#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ38
সন্ধ্যা 7:30
একটা পরিত্যাক্ত গোডাউনের মধ্যে পরে আছে দশজন মানুষের লাশ।লাশ গুলোর শরীর থেকে এখনো চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষন আগেই এদের গুলি করা হয়েছে।মেঝের মাটি টা পুরো লাল রক্তে ভিজে গেছে।চারপাশে শুধু রক্তের লাল দাগ।লাশ গুলোর থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে রাগে ফুসছে ব্লাক স্নেক গ্যাংয়ের লিডার সিয়াম।ওর সামনে ভয়ে তটস্থ হয়ে দাড়িয়ে আছে ওরই গ্যাংয়ের কিছু মেম্বার।সিয়াম রাগে চিল্লিয়ে বললো
“কার এতোবড় সাহস, আমার ফ্যাক্টরি গুলোতে আগুন লাগিয়েছে?সে কি জানে না আমি কে?কোন সাহসে আমার সাথে লাগতে আসে?”
সিয়ামের সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলে গুলো সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।ওদের মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।একটু আগে চোখের সামনে নিজেদের গ্যাংয়ের কিছু লোকদের বসের হাতে খুন হতে দেখেছে ওরা।কারন সেই ছেলেগুলো বলেছিলো ওরা আহান খানকে মারতে পারলেও,তার গার্লফ্রেন্ড কে মারতে পারেনি।সেই মেয়ে এখনো বেচে আছে।ব্যাস এইটুকু কথা শোনার সাথে সাথে সিয়াম একসাথে দশ জনকে গুলি করে মেরে দিয়েছে।কারন আহানকে যারা মারতে গিয়েছিলো তাদের দলে ওই দশজনও ছিলো।সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলে গুলো এই মুহুর্তে কিছু বলতেই চাইছে না।ওরা জানে এখন কিছু বললেই ওদের বস নির্ঘাত এখন ওদের মৃত্যুদন্ড দিবে।সিয়াম আবারও চেচিয়ে বললো
“কি হলো সবাই চুপ করে আছিস কেনো?বল আমার গোডাউন গুলোতে কে আগুন লাগিয়েছে?দুইদিন হয়ে গেলো এখনো তোরা এই সামান্য একটা ইনফরমেশন বের করতে পারলি না।জানিস সব মিলিয়ে পুরো সাড়ে তিন কোটি টাকার ড্রাগস ছিলো সব আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেছে।আমার এতোগুলো টাকা জলে চলে গেছে।কার এতো বড় সাহস আমার সাথে লাগতে আসে।এতোদিন তো আহান খান ছিলো,এখন ওকেও পথ থেকে সড়িয়ে দিয়েছি।তো এখন আবার এই নতুন শএুর কোথা থেকে উদয় হলো?”
সিয়ামের কথা শেষ হতেই পাশ থেকে ওর এ্যাসিটেন্ট কবির এগিয়ে এসে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“বস আমি কিছু বলতে চাই!”
সিয়াম ধমক দিয়ে বললো
“তো এখনো চুপ করে আছেন কেনো?আপনাকে কি অ্যাপ্লিকেশন পাঠাতে হবে তারপর বললেন?”
“না…মানে…বস…আসলে….”
