মিশে আছো মুগ্ধতায় – পর্ব ১৫

0
669

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ15

ভার্সিটি ক‍্যাম্পাসের এক সাইডে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিহির, আহির সহ ওদের অন‍্যান‍্য ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিচ্ছিলো। আজকে প্রায় এক সপ্তাহ পরে আহির আর মিহির ভার্সিটিতে এসেছে। ইচ্ছা করে আসেনি, বন্ধুদের জোড়া জোরিতে আসতে বাধ‍্য হয়েছে। বন্ধুদের সাথে টুকটাক কিছুক্ষন কথা বলে মিহির বাইকের উপর উঠে ফোন স্ক্রল করছিলো। তখনই পাশ থেকে ওর এক ফ্রেন্ড বলে উঠলো

“গাইস দেখতো ওটা মায়া না? হ‍্যা, মায়ার মতোই তো লাগছে। বাট এতোটা চেইঞ্জ! কিভাবে?”

ছেলেটার কথা শুনে মিহির ফোন থেকে চোখ সরিয়ে গেটের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওর চোখ জোড়া রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। মিহিরকে এভাবে অবাক হয়ে তাকাতে দেখে আহিরও সেদিকে তাকালো। তাকিয়ে ‘ও’ নিজেও শকড হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মেঘ গেটের সামনে দাড়িয়ে দুজন গার্ডের সাথে কথা বলছে। ‘ও’ হালকা পিংক কালারের কুর্তি আর হোয়াইট লেগিন্স পড়ে আছে। লেগিন্সের সাথে ম‍্যাচিং করে মাথায় হোয়াইট কালারের হিজাব পড়েছে। আর ওড়নাটা কাধের এক সাইডে ফেলে রেখেছে। আগের মতো চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে নেই। চেহারায় সেই ইনোসেন্ট ভাবটাও আর নেই। ড্রেসের সাথে সাথে ফেইসের ইনোসেন্ট ভাবটা কেটে গিয়ে এডাল্ট ভাব চলে এসেছে। আহির অবাক কন্ঠে মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ভাইরে, এই শকডটা খাওয়াই মনে হয় বাকি ছিলো! ভবিষ্যতে আমাদের জন‍্যে আরো যে কি কি অপেক্ষা করছে সেটা একমাএ আল্লাহই জানে।”

আহিরের কথা শেষ হতেই মিহির সেন্টি মার্কা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বললো

“বাশ যখন আসে তখন চারপাশ দিয়ে সব এক সাথেই আসে। এতো শকড খেতে খেতে আমাদের না আবার বদ হজম হয়ে যায়।”

কথাটা বলে মিহির বাইক থেকে নেমে মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ওর পিছনে পিছনে মিহিরও গেলো। আর ওদের ফ্রেন্ড গুলো সবাই ওদের যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। কারন আহির,মিহির এতোক্ষন যেই কথা গুলো ওদের বলেছে,সেই কথা গুলো সব ওদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে।

মেঘ গার্ডদের অনেক বুঝিয়ে চলে যাওয়ার জন‍্যে রাজি করালো। খাম্বার মতো এতোগুলো গার্ড নিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে বাকি স্টুডেন্টদের ভয় দেখানোর কোনো ইচ্ছেই ওর নেই। ‘ও’ এতোদিন যেরকম স্বাভাবিক ভাবে ক্লাস করেছে বাকি দিনগুলোও সেভাবেই ক্লাস করতে চায়। তাই ‘ও’ ভাবছে আজকে বাড়িতে গিয়ে আজম রহমানকে বুঝিয়ে বলবে, যাতে ভার্সিটিতে আসার জন‍্যে ওর সাথে আর গার্ড দেওয়া না হয়। আপাততো মেঘ কোনো রকম এদের বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। তারপর ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ভার্সিটি গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে ঢুকে সোজা হেটে মিহিরদের সাইড কাটিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো। ভুলেও একটা বার আহির, মিহিরের দিকে তাকালো অবদি না। এদিকে আহির আর মিহির মেঘের যাওয়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
_________________________

