বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ৮

0
684

বিষাক্তময় আসক্তি (The Villain😈)
Sumaiya Akter Mim
পর্ব ৮………..🌼

বারান্দার মধ্যে এলোমেলো হয়ে বসে আছে আয়ানা।।
হালকা পিংক কালারের টপস পরে আছে কনকনে শীতে গায়ে কোনো শাল জেকেট কিছুই নেই শীতের কারনে গাল আর নাকটা গোলাপী হয়ে গেছে চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে ঠান্ডার কারণে চকলেট কালারের ঠোঁট দুটো একদম শুকিয়ে গেছে, দেখতে একদম প্রান ছাড়া পুতুল মনে হচ্ছে তাকে।

আজকে আয়ানা নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত!কী পেয়েছে? কী হারিয়েছে? আর জীবন তাকে নতুন করে কী দিবে তাঁর হিসাব মিলাচ্ছে?
এই কাশ্মীর শহর তার থেকে হাঁসি খুশি শৈশব কেরে নিয়েছে , সে আজো জানে না কি হয়েছে তাঁর সাথে কিন্তু এটা জানে খুব খারাপ ঘটনা ঘটেছে তার সাথে যার কারনে তার সুন্দর জীবনটা অবিশাপ্ত হয়ে যায় ! আয়ানা অনেক তার আব্বি আম্মির কাছে জানতে চেয়েছে কিন্তু কেউ তাকে কিছু জানায়নি সবসময় এড়িয়ে চলেছে শুধু এতো টুকু জানে সেই দিনের পর তিন দিন জ্ঞান ফিরেনি তার যখন ফিরেছে তখন থেকে একমাস কোনো কথা বলেনি শুধু তাকিয়ে থাকতো ।ডাক্তার বলেছে কখনো যদি আবার এমন কোনো পরিস্থিতিতে পরে কিংবা কোনো জিনিসে তার ফোবিয়া আছে সে জিনিস টা তার সাথে বার বার ঘটে তবে আয়ানা আবার অসুস্থ হয়ে পরবে,এমন ও হতে পারে আর কখনো কথা বলতে পারবে না সে তাই জায়েদ আহাম্মেদ আর শিতল আহাম্মেদ সবসময় তাকে আগলিয়ে রাখতো কখনো যেনো ভয় না পায় তাঁর খেয়াল রাখতো মেয়ে যেমন পছন্দ করে তেমনটি করতো ! সবসময় বেশি সময় আয়ানাকে দিতো সবাই। সবার চোখের মনি সে !!

আবারও এই কাশ্মীর তার জীবনে কালো অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ! এবার তাকে তার আব্বি আম্মি ও বাঁচাতে পারবে না ,এর শেষ কী সে জানে না আর না জানে তার ভবিষ্যৎ কী? এই অন্ধকার কী তাকে তার মতো বাঁচতে দিবে নাকি নিজের #বিষাক্তময় আসক্তি তে ডুবিয়ে মারবে! নিজের নিকিষ্ট আলোতে তাকেও শেষ করে দেবে , পাবে কি ভালোবাসার সন্ধান নাকি হারিয়ে ফেলবে নিজেকে এই অন্ধকার রাজ্যে।পারবে কি এই অন্ধকার শহর থেকে বের হতে ।।।‌‌

তুতুল সারা রুমে আয়ানা কে খুঁজছে কিন্তু আয়ানা নেই হঠাৎ বারান্দায় আয়ানার প্রতিছবি দেখে বুঝতে পারলো আয়ানা বারান্দায় ! আয়নার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে দেখে আয়ানার গায়ে কোনো শাল জেকেট কিছুই নেই তাই তুতুল তারাতাড়ি করে রুম থেকে শাল এনে আয়ানার গায়ে জরিয়ে দেয়।আর ব্যাস্ত হয়ে বলতে থাকে ;;;

কী হয়েছে আয়ানা এমন করে শাল জেকেট ছাড়া এখানে বসে কেন আসিছ যদি ঠান্ডা লেগে যেতো তখন বলে আরেকটু ভালো করে শালটা জরিয়ে দেয়। কিন্তু আয়ানার কোনো হাবভাব নেই সে আগের মতো করে বসে আছে !