সিয়াম দাতে দাত চেপে রাগি স্বরে বললো
“এইসব আসলে,নকলে,না মানে,ইয়ে মানে বাদ দিয়ে যেটা বলতে চাইছিস সেটা ক্লিয়ার করে বল।নাহলে তোর অবস্থাও এদের মতো করতে আমার শুধু এক সেকেন্ড লাগবে।”
(ফ্লোরে পড়ে থাকা লাশ গুলোকে দেখিয়ে বললো)
কবির একটা শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বললো
“বস আমার মনে হয় এটা আহান খানের ভাইদের কাজ।ওরা কিন্তু কেউই আহান খানের থেকে কম না।অথবা আহান খানের ফ্রেন্ড অভিও হতে পারে।ও কিন্তু আহান খানের মতোই ঠান্ডা মাথার লোক,কাজ করার পর কোনো প্রমান ছাড়ে না।আহির, মিহির, হিয়ান,অভি এদের কাউকেই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না।ওদের মধ্যে থেকে যে কেউ এই কাজটা করতে পারে।কারন ওরা সবাই আহান খানকে খুব ভালোবাসতো।আহান খানের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে ওরা কিছুতেই চেপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।যেহেতু আমাদের কিছু লোক ওদের হাতে ধরা পড়েছে তাই আমাদেরকে খুজে বের করা ওদের কাছে কোনো ব্যাপ্যারই না।হয়তো ওরা কেউ আমাদের মতো মাফিয়া না ,তবে ওদের ক্ষমতা আমাদের থেকে কোনো অংশে কম নেই সেটা আমরা সবাই জানি।কিন্তু বস আমার আরো একটা বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয়,,,,,”
এইটুকু বলে কবির চুপ হয়ে গেলো।আরো কিছু একটা বলতে চাইছে বাট সিয়ামের ভয়ে বলার সাহস পাচ্ছে না।কথার মধ্যে কবির এভাবে থেমে যাওয়ায় সিয়াম ভ্রু কুচকে কবিরের দিকে তাকালো।তারপর সন্দীহান কন্ঠে কবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“কি হলো চুপ করে গেলি কেনো?বল,,তোর আর কি বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয়?”
কবির ভয়ে ভয়ে বললো
“বস আমার মনে হয় আহান খান বেচে আছে!”
কথাটা শোনার সাথে সাথে সিয়াম ওর সামনে থাকা একটা চেয়ার লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে চিল্লিয়ে বললো
“হোয়াট?কি বলছিস এসব মাথা ঠিক আছে তোর?ওই লাশটার ডি.এন.এ. রিপোর্ট বলছে ওটা আহান খানের লাশ।তাহলে ও বেচে থাকবে কিভাবে?”
কবির সিয়ামের দিকে তাকিয়ে একটু মলিন হেসে বললো
“বস এই কথা আপনি বলছেন?আপনার থেকে ভালো আর আহান খান কে চিনে?ওনি আপনার কতো গুলো বিজনেস বন্ধ করিয়েছে,আপনাকে কতোবার জেলে পাঠিয়েছে হিসেব নেই,তার উপর আবার কয়েকবার আপনাকে মেরেও ছিলো।শুধু আপনি কেনো ওনি তো সব মাফিয়াদের পিছনে লেগে থাকেন।যারাই অবৈধ কাজ করে তাদেরকে ধরেই জেলে পাঠিয়ে দেন।ওনাকে তো আর কম লোক মারতে চাননি।কিন্তু আজ অবদি কেউ কিচ্ছু করতে পারেনি।যারাই ওনাকে মারতে গেছে সবাই হয় বোকা হয়ে ফিরে এসেছে, নাহলে আর ফিরেই আসেনি।তাদের লাশটা অবদি কেউ খুজে পায়নি।যে এতো কিছু করতে পেরেছে সে সামান্য একটা ডি.এন.এ. রিপোর্ট চেইঞ্জ করতে পারবে না?আহান খানের জন্য এইসব রিপোর্ট চেইঞ্জ করা তো বায়ে হাত কা খেল।”
কথা গুলো বলেই কবির সিয়ামের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ওর কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।সিয়াম ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।কবির ভয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললো।সিয়াম দাতে দাত চেপে বললো
“তুই আমার দলের লোক নাকি আহান খানের দলের লোক?তোকে কি আমি আহান খানের গুনগান গাওয়ার জন্য বেতন দেই?বুঝেছি,,তোরও পাখনা গাজিয়েছে!ওয়েট,তোকেও আহান খানের কাছে পাঠানোর ব্যাবস্থা করছি।”
বলেই সিয়াম যেই এগিয়ে গিয়ে সামনের টেবিল থেকে পিস্তল টা হাতে নিতে যাবে তখনই কবি গিয়ে সোজা সিয়ামের পায়ে ধরে বসে পড়লো তারপর ভীত স্বরে বললো
“বস আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।আমি কথাটা ওভাবে বলিনি।আমি বলতে চেয়েছি যে আমাদের গোডাউন গুলোতে হয়তো আহান খানই আগুন লাগিয়েছে।একবার ভেবে দেখুন,ও যদি এখনো বেচে থাকে,আর এই কাজটা করে থাকে, তাহলে ফিরে এসে আমাদের সবার কি অবস্থা করবে?”
