#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ27
আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বললো
“হোয়াট!”
আহান এতো জোড়ে কথা বলায় মেঘ ভয় পেয়ে গেলো। ও কাচুমাচু করে নিজের মাথাটা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। আহান কিছুক্ষন মেঘের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাহাহা করে হেসে দিলো। আহানকে এভাবে হাসতে দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকালো । ও বুঝতে পারছে না হঠাৎ এমন হাসার কি আছে। আহান মেঘের কাছে গিয়ে আবারও দেয়ালের দুইপাশে হাত রেখে একটা ঝুকে বললো
“তুমি আমাকে সবার সামনে ক্যারেক্টারলেস প্রমান করতে চেয়েছিলে? তাও আবার তোমার পায়ে শ্লাইড করেছি সেটা ভেবে? আবার ভিডিও করেছো? তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলো না? ভেবে ছিলাম বড় হয়ে গেছ,, কিন্তু না এখনো সেই পিচ্চিই আছো!”
মেঘ বোকার মতো চাহনি দিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান মেঘের নাক টিপে দিয়ে বললো
“ওরে পিচ্চি সেদিন রির্সোটে তুমি আমাকে কি বলেছিলে মনে আছে? যখন তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না,, তাও আমাকে এতো বিশ্বাস করো, তাহলে ভাবো যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমাকে কতোটা বিশ্বাস করে। আর তুমি আমাকে ক্যারেক্টারলেস প্রমান করার জন্য যে ভিডিওই দেখাও না কেনো কেউ বিশ্বাস করবে না ।উল্টৈ সবাই ভাববে,, ওইগুলো তুমি এডিট করে এনেছো। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি আমার সাথে নিচে চলো,, ওখানে গিয়ে সবাইকে তোমার যা খুশি আমার নামে বলতে পারো। আর আমিও তুমি যা বলবে তাই স্বীকার করে নিবো ।তাও দেখবে তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।”
মেঘ গাল ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো ।কারন মেঘ নিজেও জানে যে আহানের ব্যাপ্যারে বাসার কেউ কোনো উল্টাপাল্টা কিছু বিশ্বাস করবে না।সবাই আহান কে চোখ বন্ধ করে ভরষা করে। আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে ওর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো
“আরেকটা কথা কি জানো মেঘ পড়ি? তুমি কষ্ট পাও বা সবার সামনে লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পড় এমন কাজ আমি কখনো করবো না। তোমাকে কক্ষনো কারো সামনে ছোট হতে দেবো না। এতোদিন যেভাবে দূরে থেকেও তোমাকে আগলে রেখেছি এখনও ঠিক সেভাবেই আগলে রাখবো। তোমার গায়ে কেউ একটা আচোড়ও দিতে পারবে না।”
বলেই আহান মেঘের ঘাড়ে মুখ খুজলো। তারপর শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে নিলো।মেঘ চোখ বন্ধ করে জামার দুই কোনা খামচে ধরে মুঠোবন্ধি করে আছে। ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে,, নিশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে। আহান বারবার আলতো করে মেঘের ঘাড়ে ,,গলায়,, কানের লতিতে ঠোট ছোয়াচ্ছে। আহানের ঠোট যতোবার মেঘের শরিরকে স্পর্শ করছে মেঘ ততোবারই কেপে কেপে উঠছে। লজ্জা,, ভয় ,,ভালো লাগার সংমিশ্রন একটা অনূভুতি কাজ করছে ওর মনে। ও জানে না,,এই অনূভুতিকে কি নাম দিবে? আর জানতেও চায় না। শুধু জানে আজ কাল এই লোকটাকে বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এই পৃথিবীতে যদি কারো কাছে