ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৫৬

0
717

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ56

খান বাড়ির গেষ্ট রুমে কাচুমাচু করে বসে আছে মেঘ।চার পাশের সব কিছু কেমন অসহ‍্য লাগছে।নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।এই বাড়ির ছেলে একদিন ওর জন‍্যই এই বাড়ি ছেড়ে,দেশ ছেড়ে চলে গেছে।নাহ চলে যায়নি হারিয়ে গেছে।

প্রায় দুই বছর ধরে আহানের কোনো খোজ নেই।মেঘের দেওয়া আঘাত সহ‍্য করতে না পেরে আহান কাউকে কিছু না বলে দেশ ছেড়েই চলে গেছে।আজ অবদি কাউকে একটা ফোন অবদি করেনি।সবাই অনেক খুজেছে কিন্তু ওর কোনো হদিস পায়নি।কোথায় আছে?কি করছে?কেউ কিচ্ছু জানেনা।কথায় আছেনা না,কেউ যদি হারিয়ে যায় তাহলে তাকে খুজে বের করা যায়।কিন্তু কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় চলে যায় তাহলে তাকে হাজার বার খুজেও কোনো লাভ হয়না।আহির,মিহির, হিয়ান,অভি ওরা ওদের সব সোর্স লাগিয়েও আহানকে খুজতে ব‍্যার্থ হয়েছে।ওরা শুধু এই টুকু জানতে পেরেছে আহান এই দেশ ছেড়ে চলে গেছে।কিন্তু কোথায় গেছে সেটা আজও অজানা রয়ে গেছে।

মেঘের নিজেকে আজকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।ওর জন‍্য এতো গুলো মানুষ আজ কষ্টের মধ‍্যে আছে।এই বাড়ি,ঘর সবকিছু একই আছে।শুধু পাল্টে গেছে মানুষ গুলো।যারা এক সময় ওকে মাথায় করে রাখতো তারা এখন ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা অবদি বলে না।অভিমানে সবাই ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।উহুম,মেঘের জন‍্য আহান সব কিছু ছেড়ে চলে গেছে সেই জন‍্য কেউ ওর উপরে অভিমান করেনি।অভিমান করেছে কারন মেঘ নিজেও কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।এই দুই বছরে এক বারের জন‍্যও কারো সাথে দেখা করেনি।ইনফ‍্যাক্ট নিজের ভার্ষিটি থেকে টিসি নিয়ে অন‍্য একটা ভার্ষিটিতে ভর্তি হয়েছে।কাউকে একটা বার জিঙ্গেস করার প্রয়োজনও মনে করেনি।ওর বাসার ঠিকানা টা পর্যন্ত ‘ও’ কাউকে দেয়নি।

মেঘ আজকে সকালে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারে বিয়েটা খান বাড়িতে হবে।আহির আর মিহিরের বিয়ের অনুষ্ঠান টা একসাথে এই বাড়িতেই করা হবে।তাই মেঘ ওখান থেকে সোজা এই বাড়িতে চলে এসেছে।এখানে আসার পর কেউই ঠিক ভাবে ওর সাথে কথা বলেনি।সবাই কাজের বাহানা দেখিয়ে ওকে এক প্রকার ইগনোর করেছে।শুধু মোনা খান এক ফাকে একজন সার্ভেন্ট কে মেঘের রুম দেখিয়ে দিতে বলেছে।তারপর সেই সার্ভেন্ট ওকে এই রুমে নিয়ে এসেছে।শুধু ও’ই না,সাথে ওর বাসার সেই পরিচারিকা কেও নিয়ে এসেছে।উনি প্রথমে আসতে রাজি হননি কিন্তু মেঘের জোড়া জুড়িতে আসতে এক প্রকার বাধ‍্য হয়েছেন।আপাততো মেঘ ওনাকে সবার সাথে পরিচিত হওয়ার জন‍্য নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর যাওয়ার আগে সাবধান করে দিয়েছে যাতে ওর ব‍্যাপ‍্যারে এখানের কাউকে কিছু না বলে।
_____________________________
দুপুর 02:00 টা