কবিরের কথা কানে আসতেই সিয়াম শান্ত হয়ে গেলো।ওর মনের মধ্যে ভয় এসে বাসা বাধলো।তবে ও সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।ফেইজ রিয়্যাকশন একদম স্বাভাবিক রাখলো।ও তো সত্যিই এটা ভাবেনি?আহান খান যদি বেচে ফিরে আসে তাহলে ওদের সবার কি হবে?আদৌ কি ওরা কেউ আহান খানের হাত থেকে বাচতে পারবে?নাহ বাচার কোনো সম্ভাবনাই নেই, একবার যদি আহান খান জানতে পারে ওদের উপর অ্যাট্যাক টা ব্লাক স্নেক গ্যাংয়ের লোকেরা করেছে তাহলে পুরো গ্যাং টা ধ্বংস করে দিবে।সিয়াম কিছুক্ষন থম মেরে দাড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো।তারপর একটা শয়তানি হাসি দিয়ে কবিরের দিকে তাকিয়ে ওকে চোখের ইশারায় দাড়াতে বললো।সিয়ামের ইশারা বুঝতে পেরে কবিরও উঠে দাড়ালো।সিয়াম এক হাত কবিরের কাধে রেখে বললো
“আহান খান যদি বেচেও থাকে তাহলেও আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না।এমন ব্যাবস্থা করবো শুধু আহান খান না,ওর ভাইদেরও কিছু করার থাকবে না।ওরা সবাই যতোই ষ্ট্রং আর সাহসী হোক না কেনো,ওরা সবাই এক জনের কাছে দূর্বল।এইবার ওদের সেই দূর্বল পয়েন্ট টাকেই আমাদের টার্গৈট বানাবো!”
সিয়ামের কথা শুনে কবির প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। কবিরের এমন চাহনি দেখে সিয়ামের ঠোটের কোনে একটা রহস্য জনক হাসি ফুটে উঠলো।
_________________________
রাতঃ10:45
বেডের উপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে মেঘ।ওর বেডের পাশে চেয়ারের উপর বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আলিশা।হাত বুলানোর সাথে মাঝে মাঝে নিজের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে নিচ্ছে।ওর পাশেই দিশা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ডেস্কের উপরে রাখা মেঘের মেডিসিন গুলো চেক করছে।
দুপুর থেকে এখানে সাড়িকা সাঈফা ছিলো,,দিশা আর আলিশা একটু আগেই এখানে এসেছে।ওরা আসার পর আহির আর মিহির সাড়িকা সাঈফাকে বাসায় দিয়ে আসতে গেছে।আহির আর মিহির একেবারে মোনা খান আর মিড়া রহমান কে রাতের খাবার খাইয়ে তারপর আবার এখানে আসবে।
আপাততো মেঘের বাড়ির লোক,আহানের বাড়ির লোক সবাই সাড়িকা সাঈফাদের বাড়িতেই আছে।এর মধ্যে একবার মেঘের ফুপিরা চাচ্চুরা সবাই এসেছিলো মিড়া রহমানদের সাথে দেখা করতে,আহানের যেদিন দাফন করা হয়েছে ওইদিন।ওনারা মেঘের সাথেও হসপিটালে দেখা করতে আসতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু আহির আর মিহির এক কথায় জানিয়ে দিয়েছে হসপিটালে ওরা ছাড়া আর কাউকে এলাউ করা হবে না।
ওরা মেঘের সেইফটি নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।তাই পুরো হসপিটালে কড়া সিকিউরিটির ব্যাবস্থা করেছে।মেঘের কেবিনের বাইরেও সিকিউরিটি গার্ড দাড় করিয়ে রেখেছে। ওই কেবিনে আহীর,মিহির, হিয়ান,অভি,দিশা, রিজা, আলিশা, সাড়িকা,সাইফা আর কয়েকজন ডক্টর নার্স ছাড়া এখন পযর্ন্ত অন্য কেউ আসনি।ইনফ্যাক্ট আহাদ খান,আজম রহমান,হিয়ানের বাবা,চাচ্চু কাউকে ওরা ভিতরে আসতে দেয়নি।ওনারা সবাই বিষয়টা নিয়ে বিরক্ত হলেও আহির মিহিরকে কিছু বলেনি।কারন ওনারা জানেন,ওরা যা করবে মেঘের ভালোর জন্যই করবে।
মেঘের চেহারা থেকে ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে।চেহারার ক্ষতো গুলো এখন একদম শুকিয়ে গেছে।কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এখনো একটু একটু দাগ রয়ে গেছে।তবে চেহারা আর শরীর থেকে ক্ষতগুলো শুকিয়ে গেলেও ওর শরীর এখনো অনেক দূর্বল,একটুতেই অঙ্গান হয়ে পড়ে যায়।খাওয়া দাওয়া একদম ছেরে দিয়েছে।কিছু খাওয়াতে গেলে জোড় করে খাওয়াতে হয়।যতোক্ষন জেগে থাকে ততোক্ষন শুধু আহানের কাছে যাবে বলে পাগলামি করে।হাতের কাছে যা পায় তাই ফ্লোরে ছুড়ে মেরে ভেঙে ফেলে।যখন অতিরিক্ত পাগলামি শুরু করে তখন ডক্টরেরা বাধ্য হয়ে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়।এখন পর্যন্ত এইভাবেই চলছে।তবে ডাক্তারেরা জানিয়েছেন এইভাবে বারবার ঘুমের ঔষধ দিয়ে ওকে রাখা যাবে না।প্রত্যেকদিন একরম পাগলামি করতে থাকলে মেঘকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে পাঠাতে হবে,এছাড়া ওকে সুস্থ করার আর কোনো উপায় নেই।
।
দিশা মেডিসিন গুলো প্রেসক্রিপশনের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে আলাদা করে রাখছিলো,তখনই ওর ব্যাগের মধ্যে থেকে ফোনটা বাইব্রেট করে উঠলো।ও ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখলো হিয়ানের নম্বর থেকে কলটা এসেছে।তাই ও ফোনটা নিয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।রোগির পাশে বসে ফোনে কথা বলাটা ডক্টরেরা এলাউ করেন না,কারন এতে রোগির প্রভলেম হতে পারে।দিশা কেবিনের বাইরে এসে একসাইডে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো তারপর বললো
“হিয়ান ভাইয়া আপনারা কোথায়?এখানে কখন আসবেন?”
দিশা কথাটা শেষ করতেই ওপাশ থেকে অভির কন্ঠস্বর ওর কানে ভেষে এলো।অভি তড়িঘড়ি করে বললো
“মিস দিশা আমি হিয়ান না অভি।”
অভির কথা শুনে দিশা অবাক হলো।কারন একে তো অভি ওকে সবসময় মিস বিষা বলে ডাকে তার উপর ওর কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে ওরা কোনো প্রভলেমে আছে।দিশা একটু চিন্তিত স্বরে বললো
“জ্বি বলুন,,,,,,,”
অভি বললো
“মিস দিশা যা বলছি চুপচাপ শুনবেন একদম রিয়্যাক্ট করবেন না।যথা সম্বভ নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করবেন ওকে?”
“ওকে,,বাট আপনার কি হয়েছে সেটা তো বলবেন?আপনার কথা গুলো এরকম শোনাচ্ছে কেনো?”
অভি হাপানোর স্বরে বললো
“একটু আগে আমার আর হিয়ানের উপর অ্যাট্যাক করা হয়েছিলো।তাও আবার কারা করেছে জানেন?আমাদের নিজেদের সিকিউরিটি গার্ডেরা!শুধু আমাদের উপরেই না আহির, মিহির,সাড়িকা,সাঈফা ওদের উপরেও একই সময়ে ওদের সাথে থাকা লোকেরাই এ্যাট্যাক করেছে।এখন ওদের কি অবস্থা জানিনা তবে আমরা এখন পর্যন্ত সেইফ আছি।কিন্তু কতোক্ষন থাকবো বলতে পারছি না।”
এইটুকু শুনতেই দিশা মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।ভয়ে হাত পা থরথর করে কাপতে লাগলো।এভাবে সবার উপরে একসাথে কেনো অ্যাট্যাক হয়েছে ও সেটাই বুঝতে পারছে না।ওপাশ থেকে অভি শান্ত স্বরে বললো
“দিশা প্লিজ কোনো রিয়্যাক্ট করবেন না।নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করুন।দেখুন আপনি যদি এখন ভয় পান তাহলে আপানারাও প্রভলেমে পড়ে যাবেন।”
দিশা কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“ম-মানে,,,,,,,?”
অভির বললো
“হসপিটালে আমাদের যেই গার্ডরা আছে হয়তো তাদেরও সবাইকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে ।আমি যদি খুব ভুল না হই, তাহলে ওরাও হয়তো আপনাদের উপর একটু পরেই এ্যাট্যাক করবে।এইবার সবকিছু আপনার উপর ডিপেন্ড করছে।আপনি যদি এখন ভয় পেয়ে চেচামেচি করেন তাহলে ওরা হয়তো আপনাদের উপরে এক্ষুনি অ্যাট্যাক করবে।তাই যতোটা পারবেন নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করুন।যাষ্ট কিছুটা সময় মেনেজ করে নিন তার মধ্যে আমরা ওখানে পৌছানোর চেষ্টা করছি।”
অভি কথাটা শেষ করতে না করতেই,ওর কানে দিশার চিৎকারের শব্দ ভেষে এলো।আর সাথে সাথে ফোনটাও কেটে গেলো।ও পর পর দিশার নম্বরে কয়েক বার কল করলো,,রিং হচ্ছে কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ করছে না।অভি রাগে ফোনটা ছুড়ে মেরে হিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো
“ওহ শিট!সব শেষ,,ওদের উপরেও অ্যাট্যাক করা হয়েছে।তাড়াতাড়ি ড্রাইব কর প্লিজ,আমাদের এক্ষুনি ওখানে যেতে হবে।”
অভির কথা শুনে হিয়ান গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো।অভি জোড়ে জোড়ে দুটো শ্বাস নিয়ে পকেট থেকে ওর নিজের ফোনটা বের করে কাউকে একটা কল করলো তারপর শান্ত স্বরে বললো
“তোর মেঘ পড়ি বিপদে আছে।তাই যা করবি তাড়াতাড়ি কর।”
কথাটা হিয়ানের কানে আসার সাথে সাথে ও হঠাৎ করেই গাড়িতে ব্রেক করে কিছুক্ষন থম মেরে বসে রইলো।তারপর অবাক চোখে অভির দিকে তাকালো।দেখলো অভির ঠোটের কোনে বাকা হাসি।
অভি ফোনটা পকেটে রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পাশে তাকাতেই দেখলো হিয়ান প্রশ্নবোধক চাহনিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।হিয়ানকে এভাবে তাকাতে দেখে অভি ওর ঘাড়টা একটু বাকা করে একটা শয়তানি হাসি দিলো।এতেই হিয়ান যা বোঝার বুঝে গেলো। হিয়ানও সামনের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার গাড়িতে ষ্টার্ড দিয়ে স্পিড বাড়িয়ে দিলো।
।
এদিকে দিশার চিৎকার শুনে আলিশা দৌড়ে কেবিন থেকে বাইরে বের হয়ে আসলো।এসে দেখলো দিশা ফ্লোরে পড়ে আছে ওর মাথার পিছন ব্লাড পড়ছে।দিশার পাশেই হাতে হকিষ্টিক নিয়ে ওদের কেবিনের বাইরে যে দুজন গার্ড দাড়িয়ে ছিলো তারা দাড়িয়ে আছে।আলিশা অবাক হয়ে একবার দিশার আরেকবার ওই গার্ড গুলোর দিকে তাকালো।ও বিশ্বাসই করতে পারছে না,ওদেরই গার্ডরা এভাবে দিশাকে মেরেছে।আলিশা দৌড়ে দিশার কাছে আসতে যাবে তার আগেই দিশা একহাত দিয়ে নিজের মাথাটা চেপে ধরে আলিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে চিল্লিয়ে বললো
“আপি এখানে এসো না প্লিজ।তুমি মেঘের কাছে যাও।ওকে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যাও।এরা হয়তো মেঘকে মারতে এসেছে।”
দিশার কথা শুনে গার্ড গুলো পিছনে তাকালো দেখলো পিছনে আলিশা দাড়িয়ে আছে।ওরা দৌড়ে গিয়ে আলিশাকে ধরতে যাবে তার আগেই আলিশা দৌড়ে কেবিনে ঢুকে দরজা লক করে দিলো।কিন্তু লাভ হলো না।ওরা চার পাচ জন গিয়ে দরজাটা ভেঙে ফেললো।
আলিশা মেঘকে নিয়ে জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলো, ঠিক তখনই কেউ এসে ওর মাথায় জোড়ে একটা বাড়ি মারলো।ও সাথে সাথে ধপ করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।তারপর নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে দেখলো সেই লোকগুলো মেঘের মুখে ক্লোরফর্ম দিয়ে অঙ্গান করে নিয়ে যাচ্ছে।আলিশার চোখের কোনা দিয়ে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।ও বিরবির করে বললো
“তুমি কেনো চলে গেলে আহান ভাইয়া?দেখো তুমি যাষ্ট কয়েকটা দিন নেই তাতেই সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।প্লিজ তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে ফিরে আসো।”
এইটুকু বলতেই আলিশার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো, ওর শরীরটা একদম নিস্তেজ হয়ে গেলো।
_________________________
চোখে মুখে পানির ঝাপটা পড়তেই মেঘ পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো।মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে।চোখের মধ্যে জ্বলে যাচ্ছে,ভালো করে তাকাতে অবদি পারছে না।ও কোনো রকম সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো কালো মুখোশ পড়া একটা ছেলে ওর সামনে চেয়ারে বসে আছে।আর তার পিছনে ওই রকম সেইম কালো মুখোশ পড়া চার পাচ জন ছেলে দাড়িয়ে আছে।মেঘ এদের দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো।এইভাবে চোখের সামনে হঠাৎ করে এতোগুলো ছেলেকে মুখোশ পড়া অবস্থায় দেখে ওর হাত পা কাপতে লাগলো।কপাল দিয়ে দড়দড় করে ঘাম ঝরতে লাগলো।
মেঘের এমন অবস্থা দেখে লোকগুলো হাহা করে হাসতে লাগলো।চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটা হাসতে হাসতে ব্যাঙ্গ করে বললো
“এই মেয়ে নাকি আবার আহান খানের গার্লফ্রেন্ড?যে আহান খানকে পঞ্চাশ জন মানুষ একসাথে এ্যাট্যাক করলে ভয় পায়না,তার গার্লফ্রেন্ড মাএ এই কয়েকজন ছেলেকে দেখেই ভয় পেয়ে গেলো।”