আয়ানকে কোনো কথা বলতে না দেখে তুতুল আবার বলতে থাকে,জানিস আয়ানা আম্মি তোর জন্য আজকে স্পেশাল হট চকোলেট স্ন্যাকস পাঠিয়েছে চল খাবি হাত টান দিয়ে কিন্তু আয়ানা আগের মত বসে আছে।। আয়ানাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও বসে পরে তার সাথে।ছোট বেলা থেকে আয়ানার মন খারাপের সঙ্গী তুতুল ছিল !সে শুধু বোন না বেস্ট ফ্রেন্ড আয়ানার। বোনের আগাম ভবিষ্যত নিয়ে অনেক শিহরিত সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । সবসময় ভয় পেলে সান্তনা দিতে পারতো আগলিয়ে রাখতো, ব্যাথা পেলে নিজে ব্যাথা লাগাব করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো কিন্তু এখন যখন বোনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন , তার হাতে কিছু নেই।

তুতুল আয়ানার মাথায় হাত রেখে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আজকে আর সান্তনা দিবে না! আজকে সবচেয়ে প্রয়োজন আয়ানার সান্তনা তাও দিবে না । কী দরকার শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যেখানে সত্যিটা আয়ানা ভালো করে জানে।তুতুলের স্নেহের হাত পেয়ে ঝাপটে ধরে কান্না করতে থাকে আয়ানা খুব প্রয়োজন ছিল এই স্নেহভরা হাতের। চারিদিকে নিরবতা শুধু মাত্র আয়ানার হিচকির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে বেশ অনেকক্ষণ কান্নার পর আয়ানা আস্তে আস্তে চুপ হয়ে যায়।তুতুল আয়ানার মাথায় এখনো বিলি কেটে দিচ্ছে!

দরজার ফাঁক দিয়ে মেয়ের অবস্থা দেখে চোখের জল ফেলে জায়েদ আর শিতল। মেয়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই তাদের, কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে যখন মেয়ের সবচেয়ে প্রয়োজন তাদের কিন্তু ভাগ্যে তাদের সাথে বেইমানি করেছে। মেয়ের সুখের জন্য জেনে শুনে অন্ধকারে দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তাঁরা সেখানে সুখ না দুঃখ কি আছে যানে না , কিন্তু তাদের হাতে কিছু নেই । মেয়ের সুখের বিভোর থাকতে থাকতে কখন তাকে কালো ছায়া গ্ৰাস করেছে বুঝতেই পারেনি! এমনটা তো তারা আশা করেনি তবে এমন কেনো হলো ! এমন একজন মানুষের হাতে তাঁরা তাঁদের মেয়েকে সপে দিচ্ছে যেখানে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার যার হাত থেকে মুক্তি নেই তাদের মেয়ের।। কথাই আছে অতীত কখনো পিছো ছাড়ে না অতীত একদিন না একদিন সামনে আসে , তবে কি সেই কঠিন অতীত সামনে আসছে আয়ানার যেখান থেকে এতো দূর পালিয়ে ছিল আবার সেই একই জায়গায় এসে পৌঁছেছে! এবার কি আরো ভয়ানক আর বিষাক্ত হতে চলছে তার জীবনের অধ্যায়।।।।।।।

রুমের সাথে একটা এ্যাটাচ’ড বারান্দায় আরেকটা এ্যাটাচ’ড কাঁচের মিনি ছাদ । দেখতে খুব সুন্দর যে কেউ প্রথম এখানে আসলে ভয় পেয়ে যাবে যদি ভেঙ্গে পরে যায় সেই ভয়ে। ছাদের মধ্যে একটা বড় দোলনা একটা কাঁচের গোল সেন্টার টেবিল , আর রুমের দেয়াল ঘেঁষে ফুমের ছোট বিছানা। চারপাশে কিছু সাদা গোলাপের গাছ আজকেই নতুন আনা হয়েছে। মূলত আয়ানার সাদা গোলাপ পছন্দের তাই বাড়ির বাগান থেকে শুরু করে প্রত্যেক রুমের বারান্দায় সাদা গোলাপের গাছ।। বাগানে আরো নতুন ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে সব আয়ানার পছন্দের! সম্পূর্ণ বাড়ি সাজানো হয়েছে আয়ানার পছন্দের শুধু মাত্র ইরফানের রুমের রং আগের মত কালো আছে যার মানে হচ্ছে ইরফান কে সব রকমে মানিয়ে নিতে হবে আয়ানাকে।।