মেঘ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকে তাহলে সে হচ্ছে আহান। কেনো এরকম মনে হয়? কেনো এই লোকটার প্রতি এমন অদ্ভুত অনূভুতি কাজ করে? কিচ্ছু জানে না । তবে মেঘ এই অনুভূতি গুলোকে মনের মাঝে প্রশয় দিতে চায় না। এই পৃথিবীর মানুষ গুলো যে বড্ড সার্থপর। এরা মুখে সবসময় বিশ্বাস আর ভালোবাসার কথা বললেও সময় আসলে ঠিক ইউজ করা টিস্যুর মতো ছুড়ে ফেলে দেয়। যেমনটা জেড়িন করেছিলো। নিজের সার্থের জন্য একমাএ বেষ্ট ফ্রেন্ড, বোনকে সবার সামনে ক্যারেক্টারলেস বানিতেও দ্বিতীয় বার ভাবেনি ।চার বছর আগের মতো আরেক বার কাউকে বিশ্বাস করে ঠকতে চায় না ও। একবার যে যন্ত্রণা সহ্য করেছে আরেকবার সেই যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা ওর মধ্যে অবসিষ্ট নেই ।নিজের লোক গুলো যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন যে খুব কষ্ট হয়। ইচ্ছে হয় নিজের শরীরটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর হাতিয়ারটা দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে নিজেকে একটা কঠিন শাস্তি দিতে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আহান ওর বুকে ভেজা কিছু অনুভব করতেই মুখ তুলে মেঘের দিকে তাকালো। তাকিয়েই দেখলো মেঘের চোখ থেকে অর্নরগল পানি পড়ছে । ও চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আহান দ্রুত মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। তারপর হন্তদন্ত হয়ে বললো
“সরি! সরি! সরি! আ’ম সো সরি মেঘ পরি! আমি বুঝতে পারিনি ,আমি তোমাকে টাচ করায় তুমি এতোটা কষ্ট পাবে। প্লিজ কেদো না। আর এমনটা হবে না। আমি আর কখনো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে টাচ করবো না। দরকার হলে আমি তোমার আশে পাশেই কখনো আসবো না । তাও তুমি এভাবে কেদো না প্লিজ। কান্না বন্ধ করো আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাচ্ছি । মেঘ আমি তোমার থেকে সাড়া জিবন দূরে থাকতে রাজি আছি কিন্তু আমি কাছে আসায় তোমার চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানিও ঝড়ে তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না। দরকার হলে তোমার খুশির জন্য সারা জিবনের মতো তোমায় ছেড়ে দূরে চলে যাবো।”
বলেই আহান মেঘকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে দ্রুত বেগে চলে গেলো। একবারের জন্যও পিছনে ফিরলো না। ফিরলে হয়তো ওর চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মেঘ দেখে নিতো।
মেঘ বোকার মতো আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি ভেবে কাদছিলো আর আহান কি বুঝে চলে গেলো।
_________________________
সন্ধ্যার পর সবাই মেঘদের বাসার ছাদের চেয়ার টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। এখানে আহান, অভি, হিয়ান, আহির, মিহির, সাড়িকা,সাঈফা, আলিশা সবাই আছে। আজকে সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে ওরা সবাই এই বাড়িতেই থাকবে। বিকালে হিয়ান গিয়ে আলিশাকেও এখানে নিয়ে এসেছে । আহাদ খানও অফিস থেকে সোজা রাতে এখানেই ফিরবেন। মেঘ আর দিশা উপরে ছাদে নেই । ওরা দুজন নিচে মোনা খান আর মিরা রহমানকে স্নাক্স বানাতে হেল্প করছে। আহান এক পাশে মন খারাপ করে বসে ফোন টিপছে। ওর চেহারায় প্রতিদিনের মতো হাসি খুশি উচ্ছ্বাস ভাবটা নেই। ও দুপুরে তখনই এই বাসা থেকে চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মিরা রহমান অনেক বকাঝকা করে জোড় করে ওকে এখানে রেখে দিয়েছেন। আহির আর মিহির দুইজনের হাতে দুইটা গিটার ।ওরা মাঝে মাঝে গিটার দিয়ে টুং টাং শব্দ করছে আর এক কলি, দুই কলি, গান গাইছে। আহির গিটার নিয়ে নাড়তে চাড়তে হঠাৎ চোখ গেলো আহানের দিকে। দেখলো আজকে আহানকে কেমন বিষন্ন লাগছে। আহির একটু মজার ছলে বললো
