বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ১৩

0
650

বিষাক্তময় আসক্তি (The Villain😈)
Sumaiya Akter Mim
পর্ব ১৩………..🌼

বাড়ির এক হাত উঁচু দেয়াল থেকে লাফ মেরে নিচে নামলো আয়না । নিচের ব্যাগটাকে কাঁধে ঝুলিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ির পেছনের গেইটে উপস্থিত হল সে। এতক্ষণে অন্ধকারের রেশ কেটে হালকা আলো ফুটতে শুরু করেছে ! গতকাল সারারাত স্নো ফল হয়েছে যার কারণে এখনও চারিদিকে ঝিরিঝিরি স্নো ফল হচ্ছে।আয়ানা নিজের গায়ের শালটাকে আরেকটু মুড়িয়ে গেইটের কাছে গেল।

সামনের গেইটে যেতে হলে আগে বাড়ির বাহিরের দরজার গার্ডদের পেরতে হবে তারপর গেইটের কাছের গার্ডদের।

পিছনের দরজায় এবং গেইটে গার্ড থাকে কিন্তু আজকে দরজায় কোনো গার্ড নেই। গেইটের কাছে ভেবেছিল গার্ড থাকবে অনেক কষ্টে বাহিরে যেতে হবে কিন্তু আয়ানার সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়ে এখানে ও কোনো গার্ড নেই। এবং কী গেইটাও খুব সুন্দর করে খোলা! মনে হচ্ছে আয়ানার যাতে পালাতে কোন রকম কষ্ট না হয় তাঁর ব্যবস্থা করে রেখেছে ।আয়ানা অতশত না ভেবে সুন্দর মতে গেইট দিয়ে বের হয়ে যায় । সে বুঝতে ও পারেনি তার জন্য কেউ ইচ্ছে করে ছক বিছিয়ে রেখেছে।।

” আয়ানাকে বের হতে দেখে একজন গার্ড তার বসকে কল করল।।।”

গার্ড: স্যার ম্যাম বের হয়ে গেছে আপনি যেমন বলেছেন ঠিক সেইভাবে কাজ হয়েছে।।

_______________________________________

গার্ড: ওকে স্যার আমরা নজরদারি করছি।। বলতে অপরপাশের ব্যক্তি ডেভিল হেসে মোবাইলটা রেখে দেয়।।

মিসেস শীতল সকালবেলা আয়ানার রুমে আসে আয়ানাকে ডাকতে কিন্তু রুমের কোথাও আয়ানা নেই। তিনি রুমের বারান্দা ,ওয়াশরুমে এবং কি বাড়ির ভিতরে এবং বাহিরে চারপাশে আয়ানাকে খোঁজে কিন্তু কোথাও পাইনি ! ওনি অনেক ঘাবড়ে যায় এবং বাহিরের গার্ডদের জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করে না কারন বাহিরে সব গার্ড ইরফানের দেওয়া, যদি ওদের আয়ানার কথা বলে অবশ্যই ইরফান কে বলে দিবে সে ভয়ে।। আবার উপরে উঠে তুতুল কে টেনে বিছানার উপর থেকে উঠায়। তুতুল ঘুম ঘুম চোখে শীতলের দিকে তাকিয়ে বলে,,

কি হয়েছে আম্মি সকাল-সকাল এমন বোম কেন হয় আছো? হাই তুলতে তুলতে কথাটি বলল!

শীতল: আয়ানা কোথায় তুতুল কিছুটা রেগে কথাটি বললেন তিনি?

তুতুল: আমি জানিনা আম্মি !আমি কি করে জানবো আয়ানা কোথায় সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো!!

শীতল তুতুলের হাত জুড়ে টান দিয়ে বলেন, তুমি সব জানো তুতুল! আয়ানা কোথায় বলো না হলে আমি কিন্তু তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন তিনি।।

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সব জানি আয়ানা কোথায়? আমি আয়ানাকে এই নরক থেকে মুক্তি দিয়েছি শুনতে পাচ্ছো তুমি মুক্তি দিয়েছি নিজের বোনকে।এমন জীবিত মরণ দেখতে পারবোনা আমি তোমাদের মতো! প্রয়োজন হলে একেবারে মেরে……….. কথাটা বলার আগে শীতল ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় তুতুলের গালে!তুতুল নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে। শীতল ও কান্না করছে কান্না করতে করতে চিল্লিয়ে বললো তিনি,,,,,,,

কি করেছো তুমি তুতুল? কি করেছো ?কেন নিজের বোনকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর খেলা বাড়িয়ে দিয়েছো তুমি বুঝতে পারছ! শীতলের কথা শুনে অবাক চোখে শীতলের দিকে তাকালো তুতুল। আবার বলতে শুরু করল শীতল, তুমি কি ভেবেছো আয়নাকে পালাতে তুমি সাহায্য করেছো! না এটা তোমার ভুল ধারণা আয়ানাকে তুমি যেতে সাহায্য করনি আয়নাকে ইরফান যেতে সাহায্য করেছে বুঝতে পারছ না তো আমার কথা? তুতুল মাথা নাড়িয়ে না জানালে!!

