এক তুমিতে আসক্ত – পর্ব ১০

0
481

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ১০
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৭১.

অর্ষা প্রান্তিক আভেশ প্রিয়ন্তি তৈরী হয়ে নিচে নেমেছে। একটু পর বের হবে সিনাইঝড়ির উদ্দেশ্যে।
“প্রান্তিক আরো ভেবে ওইখানে গেলে হতোনা?প্রান্তিক হাতের ট্রলি টা ঠিকভাবে নিতে নিতে বললো,” আব্বু এইখানে আর কিছুই ভাবনা চিন্তা করার নেই। আমি ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মনিশা চৌধুরী পাশ থেকে বললেন,”হেরে বাবা কাপড়চোপড় সব গুছিয়ে নিয়েছিসতো?
“হুম আম্মু” অর্ষা মনিশা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বললো,”খালামনি নিজের যত্ন নিও৷ খালুজান আপনিও। মনিশা চৌধুরী আর ফরহাদ চৌধুরী হেসে বললেন,”হুম মা তুমিও নিজের যত্ন নিও”। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে অর্ষাকে গুটিয়ে গুটিয়ে দেখছে। “মেয়েটা অতি সাধারণ একটা টপ আর জিন্স পড়েছে। হাতে কালো ফিতার ঘড়িটা। ” কি প্রান্তিক চল যেতে যেতে রাত হয়ে যাবেতো তুই এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে”। আভেশের কথায় প্রান্তিক নিজেকে তড়িঘড়ি করে সামলে নিয়ে বললো,”হুম হুম চল।

৭২.

অর্ষা আর প্রিয়ন্তি বসেছে পেছনে। সামনে গাড়ি ড্রাইভ করছে প্রান্তিক। আর তার পাশে বসে আছে আভেশ। অর্ষা গাড়ির ছোট আয়নাতে চোখ ফেলতেই দেখলো প্রান্তিক হেসে হেসে আভেশের সাথে কথা বলছে আর ড্রাইভ করছে। অর্ষা মনে মনে ভাবছে,”আসলেই প্রান্তিক ভাইয়া অনেক সুন্দর। চুলগুলো কিছুটা লাল আর সিল্ক করা। বার বার বাতাসের জন্য ভ্রুতে গিয়ে পড়ছে চুলগুলো। ব্লু টি শার্ট পড়েছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে ঘড়ি। সবমিলিয়ে একদম ঠিকঠাক। হঠাৎ প্রান্তিক আয়নাতে তাকাতেই অর্ষা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললো। কিন্তু প্রান্তিক সবই দেখছিলো৷ প্রান্তিক মিনমিনেয়ে হেসে মনে মনে বললো,”It’s Not Bad”

৭৩.

মামনি…ঢাকায় যাবে? সাহেরা বেগমের কথা শুনে তাইফা। মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে..জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে বললো,”থাকনা মা কি দরকার? মামার এতো কথা শুনতে?
“ভাইজান আমার সাথে এমন করে তাতো জানিসই কেনো। থাকনা বাদ দে। কিন্তু হাজার হোক আমারিতো ভাই। আজকে কতো বছর ধরে দেখিনা তাদেরকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন সাহেরা বেগম।
তাইফা মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” চিন্তা করোনা মা। আমি একদিন তোমাদের মধ্যে সব বিবাদ ভেঙে দিবো। এখন খেতে দাওতে খাবো৷
“সাহেরা বেগম চোখের পানি মুছে বললো,” হুম মা আয়”.

৭৪.

সরদার বাড়িতে আজ নানারকম আয়োজন হচ্ছে। শহর থেকে মানুষ যাবে বলে কথা। নাফিস সাহেব খুশিতে ব্যগ ভর্তি বাজার নিয়ে এসেছেন। রাহেলা বানু.. উনুনে পোলাও বসিয়েছেন আর সব সব্জি কোটছেন।
অর্ষারা গাড়ি থেকে নামতেই..সারা গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এসে গাড়ি দেখছে। এইরকম গাড়ি তারা আগে কখনো দেখেনি শুধু শুনেছে শহরে নাকি অনেক বড় বড় গাড়ি আছে। নাফিস সরদার..মেয়েকে দেখেই এসে জড়িয়ে ধরেন। অর্ষা কান্না করে দেয়।

