মিশে আছো মুগ্ধতায় – পর্ব ৪

0
710

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ4

শীত একেবারে শেষের দিকে তাই বিল্ডিংয়ের সবাই মিলে ঠিক করলো ছোট খাটো একটা পিকনিক করবে।মেঘের ইচ্ছে না থাকা সর্তেও দিশার জোড়া জোড়িতে ওকে পিকনিকে অংশ গ্রহন করতে হলো।

ওরা এই বাসায় এসেছে প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেছে।এর মধ‍্যে মিড়া রহমানের সাথে মায়ার অনেক বার লিফটে,বাসার ছাদে দেখা হয়েছে।কিন্তু মিড়া রহমান মায়াকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেছে।এতে মায়ার ভিষন কষ্ট হলেও ‘ও’ সেটা কাউকেই বুঝতে দেয়নি।তবে সাড়িকা,সাঈফার সাথে ওর ভিষন ভালো একটা বন্ডিং হয়েছে।সেদিনের মিড়া রহমানের কথা গুলো শুনে মায়া প্রথমে ওদের ইগনোর করেছিলো ঠিকই।কিন্তু ওদের বাচ্চামো আবদার গুলো দেখে বেশিদিন আর ওদের থেকে দূরে সরে থাকতে পারেনি।বাধ‍্য হয়ে ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা করতেই হয়েছে।সাড়িকা,সাঈফা প্রত‍্যেকদিন ভার্ষিটিতে গিয়ে একবার করে হলেও মায়ার সাথে দেখা করে।তাছাড়া ওরা যখন মিড়া রহমানদের বাসায় আসে তখন চুপি চুপি মায়ার ফ্লাটে এসে ওর সাথে দেখা করে যায়।অবশ‍্য এখন পযর্ন্ত এটা কেউই জানে না।

এই কয়েকদিন ভার্ষিটিতে মায়াকে অনেক প্রভলেমের সম্মুখীন হতে হয়েছে।সেই প্রভলেম গুলো অবশ‍্য আহির আর মিহিরই তৈরি করেছে।কখনো মায়ার এ‍্যাসাইনমেন্টের পেপার ক্লাস থেকে চুড়ি করে নিয়ে গিয়ে ছিড়ে ফেলেছে।আবার কখনো লোক দিয়ে মায়ার গায়ে ময়লা,আবর্জনা ঢেলে দিয়েছে।ওরা আড়ালে থেকে বারবার মায়াকে হেনস্তা করার চেষ্টা করে।রোজ কিছু না কিছু কান্ড ঘটিয়ে মায়াকে ঝামেলার মধ‍্যে ফেলে দেয়।ইনফ‍্যাক্ট ভার্ষিটির কিছু কিছু স‍্যার,ম‍্যামেরাও মায়ার সাথে খারাপ ব‍্যাবহার করে।তারা ক্লাসে এসে অহেতুক কারনে ওর ভুল বের করে ওকে সবার সামনে বকা দেয়। মায়া বেশ ভালো করেই জানে ওনারা এসব কাজ আহির আর মিহিরের কথাই করছে।তবে সবটা জেনেও ‘ও’ কাউকে কিছুই বলে না।কারন মায়া এটা দেখতে চায় ওর কাছের মানুষ গুলো ওকে ঠিক কতোটা কষ্ট দিতে পারে।
______________________
সন্ধ‍্যা 6:30

মায়া আর দিশা নিজেদের ফ্লাট থেকে বের হয়ে দরজা লক করে লিফটের সামনে দাড়ালো।ওদের রুমমেড’রা অনেক আগেই নিচে চলে গেছে।ওরা লাঞ্চ করে একটু ঘুমিয়ে ছিলো,তাই ঘুম থেকে উঠতে ওদের লেইট হয়ে গেছে।আসলে পিকনিক টা বিল্ডিংয়ের এক সাইডের গার্ডেন এরিয়ায় হবে।তাই ওরা সেখানেই যাচ্ছে।

