মন নিয়ে কাছাকাছি – পর্ব ১২

0
211

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_১২
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা

পথিমধ্যে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। রাহাদের গাড়িতে ওরা চার জন জিনিসপত্র সহ। মিলি মেঘনা আর মামাতো বোন।
আরও তিনটে গাড়ি ইতোমধ্যে যাত্রা করেছে। প্রায় কয়েকঘন্টা জার্নির পর অধীরের বাড়ির রাস্তা ধরেছে মাত্র তাদের গাড়িটা।

হঠাৎ গাড়ির চাকায় সমস্যা। গাড়ি থেমে গেল। রাহা বলল

আঙ্কেল কি হলো?

সমস্যা হয়েছে মা । বৃষ্টি থামলে দেখতে হবে। রাহা জানালার কাঁচ সরালো একটুখানি। মিলি বলল

আমাদের গাড়িতে এই সমস্যা হতে হলো? এখন?

ড্রাইভার আঙুল দিয়ে বলল

আম্মু ওই লোকটাকে ডাকব? মনে হয় ঠিক করতে পারবে।

তারা দেখলো ঝুম বৃষ্টির মধ্যে একজন রেনকোট পড়া লোক একটা জিপগাড়ির চাকা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না।

ডেকে দেখুন না। সাহায্য করতেই পারে।

ড্রাইভার খানিকটা গলা বের করে ডাকলো

এই ভাই! শোনেন। ও ভাই শুনতে পাচ্ছেন?

লোকটা একপ্রকার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আকস্মিক বজ্রপাত আর একঝটকায় মেরুদণ্ড টানটান করে বসলো রাহা। হায়হায় এটা ওই সুকুমার লোকটা! মেজর!
বুকের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ আনন্দ ঢেউ বয়ে গেল। এই একটা মানুষকে ভাবতেই নিজেকে এত সুখী সুখী লাগে কেন তার? অথচ কোথায় সে, আর কোথায় ওই যোদ্ধা। এত যোজন যোজন দূরত্ব তারপরও মনে হয়ে যেন রাহার খুব খুব আপন এই একটা মানুষ।

সুকুমার অফিসার লোকটা এগিয়ে এল। ভুরু কুঁচকে রেনকোটের টুপি ফেলে ড্রাইভারের জানালার কাচ বরাবর মুখ নিয়ে গিয়ে বলল

ভাই কেন ডাকলেন? চাচা ডাকতে পারতেন। মাইন্ড করতাম না।

তৈয়ব মিয়া ফোকলা হাসলো। পেছন থেকে দুটো নারী কন্ঠের হাসি ভেসে এল। ঠিক অপরজনের স্তব্ধ চোখের চাহনি। চোখ সরু করে দেখার চেষ্টা করলো ঠিক কিন্তু চোখ ফিরিয়ে নিয়ে চাকা গুলো ভালো করে দেখে বলল

নর্মাল ইস্যু। ঠিক করে দিচ্ছি। বসুন।

চাকার সমস্যা নিয়ে আধঘন্টার মতো গবেষণা করে ঠিক করে হাত ঝাড়লো জবর আর্মি অফিসার। বৃষ্টিতে ভেজা জবজবে চুল ঝাঁড়তে ড্রাইভারের কাছে এসে বলল

ঠিক করে দিলাম ভাই।

তৈয়ব মিয়া হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন

ভীষণ রসিক মানুষ।

হ্যা হ্যা কড়া,কঠিন ওসব শুনতে কার ভালো লাগে বলেন? একটু রসিক হওয়ার চেষ্টায় আছি।

গাড়ির কাজ পারেন নাকি?

হ্যা। পারি বলেই তো ঠিক করতে পারলাম। দেখি গাড়ি ছাড়েন।

তৈয়ব মিয়া জানতেও পারলো না এই হাস্যরসাত্মক মানুষটি একজন সেনা অফিসার। জানলে বোধহয় শকড খেত।
কিন্তু গাড়ির ভেতরের একজন সত্যিই শকড। না পারছে হাসতে, না পারছে কিছু বলতে। নিঃশ্বাসটা নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।

ধন্যবাদ বাবা । আমার ছেলেও কয়দিন আগে বিয়ে করেছে। আপনার বয়সী হবে।

ধন্যবাদ আমি নেইনা। আসি।

ড্রাইভার জানালার কাঁচ তুলে দিল মাথা দুলিয়ে। পেছনের আধখোলা জানালার কাঁচ বরাবর সুকুমার মুখটা ওপাশের মানবীর সামনে একদম স্পষ্ট। দম এবার সত্যি সত্যি আটকে গেছে।

ওয়েলকাম ব্যাক মিস কবির…….

