়ার্ড, তাই রুমে যাচ্ছি।”

বলে সৌহার্দ্য যেতে নিলেই আমিনুর বলে উঠলেন,

” পিচ্চু কেমন আছে?”

সৌহার্দ্য থেমে গেল। বেশ অনেকটাই অবাক হয়ে তাকাল আমিনুরের দিকে। যেন কানে খুব অবিশ্বাস্য কিছু শুনে ফেলেছে। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” পিচ্চু? আজ আবার ও পিচ্চু হয়ে গেল? তাছাড়াও ও কেমন আছে সেটা জানার ইচ্ছা তোমাদের কবে থেকে হল?”

আসমা করুণ স্বরে বলল,

” ও আমাদেরও ছেলে বাবা। এটা ভুলে যাস না।”

সৌহার্দ্য আবারও হাসল। এরপর নিজের হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলল,

” তো এটা তোমাদের আজ মনে পরল? যে পিচ্চু তোমাদের নিজের ছেলে?”

আসমা মাথা নুইয়ে ফেললেন। চোখে নোনাজল জমা হল ওনার। বিহান তো ওনার নিজের ছেলে। ন-মাস গর্ভে ধারণ করেছে। এমনতো না যে সে তার ছেলেকে ভালোবাসেনি। বা এখনো বাসেনা। একজন মায়ের কাছে তার সন্তান কী হয় সেটা একজন মা-ই জানেন। কিন্তু নিজের সন্তানের এতো ঘৃণ্য অপরাধ মেনে নিতে পারেন নি বলেই তো এই দূরত্ব। বুকে পাথর চেপে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন নিজের ছেলেকে। শফিক রায়হান গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

” ওকে আমরা কোনদিনও ভুলিনি। ভোলা সম্ভবও না। ভালোবেসেছি। হয়তো একটু বেশিই ভালোবেসেছি। তাই ওর করা অপরাধকে ক্ষমা করতে পারিনি। কিন্তু এখনতো ও অনেকটা সময় কেটে গেছে। আর যা বুঝলাম নিজেকে শুধরে নিয়েছে। তাই…”

শফিক রায়হানের কথা শেষ হওয়ার আগেই সৌহার্দ্য বলল,

” কিছু কিছু সময় আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরে আমাদের পরিবারকে, বাবা-মা কে, তাদের সাপোর্ট কে। কিন্তু ঐ সময়টাতেই যখন তারা মুখ ঘুরিয়ে নেয় না? তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে। মরে যেতে ইচ্ছে করে। একটা সময় ওর তোমাদের খুব প্রয়োজন ছিল বাবা। কিন্তু তখন তোমরা ওর দিকে ফিরেও তাকাও নি। আজ তাকাতে চাইছ। মজার ব্যাপার হল, আজ আর ওর কাউকে প্রয়োজন নেই। ও এখন একা বাঁচতে শিখে গেছে।”

এইটুকু বলে সৌহার্দ্য নিজের রুমে চলে গেল। বাকিরা অনেকটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর যাওয়ার দিকে। সত্যিই কী মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছিল? কিন্তু ঐ পরিস্থিতিতে ওনারা কী করতে পারতেন? একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার পরেও যদি ছেলেকে শাসণ না করত সেটাকী স্বার্থপরতা হতো না?

____________

মানুষ ভাবে। সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ভোগে। কী করবে বুঝে উঠতে পারেনা। অনেকসময় নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যেতে থাকে। কিন্তু পথ পায়না। দেখতে দেখতে আরও দুটো দিন কেটে গেল। এই দুইদিনে চারজনের অবস্থা চাররকম ছিল। সৌহার্দ্য নিজেকে তুর্বীর স্মৃতি থেকে দূরে রাখবে না-কি নিজের ভাইকে সামলামে সেটাই ভাবছিল। বিহান ওপর দিয়ে স্বাভাবিক থাকলেও নিজের ভালোবাসাকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলার কষ্টে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরেছে। রিখিয়া বিহানকে ওসব কথা বলার জন্যে অপরাধবোধে ভুগছে। ওকে গিয়ে সরি বলবে কীকরে সেটাও ভাবছে। আর তুর্বী এই দুইদিনে বারবার সৌহার্দ্যর কথা মনে পরেছে। ওদের একসাথে কাটানো এমন কোন মুহূর্ত নেই যেটা ও মনে করেনি। অনেক চেষ্টা করেও সৌহার্দ্যর বিয়ে হয়ে যাবে সেটা ও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেনা। তিনটাদিন ছটফট করে কেটেছে ওর। নিজের ভেতরকার এরকম অপরিচিত আর অদ্ভুত অনুভূতির আবির্ভাব দেখে নিজেই অবাক হয়েছে ও। তারওপর রিখিয়া আর বিহানের ব্যাপারটা নিয়েও ওকে ভাবতে হয়েছে। রিখিয়ার বিয়েটাও এগিয়ে আসছে। সবার তোরজোড়, শাফিন, শাফিনের বাড়ির সকলের এত উৎসাহ দেখে ভয় লাগছে ওর। সত্যিই বিয়েটা হয়ে যাবে না তো? সব মিলিয়ে দমবন্ধকর ভাবে কেটেছে এই দুটো দিন ওদের।

বিহান দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেড়ে সোফায় আধশোয়া হয়ে টিভি দেখছিল। এমন সময় সৌহার্দ্য এলো। ডুপ্লিকেট চাবি থাকায় আর কলিংবেল বাজাতে হয়নি। বিহান সৌহার্দ্যর দিকে না তাকিয়েই টিভি দেখতে দেখতে বলল,

” আজ হঠাৎ এই সময়ে?”

সৌহার্দ্য বিহানের পাশে বসে ওপরের জ্যাকেটটা খুলে ফেলে বলল,

” তোর কাছে আসতে এখন আমাকে সময় দেখে আসতে হবে?”

” না তা-না। দুপুরে খেয়েছিস?”

” হ্যাঁ অফিসে খেয়ে নিয়েছি।”

বিহান কিছু না বলে চ্যানেল ঘোরাতে লাগল। সৌহার্দ্যও চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ পনেরো মিনিটের মত দুজনেই চুপ ছিল। হঠাৎ বিহান বলল,

” কিছু ভেবেছিস?”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে বলল,

” কী বিষয়ে বলতো?”

বিহান এবার সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” দোলাকে তো বিয়ে করছিস না। তুর্বীও তো এখানেই আছে। ওর সাথে সবটা ঠিক করে নেওয়া যায় না? ট্রায় করে দেখ? কে জানে হয়তো ও এখন অন্যকিছু ভাবছে।”

স‍ৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” এবার আমি নিজে থেকে ওকে কিছু বলব না। ওকে নিয়ে আর কোন স্বপ্নও দেখব না। কে বলতে পারে আমি এখন নিজে থেকে কিছু বললে এ মেয়ে আবারও আমায় রিজেক্ট করে দেবে। হয়তো আবার আমার স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে দেবে। বারবার একই ধাক্কা হজম হবেনা আমার।”

বিহান কিছু বলবে তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠল। বিহান অবাক হল। এরকম সময় আবার কে আসবে? সৌহার্দ্য উঠে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে তুর্বী আর রিখিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসল। কারণ ও জানতো আজ তুর্বী আর রিখিয়া আসবে। স‍ৌহার্দ্য হাসি মুখে বলল,

” চলে এসছো? ভেতরে এসো।”

তুর্বী আর রিখিয়া একে ওপরের দিকে একপলক তাকাল। এরপর ভেতরে এলো। বিহান কে এসছে দেখার জন্যে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই ওদের দুজনকে দেখে চমকে গেল। অনেকটা অবাক হয়ে উঠে দাঁড়াল। রিখিয়ার সাথে চোখাচোখি হতেই সেদিনের কথা মনে পরল। অপরাধবোধে রিখিয়ার দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারল না চোখ সরিয়ে নিল। রিখিয়া বিহানের চোখের ভাষা পড়তে পেরে একটু অবাক হল। যেখানে আজকে অপরাধবোধ ওর মধ্যে থাকার কথা সেখানে বিহান নিজেই অপরাধবোধে ভুগছে। সত্যিই ছেলেটা বদলে গেছে। সৌহার্দ্য বলল,

” কী হল তোর বাড়িতে মেহমান এসছে আর তুই স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলি যে?”