কথাটা বলেই লোকটা অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো।সাথে পিছনের লোকগুলোও হাসতে লাগলো।এদের এভাবে হাসতে দেখে মেঘ ভয়ে কেদে দিলো।ওকে কাদতে দেখে ছেলে গুলো হাসি থামিয়ে দিলো।চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটা মেঘের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“হাই আমি সিয়াম।ব্লাক স্নেক গ্যাংয়ের লিডার।সেদিন রাতে তোমাদের উপর যারা অ্যাট্যাক করে ছিলো তারা আমার দলের লোক ছিলো।আসলে সেদিন ওরা একটা ভুল করেছিলো।আহান খান কে মেরে ফেলেছিলো বাট তুমি ভাগ্য ক্রমে বেচে গিয়েছিলে।তাই আমি এখন ওদের ভুলটা সোধরানোর জন্য তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম।উহুম একদম ভয় পেও না আমি তোমাকে এতো সহজে মারবো না।তীলে তীলে কষ্ট দিয়ে মারবো।”
“আহান খানকে মেরে ফেলেছিলো” কথাটা কানে আসতেই মেঘের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।ওর সামনের সব কিছু ঘুড়তে লাগলো।হাত পা সব অবশ হয়ে গেলো।ও ষ্টাচু হয়ে বসে ভাবলেশীন দৃষ্টিতে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইলো।ওর চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়তে লাগলো।ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সিয়াম নিজের হাতটা সড়িয়ে নিয়ে এসে একটু আফসোস করার ভান করে বললো
“আহারে বেচারী আহান খানের মৃত্যুর কথা শুনে শোকে একদম পাথর হয়ে গেছে,,হ্যান্ড শেকটা অবদি করতে পারছে না।থাক বেবি তোমাকে এতো কষ্ট পেতে হবে না।চিন্তা করো না,আমি তোমাকেও খুব তাড়াতাড়ি আহান খানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করবো।”
সিয়ামের কথায় মেঘের কোনো নড়চর হলো না।ও ওভাবেই ষ্টাচু হয়ে বসে রইলো।সিয়াম মুখ বাকিয়ে ওর পিছনে থাকা ছেলে গুলৌকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“বুঝলি মেডামের মনে হয় বিশ্বাস হচ্ছে না,,ওনার বয়ফ্রেন্ড আর বেচে নেই।আচ্ছা কোনো ব্যাপ্যার না আমরা প্রমান সাথে করেই নিয়ে এসেছি।”
বলেই ওর প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও ওপেন করে মেঘের সামনে ধরলো।ভিডিওটায় সেই ডেড বডিটার দাফনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।সাথে বাড়ি লোকদের সবার কান্নাকাটির ভিডিও।আর ডি.এন.এ. টেষ্টের রিপোর্ট দেখে যে ডক্টরেরা কনফার্ম করে বলেছিলেন এটা আহানেরই লাশ সেই সব কিছু ভিডিওটার মধ্যে ক্যাপচার করা হয়েছে।মেঘ সম্পূর্ন ভিডিওটা দেখে হাউমাউ করে কেদে দিলো।এতোকিছু হয়ে গেছে অথচ ও এখন পযর্ন্ত কিচ্ছু জানতে পারলো না!মেঘের আর বুঝতে বাকি রইলো না এইজন্যই ওকে এতোদিন কেউ আহানের সাথে দেখা করতে দেয়নি।
মেঘকে এভাবে কাদতে দেখে সিয়াম একটা শয়তানী হাসি দিলো তারপর মেঘের দিকে একটু একটু ঝুকে বললো
“এটুকুতেই এভাবে কেদো না বেবি।তোমার জন্য তো আরো কষ্ট অপেক্ষা করছে।জানো তোমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে?কারন প্রথমে তোমাকে আমার দলের এই ছেলে গুলোর বেড পার্টনার করা হবে তারপর সেই প্রাইভেট মোমেন্টের ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেওয়া হবে।”