রাহা গাড়ির সিটের সাথে একদম পিঠ মিশিয়ে নিল। মিলি আর মেঘনা অবাক চোখে তাকে দেখছে। গাড়িটা তখনি আওয়াজ করে স্টার্ট নিল।

কপালের চুল ঝাড়া দিতে দিতে আর্মি অফিসারের ক্ষুরধার চোখদুটো দেখলো, গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে কয়েকটা উড়ো চুল, আর মুখের একটা পাশ, একটা চোখ তার দিকে ঘুরানো। ঝুম বৃষ্টি তেড়ছা তেড়ছা রেখার মাঝে নারী মুখটি দেখা গেল যতদূর গাড়িটি দেখা গেল।
বক্র হাসির রেখা খেলা করে গেল মেজরের ঠোঁট। নারী মানেই বুঝি ছলনা।

____________

সামান্য বিলম্ব হতেই সবাই কৈফিয়ত দিতে হলো রাহাকে। তবে সবটা বুঝিয়ে বলতে সবাই শান্তি। ওরা পৌঁছুতেই দেখলো পুরো বাড়িভর্তি মানুষ।আজকের দিনে এমন ঝড়তুফান হতে হলো? নোরা এসে সবাইকে ভেতরে নিয়ে গেল। মিনা আর সানজু তাদের সবাইকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। আনতারা বেগমের অনুরোধে শেখাওয়াত বাড়ির সব মেয়েদের আসতেই হলো। খানসা বেগম আর মনোয়ারা বেগম থাকায় মিনা আর সানজু কোথাও নড়তেও পারছেনা। মনোয়ারা এমনিতেই মিনাকে সহ্য করতে পারেননা। তারউপর কথা অমান্য করলে দু চারটা কথা শোনাতে ভুলবেন না উনি। মিনা কোনো ঝামেলা চায় না।

আমজাদ কবির মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এসে দেখলেন জামাই বাদে, আর কোনো পুরুষমানুষ নেই। উনি অপমানবোধ করলেন যেটা অধীর বুঝতে পেরেছে। বাবা মামাদের সে কত করে বুঝিয়েছে কিন্তু তারা কেউ এখানে থাকবেন না তা আগে থেকেই বলে রেখেছেন। আমজাদ কবির সিদ্ধান্ত নিলেন এটাই উনার শেষ আসা এই বাড়িতে। আর ক’টা দিন পর মেয়েকে নিয়ে যাবেন আশরাফকে পাঠিয়ে। চা নাশতা খেয়ে চলে যাওয়ার কথা উঠলে একপ্রকার হৈচৈ লেগে গেল সেখানে। অধীর রেগেমেগে আনতারা বেগমকে বললেন

সবাই এরকম করতে থাকলে নোরাকে আমি পাঠিয়ে দেব ওর বাড়িতে। এত অপমান সয়ে ওর এখানে থাকার কোনো দরকার নেই।

আনতারা বেগম বিপাকে পড়ে বললেন

আমি কি করব? আমি তো বুঝালাম তোর আব্বাকে।

বাড়িতে একপ্রকার তান্ডবলীলা শুরু হতেই বাড়ির প্রান্তরে গাড়ির হর্নের আওয়াজে সবাই সতর্ক হলো। দেখলো রাহান চলে এসেছে। অধীর বলল

তানজীব কোথায়?

সবাইকে ঘাড় ধরে নিয়ে এসেছে।

আব্বাদেরকে?

হ্যা।

কেমনে? কোথায় গিয়েছে ওরা?

আরেহ আমাদের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা মারছে। আমিও হসপিটাল থেকে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন দেখলাম তানজীব ভিজেভিজে এল কোথাথেকে। চেঞ্জ করে আঙ্কেলদের সহ সাথে করে নিয়ে এসেছে। চাচ্চু আর আব্বা আসেনি। ওরা আসবেও না। থাক গে।

অধীর তার কাঁধ চাপড়ে বলল

থ্যাংকস দোস্ত।

মেজরকে দিস।

শালা থ্যাংকস নেইনা।

দুবন্ধু হেসে উঠলো উচ্চরবে।

আজমীর রায়হান লজ্জায় পড়ে গেলেন সবার সামনে। তবে একথা ওকথা বলে কথা ঘুরিয়ে নিলেন ঠিকই। এমন ভাবভঙ্গি করলেন যেন বিয়েটাতে উনারা বেশ খুশি। সব ঠিকঠাক। আনতারা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অতঃপর।

________

মিনাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে তানজীব তার পাশে এসে সোফায় বসলো। এক হাত দিয়ে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল

মিনি কি করে?

মিনা মুখ কালো করে বলল

তুমি জানো আমি একবারও অধীর ভাইয়ের ঘরে যেতে পারিনি। ওখানে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।

তানজীব ভুরু কুঁচকে বলল

কারা আমার বোনকে রেখে আড্ডা দিচ্ছে?

মিনা বলল

অনেকে আছে।

রাহান এসে মিনার অন্যপাশে বসে বলল

ভাই তুই কি আমার বউটারে বড় হতে দিবিনা? তোর আদরে আদরে তো বাদড় হচ্ছে।

মিনা নাকফুলিয়ে তাকালো। তানজীব আর রাহান দুজন হেসে উঠলো।

___________

বউয়ের বাড়ির লোকজনদের আলাদা খাওয়ানো হলো। শেখাওয়াত বাড়ি থেকে যারা এসেছে তারা আলাদা খেল। বৃষ্টি তখন থেমে গেছে। খানসা বেগম তানজীবকে ডেকে বললেন উনারা চলে যাবেন। সানজু মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে। সে যাবে না। তানজীব তার মাথায় টোকা দিয়ে

ওই যাবি?

মায়ের দিকে একবার চেয়ে আবারও তানজীবের দিকে তাকালো সানজু। রাহা আপুকে বলেছে না যেতে। তাই সে আজ যাবে না।

সানজু মাথা নাড়ালো দুপাশে।

ওকে। পরে যাস। মণি তোমরা চলে যেতে পারো। ও থাকুক। মজা করুক। বাচ্চা মেয়ে। কোনো সমস্যা হবে না।

সানজু খুশি হয়ে বলল

থ্যাংকিউ ভাইয়া।

মোস্ট ওয়েলকাম।

তানজীব চলে গেল। সানজু দৌড় দেওয়ার আগেই খানসা বেগম ওর হাতটা ধরলো জোরে। বলল

এই শোন, ও কি তোকে কিছু বলে?

সানজু আগ্রহ নিয়ে বলল

কে?

তোর তানজীব ভাই।

কেন? কি বলবে?

মেয়ের বোকা কথায় বিরক্ত হলেন মা। মনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন

হ্যা রে কিছু বলেনা? মনে করে দেখ।

না। কি বলবে? সানজুনি ডাকে, বুড়িমা ডাকে, দাদীমা ডাকে। এইতো বড়ভাই থেকে শিখেছে।

বলেই হাসলো সে। খানসা বেগম হাতটা ঝাঁকিয়ে কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে বললেন

মেয়ে বড় হচ্ছিস না। এত লাফালাফি কিসের বুঝিনা আমি।

সানজু ছাড়া পেয়ে একদৌড়ে চলে গেল। খানসা বেগম আর মনোয়ারা বেগম একে অপরের দিকে তাকালেন তখন। বললেন

কিছুই বলেনি নাকি।

মনোয়ারা বেগম বললেন

ওর এমনিতে মুখ ভার। কি বলবে? তোর মেয়েটা যা গাধা ইনিয়েবিনিয়ে বললেও তো বুঝবেনা।

____________

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। রাহা ভেবেছিল মেজরকে আবার দেখবে। কিন্তু একবারও দেখেনি। সেটা কি ইচ্ছে করে নাকি?
সানজুর মুখে শুনেছে উনি নিচে ছিলেন। মিনাও সেখানে। দু’ভাইবোন সমানতালে এড়িয়ে যাচ্ছে তাদের। আমজাদ কবির মেয়ের ঘরে এসেছেন। মেয়ের ঘর দেখবেন তাই। নোরা সব ঘুরেফিরে দেখিয়ে বলল

আব্বা আজকে রাহা থেকে যাক। কাল পরশু তো আমি যাব। তখন ও আমার সাথে যাবে।

আমজাদ কবির প্রথমে হ্যা বলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবার কি মনে করে বললেন

না না এ বাড়িতে ওর থাকা হবেনা। না দরকার নেই। রাহা তুই থাকবি? এখানে কি করবি থেকে?

রাহা কিছু না বলে চুপ করে থাকলো। নোরা বাবার হাত জড়িয়ে ধরে বলল

আব্বা আব্বা প্লিজ এমন করোনা। ও থাকলে আমার ভালো লাগবে। নইলে তো কষ্ট হবে।

ও কতদিন থাকতে পারবে তোর সাথে? না না।

এই মাত্র দু’দিন। আর থাকতে হবেনা তোমার মেয়েকে।

মেয়ের অভিমানী গলা শুনে বাবা রাজী হলেন বটে কিন্তু রাহাকে শর্ত দিলেন

ওই বাড়ির লোকজন, কোনো মেয়েছেলের সাথে কথা বলতে যেন না যায়।

রাহা বিনা দ্বিধায় সবটা মেনে নিল।

রাহা থাকবে সেটা শুনে সানজু খুশিতে গদগদকণ্ঠে সেটা মিনাকে বলে এল। তারমানে সবাই সন্ধ্যা নাগাদ চলে যাবে। আর তারা থেকে যাবে। তখন সবাই কথা বলার সুযোগ পাবে।

নোরার বাড়ির সবাইও চলে গেল। মিলি আর মেঘনাকে থেকে যেতে বললে বাবা ভাইয়ের কথা ভেবে তারা রাজী হলো না। এতদূর আসতে দিয়েছে এই ঢের। নোরা তাই বেশি জোরাজুরি করলো না।

বাড়ির সবাইকে বিদায় দিয়ে নোরার আর রাহা সবার পিছুপিছু আসছিল। রোহিনীও খুশি হয়েছে রাহা থেকেছে বলে। সবাই যার যার কাজে মগ্ন। তখন তানজীবকে দেখা গেল অধীরের সাথে বেরিয়ে আসতে। নোরা আর রাহা থমকে গেল। অধীর হেসে বলল

থেকেছ এই কারণে আমি ভীষণ খুশি রাহা। গুড গার্ল।

রাহা হাসলো। নোরাহ বলল

আপনি একটু আসুন তো। কিছু কথা আছে। আসুন।

নোরার এমন হঠাৎ দরকারের কারণ বোধহয় ওই দুজনকে একটু কথা বলার সুযোগ করে দেয়া। অধীর তার পেছন পেছন চলে গেল।

তানজীব দুপাশে ঘাড় নেড়ে আঁড়চোখে রাহার দিকে চাইলো। রাহাও আঁড়চোখে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। বলল

থ্যাংকস।

কেন?

ওই গাড়ি ঠিক করে দেয়ার জন্য। আচ্ছা সরি সরি। আপনি তো আবার থ্যাংকস নেন না।

হ্যা, এটা মনে রাখার দরকার।

রাহা হেসে মাথা দুলিয়ে বলল

ঠিক আছে। রাখবো। কিন্তু.

আবার কি?

আপনি চশমা পড়ে নিলেন কেন?

ভাল করে দেখার জন্য।

মানে?

নাথিং।

রাহা থেমে থেমে বলল,

আমি শুনেছি আর্মিরা খুবই কঠোর হয়। ওদের হৃদয় বলতে কিছুই থাকেনা।

তো?

ওরা মজা করেনা।

তো?

কিন্তু আপনি খুব মজা করেন।

এখন?