বিহান একবার সৌহার্দ্যর দিকে তাকাল তারপর আবার রিখিয়া আর তুর্বীর দিকে। ওদের হঠাৎ আগমনের কারণ বুঝতে পারছেনা ও। আসলে এই দুদিন অনেক ভেবে রিখিয়া ঠিক করেছে যে ও এসে বিহানকে সরি বলবে সেদিনের ব্যবহারের জন্যে। তুর্বীকে বলার পর তুর্বীতো আকাশের চাঁদ পেলো হাতে। যেভাবেই হোক ওদের আবার একে ওপরের মুখোমুখি তো করাতে পারবে। তাই সৌহার্দ্যর সাথে যোগাযোগ করে রিখিয়াকে নিয়ে চলে এসছে এখানে। স‍‍ৌহার্দ্য ওদের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো রেখে দিয়ে তুর্বীর হাত ধরে বলল,

” চল, তোমার সাথে আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে, ফাস্ট!”

তুর্বীও কথা না বাড়িয়ে সৌহার্দ্যর সাথে ব্যালকনির দিকে চলে গেল। রিখিয়া এবার বিহানের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,

” ভালো আছেন?”

বিহান নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” সবার খারাপ থাকার কারণ ভালো কীকরে থাকে বলোতো?”

রিখিয়া এবার একটু অসহায় কন্ঠে বলল,

” সেদিনের ব্যবহারে জন্যে আমি সত্যিই দুঃখিত।”

” তোমার দুঃখিত হওয়ার তো কোন কারণ আমি দেখছিনা রিখিয়া। যা করার আমি করেছি। তোমাকে আমি আঘাত করেছি। তোমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান আমি করেছি। তাই তোমার আমাকে ওসব বলা অস্বাভাবিক বা ভুল কিছু না।”

রিখিয়া কিছু বলল না। বিহান সোফায় রাখা প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বলল,

” বিয়ের শপিং হচ্ছে?”

রিখিয়া নিচু কন্ঠে বলে উঠল,

” হুম।”

এরপর বেশ অনেকটা সময় দুজনেই চুপ ছিল। হঠাৎ বিহান বলল,

“আচ্ছা তুমি বস। আমি আসছি।”

কথাটা বলে বিহান দ্রুতপদে রুমে ঢুকে গিয়ে দরজা লক করে দিল। ও আর নিজের ছায়া রিখিয়ার জীবনে পরতে দেবেনা। রিখিয়া ঠিকই বলেছে ও যার জীবনে থাকে তার জীবনটাই ছন্নছাড়া হয়ে যায়। তাই ও যতটা সম্ভব দূরে থাকবে রিখিয়ার থেকে। এটাই ভালো হবে রিখিয়ার জন্যে।

____________

সন্ধ্যা সাতটা বাজে। বাইরে খুব জোরে ঝড় হচ্ছে। প্রচন্ড বৃষ্টি আর বজ্রপাত বিকেলেই শুরু হয়ে গেছিল। তাই তুর্বী আর রিখিয়া আর যেতে পারেনি আজ। বাধ্য হয়েই থেকে যেতে হল বিহানের বাড়িতে। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে কাল ফিরবে। ড্রয়িংরুমের মেঝেতে বসে আছে সৌহার্দ্য, তুর্বী আর রিখিয়া। বিহান এখনো দরজা খোলনি। সৌহার্দ্য অনেকবার ডেকেছে। কিন্তু বিহান শুধু একবার বলেছে ওকে না ডাকতে ও না-কি ঘুমাবে। ঘুম ভাঙলে নিজেই খুলবে। তাই কেউ আর ডাকেনি। কিছক্ষণ মৌনতার পর তুর্বী বলল,

” সৌহার্দ্য, মায়া কে? সেদিন বিহান বলছিল এই নামটা। বিহানের পাস্টের সাথে মায়ার কী সম্পর্ক।”

সৌহার্দ্য গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ বসে থেকে দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে বলল,

” অনেক আগের ঘটনা সেটা। যদিও তার প্রভাব ওর জীবন থেকে এখনো যায়নি। সেই একটা ঘটনা ওর গত সাতটা বছর নষ্ট করে দিয়েছে। শেষ করে দিয়েছে ওকে।”

এবার রিখিয়ারও প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে জানতে যে বিহানের সাথে এমন কী হয়েছিল। তাই ও কৌতূহল নিয়ে বলল,

” কী হয়েছিল? আই মিন একটা মেয়ে ওর সাথে কী এমন করেছিল যে বিহানের জীবনের এতবড় ক্ষতি হয়ে গেল?”

সৌহার্দ্য একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

” অভিযোগ! ধর্ষণের অভিযোগ! ইয়েস ওর বাবা-মা গোটা পরিবার, আগের বন্ধুবান্ধব, সবার কাছে ওর একটাই পরিচয়। আ রেপিস্ট।”

রিখিয়া কেঁপে উঠল। এটা হতেই পারেনা। ও জানে বিহান আর যাই হোক কোন মেয়েকে রেপ করার মত জঘন্য কাজ করবেনা। তুর্বীতো কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে শুধু তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। রিখিয়া কম্পিত কন্ঠে বলল,

” প-প্লিজ সবটা খুলে বলুন।”

সৌহার্দ্য বিহানে রুমের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল সেই ঘটনা।

অতীত ____

বিহান আর সৌহার্দ্য তখন ওনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। সৌহার্দ্যর পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক থাকলেও বিহানের ধ্যাত গ্যান সবই ছিল ছবি আঁকা। ওর আঁকা ছবির জন্যে সবাই ওর খুব প্রশংসাও করতো। দুষ্টু হলেও, বিহান সকলেরই আদরের ছিল। বিহানের মামা আর সৌহার্দ্যর বাবা শফিক রায়হানের কলিজার টুকরো ছিল বিহান। সৌহার্দ্যর চেয়ে কোন অংশে কম ভাবতো না বিহানকে। বিহানের খালাতো বোন ছিল মায়া। ঐ ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো। একদিন ক্যাম্পাসের মাঠে বিহান সৌহার্দ্য ওরা আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ ভরা ক্যাম্পাসে সকলের সামনে মায়া বিহানকে প্রপোজ করে বসে। বিহান প্রথমে বোকা বনে গেছিল এমন ঘটনায়। সৌহার্দ্যও বোকার মত তাকিয়ে ছিল। কিন্তু বিহান মায়াকে শুধু বোনের চোখেই দেখতো তাই খুব ভদ্রভাবে নিষেধ করে দেয়। এটা নিয়ে মায়ার ওপর অনেকে হাসাহাসিও করে কিন্তু বিহানের খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিলোনা। ও যথেষ্ট ভদ্রভাবেই ‘না’ বলেছিল। এরপর থেকেই মায়ার জ্বালাতন শুরু হতে থাকে। ক্যাম্পাসে, ফোনে, মেসেজে, সোসাল সাইটে নানাভাবে বিরক্ত করত বিহানকে। বিহান যথেষ্ট ঠান্ডা মাথায় বোঝাত ওকে। কিন্তু মায়া বুঝতে চাইতো না। পাগলের মত বিহানের পেছন পরে থাকতো। সৌহার্দ্যও আলাদাভাবে বুঝিয়েছে মায়াকে। কোন লাভ হয়নি। একপর্যায়ে বিহানের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছিল। কারণ মায়া অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছিল। ভার্সিটির সবার কাছে বলে বেড়িয়েছে ওরা রিলেশনে আছে। আরও বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা রটিয়ে দিয়েছিল ক্যাম্পাসে। একদিন বিহান রেগে মায়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

” কী সমস্যা কী তোমার? এটুকু বোঝনা যে আমি তোমাকে পছন্দ করিনা। ক্যাম্পাস জুড়ে মিথ্যে রটিয়ে বেড়াচ্ছো। হোয়াটস ইউর প্রবলেম?”

মায়া বলল,

” আমি তোমাকে ভালোবাসি বিহান। কেন বুঝতে পারোনা? আমার মধ্যে কীসের কমতি আছে? কেন এক্সেপ্ট করবে না তুমি আমাকে? তোমাকে করতে হবে।”

আসলে প্রথমে পছন্দ করে প্রপোজ করলেও পরে যখন বিহান না করে দিয়েছে তখন এটা মায়ার ইগো ইশ্যু হয়ে গেছে। যেকোন মূল্যে ওর বিহানকে চাই এবার। বিহান ওকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিল না। নিজের পরিবারের কাউকে এবিষয়ে কিচ্ছু বলেনি শুধুমাত্র মায়ার কথা ভেবে। মায়ার বাবা খুব বদরাগী আর স্ট্রিক্ট। এসব শুনলে মারধোরও করতে পারে মায়াকে। কিন্তু এই না বলাটাই হয়তো ওর সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। দিন দিন মায়ার মানসিক অত্যাচারের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছিল। একদিন মায়া এক ভয়ঙ্কর কাজ করে বসল। ওর নিজেল বান্ধবীকে বলল যে, বিহানের সাথে ও রুমডেট করেছে। ওদের প্রেম এখন জমে ক্ষির। আসলে কথাগুলো মায়া শুধু ওর ঐ বান্ধবীকেই বলেছিল শুধুমাত্র নিজের ইগো স্যাটিসফাইট করার জন্যে। যে যেই ছেলে আমাকে রিজেক্ট করেছিল সেই আমার সাথে আজ বেড শেয়ারও করেছে। কিন্তু সেটা আর ওর সেই বান্ধবী নিজের মধ্যে রাখলোনা গোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দিল। ব্যাপারটা সৌহার্দ্যর আর বিহানের কানে পৌঁছনোর পর দুজনেই রেগে গেল। বিহান এতোটাই রেগে গেছিল যে সোজা মায়ার ক্লাস রুমে গিয়ে ওকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারল। তারপর রেগে বলল,

” রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না তাই গায়ে হাত তুললাম। নইলে তোর মত মেয়েদের ছুঁয়েও দেখেনা বিহান। আর কী বলে বেড়িয়েছিস সবাইকে? আমি তোর সাথে রিলেশনে আছি? আমরা খুব ক্লোজ? রুমডেট করেছি আমরা? ছিঃ আমার রুচি এতোটাও খারাপ না যে তোর মত থার্ডক্লাস মেয়ের সাথে সম্পর্ক করব। তাও রুমডেট! সেটাতে তোরা অভ্যস্ত হতে পারিস, আমি নই।”

এটুকু বলে চলে যেতে নিয়েও বিহান দাঁড়িয়ে গেল। তারপর চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে বলল,

” দেখ, আমি তোমাকে অনেকবার ভালোভাবে বুঝিয়েছে। কিন্তু তুমি শোনোনি উল্টে আরও বেশি বিরক্ত করেছ আমাকে। তোমার সম্মান বা আত্মসম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। সো প্লিজ এরকম জঘন্য কাজ আর করোনা। এতে তুমি নিজেই ছোট হচ্ছো।”

বলে বিহান চলে গেল ওখান থেকে। মায়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওখানে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সবাই হাসাহাসি করছে ওকে নিয়ে। কেউ কেউ পিঞ্চ করছে, কেউ খারাপ কথা বলছে। এবার মায়ার চোখে জল চলে এল। তবে কষ্টে নয় রাগে। প্রচন্ড রাগে!

#চলবে…#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫০
.

ইগো আর রাগ দুটোই ভীষণ ভয়ংকর। দুটোই মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ইগোস্টিক মানুষগুলো নিজের ইগো স্যাটিসফাই করতে যা ইচ্ছে করতে পারে। আবার রাগের বসে এটা বুঝতেই পারেনা সে কী করছে। মায়ার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিহানের সেদিনের থাপ্পড় আর কথাগুলোতে হিংস্র হয়ে উঠেছিল ও। সকলের সামনে এই অপমান ওর ইগোকে এতোটাই হার্ট করেছে যে ও রাগে উন্মাদ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই তীব্র রাগের বসে ও ভুলেই গেছিল যে দোষটা ওর-ই ছিল। শুধু মাথায় একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন বিহানকে ওর জায়গাটা দেখাতে হবে। ও যেমন সবার সামনে অপমানিত হয়েছে। বিহানকেও হতে হবে। নিজের গায়ে কলঙ্ক লাগিয়ে হলেও বিহানকে চরম অপমানের শিকার করবে ও। আর ও মনে মনে এরকম কিছু ভাবল যেটা সত্যিই খুব ভয়ংকর ছিল।

মায়াদের বাড়িতে ওর ফুপির বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল। যেহেতু সৌহার্দ্যর শফিক রায়হান মায়ার মামা, আর বিহানের মা আসমা মায়ার খালা হয়। তাই দুই পরিবারকেই যেতে হয়েছিল অনুষ্ঠানের দিন। হলুদের রাত আর বিয়ের রাত। দুদিন থাকার দরকার পরবে। বিহান এখন অনেকটাই রিল্যাক্স কারণ মায়া ওকে এখন আর ডিসটার্ব করেনা। ও ভেবেছিল মায়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বা লজ্জিত হয়ে সরে এসছে। সৌহার্দ্যর সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়েছিল ওর। ওরা ভেবেই নিয়েছিল মায়ার প্রবলেম সলভব। তাই বিনা সঙ্কোচেই পরিবারের সবার সাথে গিয়েছিল মায়াদের বাড়ি। অদ্ভুতভাবে মায়া তখনও বিহানের সামনে আসেনি বা ওকে জ্বালাতন করেনি। প্রথমদিন কোন ঝামেলা ছাড়া ভালো-ই কেটেছিল। পরেরদিন বাড়িতে একেবারে কাছের আত্মীয় ছাড়া সব চলে গেল। সৌহার্দ্য ওর বাবার সাথে গেছে কনের বাড়িতে। বিহানের শরীরে একটু জ্বর জ্বর ছিল। তাই ও যায়নি। এমনিতেও আগামীকাল ওরা বাড়ি ফিরেই যাবে। রাতে বেশ অনেকটা ক্লান্তি নিয়ে বিহান রুমে ঢুকলো। ওয়াসরুম থেকে এসে টেবিলে রাখা পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। অসুস্থ আর ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ও। কিন্তু সকালে উঠে যে ও এরকম কিছুর সম্মুখীন হবে সেটা ও কল্পনাও করতে পারেনি। ও ভাবতেও পারেনি পরবর্তী সকাল ওর জীবনে এরকম অন্ধকার নিয়ে আসবে। সকালে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ভ্রু কুচকে তাকাল বিহান। এখনো ঘুম পুরোপুরি কাটেনি ওর। কোনরকম উঠে বসে চারপাশে তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই ওর রুমে। ও বেশ অবাক হল। চোখ কচলে চারপাশে তাকাল। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখল মায়া ছেড়া পোশাক, এলোমেলো চুল, একপ্রকার বিদ্ধস্ত অবস্থায় গুটিয়ে ওর মা-কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বিহান নিজের শরীরে ঘাড়েও হালকা জ্বালা অনুভব করল। কিন্তু ওর দৃষ্টি বাকি সবার দিকে। সবাই এই রুমে কেন? আর মায়ার-ই বা কী হয়েছে? ও ওর বাবা-মার দিকে তাকিয়ে দেখল ওনারা ক্ষীপ্ত, ঘৃণামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। পাশে শফিক রায়হানও দাঁড়ানো। উনি কখন এল? আর সৌহার্দ্য কই? হঠাৎ ঘুম থেকে উঠায় আর উঠেই আচমকা এসব চোখের সামনে দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। ও কিছু বলবে তার আগেই আমিনুর সপাটে একটা চড় বসালো ওর গালে। বিহানের চোখের ঘুমটুকু কেটে গেল। ও অবাক হয়ে তাকাল ওর বাবার দিকে। ওর গায়ে এর আগে কোনদিনও ফুলের টোকাও দেয়নি ওর বাবা। সেখানে সকলের সামনে চড় মারাতে ও হতভম্ব। ও অবাক হয়ে কিছু বলবে তার আগেই মায়া আরও জোরে কেঁদে ফেলল। বিহান ভ্রু কুচকে তাকাল মায়ার দিকে। মায়ার মা কেঁদে দিয়ে বলল,

” নিজের খালাতো বোনের সাথে এরকম জঘন্য কাজ করতে লজ্জা করলোনা তোর? আমার মেয়েটার এতোবড় ক্ষতি কীকরে করলি?”

