পতিতা বউ – পর্ব ৩

0
364

#পতিতা_বউ

পর্ব ৩

আফিফ তার রুমেই বসে ছিলো। জোহরের নামাজ কানে আসতেই সে উঠে দাঁড়ালো। এরপর শাওয়ার নিতে চলে গেলো। প্রায় অনেক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলো। ওজু করে রুমে এসে তার রুমের সংলগ্ন ইবাদত খানা টাই গিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো সে। আফিফের নামাজ পড়াস অভ্যাস মোটেও ছিলোনা। নুহা আসার পর থেকে নুহা ই তার নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। আফিফদের রুমের পাশের এই ছোট্ট ইবাদতখানা টিও নুহার জন্যই বানানো হয়েছিলো। আফিফ আর নুহা একসাথে নামাজ পড়তো।

আফিফ এক ধ্যানে নামাজ পড়ছে। কিন্তু তার দু’চোখ বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছেই। নিজের যত অভিযোগ সবই সে আল্লাহ কে জানিয়ে দিচ্ছে। নামাজ শেষে সে মোনাজাতে বললো “ইয়া আল্লাহ আমার মনের অশান্তি কমিয়ে দাও। নুহা যদি সত্যি আমার সাথে প্রতারণা করে থাকে তবে তার অভিযোগ আমি তোমাকে জানালাম। আমার মন বলছে নুহা ভুল হতে পারেনা। আল্লাহ তুমি আমাকে সঠিকটা বোঝার হেদায়েত দান করো। আমিন। ” নামাজ শেষ করতেই আফিফ তার বাম পাশে ফিরে দেখলো নুহার নামাজ পড়ার জায়গা টা শূন্য। নুহা থাকলে হয়তো এখন এক সাথেই নামাজ পড়া হতো।

নামাজ শেষে আফিফ উঠে ব্যালকুনি তে চলে গেলো। তার মন টা কিছুটা শান্ত হয়েছে। কিন্তু ব্যাল্কুনির সোফায় বসতে বসতে তার মন আরেক দফা কেঁদে উঠলো। এই রুমের প্রত্যেক জড় বস্তু প্রত্যেক কোণ নুহার অস্থিত্বের জানান দিচ্ছে।

নুহা নামাজ শেষ করে নুহা উঠে দাঁড়ালো। জানালা দিয়ে হালকা শীতল হাওয়া বয়ছে। শরৎের মেঘময় আকাশ টা ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। নুহার মনে পড়ে গেলো আফিফের আকাশ দেখতে খুবই ভালো লাগে। বাসাই থাকলে হয়তো এতক্ষণে সে আর আফিফ ব্যাল্কুনিতে বসে আকাশ দেখতো আর খুনসুটি করতো। নুহা এসব আর মনে করতে চাইছে না তার খুব মন খারাপ হচ্ছে এসব ভেবে। নুহা চাইলেই আফিফের ভুল ভাংগাতে পারে। কিন্তু সে চাই না কোনো সাফাই দিতে। যে ভালোবাসা কে বিশ্বাস করে না তাকে কোনো কিছুই বোঝানোর ইচ্ছে নেই তার। আবার পরক্ষণেই নিজের সন্তানের কথা ভেবে মন অস্থির হয়ে উঠছে তার। সে এক প্রকার মানষিক টানা পোড়েনে ভুগছে। না নুহা ঠিক করলো সে আর এসব ভাববে না। নিজের ভেজা চুল গুলো মেলে দিয়ে সে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো। হাল্কা বাতাসে তার চুল উড়ছে। সে এক দৃষ্টে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। নুহা ভাবছে তিন বছর আগের কথা যখন তার ও আফিফের এই সম্পর্কের শুরু হয়।
অপর দিকে আফিফ ও বসে বসে তাই ভাবছে। তাদের মনের মিল কি অদ্ভুত।

তিন বছর আগে,,

আজ নুহার ভার্সিটির প্রথম দিন। নুহা সচরাচর স্কুল, কলেজে বোরকা আর নিকাব পড়ে যাই। কারণ সে চাই তার পরিচয় টা গোপন থাক। তা যেন তার পড়াশোনার মাঝে না আসুক। নুহা বরাবরই পড়ালেখায় বরাবরই অনেক ভালো। এসএসসি ও এইচ এস সি তে গোল্ডেন প্রাপ্ত ছাত্রী। মহুয়াপল্লি হতে ভার্সিটি বেশি দূরে নয়। নুহা ভার্সিটি যাওয়ার আগে তার মামুণি কে সালাম করে নিলো। এরপর রোকেয়া খালাকে সালাম করলো। তারপর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলে গেলো। নুহা এবং তার বেস্ট ফ্রেন্ড অনিমা একসাথে এসেছে।

নুহার ভার্সিটির ক্লাস গুলো ভালোই ভালোই কাটালো। এরপর সে আর অনিমা ক্যাম্পাস এর চারপাশে হাটতে বের হলো। হঠাৎ অনিমা নুহাকে একটি ভিড় দেখিয়ে বললো,

>>চল দেখি ওখানে এত ভিড় কেনো?

>>না দরকার নেই শুধু শুধু ঝামেলায় পড়ার।

>>ধুর প্লিজ চলনা দেখি।

অনিমা নুহাকে একপ্রকার টানতে টানতে সেখানে নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো ২জন ছেলে মারামারি করছে। অনিমা ভিড় ঠেলে নুহাকে নিয়ে একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ মারের টাল সামলাতে না পেরে নুহার গায়ের উপর এসে পড়লো। সেই ছেলে টাই ছিলো আফিফ। নুহা আফিফ কে সামলে নিলো। এরই মধ্যে একজন প্রফেসার এসে আফিফ আর সেই ছেলেটিকে বললো,

>>এই যে তোমরা দিন দিন গুন্ডায় পরিণত হচ্ছো। ক্যাম্পাসে কি গুন্ডামি করতে আসো নাকি পড়ালেখা করতে??
দু’জনেই প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসে আসো ইমিডিয়েটলি।

স্যার টি চলে গেলেন। সোহান আফিফের সামনে গিয়ে তাকে বললো,
>>আজ ছেড়ে দিলাম তোকে আমি দেখে নিবো হাহহ।

>>তোকে মনে হয় ছেড়ে দিবো আমি। শুধু দেখ না আমি কি করি আজকে।

এদিকে আস্তে আস্তে ভিড় কমা শুরু করলো। নুহা আর অনিমা চলে যেতে লাগলে হঠাৎ আফিফ নুহার হাত ধরে অকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে অনিমা নুহা আর আফিফের পেছন পেছন আসছে। নুহা আফিফের এমন আচরণে পুরাই অবাক। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিকই কিন্তু পারছেনা আফিফ তার হাত খুব শক্ত ভাবে ধরে আছে। সে আফিফ কে বললো,

>>কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় ছাড়ুন।

>>চুপচাপ চলো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। বেশি প্যানপ্যান করোনা তো।

আফিফ নুহা কে নিয়ে কলেজের স্টোর রুমে ঢুকে দরজা অফ করে দিলো।

চলবে…..

#Razia_Binte_SuLtan

[নেক্সট পার্ট রাতের মধ্যেই দিবো। তাই এই পার্ট টা একটু ছোট হলো তার জন্য দুঃখিত ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here