মেঘ সাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো।বের হয়ে হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে চুলগুলো বেধে নিলো।তারপর ওড়নাটা সুন্দর ভাবে মাথায় পেচিয়ে রুম থেকে বের হলো।মেঘ সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনই ওর চোখ গেলো ড্রইং রুমের সোফার দিকে।সেখানে হিমা,রিয়ান,রিজা,রিজার হাসবেন্ট,দিশা,অভি,হিয়ান, আলিশা বসে আছে।মেঘ বুঝতে পারলো ওরা সবাই গায়ে হলুদের তত্ব দিতে এখানে এসেছে।তত্বের কথা ভাবতেই মেঘের মনে পড়ে গেলো হিয়ানের গায়ে হলুদের কথা।সেদিন ওরাও এভাবে তত্ব নিয়ে হিয়ানদের বাড়িতে গিয়েছিলো।আর আহানরা সবাই মিলে ওদের কি রকম নাজেহালটাই না করেছিলো।সেসব কথা ভেবে মেঘের ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।পরক্ষনেই সামনে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে ওর হাসি মিলিয়ে গেলো।ওর চোখে মুখে এসে ভর করলো একরাশ মুগ্ধতা।আলিশার কোলে ছোট্ট একটা ছেলে বেবী বসে আছে।বেবিটার বয়স মোটামুটি এক বছরের মতো হবে।বেবি টা বারবার আলিশার নাক,চোখ,ঠোট ছুয়ে দিচ্ছে।ওর হিজাব,জুয়েলারি,শাড়ির আচল ধরে টানাটানি করছে।আর আলিশা নাক মুখ কুচকে বেবির হাত একটা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে আর ছাড়া পেয়ে বেবি গিয়ে আরেকটা ধরছে।মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এটা আলিশা আর হিয়ানের বেবি।’ও’ সবার থেকে দূরে ছিলো ঠিকই কিন্তু আড়াল থেকে সবার খোজ খবর রেখেছে।

আলিশা আর হিয়ানের এক বছর আগে বেবি হয়েছে।ওরা এখন বেবি নিয়ে ওদের আলাদা ফ্লাটে থাকে।কারন সেখান থেকে হিয়ানের অফিসে যেতে সুবিধা হয়।রিয়ান আর হিমার বেবির বয়স আড়াই বছর।ওরা লন্ডনে সেটেল্ড হয়ে গেছে।রিজা আর দিশার কাজিন আট মাস আগে বিয়ে করেছে।ওদের রিলেশন টা বাড়ি থেকে কেউ মেনে নিচ্ছিলো না।তাই ওরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে।আর বিয়ের পর আস্তে আস্তে সবাই মেনে নিয়েছে।আহান আর মেঘ চলে যাওয়ার কিছু মাস পরে দিশা আর অভির বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা মোটামুটি করে ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে।দিশা প্রথমে বিয়েতে রাজি না থাকলেও বিয়ের পরে অভির ভালোবাসা,কেয়ারিং গুলো দেখে আস্তে আস্তে অভিকে ভালোবাসতে বাধ‍্য করেছে।দিশা,অভি আর অভির মা-বাবা ওরা সবাই একসাথেই থাকে।আর দিশা আপাততো ছিক্স মানর্থ প্রেগনেন্ট।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ নিচে নামলো।নিচে নেমে প্রথমেই সোফার কাছে এগিয়ে গিয়ে সবাইকে সালাম দিলো।মেঘের কন্ঠস্বর শুনে সবাই মেঘের দিকে তাকালো।আর তাকিয়েই সবাই বেশ অবাক হয়ে গেলো কারন মেঘ আগের থেকে একদম শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।দুই বছর আগের মেঘের মধ‍্যে আর এই মেঘের মধ‍্যে আকাশ-পাতালের পার্থক‍্য।সবাই ওভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই মেঘের সালামের অ‍্যান্সার দিলো।মেঘ গিয়ে আলিশার কোল থেকে ওর বেবিকে কোলে নিলো।তারপর বেবির নাম জিঙ্গেস করতেই জানতে পারলো ওর নাম আরাফ।মেঘ বেবিটাকে কোলে নিয়ে অন‍্য পাশে গিয়ে একা একা ওর সাথে কথা বলতে লাগলো।আর বাকিরা সবাই অবাক হয়ে দূর থেকে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো।এতোগুলো দিন পরে দেখা হলো আর মেঘ কারো সাথে ঠিক করে কথা অবদি বলছে না?সবাই ভাবছে কি দিয়ে তৈরি এই মেয়ে?একে তো এতো বড় একটা ভুল করেছে তার উপর এখন ওদের সবাইকে এভাবে ইগনোর করছে?

