ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৩৫

0
810

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_35

কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।আহীর এটাই ভেবে পাচ্ছে না,রুম তো ভিতর থেকেই বন্ধ ছিলো তাহলে সাড়িকা গেলো কোথায়?আর কিভাবেই বা গেলো?হঠাৎ আহীরের চোখ গেলো ব‍্যালকনির দরজার দিকে।দরজাটা হালকা করে খুলে রাখা।অন‍্যদিন রাতে ঘুমানোর সময় সাড়িকা সাঈফা সবসময় ব‍্যালকনির দরজা লক করে ঘুমায়।এখন খোলা দেখে আহীরের আর বুঝতে বাকি রইলো না সাড়িকা ওখানেই আছে।ও ধীর পায়ে ব‍্যালকনির কাছে গিয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে, ফোনের টর্চ টা সামনের দিকে নিক্ষেপ করলো।টর্চের মৃদু আলোতে আহির স্পষ্ট দেখতে পেলো সাড়িকা ব‍্যালকনির এক কোনায় ফ্লোরে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে।ও সাড়িকা কে এখানে দেখে একটা সস্তির নিশ্বাষ ফেললো,,কিন্তু পরক্ষনেই সাড়িকার দিকে ভালো করে তাকাতেই ওর হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ও হতবম্ভ হয়ে কিছুক্ষন ওখানে স্থিরভাবে ঠায় দাড়িয়ে রইলো।তারপর কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে ফ্লোর থেকে ফোনটা হাতে উঠিয়ে, তড়িঘড়ি করে সাড়িকার কাছে এগিয়ে গেলো।তারপর হাতে থাকা টর্চ টা ভালো করে সাড়িকার গায়ে ধরতেই আহিরের কলিজায় মোচর দিয়ে উঠলো।ও ধপ করে হাটু ভেঙে ষাড়িকার সামনে বসে পড়লো।

সাড়িকার সাড়া শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রয়েছে।কোনো কোনো জায়গা থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।আবার কোনো কোনো জায়গায় রক্ত শুকিয়েও গেছে।শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাচের ছোট ছোট টুকরো গেথে রয়েছে।পায়ের নিচটা একদম কেটে চিড়ে গেছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কাধে,মুখে,পিঠে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।চোখের কাজল,ঠোটের লিভষ্টিক,আই স‍্যাডো সব কিছু লেপ্টে আছে।হাতের কাচের চুড়ি গুলো ভেঙে হাতের মধ‍্যে গেথে আছে।ফাংশনে যে শাড়িটা পড়ে ছিলো এখনো সেই শাড়িটাই পড়ে আছে।আহীরের আর বুঝতে বাকি রইলো না,সাড়িকা বাসায় এসেই ভাংচুর করে সেই কাচের উপরে শুয়ে ছিলো তাই সারা শরীরের এই অবস্থা।

ও একটা হতাশ নিশ্বাস ফেলে সাড়িকা কে পাজ-কোলে তুলে নিলো।তারপর রুমে এসে আস্তে করে ওকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো।এরপর দ্রুত ফোনের লাইট টা ফ্লোরের দিকে নিক্ষেপ করে ফাষ্ট-এইড বক্স খুজতে লাগলো।অনেকক্ষন সব উল্টেপাল্টে খোজার পর, অবশেষে বক্সটা খুজে পেলো।আহির বক্সটা নিয়ে দ্রুত সাড়িকার কাছে এসে, ওর পাশে বসে আস্তে আস্তে করে সাড়িকার শরীর থেকে একটা একটা কাচ তুলতে লাগলো।
_____________________

মিহির খুব সাবধানে ছাহীরের রুমের সামনে এসে,আস্তে করে রুমের মধ‍্যে ঢুকে, দরজাটা হালকা চাপিয়ে দিলো।দরজা চাপিয়ে পিছনে ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো সোফার উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত সাঈফার উপর।ওর পড়নে একটা লেডিস টিশার্ট আর থ্রি কয়ার্টার প‍্যান্ট।একে তো সাঈফা একদম শুকনো, তার উপরে থ্রি কয়ার্টার প‍্যান্ট পড়ে এইভাবে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকার জন‍্য,ওকে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।সাঈফা কে এভাবে বাচ্চাদের মতো শুয়ে থাকতে দেখে মিহির মৃদু হাসলো।তারপর কিছু ক্ষন এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত সাঈফার দিকে তাকিয়ে থেকে এক-পা,দু-পা করে ধীর পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

‘ও’ সোফার একদম কাছাকাছি এসে থেমে গিয়ে, হাটু ভেঙে সাড়িকার একদম মুখোমুখি বসলো।তারপর সাঈফার দিকে এক ধ‍্যানে তাকিয়ে ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো আর সাড়িকার আগের করা কান্ড গুলোর কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

আগে কতোটা হাসি,খুশী, দূরন্ত স্বভাবের ছিলো এই মেয়েটা।মনে যা আসতো গরগর করে বলে দিতো।ওর দুরন্তপনার মধ‍্যেও অদ্ভুত এক সরলতা খুজে পাওয়া যেতো ।’কতো বার এসে মিহিরকে আই লাভ ইউ,আই মিস ইউ বলেছে।কোনো কারন ছাড়াই একগাদা করে গিফট,ফুল ওকে দিয়েছে।সারাদিন ফোন আর মেসেজ করে বিরক্ত করেছে।আর এখন সেই হাসি খুশী মেয়েটা হঠাৎ করেই একদম শান্ত শিষ্ট হয়ে গেছে।এখন ভুলেও একবারও মিহিরের দিকে ঘুড়েও তাকায় না।

সাঈফার আগের সেই পাগলামি গুলোতে মিহির বিরক্ত হলেও এখন সেই পাগলামি গুলো খুব মিস করে।কেনো মিস করে সেটা নিজেও জানে না।শুধু জানে সাঈফা ওকে ইগনোর করলে ও একদম মেনে নিতে পারে না।ওর দম বন্ধ হয়ে আসে।

ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সাঈফা ঘুমের মধ‍্যেও হিচকি দিচ্ছে।মিহির বুঝতে পারলো হয়তো কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে তাই এখনো হিচকি দিয়ে যাচ্ছে।মিহির ওর একহাত দিয়ে সাঈফার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো ওর কানের পিছনে গুজে দিলো।তারপর কিছু একটা ভেবে একটা বাকা হাসি দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সাঈফার ঠোট উল্টে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে থাকার কয়েকটা পিক তুলে নিলো।এই গুলো দিয়ে পরে ওকে ক্ষ‍্যাপানো যাবে মূলত সেই জন‍্যই মিহির পিক গুলো তুললো।

গভীর ঘুমের মধ‍্যেও সাঈফার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে,,ওর আশে পাশে কেউ আছে।যে ওকে খুব কাছ থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।সাঈফা প্রথমে বিষয়টা পাএা না দিলেও ধীরে ধীরে ব‍্যাক্তিটির নিশ্বাস ওর চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই, ‘ও’ ভয় পেয়ে ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।

মিহির অন‍্যমনষ্ক হয়ে সাঈফার পাশে হাটু ভেঙে বসা অবস্থাই ফোনে সদ‍্য তোলা পিক গুলো দেখছিলো।তার মধ‍্যেই সাঈফা এভাবে যে হঠাৎ করেই উঠে যাবে সেটা ও ভাবতেই পারেনি।সাঈফা ঘুম থেকে উঠেই অন্ধকারের মধ‍্যে একটা ছেলেকে ওর এতোটা কাছে দেখে ঘাবড়ে গেলো।ও যখনই চিৎকার দেওয়ার জন‍্য উদ‍্যত হলো তখনই মিহির হাতে থাকা ফোনটা সোফার উপরে রেখে দ্রুত এগিয়ে এসে সাঈফার মুখটা ধরে সোফার সাথে চেপে ধরলো।সাঈফা ভয়ে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে,,মুখ থেকে উম উম শব্দ বের করছে।সাঈফাকে এমন ছটফট করতে দেখে মিহির ফিসফিসিয়ে বললো

“হেই ডোন্ট শাউট!ইটস মি..মিহির!”