আপনি খুব খারাপ।

তারপর।

ধ্যাত।

তানজীব হেসে উঠলো।

আচ্ছা।

আজকে চলে যাবেন আপনি?

হ্যা।

এখানে আর কবে আসবেন?

কেন?

এমনি।

জানিনা। না আসতে পারলেই ভালো। আচ্ছা, বড় বোনের বিয়ে হলো। আপনার বিয়ে কবে? দাওয়াত পাবো?

দাওয়াত তারা পায় যারা খোঁজ রাখে।

আচ্ছা। তাহলে হচ্ছে।

হবে না কেন?

কোথায় থাকে?

বহুদূরে।

কতদূরে?

যত দূর হলে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শোনা যায় না। কিন্তু অনুভব করা যায়।

আচ্ছা।

তানজীব সদর দরজা পেরুতেই রাহা ছুটে গিয়ে ডাকলো

চলে যাচ্ছেন?

তানজীব থেমে গিয়ে বলল

থাকব কেন?

দুটো মিনিট অপেক্ষা করবেন?

উত্তর এল না। সম্মতি ধরে নিয়ে রাহা নোরার ঘরে ছুটলো। ব্যাগের ভেতর থেকে ওড়নার নিচে করে কিছু একটা নিয়ে দ্রুত চলে এল। দেখলো মেজর এখনো দাঁড়িয়ে আছে। রাহা পেছনে গিয়ে বলল

আপনার জিনিস।

তানজীব ঘাড় ঘুরালো। বাঁকুড়ার সেই পোড়ামাটির ঘোড়া। বাবা এনেছিল তানজীবের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে। মেঘের মতো অবিচল মেজরের চোয়াল খানিকটা শক্ত হলো অযোগ্য মানুষীর হাতে এত দামী ঘোড়ার উপস্থিতি দেখে। চট করে কেড়ে নিল সে।

রাহার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।

এটা এখন কাকে দেবেন?

যোগ্য কাউকে।

এতদিন অযোগ্য মানুষের হাতে ছিল?

তানজীব একদম চোখ তুলে তাকালো। কেমন অগ্নিদাহ দৃষ্টি। রাহার সকল প্রতিরোধ কেমন গুঁড়িয়ে গেল।

দৃষ্টি নত করে নিল সে। ঘন আঁখিপল্লব বিন্দু বিন্দু জলকণায় ভারী হয়ে এল।
মেজরের পাথর কঠিন দৃষ্টিতে এবার টলমল হলো। তিনি দৃষ্টি শীতল করলেন। কন্ঠস্বর নরম করে বললেন

একজন যতসামান্য নগন্য সেনা অফিসারের দেয়া দু পয়সার ঘোড়াকে যত্নে রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মিস কবির। এটা আমার আব্বার দেয়া ঘোড়া। আপনার এই উপকার ভুলব না।

রাহা ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো

আপনাকে খুঁজলে কোথায় পাওয়া যাবে?

আকাশের নীচে। নীচে না পেলে ভেবে নেবেন উপরে। কে খোঁজ রাখে ক্ষুদে সেনাদের? বিপদ ছাড়া তাদের খোঁজ কেউ নেয় না মিস কবির। আপনি জানেন আপনি স্বার্থপর একটা দুনিয়ায় আছেন। এখানে কেউ কারো নয়।

রাহার অক্ষিকোটর জ্বলজ্বলে তারার মতো জ্বলতে লাগলো।

বিদায় মিস কবির। তাকদীরে থাকলে আবার দেখা হবে। মিনিকে রেখে গেলাম। বেশি মায়ায় জড়াবেন না। আমি আমরা আপনাদের জন্য ভুল মানুষ। ভুল মানুষের মায়ায় পড়া মানে নিজহস্তে বিষপান। আলবিদা। ভালো থাকবেন।

বলামাত্র তানজীব আর দাঁড়ায়নি। রাহা পিছু করে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ডুকরে উঠলো।

নোরার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে একলা একা বসে রইলো চুপচাপ। সরা উৎস থেকে দরদর করে জল গড়ালো কপোল বেয়ে আত্মাভিমানে।

তারপরও তার প্রবল বিশ্বাস একই আকাশের নীচে তাদের আবার দেখা হবে। হবেই।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here