হিয়ানেরা সবাই দুপুরে লাঞ্চ করার পর চলে গেলো।মেঘও ওদের সবার সাথে এক সাথেই লাঞ্চ করেছে।কিন্তু কারো সাথে আগ বাড়িয়ে একটুও কথা বলেনি।সবাই যেটা জিঙ্গেস করেছে ‘ও’ শুধু তাতে “হ‍্যা” “না” বলে অ‍্যান্সার দিয়েছে।সবাই মেঘের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছে।
__________________________
সন্ধ‍্যা 07:00 টা

মেঘ ওর রুমে এসে বসে আছে।নিচ থেকে লাউড মিউজিকের আওয়াজ ভেসে আসছে।বাসার সামনের গার্ডের এরিয়ায় আহির আর মিহিরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।আহিরের মিহিরের গায়ে হলুদ এখানে হবে আর সাড়িকা সাঈফার গায়ে হলুদ ওদের বাড়িতে হবে।মেঘের আপাততো এসবে কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।’ও’ লাউড মিউজিক আর মানুষের চিল্লাচিল্লি একদম সহ‍্য করতে পারে না।মানে যে জায়গায় অতিরিক্ত শব্দ শোনা যায় সেখানে গেলে ওর ভিষন মাথা ব‍্যাথ‍্যা হয়।তাই মেঘ ডিসিশন নিয়েছে ‘ও’ হলুদের ফাংশনে যাবে না।

মেঘ বেডের উপর থেকে উঠে গিয়ে ওর ব‍্যাগ খুলে ঘুমের ঔষধ বের করে সেখান থেকে দুটো ঔষধ খেয়ে নিলো।তারপর রুমের দরজা লক করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।মেঘ ঘুমাতে যাবে তার আগেই শুনতে পেলো মিউজিক থেমে গেছে।আর বাইর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ ভেষে আসছে।’ও’ একবার ভাবলো নিচে গিয়ে দেখবে কি হয়েছে।কিন্তু ঘুমের ঔষধ খাওয়ার কারনে বেশিক্ষন চোখের পাতা খুলে রাখতে পারলো না।কয়েক সেকেন্ডের মধ‍্যেই ঘুমের রাজ‍্যে তলিয়ে গেলো।
___________________________

রাতে তারাতাড়ি ঘুমানোর জন‍্য বেশ সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো মেঘের।’ও’ ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলো।রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলো তাই ভিষন খিদে পেয়েছে ওর।আপাততো কিছু না খেতে পারলে পেটের মধ‍্যে থাকা ইদুর,বাদুর গুলো হিপ-হপ ডান্স করা শুরু করে দিবে।

