দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৩২

0
329

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩২

– কিস করতে হবে?

– ডেয়ার লেখার সময় মনে ছিল না?আর এই অদ্ভুত নিয়ম তো তুইয়েই বানিয়েছিস!তো এখন কি হলো?

আহান দীপ্তের দিকে বিরক্তিকর লুক দিয়ে বলে কথাটা।দীপ্ত বিস্ময়ের সাথে বললো,

– আমি এই রকম কিছু লেখি নি আহান।আচ্ছা বাদ দে,গাইস সবাই আমাকে একটা কথা বলো তো এই ডেয়ারটা যদি তোমাদের কারো কাছে যেতো তাহলে তোমরা কি করতে?ইফতি ভাইয়া আপনাকে দিয়েই শুরু করি বলুন আপনি কি করতেন!

– আমি তো ডিরেক্ট কিস করে দিতাম!

বেটা খাচ্ছর তুই তো কিস করবিই!তোর তো কাজেই সারাদিন মেয়েদের সাথে চিপকে থাকা!অসভ্য ছেলে কোথাকার!দীপ্ত মনে মনে ইফতিকে বকাঝকা করে গলা ঝেড়ে বলে,

– গুড!আচ্ছা রুহি আপু আপনি কি করতেন?

– আমিও হয়তো কিসই করতাম!যদি বাছাইকৃত মানুষটি আমার কাছের কেউ হতো তাহলে।তবে সেটা অবশ্যই আমার জন্য দুঃসাহস দেখোনো হয়ে যেত। তবে আমি কিন্তু ডেয়ার না ট্রুথ নিতাম!ডেয়ার নেওয়ার মতো সাহস আমার নেই ভাই।

– ওকে!আপনার কথাগুলোর গভীরতাটা মনে হচ্ছে একটু বেশিই!আপনার উত্তরটা ঠিক কিভাবে নিবো বুঝতে পারছি না!যাকগে তারপরেও আমরা এটাকে এক ধরনের উত্তর হিসেবে নিতেই পারি।আদিবাপু তুমি বলো।

– আমার ক্যান্ডিডেট কোনো ছেলে হলে ট্রুথ নিতাম আর মেয়ে হলে একটু ভেবে দেখতাম।তখন আমার মুড যে রকম থাকতো সেটার উপর ডিপেন্ড করে চুজ করতাম!

– দ্যাটস গুড!তারপর সিফাত ভাইয়া আপনি?

দীপ্ত একে একে সবার মতামত নেয়।যার যার জায়গায় থেকে সবাই নিজের অপিনিয়ন রেখেছে।কারোরটা যৌক্তিক আবার কারোরটা এক মোটামুটি।দীপ্ত ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

– তাহলে তোমাদের সবার মতামত নিয়ে এটা বুঝতে পারলাম এখানে প্রায় অর্ধেকের বেশি কিস করার পক্ষে আর অন্যরা বিপক্ষে।আর আমার উত্তরও কিন্তু কিস করার পক্ষেই!কারণ এটা খেলার নিয়ম।সো এখন আমার কি করা উচিত গোধূলি?

দীপ্তের মুখে গোধূলি ওর নাম শুনে আঁতকে উঠে।ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।শুধু নিচ দিকে তাকিয়ে ওড়নাটা শক্ত করে মুঠি দিয়ে ধরে রেখেছে।ও তো ডেয়ার নিতোই না!শুধু শুধু ইহানটা ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।গোধূলি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে সেই কখন থেকে।একবারের জন্যও মাথাটা উপরে তুলে নি!

– যেহেতু এটা খেলারই একটা অংশ সো গোধূলি তোকে ডেয়ার কমপ্লিট করতে হবে।এত লজ্জা পেলে খেলতে আসিস কেন?আগেই বলেছিলাম তুই বাচ্চা মেয়ে যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!কিন্তু আমার কথা শুনিস নি।এখন খেলার নিয়ম অনুযায়ী ডেয়ার কমপ্লিট কর!

– একটা কিস তো গোধূলি করে দাও না!

– এই সোনিয়া কি বলছিস তুই?দেখতে পাচ্ছিস না গোধূলি লজ্জা পাচ্ছে!যতোই খেলার নিয়ম হোক না কেন কিস এর মতো একটা সেনসেটিভ বিষয় এইভাবে আমাদের বড়দের সামনে…না মানে এটা কেমন দেখায় না!

– আরে রুহি তুই ব্যাপারটাকে কমপ্লিকেটেট কেন করছিস?দীপ্ত তো গোধূলির ভাইয়েই হয়!সো ভাইকে কি বোন কিস করতে পারে না?ছোট বোন বড় ভাইকে কিস করবে এখানে আমি লজ্জা পাওয়ার মতো তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না।গোধূলি আমি কি ভুল বললাম?

সোনিয়ার কথা শুনে গোধূলি কাঁদোকাঁদো মুখ নিয়ে দীপ্তের দিকে তাকালো। গোধূলির এখন ঠিক কি অবস্থা দীপ্ত ঠিক বুঝতে পারছে।গোধূলি যে ডেয়ার নিতো না সেটাও দীপ্ত খুব ভালো করে জানে।শুধু মাত্র ইহানের জন্য বেচারির এখন এই হাল।গোধূলির এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে দীপ্ত ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে বলে,

– আচ্ছা যা তোকে এই ডেয়ার কমপ্লিট করতে হবে না।কিন্তু তোকে অন্য ডেয়ার নিতে হবে।এই আহান একটা চিরকুট তুল তো।তোর বোন যে ভীতু!

আহান একটা চিরকুট তুলে সোজা দীপ্তের হাতে দিলো।দীপ্ত চিরকুটটা খুলে দেখল ওটাতে কি লিখা আছে!

– আচ্ছা গোধূলি আগে এটা বল তো তুই কি আদৌ গান টান কিছু গাইতে পারিস?

– কেন?

– কারণ এখানে ডেয়ার দেওয়া আছে যে গান গাইতে হবে।কিন্তু তোকে দেখে তো মনে হয় না গান টান কিছু জানিস বলে।

– এই দীপ্ত একদম আমার বোনকে জাজ করবি না! আগে শুনে তারপর কথা বলবি।সাজি তোর গান দিয়ে দীপ্তের মুখটা এক্কেবারে বন্ধ করে দে তো!

– আহান ঠিকই বলেছে গোধূলি।তুমি এবার একটা গান ধরো তো দেখি!অনেকেই হয়তো জানে না তুমি ঠিক কত গুনে গুণান্বিত!

– কিন্তু ইফতি ভাইয়া……..

– প্লিজ গোধূলি!

– ওকে!আমি চেষ্টা করছি!

গলা ঝেড়ে নিয়ে গোধূলি যেই গানটা গাইতে যাবে ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেলো।সবাই হতাশা নিয়ে গোধূলির দিকে তাকিয়ে আছে।গোধূলি ইতস্ততভাবে বললো,

– আরে তোমরা সবাই আমার দিকে এইভাবে কেন তাকিয়ে আছো।কারেন্ট চলে গেছে, আমি না!অন্ধকারেও তো গানটা গাওয়া যাবে।এই ছোটদা তুই বরং কয়েকটা মোমবাতি নিয়ে আয় গিয়ে।অবশ্য আজকে চাঁদনী রাত।তারপরেও অন্ধকারে অনেকের বোরিং ফিল হতে পারে। যা তাড়াতাড়ি করে।

___________________

– এই যে আলো এসেছে।নে এবার তোর গান শুরু কর বোন।তোর এই ডেয়ারের চক্করে অনেকটা সময় চলে গেছে।কারেন্ট চলে এলে সবাইকে নিচে যেতে বলেছে আব্বু।

– কেন?

– জানি না।আব্বু সবাই যেতে বলল!

– আচ্ছা ঠিক আছে ইহান তুমি আগে আমাদের সাথে জয়েন করো।গোধূলির গানটা আগেই শুনি তারপর এমনিতেই চলে যাবো।কারেন্ট আসার জন্য আর অপেক্ষা করবো না।

– দীপ্ত ভাইয়া তুমি ওইখানে কি করো?এইদিকে আসো।

এইদিকে ইহানের মোমবাতি নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছিলো বলে দীপ্ত উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুজে আকাশের ঝলমলে ওই পূর্ণিমার চাঁদটার দিকে তাকিয়ে ছিল।ইহানের প্রশ্নের উত্তরে বললো,

– আমি এইখানেই ঠিক আছি।

– গোধূলি তুমি এবার গানটা শুরু করো তো!

