এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৬৪.
প্রিয়ন্তি ক্যাম্প থেকে এসে দেখে অর্ষা মন খারাপের ফেইস নিয়ে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর বসে আছে।
“কিরে অর্ষা কি হয়েছে তোর?
” এই নে দেখ এইগুলা”
“হায় আল্লাহ এসাইনমেন্টের খাতা! কে দিয়েছে? নিশ্চয়ই সিনিয়র ভাইয়ার?
” হুম। কয়েকটা ভাইয়া আমাকে এতোগুলো খাতা ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে গেলো.”
“১৮ টা খাতা! এতগুলো কে লিখবে?
” আমিতো সেইটাই ভাবছি। এমনিতেই নিজেদের খাতা লিখতে লিখতে হাপিয়ে যায় সোই জায়গায় ওদের খাতা তাও একটা না দুইটা না ১৮ টা।
“আমি এইসবে নাই বইন আমার। তোকে দিছে তুই করবি”।
” ওফ আমিতো জানতামি। তোর মতো শয়তান কি আর আমাকে হেল্প করবে নাকি? চল এখন বাসায় যায়। লেইট হয়ে যাচ্ছে।
“হুম হুম চল। এইটা বলেই অর্ষা আর প্রিয়ন্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
৬৫.
অর্ষা আর প্রিয়ন্তি দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির গেইটে। অর্ষা হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে বিরক্ত নিয়ে বললো,” ওফ তোর ভাই কই বলতো? এতোক্ষণ লাগে আসতে? গরমে একদম ভালো লাগছেনা দাঁড়াতে।
“দাঁড়া ভাইয়াকে একটা কল দেয়…প্রিয়ন্তি কানে ফোন নিতে যাবে এমন সময় প্রিয়ন্তি দেখলো প্রান্তিক বাইকে করে আসছে। প্রিয়ন্তি ফোনটা ব্যাগে রেখে মুচকি হেসে বললো,” এইতো ভাইয়া চলে এসেছে। প্রিয়ন্তির কথা শুনে অর্ষা রাস্তার ওপাশে তাকালো। দেখলো প্রান্তিক আসছে।
“হাতে কি?
” এসাইনমেন্ট”
“সিনিয়রদের?
” হুম” প্রান্তিক অর্ষার হাত থেকে এসাইনমেন্টের কাগজগুলো রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
“আরে আরে কি করলেন? এইটাতো ওদের কাজের খাতা।
” সে আমি কাল বুঝে নিবো। এইবার বাইকে উঠো। প্রিয়ন্তি বললো,”আরে অর্ষা বাইকে উঠলে আমি কোথায় বসবো? প্রান্তিক গম্ভীর কন্ঠে বললো,”ওইতো পেছনে রহিম চাচা গাড়ি নিয়ে আছে। তুই কারে করে বাসায় চলে আয়। প্রিয়ন্তি ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠে নরম হয়ে গেলো। আর বললো,”আচ্ছা”।
“না না আমি প্রিয়ন্তির সাথে যাবে ভাইয়া আপনি বাইকে একাই চলে যান। অর্ষার কথা শুনে প্রান্তিক রাগে কটমট করে বললো,” তোমাকে এতো কথা বলতে বলেছি? চুপচাপ পিছনে বসো। কি আর? অর্ষা বেচারি ভয়ে গুটিসুটি মেরে পিছু বসলো।
৬৬.
প্রিয়ন্তি নিজের রুমে ঢুকতেই অবাক। চারিদিকে বেলুন দিয়ে মাঝখানে পেপারে লিখা “Sorry” প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে পুরো ঘর দেখছে আর গুটিগুটি পায়ে রুমে ডুকছে। হঠাৎ দেখলো কেউ একটা বেনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে লিখা”Im Really Sorry” বেনারটা সরাতেই প্রিয়ন্তি দেখলো আভেশ। প্রিয়ন্তি আভেশকে দেখে যা বুঝার বুঝে নিলো৷ প্রিয়ন্তি গাল ফুলিয়ে ব্যাগটা রেখে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় আভেশ তার পথ আটকে দুই হাত দুই কানে দিয়ে অনুরোধের কাতর ভাবে ভাব নিলো”
“প্রিয়ন্তি আভেশের এহেন কান্ডে ফিক করে হেসে দিলো। আভেশ হেসে বললো,” যাক বাবা রাগীনি কন্যার রাগ ভেঙেছে তবে!
