#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#বোনাস_পর্ব
(রুদ্ধশ্বাস)
আহীর সাড়িকার পা থেকে কাচ তুলে অ্যান্টিস্যাপ্টিক লাগাতেই সাড়িকার ঘুম ভেঙে গেলো।ওর পা টা ভীষন জ্বলছে।শুধু পা নয় সারা সরীরেই অসম্ভব জ্বালা করছে।ও পিট পিট করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলো,আহীর ওর পায়ের কাছে বেডের উপর বসে মাথাটা একটু নিচু করে ওর পায়ে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।আহীর কে এতো রাতে এখানে দেখেও সাড়িকা একটু চমকালো না।কারন ও আগে থেকেই জানতো আহীর এখানে আসবে।আহীরের সাথে এ যাবৎ যতোবার ঝগরা মারামারির জন্য ওর ব্যাথ্যা লেগেছে ততোবার আহীর এভাবে চুপিচুপি এসে,হয় ওকে এভাবে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে গেছে,নাহলে চকলেট,আইসক্রিম,চিপস এসব কিনে দিয়ে রাগ ভাঙিয়ে গেছে।আহীরের এরকম কাজ গুলো সাড়িকার সবসময়ই আদিক্ষেতা লাগে।কারন প্রথমে তো নিজেই আঘাত করবে তার উপর আবার আসবে ন্যাক্যামো করে ঔষধ খাওয়াতে।
আহীরকে দেখতেই সাড়িকার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।বারবার ষ্টেজে ঘটা ঘটনাটা মাথার মধ্যে ঘুড়তে লাগলো।ও রাগে ফোস ফোস করতে করতে শোয়া থেকে উঠে বসে,হঠাৎ করেই আহীরের ব্যাক সাইডে দিলো এক লাথি।আচমকা এমন অ্যাট্যাকের জন্য আহির মোটেও প্রস্তুত ছিলো না,তাই এতো জোড়ে লাথি মারায় বেচারা ফাষ্ট-এইড বক্সসহ বেড থেকে ধরাম করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
ঠিক তখনই বাইর থেকে দরজা ঠেলে মিহির আর সাঈফা রুমে প্রবেশ করলো।ভিতরে ঢুকেই আহীরকে ওভাবে নিচে বসে থাকতে দেখে দুজন কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে আহীরের দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলো।
আহীর বসা থেকে দাড়িয়ে সাড়িকার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
“ওই তুই আমাকে লাথি দিয়ে কেনো ফেলে দিলি?”
সাড়িকা দাতে দাত চেপে বললো
“তুই আমার রুমে আমারই বেডে বসে কি করছিলি?”
“কেনো?তুই কি রাত কানা?চোখে দেখিসনি কি করছিলাম?তোর পায়ে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছিলাম।”
“না আমি রাত কানা নই।আমার চোখ ঠিকই আছে।কিন্তু তুই আমার পায়ে কোন সাহসে হাত লাগিয়ে ছিলি?”
“আজব হাত না লাগালে মেডিসিন দিবো কিভাবে!”
সাড়িকা ঝাড়ি মেরে বললো
“তোকে মেডিসিন লাগাতে কে বলেছে?নিজে আঘাত করে আবার নিজেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে আসিস?আর তুই আমাদের বাড়িতে কোন সাহসে এসেছিস?যাহ এক্ষুনি বের হ আমাদের বাড়ি থেকে,নাহলে বড় আব্বু আর বাবাইকে বলে তোদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।
“আচ্ছা,তাই নাকি!তো যাহ এক্ষুনি গিয়ে তোর বাবা কাকাকে সবটা বল,আমিও দেখি ওনারা আমাদের কি করতে পারে?”
সাড়িকা খাট থেকে নামতে নামতে বললো
“দাড়া এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে সবটা বলে দিবো ”
সাড়িকা খাট থেকে নেমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা দিতেই আহীর সাড়িকার হাত ধরে এক টান দিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিলো।তারপর সাড়িকার দিকে তাকিয়ে শাসানোর স্বরে বললো
“এই রুম থেকে যদি এক পাও বাইরে বের হয়েছিস তাহলে তোর হাত পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে আসবো।বুঝেছিস?”
