#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ25 (বিচ্ছেদ)
ড্রইংরুমের মধ্যে পিন পতন নিরবতা। কারো মুখে কোনো রকম টু শব্দও নেই। সবাই নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। আজম রহমান একটু আগেই আবীরকে আর আবীরের মাকে অপমান করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। আর বলেছেন, ওদের সাথে উনি ভবিষ্যতে কোনো রকম সম্পর্ক রাখতে চান না। তাই ওরা যাতে কখনো আর এই বাড়ির চারপাশেও না আসে। আবীর যাওয়ার আগে অবশ্য আজম রহমানকে শাসিয়ে গেছে। কিন্তু আজম রহমান আবীরের কথার কোনো রকম পাএাই নি।
মেঘ সোফার উপর বসে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। আহান ওর পাশে বসে কপাল কুচকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। দিশা আর অভি গালে হাত দিয়ে পাশের সোফায় বসে আছে। অভির মা-বাবা, আজম রহমান, আবীরের বাবা ওনারা চুপচাপ মলিন মুখে এক পাশে দাড়িয়ে আছেন। আপাততো ওনাদের কারোরই আহান আর মেঘের বিয়েতে কোনো আপওি নেই। কারন যোগ্য পাএ হিসেবে মেঘের জন্যে আহানের চেয়ে পারফেক্ট আর কেউই নেই। ওনাদের সবারই আহানকে বেশ পছন্দ হয়েছে।
মেঘের কান্না থামছে না দেখে আহান বিরক্ত হয়ে বললো
“এইভাবে কান্নাকাটি করার মতো তো কোনো কারন খুজে পাচ্ছি না মেঘ। তাহলে ফ্যাচফ্যাচ করে কাদছো কেনো? তোমাকে কি কেউ মেরেছে?”
মেঘ নাক টানতে টানতে বললো
“আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আমি এখন বিয়ে করবো না। পরে বিয়ে করবো।”
মেঘের কথা শুনে আহান মুখ বাকিয়ে বললো
“ওমা, মেয়ের আবদার শুনো! মনে হচ্ছে কেউ ওনাকে চকলেট অফার করেছে। যেটা উনি আজকে খাবেন না, কালকে খাবেন বলছে।”
আহানের কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে দিলো। আর মেঘ কাদো কাদো ফেইস করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান কাঠ কাঠ কন্ঠে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তোমার ভালো লাগলেও তোমাকে এখন বিয়েটা করতে হবে, আর না লাগলেও করতে হবে। আগে আমাদের বিয়েটা হবে তারপর তুমি এখান থেকে উঠতে পারবে, তার আগে না।”
কথাটা বলে আহান পকেট থেকে ফোন বের করে চুপচাপ ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।
_________________________
মেঘ নিজের রুমে এসে বেডের উপর ধপ করে বসে পড়লো। ওর মাথার মধ্যে অসম্ভব যন্ত্রণা করছে। ‘ও’ চোখ জোড়া বন্ধ করে বেডের উপরে গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে কখন যে ওর চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করলো টেড়ই পেলো না। হঠাৎ কেউ এসে ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে ওকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসালো। আকষ্মিক ঘটনায় মেঘ হকচকিয়ে উঠে বসে সামনে তাকালো। দেখলো ওর সামনে আহান আর তার পাশে একজন মহিলা সার্ভেন্ট দাড়িয়ে আছে। মেঘ ঘুমুঘুমু চোখে আহানের দিকে তাকাতেই আহান স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো
“মেঘ তোমার শাড়ি আর জুয়েলারি গুলো খুলে নরমাল কোনো ড্রেস পড়ে আসো। আর এইগুলো একটা ব্যাগে করে আমাকে দাও।”
মেঘ ক্লান্ত স্বরে বললো
“আমার ভিষন ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেই, তারপর উঠে চেইঞ্জ করবো।”
“উহুম, এখনি যাও। গিয়ে তাড়াতাড়ি চেইঞ্জ করে আসো। আমাদের আবার একটু পরে বের হতে হবে।”