“সে আর বলতে? তোমার মুখ দেখোইতো সব রাগ হাওয়া..
” বলছিস?
“হুম ১০০%।
” বাহ তাহলে আমার মুখে আলাদা একটা ম্যাজিক আছে বল..?
“মুটেওনা।
” আছে আছে আমি জানি”।
“আচ্ছা বাবা আছে এখন যাওতো..আমি ফ্রেশ হবো।
” হুম যাচ্ছি। প্রান্তিক কোথায়?
“ওরা বাইকে করে আসছে। আমি গাড়ি দিয়ে এসেছি তাই ওদের আগে বাসায় পৌঁছেছি।
” ওহ আচ্ছা। আমি যাই গোসল করবো।
আভেশ প্রিয়ন্তির রুম থেকে চলে যেতেই..প্রিয়ন্তি কি একটা ভেবে যেনো লাজুকভাবে হাসে।
৬৭.
অর্ষা বাইক থেকে নেমে যেই যেতে যাবে এমন সময় প্রান্তিক তার হাত ধরে বললো,”আসলেই তুমি অনেক অবুঝ তাইনা?
“মানে?
প্রান্তিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” না কিছুনা। যাও তুমি আমি একটা কাজ সেরেই বাসায় ফিরছি। অর্ষা মুচকি হেসে বলে,”আচ্ছা ভাইয়া”।
৬৮.
আসতে পারি? ভেজা চুলগুলো গামছা দিয়ে ঝাড়ছিলো অর্ষা। হঠাৎ আভেশকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বললো,”হুম ভাইয়া আসুন আসুন।
“ভার্সিটি থেকে কখন এলে?
” এইতো ভাইয়া আধাঘন্টা হলো। কিছু বলবেন ভাইয়া? আভেশ এক ধ্যানে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অপরুপ লাগছে অর্ষাকে ভেজা চুলে। আসলে একটা কথা সবসময় সত্যি সব মেয়েদেরকে ভেজা চুলে একটু বেশিই সুন্দর লাগে। আভেশ মনে মনে ভাবলো,”আসলেই এই মেয়েটার মধ্যে অসাধারণ কিছুতো একটা আছেই। অর্ষার ইতস্তবোধ হচ্ছে আভেশের এইভাবে তাকানো দেখে তাই সে ডাকলো..ভাইয়া..
অর্ষার ডাকে ভাবনা থেকে ফিরে আসে আভেশ। নিজের এহেন কাজে বেশ লজ্জা পেলো সে। বললো,”আসলে..তোমার কাছে কোনো গল্পের বই আছে? আসলো আমার সবগুলো বই পড়া শেষ।
“অর্ষা হেসে বললো,” এক মিনিট বসুন ভাইয়া আমি দিচ্ছি। অর্ষা গিয়ে তার ব্যাগ থেকে..সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন ” বইটা বের করে আভেশকে দিলো। আভেশ হেসে বিনিময়ে বললো,”ধন্যবাদ” এইটা বলেই আভেশ বেরিয়ে পরে অর্ষার রুম থেকে। অর্ষা একটু হাসে আর ভাবে,”আসলেই বই অবসর জীবন কাটানোর একটা হাতিয়ারো বটে”
৬৯.
প্রান্তিক বাসায় ফিরে রাত ১১ টাই। সদর দরজা খোলাই ছিলো। মনিশা চৌধুরীকে কল করে প্রান্তিক বলে দিয়েছে তার আস্তে লেইট হবে।
অর্ষার ঘুম আসছিলোনা। তাই সে পড়ছিলো। হঠাৎ পানি তৃষ্ণা পেতেই সে নিচে গেলো। অন্ধকার জুড়ে আছে পুরো ড্রইংরুম। হঠাৎ অর্ষা একটা ছায়া মর্তি দেখে ঘাবরে যায়। ভূ…অর্ষা চিৎকার করতে যাবে হঠাৎ প্রান্তিক তার মুখ হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে। বলে…এই চুপ চুপ আমি প্রান্তিক। অর্ষা এইবার চুপসে গেলো। এখনো তার মুখে ভয়ের প্রতিছাপ। অর্ষা দুই কোমড়ে হাত গুজে ভ্রু কুচকে বললো,”আপনি এইভাবে এইখানে ভূতের মতো ছিলেন কেনো? অর্ষার এমন ফেইস দেখে প্রান্তিক একটু হেসে ফেলে। প্রান্তিক পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে নিজেও অর্ষার মতো ভঙ্গিমা করে বললো,”ভীতুর রাণী তা তুমিওতো এইখানে ভূতের মতোই দাঁড়িয়েছিলে তখন?
“সেতো আমি পানি খেতে এসেছিলাম” টর্চ ছিলোনা তাই…
“বুঝলাম মিস। প্রান্তিক এইবার অর্ষার হাত একটা হেচকা দিয়ে নিজের কাছে অর্ষাকে আনে। এক হাত দিয়ে অর্ষার কোমড় আরেকহা অর্ষার গালে রেখে বললো,”চোখে কি আছে বলোতো?
অর্ষা ঘাবড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে..ক ক্ কি?
” প্রান্তিক অর্ষার কপালে একটদ কিস করে অর্ষার চুলগুলো ফু দিয়ে সাইড করে দিয়ে বললো,”চোখে কি আছে তোমার?
“অর্ষা তোতলিয়ে বললো,” কা কা্ কাজল।
অর্ষার এমন উত্তরে হোহো করে হেসে ফেলে প্রান্তিক। অর্ষার কোমড় ছেড়ে অর্ষার দুই গাল ধরে বললো,”পিচ্চি একদম। অর্ষা থতমত খেয়ে গেলো। প্রান্তিক অর্ষাকে শান্ত ভঙ্গিতে বললো,”কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখো কালই আমরা সেনাইঝড়িতে যাবো। অর্ষা খুশিতে চিৎকার করে বললো,”সত্যি? প্রান্তিক তাড়াতাড়ি অর্ষার মুখ চেপে ধরে বললো, ওফ অর্ষা আসতে সবাই জেগে যাবেতো। আর হুম সত্যিই যাচ্ছি কাল। অর্ষা খুশিতে বললো,”আচ্ছা তো আমি যাই সবকিছু গুছায়। অর্ষা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আর প্রান্তিক বিরক্ত নিয়ে ভাবছে, নিজেকে কন্ট্রোল করা বড় দায় হয়ে পড়ছে।
৭০.
সকালের স্নিগ্ধ হাওয়ায় অর্ষার খোলা চুল উঠছে। সারা রাত বাড়ি যাওয়ার আনন্দে ঘুমই হয়নি তার। নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দেখলো পাশের বেলকনিতে আভেশ। প্রান্তিকের সাথে ঘুমায় বোধহয়। অর্ষা মুচকি হেসে বললো,”আরে ভাইয়া কখন উঠলেন?
“এইতো অর্ষা নামাজ পড়তে সকালে উঠেছি।
” প্রান্তিক ভাইয়া উঠেনি?
“না আসলে অনেক রাত অব্দি কাজ করেছেতো তাই উঠতে পারেনি।
” কি কাজ?
“কিছুদিন পর প্রান্তিক কোম্পানিতে জয়েন করবে বলে ডিসাইড নিয়েছে।
” ও ভালো” আনমনে আভেশের সাথে কথা বলে চলে যায় অর্ষা। আভেশের যেনো কেনো ভালো লাগে অর্ষাকে। অতি শান্ত একটা মেয়ে। সকালের প্রকৃতির সাথে যেনো তার আলাদা একটা ভাব। প্রকৃতি যেমন সকালে শান্ত, মেয়েটাও তেমন। “Nature Queen” নিজের এমন ভাবনা দেখে নিজেই খিলখিল করে হেসে ফেলে আভেশ।
চলবে….
[ আজকে দিবোনা ভেবেছিলাম। পরে ভাবলাম দিলে আমারো ভালো পাঠক/পাঠিকাদেরো ভালো। তবে হুম পার্ট ছোট তাই মানিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ ]