দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৩

0
547

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩

দীপ্তের নাম এনাউন্স করার সাথে সাথেই দীপ্ত গোধূলির পাশ থেকে উঠে স্টেজের উদ্দেশ্যে চলে যায়।গোধূলি কোনো কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো দীপ্তের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।যিনি হোস্ট করছিলেন তিনি দীপ্তকে স্টেজে উঠতে দেখে উৎফুল্ল স্বরে বললো,

– ওয়েলকাম মিঃ দীপ্ত চৌধুরী।প্লিজ কাম!সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি,প্লিজ শান্ত হয়ে বসো সবাই।আমাদের মাঝে আমাদের স্পেশাল গেস্ট চলে এসেছে। মিট, মিঃ দীপ্ত চৌধুরী।আজকের কনসার্ট এর স্পেশাল গেস্ট।আজকের কনসার্টটা তিনিই করছেন।

হোস্ট একটু থেমে ফের বললো,

– তবে আরেকটা এনাউন্সমেন্টও আছে তোমাদের জন্য।অবশ্য পুরাতন যারা আছে তারা সবাই দীপ্তকে চিনে।বাট নবীনরা তো আর চিনে না।তাই নতুনদের উদ্দেশ্যে বলছি,দীপ্ত কিন্তু আমাদের ভার্সিটির এই স্টুডেন্ট ছিল।তাও আবার যে-সে স্টুডেন্ট না এক্কেবারে টপার স্টুডেন্ট।কথায় আছে না সর্ব গুণে-গুণান্বিত?সেটাই হলো এই দীপ্ত চৌধুরী।একাধারে ভার্সিটিতে টপ রেজাল্ট।খেলাধুলায় টপার আর গান তো আছেই।শুধু কি তাই? এই ছেলের উপর ক্রাশ শুধু যে মেয়েরা খেয়েছে তা কিন্তু নয়।ছেলেরাও কিন্তু দীপ্তের উপর ক্রাশ খেতো!লাইক সিরিয়াসলি গাইস?ভাবা যায়?একটা ছেলে মানুষ ঠিক কতটা সুদর্শন হলে ছেলেরাও ক্রাশ খেতে পারে?তবে আমাদের কাছে ক্রাশ বয় দীপ্তের আরেকটি গুণ…না ঠিক তেমনটাও নয়!তার থেকেও বেশি কিছু!না মানে আমাদের কাছে আরেকটি টপ সিক্রেট নিউজ আছে আর সেটি হলো……

এইটুকু বলেই উনি আবার থেমে যান।সবার মাঝে সাসপেন্স ক্রিয়েট করার জন্য!হলোও তাই।গোধূলি তো টাশকির উপর টাশকি খাচ্ছে।শুধু হতভম্ব হয়ে সব কথা শুনছে।কিছুক্ষণ পরে সবার মাঝে নীরবতা ভেঙ্গে উনি এনাউন্স করেই দিলেন!

– গাইস আমাদের দীপ্ত নাকি ডায়েরিও লিখে!ওই তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেলেও সেই ডায়েরির সন্ধান আজও কেউ পায় নি।সরি দীপ্ত ইয়ার,তোমার টপ সিক্রেট পাশ করে দিলাম!

দীপ্ত মুচকি হেসে উনার পিঠ চাপড়ে দিলেন।উনার কাছ থেকে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

– ইটস ওকে!বাট আরো একটা সিক্রেট তোমাদের জানা দরকার।আর সেটা হলো এই দীপ্ত চৌধুরী না চাইলে, দীপ্ত যে ডায়েরি লিখে এই তথ্যটাও কেউ পেত না!যাইহোক,আমরা আর কথা না বাড়াই।মূলপর্বে ফিরে যাওয়া যাক।কি স্টুডেন্টস আমার গান শুনবে তো তোমরা নাকি?

সবাই করতালি দিয়ে চিল্লাচিল্লি আর সিটি বাজাতে শুরু করলো।মানে তারা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওর গান শুনার জন্য।সেই কথাই জানান দিচ্ছে তাদের কার্যকলাপের দ্বারা!অন্যদিকে,এই এনাউন্সমেন্ট শুনার পর গোধূলির অবস্থা কে দেখে।ও তো ওর নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছে না।সিরিয়াসলি!ক্রাশবয়?অবশ্য হতেই পারে!দীপ্ত তো আর দেখতে শুনতে খারাপ না।কিন্তু এই এটিটিউটওয়ালার দোকান গান গাইবে?সিরিয়াসলি?কই,ও তো দীপ্তের মুখে কোনোদিন গানের গ’ও শুনে নি!আচ্ছা ওর কথা না হয় বাদই দিলো!কারণ ও না হয় দীপ্তের ধারেকাছেও যায় নি কখনো! কিন্তু বাকিরা? বাকিদের তো জানার কথা।কই কাউকে তো কোনো দিন বলতেও শুনে নি যে দীপ্ত গান গাইতে পারে!