ছাদের দোলনায় হেলান দিয়ে একটার পর একটা ওয়াইনের গ্লাস গিলে যাচ্ছে ইরফান অন্য হাতে মোবাইল যার মধ্যে আয়ানার একটা হাস্যে উজ্জল ছবি যেটা বার বার হাত দিয়ে স্পর্শ করছে জুম করছে আর ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।চোখ গুলো রক্তের নেয় লাল হয়ে আছে নেশা হয়ে গেছে তার কিন্তু এই দামি ওয়াইনের নেশা না এই হাতে থাকা আয়ানার নেশা হয়েছে। ছবিতে এতো নেশাক্ত লাগে সামনে থাকলে তো নিজেকে আটকাতে পারে না।আর ইরফান নিজেকে আটকাতে ও চায় না ইরফান আয়ানার গভীর নেশায় মরতেও রাজি আছে।। তাঁর আয়ানা নামের নেশার কাছে সব তুচ্ছ। এখন একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে নিজের ইচ্ছাকে পোষন করার সাদ্যি কোনো কালে তার ছিল না আর এটা তো তার জিবনত্য নেশা এটার কাছ থেকে চাইলে ও নিজেকে আটকাতে পারবেনা না আর ইরফান সেই চেষ্টা কোনো সময় করবে ও না।। উঠে দাঁড়ালো আয়ানা কে এক পলক সহ চোখ্যে দেখার জন্য কিন্তু পরে আবার নিজের জায়গায় বসে পরে।।

আয়ু নিশ্চয়ই এখন ঘুমাচ্ছে! আজকে তার উপর দিয়ে খুব প্রেশার গেছে না এখন যাবো না। তারপর আবার আয়ানার ছবিটা হাতে নিয়ে বলতে থাকলো ,এখন থেকে তোমার সব আমার তোমার সব কিছুতে আমার অধিকার ,এই তুমি ছবিটার মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে সম্পূর্ণ টা আমার। তোমার এক চুল ভাগ ও আমি কাউকে দিবো না আয়ু জান।।।।

এক নিষ্পাপ মেয়ে আর এক বিষাক্ত প্রেমিকের প্রেমের সূচনা হতে চলছে।। সেখানে হিরো নেই আছে বিলেন #The villain.যার ভালোবাসা সবার চেয়ে আলাদা যাকে বলে হিংস্র ভালোবাসা । ইতিহাস রচিত হবে ইরফান আয়ানার ভালোবাসার গল্প।। যেখানে ভালোবাসা নেশা ভালোবাসা #বিষাক্তময় আসক্তি বলে আয়ানার ছবিটায় গভীর ভাবে চুমু খায় ইরফান।।

সকাল বেলা শিতলের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে আয়ানার ! মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা সৌজন্য মূলক হাসি দেয় আয়ানা ! মেয়ের মুখে হাত রেখে চুমু খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে।।আয়ানা ফ্রেশ হয়ে আসতে শিতল আয়ানার সামনে মোবাইল এগিয়ে দেন, আয়ানা মায়ের দিকে তাকিয়ে মোবাইল টা কানে ধরতে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। শিতল মেয়ের দিকে তাকিয়ে চলে যায় তার এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না নিজের মেয়েকে এমন কাঠ পুতুল হতে দেখতে কোনো মা পছন্দ করবে না।।

কি হয়েছে আয়ু জান কথা কেনো বলছো না জানো কালকে সারা রাত তোমাকে দেখার জন্য তোমার
ওই মিষ্টি ভয়েস শুনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি ঘোর লাগানো কন্ঠে বললো ইরফান।।।

ইরফানের কথা শুনে আয়ানা পাথর নেয় দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না,না কোনো কথা বলার সাহস হচ্ছে। আয়ানাকে কথা বলতে না দেখে ইরফান আবার বলতে শুরু করল;;;;;;;

কী হয়েছে আয়ু জান কথা বলছো না কেন লজ্জা লাগছে কথা বলতে , বলে মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসে আবার বলতে শুরু করল লজ্জা পাচ্ছো কেন আয়ু জান আমি তো তোমার হবু স্বামী ।।
তবু আয়ানা কথা বলছে না দেখে এবার মাথা গরম হয়ে যায় এই মেয়ে তাকে এতো ইগনোর কেনো করে কি নেই তার যে আয়ানা তাকে পছন্দ করে না।। ইরফান এবার ধমক দিয়ে বলল,,

“কী সমস্যা তোমার কথা কেনো বলছো না ?ইগনোর করছো আমাকে।একদম আমার সাথে ইগনোর করবে না আমি এটা একদম পছন্দ করি না তুমি সবসময় আমার সাথে কথা বলবে একদম ইগনোর করবে না আমার পছন্দের জিনিস আমাকে ইগনোর করবে আমার কাছে ধরা দিবে না এটা আমি মোটেও পছন্দ করি না বুঝতে পেরেছো কিছু টা রেগে বললো।।”

আয়ানা ভয়ে তোতলিয়ে বলল ;
“জ্বী-জ্বী বুঝতে পেরেছি।কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো!

এই তো গুড গার্ল ! এবার সুন্দর করে সেজে আমার জন্য অপেক্ষা করো আমি দশ মিনিট পর আসছি তোমাকে নিতে , আজকে আমারা একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো কেমন।।

জ্বী আচ্ছা ।।
আয়নার কথা শুনে মুচকি হেসে ইরফান মোবাইল রেখে দেয় সে তার আয়ু জান কে কিভাবে জব্দ করতে পারবে তা ভালো করে বোঝে গেছে। মুচকি হেসে কার্বাড থেকে একটা কালো কালার জেকেট তার সাথে কালো গেঞ্জি পরেছে কালো পেন্ট এর সাথে কালো ব্রেন্ডের সু আর ব্রেন্ডের ঘড়ি পরেছে একদম চকলেট বয় লাগছে তাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল গুলো ঠিক করে মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় ।।।

অন্য দিকে আয়ানা ভয়ে হাতের মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে মারে তাঁর পর সেখানে বসে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয় । শিতল আর তুতুল আয়ানার কান্না শুনে রুমে আসে তাঁর পর আয়ানা কে জিজ্ঞেসা করতে সে ইরফান যা বলেছে তা সব বলে!
তার কথা শুনে শিতল আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে তুতুলের দিকে তাকিয়ে ইশারায় আয়ানা কে রেডি করতে বলে চলে যায়!এর থেকে বেশী তার কিছু বলার নেই তিনি নিরুপায়।

আয়ানাকে তুতুল ওয়াসরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করে সুন্দর দেখে সাদা গ্ৰাউন পরিয়ে দেয় তারপর চুল গুলো কে সুন্দর করে আচরিয়ে পেছনে ছেড়ে দেয় চোখে কাজল দিতে চেয়েছিলো আয়ানা দেয় নি তুতুল মলিন হেসে আয়ানার
ওরনা টা ভালো করে জরিয়ে দিলো।।। তারপর আয়ানার কপালে চুমু দিয়ে বলল সুন্দর লাগছে তোকে।।

আয়নার কোনো ভাব আবেগ নেই আগের মতো নিরব বসে আছে ,দিন দিন মূর্তিতে পরিনত হচ্ছে সে তা দেখে খুব কষ্ট পেলো তুতুল।

To be continued………🌼
(আজকে ব্যাস্ত ছিলাম তাই গল্প ছোট হয়েছে।কেউ ছোট বলে অপমান করো না 🙄)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here