কথাটা বলে আহান মেঘের হাত ধরে টেনে ওকে দাড় করিয়ে দিলো। মেঘ বিরক্তির দৃস্টিতে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে কাবার্ড থেকে থ্রি-পিচ বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তারপর ড্রেস চেইঞ্জ করে শাড়ি আর জুয়েলারি গুলো একটা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে আহানের হাতে ধরিয়ে দিলো। আহান ব্যাগের মধ্যে থেকে শাড়িটা বেড় করে জুয়েলারি সুদ্ধ শপিং ব্যাগটা মহিলা সার্ভেন্টের হাতে দিলো। মহিলাটা ব্যাগ হাতে নিয়ে আহানের দিকে প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। ওনাকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান মুচকি হেসে বললো
“আপু এইগুলো মেঘের আর দরকার নেই। আপনি এই জুয়েলারি গুলো নিয়ে যেতে পারেন।”
আহানের কথা শুনে সার্ভেন্ট মহিলাটা চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মুচকি হেসে আহান আর মেঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মহিলাটা যেতেই আহান মেঘের রিডিং টেবিলের কাছে গিয়ে সেখান থেকে একটা সিজার হাতে নিলো। তারপর কোনো দিকে না তাকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিজার দিয়ে শাড়িটাকে কেটে কুচি কুচি করে ফেললো। আহানের কাজে মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেলো। ‘ও’ বিষ্মিত কন্ঠে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এটা কি করলেন আহান? আমার বিয়ের শাড়িটা এই ভাবে ছিড়ে ফেললেন? এই শাড়িটা আমার আর আপনার বিয়ের একটা স্মৃতি ছিলো। এটাকে কেনো এইভাবে নষ্ট করে ফেললেন?”
আহান হাতে থাকা সিজারটা রিডিং টেবিলের উপর রেখে প্যান্টের পেকেটে দু-হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। তারপর মৃদ্যু হেসে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই শাড়ি আর জুয়েলারি গুলো পড়ে তুমি আবীরের জন্যে বউ সেজে ছিলে, তাই এইগুলোকে তোমার লাইফ থেকে টাটা, বাই করে দিলাম। আমি তোমার লাইফে না আবীরকে থাকতে দিবো। আর না ওর সাথে রিলেটেড কোনো জিনিস পএ তোমাকে রাখতে দিবো। বুঝতে পেরেছো?”
মেঘ হতবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ির টুকরো গুলো পা দিয়ে সরিয়ে এক সাইডে রেখে দিচ্ছে। মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে আহত স্বরে বললো
“কিন্তু এইগুলো আমাদের বিয়ের চিহ্ন ছিলো। ভেবে ছিলাম যত্ন করে এই গুলো আলমারিতে তুলে রাখবো। কিন্তু আপনি সবকিছু নষ্ট করে দিলেন।”
মেঘের কথা শুনে আহান ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“এটা নিয়ে এতো আপসেট হওয়ার কিছু নেই। পরে আমি তোমাকে নতুন করে বেনারসি আর এইরকম টাইপের জুয়েলারি কিনে দিবো। তখন সেগুলো তুমি যত্ন করে আলমারিতে তুলে রেখে দিও। আর যদি তাতেও তোমার মন না ভরে, তাহলে দরকার পড়লে তোমাকে সেই বেনারসি আর জুয়েলারি পড়িয়ে আমরা আরেক বার বিয়ে করে নিবো। ”
কথাটা বলে আহান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হওয়ার জন্যে চলে গেলো। আর মেঘ মনে মনে আহানকে যা নয় তাই বলে বকা দিতে লাগলো।
________________________
রাতঃ 08:30
আজম রহমানদের সাথে একএে ডিনার করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আহান মেঘকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। ওরা আপাততো আহানের ফ্লাটে যাবে। তারপর সেখান থেকে সকাল বেলা মিড়া রহমানের বাসায় চলে যাবে। আহান অবশ্য মিড়া রহমানকে আগেই বিয়ের খবরটা জানিয়ে দিয়েছে। উনিও ওদের বিয়েটা সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছেন। কারন ওনার মেয়ে আবার ওনার কাছে ফিরে আসছে এর থেকে খুশীর খবর ওনার কাছে আর কিই বা হতে পারে।