মিহির আর সাঈফা এতোক্ষন নিলিপ্ত ভঙ্গিতে দরজার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সাড়িকা আর আহীরের ঝগরা দেখছিলো।এসবে এখন ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।আগে ওরা দুজনকে থামানোর চেষ্টা করতো বাট এখন করে নাহ।কারন আগে যতোবারই এদের থামাতে গেছে ততোবারই মাঝখান থেকে ওরা মার খেয়ে ফিরে এসেছে।তাই ওরা এখন শুধু নিরব দর্শকের মতো সবটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে। না ঝগরা থামাতে যায়,আর না ওদের কথার মাঝে কোনো কমেন্ট করতে যায়।
আহীর আর সাড়িকার কথা কাটাকাটির মাঝেই হঠাৎ করেই আহীর আর মিহিরের ফোনে টুং করে কিছু একটার নোটিফিকেশন আসে।এতো রাতে এভাবে দুজনের ফোন একসাথে নোটিফিকেশন আসায় দুইজনেই বেশ অবাক হয়।
আহীর ঝগরা থামিয়ে ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখে আহানের আইডি থেকে একটা ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়েছে।আহীর অবাক হয়ে মেসেজটার দিকে একবার তাকিয়ে মিহিরের দিকে তাকায়।দেখে মিহিরও অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওরা বুঝতেই পারছে না,আহান হঠাৎ এতো রাতে ভয়েজ মেসেজ কেনো পাঠালো!ওরা দুজন তাড়াতাড়ি করে ভয়েজ মেসেজ টা ওপেন করতেই আহানের কন্ঠ শুনতে পেলো।আহান ভাঙা গলায় ব্যাথ্যায় কুকিয়ে উঠা স্বরে বলছে
“আ-আমাদের উপরে অ্যা-অ্যাট্যাক করা হয়েছে।ওরা দলে প্রায় বিশ পচিশ জন আছে।সবাই আমাদের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করছে।তোরা তাড়াতাড়ি আমার ফোনের লোকেশন ট্রেস করে আমাদের কাছে আসার চেষ্টা কর।আমার একহাতে গুলি লেগেছে। সাথে গার্ড,ড্রাইবার কিচ্ছু নেই।মেঘও ভিষন ভয় পেয়েছে।আমার যা হয় হোক তোরা এসে ওকে নিয়ে যাহ প্লিজ।আমার মেঘের গায়ে যেনো একটা আচও না লাগে। ইনশাআল্লাহ আমি যতোক্ষন বেচে আছি ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগতে দিবো না।”
ভয়েজ মেসেজটা শুনে ওদের চার জনের পৃথীবি থমকে গেলো।আহীর মিহির ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলো।সাড়িকা সাঈফা হাউমাউ করে কেদে দিলো।ওদের কান্নার শব্দ কানে আসতেই আহীর মিহিরের হুস ফিরে আসলো।ওরা আর এক মুহূর্তও দেরি না করে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সিড়ির সামনে এসে যখনই সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনই দেখলো হিয়ান হাতে গান নিয়ে দ্রুত এদিকেই দৌড়ে আসছে।
ওদের দেখে হিয়ান দাড়িয়ে গিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“তোরা এতো রাতে এখানে কি করছিস?”
মিহির সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে নামতে বললো
“পড়ে বলবো,এখন হাতে একদম সময় নেই, ব্রোর উপরে অ্যাট্যাক হয়েছে।”
হিয়ানও ওদের পিছনে দৌড়ে নামতে নামতে বললো
“হ্যা আমার কাছে একটু আগেই আহানের ভয়েজ মেসেজ এসেছিলো।কোন বাষ্টর্ডের বাচ্চারা এতো বড় স্পর্ধা টা দেখিয়েছে,একবার জানতে পারি সব গুলোকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”
বলেই ওরা তিনজনই বাসার মেইন গেটের দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।ছাহীর অবাক হয়ে ওদের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ও দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।
ছাহীর বাইরে এসে দেখলো হিয়ান আহীর আর মিহির তিনজন তিনটা আলাদা আলাদা গাড়ি আর সাথে কিছু গার্ডস নিয়ে অলরেডি বেড়িয়ে গেছে।ওদের এভাবে যেতে দেখে ছাহীর ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো।বেশ বড় সড় কোনো প্রভলেম হয়েছে।ও দ্রুত বাসার ভিতরে এসে দৌড়ে সাড়িকা সাঈফার রুমে গেলো।গিয়ে দেখলো সাড়িকা বেডের উপর বষে আর সাঈফা ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাদছে।ও গিয়ে সাঈফা পাশে হাটু গেড়ে বসে সাঈফাকে জড়িয়ে ধরে বললো
“আপি এভাবে কাদছিস কেনো?”
সাঈফা অসফুট স্বরে বললো
“আহান ভাঈয়া আর মেঘ আপির উপরে অ্যাট্যাক হয়েছে।ভাইয়ার গুলি লেগেছে।”
গুলি লেগেছে কথাটা শুনতেই ছাহীরের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।ওর ধপ করে ওখানে ফ্লোরের উপরে বসে পড়লো।
এইদিকে সাঈফার বাবা এতোরাতে তিনটা গাড়ি বাইরে যেতে দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন।তখনই ওনার কানে সাড়িকা সাঈফার কান্নার শব্দ ভেষে এলো।উনি দ্রুত পায়ে দৌড়ে ওদের রুমের দিকে গেলেন।গিয়ে ওদের তিনজনের এমন অবস্থা দেখে চমকে উঠলেন।ওদের কান্না শুনে একে একে ওদের মা,হিয়ানের মা-বাবা সবাই ঘুম থেক জেগে গেলেন।ওনারা দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে ওদের রুমের এসে ওদের কাছ থেকে সবটা জানতে পারে।হিয়ানের বাবা আর কাকা নিচে গিয়ে দ্রুত আহাদ খান,মোনা খান,মিড়া রহমান,আজম রহমানকে ফোন করে সবটা জানিয়ে, ওনারাও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন।
_________________________
মেঘ আহানের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।আহান গুলি লাগা হাতটা দিয়ে মেঘকে জড়িয়ে রেখেছে আর ভালো হাত টা দিয়ে ড্রাইভিং করছে।আহানের যে হাতে গুলি লেগেছে সেই হাতটা মেঘের ওরনা দিয়ে শক্ত করে বাধা।তবুও রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না,,রক্ত পড়তে পড়তে মেঘের গায়ে পড়ে থাকা জামাটা পুরো লাল হয়ে গেছে।আহান অনেক কষ্টে ক্ষত হাতটা মেঘের মাথার উপর রেখে বললো
“মেঘ পড়ি কেদো না প্লিজ।আমি তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না।ভয় পেও না, আমি আছিতো।আমি যতোক্ষন বেচে আছি ততোক্ষন ওরা তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না।শুধু কিছুটা সময় ধৈর্য্য ধরো,আহীর,মিহির,হিয়ান, অভি ওরা হয়তো কাছাকাছি এসেও পড়েছে।ওরা আসলেই তোমাকে ওদের কাছে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হবো।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলো।নীজের হাতে গুলি লেগেছে, তাও এই লোকটা নিজের কথা না ভেবে এখোনো শুধুমাএ ওর কথাই ভাবছে।আর ও কি করেছে, কয়েকটা মানুষের বাজে কথা শোনার ভয়ে এতো রাতে এই মানুষটাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।কেনো ও এতো রাতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য জেদ করলো?কেনো কোনো গার্ড ছাড়া আহানের সাথে আসতে রাজি হয়ে গেলো?আজকে রাতটা আহানের বাড়িতে থাকলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো ওর?
আজকে মেঘের নিজেকে খুব সার্থপর মনে হচ্ছে।নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।মেঘ আহানের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমি খুব খারাপ তাইনা?একদম সার্থপর বাজে একটা মেয়ে।সব সময় আপনাকে কষ্ট দেই।আজকে আমার জন্য আপনার এই অবস্থা।গুলিটা আপনার না লেগে আমার লাগা উচিত ছিলো।আমার মতো সার্থপর মানূষের বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
মেঘের কথা শুনে এতোক্ষন আহানের ব্যাথ্যায় কুচকে থাকা চেহারাটা রাগে লাল হয়ে গেলো।ও মেঘের দিকে হিংস্র বাঘের মতো তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“মেঘ উল্টোপাল্টা কথা বলা বন্ধ করো।তুমি যদি এখন এইসব কথা বলো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।ভেবো না হাতে একটা সামান্য গুলি লেগেছে বলে আমি তোমার কিচ্ছু করতে পারবো না।যতো যাই হোক আমি আগেও যেমন ছিলাম এখোনো সেই রকমই আছি।শুধুমাএ তুমি সাথে আছো বলে বাষ্টার্ড গুলোকে কিছু করতে পারছি না।তোমাকে সেইভ রাখার জন্য আমাকে পালাতে হচ্ছে।নাহলে ওদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিতাম আহান খান আসলে কি জিনিস! কাওয়ার্ডের দল কতো গুলো, এতোজন এসেও একটা মানুষকে সামনা সামনি অ্যাট্যাক করার সাহস পেলো না,পিছন থেকে শুট করলো।এরা নাকি আবার গ্যাংষ্টার হুহ।”
_____________
ফ্লাসব্যাক
মেঘ বাসায় যাবে বলার সাথে সাথে আহান উপর থেকে চাবি নিয়ে এসে মেঘকে নিয়ে এসে মেঘকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।মেঘ গার্ড নেওয়া পছন্দ করে না তাই আহান সাথে কোনো গার্ডও নেয়নি।ওরা কিছু দূর আসতেই হঠাৎ আহানের চোখে পড়ে হাই ওয়ের পাশেই একটা আইসক্রিম পার্লার খোলা আছে।মেঘ আইসক্রিম পছন্দ করে তাই আহান গাড়িটা এক সাইডে দাড় করিয়ে মেঘকে একটু বসতে বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর আইসক্রিম পার্লারের মধ্যে ঢুকে মেঘের জন্য এক বক্স চকলেট ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে পার্লার থেকে বের হয়ে যখনই গাড়ির দিকে আসতে যাবে তখনই ওর হাতে একটা গুড়ি এসে লাগলো।
সাথে সাথে ওর হাতে থাকা আইসক্রিম টা নিচে পড়ে গেলো।আহান পিছনে তাকিয়ে দেখলো চারটা গাড়ি ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।আর গাড়ির মধ্যে থাকা লোকেরা ননষ্টপ আহানের দিকে গুলি ছুড়ে যাচ্ছে।আহান দ্রুত দৌড়ে গাড়ির কাছে আসলো, কিন্তু দৌড়ে আসতে আসতে আরেকটা গুলি এসে আহানের পেটের এক সাইডে লাগলো।গুলিটা লাগার সাথে সাথে ও মুখ থুবরে ওর গাড়িটার দরজার সাইডে এসে পড়লো।ব্যাথ্যার ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হতে লাগলো।তখনই হঠাৎ আহানের চোখ গেলো মেঘের উপর।মেঘ জোড়ে জোড়ে গাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।আহান যাওয়ার আগে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চাবিটা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো।
মেঘকে দেখে আহানের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়তে লাগলো,যাই হয়ে যাক ওকে মেঘকে বাচাতে হবে।ও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে গায়ে পড়ে থাকা কালো জ্যাকেটের চেইন টা গলা অবদি লাগিয়ে দিলো।যাতে মেঘ পেটে লাগা গুলিটা দেখতে না পারে।তারপর নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে গাড়ির মধ্যে ঢুকে গাড়ি ষ্টার্ড দিলো।
আহানের এমন অবস্থা দেখে মেঘ হাউমাউ করে দিলো। ওর গায়ে জড়ানো থাকা ওড়নাটা দিয়ে দ্রুত আহানের হাত বেধে দিলো।আহানের এতো কষ্ট হওয়া শর্তেও মেঘকে ওর জন্য এভাবে কাদতে দেখে ওর ঠোটের কোনে এক চিলতে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।
আহান চেয়েছিলো ওদের সাথে কোনো ঝামেলা না করে দ্রুত ড্রাইব করে মেঘকে নিয়ে কোথাও একটা সেইভ জায়গায় চলে যাবে।কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না।ওরা কিছু দূর আসতেই এক এক করে আরো তিনটা গাড়ি ওদের সাথে এসে যোগ হলো। টোটাল সাতটা গাড়ি বারবার এদিক সেদিকের রাস্তা থেকে ঢুকে আহানের গাড়ির সামনে এসে ওদের থামানোর চেষ্টা করছে।আহান ভালো করেই বুঝতে পারছে এরা বেশ আটঘাট নেমেই এসেছে তাই ও আর কোনো উপায় না পেয়ে আহির, মিহির,হিয়ান, অভি কে ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছে।
________________
বতর্মান
মেঘ দেখলো আহান ওকে জড়িয়ে ধরে রাখায় আহানের ড্রাইভিং করতে কষ্ট হচ্ছে তাই ও আহানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে নিজের সিটের সাথে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।বসার কিছুক্ষনের মধ্যেই দুই সাইডের দুই রোড থেকে দুইটা গাড়ি এসে আহানের গাড়িকে ধাক্কা মারলো সাথে সাথে গাড়ির জানালায় থাকা কাচ গুলো ঝরঝর করে ভেঙে আহানের আর মেঘের সাড়া শরীরে গেথে গেলো।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে মেঘ পড়ি বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।
মেঘের সারা শরীরে সুচের মতো করে কাচ গেথে আছে।আহান আবার দ্রুত মেঘকে টেনে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো,কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না। ওদের গাড়ির ভাঙা জানালা দিয়ে ওই লোকেরা বার বার গুলি ছুড়তে লাগলো।আহান কোনো উপায় না পেয়ে মেঘের মাথাটা বুক থেকে সড়িয়ে নিচে হাটুর উপর নামিয়ে রেখে গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু তাতে আর কোনো লাভ হলো না, ওদের ছোড়া আরেকটা বুলেট এসে সোজা আহানের বুকে লাগলো।ধীরে ধীরে আহানের গাড়ি ব্যালেন্সলেস হয়ে গেলো।ও নিজেও আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়লো।
মেঘ ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।ওর ভয়ে আবার প্যানিক অ্যাট্যাক হয়েছে।যেমনটা চার বছর আগে হয়েছিলো মিহিরকে চোখের সামনে গুলি খেতে দেখে।ও টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে।আহানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।নিজেকে আজকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর।ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে এভাবে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ওর দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।যার গায়ে এই চার বছরে একটা আচর অবদি লাগতে দেয়নি তার শরীর থেকে আজকে রক্ত ঝরছে।আহান অনেক কষ্টে মেঘের মাথাটা উপরে উঠিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো
“আই অ্যাম সরি মেঘ পড়ি।আমি তোমাকে সেইভ করতে পারিনি।দেখো তোমার গায়ে কতোটা আঘাত লেগেছে কিন্তু আমার শুধু দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।”
মেঘ আহানকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাইছে কিন্তু পারছে না।ওর শরীর অবষ হয়ে আছে। যেমনটা একজন প্যারেলাইসড রোগির হয় তেমনটা।ও সব শুনতে পারছে বুঝতে পারছে কিন্তু হাত পা নাড়াতে পারছে না।ও জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে হয়তো আর একটু পরই ওর শ্বাস টা বন্ধ হয়ে যাবে। আহান মেঘের কপালে একটা চুমু খেয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“আই লাভ ইউ!আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।এই তিন শব্দের কথাটা বলার জন্য আমি এতোগুলো বছর অপেক্ষা করেছি।চেয়েছি দুনিয়ার সবচেয়ে স্পেশাল ভাবে তোমাকে প্রপোজ করতে কিন্তু তা বোধহায় আর হলো না।আল্লাহ বোধহয় তোমাকে আমার নসীবে লেখেননি।তুমি খুব ভালো থেকো মেঘ পড়ি।আমি নাহয় দূর থেকে তোমার হাসি মুখটা দেখে খুশী থাকবো।সবাই তো আর নিজের ভালোবাসা পায় না।আমার ভালোবাসা টাও নাহয় অপূর্ন থেকে যাক।দোয়া করি তোমার স্মৃতি থেকে আহান নামক ব্যাক্তিটির সব চিহ্ন মুছে যাক।তুমি ভুলে যাও তোমার জিবনে আহান নামের কারো অস্তিত্ব ছিলো।তুমি সব সময় ভালো থেকো।”
বলেই আহান মেঘের গালে কপালে মাথায় অনবরতো চুমু দিতে লাগলো।মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আহানকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায় ও আজ অক্ষম হয়ে গেছে।চাইলেও এই মানুষটা কে ও আজ ছুতে পারবে না।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা ম্লানো হাসি দিয়ে বললো
“আমি আমার জিবন দিয়ে হলেও তোমাকে বাচানোর একটা শেষ চেষ্টা করবো।”
বলেই আহান ওর গাড়িটা রাস্তার এক সাইডে নিয়ে এসে মেঘের পাশের দরজা খুলে মেঘের মাথায় একটা চুমু খেয়ে বললো
“লাভ ইউ জান,সব সময় ভালো থেকো।”
বলেই মেঘকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিলো সাথে আহান নিজের ফোনটাও মেঘের পাশে ছুড়ে মারলো।যাতে মিহিররা ওর লোকেশন ট্রেস করতে পারে।মেঘ গিয়ে রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা পাতার মধ্যে পড়লো আর ওর শরীর পাতা দিয়ে ঢেকে গেলো।আহান চোখের পানিটা মুছে গাড়িরা স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো সাথে সাথে তিন দিক থেকে তিনটা গাড়ি এসে আহানের গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার অপর পাশের খাদে ফেলে দিলো।গাড়িটা পড়ার সাথে সাথে ঠাস করে একটা ব্লাষ্ট হলো। মেঘ নিভু নিভু চোখে দেখলো খাদ থেকে সেই আগুনের ঝলকানি উপরে উঠে চারপাশটা আলোকিত হয়ে গেছে।ও আর চোখ খোলা রাখতে পারলো না,আস্তে করে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।
চলবে,,,,,,