“ব্রো কি খবর? এমন দেবদাসের মতো বসে আছো কেনো? কোন পারু তোমায় ছ্যাক্যা দিয়ে গেলো।”
আহান কপাল কুচকে বিরক্তি ভঙ্গিতে আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“ফালতু কথা না বকে যা করছিলিস তাই কর ।”
আহির মুখটা একটু সিরিয়াস করার ভান করে বললো
“ওকে! গাইস আমি কি যেনো করছিলাম? হ্যা গান গাইছিলাম। তো আমি এখন একটা গান গাইবো। গানটি লিখেছে আহির। সুর করেছে আহির । আর গাইবেও আহির। কিন্তু গানটা ডেডিকেটেড করবো আমার দেবদাস ব্রো কে। তাহলে শুধু করা যাক,,,,,,”
ওওওও আহান ভাইয়ায়ায়ায়ায়া,,, তোমাকে ছ্যাক্যা দিলো একটা অর্নাস থার্ড ইয়ারের মাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া,,,,
আহির গানটা এতোটাই বেশুরো গলায় গাইলো যে সাড়িকার হাত থেকে ওর ফোনটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। আহান একটা ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ! কি ছাগলের মতো ব্যা ব্যা করছিস । আর এটা গান? মনে হচ্ছে মাথার উপর 1844 সালের ফ্যান ঘুড়ছে ।”
আহির একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
“ওহ পছন্দ হইনি তাহলে আরেকটা শোনাচ্ছি,, ওয়েট।”
বলেই আহির আবারো বেশুরো গলায় গাইলো
“ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া রেএএএ,,,
তুমি গেলা দেবদাস হইয়া রেএএএ,,,,
দেবদাস হইয়া তুমি তুমি আছো ছ্যাক্যা খোরদের মতো বইয়া রেএএএএএএএ,,,,”
আহিরের এমন ক্যাবলা কান্ত মার্কা গান শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো। আহান বসা থেকে দাড়িয়ে একটা চেয়ার উপরে লাওি দিয়ে ফেলে দিলো।
“ধ্যাত তোদের এসব ফালতু কথা শোনার জন্য আমার হাতে টাইম নাই । আমি আসছি।”
বলেই আহান যেতে নিলেই অভি আহানের হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো
“আরে ধুর বসতো । ও তোর সাথে যাষ্ট একটু মজা করেছে।”
“তোরা জানিস না?আমার এই ধরনের মজা একদম পছন্দ নয়।”
বলেই আহান অভির হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলো । কিন্তু অভি ওকে টেনেটুনে জোড় করে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আহির এবার সিরিয়াস মুখ করে বললো
“সরি ব্রো। আর এমন হবে না। তুমি বসো প্লিজ”
আহিরের কথা শুনে আহান কিছু না বলে আবার গম্ভির মুখে বসে ফোন টিপতে লাগলো। অভি কথা ঘোড়াতে আলিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই পেত্নি তুই এখানে বসে আছিস কেনো ? যা নিচে যাহ। এটা না তোর আরেকটা শশুর বাড়ি? এখানে এসে তুই কাজ না করে আড্ডা মারছিস? তোর মতো ছেলের বউকে তো চুল ধরে দেওয়া উচিৎ । বাড়ির মেয়েরা কাজ করছেন আর উনি এসে এখানে বসে গপ্প গিলছেন।”
আলিশা একটু ইতস্তত করে বললো
“আসলে ভাইয়া আমি কিচেনে আন্টিদের হেল্প করতে গিয়েছিলাম । কিন্তু আন্টিরা আমাকে ধমক দিয়ে এখানে পিঠিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন আমি নাকি ওনাদের বাড়ির বউ না মেয়ে হই । তাই ওনারা যতোদিন বেচে আছে ততোদিন আমাকে কোনো কাজ করতে দিবেন না।”
অভি মুখ বাকিয়ে বললো
“আন্টিরা বললো আর তুই চলে আসলি? নেহাত ওনারা ভালো শাশুরি তাই তোকে কিছু বলে না। অন্যকেউ হলে না,,,, তোকে দিয়ে ঘর ঝাট দেওয়ানো থেকে শুরু করে বাসন মাজা পযর্ন্ত সব করাতো। আর তোর মতো কাম চোর বউদের জন্য তো সিরিয়ালের জল্লাদ শাশুরিদের লাগবে। যারা উঠতে বসতে বাড়ির বউদের চুল ধরে পেটায়। ”
অভির কথায় আলিশার চেহারাটা মন খারাপের অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেলো। অভি ধমক দিয়ে বললো
“কিরে এখনো এখানে বসে আছিস কেনো? যাহ এখান থেকে।”
আলিশা চেয়ার থেকে উঠে যেতে যাবে তার আগেই ছাদের দরজা দিয়ে দিশা ঢূকতে ঢুকতে বললো
“কাউকে কোথাও যেতে হবে না।”
দিশা এসে হাতে থাকা স্নাক্সের ট্রে টা টেবিলের উপরে রাখলো। ওর পিছনে পিছনে মেঘও আসলো। মেঘের হাতেও একটা নাস্তা ভর্তি ট্রে। ওর সাথে দুইজন সর্ভেন্ট মহিলা ওনারা এসে হাতে থাকা ট্রে গুলো একে একে টেবিলের উপরে রেখে নিচে চলে গেলেন।মেঘও ওর হাতের ট্রে টা টেবিলে রেখে সবাইকে খাবার সার্ভ করতে লাগলো। দিশা অভির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ব্যাঙ্গ করে বললো
“মিঃ অভি,, বাড়ির বউ হলেই যে তাকে বাড়ির সব কাজ করতে হবে এই কথা আপনাকে কে বলেছে। আপনার কথা বার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে আপনি সিরিয়ালের সাশুরিদের চেয়েও ভয়ংকর । আপনাকে যদি মেকআপ আর সাড়ি চুড়ি পড়িয়ে জল্লাদ শাশুরির এ্যাক্টিন করানো হয় তাহলে তো আপনি অস্কার পাবেন।”
দিশার কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো। অভি রাগি কন্ঠে বললো
“ইউ মিস বিষা তোমাকে তো আমি——-”
অভি কথার মাঝেই দিশা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“ইমহুহ বিষা না ওটা দিশা হবে। পরেরবার থেকে যদি আমাকে বিষা ডেকেছেন তো আপনার গায়ে আমি সত্যি সত্যি বিষা ছেড়ে দিবো।”
দিশার কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল পড়ে গেলো। হিয়ান মিহিরের হাত থেকে গিটার টা নিয়ে দিশার হাতে দিয়ে বললো
“দিশা তুমি নাকি খুব ভালো গান গাও। নাও একটা গান গেয়ে শোনাও।”
অভি মুখ বাকিয়ে বললো
“হুহ ও আবার গান জানে নাকি? ”
দিশা অভিকে একটা ধমক দিয়ে বললো
“ইউ ভাংগা টেপ রেকর্ডআর নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন। দিশা কি জানে আর কি জানৈ না,,,সেই বিষয়ে আপনার বিন্দুমাত্রও ধারনা নেই।”
হিয়ান বিরক্তি হয়ে অভিকে উদ্দেশ্য করে বলল
“এই তুই থামবি নাকি তোকে পুলের মধ্যে নামিয়ে দুইটা চুবান দিবো।”
“ওকে আর কিছু বললাম না।”
বলেই অভি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। হিয়ান দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা শুরু করো ।”
দিশা গিটার টা হাতে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো
ভাইয়া আমি নাহয় অন্য কোনো একদিন শোনাবো।আজ মেঘ গান গেয়ে আপনাদের শোনাবে। দিশার কথায় সবাই অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো।আহানও ফোন থেকে চোখ তুলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো। সবাই শুধু ইচ্ছুক দৃষ্টিতে মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। যেই মেয়েকে এই চার বছরে কখনো গুনগুন করতেই শোনা যায়নি সে নাকি আজকে গান গাইবে। এটাও কি কখনো সম্ভব? মেঘ অবাক কন্ঠে বললো
“আমি গান গাইবো মানে কি?”