বিহানের ভ্রু আরও কুচকে গেল। কী করেছে ও?রুমেই সবাই কানাঘুষা করেই যাচ্ছে। বিহান ভ্রু কুচকেই বলল,

” মানে! কী হয়েছে?”

আমিনুর আবারও একটা থাপ্পড় মারল বিহানের গালে। এরপর রাগে ফেটে পরে বললেন,

” কুলাঙ্গার! তোর জন্যে আজ আমার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেল। নিজের-ই খালাতো বোনের সাথে_ ছিঃ।”

বলে ঘৃণিত দৃষ্টিতে একবার বিহানের শরীরের দিকে তাকালো। বিহান নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর শরীরে টিশার্ট নেই। সেটা দেখে বেশ অবাক হল ও। ওর যতদূর মনে পরছে রাতে ও টিশার্ট পরেই ঘুমিয়েছিল। আরও অবাক হল ওর শরীরে নখের আচর দেখে। সবাই নানারকম কথা শুনাচ্ছে। ও আবার মায়ার দিকে তাকিয়ে মায়ার পোশাকের অবস্থা দেখে বুঝতে পারল সবাই কী ভাবছে। তখনই মায়া ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

” মা, বিশ্বাস কর আমি এই রুমে আসতে চাইনি। ভাইয়া ডেকেছিল আমাকে। আমি ভেবেছিলাম কোন জরুরি কথা বলতে ডাকছে। কিন্তু আমি ভেতরে এসে ঢুকতেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দরজা বন্ধ করে দিল।”

বলে জোরে কেঁদে উঠল। বিহান হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেদিনের সেই ব্যবহারের বদলা মায়া এভাবে নেবে? মায়া আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” আমি চিৎকার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে আর ঐ রুমালটা দিয়ে মুখ বেঁধে দিয়েছিল।”

সবাই তাকিয়ে দেখল সত্যিই বিহানের রুমালটা নিচে পরে আছে। মায়া বলল,

” ভাইয়া আমাকে হুমকিও দিয়েছে যাতে কাউকে এসব না বলি।”

বলে ওর মায়ের কাধে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করল। বিহান বাকি সবার দৃষ্টি দেখেই বুঝে গেল সবাই মায়ার কথা বিশ্বাস করেছে। না করারও কারণ নেই। ব্যাপারটাই এভাবেই সাজানো। পুরো ব্যাপারটায় ও এতোটাই হতভম্ব যে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেনা। মায়ার ভাই এসে বিহানের মুখে একটা ঘুষি মারল। নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে গেল বিহানের। কিন্তু সে ওর বড় তাই তাকে কিছু না বলে নিজের মামার দিকে তাকাল। শফিক রায়হানের দিকে তাকাতেই ও থমকে গেল। যে মামা ওকে বুকে জড়িয়ে রাখত ওকে মার খেতে দেখেও সে কিছুই বলছে না। সেও ওকে ঘৃণার চোখে দেখছে। তার চোখ ছলছল করছে কিন্তু তাতেও তীব্র ঘৃণাও আছে। বিহান শফিক রায়হানের হাত ধরে কম্পিত কন্ঠে বলল,

” মামু বিশ্বাস কর, ও মিথ্যে বলছে আমি এরকম কি__”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শফিক রায়হান হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলেন। বিহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওনার দিকে। ও ওর মা মিসেস আসমার কাছে গিয়ে বলল,

” মা তুমিতো আমার কথাটা বিশ্বাস কর। আমি জানিনা ও কী বলছে। আমি কিছু করিনি মা। সত্যিই আমি জানিনা কী হয়েছে।”

আসমা চোখ ভর্তি জল নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন। বিহানের চোখ এখন চারপাশে সৌহার্দ্যকে খুঁজছে। ও জানে একমাত্র সৌহার্দ্য-ই আছে যে ওর কথা শুনবে।সবাই নানারকম অপমানজনক কথা বলছে ওকে। মায়ার ভাইয়েরা ওকে আরও কয়েকটা ঘুষি মারল। বিহান সবাইকে অনেকবার সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে এসবের কিছুই জানেনা। কিন্তু আশেপাশে পরে থাকা সব প্রমাণ, মায়ার কান্না সব মিলিয়ে ওরকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সবাই বিহানকেই দোষী ভাববে। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিঃ ছিঃ করছিল, এমন কোন খারাপ কথা নেই যেটা বিহানকে বলেনি, মায়ার ভাইয়েরা জঘন্যভাবে মেরেছে ওকে কিন্তু কেউ বাধা দেয়নি। এরকম অপমানিতবোধ ও এর আগে কোনদিন করেনি। লজ্জায় অপমানে বিহানের চোখ-মুখ লালচে হয়ে উঠেছে। মায়ার মা শুধু কাঁদছিলেন। মেয়ের সাথে এতোবড় দূর্ঘটনা তারওপর বিহানও ওপার বোনের ছেলে। রাগে ফেটে পরে মায়ার বাবা পুলিশ কেস করার কথা বলেছিল। হঠাৎই মায়া প্রচন্ড কেঁদে কেঁদে বলল, ও সুইসাইড করবে, এই অপমান নিয়ে ও বাঁচতে পারবেনা। ওর কান্না যে কারো হৃদয়ে লাগবে। সেখান তো ওর পরিবারের লোক ছিল। বিহান শুধু হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মায়ার দিকে। আর দেখছিল একটা মেয়ের অভিনয়ের দক্ষতা।
অনেক অস্বস্তিকর হৈ চৈ পূর্ণ ভাবে অনেকটা সময় কেটে গেল। অনেকের অনেক অপিনিয়নের পর। সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয় সেটাই হল। যেহেতু ব্যাপারটা পরিবারের মধ্যেই আছে বাইরে পৌঁছায় নি। তাই মায়ার কথা ভেবে আর মায়ার মায়ের অনুরোধে পুলিশ কেস করা হয়নি। তবে বিহানকে চরমভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল সেটা সত্যি। মায়ার বাবা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বিহানের বাবাকে বলেছিল, আপনার ছেলেকে নিয়ে বিদায় হন এ বাড়ি থেকে। শফিক রায়হান বিহানের কলার ধরে টানতে টানতে ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছিল। আর বিহান? প্রথমেই ঘুম থেকে উঠে এমন আকস্মিক ঘটনা। ও এখনো বুঝতে পারছেনা ব্যাপারটা কী হয়েছিল আসলে। ওর শরীরে নখের আচর, টিশার্ট খুলে ফেলা। কীভাবে সম্ভব? ও টের পেলোনা কীকরে? আদোও কী কিছু করেছিল যা ওর মনে নেই। তারওপর ওর বাবা, মা, মামুর ওর কোন কথা না শুনেই ওর কথা না শোনা সব মিলিয়ে একপ্রকার অনুভূতিহীন হয়ে গেছিল ও। নিজের হয়ে কিছু বলার মত অবস্থাতেই ছিলোনা ও।

বাড়ি ফিরেই শফিক রায়হান ওকে ড্রয়িংরুমে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর সোজা ওপরে চলে যান। বিহান এবার কেঁদে ফেলল। ও উঠে ওর মার কাছে গিয়ে বলল,

” মা আমি মায়ার সাথে কিচ্ছু করিনি। তুমিতো জানো আমাকে..”

অাসমাও এবার ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললেন,

” লজ্জা করছেনা তোর এসব কথা বলতে? ওকে তোর রুমে যে অবস্থায় আমরা দেখেছি। আর তুই নিজে যেভাবে ছিলি তারপরও এসব কথা বলিস কীকরে?”

বিহান আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজের মায়ের দিকে। তখন শফিক রায়হান নিজের হাতে একটা বড় মোটা লাঠি নিয়ে এলেন। বিহান হতবাক হয়ে যায়। উনি বিহানের দিকে এগিয়ে আসতেই বিহান কান্নামাখা কন্ঠে বলল,

” মামু আমার কথাটা শোন প্লিজ। আমি__”

কি শফিক রায়হান ওর কোন কথা না শুনে একের পর এক লাঠির আঘাত করতে শুরু করশ ওর গায়ে। আমিনুর আর আসমা নির্বাক হয়ে দেখছিল শুধু। কারণ একজন ধর্ষকের জন্যে শুধুমাত্র লাঠির এই আঘাতগুলো যথেষ্ট শাস্তি নয়। মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তবুও থামতে চাইছেন না উনি আজ। প্রথমে আর্তনাদ করলেও পরে আস্তে আস্তে চুপ হয়ে বিহান। এরপর ধীরে ধীরে স্হিরও হয়ে গেল। তখনই স‍ৌহার্দ্য দৌড়ে ভেতরে এল। ওর কাজ পরে গেছিল তাই আজ সকালেই বরের বাড়ি থেকেই চলে গেছিল। কিন্তু পরে ওর এক কাজিন গোটা ঘটনা ওকে বললে ও আর একমুহূর্ত দেরী না করে বাড়ি চলে আসে। এসে বিহানকে এভাবে মারতে দেখে। ও দ্রুত এসে বিহানকে দুহাতে আগলে নেয় যার ফলে ওর গায়েও দুটো আঘাত লাগে। শফিক রায়হান রাগী কন্ঠে বললেন,

” তুই সর আজ ওকে মেরে ফেলবো আমি।”

সৌহার্দ্য ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,

” মারতে বাকি কী রেখেছ? আর একটা আঘাত করবেনা ওর গায়ে।”

” তুমি জানো তোমার গুনধর ভাই কী করেছে?”

” না জানিনা। তবে এটুকু জানি, তোমরা যেকারণে ওকে মারছো সেটা ও করেনি। আর করতে পারেনা।”

কথাটা বলে সৌহার্দ্যকে ধরে উঠিয়ে রুমে নিয়ে যেতে গেলেই। শফিক রায়হান চেচিয়ে বলে উঠলেন,

” খবরদার ওকে আমার বাড়ির ভেতরে ঢোকাবে না। একজন ধর্ষককে আমি আমার বাড়িতে জায়গা দেবোনা। আমার চোখের সামনে থেকে সরাও ওকে।”

#চলবে…

[ প্রথমেই ত্রিপল সরি!!! দুদিন কোন গল্প না দেওয়ার জন্যে। মোটেই ব্যস্ত ছিলাম না। কিন্তু মুড ভীষণভাবে এলোমেলো ছিল। চেষ্টা করেও লিখতে পারছিলাম না। তাই একটু একটু করে লিখে লিখে এতো দেরীতে আজকের পর্ব দেওয়া। রি-চেইক করিনি। সরি এগেইন 😑]#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫১
.

ঐ মুহূর্তে-ই বিহানকে শফিক রায়হান তার বাড়ি থেকে বেড় করে দিল। সৌহার্দ্য অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু উনি শোনেননি। এদিকে আমিনুর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে এরকম কুলাঙ্গারকে তিনি তাঁর বাড়িতে জায়গা দেবেন না। আসমার মনে মনে এই সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ সহমত হতে না পারলেও কিছুই বললেন না। কী বলবেন? ছেলে যেই জঘন্য অন্যায় করেছেন এরপর কী বলার থাকে? আজ যদি তার ছেলে না হয়ে অন্যকারো ছেলে হত তাহলে তো উনি প্রতিবাদ করতেন। সেই ছেলেকে জেলেও পাঠাতেন। তাহলে নিজের সন্তান বলে পক্ষপাত কেন করবে? সৌহার্দ্য অনেকবার চেষ্টা করেও ওদের কিছুই বোঝাতে পারল না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল বিহান আর কিছুই বলেনি। একটা শব্দও না। উপায় না পেয়ে সৌহার্দ্য বিহানকে নিয়ে ঐ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। তখন ওরা দুজনেই স্টুডেন্ট। নিজস্ব কোন ইনকাম নেই। সৌহার্দ্য বিহানকে নিয়ে কী করবে, কোথায় যাবে বুঝতে পারছিল না। পরে ওর এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠে বিহানকে নিয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা স্পষ্টভাবে না প‍ৌঁছলেও কানাঘুষায় বেশ হালকা পাতলা অনেকের কানেই পৌঁছে গেছে। তাই সৌহার্দ্যর সেই বন্ধুর বাবা-মা একদিনের বেশি বাড়িতে এলাও করলেন না বিহানকে। তখন কী করবে বুঝতে না পেরে নুসরাতকে ফোন করে। নুসরাতও তখন বিহানকেই দোষী ভাবছিল। কিন্তু বাকিদের মত বিহানকে ফেলে দিতে পারেনি। তাই ওর হাজবেন্ডের ফাঁকা পরে থাকা ফ্লাটে আপাতত ওদের থাকতে দিল। সৌহার্দ্য অনেকটা বাধ্য হয়েই বিহানের সাথে ঐ ফ্লাটে ওঠে। সৌহার্দ্যর কাছে যা টাকা ছিল সেটা দিয়েই চালাতে শুরু করে। তবে এতোকিছুর মধ্যে বিহান তখনও চুপ ছিল। কোন কথাই বলতোনা। ও স্বাভাবিক হয়নি। সৌহার্দ্য খাইয়ে দিলে খেতো। কথাই বলতো না। মাঝেমাঝে সৌহার্দ্যর জোরাজুড়িতে দু একটা শব্দ বেড় করত মুখ দিয়ে। একদিন ঘুম থেকে উঠে স‍ৌহার্দ্য এমন কিছু দেখবে ভাবেনি। বিহান সুইসাইড করার চেষ্টা করছে গলায় ফাঁস দিয়ে। সেটা দেখে সৌহার্দ্যর দুনিয়া থেমে গেছিল। অনেক কষ্টে সেদিন বিহানকে আটকে ছিল। দেখতে দেখতে বেশ অনেকগুলো দিন কেটে গেল। এরমধ্যে বিহান কয়েকবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। সৌহার্দ্য বুঝেছিল ও প্রচুর ডিপ্রেশনে ভুগছে। তখন কীভাবে সৌহার্দ্য বিহানকে আগলে রেখেছিল সেটা শুধু সৌহার্দ্যই জানে। সৌহার্দ্যকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে ওর বাড়ির লোক কিন্তু সৌহার্দ্য যায়নি। বিহানের অবস্থাও ওদের জানায় নি। সৌহার্দ্য নিজেও ওদের ওপর বেশ ক্ষুদ্ধ। একদিন সৌহার্দ্য টাকা তুলতে গিয়েছিল ব্যাংকে। ফিরে এসে দেখে বিহান আবার সুইসাইড করার চেষ্টা করছে। ছুড়ি দিয়ে হাতে টান মারার আগেই সৌহার্দ্য গিয়ে ছুড়িটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল। এরপর ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারল বিহানকে। কিন্তু বিহান তবুও কিছু বলল না। নিচের দিকে তাকিয়ে ওভাবেই বসে রইল। সৌহার্দ্য বিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। কান্নাভেজা গলায় বলল,

” ওরাই তোর কাছে সব? আমি কেউ না? তোর জন্যে, শুধুমাত্র তোর জন্যে সবার সাথে লড়েছি। সবার থেকে দূরে সরে এসছি। আর তুই এরকম কাজ করছিলি? আমার কথা মনে পরেনি তোর একবার? এতোটাই স্বার্থপর তুই? যদি এতোই মরার শখ থাকে আগে আমাকে মার। এরপর আর কেউ তোকে আটকাবে না।”

কিছুক্ষণ অনুভূতিহীনভাবে বসে থেকে বিহান নিজেও জড়িয়ে ধরল সৌহার্দ্যকে। এরপর ফুপিয়ে কেঁদে দিল। দুজনেই অনেক কেঁদেছে সেদিন। এরপর বিহান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ওর কথাও স্বাভাবিক হয়। খরচ চালানোর জন্যে সৌহার্দ্য পারটাইম জব করতে শুরু করে। আর এরপরেই আর.জে. SR এর জন্ম। বিহান তখনও কিছু করতোনা কারণ ও ততটাও স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু বছর কেটে যাওয়ার পর ও পেন্টিং শুরু করে। আবার বাইরে র জগতের সাথে মিশতে শুরু করে। তবে সেই বিহান ছিল অন্যরকম। যে মেয়েদের সাথে তেমন ভাবে কথাও বলতোনা সেই বিহান নিয়মিত মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে শুরু করে, নেশা করা শুরু করে, দু-তিনটে করে গার্লফ্রেন্ড বানানো শুরু করে। যদিও বিহান নিজে থেকে কোন মেয়েকে প্রপোজ করতো না। কিন্তু যখনই কেউ প্রপোজ করতো ও একগড়ে এক্সেপ্ট করে নিতো। এমনিতে ওরা যা চাইতো, যা অফার করতো সেটাই করত বিহান। সৌহার্দ্য দেখত ব্যাপারটা। স্পষ্টই বুঝতে পারতো যে মেয়ে জাতির প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্মে গেছে বিহানের। ও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করতো কিন্তু বিহান শুনেও শুনতো না। পরবর্তীতে বিহান নিজেই আলাদা ফ্লাট নেয়। সৌহার্দ্যর মায়ের কান্নাকাটিতে বাধ্য হয়ে সৌহার্দ্যকে বাড়ি ফিরতে হয়। নুসরাতও ততদিনে বুঝেছিল বিহান আর যাই হোক এরকম কাজ করেনি। কিন্তু বিহানের অধঃপতন দিন দিন বেড়েই গেল। নেশা করা, ফ্লার্ট করা, একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক, এমনকি তাদের নিয়ে ফ্লাটে আসা। বিহানের সাথে যা হয়েছিল সেটা অন্যায় ছিল। কিন্তু তার বদলে বিহান নিজেকে যেটাতে পরিণত হয়েছিল সেটাও ঠিক ছিলোনা। কারো করা অন্যায়ের ওপর রাগ করে তুমি যদি নিজেকে খারাপ বানিয়ে ফেল তাহলে শেষমেশ ক্ষতিটা তোমারই। যেমন এসবে বিহানের ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ হয়নি। তাই অন্যের ওপর রাগ করে নিজেকে খারাপ বানানোটা মোটেও সঠিক কাজ নয়।

__________

রিখিয়া নিঃশব্দে কাঁদছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে এরকম নির্মম ঘটনা ঘটেছে শুনলে যেকেউ কষ্ট পাবে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। এখন ও বুঝতে পারছে সেদিন ভুল বুঝে থাপ্পড় মেরে, বিহানকে ক্যারেক্টারলেস ট্যাগ দিয়ে, জেলে পাঠিয়ে আসলে ও বিহানের পুরোনো ক্ষতে প্রচন্ড জোরে আঘাত করেছিল। তুর্বী এতক্ষণ অবাক হয়ে শুনছিল সব। ওও হালকা ইমোশনাল হয়ে গেছে। ও সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” মায়ার সাথে কী হয়েছিল এরপর? ও এখন কোথায়?”

সৌহার্দ্য কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,

” ঐ ঘটনার এক সপ্তাহ পর মায়াকে নিয়ে ফুপা-ফুপি ইন্ডিয়া চলে যায়। এলাকায় ছড়িয়ে পরেছিল কথাটা। তাই আর ওখানে থাকেনি। শুনেছিলাম ওখানে বেশ বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করেছে। যদিও সেদিন মায়া ঠিক কী করেছিল মায়া ছাড়া কেউ জানেনা। আমি নিজে এসবের সাক্ষী না হলেও আমার জানি ও এমন কিছুই করেনি। ”

তুর্বী অবাক কন্ঠে বলল,

” মানে মায়া এখন দিব্বি সুখে আছে? একটা ছেলের লাইফ হেল করে দিয়ে, তাকে একপ্রকার নিঃস্ব করে দিয়ে সে কীকরে এতো আনন্দে থাকে? রিভেঞ্জ অফ নেচারও কী আজকাল পক্ষপাত করছে না-কি? ঐ মেয়ের সাথে সত্যি সত্যি এমন হলেই বুঝত।”

রিখিয়া বলল,

” না তুর। এভাবে বলো না। ও যা করেছে তা জঘন্যতম অন্যায়। তাই বলে তার সাথেও অন্যায় হোক এটা চাওয়াটাও আরেক অন্যায়।”

” বাহ রে! কর্মফল পাবেনা?”

” কর্মফল সবাইকেই পেতে হয়। কিন্তু কার কর্ম কেমন, আর তার ফল কী হবে সেটা আমরা ঠিক করতে পারিনা। তারজন্যে ওপরওয়ালা আছেন। সঠিক সময়ে উনি এমনিতেই সবার কর্মের ফল দিয়ে দেন।”

তুর্বী মুখ গোমড়া করে বলল,

” সরি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।”

রিখিয়া সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” বিহানের রুমের চাবি আছে আপনি কাছে? আমি জানি ও ঘুমোচ্ছে না। আমি আছি তাই আমার সামনে আসতে চাইছে না। সেদিন অনেক কথা শুনিয়েছিলাম তো। আমি গিয়ে দেখতাম একটু।”

সৌহার্দ্য পকেট থেকে চাবি বেড় করে রিখিয়ার হাতে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আমি ছাদে যাচ্ছি।”

বলে চলে গেল। রিখিয়া চলে গেল বিহানের রুমের দিকে। তুর্বী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সৌহার্দ্যর পেছন পেছন গেল। ছাদে গিয়ে দেখে সৌহার্দ্য বসে আছে মাঝের দিকেই। তুর্বী ধীরপায়ে গিয়ে সৌহার্দ্যর পাশে বসল। সৌহার্দ্য একপলক তুর্বীর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। দুজনের মনেই অনেক কথা জমে আছে কিন্তু বলতে পারছেনা।
বেশ অনেকটা সময় দুজন চুপ করে রইল। তুর্বী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। চাঁদের আলো এসে পরছে সৌহার্দ্যর ওপর। কিন্তু কয়েকদিন পর সে দোলার হয়ে যাবে? ভাবলেই বুকের মধ্যে ইদানীং কেমন অসহনীয় ব্যথা হয় তুর্বীর। সৌহার্দ্য বলল,

” তাকিয়ে আছো যে? কিছু বলবে?”

তুর্বী হালকা চমকে গেল। সাথেসাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” তোমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সট কবে হচ্ছে?”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে তাকালো তুর্বীর দিকে। এরপর বলল,

” কী ব্যাপার বলবে? ইদানীং আমার বিয়ে নিয়ে বেশি প্রশ্ন করছ?”