সেভেন ফ্লোর থেকে লিফট এসে ছিক্স ফ্লোরে থামতেই লিফটের দরজা ওপেন হয়ে গেলো।দরজা ওপেন হতেই মায়া দেখলো লিফটের মধ‍্যে আহির,মিহির আর আহান দাড়িয়ে আছে।মায়া আর দিশা এক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ লিফটের মধ‍্যে ঢুকে পড়লো।তারপর ওরা দুজন আহানদের থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে রইলো।আহান একবার কোনা চোখে মায়ার দিকে তাকালো।আজকেও মায়া সাদা রঙের একটা থ্রি পিছ পড়েছে।আহান কিছুতেই এটা বুঝতে পারে না যে এই মেয়ে সব সময় কেনো সাদা রঙের ড্রেস পড়ে।

আহানের ভাবনার মধ‍্যেই লিফট এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থামলো।দরজা খুলতেই মায়া যখনই লিফট থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনই মিহির এসে ওকে ল‍্যাং মারলো।আর সাথে সাথে মায়া উপুর হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। ‘ও’ এতোটাই জোড়ে পড়ে গেলো যে ওর মাথাটা ফ্লোরের সাথে জোড়ে ঠুকে গেলো।

আকষ্মিক ঘটনায় মিহির নিজেও বোকা হয়ে গেলো। ‘ও’ ভাবতেই পারেনি মায়া এতোটা জোড়ে পড়ে যাবে।দিশা দ্রুত এসে মায়ার হাত ধরে ওকে উপরে তুলে দাড় করালো।মায়ার কপালের এক সাইড কেটে গিয়ে হালকা ব্লাড বের হচ্ছে।আহান দ্রুত নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

“আপনার কপাল কেটে তো ব্লাড বের হচ্ছে।রুমালটা নিয়ে তাড়াতাড়ি কাটা জায়গাটা চেপে ধরুন।তাহলে ব্লিডিংটা বন্ধ হয়ে যাবে।”

মায়া তাছিল‍্য হেসে বললো

“মনের ক্ষত থেকে প্রতিদিন যেই পরিমান রক্তক্ষরন হয়,সেটার কাছে এতোটুকু রক্ত কিছুই না।আপনার রুমালের আমার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি এমনিতেই ঠিক আছি।”

কথাটা বলে মায়া দিশার হাত ধরে গার্ডেন এরিয়ার দিকে যাওয়ার জন‍্যে পা বাড়ালো।আহান হাতে থাকা রুমালটা আবারও পকেটের মধ‍্যে ঢুকিয়ে রেখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“মিহির আমি লাষ্ট বারের মতো বলছি ভবিষ্যতে আর এরকম কোনো কাজ করার সাহস করিস না।তাহলে কিন্তু আমি তোর সাথে ঠিক কি করবো সেটা আমি নিজেও জানি না।সেদিনের চড়ের কথা নিশ্চয়ই খুব ভালো করে মনে আছে?তাই এখনো বলছি সময় থাকতে ভালো হয়ে যা।”

কথাটা বলে আহানও ওখান থেকে গার্ডেন এরিয়ায় যাওয়ার জন‍্যে পা বাড়ালো।কিন্তু মিহির এখনো সোজা হয়ে নিজের জায়গায় দাড়িয়ে আছে।ওর চোখের সামনে বারবার মায়ার কপালের কাটা অংশটা ভেষে উঠছে।মিহিরের ভালো করেই বুঝতে পারছে ‘ও’ আজকে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।
________________________

গার্ডেন এরিয়ার পুরোটা বেশ সুন্দর করে বিভিন্ন ধরনের লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। ক‍্যাটেরিংয়ের লোকেরা একপাশে বসে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।বড়রা সবাই যে যার মতো ব‍্যাস্ত।ইয়াং জেনারেশনের যারা আছে সবাই এক সাইডের ঘাসের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছে।

মায়া সবার থেকে অনেকটা দূরে দাড়িয়ে আছে।যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান থেকে ‘ও’ সব সময় দূরে থাকতে পছন্দ করে।এসব গান বাজনা, লাফালাফি, লাউড কথা বার্তা ওর একদম পছন্দ না। ওর একা একা থাকতেই সব সময় বেশি ভালো লাগে।

মায়া গুটিগুটি পায়ে হাটতে হাটতে সবার থেকে আরো খানিকটা দূরে চলে এলো।হঠাৎ কেউ এসে মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আচৎমকা এমনটা হওয়ায় মায়া খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। ‘ও’ চমকে উঠে বললো