“কেমন আছো আম্মা?
” ভালো আছি আব্বা আপনি কেমন আছেন?
“তোমাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না আম্মা তোমারে দেইখা ভালা হয়ে গেছি। বাবা মেয়ের এমন সুন্দর মুহুর্ত প্রান্তিক আভেশ প্রিয়ন্তি সহ উপস্থিত সবাই মুগ্ধ নয়নে দেখছে। রাহেলা বানু মাইয়ারে জড়াই ধরছে। প্রান্তিক আর বাকিরা সালাম দিয়ে কৌশল বিনিময় করেছে। নাফিস সরদার মুচকি হেসে সবাইকে বললেন,” যাও বাজান আর আম্মারা তোমরা গিয়ে হাত -মুখ ধুয়ে নাও। আমরা খাবার রেডি করছি। প্রান্তিক অর্ষাকে ইশারায় টিউবওয়েল চেপে দিতে বললো। অর্ষা প্রান্তিক কে বাড়ির পেছনে টিউবওয়েলে নিয়ে যায়।

“গ্রাম কতো সুন্দর তাইনা অর্ষা?
” হুম তবে উন্নয়ন বেশ কম।
” প্রান্তিক মুখে পানি দিয়ে বললো,তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি চেপে দিচ্ছি।
“না না আপনি পারবেন না। এইসবেতো আপনি অভ্যস্ত নন। প্রান্তিক চোখ রাঙাতেই অর্ষা ভয়ে ভয়ে বললো,” ইশ আচ্ছা আসুন”। এরপর অর্ষা টিউবওয়েলের অপর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ ধুয়ে পিচলা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই প্রান্তিক কোমড়ে ধরে ফেলে। অর্ষা আর প্রান্তিক একে অপরের দিকে অপলোকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কারো খকখক কাশির শব্দে তড়িঘড়ি করে অর্ষা দাঁড়িয়ে ওড়না ঠিক করে নেয়। আর প্রান্তিক চুলগুলো উল্টোতে লাগলো। পেছনে তাকিয়ে দেখে আভেশ না দেখার ভঙ্গিতে বললো,”না মানে আমি ফ্রেশ হতে এসেছিলাম।

৭৫.

“মা আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এন্ট্রি নিতে চায়। তাইফার কথা শুনে সাহেরা বেগম বললেন,” হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলি যে?
“ওইখানে পড়াশোনা ভালো অনেক তাই।
” ঠিক আছে মা। কিন্তু থাকবি কোথায়?
“হোস্টেলে”
“আচ্ছা বেশ।
” কাল সকালেই রওনা দিবো।

তাইফা নিজের রুমে এসে কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে আর ভাবছে,”কাল একটা নতুন সুর্য উদয় হবে। যে সূর্য সাক্ষী থাকবে এই পণের যে,আমি ভাই বোনের জড়ো হাওয়া সব ভেঙে দিবো। যার উদ্দেশ্যে পা রাখবো আমি ঢাকা শহরে।

৭৬.

খাওয়া দাওয়া শেষে অর্ষা গিয়ে ছাদে দোলনায় বসে আছে। আর বাকিরা সবাই রেস্ট নিচ্ছে। দুতলা ভবন বিশিষ্ট এই গ্রামে এই বাড়িটি খুব শখের সঙ্গে তৈরী করেছিলেন অর্ষার বাবা। গ্রামে সবাই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও,নাফিস সরদারের সম্পূর্ণ আদেশ চলিত ভাষা কথা বলতে হবে।

“অর্ষা…কারো ডাকে পিছনে তাকায় সে। প্রান্তিক তার দিকেই আসছে।

” আপনি এখন এইখানে? গিয়ো রেস্ট নিন ভাইয়া।
“ওহু ভাল লাগছেনা তাইতো তোমার সাথে গল্প করতে এসেছি। আচ্ছা অর্ষা সাহিল কে? প্রান্তিকের মুখে সাহিল নামটা শুনতেই চুপসে যায় অর্ষা। এই বুঝি সাহিল তার আশেপাশেই তাকে দেখছে। হঠাৎ প্রান্তিক কে জড়িয়ে ধরে সে। প্রান্তিক অর্ষার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,” কুল ডাউন অর্ষা। কিছু হবেনা। আমি আছিতো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here