মিহির! নামটা কানে আসতেই সাঈফা স্থির হয়ে গেলো।ও ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে মিহিরের চেহারার দিকে তাকালো।হ‍্যা এটা সত‍্যিই মিহির,,আবছা আলোর মধ‍্যেও সাঈফার ওকে চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না।ও অবাক হয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আচ্ছা ও কি আবারো স্বপ্ন দেখছে নাকি সত‍্যিই মিহির এসেছে?কিন্তু মিহির এতো রাতে ওর কাছে কেনো আসবে?এসব ভাবতে ভাবতেই মিহির সাঈফার মুখ থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে ওর থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।মুখ থেকে হাত সরাতেই সাঈফা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।মিহির ওর মুখ এতোটাই জোড়ে চেপে ধরেছিলো যে ওর এতোক্ষন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।সাঈফা জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে রাগি কন্ঠে বললো

“এটা কোন ধরনের অসভ‍্যতা?আপনি এতো রাতে আমার রুমে কি করছেন?”

সাঈফার মুখ থেকে আপনি ডাক শুনে মিহির ভ্রু কুচকে সাঈফার দিকে তাকালো।মনে মনে বললো,যে মেয়ে এতোদিন দেখা হলেই বাবু,সোনা,জানু ছাড়া কখনো কথাই বলতো না,সে কিনা এখন সোজা আপনি বলে ডাকছে।বাই চান্স এখন আবার না ভাইয়া ডেকে বসে।মিহিরের ভাবতে দেরি হলো কিন্তু সাঈফার বলতে দেরি হলো না।

সাঈফা আবারও একই ভঙ্গিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো

“কি হলো ভাইয়া চুপ করে আছেন কেনো?এতো রাতে আপনি আমার রুমে কি করছেন?”

সাঈফার মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনে মিহিরের ভীষন রাগ লাগছে সাথে কান্নাও পাচ্ছে।ওর ইচ্ছে করছে ফ্লোরে বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ওয়া ওয়া করে কান্না করতে।সাঈফার মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

মিহিরকে এভাবে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে সাঈফা বিরক্তির স্বরে বললো

“কি হলো এই ভাবে হাবলার মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো?আমার প্রশ্নের উওর দিন?আপনি আমার রুমে কেনো এসেছেন?”

মিহির দাতে দাত চেপে বললো

“সুইসাইড করতে আসছি।আসলে আমার বাড়িতে ফ‍্যান নেই তো,তাই তোদের বাড়িতে এসেছি ফ‍্যানের সাথে গলায় দড়ি দিবো বলে।আর এটা তোর রুম না,ছাহীরের রুম বুঝেছিস?”

সাঈফা ভেংচি কেটে বললো

“হুহ আমাদের এতো ঠ‍্যাক‍্যা পড়েনি যে আপনার মতো হাতিকে আমাদের বাড়ির ফ‍্যানের সাথে ঝুলিয়ে, ফ‍্যানের আয়ু কমিয়ে ফেলবো।আপনি গিয়ে কটু গাছের সাথে ঝুলে পড়েন,ওই টাই আপনার মতো কচু পাতার জন‍্য পারফেক্ট।আর এটা ছাহীরের রুম তো কি হয়েছে ও আমার ভাই হয় তাই ওর রুম মানেই আমার রুম।”

মিহির রাগি স্বরে বললো

“ওই তোর সাহস তো কম না?তুই আমাকে হাতি বললি আবার কচু পাতাও বললি?আর ছাহীর যদি তোর ভাই হয় তাহলে ও আমারও ভাই আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই রুমে আসার।”

“কচু পাতাকে কচু পাতা বলবো না তো কি বাশ পাতা বলবো?আর এসব বলার জন‍্য সাহসের কোনো প্রয়োজন নেই,কথা বলতে জানতে হয় আর সেটা আমি ভালো করেই জানি।ওয়েট কি বললেন ছাহীর আপনারও ভাই হয় তাইতো?ঠিক আছে আপনি থাকুন আপনার ভাইয়ের রুমে আমি গেলাম বাইরে।”

বলেই সাঈফা দরজার দিকে পা বাড়াতে নিলেই মিহির সাঈফার হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।তারপর দাতে দাত চেপে বললো

“ইদানিং একটু বেশিই সাহস বেড়ে গেছে তোর।আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করছিস?আমার সাথে কেউ অতিরিক্ত সাহষ দেখাতে আসলে তার পরিনতি কি হয় জানিস?”

সাঈফা তাছ‍িল‍্য হেসে বললো

“কি করবেন মেরে ফেলবেন?ফেলুন,নো প্রভলেম!এমনিতেই তো মরে গেছি শুধু শরীরটা বেচে আছে সেটাকেও মেরে ফেলুন।মরে গেলে অন্তত এই অসহ‍্যকর ভালোবাসা নামক রোগ টা থেকে তো বেচে যাবো।জানেন,,মাঝে মাঝে যখন ভাবি আমার ভালোবাসার মানুষটা একদিন অন‍্য কারো হবে,তাকে আই লাভ ইউ বলবে,তার সাথে বেড শেয়ার করবে,তাকে স্পর্শ করবে, তখন খুব কষ্ট হয়,নিশ্বাস নিতে পাড়ি না।দু-চোখে পাতা এক করতে পাড়ি না,,চোখ বন্ধ করলেই আমার প্রিয় মানুষকে অন‍্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখি।বুকের মধ‍্যে অসহ‍্য যন্ত্রণা হয়।কি করবো কিছু বুঝতে পারি না।নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।কেনো আমার সাথে এরকম হলো বলতে পারেন?কেনো আমি চারটা বছর ধরে একজনকে সবটা দিয়ে ভালোবেসে গেলাম অথচ সে আমার ভালোবাসাটা বুঝলোই না।তাকে বারবার এটাসেটা দিয়ে বুঝাতে থাকলাম আমি তাকে কতোটা ভালোবাসি কিন্তু সে বারবার আমাকে প্রত‍্যাখান করলো,অপমান করলো।কি দোষ করেছিলাম আমি?শুধুমাএ তাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসে গেছি এটাই কি আমার একমাএ দোষ?”

কথাগুলো বলতে বলতে সাঈফা কেদে দিলো।

মিহির অসহায় চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর ভিতরটা ধুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ও তো কখনো সাঈফার খারাপ চায়নি।শুধু চেয়েছে যাতে ওর থেকে দূরে থাকে।ওই বা কি করতো? কাউকে ভালো না বেসেও কি তার সাথে রিলেশনে যাওয়া ঠিক?তাতে তো সেই মানুষটাকে ঠকানো হয়।

সাঈফা ফোপাতে ফোপাতে বললো

“আমি কি এমন অন‍্যায় করেছি,যার জন‍্য আল্লাহ আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলো?আমি তো সবসময় নামাজ পড়ে মোনাজাতে শুধু একটা মানুষকেই আমার জিবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছি।তাহলে আল্লাহ কেনো আমার ভাগ‍্যে তার নাম লিখলো না।আমি এখন বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি,,এখন সবসময় শুধু একটা জিনিসই চাই,সবাইকে ঝামেলা থেকে মুক্ত করে দিয়ে যেনো একটা শান্তির ঘুম দিতে পাড়ি।”

কথাটা বলার সাথে সাথে মিহির সাঈফার বাহু ছেড়ে দিয়ে ওকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারলো।চড়টা খেয়ে সাঈফা ফ্লোরে উপুর হয়ে পড়ে গেলো।এমনিতেই সারা দিন ফাংশনে কাজ করতে গিয়ে ওর উপর দিয়ে এতো ধকল গেছে, তার উপড়ে রাতেও কিছু খাওয়া হয়নি,তারপর সাঈফা ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে তাই ঘুমানোর আগে অনেকক্ষন কেদেছে।সব মিলিয়ে ওর শরীর প্রচন্ড দূর্বল ছিলো তাই থাপ্পড় টা খেয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি।মিহির সাঈফার বাহু দরে টেনে তুলে দাড় করিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“আরেকবার যদি মরার কথা বলেছিস তো তোকে আমি নিজের হাতে খুন করবো বলে দিলাম।”

সাঈফা মিহিরকে ধাক্কা দিলো,,মিহির অচমকা ধাক্কার জন‍্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তাই দুই কদম পিছিয়ে গেলো।সাঈফা ঝাঝালো গলায় বললো

“একদম দরদ দেখাতে আসবেন না।আমি মরে যাই বা বেচে থাকি তাতে আপনার কি?”

মিহির কটমট চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো

“তুই মরে,পচে,গলে গেলেও আমার কিচ্ছু আসে যায় নাহ।আর তোর মতো মেয়ের উপরে দরদ দেখবো আমি?হুহ এই স্বপ্ন জিবনেও দেখিস না!আর,,,,,,,”

মিহির আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঈফা গিয়ে মিহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

“প্লিজ এমন কিছু বলবেন না যাতে আরো কয়েকটা দিন বেচে থাকার ইচ্ছেটাও হাড়িয়ে ফেলি।আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না,,আপনার এই কথা কথা গুলো শুনলে আমার কতোটা কষ্ট হয়।আমি জানি আপনি আমাকে সহ‍্য করতে পারেন না।তাও আমার সামনে এভাবে বলবেন না প্লিজ,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”

মিহির ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।ও ভাবতেও পারেনি সাঈফা ওকে এভাবে এসে জড়িয়ে ধরবে।হঠাৎ করেই ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করতে লাগলো।মনে হচ্ছে এখনি লাফ দিয়ে বাইরে চলে আসবে।কই এর আগে তো কখনো সাঈফার বা কোনো মেয়ের এতোটা কাছে আসাতে এমন অদ্ভুত অনূভুতি হয়নি।হঠাৎ করেই তাহলে আজকে কেনো এমন হচ্ছে।
________________________

ডাইনিং টেবিলে লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মেঘ।ওর বিপরীত পাশের চেয়ারটায় সোজাসুজি বসে আছে আহান।আহানের দৃষ্টি মেঘের দিকে স্থির।আহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।ওর গাল দুটো টমেটো সসের মতো লাল হয়ে গেছে।ওর ঠোটের কোনে লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

তখন একজন সার্ভেন্ট এসে দরজায় নক করায় দুজনই ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে।এতোক্ষন কি করেছে সেটা ভেবেই মেঘ লজ্জায় মাথা নিচু করে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মেঘ অনেকক্ষন শুধু শুধু ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে বসেছিলো।আহানের সমানে আসবে না এইজন‍্য।তারপর আহানের ধমক খেয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।বের হওয়ার পর থেকে লজ্জায় আহানের দিকে একবারও তাকায়নি।

সামান‍্য একটা কিস এর জন‍্যও যে কেউ এতোটা লজ্জা পেতে পারে সেটা মেঘকে না দেখলে আহান জানতেই পারতো না।মেঘকে এতোটা লজ্জা পেতে দেখে আহান মেঘের দিক থেকে চোখ সড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

দুইজন মহিলা সার্ভেন্ট কিচেন থেকে ফুড ট্রলিতে করে খাবার এনে একে একে টেবিলে সাজিয়ে রেখে মেঘ আর আহানকে পরিবেশন করতে লাগলো।আহান মেঘকে নরমাল করার জন‍্য হালকা একটু গলা খাকানি দিয়ে বললো

“মেঘ খাওয়া শুরু করো।”

মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে, চামচ উঠিয়ে এক বাইট মুখের কাছে নিয়েও আবার কিছু একটা ভেবে নামিয়ে রাখলো।তারপর মহিলা সার্ভেন্ট দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো

“আপনার ডিনার করবেন না?”

একজন মহিলা সৌজন‍্যতার হাসি দিয়ে বললো

“জ্বি ম‍্যাম,,আপনারা খেয়ে নিন তারপর আমরা খাবো।”

মেঘ নাক কুচকে মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ বের করে বললো

“উফফ আমাকে একদম ম‍্যাম বলবেন না।আমার সুন্দর একটা নাম আছে মেঘ।আমাকে সবাই ওই নামেই ডাকে।আপনারাও আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন।আর পরে কেনো খাবেন?এতো বড় ডাইনিং টেবিল,,পচিশজন লোক চোখ বন্ধ করে খাওয়ানো যাবে।সেখানে আমরা মাএ দুজন বসে খাচ্ছি।বাকি চেয়ার গুলো খালী পড়ে আছে তাহলে আপনারা কেনো পড়ে খাবেন?”