“আরে কে আপনি?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?হাত ছাড়ুন বলছি।”

সামনে থাকা ব‍্যাক্তিটি মায়ার প্রশ্নের কোনো অ‍্যান্সার না দিয়ে ওকে টানতে টানতে সোজা সুইমিংপুলের পাশে এনে দাড় করালো।মায়া মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে।আহান ওকে এখানে নিয়ে এসেছে দেখে অবাকে ওর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।মায়া কিছুক্ষন অবাক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে রাগি কন্ঠে বললো

“এটা কোন ধরনের অসভ‍্যতা মিঃ খান?”

কথাটা বলে মায়া ঝাড়া মেরে আহানের হাতটা ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো।কিন্তু তাতে আহানের কিছুই আসলো গেলো না। ‘ও’ আবার মায়ার এক হাতের বাহু চেপে ধরে মায়াকে নিয়ে গিয়ে সুইমিংপুলের সাইডে রাখা চেয়ারের উপরে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও একটা চেয়ার টেনে মায়ার সামনা সামনি বসে পড়লো।মায়া বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বললো

“আরে আপনি কি করছেন এসব?মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আপনার?”

আহান আবার মায়ার হাত ধরে টান দিয়ে চেয়ারের উপর বসিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো

“চুপচাপ বসে থাকুন।কোনো কথা বলবেন না।আর নড়চর তো একদমই করবেন না।”

মায়া দাতে দাত চেপে বললো

“আমি আপনার কথা কেনো শুনবো?আজব!”

আহান টেবিলের উপর রাখা ফাষ্ট এইড বক্স খুলে এ‍্যান্টিসেফটিক,তুলো,গজ বের করতে করতে বললো

“আমি বলেছি তাই শুনবেন।”

মায়া বিরক্তিতে নাক,চোখ কুচকে বললো

“আজব ঘাড়ত‍্যাড়া পাবলিক তো আপনি।”

“হ‍্যা একদম জন্ম থেকেই আমি এরকম ঘাড়ত‍্যাড়া পাবলিক।কাইন্ডলি এখন নিজের মুখটা একটু বন্ধ রাখবেন প্লিজ?আমাকে আমার কাজটা করতে দিন।”

কথাটা বলে আহান একটা তুলোতে এ‍্যান্টিসেফটিক লাগিয়ে মায়ার দিকে খানিখটা এগিয়ে গেলো।আহানকে এগিয়ে আসতে দেখে মায়া ওর মাথাটা একটু খানি পিছনের দিকে এলিয়ে দিয়ে বললো

“হেই ডোন্ট টাচ মি।দূরে থাকুন আমার থেকে।আমার ব‍্যান্ডেজ আপনাকে করতে হবে না।আমি নিজেই নিজেরটা করতে পারবো।”

আহান রাগি কন্ঠে বললো

“কতোটা করতে পারবেন সেটা এতোক্ষনে আমার দেখা হয়ে গেছে।প্রায় এক ঘন্টা ধরে কপাল থেকে ব্লিডিং হতে হতে এখন একদম শুকিয়ে গেছে।আর আপনি এতোক্ষন ব‍্যান্ডেজ না করে চুপচাপ এক কোনায় স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।”

কথাটা বলে আহান ওর এক হাত মায়ার ঘাড়ের পিছনে দিয়ে মায়াকে টেনে একদম নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসলো।তারপর আরেক হাত দিয়ে মায়ার কপালের কাটা অংশটা অ‍্যান্টিসেফটিক দিয়ে আস্তে আস্তে ক্লিন করতে লাগলো।

আহানের এমন কান্ডে মায়া একদম ফ্রিজ হয়ে বসে আছে।ওর হাত-পা জমে একদম বরফ হয়ে আছে।নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে।আহানকে যে নিজের থেকে দূরে সরতে বলবে সেইটুকু কথা বলার শক্তিও যেনো পাচ্ছে না।ওর সারা শরীর মৃদ‍্যু কাপছে।আহানের নিশ্বাস মায়ার চোখে মুখে আচড়ে পড়ায় ‘ও’ চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।

মায়ার এমন অবস্থা দেখে আহান ঠোট চেপে হালকা হাসলো।তারপর ধীর কন্ঠে বললো

“মিস মায়া আর ইউ ওকে?”