মেঘ নিচে এসে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুললো।দেখলো ফ্রিজে বেশির ভাগই ফাষ্ট ফুড রাখা আছে।বাট খালি পেটে এগুলো খেলে মেঘের শরীর খারাপ করবে।তাই ‘ও’ এগুলো বাদ দিয়ে অন‍্য কিছু খুজতে লাগলো।আর খুজতে খুজতে একটা প‍্যাকেটে কতোগুলো পেয়ারা পেয়ে গেলো।সেখান থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে খেতে খেতে ‘ও’ বাইরে চলে গেলো।যদিও খালিপেটে ফল খেলে সমস‍্যা হয়।তবুও কিছুই করার নেই।আপাততো খিদে কমানোটা জরুরি।
____
মেঘ বাইরে এসে দেখলো এখানে গার্ড আর পার্টি প্লানারের লোকেরা ছাড়া কেউ নেই।পার্টি প্লানারের লোকেরা কালকের গায়ে হলুদের ষ্টেজ,গেট,ডেকারেশন সব কিছু খুলে চেইঞ্জ করে আবার নতুন করে বিয়ের জন‍্যে সাজাচ্ছে।মেঘ পেয়ারাটা খেতে খেতে সুমিংপুলের কাছে গিয়ে পড়নে থাকা প‍্যান্ট টা পায়ের দিক থেকে একটু ফোল্ড করে উপরে উঠিয়ে পুলের পানিতে পা ঢুবিয়ে বসে পড়লো।’ও’ খেতে খেতে সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।গলায় পেয়ারা আটকে গেলো।হঠাৎ করেই ‘ও’ বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করলো।কাশতে কাশতে ওর মুখ থেকে সব পেয়ারা বের হয়ে পানিতে পরে গেলো।

মেঘ পুলের যে পাশে বসে আছে ঠিক তার অপর পাশ দিয়ে আহান ফোন স্ক্রল করতে করতে হেটে যাচ্ছে।ওর পড়নে একটা ট্রাউজার আর হুডিওয়ালা জ‍্যাকেট।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ‘ও’ এইমাএ ঘুম থেকে উঠে এখানে এসেছে।কিন্তু মেঘ এটা ভেবে পাচ্ছে না যে আহান এখানে কিভাবে এলো?একদিকে কাশতে কাশতে ওর দম আটকে আসছে।অন‍্যদিকে আহান সত‍্যিই ওর সামনে দাড়িয়ে আছে,নাকি স্বপ্ন দেখছে সেটা ভেবে ওর মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

কারো কাশির শব্দ শুনে আহান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ডান পাশে তাকালো।দেখলো মেঘ পুলের মধ‍্যে পা ঢুবিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কেশে যাচ্ছে।আহান দ্রুত পায়ে মেঘের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই মেঘ ভয় পেয়ে পুল থেকে পা তুলে দৌড় দিতে চাইলো।কিন্তু ওর পা ভেজা থাকায় দৌড় দিতে গিয়ে ‘ও’ শ্লিপ কেটে পড়ে যেতে নিলো ঠিক তখনই আহান দৌড়ে এসে ওর এক হাত ধরে ফেললো।মেঘ এতোক্ষনে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন না সত‍্যিই আহান ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।

মেঘ ভীতু চোখে একবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার পিছনের পুলের দিকে তাকাচ্ছে।কারন আহান শুধু মেঘের একহাত ধরে আছে।আর মেঘের সম্পূর্ন শরীর চিৎ হয়ে পুলের দিকে ঝুলে আছে।এখন যদি আহান কোনো ভাবে মেঘের হাতটা ছেড়ে দেয় তাহলে মেঘ একদম সোজা পানিতে গিয়ে পড়বে।মেঘের ভাবনাকে সত‍্যি প্রমান করে দিয়ে আহান ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।আর ‘ও’ যেভাবে ছিলো সেভাবেই চিৎ হয়ে পানিতে পরে গেলো।আহান মেঘের পরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে আসতে যাবে তার আগেই মেঘ কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে পিছন থেকে রাগি কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো

“আর ইউ ষ্টুপিড?আপনি আমাকে এভাবে ফেলে দিলেন কেনো?”

মেঘ কথা শুনে আহান দাড়িয়ে গেলো।তারপর পিছনে মেঘের দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে রুড স্বরে বললো

“ও হ‍্যালো ম‍্যাম আমি আপনার বেতন ভুক্ত বডিগার্ড নই যে আপনাকে বাচাবো।আর আপনার সাহস তো কম না,আপনি আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমাকেই ষ্টুপিড বলছেন?এই বাড়িতে থাকতে হলে একটু বুঝে কথা বলবেন নাহলে আপনাকে গেট থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”

কথাটা বলেই আহান হনহন করে ওখান থেকে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আর মেঘ ছলছল চোখে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
____________________________

মেঘ ভিতরে এসে ফ্রেস তাড়াতাড়ি নিচে এলো।ওর নাকে মুখে পানি চলে গেছে।ঠান্ডায় সারা শরীর কাপছে।মাথাটা ব‍্যাথ‍্যায় ফেটে যাচ্ছে।’ও’ নিচে এসে দেখলো বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে বসে কফি আর স্নাক্স খাচ্ছে।মেঘ ড্রইং রুম থেকে দ্রুত পায়ে কিচেনে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে কফি বানাতে যাবে তার আগেই মোনা খান ওর দিকে একটা কফির মগ বাড়িয়ে দিলেন।মেঘ কফির মগটা হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে চেয়ারে বসে চুপচাপ কফি খেতে লাগলো।সবাই বারবার মেঘের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে।ওদের কাছে মেঘের বিহেইবিয়ার কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।’ও’ দ্রুত কফিটা শেষ করে অন‍্য একটা কফির মগ হাতে নিয়ে উপরে চলে এলো।আহান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।দুই বছরে মেয়েটা একদম পাল্টে গেছে।হয়তো এতোদিনে বিয়েও করে নিয়েছে।আহান তাছিল‍্য একটা হাসি দিলো।যাকে মন প্রান এতো গুলো বছর ভালোবেসে গেলো।সে এখন অন‍্য এক জনের সংসার করছে।
_________
মেঘ ব্রেকফাস্ট করতে নিচে এসে জানতে পারলো আহান কালকে সন্ধ‍্যায় এখানে এসেছে।’ও’ যে আসবে সেটা আগে থেকে কেউই জানতো না।হঠাৎ করে এভাবে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছে।সবাই প্রথমে অবাক হলেও এতোদিন পর আহান কে দেখে পুরো বাড়িতে কান্নার বন‍্যা হয়ে গেছিলো।আহান কে কালকে সবাই অনেক বার জিঙ্গেস করেছিলো যে এতোদিন ‘ও’ কোথায় ছিলো?কারো সাথে যোগাযোগ করেনি কেনো?কিন্তু আহান কারো প্রশ্নের কোনো অ‍্যান্সার দেয়নি।সব কিছু ইগনোর করে গেছে।
________

বারোটার দিকে সবাই সাড়িকা,সাঈফাদের বাড়ির উদ্দ‍্যেশে বের হলো।সেখানে যাওয়ার পর সবাই আহান আর মেঘকে দেখে যেমন খুশী হলো তেমনি সবাই ভিষন ইমোশনালও হয়ে গেছিলো।এতোদিন পর ওদের দুজনকে একসাথে দেখতে পাবে সেটা কেউ ভাবতেই পারেনি।অবশেষে আহির-সাড়িকা আর মিহির-সাঈফার বিয়েটা হয়েই গেলো।সন্ধ‍্যার দিকে বর যাএীরা সবাই খান ম‍্যানশনে চলে আসলো।এখানে আসার পর সমস্ত রিচুয়‍্যাল শেষ করে সাড়িকা,সাঈফা কে উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
____
রাত 11:30

কনকনে ঠান্ডার মধ‍্যেও ছাদের এক কোনে বসে এক মনে অফিসের কাজ করে যাচ্ছে মেঘ।’ও’ অফিস থেকে অনেক রিকোয়েস্ট করে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে ঠিকই।কিন্তু আসার আগে ওর বস এক গাদা ফাইল ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে তিন দিনের মধ‍্যে এগুলো কম্পিলিট করতে।তাই মেঘ সাঈফাদের বাড়ি থেকে এসেই ফাইল পএ নিয়ে ছাদে চলে এসেছে কাজ করার জন‍্য।নিচে লোক জনের চিল্লাচিল্লির জন‍্য কাজে মন বসাতে পারছিলো না।এজন‍্য ছাদটাকেই কাজ করার জন‍্য বেষ্ট জায়গা মনে করলো।মেঘ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলো হঠাৎ ওর নামে সিগারেটের স্মেল আসতেই ওর কাশি শুরু হয়ে গেলো।’ও’ ঘাড় ঘুড়িয়ে সামনে তাকিয়েই দেখলো আহান হাতে সিগারেট নিয়ে ভুত দেখার মতো চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ কাশতে কাশতে বললো

“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”

আহান দেখলো মেঘের কষ্ট হচ্ছে তাই হাতে থাকা সিগারেট টা ছুড়ে বাইরে ফেলে দিয়ে অবাক কন্ঠে বললো

“আমি তো সিগারেট খেতে এসেছিলাম।কিন্তু আপনি এতো রাতে একলা এখানে কি করছেন?”

মেঘ আহানের প্রশ্নের উওর না দিয়ে ওকে আবার পাল্টা প্রশ্ন করলো।বললো

“আপনি সিগারেট খান?কোথায় আগে তো কখনো খেতে দেখিনি?”

মেঘের কথা শুনে আহান তাছিল‍্য হেসে বললো

“শুধু সিগারেট খাইনা,ড্রিংকসও করি।আর আগে খেতে দেখেননি কারন আমি আগে কখনোই এসবে হাতও লাগাইনি।”

মেঘ তাছিল‍্য হেসে বললো

“আরেহ বাহ বেশ ভালো।তা হঠাৎ এতো উন্নতির কারন জানতে পারি।”

আহান গিয়ে মেঘের পাশের বেতের চেয়ারটার উপর বসলো।তারপর স্বাভাবিক ভাবে বললো

“আগে এসবের প্রয়োজন হয়নি।কারন একটা পরীর উপর আমি খুব বাজে ভাবে আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।সে ছাড়া আমার উপর অন‍্য কোনো নেশা কাজ করতো না।কিন্তু আমার সেই পরীটা হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে গেছে তাই তার নেশা কাটাতে এই নেশাকে বেছে নিয়েছি।বলতে পারেন নিজের কষ্ট গুলোকে কমানোর সামান‍্য একটা চেষ্টা করছি।”

আহানের কথা শুনে মেঘের কান্না চলে আসলো।ওর ইচ্ছে করছে একবার আহান কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিতে।আর বলতে আমি যা করে ছিলাম সব তোমাদের সবার ভালোর জন‍্য করে ছিলাম।একদিন তোমরা সবাই সত‍্যিটা ঠিক বুঝতে পারবে।কিন্তু না,ও এখন এসব কিছুই আহানকে বলতে পারবে না।এতো স‍্যাক্রিফাইজ করার পর কিছুতেই ওর প্লান টা ফেইল হতে দিবে না।মেঘ দ্রুত ওর ফাইল গুলো গুছিয়ে বসা থেকে উঠে দারালো।ওকে দাড়াতে দেখে আহান ব‍্যাস্ত কন্ঠে বললো

“আরে ম‍্যাম প্লিজ কুল ডাউন।আমি ড্রিংকস করি এটা ঠিক।বাট আজকে ছুয়েও দেখিনি বিশ্বাস করুন।আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবোনা প্রমিস।প্লিজ আপনি এখানে বসতে পারেন।”

আহানের কথা শুনে মেঘের বুকটা দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ও’ কোনো রকম জিহ্ব দিয়ে ঠোট টা ঝুলিয়ে শুকনো কন্ঠে বললো

“আসলে আমার একটু কাজ আছে।এগুলো গিয়ে কম্পিলিট করতে হবে আমি আসি।”

আহান শুকনো হেসে বললো

“কাজ আছে নাকি আপনার হাসবেন্ট এতো রাতে আপনাকে একটা ছেলের সাথে দেখলে মাইন্ড করবেন?বাই দ‍্যা ওয়ে আপনার হাসবেন্ট কোথায়?ওনাকে তো বিয়ে বাড়িতে দেখলাম না।”

আহানের কথা শুনে মেঘ রুক্ষ গলায় বললো

“আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলি সেটা আমার হাসবেন্ট একদম পছন্দ করেন না।আমার হাজবেন্টের অপছন্দ করে এমন কোনো কাজ আমি করতে চাই না।আর উনি অফিসের কাজে ব‍্যাস্ত আছেন তাই এখানে আসেন নি।”

কথাটা বলেই মেঘ হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো।একবারের জন‍্যেও পিছনে তাকালো না।কারন ও জানে পিছনে তাকালেই এক জোড়া অসহায় চোখ দেখতে পাবে।যেই চোখের দিকে তাকালে ও আর নিজেকে সামলাতে পারবে না।ইচ্ছে করবে একবার ছুটে এসে লোকটা কে ছুয়ে দিতে।

আহান মেঘের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনে রাখা টেবিল টা কে জোড়ে লাথি মারলো।তারপর মৃদ‍্যু চিল্লিয়ে বললো

“কতো সহজে বলে দিলে তোমার হাজবেন্ট অপছন্দ করে এমন কোনো কাজ তুমি করতে চাও না।তুমি এতোটা সেলফিস কিভাবে হয়ে গেলে মেঘ?কেনো আমার ভালোবাসা টা তোমার চোখে পড়ে না?আমাকে কেনো এভাবে কষ্ট দিলে মেঘ?এর থেকে তো ভালো তুমি আমাকে নিজের হাতে শেষ করে দিতে।অন্তত এই যন্থনা থেকে তো মুক্তি পেতাম।”

কথাটা বলতে বলতে আহানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।’ও’ দ্রুত চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।না এভাবে দূর্বল হলে চলবে না।মেঘ যদি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে তাহলে ও কেনো মেঘকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না।কথাটা ভাবতে ভাবতে আহানের চোখ গেলো টেবিলের নিচের দিকে।দেখলো সেখানে একটা কাগজ পড়ে আছে।’ও’ ভাবলো হয়তো তাড়াহুড়োতে মেঘ কাগজ টা ফেলে গেছে।আহান একটু ঝুকে কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।এটা মেঘের পার্সনাল কোনো একটা ডকুমেন্ট।হঠাৎ আহানের চোখ মেঘের নামের উপরে আটকে গেলো।এখানে মেঘের নাম দেওয়া মিসেস মেঘনা খান।নামটা পরে আহান চারশো চল্লিশ বোল্টের শকড খেলো।’ও’ ভাবতেই পারছে না মেঘ এখনো ওর সারনেইম ইউজ করে।তাহলে কি মেঘ ওদের বিয়েটা মেনে নিয়েছিলো?যদি মেনেই থাকে তাহলে দ্বীতিয় বিয়ে কেনো করলো?আর মেঘ যে এখনো ওর এক্স হাজবেন্টের সারনেইম ইউজ করে সেটা কি ওর বর্তমান হাজবেন্ট জানে?এসব ভেবে আহানের মাথা ঘুরছে।কি যে হচ্ছে ‘ও’ কিছুই বুঝতে পারছে না।মেঘের বর্তমান হাজবেন্ট কেনো মেঘকে ওর এক্স হাজবেন্টের সারনেইম ইউজ করতে দিচ্ছে আহানের মাথায় সেটাই ঢুকছে না।

#চলবে,,,,,

বিঃদ্রঃ গত পর্ব পড়ে অনেকেই অনেক কিছু ভেবে ফেলেছেন।কিন্তু আপনারা যা ভাবতেছেন সেসবের হয়তো কিছুই হবে না,আবার হতেও পারে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না😴😴

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here