দীপ্ত ওর গিটারটা গাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য কাকে যেন বললো।গিটার নিয়ে আসতেই দীপ্ত গিটারটা হাতে তুলে নেয়।ঠিকঠাক জায়গায় মাইক্রোফোনটা সেট করে নিলো।মিষ্টি হেসে গলার স্বর উঁচু করে বলল,

– Okay guys! Let’s Start!

দীপ্তের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে গোধূলি। দীপ্তের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।দীপ্ত একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেয়ে উঠে,

“তুমি না ডাকলে আসবো না!
কাছে না এসে ভালোবাসবো না!
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়!
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়!

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি!
তুমি না বাসলেও আমি বাসি!

এটা কি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে?
চাইলে ভেঙে দেবে গুড়ে দেবে ইচ্ছে হলে!
আমি গোপনে ভালোবেসেছি!
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি!
তোমায় নিয়ে যাবো বলে!

একবার এসে দেখো!
এসে বুকে মাথা রেখো!
বুলে দেবো চুলে রেখে হাত!

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল!
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি!
তুমি না বাসলেও আমি বাসি!

ভোর না হতে হতেই তোমাকে দেখার আশায়!
শেষ ছবিটা দেখি বারে বারে আহা দেখি!
আমি গোপনে ভালোবেসেছি!
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি!
তোমায় নিয়ে যাবো বলে!

একবার এসে দেখো!
এসে বুকে মাথা রেখো!
বুলে দেবো চুলে রেখে হাত!

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি!
তুমি না বাসলেও আমি বাসি!””

একের পর এক গান গাইতে লাগলো দীপ্ত।সবাই মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থেকে দীপ্তের গানগুলো শুনছিল।সেই দলে গোধূলিও আছে।দীপ্তের কন্ঠ যে এক্কেবারে তাহসানের মতো তেমনটা কিন্তু নয়।তবে ভালোই,খারাপ না।সবার হাততালি আর সিটির শব্দে বাস্তবে ফিরে আসে গোধূলি।কিছু সময়ের জন্য ও যেন এক অন্য জগতে চলে গিয়েছিল।একটা মানুষ ঠিক কতটা মাধুর্য মিশিয়ে নিয়ে গান গাইলে চারপাশটায় মুগ্ধতা এমন ছেঁয়ে যায়? ঠিক যেমন ভাবে দীপ্ত গেয়েছে ঠিক তেমন ভাবে?হয়তোবা!গোধূলির কেন জানি না মনে হচ্ছিলো দীপ্তের গাওয়া প্রথম গানের কথা গুলো দীপ্তের নিজের মনের কথা!কাউকে উদ্দেশ্য করেই তার এই গান গাওয়া!মনে হলো তার এই গানের মাধ্যমেই তার প্রিয়তম কাউকে যেন কত অভিযোগ!কত অভিমান!আর কতই না আকাঙ্ক্ষার কথা জানান দিয়েছে।এই মুহূর্তে তার সেই প্রিয়তমা কি এখানে উপস্থিত আছে?থাকলে কোথায় সে?আর কে-ই বা সেই রমনী?

গোধূলির এই সব ভাবনাচিন্তার মাঝেই দীপ্ত পারফরম্যান্স শেষ করে ওর পাশে এসে বসে।দীপ্ত এসে বসার পর থেকে গোধূলি বার বার আঁড়চোখে দীপ্তের দিকে তাকাচ্ছে।সেটা দেখে দীপ্ত শুধু মিটমিটিয়ে হাসছিল। কিন্তু কিছু বলে নি বরং গোধূলির এমন ব্যবহার সেও ক্ষানিকটা উপভোগই করছিল।

কিন্তু হঠাৎ করেই দীপ্তের ফোনে একটা কল আসে।অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই দীপ্তকে চলে আসতে হলো।আর দীপ্ত তো গোধূলিকে একা রেখে আসবে না!তাই গোধূলিকেও সাথে করে নিয়ে আসে।গোধূলি আসতে চাইছিল না।দীপ্ত ধমকি-ধামকির উপরে নিয়ে এসেছে ওকে।গোধূলি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে গাড়িতে।সারা রাস্তায় কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নি।একদম গোধূলিদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায় দীপ্ত।গোধূলিকে ড্রপ করে দিয়েই দীপ্ত চলে যায়।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here