আহানের প্রশ্ন শুনে মায়া নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কম্পিত স্বরে বললো

“ই-ইয়াহ আ-আই অ‍্যাম ও-ওকে।”

আহান একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো

“রিয়েলি?কিন্তু তাহলে আপনার হার্ট থেকে ডাক-ঢোল বাজানোর আওয়াজ আসছে কেনো?আর আপনিই বা চারশো বছরের বুড়ির মতো ঠকঠক করে কাপছেন কেনো?”

আহানের কথায় মায়া চমকে উঠে তোতলাতে তোতলাতে বললো

“ক-কোথায় আ-আমি ঠ-ঠকঠক ক-করে কাপছি?আমি তো একদম ঠিক আছি।আ-আপনি ভ-ভুল ব-বুজছেন।”

আহান মায়ার কপালে অ‍্যান্টিসেফটিক লাগিয়ে ব‍্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর মায়ার মতোই তোতলাতে তোতলাতে বললো

“আ-আমি য-যদি ভ-ভুল বুঝেই থ-থাকি ত-তাহলে আপনি ত-তোতলাচ্ছেন কেনো?এ-এসব তোতলানো,ক-কাপাকাপি করা, হার্টের মধ‍্যে ডাক ঢোল প-পেটানো এসব ক-কিন্তু এ-একদম ভ-ভালো কথা নয় মিস মায়া।”

আহানের কথা শুনে মায়া থতমত খেয়ে গেলো।তারপর দ্রুত বসা থেকে দাড়িয়ে ব‍্যাস্ত কন্ঠে বললো

“আমাকে যেতে হবে।দিশা আমার জন‍্যে অপেক্ষা করছে।”

কথাটা বলে মায়া যেতে নিবে তার আগেই আহান ফাষ্ট এইড বক্স থেকে একটা ইনজেকশন বের করতে করতে বললো

“একটু দাড়ান।এই ইনজেকশনটা দিতে হবে তাহলে কাটা জায়গাটা তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”

মায়া চোখ বড় বড় করে ইনজেকশনের দিকে তাকিয়ে আছে।মায়াকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান ভ্রু নাচিয়ে বললো

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

মায়া জোড় পূর্বক একটা ক‍্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে বললো

“আপনি এই ইনজেকশনটা এখন আমাকে পুশ করবেন?”

আহান স্বাভাবিক ভাবেই উপর নিচ করে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ালো।আহানকে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়াতে দেখে মায়া আহানের দিকে তাকিয়ে আবার ক‍্যাবলা কান্ত মার্কা একটা হাসি দিয়ে,এক ভো দৌড় দিলো।দৌড়াতে দৌড়াতে বললো

“মরে শুটকি হয়ে যাবো,তবুও বেচে থাকতে কখনো ইনজেকশন দিবো না।”

মায়ার কথা শুনে আহান ফিক করে হেসে দিয়ে বললো

“ভিতুর ডিম একটা।এতো বড় হয়ে গেছে অথচ ইনজেকশন দেখে লাফালাফি করার স্বভাবটা এখনো গেলো না।”
______________________
রাত 11:00

বড়’রা ছোট’রা সবাই একসাথে ঘাসের উপরে খেতে বসেছে।পুরো সন্ধ‍্যাটা সবাই বেশ হৈ হুল্লোর করেছে।শুধু একমাএ মায়াই এক কোনে চুপচাপ বসে ছিলো।খাওয়ার মধ‍্যেই হঠাৎ করে আলিশা মায়াকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“মায়া তোমার পরিবারে কে কে আছে?”

মায়া হালকা হেসে বললো

“আমার বাবা ছাড়া আমার আর কেউই নেই।”

মায়ার কথা শুনে ওখানে উপস্থিত সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।সবাই প্লেট থেকে চোখ সরিয়ে মায়ার দিকে তাকালো।আলিশা খানিকটা নরম স্বরে বললো

“কেনো?তোমার পরিবারের বাকি সদস‍্যরা কোথায়?আই মিন তোমার মা,দাদা,দাদি,চাচা,চাচি অথবা তোমার কোনো ভাই বোন নেই?”