আহান মেঘের কথা শুনে মুচকি হাসলো ও জানতো মেঘ এমন কিছুই একটা বলবে।মহিলা দুজন অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজের লোকের সাথে কাউকে এতোটা সুন্দর ব‍্যাবহার করতে ওনারা প্রথম বার দেখছে।

মেঘ ওনাদের দিকে তাকিয়ে একটু শাসনের স্বরে বললো

“কি হলো আপনারা এখোনো দাড়িয়ে আছেন কেনো?এক্ষুনি আমাদের সাথে বসে পড়ুন আর কিচেনে যারা আছে তাদেরকেও ডেকে নিয়ে আসুন।”

মহিলা দুজন কি করবে বুঝতে না পেরে আহানের দিকে তাকালো।আহান মুচকি হেসে বললো

“সবাইকে ডেকে নিয়ে আসুন।ম‍্যাডাম যখন একবার আদেশ করেছেন,ম‍্যাড‍্যামের কথা তো আর ফেলতে পাড়ি না।ম‍্যাড‍্যাম যা আদেশ করবে আমাদের তাই করতে হবে।”

আহানের কথা শুনে মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।মহিলা দুজন মৃদু হেসে কিচেনে বাকিদের ডাকতে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ওনারা আর চার পাচ জনকে সাথে করে নিয়ে আসলেন।সবাই একসাথে ডিনার করতে বসে পড়লো।

আহান শুধু মুচকি মুচকি হাসছে আর মেঘের কান্ড দেখছে।মেঘ সবার সাথে ননষ্টপ বকবক করেই যাচ্ছে আর ওনারাও সবাই মেঘের সাথে দারুন ভাবে মিশে গেছে।মেঘকে ওনাদের খুব ভালো লেগেছে।আজকাল এতোটা মিশুকে সভাবের মেয়ে লাখে একটা খুজলেও পাওয়া যায় না।

আর ওনারা সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছেন আহানকে দেখে।কারন আহান সবসময়ই সিরিয়াস আর রাগি মুডে থাকে কিন্তু এখন শুধু ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে আছে।যেটা ওনারা খুব একটা দেখতে পাননি বললেই চলে।আহান মাঝে মাঝে যতোটুকু হাসে সেটা হচ্ছে বাকা হাসি এই রকম অমায়িক মুচকি হাসি হাসতে আহানকে কখনো দেখা যায় না।

খাওয়া দাওয়া শেষে মেঘ আর আহান ছাড়া সবাই উঠে গিয়ে নিজেদের কাজ করতে লাগলো।আহান চেয়ার ঠেলে উঠে দাড়াতেই মেঘ একটু ইতস্তত করে আহানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।”

মেঘের কথায় আহান ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকালো কারন মেঘকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও সিরিয়াস কোনো কথা বলবে।আহান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো

“হুমম বলো।”

মেঘ কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচু স্বরে বললো

“দেখুন আমি এখানে থাকতে চাইনা প্লিজ।আমি বাসায় যেতে চাই। আমি জানি,,এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে আমি যদি সবচেয়ে কারো কাছে নিরাপদ থেকে থাকি সেটা হচ্ছেন আপনি।সেটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।বাট আমরা যেই সমাজে থাকি।সেখানে থাকতে গেলে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।এখানে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের বিয়ের আগে এভাবে এক বাড়িতে থাকাটা সবাই খারাপ ভাবে নিবে।সবাই আমার ক‍্যারেক্টার নিয়ে কথা বলবে, আমাকে বাজে মেয়ে বলবে,এইগুলো আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।একবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছি,অন‍্যায় না করেও শাস্তি পেয়েছি।এইবার আর কারো কটু কথা সহ‍্য করতে পারবো না।আশা করি আপনি আমার সিচুয়েশন টা বুঝবেন।আপনি না চাইলে আমি এখান থেকে জিবনেও বেরোতে পারবো না।হাত জোড় করছি আমার উপর একটু দয়া করুন।”

আহান একটু মলিন হেসে বললো

“এভাবে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো।একটু ওয়েট করো আমি গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি।”

বলেই আহান আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাড়িয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।মেঘের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।ও জানে আহান অনেক হার্ট হয়েছে।কিন্তু মেঘেরও কিচ্ছু করার নেই।যাই হয়ে যাক ও আহানের সাথে এখানে থাকতে পারবে না।

চলবে,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ নেক্সট পর্বে আপনাদের জন‍্য বড়সড় একটা শকড অপেক্ষা করছে।একজনকে গুড বাই করার ব‍্যাবস্থা করেছি😴😴পারলে সবাই গেস করুন কাকে উপরে পাঠানোর টিকিট কাটছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here