তুমি নিজের অজান্তেই এক মৃত্যুর খেলা শুরু করেছো!আর সেই খেলার মোহরা তোমার নিজের বোন বলে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরলেন!আর তার কথা শুনে তুতুল আরো জোরে কান্না করতে লাগলো।।

“তুমি কী জানো তুতুল ! ইরফান না চাইলে কাশ্মীর থেকে একটা কাক ও স্থান বদলাতে পারবে না সেখানে আয়ানা যেখানে ইরফানের ভালোবাসা , ইরফানের পাগলামো সে এত সহজে পালিয়ে গেলো বিষয়টা হাস্যকর তাই না!”
আমরা আয়ানাকে ভালো দেখতে চাই তুতুল! আমরা সবাই মেনে নিয়েছি ইরফান আর আয়ানার বিয়েটা তুমি আর আয়ানা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেবে ততো তাড়াতাড়ি ভালো হবে ! আর আল্লাহর কাছে প্রে করো যেনো ইরফান জানতে না পারে তুমি আয়ানাকে পালাতে সাহায্য করেছো ! তাহলে আমরা তোমাকে বাঁচাতে পারবো না তুমি জানো ইরফান কে আর ইরফানের আয়ানার প্রতি ভালোবাসা কেমন।। তুমি আয়ানার বোন বলে ভেবো না ইরফান তোমাকে ছেড়ে দিবে!! তার কাছ থেকে যদি কেউ আয়ানাকে কেড়ে নেওয়ার সামান্যতম ও চেষ্টা করে তাহলে সে তাকে শেষ করে ফেলবে।। তুমি এবং আমরা সবাই জানি ইরফানের ভালোবাসা আয়ানার জন্য কতটা হিংস্র ।আর তুমি সেই হিংস্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছো এখন কোনো সমস্যা হলে বা আয়ানার কিছু হলে আমি তোমাকে মাফ করবো না। আল্লাহর কাছে বসে প্রে করো সব জেনো ঠিক থাকে।আমি জানি ইরফান আয়ানাকে যেখান থেকেই পারে সেখান থেকে খুঁজে আনবে ইরফানের কাছ থেকে আয়ানার কোনো মুক্তি নেই।। তুমি আয়ানাকে পালাতে সাহায্য করেছো এই কথা ইরফান থেকে কখনো গোপন করা সম্ভব না সে কুড়ে সকল গোপন কথা বের করে তার থেকে লুকানো কিছু সম্ভব না বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম ছেড়ে চলে যান শীতল।।তুতুল মায়ের কথা শুনে অনেক ভেঙ্গে পরে , সে কি করে পারলো এরকম একটা বোকামি করতে নিজের বোনকে ধ্বংসের খেলায় নামিয়ে দিতে এখন সে কি করবে কোথায় খুঁজবে আয়ানাকে।।

_____________________________________

রাস্তায় একা একা হাঁটছে আয়ানা কোথায় যাবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।। গতকাল রাতে তুতুল আয়নাকে তার ফুফির বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বলেছে সে এখন ঠিকানা অনুযায়ী কিছুই বুঝতে পারছেনা কখনো একা একা বাড়ির বাহিরে আসেনি আর এটাতো সম্পূর্ণ একটা অচেনা শহর এখানে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা ।। হঠাৎ দেখতে পেল কিছু লোক বারবার আয়নার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আয়ানা যেদিকে যাচ্ছে লোক গুলো সেদিকে যাচ্ছে ।। লোকগুলোকে দেখে আয়ানা অনেক ঘাবড়ে গেল তাই সে দ্রুত পা চালাতে লাগল তার পিছন পিছন লোকগুলো ও।।
হঠাৎ একটি গাড়ি জোরে ব্রেক কষলে আয়ানা হাটা থামিয়ে দেয়। সে ভয়ে ভয়ে গাড়িটির দিকে তাকালো সে দেখতে পেলো গাড়ি থেকে একটি পরিচিত মুখ নেমেছে সে তাড়াতাড়ি করে লোকটির কাছে যায় আর বলতে লাগে।।

জিসান ভাইয়া তুমি এখানে! কোথায় ছিলে তুমি এতো দিন ? আর তুমি এখানে কেনো তোমাকে কী দি পাঠিয়েছে!!!(আয়ানা)

“তোর সব কথা পরে শুনবো এখন জলদি করে গাড়িতে ওঠে বস! বলে আয়ানার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো, তারপর ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো।
আয়ানা তো একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু জিসান কিছুই বলছে না। কেমন একটা দেখাচ্ছে তাকে, একদম অগোছালো।