মায়া শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো

“খুব ছোট বেলায় আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।আর যখন কোনো বাচ্চার মা’ই থাকেনা।তখন তার পরিবার বলেও কিছু না।”

মায়ার কথা শুনে আলিশা অপরাধীর ভঙ্গিতে বললো

“আই অ‍্যাম সরি মায়া।আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।”

“ইটস ওকে।তোমাকে সরি বলতে হবে না।আমি এখন এসব বিষয় গুলো নিয়ে আর হার্ট হই না।”

মায়া কথাটা বলে খাওয়ার জন‍্যে মাথাটা নিচু করতেই মিড়া রহমান কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো

“তোমার মা নেই সেটা তুমি আমাকে আগে বলবে না?আমি যদি আগে থেকেই এটা জানতে পারতাম তাহলে তোমার মতো একটা মেয়েকে আমি কখনো আমার বাড়িতে থাকতে দিতাম না।”

মিড়া রহমানের কথা শুনে মায়া আর খাবারটা মুখে তুলতে পারলো না।ওর চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো।মিড়া রহমান আবারও বললেন

“যেই মেয়ের পরিবারের ঠিক নেই।এমন একটা মেয়েকে আমার বাড়িতে রেখে পরিবেশ নষ্ট করবো নাকি?আর তাছাড়া মা তো নেই,আর বাবা ভালো ভাবে শিক্ষা, সহবত শিখিয়েছে বলে তো মনে হয়না।একটা কাজ করো তুমি নতুন বাসা দেখা শুরু করে দেও।তোমার মতো পরিবারহীন,অচেনা একটা মেয়েকে আমার পক্ষে এই বাসায় রাখা সম্ভব না।কে জানে তোমার জন‍্যে নতুন করে আবার কোনো ঝামেলায় পড়বো কিনা।”

মিড়া রহমানের কথা গুলো মায়ার বুকে তীড়ের মতো বিধলো।ওনার কথার প্রত‍্যেকটা শব্দ মায়ার কলিজাটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো।মায়া তাছিল‍্য একটা হাসি দিয়ে মিড়া রহমানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“শুনে ছিলাম আপনিও আমার মায়ের মতো নিজের মেয়েকে ফেলে চলে এসে ছিলেন।তারপর কখনো আর নিজের মেয়ের কোনো খোজ খবর নেন নি।কখনো জানতেও চাননি আপনার মেয়ে মরে গেছে নাকি বেচে আছে।তাহলে আপনি এতো বড় বড় কথা কিভাবে বলতে পারেন?যে মহিলা নিজের মেয়েকে আগলে রাখতে পারেনি। সে আবার আমাকে পরিবারহীন বলে কোন মুখে?”

মায়ার প্রশ্ন শুনে মিড়া রহমানের মুখটা একদম চুপসে গেলো।আহান শক্ত মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছে।রাগে ওর শরীর রি রি করছে।তবে রাগটা ঠিক কার উপরে হচ্ছে সেটা আহান নিজেও জানে না।আহির আর মিহিরের ইচ্ছে করছে মায়াকে মায়া তুলে জোড়ে একটা আছাড় মারতে।কিন্তু এই মুহূর্তে ওরা কিছুতেই এটা করতে পারবে না।মায়া আবারও বললো

“আপনাদের মতো কিছু সার্থপর মায়েদের জন‍্যে আমাদের মতো মেয়েরা পরিবারহীন,মা’হীন হয়ে যায়।এই আপনারা সার্থের জন‍্যে নিজেদের ছেলে-মেয়েকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসেন।তারপর নিজেরাই আবার অন‍্য একটা মেয়েকে পরিবারহীন বলে কথা শোনান।হুহ,আর আপনার বাসায় থাকার শখ আমারও নেই।পারলে কোনোদিন আপনার বাসায় থাকা তো দূরের কথা,আপনি যেই শহরে থাকেন সেই শহরেই পা রাখবো না।”

কথাটা বলে মায়া হাতে থাকা প্লেট টা মাটির উপরে রেখেই বসা থেকে দাড়িয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here