অফ পিড়িয়ডে মেঘ ক্লাস থেকে বের হয়ে ক‍্যান্টিনের দিকে আসলো। আজকে দিশা আসেনি। অভি ওকে নিয়ে একটু শপিংয়ে গেছে। মেঘকে সাথে যাওয়ার জন‍্যে বলেছিলো। কিন্তু কাপলদের সাথে গিয়ে তাদের প্রাইভেসি নষ্ট করার কোনো ইচ্ছেই মেঘের নেই। তাই ‘ও’ রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে এসেছে।

মেঘ ক‍্যান্টিনে এসে বসতেই কোথা থেকে তৃধা ওর দলবল নিয়ে মেঘের টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো। মেঘ আড় চোখে একবার তৃধার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। মেঘের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে তৃধা বেশ ইমব‍্যারেস্ট ফিল করলো। ‘ও’ রাগি দৃষ্টিতে মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। কিন্তু তাতে মেঘের মধ‍্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসলো না। ‘ও’ আগের মতোই একধ‍্যানে বসে বসে ফোন টিপতে লাগলো। তৃধা এবার টেবিলের উপর হাত রেখে মেঘের দিকে কিছুটা ঝুকে গিয়ে কটাক্ষ করে বললো

“তাইতো বলি সেদিনের পর থেকে তোমাকে আর ভার্সিটিতে দেখা যাচ্ছে না কেনো! কিন্তু কি করে বুঝবো বলো তো,যে তুমি আমার কথা শুনে সোজা মেকওভার করতে চলে গেছো? তবে যাই বলো তোমার নির্লজ্জতার প্রশংসা না করে পারছি না! সেদিন সবার সামনে এতোটা অপমানিত হওয়ার পরেও আজকে বই,খাতা নিয়ে ঠিক আবার ভার্সিটিতে চলে এসেছো? তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে সেদিনই গলায় কলসি বেধে পানিতে ঝাপ দিয়ে মরে যেতাম।”

তৃধার কথা শুনে মেঘ হাত থেকে ফোনটা টেবিলের উপর রাখলো। তারপর তৃধার চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বললো

“তোমার মতো পাগল ছাগলের কথা শুনে গলায় কলসি বেধে মরতে যাবো কোন দুঃখে? তোমাদের কথা তো আমি পাএা দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করিনি।”

মেঘের শান্ত স্বরে বলা এইটুকু কথা শুনে তৃধা তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগে ওর চেহারা হিংস্র হয়ে উঠলো। ‘ও’ মেঘের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে চিল্লিয়ে বললো

“তোমার সাহস কিভাবে হলো আমাকে পাগল,ছাগল বলার? তুমি জানো আমি কে?”

তৃধার এতো জোড়ে চিল্লিয়ে কথা বলায় ক‍্যান্টিনে উপস্থিত সবাই তৃধা আর মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ ডানকানে আঙুল ঢুকিয়ে নাক,চোখ কুচকে ফেলে বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো

“উফফ তৃধা,ষাড়ের মতো চেচিয়ে সবার কানের তেরোটা বাজিও না তো। তুমি জানো না, জোড়ে কথা বললে নয়েজ পলিউশন হয়? অবশ‍্য জানবে কি করে? তুমি তো ভার্সিটিতে এইজন‍্যে আসো যাতে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে ছেলেদের সামনে গিয়ে বডি শো অফ করতে পারো। এর বাইরে অন‍্য কোনো বিষয়ে তোমার কোনো রকম জ্ঞান বুদ্ধি আছে বলে তো মনে হয়না।”

মেঘের কথা শেষ হতেই তৃধার পাশ থেকে ওর একজন ফ্রেন্ড বলে উঠলো

“এই মেয়ে তোমার কি বিন্দুমাত্রও ধারনা আছে যে তুমি কার সামনে দাড়িয়ে কি কথা বলছো? তুমি জানো না, তৃধার সাথে এই ভাবে কথা বলার সাহস কারো নেই?”