মেঘ’রা মাঝ রাস্তায় আসতেই হঠাৎ করে আহানের ফোনে একটা কল আসলো। আহান ফোনটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে পেকেটে রেখে দিলো। কিন্তু পকেটে রাখার কিছুক্ষন পর ওর ফোনটা বাইব্রেট করে উঠলো। ‘ও’ পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়েই হুট করে গাড়িটা ব্রেক করে ফেললো। আচমকা এভাবে ব্রেক করায় মেঘ হকচকিয়ে উঠে আহানের দিকে তাকালো। আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“মেঘ আমার একটা ইম্পরটেন্ট কল এসেছে। তুমি দুই মিনিট গাড়িতে বসো। আমি একটু কথা বলে আসছি।”
কথাটা বলে আহান মেঘকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাইরে চলে গেলো। আর মেঘ ভ্রু কুচকে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রায় পাচ মিনিট পর আহান আবার এসে দ্রুত গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ড দিলো। মেঘ তাকিয়ে দেখলো আহানের চোখে, মুখে স্পষ্ট ভয় এবং আতঙ্কের ছাপ ফুটে আছে। আহানকে এতোটা ভয় পেতে দেখে মেঘ ভিষন চিন্তায় পড়ে গেলো। কারন আহান সহজে কোনো জিনিসে ভয় পায় না বললেই চলে। মেঘ চিন্তিত স্বরে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনাকে এমন লাগছে কেনো? কিছু কি হয়েছে?”
আহান জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“না, কি আবার হবে? সবকিছু একদম ঠিক আছে।”
কথাটা বলে আহান গাড়ি থামিয়ে দিলো। তারপর মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ আমার একটা ইম্পরটেন্ট কাজ পড়ে গেছে। তুমি এখানে নেমে দাড়াও। আমি অভিকে বলে দিচ্ছি। ‘ও’ এসে তোমাকে এখান থেকে পিক করে নিবে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ বাইরের দিকে তাকালো। দেখলো একদম শূনশান একটা রাস্তা। যতোদূর ওর চোখ যাচ্ছে তাতে আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। মেঘ অবাক দৃস্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“এখানে তো কেউই নেই। আমি এখানে একা একা কিভাবে থাকবো?”
“একা একা কোথায়? আমি তো অভিকে বলে দিচ্ছি। ‘ও’ এখনি এখানে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।”
“আচ্ছা তাহলে আগে ভাইয়া আসুক। তারপর তুমি যেখানে যাওয়ার সেখানে চলে যাও।”
মেঘ এইটুকু বলতেই আহান ধমক দিয়ে বললো
“আমি কি বলছি সেটা তোমার কানে ঢুকছে না? আমার একটা জরুরী কাজ আছে। আর সেখানে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। তুমি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার এক সাইডে গিয়ে দাড়াও।”
আহানের ধমক শুনে মেঘ অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান মুখ থেকে একটা বিরক্তিকর ‘চ’ শব্দ উচ্চারন করে নিজেই গাড়ি থেকে নামলো। তারপর মেঘের সাইডে এসে গাড়ির দরজা খুলে ওর হাত ধরে টেনে ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো। নামিয়ে দিয়ে মেঘকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে আবার নিজে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। মেঘ জানালার উপরে হাত রেখে একটু ঝুকে গাড়ির মধ্যে উকি দিয়ে অসহায় কন্ঠে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আহান আমার ভীষন ভয় করছে। আমাকে এখানে একা রেখে যেও না প্লিজ। আচ্ছা, তুমি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো। দরকার হলে আমি গাড়ির মধ্যেই চুপটি করে বসে থাকবো। আর তুমি নাহয় তোমার কাজ শেষ করে তারপর আমাকে নিয়ে বাসায় চলে যেও। তাও এখানে রেখে যেও না প্লিজ।”
আহান কাঠ কাঠ গলায় বললো
“যাস্ট শাটআপ! অযথা বকবক করে আমার সময় নষ্ট না করে চুপচাপ গিয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকো। অভি আসলে ওর সাথে চলে যেও। আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম।”