দিশা বললো
“মানে তুই এখন আমাদের গান গেয়ে শোনাবি।”
“পাগল হয়েছিস নাকি ? আমি গান গাইতে পাড়ি না।”
“মেঘ তুই না কখনো মিথ্যা কথা বলিস না?তাহলে কেনো বলছিস তুই গান পাড়িস না?”
মেঘ বিরক্ত কন্ঠে বললো
“আরেহ ধুর কবে না কবে গান গেয়েছি,,ওই গান এখনো মনে আছে নাকি? আর এতো বছর কোনো রেওয়াজ করিনি এখনতো মনে হয় সুর তাল সব গুলে খেয়ে ফেলেছি। ”
দিশা মেঘের দিকে তাকিয়ে ম্লানো হেসে বললো
“মানুষ নিজের কাজকে ভুলে যেতে পারে কিন্তু প্যাশন কখনো ভুলে না। গান গাওয়া তোর প্যাশন ছিলো তুই ওটা শখের জন্য গাইতি। তাই তুই জিবনেও সুর তাল গুলিয়ে ফেলবি না । একবার চেষ্টা কর দেখবি ঠিক গাইতে পারবি।”
“না ইয়ার আমার দ্বারা গানটা আর হবে না।”
বলেই মেঘ হাতে থাকা গিটারটা ফ্লোরে রেখে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো।
আহান বসা থেকে দাড়িয়ে তাছ্যিল্য ভরা কন্ঠে বললো
“ছাড়ো দিশা ওকে বলে লাভ নেই । ওর দ্বারা গানটা হবে না। ও এতোটাই দূর্বল ছিলো যে,, জেরিনের মতো সামান্য একটা মেয়ে ওকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়ে গেছে ।যেটা আমরা সবাই মিলে এতো ভালোবাসা দিয়ে চার বছর ধরেও জুড়তে পাড়িনি। ও কক্ষনো ওর অতীত থেকে বের হতে পারবে না । ওর সেই ইচ্ছা শক্তি টূকুই নেই । আমরা হাজার চেষ্ট করলেও ও ওর অতীত আকরে ধরেই বাচবে। তাই ওকে গান গাওয়ার জন্য ফোর্স করার কোনৌ দরকার নেই।”
বলেই আহান সামনে এগিয়ে হাটা দিলো । সাদের দড়জার কাছে আসতেই আহানের কানে গিটারের টুং টাং ধ্বনি ভেষে এলো। ও ঘুড়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো মেঘ হাতে গিটার নিয়ে চোখ বন্ধ করে বাজাচ্ছে। আহান একটা বাকা হাসি দিলো,, ও জানে কাকে কি ডোজ দিলে সেটা কাজে দিবে । মেঘ গাইলো,,.
Main jaan ye vaar doon
har jeet bhi haar doon
keemat ho koi tujhe
beinteha pyaar doon..2
sasri hadein meri
ab maine tod di
dekar mujhe pata
awaargi ban gaye..