মেঘ মুখ বাকিয়ে হেসে বললো

“অন‍্য কারো সাহস না থাকলেও আমার ভালোই সাহস আছে। এদের মতো মেয়েদের আমি কখনোই ভয় পাই না। আর ভবিষ্যতে কখনো পাবোও না। তাছাড়া ওকে অন‍্য কেউ ভয় পায় বলে তো মনে হয়না! সেদিন তো দেখলাম সাঈফার হাতে একটা চড় খেয়ে পুরো ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে।”

তৃধা দাত কিড়মিড় করতে করতে বললো

” ‘ও’ মিহিরের কাজিন হয়, তাই সেদিন ওকে কিছু বলিনি। নাহলে ওর হাত কেটে আমি জন্তু, জানোয়ারদের খেতে দিয়ে আসতাম। তাই বলে এটা ভেবো না যে তোমাকে ছেড়ে দিবো। আজকে তোমার বলা প্রত‍্যেকটা কথার শোধ আমি নিবো। তোমার জিবন আমি নরক বানিয়ে দিবো। তুমি জানো না আমি কার মেয়ে। আমার বাবা যদি এসব জানতে পারে তাহলে তোমার কি হাল করবে ভাবতেও পারছো না।”

তৃধার কথা শেষ হতেই মেঘ চেয়ার থেকে উঠে ওর একদম মুখোমুখি এসে দাড়ালো। তারপর দৃড় কন্ঠে বললো

“তুমি কার মেয়ে সেটা জানি না ঠিকই। বাট তোমার ব‍্যাবহার দেখে তোমার বাবা-মায়ের সম্পর্কে একটু হলেও ধারনা করতে পারছি। যারা নিজের মেয়েকে ভালো ভাবে মানুষ করতে পারেনি। তারা যে ঠিক কি টাইপের মানুষ সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

মেঘ কথাটা বলার সাথে সাথে তৃধা রেগে গিয়ে মেঘকে চড় মারতে নিলো। কিন্তু চড়টা মারার আগেই মেঘ তৃধার হাত শক্ত করে ধরে ফেললো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো

“নিজের বাবা-মাকে নিয়ে বলেছি দেখে খুব গায়ে লেগে গেলো তাইনা? সেদিন আমারও এরকম লেগেছিলো। যখন তুমি আমার বাবা-মা তুলে আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিলে। চাইলে সেদিন আমি তোমার কলিজাটা টেনে ছিড়ে ফেলতে পারতাম। তোমার বলা প্রত‍্যেকটা কথার যোগ‍্য জবাব তোমাকে দিতে পারতাম। কিন্তু দেইনি। কারন সেদিন আমার হাত-পা বাধা ছিলো। তাই সেদিন চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থেকে তোমার সব অপমান গুলো সহ‍্যে করে নিয়েছি।তাই বলে এটা ভুলেও ভেবো না যে আজকেও তোমার সব অপমান সহ‍্যে করবো।”

কথাটা বলে মেঘ ঝাড়ি মেরে তৃধার হাতটা ছেড়ে দিলো। তৃধা ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ ওর হাত এতোটাই জোড়ে চেপে ধরেছিলো যে হাতের চামড়ায় মেঘের নক বসে হালকা ব্লিডিং হচ্ছে। তৃধার হাতের দিকে তাকিয়ে ওর ফ্রেন্ডরা সবাই আৎকে উঠলো। কারন ওরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আজকে মেঘের কপালে দুঃখ আছে। যদিও ওরা এখন অবদি জানে না যে মায়ার আসল নাম মেঘ। তৃধা ওর ব‍্যাথা হাতটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হিংস্র কন্ঠে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“জিবনের সবথেকে বড় ভুলটা করে ফেললে। আজকের পর থেকে এই ভার্সিটি কেনো তুমি শহরের নাম শুনলেও আৎকে উঠবে। আমি শুধু তোমাকে না, তোমার পুরো পরিবারকে রাস্তায় এনে দাড় করাবো। আমাকে আঘাত করার ফল যে কতোটা জঘন‍্য হতে পারে সেটা একটু পরেই তুমি হাড়ে হাড়ে টেড় পাবে। নিজের কাউন্ট ডাউন শুরু করে দাও মায়া। তোমার সময় ঘনিয়ে আসছে।”