_______________________________________________

ইরফান সুইমিং পুলের একটি চেয়ারের উপর বসে আছে !হাতে তার মদের গ্লাস। একটার পর একটা গ্লাস খালি করছে।চোখ দুটো আগুনের ন্যায় লাল হয়ে আছে আর মুখে বাঁকা হাসি।মনে কী চলছে তা বুঝা দায়।। সুইমিং পুলের পাশে আরেকটি ছোট পুল আছে !যার মধ্যে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যের মাঝারি আর বড় মাছ।মাছ গুলো খেলা করছে।। ইরফানের দৃষ্টি এক জোড়া কপোত কপোতীর উপর!যারা গোল হয়ে একজন আরেকজন পাশে ঘুরা- ঘুরি করছে। সোনালী রঙের মাছটা কে হালকা কালো সাদা মাছটা বারবার ধরার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।এমন সময় তাদের মধ্যে উপস্থিত হলো হালকা নীল সাদা রঙের একটি মাছ।মাছটা একদম দুটো মাছের মাঝামাঝি । এখন তিনটি মাছ একসাথে খেলা করছে আবারো গোল হয়ে ঘুরছে।।।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং মোবাইলের আওয়াজে ইরফান বাঁকা হেসে মোবাইলটা হাতে নিলো।অপাশ থেকে একজন বলে উঠল,,,,,,,,

স্যার আপনি যেমন যেমন বলেছেন ঠিক সেইভাবে কাজ হয়েছে!ম্যাম এখন উনার কাজিনের সাথে। আমাদের লোক জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে আছে।।। (লোক)

ওকে যা করতে চায় করতে দেও কেউ যেনো আটকানোর চেষ্টা না করে।। বলে ইরফান মোবাইলটা গট করে কেটে দিলো।।
ইরফানের মুখে শয়তানি হাসি।তার এই হাসি বলে দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস।।।

“তুমি আমার বিছানো ও জালে পা দিয়েছো আয়ু জান এবার তোমার কী হবে? বলে হাসতে হাসতে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরে।”

তোমার শেষ ঠিকানা আমি এটা আজ তোমাকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবো। আজকের পর তুমি পালানোর কথা মাথায় নিতে ও ভয় পাবে।। তোমাকে বুঝানোর সময় এসে গেছে যে, তুমি পালিয়ে এই ইরফানের বিষাক্ত নেশা থেকে বাঁচতে পারবে না ফিরে তোমায় এই অন্ধকার রাজ্যে রাজার কাছে ফিরে আসতে হবে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইরফান।।

ইরফান চেয়ার থেকে উঠে পাশের সোফা থেকে নিজের কালো জেকেটা নিলো তারপর টেবিলের উপর থেকে রিভলবারটা নিয়ে তার বুলেট গুলো চেক করলো তারপর নিশানা লাগিয়ে গুলি মারলো পুলের ভেতরে!আর সাথে সাথে লাল হয়ে গেল পুলের অনেক অংশ।মাছ গুলো ছোটাছুটি করছে নীল সাদা রঙের মাছটা মরে ভেসে উঠলো পুলের উপরে তা দেখে বাঁকা হেসে ইরফান বললো,,,

“এক রানীর একটাই রাজা থাকে দুটি নয়। দ্বিতীয় ব্যাক্তিকে রাজা উপড়ে ফেলে সারাজীবনের মতো করে।।
আজকের পর থেকে তুমি তোমার আপন মানুষদের পাশে থাকতে ভয় পাবে আয়ু জান। আজকে তোমার জন্য তোমার আপন মানুষগুলো কষ্ট পাবে।। নিজের চোখের সামনে নিজের আপন কাউকে শেষ হতে দেখলে তুমি কখনো আর আজকের মতো ভুল করার সাহস পাবে না দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইরফান।।

পুপু পু ্্্পু পু পুপু পু্্্্ পু পু ্্্্্্্্্শীষ বাজাতে বাজাতে বন্দুকটা পকেটে গুজতে গুজতে চলে গেল ইরফান।।।।

_______________________________________

আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া কখন থেকে তোমাকে বলছি উত্তর দিচ্ছো না কেনো।।(আয়ানা)

সেইটা গেলে দেখতে পাবি।। (জিসান)

না ভাইয়া আমি ফুফি মনির বাড়িতে যাবো ! তুমি আমাকে ওইখানে নিয়ে যাও।।।আয়ানা তাড়াহুড়ো করে বললো।।।

একদম চুপ করে বসে থাক একটা ও কথা বলবি না।। জিসান রেগে আয়ানাক ধমক দিয়ে বলল। জিসানের ধমকে আয়ানা হতবাক। এমন কেন করছে জিসান ভাইয়া। আগে কখনো এমন করনি। হঠাৎ করে এমন ব্যবহারে ভরকে যায় আয়ানা। এখন ইরফানের ভয়ের সাথে সাথে জিসান কে ও তার ভয় করছে! কী করতে চাইছে জিসান?

হঠাৎ জিসানের মোবাইলটা বেজে উঠল। জিসান আয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে মোবাইলটা ধরলো।।

হ্যালো সব ব্যবস্থা হয়েছে।।।। (জিসান)
____________________
ওকে আমি আসছি আপনি কাগজ পত্র রেডি রাখুন বলে মোবাইলটা কেটে দেয়।।।।‌‌

#To_be_continued……….🌼

(কী চলছে জিসানের মাথায়?আর ইরফান বা কী করতে চলছে 🙄 কেউ বলতে পারবে)

#Happy_Reading

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here