কথাটা বলে আহান আর এক মুহূর্তও দেড়ি না করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। আর মেঘ হতবাক হয়ে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মনে হলো এতোক্ষন এখানে যা যা হয়েছে সবকিছু ‘ও’ স্বপ্ন দেখছে। কারন আর যাই হয়ে যাক না কেনো আহান কখনোই ওর সাথে এতোটা খারাপ বিহেব করতে পারে না।
_________________________
শূনশান রাস্তার মধ্যে লাস্ট বিশ মিনিট ধরে মেঘ একা একা পায়চারি করে যাচ্ছে। অভি এখনো এখানে এসে পৌছায় নি। আহান যাওয়ার কিছুক্ষন পর অভি মেঘকে কল করেছিলো। ‘ও’ বলেছে, রাস্তার মধ্যে নাকি হঠাৎ করে ওর গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে। আর আশেপাশে কোনো গ্যারেজও নেই যে ‘ও’ গাড়িটা সারাতে নিয়ে যাবে। তাই ‘ও’ আজম রহমানকে ফোন করে দিয়েছে আর উনি বাসা থেকে ড্রাইভারকে দিয়ে অন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যতোক্ষন পযর্ন্ত না গাড়ি এসে পৌছায়, ততোক্ষন পযর্ন্ত যাতে মেঘ ওখানে দাড়িয়েই অভির যাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করে। যদিও মেঘের ভিষন ভয় লাগছে। কিন্তু এই মুহূর্তে অভির জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া ওর কাছে আর সেকেন্ড কোনো অপশন খোলা নেই।
মেঘ পায়চারি করতে করতে ফোনটা অন করে সময় দেখার জন্যে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো। দেখলো অলরেডি 9:35 বেজে গেছে। এতোটা রাত হয়েছে দেখে মেঘের ভয়টা আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো। ‘ও’ এদিক ওদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো যে এখানে আশেপাশে কোনো মানুষ আছে কিনা। কিন্তু দূর্ভাগ্য বশতো এখানে মানুষ তো দূরের কথা, মানুষের ছায়া পযর্ন্ত নেই। মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো। হঠাৎ ওর ফোনে টুং করে নোটিফিকেশন আসলো। ‘ও’ চোখ খুলে কাপা কাপা হাতে দ্রুত ফোনটা অন করলো। কিন্তু ফোনের স্কিনের দিকে তাকাতেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ওর চারপারটা আস্তে আস্তে ঘোলাটে হয়ে যেতে লাগলো। মেঘ আর বেশিক্ষন স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। ‘ও’ ফোনটা হাতে নিয়েই ধপ করে রাস্তার মাঝখানে বসে পড়লো। আহানের নম্বর থেকে মেঘের কাছে একটা মেসেজ এসেছে। যেটায় লেখা আছে,
–“সরি মেঘ! আমি কখনোই তোমাকে আমার এই নোংরা গেমটার অংশ বানাতে চাইনি বিশ্বাস করো। কিন্তু কি করবো বলো? তোমার বাবা আমাকে সবার সামনে চড় মারায় বিষয়টা আমার ইগোতে লেগেছিলো। তাই বাধ্য হয়ে তোমার বাবাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে তোমাকে আমার এই নোংরা গেমে জড়াতে বাধ্য হলাম। তবে আজকে থেকে তুমি একদম ফ্রি। এখন থেকে তুমি তোমার লাইফের সাথে যা মনে চায় তাই করতে পারবে। আমি আর কখনো তোমার কোনো ব্যাপারে নাক গলাবো না। কারন এতোদিন আমার শুধুমাত্র একটাই লক্ষ্য ছিলো। সেটা হচ্ছে তোমাকে বিয়ে করে তোমার বাবাকে হারিয়ে দেওয়া। আর বহু প্রতীক্ষার পর আজকে আমি আমার সেই লক্ষ্যে পৌছে গেছি। কিন্তু আমার এই লক্ষ্যে পূরনের জিদের জন্যে আমি তোমার মতো একটা নিস্পাপ মেয়েকে কস্ট দিয়ে ফেললাম। তার জন্যে আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। পারলে আমাকে মাফ করে দিও প্লিজ। আর নিজের লাইফটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিও। কিন্তু আজকের পর আমার সাথে আর কখনো যোগাযোগ করার চেস্টা করো না। আমি যেখানেই থাকবো, ভালো থাকবো।
আল্লাহ হাফেজ!”
মেঘ বারবার মেসেজটা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত পড়ে যাচ্ছে। ওর কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে। হাত-পা মৃদ্যু কাপছে। ‘ও’ বেশি কিছু চিন্তা ভাবনা না করে আহানের নম্বরে কল করলো। কিন্তু ফোনটা বন্ধ বলছে। ফোন বন্ধ দেখেও মেঘ অনবরত আহানের নম্বরে ডায়াল করেই যাচ্ছে। আর বিরবির করে বলছে
“আহান ফোনটা ধরো প্লিজ। আমি জানি পৃথিবী উল্টে গেলেও তুমি কখনো আমাকে ঠকাতে পারো না। আমি যা কিছু দেখেছি এই সবকিছু আমার চোখের ভুল। নাহলে আমি নিশ্চয়ই এসব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি। প্লিজ আহান ফোনটা রিসিভ করে আমার সাথে কথা বলে আমার ভ্রম’টা দূর করে দাও। প্লিজ পিক আপ দ্যা ফোন আহান। প্লিজ!প্লিজ!”
মেঘের এসব কথা বলার মধ্যেই হঠাৎ করে ওর সামনে কয়েকটা বাইক এসে থামলো। মেঘ মাথা উঠিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো বাইকের উপরে পচিশ, ছাব্বিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের কিছু ছেলেরা বসে আছে। ছেলে গুলোর হাব-ভাব দেখে মেঘের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওরা সবাই ড্রিংক করে আছে। ওদের ঠোটের কোনে অদ্ভুত হাসি লেগে আছে। সবাই কেমন লালসার দৃস্টিতে মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আর এক মিনিটও এখানে থাকলে ওর মারাত্মক কোনো একটা বিপদ হয়ে যাবে। তাই ‘ও’ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে জোড়ে দৌড় দিলো। মেঘের এমন কান্ডে ছেলে গুলো সবাই পিছন থেকে একসাথে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। তারপর বাইক স্টার্ড দিয়ে ওরাও মেঘের পিছনে পিছনে আসতে লাগলো। মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে আহানের নম্বরে “সেইভ মি” লিখে একটা মেসেজ সেন্ট করে দিলো। কিন্তু অসাবধানতা বশত রাস্তার ইটের সাথে ওর পা লেগে ‘ও’ ঠাস করে উপুর হয়ে রাস্তাতেই পড়ে গেলো। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ছেলেগুলো বাইক নিয়ে এসে ওকে চারদিক থেকে ঘিড়ে ফেললো। আর মেঘ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেগুলো বাইক থেকে নেমে ওকে হিরহির করে টানতে টানতে রাস্তার পাশের ঝোপের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘ ছটফট করতে করতে সাহায্যের জন্যে চিৎকার করে কাদতে লাগলো। কিন্তু ওর চিৎকার গুলো রাতের অন্ধকারের সাথেই মিলিয়ে গেলো।
#চলবে……….