Haan hasi ban gaye
haan nami ban gaye
tum mere aasmaan
meri zameen ban gayi
aao….aaa
(বাকিটা সবাই নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নিবেন)
মেঘ গানটা শেষ করে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো সবাই মুগ্ধ আর অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।দিশা মেঘের কাছে গিয়ে বললো
“তোকে বলেছিলাম না মানুষ কাজকে ভুলে গেলেও, প্যাশন কখনো ভুলে না। দেখ সেই আগের মেঘের কন্ঠ সুর আর এই মেঘের কন্ঠ সুরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”
মেঘ কিছুই বললো না শুধু একটা শান্তির হাসি দিলো। আজকে ওর মনে অদ্ভুত এক খুশি এসে ভর করেছে মনে হচ্ছে অনেক দিন পর নিজের প্রানটা ফিরে পেয়েছে। ওর চোখে মুখে অদ্ভুত এক তৃপ্তির হাসি ফুটে আছে। মেয়েটাকে দেখে একদম প্রানোবন্ত লাগছে। মেঘের হঠাৎ চোখ গেলো আহানের দিকে। আহানদের চোখে মুখে ফুটে রয়েছে মুগ্ধতার ছাপ ঠোটে ঝুলে আছে কোনো কিছুর জিত হাসিল করার আমায়িক হাসি। মেঘ আহানের কাছে গিয়ে একটা ম্লানো হাসি দিয়ে বললো
“থ্যাংক্স আপনার জন্যই গানটা আবার আমার লাইফে ফিরে এলো।তবে আপনি একটা কথা ঠিকই বলেছিলেন জেড়িনের মতো একটা সামান্য মেয়ে আমাকে ভেঙে এতোটাই টুকরো টুকরো করেছে যে সেটা আপনাদের এতো ভালোবাসা দিয়েও জোড়া লাগানো যাবে না। জানেন তো? মানুষের মনটা আয়নার মতো হয় একবার ভেঙে গেলে যতো দক্ষ কারিগরই হোক না কেনো হাজার সাধনা করেও আর আগের মতো জোড়া লাগাতে পারে না।”
বলেই মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেলো। আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিরবির করে বললো
“আমি ওই ভাঙা আয়নাটাকে জোড়াবো না মেঘ পড়ি । ওটাকে ভেঙে গুড়ো করে,, ওই কাচের টুকরো দিয়েই আরেকটা নতুন আয়না বানাবো।”
আহানের ভাবনার মাঝেই দিশা এসে বললো
“কি খবর জিজ? কি এতো বিরবির করছো?”
আহান দিশার নাক টেনে দিয়ে বললো
“সেটা জেনে তুমি কি করবে দিশা বুড়ি ।আগে বলো তোমার কি গিফট চাই?”
“আমার কিচ্ছু চাই না। ”
“সেটা বললে কি করে হয় তুমি আজকে আমার এতো বড় একটা কাজ করে দিলে। তোমার তো একটা গিফট অবশ্যই পাওনা আছে।”
“আরে ধুর ভাইয়া আমি তো কিছুই করিনি। সব কিছু তো আপনিই মেসেজে বলে দিলেন। তাও যখন এতো করে বলছেন তাহলে চকলেট কিনে দিয়েন তাহলেই হবে।”
আহান মুচকি হেসে বললো
“ওকে ।কালকে তোমার জন্য তোমার সব পছন্দের চকলেট নিয়ে আসবো।”
আহান তখন ওখানে বসে দিশার সাথে ফোনে চ্যাটিং করছিলো। দিশাকে আর হিয়ানকে আহান আগে থেকেই গানের কথাটা শিখিয়ে দিয়েছিলো। আর ওরাও সেই প্লান অনুযায়ী কাজ করেছৈ।
# চলবে,,,,,,
বিঃদ্রঃ লেখিকার নামের জায়গায় আগে আমি শুধু তিশা মনি দিতাম। পুরো নামটা দিতাম না ।কিন্তু এখন থেকে পুরো নামটাই দিবো। আর আগের পোস্ট গুলোকে এডিট করে ঠিক করে নিবো।