তুর্বী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হেসে বলল,

” না এমনি জানতে চাইলাম।”

সৌহার্দ্য স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

” বিয়ে যখন করব দেখতেই পাবে। তোমাকে ইনভাইট অবশ্যই করব।”

তুর্বী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল এরপর হঠাৎই বলল,

” যদি কখনও বলি যে ভালোবাসি। আবার তোমার হাত ধরতে চাই। আরেকটা সুযোগ চাই। মেনে নেবে আমাকে? ভেঙে দেবে ঐ বিয়ে?”

সৌহার্দ্য অবাক হয়ে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

” আগে থেকে কিছু ভেবে নিয়ে দ্বিতীয়বার আঘাত পেতে চাইনা। আর তাছাড়াও তুমি আমাকে এসব বলবে? সেই দিন কোনদিন আসবেনা।”

তুর্বী তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। সত্যিই কী আসবে না সেই দিন? কিন্তু আজ ওর মন যে অন্য কথা বলতে চাইছে? তার কী হবে?

___________

বিহান বারান্দার রেলিং ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর রিখিয়া ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ও রুমে ঢোকার পর থমকে গেছিল। কারণ ওর চোখ ওর নিজেরই পেন্টিং এর ওপর পরেছিল। ওর বুঝতে বাকি থাকেনি এটা কে এঁকেছে। রিখিয়াকে দেখে বিহান শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেছে। রিখিয়া কিছুক্ষণ ঐ পেন্টিং হাত বুলিয়ে চোখের পানি ফেলল। এখন আর ওর মনে কোন সন্দেহ নেই যে এই দুই বছরে বিহান ওকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে। এরপর ও বারান্দায় যায় বিহানে কাছে। এখনো কথা বলেনি ওর সাথে। দীর্ঘ নিরবতার পর রিখিয়া নিজেই বলল,

” কথা বলবেন না আমার সাথে?”

বিহান বাইরে তাকিয়ে রইল কিছু বলল না। রিখিয়া আবার বলল,

” আমি বুঝতেই পারিনি সেদিন অজান্তেই আপনার পুরোনো ক্ষতে আঘাত করে ফেলেছি। কিন্তু এখনতো আপনি বদলে গেছেন। সব ঠিক হয়ে গেছে। আপনি এতো ভালো ছবি আঁকেন। আর ভবিষ্যতে আরও ভালো আঁকবেন। প্লিজ আমাকে__”

বিহান বলল,

” রিখিয়া প্লিজ বারবার ক্ষমা চেয়ে আমায় অস্বস্তিতে ফেলে দিওনা। অন্যায়তো আমি করেছিলাম তোমার সাথে।”

রিখিয়া বিহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,

” আমি আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি আপনাকে। মন থেকে। তবে আগে একটা অভিমান ছিল আপনার ওপর। কিন্তু এখন আর সেটা নেই।”

বিহান শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রিখিয়ার দিকে। এরপর মলিন হেসে বলল,

” তুমি খুব ভালো রিখিয়া। একটু বেশিই ভালো।”

” তাই?”

” হুম। আমার অতীত জেনেও আমার সাথে এতো ভালো করে কথা বলছ। সবার চোখ‍েতো আমি রেপিস্ট।”

রিখিয়া বিহানকে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

” আমার চোখে নন। সৌহার্দ্য ভাইয়ার মত আমিও নিশ্চিত আপনি এমন কিছুই করেন নি। করতে পারেন না। আই ট্রাস্ট ইউ।”

বিহান নিজের ভেতরের আবেগকে আটকে রাখতে পারল না, শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। রিখিয়াও আলতো হাতে বিহানের পিঠ আকড়ে ধরল। বিহান বলল,

” আই লাভ ইউ।”

রিখিয়া কেঁদে ফেলল বিহানের এই কথায়। কত অপেক্ষা করেছিল বিহানের মুখে এই তিনটে শব্দ শোনার জন্য। আজ মনে হচ্ছে ও সব পেয়ে গেছে। রিখিয়াও আস্তে করে বলল,

” আমিও ভালোবাসি আপনাকে। খুব ভালোবাসি।”

#চলবে….#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫২
.

বিহান আর রিখিয়া আজ যেন নিজের মধ্যেই নেই। এই দু-বছরের জমানো দুঃখ, অভিমান, অভিমান, ভালোবাসা সব একসাথে বেড়িয়ে আসছে। বেশ অনেকটা সময় একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দুজনেরই হুশ ফিরলো। রিখিয়ার মনে পরল ও কারো হবু বউ। আর বিহানেরও মনে পরল যে রিখিয়ার আর তিনদিন পর বিয়ে। তৎক্ষণাৎ একে ওপরকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়াল। কী অদ্ভুত সময়চক্র! অাড়াই বছর যাবত যারা একে ওপরের আড়ালে একে ওপরকে সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে গেছে। তারা আজ নিজেদের অনুভূতি একে ওপরের কাছে স্বীকার করলেও তারা আজ একে ওপরের কাছে থাকতে সংকোচ বোধ করছে। বিহান অনেকটা ইতস্তত করে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আ’ম সরি।”

রিখিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বিহানের দিকে। এরপর ছুটে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। বিহান ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। পুরো ব্যাপারটাতে হতভম্ব হয়ে গেছে ও। ও আর রিখিয়া এতোটা কাছাকাছি ছিল ভাবলেও অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ওর। ওপরদিকে রিখিয়া অন্য রুমে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা ওর জন্যে ঠিক কী ছিল সেটা শুধুমাত্র ওই জানে। কতগুলো দিনের অপেক্ষার ফল ছিল কিছুক্ষণ আগের সেই মুহূর্ত। কিন্তু এই আনন্দ, এই অনুভূতি, এই ভালোবাসার আদোও কোন ভবিষ্যৎ আছে কী? আজ পরিস্থিতি এমন জায়গাতে এসে দাঁড়িয়েছে যে ওদের ভাবতে হচ্ছে এরপর ওরা কী করবে? কী করা উচিত হবে এখন? ওরা কী সত্যিই একে ওপরের হতে পারবে কোনদিন?

___________

রাতে সৌহার্দ্য আর বিহান এক রুমে আর পাশের রুমে তুর্বী আর রিখিয়ার থাকার ব্যবস্থা করে দিল। তুর্বী খেয়াল করল যে রিখিয়া মন খারাপ করে বসে আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। ও মোটামুটি আন্দাজ করতে পেরেছে যে বিহান আর রিখিয়ার মধ্যকার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। এখন এরা দুজন অন্য চিন্তায় চিন্তিত। তুর্বী রিখিয়ার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,

” কী হয়েছে?”

রিখিয়া অসহায় দৃষ্টিতে একবার তাকাল তুর্বীর দিকে। আজ রিখিয়ার সত্যিই নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। ও তুর্বীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। তুর্বী অবাক হয়নি। ও খুব ভালো করেই চেনে রিখিয়াকে আর তার আবেগ কে। তাই আলতো করে রিখিয়ার কাঁধে হাত রাখল। রিখিয়া ভাঙা গলায় বলল,

” তুই জানিস উনি আজ নিজের মুখে বলেছে উনি আমাকে ভালোবাসেন। ওনার মুখে এই কথাটা শোনার জন্যে আমি কত ছটফট করতাম। কিন্তু আজ? আজ আমি কী করব?”

রিখিয়া তুর্বীকে ছাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

” কী করবি মানে? শাফিনকে গিয়ে বলে দিবি যে তুই বিয়েটা করতে পারবি না। ইউ লাভ সামবাডি এলস। সিম্পল!”

” নো, নট সো সিম্পল।আর তিনদিন পর আমার বিয়ে। কার্ড বিলি করা হয়ে গেছে। শাফিন ভাইদের বাড়িতে কাল পরশু থেকে গেস্ট আসতে শুরু করবে। বুঝতে পারছ ব্যাপারটা?”

