দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৩০

0
350

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৩০

শপিংমল থেকে বেড়িয়ে গোধূলি আর আহান বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। দীপ্ত এখনো আসে নি।আহানকে বলল,তোরা যা আমি আসছি।সেই যে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তের আসার নামই নেই।অপেক্ষা করতে করতে শেষে আহান দীপ্তকে কল করে।

– এই দীপ্ত কোথায় তুই?সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

…….

– ওহ!আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা তাহলে চলে যাই।

…….

– ওকে বাই।
– কি হলো দাভাই?
– না তেমন কিছু না।দীপ্ত বলল ও নাকি কি কাজে আটকে গেছে।
– এইখানে আবার কি কাজ?
– হতে পারে ওর কোনো পারসোনাল কাজ!
– ঠিক আছে বাসায় চলো।

____________

আপন মনে ড্রাইভ করছে আহান।আর গোধূলি ভাইয়ের পাশে বসে কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।হঠাৎই তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।উতলা কন্ঠে বলল,

– দাভাই তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।
– কি কথা!
– মিহির আজকে আসতে পারবে না।
– তো?
– লাজুবু কিভাবে আসবে?
– কেন?গাড়ি দিয়ে।
– মামা অফিসের কাজে চিটাগং গেছে। মিহির আর আমার কমন ফ্রেন্ড আছে না ইনান?ওর বোনের বার্থডে পার্টি আছে সন্ধ্যায়। ওদের বাসাটা একটু দূরে তো তাই মিহির একটু আগে আগেই চলে গেছে।এখন লাজুবু কার সাথে আসবে?আমি লাজুবুকে ছাড়া তো কালকের ইভেন্টের কোনো প্ল্যানিংই করতে পারবো না!
লাজুবুর তো আজকে আসার কথা ছিল।

– তা লাজুকলতাকে ছাড়া তার ড্রেস কিভাবে কিনলি?

আহান কথাটা শেষ করেই চোখ বন্ধ করে জিভে কামড় দেয়।ইশশ কি বলে দিলো।ও মুখ ফসকে লাজুককে লাজুকলতা বলে ফেলেছে।যেটা মনে ছিল সেটাই বেড়িয়ে এলো!আহান চটজলদি গোধূলির দিকে তাকায়।গোধূলি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আহান মেকি হেসে গলা ঝেড়ে বলল,

– না!আই মি’ন তোর লাজুবু!
– দাভাই কি ব্যাপার হুম?

গোধূলি আহানের দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে কথাটা বলল।আহান ফিচেল হেসে বললো,

– কিসের ব্যাপার?
– লাজুকলতা!

আহান থতমত খেয়ে যায়।গোধূলি আহানের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ফের বললো,

– লাজুকলতা নামটা খারাপ না,ভালোই।লাজুবুর ড্রেসের সাইজ আমি ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম।এবার তাড়াতাড়ি আমাকে ড্রপ করে দিয়ে তোমার লাজুকলতাকে আনতে যাও।

গোধূলির কথা শুনে আহান একটু অবাক চোখে গোধূলির দিকে তাকায়।গোধূলি কথাটা বলেই চটজলদি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়।মুখ টিপে হাসছে ও।গোধূলির হাসার কারণ আহান বুঝে গেছে।ওর বোনটা তো আর বোকা না,যে ওর কথার মানে বুঝবে না।বোনের কাছে ধরা পড়ে গেছে এবার।আহান গোধূলির কথার প্রত্যুত্তরে কোনো কিছু বলতে পারলো না।শুধু মৃদু হেসে আবার ড্রাইভিং এ মন দিলো।

________________

– আম্মু কিছু খেতে দাও অনেক ক্ষুধা…..

লাজুক ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।কথা বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসতে যাবে ঠিক তখনই দেখতে পায় এক জোড়া চোখ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।সামনে থাকা ব্যক্তিটির উপর থেকে নজর সড়িয়ে নিজের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো লাজুক।আহ্!বলে এক চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায়!

আহান আহাম্মকের মতো বসে আছে।ঘটনাটা কি হলো কিছুও বুঝতে পারছে না।সোফায় বসে ফোন টিপছিল আহান।লাজুকের গলা শুনে ওর দিকে তাকায়।আহান লাজুককে বরাবরই থ্রিপিস বা চুড়িদারে দেখেই অভ্যস্থ।কারণ ওদের বাসায় গেলে ও সবসময় ওইসব পরেই যায়।কিন্তু আজকে লাজুকের পড়নে টিশার্ট আর স্কার্ট ছিল যেটা আহান আজই প্রথম দেখছে।ভেজা খোলা চুলে লাজুককে খুবই আবেদনময়ী লাগছিল।আহান একটু অবাকের সাথে মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে ছিল।

– আজব!ও কি আমাকে আর কোনোদিন দেখে নি নাকি।আমাকে দেখে এমন ভূত দেখার মতো চেঁচানোর কি আছে।আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ যে আমাকে দেখে….

বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছিল আহান।কিন্তু কথা শেষ করার আগেই লাজুকের মা চলে আসে।আহানের হাতে কফির মগ দিতে দিতে জিজ্ঞাস করেন,

– আহান লাজুক এইভাবে চিৎকার করে উঠল কেন?
– কি জানি মামী!
– ভয় পেয়েছে?

লাজুকের মায়ের প্রশ্ন আর আহানের কফির মগে চুমুক দেওয়া একসাথে।আর লাজুকের মায়ের কথা শুনে বিষম খেয়ে যায় আহান।লাজুকের মা ব্যাতিব্যস্ত হয়ে আহানের মাথায় ফু দিতে দিতে জিজ্ঞাস করেন,

– আহা রে!বাবা তুমি আবার বিষম খেলে কি করে?
– কি করে আবার!আপনার কথা শুনে!

দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিনে স্বরে কথাটা বলে আহান।লাজুকের মা ভ্রুকুটি করে বললো,

– কিছু বললে বাবা?

আহান মেকি হেসে বলল,

– না মামী!কিছু বলি নি তো!আসলে কফিটা একটু বেশি গরম ছিল তো তাই মনে হয় বিষম খেয়েছি!

– ওহ!হবে হয়তো। আচ্ছা তুমি সাবধানে খাও আমি বরং একটু গিয়ে দেখে আসি লাজুক হঠাৎ কেন এইভাবে চিৎকার করে উঠলো।

– আচ্ছা,ওহ মামী শুনোন।
– কিছু বলবে?
– লাজুককে বলবেন একটু তাড়াতাড়ি করে আসতে। বুঝতেই পারছেন বাড়িতে এখনো অনেক কাজ করার বাকি।লাজুককে বাসায় ড্রপ করে আমাকে আবার একটু রিসোর্টে যেতে হবে।
– ঠিক আছে তুমি বস।আমি বলে আসছি।

______________

– তা লাজুকলতা তখন ওইভাবে চিৎকার করে উঠেছিলে কেন?

ড্রাইভিং এর মধ্যেই হঠাৎ করে আহানের প্রশ্ন শুনে থমকে যায় লাজুক।ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।তখন লাজুকের কি হয়েছিল ও নিজেই জানে না! আহানের সামনে টিশার্ট আর স্কার্ট পড়ে গিয়েছিল।আহানের দিক থেকে দৃষ্টি অনুসরণ করে লাজুক যখন ওর দিকে তাকায় তখন ওর নাভীর বেশ ক্ষানিকটা অংশ দেখা যাচ্ছিল বলে হয়তো লজ্জা পেয়ে চিৎকার করে দেয়।কিন্তু সেই কথা কি আর এখন বলা যাবে!অনেকক্ষণ হয়ে গেছে লাজুকের কোনো উত্তর না পেয়ে আহান আবার জিজ্ঞাস করে,

– কি হলো বললে না তো?
– আমি টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!

লাজুকের কথা শুনে একটু না অনেকটাই অবাক হয় আহান।গাড়ির ব্রেক কষায় লাজুক কিছুটা ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞাস করে,

– কি হলো ভাইয়া গাড়ি থামালেন কেন?
– এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড!ইউ মিন আমি টিকটিকি?
– কি!মানে?
– এইমাত্রই তো তুমি বললে আমি টিকটিকি!
– এমা না ছিঃ ছিঃ।আপনি কেন টিকটিকি হতে যাবেন!
– তখন তো তুমি আমাকে দেখেই চিৎকার করলে!তাহলে তো তুমি আমাকেই টিকটিকি ডাকলে।
– আমি আপনাকে টিকটিকি বলি নি ভাইয়া।
– না তুমি আমাকে বলেছ!
– না ভাইয়া!
– না তুমি আমাকেই বলেছি।
– বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি আপনাকে দেখে চিৎকার করি নি। আমি আসলে আমার নাভ……
– কি কি?তুমি আসলে তুমার?

…..

– চুপ করে গেলে যে?বলো কি বলতে চাচ্ছিলে!

ভয়মিশ্রিত লজ্জায় লাজুক কিছু বলতেই পারছে না।আহান লাজুকের অবস্থা বুঝতে পেরে লাজুক লজ্জা পেয়েছে।আহান কোনো কথা না বলে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে।মাথা নিচু করে বসে আছে লাজুক।ক্ষণে ক্ষণে আড়চোখে আহানের দিকে তাকাচ্ছে।একপর্যায়ে চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয় লাজুক।লাজুকের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে আহান।লাজুককে স্বাভাবিক করতে আহান গাড়িতে থাকা কিছু ফাইল লাজুককে দেখিয়ে বলে,

– লাজুক এই ফাইলগুলো একটু আমাকে পড়ে শুনাও তো!

এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাকে বলে আরকি।আহানেরও কাজ হয়ে যাবে আর লাজুকেরও লজ্জা গুছবে!আহানের কথা মতো লাজুক সব ফাইল একে একে পড়ে শুনালো।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here