পতিতা বউ – পর্ব ৫

0
332

#পতিতা_বউ

৫ম পর্ব

প্রিন্সিপাল অফিস হতে বেড়িয়ে নুহা আর এক মিনিট ও ক্যাম্পাসে দাঁড়াইনি। সে রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অনিমার বাবা আসার কথা ভার্সিটি তে তাই সে নুহার সাথে যায়নি। আফিফ অনিমার কাছে দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করে,

>>আপু আপনার ফ্রেন্ড মেয়েটা কোথায়?

>>ভাইয়া নুহা তো মাত্রই রওনা দিলো বাসার জন্য।

>>ওহ শিট। ও কোন দিকে গিয়েছে আর কিসে করে?

>>এইতো এই রোড দিয়ে গিয়েছে রিকশা ছিলো হয়তো বেশিদূর যায়নি।

>>ওকে ওকে আমি আসি।

এই বলে আফিফ ভার্সিটির পার্কিং লট হতে নিজের বাইক টা নিয়ে নুহার পিছে পিছে রওনা দিলো। এদিকে পথিমধ্যে নুহার রিকশার সামনে সোহান বাইক নিয়ে এসে দাঁড়াই। সোহান কে দেখেই নুহা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। সে মনে মনে আল্লাহ কে স্মরণ করছে। সোহান বাইক হতে নেমে গিয়ে নুহাকে রিকশা হতে হাত ধরে টেনে নামালো। সোহান খুব রেগে আছে। সে রাগান্বিত স্বরে নুহাকে বললো,

>>এই মেয়ে প্রিন্সিপাল এর সামনে মিথ্যা বললি কেনো?আফিফের কথায় হ্যা কেনো কেনো মিলিয়েছিলি?

নুহা কিছুই বলছে না। তার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। নুহা অনেক ভীত হয়ে আছে। এদিকে সোহানের রাগ ক্রমাগত বাড়ছে।

>>উফফ ফালতু মেয়ে জবাব দিচ্ছিস না কেনো?

এই বলে সোহান নুহাকে থাপ্পড় মারতে উদ্যত হতেই আফিফ এসে সোহানের হাত ধরে ফেললো। সোহান কে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিয়ে তাকে আংগুল তাক করিয়ে বললো,

>>আর কখনো যদি নুহার সাথে বাজে ব্যবহার করিস অথবা করার চেষ্টা করিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।

>>তুই কি মনে করিস ওকে আমি এমনিতেই ছেড়ে দিবো? আমাদের শত্রুতা এখন শুধু তোর আর আমার মাঝে নেই তা ওর আর আমার মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই দু’টাকার মেয়েকে আমি দেখেই ছাড়বো।

>>তোকে আমি..

আফিফ সোহানের মুখে এক ঘুষি বসিয়ে দেই তারপর নুহার হাত ধরে নিয়ে বাইকের পাশে দাড় করিয়ে নিজে বাইকে উঠলো তারপর তাকে বললো,

>>বাইকে বসো।

নুহা নিঃশব্দে কাঁদছে মাথা নিচু করে। সে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

>>কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না। বাইকে বসো।

আফিফের চিল্লিয়ে বলাতে নুহা ভীষণ ভয় পেলো। সে মাথা তুলে তাকাতেই আফিফ দেখে নুহা কাঁদছে। আফিফের হঠাৎ প্রচণ্ড খারাপ লেগে উঠলো নুহার জন্য। সে মনে মনে ভাবলো “উফহ নিজে জেতার জন্য আমি মেয়েটাকেও নিজের শত্রুতায় জড়িয়ে ফেললাম। এখন থেকে ওর খেয়াল ও আমাকেই রাখতে হবে। সোহানের বিশ্বাস নেই কখন কি করে বসে। আর মেয়েটা কাঁদছে আমার জন্যই তার এত ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে কি যে করি। ”

আফিফ বাইক হতে নেমে নুহার দুই গালে হাত দিয়ে ধরে তার চোখের পানি মুছে দিলো। নুহার চোখের পানিতে তার নিকাব ভিজে গেছে। আফিফ নুহাকে বললো,

>>আই এম সো সরি। আমার জন্য তোমাকে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু টেনশন নিও না আফিফ যা বলে তা করেই। তোমার সিকিউরিটির রেস্পন্সিব্লিটি আমার। আর শুনো তোমাকে প্রতিদিন আমি ভার্সিটি তে আনবো আর আমিই বাসাই পৌছে দিয়ে আসবো।

নুহা আফিফের কথায় অবাক হয়ে উঠলো। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

>>না দরকার নেই। আমি আসতে পারবো। আর অনিমা আছেই।

>>দেখো সোহানের বিশ্বাস নেই সে কখন কি করে বলা যায়না। আর অনিমা ও একজন মেয়ে ওর ক্ষমতা নেই তোমাকে প্রটেক্ট করার।প্লিজ মানা করোনা। তোমার কিছু হলে আমিই দায়ী দোষ আমারই।

>>আচ্ছা ঠিক আছে।

>>এবার চলো বাইকে বসো বাসাই পৌছে দিয়ে আসি।

আফিফ বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিতেই নুহা বাইকে উঠে বসলো। আফিফ নুহাকে বললো,

>>শক্ত করে ধরে বসো।

নুহা আফিফের কাঁধে ধরে বসলো। সারাপথে দু’জনে কোনো কথা বললোনা। মহুয়াপল্লির কিছুদুর আগের মোড়ে এসে নুহা বললো,

>>এইখানে থামিয়ে দিন বাকি পথ আমি একাই যেতে পারবো।

আফিফ বাইক স্টপ করতেই নুহা নেমে পড়লো।

>>বাসা কোথায় তোমার।

>>এইখান হতে একটু সামনেই।

>>ওহ আচ্ছা।

>>থ্যাংকস ইউ। আসলে মামুণি দেখলে রাগ করবে তাই একটু আগেই নেমে পড়লাম।

>>হুম গট ইট। আর শুনো কালকে ঠিক ৯টায় আমি এখানে আসবো ঠিক টাইমে চলে এসো কিন্তু। আর ভুলেও একা যাবেনা ভার্সিটির দিকে।

>>ওকে ডোন্ট ওয়ারি। এখন আসি আল্লাহ হাফেজ।

নুহা চলে গেলো। আফিফ নুহার যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে আছে। এই কিছু ঘণ্টার মধ্যেই আফিফ নুহার মায়ায় পড়ে গেলো। নুহা যেতে যেতে একসময় চোখের আড়াল হয়ে গেলে আফিফ বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দশ্যে রওনা দেয়।

বাসা হতে প্রায় ৫মিনিট এর আগের পথে নেমেছিলো নুহা। কারণ সে চাইনা আফিফ জানুক সে কোথায় থাকে। নুহা কুঠিতে ঢুকতেই দেখলো শবনম বেগম বারন্দায় বসে আছেন। নুহা গিয়ে তার নিকাব খুলে শবনম বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। শবনম বেগম নুহার এমন আচরণে মোটেও অবাক হননি। নুহা যখনি ঘরে ফিরে সে এমনই করে। শবনম বেগম নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,

>>দিন কেমন কাটলো আইজকে?

>>অনেক ভালো মামুণি। জানো ক্যাম্পাস টা অনেক সুন্দর। আর ক্লাস করেও খুব ভালো লাগলো।

>>জানিস মা আমারো ছোডকালে খুব শখ আছিলো পড়ালেখার। কিন্তু আল্লাহ কপালে হয়তো লেখে নাই তাই আর হয়লোনা। এই কুঠিতে কেউ কখনো কয় নাই যে তারা কাম করার পাশাপাশি পড়তে চাই। তুই ই প্রথম কইসিলি। জানোস সেদিন আমি খুব খুশি হয়ছিলাম। আমি যা পাই নাই তা তোরে দেওয়ার চেষ্টা করতাসি। তোর উপরে অনেক বিশ্বাস আমার একদিন তুই বড় কিছু হবি।

>>তুমি শুধু দোয়া করবে মামুণি আর আমার উপর বিশ্বাস রাখবে। আমি তোমার স্বপ্ন একদিন পূরণ করবোই।

>>সে তো জানিই। আমার লক্ষী মাইয়া তুই। এখন যা গোছল কইরা খাইয়া দাইয়া আরাম কর। বিকালের পর কামে লাগন লাগবো। তোর অনেক গ্রাহক আছে আইজকা।

কথাটা শোনা মাত্রই নুহা উঠে বসলো। তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। সে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শবনম বেগমের হাত ধরে বললো,
>>এই অভিশাপ জীবন হতে আমি কখন মুক্তি পাবো মামুণি?

>>যেদিন তুই বড় কিছু হবি সেদিন। আমি নিজেই তোরে মুক্ত কইরা দিমু। তারপর এইখান থেইকা দূরে যাবিগা আর নিজেরে প্রতিষ্ঠিত করবি। এই অভিশাপ জিবন থেকে অনেক দূরে যাইতে হয়বো তোর।

শবনম বেগম নুহাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। নুহা চোখের জল মুছে ফেললো। তারপর উনাকে জড়িয়ে ধরলো। সে সেদিনের অপেক্ষায় আছে। যেদিন এই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here