– জ্বি ভাইয়া।

_________________

“”””এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি ৷
জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে ৷
মনে হয় বাতাসের ওই দিলরুবাতে
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি ৷
এই রূপসী রাত আর ওই রুপালি চাঁদ বলে জেগে থাকো,
এ লগন আর কখনো ফিরে পাবে নাকো ৷
মখমলের ওই সূচনী ঘাসে,
বসলে না হয় একটু পাশে,
মনে হয় মহুয়ারি আতর মেখে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প। করি ৷
ও….এসো না গল্প করি ৷””””””

গোধূলির গান শেষ করতেই সবাই গোধূলিকে এত্ত এত্ত প্রশংসা করছে।কারণ গোধূলির গানটা সবারই খুব ভালো লেগেছে।সেটা সবার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

– বাহ অসাধারণ চমৎকার হয়েছে গোধূলি!তুমি যে এত ভালো গান গাইতে পারো সেটা তো আগে কখনো বলো নি!আদিবা তুইও তো কখনো বলিস নি তোর বোন এত ভালো গান গাইতে পারে।

– আরে মুক্তি আমি নিজেই জানি না সাজি এত ভালো গান গাইতে পারে!ওকে তো বাসায় শুধু গুনগুন করে গান গাইতে শুনি।

গান চলা কালীন দীপ্ত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল গোধূলির দিকে।একটা বারের জন্যও চোখ সড়ায় নি গোধূলির উপর থেকে।দীপ্তের ধারণাতেও ছিল না যে গোধূলি এত সুন্দর গান গাইতে পারে।

– গোধূলি তুমি তো জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছ!যেমন ওয়েদার আর পরিবেশ ঠিক তেমনই তোমার সিলেক্ট করা গান আর পরিবেশনা।সব মিলিয়ে অপূর্ব।দেখলে তো দীপ্ত অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়!

ইফতির কথার বিনিময়ে দীপ্ত শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একটু মুচকি হাসি দেয়।

– গোধূলি তোমার গান শুনে মনটা এক্কেবারে ভরে গেলো গো।খুব সুন্দর হয়েছে।

– থ্যাঙ্কিউ সোনিয়া আপু।চলো এবার নিচে যাওয়া যাক।বাবাই কেন ডাকলো গিয়ে শুনি।

সবাই একে একে ছাদ থেকে নেমে গেছে।দীপ্ত এখনও ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে।গোধূলি সবার পরে ছাদ থেকে নামছিল ঠিক তখনই দীপ্ত এসে গোধূলির হাতটা পিছন থেকে ধরে ফেলে।তাল সামলাতে না পেরে গোধূলি কিছুটা পিছিয়ে যায়।এবার গোধূলির হাত ছেড়ে দিয়েছে দীপ্ত।গোধূলির ঠিক পিছনে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্ত।দীপ্তের গরম নিঃশ্বাস গোধূলির ঘাড়ে পড়ছে।গোধূলি আঁতকে উঠে ওর জামাটা শক্ত করে মুঠি করে ধরে নেয়।দীপ্তের নিঃশ্বাস ক্রমশ ওর আরো কাছাকাছি মনে হতো লাগলো।গোধূলি লজ্জা আর ভয়ে কুঁকড়ে গেলো।চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছে।দীপ্ত গোধূলি অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসি দিয়ে গোধূলির দিকে একটু ঝুকে যায়!ল।দীপ্তের ঠোঁট গোধূলির কান প্রায় ছুঁইছুঁই!দীপ্ত গোধূলির কানে কানে ফিসফিস করে বলে,

– গানটা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে!

চোখ বুজে স্ট্যাচুর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গোধূলি।দীপ্তের গলার স্বর কানে যেতেই চোখ খুলে খুব ধীর গতিতে পিছনে ফিরে।গোধূলি পিছনে ফিরতেই দীপ্ত কিছুটা দূরত্বে চলে যায়। ঠোঁটের আগায় হাসি ফুটিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হুইসেল দিতে দিতে ছাদ থেকে চলে যায়।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here