কথাটা বলে তৃধা মেঘকে সাইড কাটিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো। কিন্তু কয়েক কদম যেতেই মেঘ এগিয়ে এসে তৃধার সামনে দাড়ালো। তারপর ওর দিকে কিছুটা ঝুকে ওর কানে পাশে মুখ নিয়ে ফিশফিশিয়ে বললো

“যা করার করতে পারো। তবে আমি তোমাকে চ‍্যালেঞ্জ করে বলছি,তুমি যদি আজকে আমার গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেও। তাহলে এই ভার্সিটিতে আজকের দিনটা তোমার শেষ দিন হবে। তাই আমার ক্ষতি করার আগে নিজের সেইফটি নিশ্চিত করে এসো। নাহলে কিন্তু সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকার মতো অবস্থায়ও থাকবে না।”

কথাটা বলে মেঘ তৃধার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে আবার এসে নিজের চেয়ারটার উপর বসে পড়লো। তৃধা পিছনে ঘুড়ে মেঘের দিকে একবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে ফুশতে ফুশতে ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে ক‍্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। ওরা বেড়িয়ে যেতেই মেঘের একজন ক্লাসমেইড দৌড়ে মেঘের কাছে এগিয়ে আসলো। তারপর ভিতু দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে শুকনো কন্ঠে বললো

“এটা তুমি কি করলে মায়া? কেনো নিজের এতোবড় সর্বনাশ টা করলে? তৃধা আপুর সাথে লাগতে যাওয়া আর সুইসাইড করা সমান কথা। তুমি ভাবতেও পারবে না ওই মেয়েটা কতোটা নির্দয়। জানো, একবার একটা মেয়েকে তৃধা আপু র‍্যাগ দিয়েছিলো। মেয়েটা রেগে গিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে তৃধা আপুর নামে কম্পেলেইন করে। তারপর স‍্যার তৃধা আপুকে অনেক বকাবকি করে। তাই পরেরদিন তৃধা আপু আর তার ফ্রেন্ডরা মিলে মেয়েটাকে ভার্সিটির পিছনে নিয়ে গিয়ে অনেক মারধোর করে। ফোন মেয়েটার উল্টোপাল্টা ভিডিও ক‍্যাপচার করে । এরপর মেয়েটাকে ব্লাকমেইল করে ভার্সিটি ছাড়তে বাধ‍্য করে।”

মেয়েটার কথা শুনে মেঘ মৃদ‍্যু চিল্লিয়ে বললো

“হোয়াট?”

মেয়েটা বললো

“শুধু এইটুকুই নয়, আরো আছে। জানো, মিহির ভাইয়ার আশে পাশেও যদি কোনো মেয়েরা যায় তাহলে তৃধা আপু সেই মেয়েকে অপমান করার জন‍্যে উঠে পড়ে লাগে। শুধু তাই নয়, বিনা কারনে মেয়েগুলোকে একেকটা ঝামেলায় ফাশিয়ে দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়।আর তোমাকেও হয়তো সেদিন মিহির ভাইয়ার কারনেই অপমান করছিলো। কারন তোমাকে প্রায়ই ভার্সিটিতে আহির ভাইয়া আর মিহির ভাইয়ার সাথে কথা বলতে দেখা যেতো। তার উপর তুমি সেদিন মিহির ভাইয়ার সাথে ধাক্কাও খেয়েছিলে। এইজন‍্যেই সেদিন অকারনে তৃধা তোমাকে সবার সামনে অপমান করেছিলো।”

মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে শক্ত মুখ করে বসে আছে। ক‍্যান্টিনে উপস্থিত বাকিরা সবাই প্রায় ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটা জিব দিয়ে ঠোটটা হালকা ভিজিয়ে আবারও বলা শুরু করলো

“তৃধা আপুর বাবা একজন পলিটিশিয়ান। আশেপাশে ওনার ভালোই নাম ডাক আছে। লোকটা বেশ ভালো একজন মানুষ। নিজের সাধ‍্য মতো টাকা দিয়ে গরীব দুঃখী মানুষদের হেল্প করার চেষ্টা করে। কিন্তু তৃধা আপু সবসময় নিজের বাবার ক্ষমতার অপব‍্যাবহার করে। আপুর এসব উল্টাপাল্টা কাজের ব‍্যাপারে ওনার বাবা-মা কিছুই জানে না। আর ভার্সিটির কোনো স্টুডেন্ট গিয়ে ওনাদের এসব বলার সাহসও করে না। কারন সবাই বেশ ভালো করেই জানে,তৃধা আপু যদি ভুলেও এসব জানতে পারে তাহলে সেই ব‍্যাক্তির লাইফ জাহান্নাম বানিয়ে দিবে।”

এইটুকু বলে মেয়েটা একটা লম্বা নিশ্বাস নিলো। তারপর আশেপাশে ভালো করে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মেঘের দিকে কিছুটা ঝুকে ফিশফিশ করে বললো

“এখন তোমার নিজেকে বাচানোর জন‍্যে সামনে দুটোই পথ খোলা আছে। প্রথম হলো কাউকে কিছু না বলে এখনি ভার্সিটির পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যাওয়া। আর দ্বিতীয় হলো মিহির ভাইয়া, আহির ভাইয়া অথবা ওদের গ্রুপের কারো কাছে একটা হেল্প চাও। কারন তৃধা যদি সবচেয়ে বেশি কাউকে ভয় পেয়ে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে মিহির ভাইয়াদের ওই গ্রুপটাকে। ওরা তৃধার এসব উল্টাপাল্টা কাজ সম্পর্কে কিছুই জানে না। কেউ ওদের জানানোর সাহসও করে না। কারন মোটামুটি সব স্টুডেন্টরাই ওই গ্রুপটাকে ভয় পায়। তবে তুমি যদি সাহস করে তৃধার ব‍্যাপারে সবটা ওদের জানাতে পারো তাহলে তৃধাসহ ওর পুরো পল্টন বাহিনির হাত-পা ভেঙে আহির ভাইয়ারা ডাষ্টবিনে ফেলে আসবে। এইবার ভেবে দেখো তুমি কোনটা করবে।”

মেয়েটার কথা শেষ হতেই মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে বললো

“দুটোর একটাও করবো না।”

কথাটা বলে মেঘ ওর ফোনটা হাতে নিয়ে অভির নম্বরে ডায়াল করতে করতে ক‍্যান্টিন থেকে বের হওয়ার জন‍্যে বাইরের দিকে পা বাড়ালো। ‘ও’ মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে আজকে তৃধাদের একটা উচিৎ শিক্ষা দিবে। এতোগুলো অন‍্যায় করে একটা মানুষ পার পেয়ে যাবে সেটা ‘ও’ কিছুতেই হতে দিবে না।

মেঘ ফোন কানে ধরে অভির সাথে কথা বলতে বলতে ক‍্যান্টিন থেকে বের হয়ে হেটে মাঠের দিকে চলে আসলো। তারপর ‘ও’ মাঠে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অভির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা কেটে পিছনে ঘুড়ে ভিতরে আসতে নিলো। ঠিক তখনই ভার্সিটি গেট দিয়ে ফুল স্পিডে আট/দশটা বাইক এসে মেঘ চারপাশটা গিড়ে ফেললো। আর মেঘ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলন্ত বাইকে থাকা একটা ছেলে হকিস্টিক বের করে মেঘের ঘাড়ের পিছনে জোড়ে আঘাত করলো। আঘাত করার সাথে সাথে মেঘ মুখ ধুবরে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলো।

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here