” বুঝেছি! কিন্তু রিস্ক নিতে হবে রিখু। না হলে কিছুই হবেনা। বিহান এমনিতে অনেক কষ্ট পেয়েছে নতুন করে আর কোন কষ্ট দিস না।”

রিখিয়া দু হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আমাকে ভাবতে হবে। হুটহাট কিছু করতে পারব না আমি।”

তুর্বী একটা হতাশ শ্বাস ফেলে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পরল। আর রিখিয়াও তুর্বীর পাশ দিয়ে শুয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেল।

সৌহার্দ্য আর বিহান পাশাপাশি টানটান হয়ে শুয়ে আছে। দুজনের দৃষ্টি সিলিং এর দিকে। দীর্ঘ সময়ের নিরবতা ভেঙ্গে সৌহার্দ্য বলল,

” কী ভাবলি?”

বিহান সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,

” আমার তো এখানে আর ভাবাভাবির কিছু নেই। আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোরা ওকে আমার ফিলিং জানিয়েছিস। কাল আবেগের বসে আমিও ওকে বলে দিয়েছি যে ভালোবাসি। ব্যাস! হয়ে গেছে। ও আমার সম্পর্কে আমার অনুভূতি সম্পর্কে ক্লিয়ার। এখন আমার দিক থেকে আমি ক্লিয়ার আছি।”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তারমানে তুই এখন কিছুই করবি না?”

বিহান একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” এখানে এখন আমার আর কিছুই বলার বা করার নেই। আমি রিখিয়ার ওপর আর কোনরকমের মানসিক প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারব না। এমনিতেই সবাইকে ভালো রাখার যাতাকলে অনেক পিসেছে মেয়েটা। আমি ওকে নতুন কোন দ্বিধায় ফেলব না। ইমোশানালি কোন প্রেশার দেবো না। এবার ও সেটাই করবে যেটা ওর মন ওকে করতে বলবে। আমি বা অন্যকেউ না।”

সৌহার্দ্য আর বলার মত কিছুই খুঁজে পেলোনা। ওদের দ্বারা যতদূর করা সম্ভব ওরা করেছে। এবার বাকি কাজ হয় রিখিয়া বিহানকেই। নয়তো কিছুই করার থাকবে না।

____________

শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে শাফিন এর জন্যে অপেক্ষা করছে সৌহার্দ্য, বিহান, তুর্বী, রিখিয়া আর দোলা। শাফিন আসছে রিখিয়া আর তুর্বীকে নিয়ে যেতে আর কিছু কেনা কাটা করার আছে বিয়ের জন্যে। বিহান আর রিখিয়া দুজনেই একদম চুপ হয়ে গেছে। কাল থেকেই কিছু একটা ভেবেই চলেছে ওরা। আর এদিকে তুর্বীর মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে কারণ সকাল সকাল দোলা এসে হাজির হয়েছে ওখানে। এখানো বিয়ের ডেট অবধি ঠিক হয়নি। সব জায়গায় এই মেয়ের হাজির হওয়ার কী আছে? রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। একটু পর পর শুধু আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে সৌহার্দ্যকে কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা। সৌহার্দ্যর সেদিকে খেয়াল নেই। এরমধ্যেই শাফিন চলে এল। তুর্বীর চোখ শাফিনের দিকে পরতেই ও বলে উঠল,

” ঐতো শাফিন ভাই চলে এসছে।”

তুর্বীর কথায় সবাই শাফিনের দিকে তাকাল। শাফিন এসে সৌহার্দ্য, বিহান আর দোলার সাথে হাত মিলিয়ে পরিচিত হল। বিহান শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে। এই তবে সেই শাফিন? যে তার প্রেয়সীকে নিজের করে নেবে? রিখিয়ার ওর শুধু তাঁর অধিকার থাকবে। ওর চেয়ে কোন অংশে কম বলা যায় না ছেলেটাকে। ব্যবহারও কী চমৎকার। আচ্ছা রিখিয়াকে কী ওর চেয়েও বেশি ভালোবাসে শাফিন? হয়তো বাসে। না হলে এতোগুলো বছর অপেক্ষা করবে কেন? কিন্তু শুধুমাত্র অপেক্ষার সময় দিয়েই কী ভালোবাসা মাপা যায়? হয়তো যায়! শাফিন রিখিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,

” তো ম্যাডাম! এবার চলুন!”

রিখিয়া মলিন হেসে হাটা শুরু করল। সবাই মিলে একসাথেই মলে ঢুকলো। তুর্বীর কোনদিকেই মনোযোগ নেই। ওর ফোকাস শুধু সৌহার্দ্য আল দোলার দিকে। ওরা দুজন হাসাহাসি করছে, কেনাকাটা করছে যেটা সাধারণ চোখে দেখলে খুবই নরমাল। কিন্তু তুর্বীর এখন আর এসব মোটেও সহ্য হচ্ছেনা। ও নিজেই এখন বুঝতে পারছে যে ও জেলাস। ওর মনে হচ্ছে সৌহার্দ্যর ওপর শুধু ওরই অধিকার। ওর মানে ওর। সেখানে এই মেয়ে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল? আর বিহানেল দৃষ্টি রিখিয়া আর শাফিনের দিকে। শাফিন রিখিয়ার হাত ধরে রেখেছে। এটা-ওটা বলছে। শাফিন রিখিয়ার হাত ধরে নিয়ে একটা শাড়ির কাছে গেল। শাড়িটা রিখিয়ার গায়ের ওপর দিকে বলল,

” ওয়াও! দারুণ মানিয়েছে। আমাদের বিয়ের পরেরদিক সকালে তুমি এটাই পরবে।”

রিখিয়া একবার তাকাল বিহানের দিকে। বিহান ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। ওর চোখে প্রিয়জনকে অন্যকারো সাথে দেখার কষ্টটা স্পষ্ট।

এদিকে হঠাৎ কোন এক কথার মধ্যে দোলা হাসল হাসতে হাসতে সৌহার্দ্য হাত আকড়ে ধরল। তুর্বীর মেজাজ এমনিতেই চটে ছিল আরও চটে গেল। ও সোজা ওদের কাছে গিয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো। কটমটে চোখে সৌহার্দ্যর দিকে তাকাল। সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তুর্বী সৌহার্দ্য হাত ধরে টেনে অনেকটা দূরে নিয়ে গেল। এরপর ঝাড়া দিয়ে হাথ ছেড়ে বলল,

” এমনিতেতো এতো আদর্শের কথা বলতে। এখন সেসব কোথায় গেল? বউ হয় ও তোমার? এখনো তো বিয়েও হয়নি এতো ঢলাঢলি কীসের একে ওপরের সাথে। মনে হচ্ছে যেন ওনাদেরই একা বিয়ে হবে দুনিয়াতে আর কারো বিয়ে হবেনা। আর এই? তুমি না আমাকে আমাকে ভালোবাসতে? সব ভালোবাসা এতো দ্রুত শেষ? এবার দেখলে আমি ঠিকই বলেছিলাম? কোনকিছুই চিরকাল থাকেনা। যেমন তোমার ভালোবাসা থাকেনি।”

সৌহার্দ্য এতক্ষণ ভ্রু কুচকে শুনছিল তুর্বীকে। এবার ও একটু হাসল। তারপর এগিয়ে গিয়ে একটু চেচিয়েই বলল,

” কিন্তু তুমিতো ভালো বাসোনি রাইট? তাহলে আমি কার সাথে মিশছি, কার সাথে ঢলাঢলি করছি, কাকে বিয়ে করছি, তাতে তোমার কী? হু আর ইউ? কীসের জোরে বলছো এসব? ভালোবাসো আমাকে? বলো? ভালোবাসো?”

#চলবে…

[ গল্পের একেকটা পর্বের প্যাটার্ন যেটুকু থাকে সেটুকুই লেখা যায়। এরবেশি না। তাই অনেক সময় ছোট হয়ে যায় আবার কখনও বিশাল পর্ব হয়। চাইলেও বড় করা যায়না। তাই ছোট হয়েছে বলে বলে কেউ বিব্রত করবেন না। হ্যাপি রিডিং।
রি-চেইক করা হয়নি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here