সিয়ামের কথা কানে আসতেই মেঘের কান্না অটোমেটিক থেমে যায়।ও ভয়ার্ত চোখে সিয়ামের দিকে তাকালো।ওকে এভাবে তাকাতে দেখে সবাই আবারও হাহা করে হেসে দেয়।মেঘ কি করবে বুঝতে না পেরে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে ছেলে গুলো যে দিকে দাড়িয়ে ছিলো তার বিপরীত দিকে ঘুড়ে জোড়ে একটা দৌড় দেয়।
মেঘ হঠাৎ যে এইভাবে দৌড় দিবে সেটা ওরা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।ওরা ভেবে ছিলো মেঘ অনেক দূর্বল তাই ওরা কেউ মেঘের হাত-পা বাধেনি।
মেঘ দৌড় দিতেই ছেলেগুলো দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরে ফেলে।মেঘ ছেলেগুলোর হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে।কিন্তু ওদের চারপাচ জনের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।সিয়াম বসা থেকে দাড়িয়ে মেঘের সামনে এসে ওর গার্ল জোড়ে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো
“এখান থেকে পালানো এতো সহজ না বেবী।আর একবার যখন তোমাকে ধরতে পেরেছি তখন প্রান নিয়ে আর এখান থেকে বের হতে পারবে না।আগে তোমার সম্মান নিবো তারপর তোমার প্রানটা।”
বলেই মেঘের গালটা ছেড়ে দিয়ে একটা ছেলেকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“যাহ ইনজেকশনটা নিয়ে আয়।”
ছেলেটা সিয়ামের কথায় সম্মতি জানিয়ে রুম থেকে বাইরে চলে গেলো।তারপর কিছুক্ষন পর হাতে একটা ইনজেকশন নিয়ে আবার ফিরে এলো।ইনজেকশন দেখেই মেঘ ভয়ে আবার কেদে দিলো।ওর বুকের মধ্যে হাতুরি পেটাতে লাগলো।
সিয়াম ছেলেটার হাত থেকে ইনজেকশনটা নিয়ে মেঘের হাতে পুশ করলো।ইনজেকশনটা পুশ করার সাথে সাথে মেঘ একটা চিৎকার দিলো যেখানে ইনজেকশনটা পুশ করা হয়েছে সেখান থেকে ওর হাত জ্বলে যাচ্ছে।ইনজেকশনটা পুশ করতেই ছেলে গুলোও ওকে ছেড়ে দিলো।মেঘ হাতটা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে কাদতে লাগলো।সিয়াম ওর পাশে হাটু ভেঙে বসে বললো
“খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?হাতের মধ্যে নিশ্চয়ই খুব জ্বালা করছে?বাট ডোন্ট ওয়ারি,আস্তে আস্তে সব কিছু ভালো লাগবে।”
মেঘ কাদতে কাদতে বললো
“এটা কিসের ইনজেকশন ছিলো?আমার হাত এতো জ্বলছে কেনো?”
“ওটা ড্রাগস ছিলো।যেটা তোমার শরীরে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে আর তুমি একদম শান্ত হয়ে যাবে।”
বলেই সিয়াম বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে সেই ছেলে গুলোকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আমি এখন যাচ্ছি।তোরা তোদের কাজ শেষ করে এই মেয়েটার হাত-পা বেধে এখানেই ফেলে রাখবি।”
কথাটা বলে সিয়াম রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
#চলবে,,,,,,
বিঃদ্রঃছোটখাটো একটা অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলাম তাই হাত কেটে গিয়েছিলো।সেইজন্য এই পর্বটা দিতে একটু বেশিই দেড়ি হয়েছে।আর আজকে মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। সন্ধ্যায় অনেক কান্নাও করেছি,তাই যদি কারো ভালো না লাগে তাহলে কোনো কমেন্ট করবেন না।বাট প্লিজ কেউ “এতো দেড়ি হয়েছে কেনো?”
“আপনি গল্প এতো লেইটে দেন কেনো?”এই টাইপের কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকবেন।